1
তাঁহার-ই নামে যিনি যাহা কিছু অস্তিত্বপ্রাপ্ত হইয়াছে এবং যাহা কিছু অস্তিত্বপ্রাপ্ত হইবে সকলের সর্বোচ্চ শাসক।
ঈশ্বর কর্তৃক তাঁহার ভৃত্যদের পক্ষে পালনীয় সর্বপ্রথম নির্দেশিত কর্তব্য হইতেছে তাঁহাকে স্বীকার করিয়া লওয়া, যিনি তাঁহার প্রত্যাদেশের প্রভাত এবং তাঁহার আইনসমূহের উৎপত্তিস্থল, যিনি তাঁহার ধর্ম এবং সৃষ্টির জগত উভয় রাজ্যে স্বয়ং স্রষ্টার প্রতিনিধিত্ব করিয়া থাকেন। যে কেহ এই কর্তব্য সাফল্যের সহিত স¤পাদন করিয়াছে সে সর্বমঙ্গল লাভ করিয়াছে; এবং যে কেহ তাহা হইতে বঞ্চিত হইয়াছে সে বিপথগামী হইয়াছে, যদিও সে প্রতিটি ন্যায়পরায়ণ কর্মের সম্পাদনকারী হইয়া থাকে। যাহারা এই উন্নততম মর্যাদায়, এই অজ্ঞেয় গৌরবের শিখরে উপনীত হইয়াছে, তাহাদের প্রত্যেকের জন্য উপযুক্ত হইবে তাঁহারই প্রতিটি আদেশ পালন করা, যিনি জগতের কাক্সিক্ষতজন। এই যমজ কর্তব্য অবিচ্ছেদ্য। একটি ব্যতিরেকে অপরটি গ্রহণযোগ্য নহে। এইরূপ-ই তাঁহার দ্বারা আদেশ প্রদান করা হইয়াছে, যিনি স্বর্গীয় অনুপ্রেরণার উৎস।
2ঈশ্বর যাহাদিগকে অন্তর্দৃষ্টিস¤পন্ন করিয়াছেন, তাহারা তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকার করিয়া লইবে যে, ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত নৈতিক শিক্ষাসমূহ পৃথিবীতে শৃঙ্খলা বজায় রক্ষার্থে ও পৃথিবীর জাতিসমূহের নিরাপত্তা বিধানের সর্বোত্তম মাধ্যম গঠন করে। যেই ব্যক্তি এই সকল হইতে মুখ ফিরাইয়া লয় সে নীচ ও নির্বোধদের মধ্যে গণ্য। আমরা, সত্য সত্যই, তোমাদের ক্ষতিকর রিপু ও বিকৃত কামনাসমূহের তাড়নাকে প্রত্যাখ্যান করিতে এবং ঐ সকল সীমালঙ্ঘন করিতে নিষেধ করিয়াছি, যাহা সর্বোচ্চের লেখনী নির্ধারণ করিয়াছেন, যেহেতু এইগুলিই সমস্ত সৃষ্টবস্তুর প্রতি জীবনের শ্বাসপ্রশ্বাস। ঐশী বিজ্ঞতা এবং ঐশী বাক্যের সাগরসমূহ পরম করুণাময়ের মৃদু সমীরণের শ্বাসপ্রশ্বাসের অধীনে স্ফীত হইয়াছে। হে বোধশক্তিস¤পন্ন লোকসকল! তোমরা আকণ্ঠ পান করিবার জন্য দ্রুত অগ্রসর হও। যাহারা ঈশ্বরের আদেশসমূহ লঙ্ঘন করিয়া তাঁহার চুক্তি ভঙ্গ করিয়াছে এবং পৃষ্ঠ-প্রদর্শন করিয়াছে, তাহারা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে নিদারুণভাবে ভুল করিয়াছে, যিনি সর্বাধিকারী, যিনি সর্বোচ্চ।
3হে তোমরা বিশ্বের জাতিসমূহ! সুনিশ্চিতভাবে জানিয়া রাখ যে, আমার আদেশাবলী, আমার ভৃত্যদের মধ্যে আমার প্রেমপূর্ণ তত্ত্বাবধানের প্রদীপসমূহ এবং আমার সৃষ্ট প্রাণীকুলের জন্য আমার অনুগ্রহের চাবিগুচ্ছ। এইভাবেই প্রত্যাদেশের পরম প্রভু, তোমাদের পরম প্রভুর ইচ্ছাশক্তির আকাশ হইতে ইহা অবতীর্ণ করা হইয়াছে। যে বাণী পরম করুণাময়ের ওষ্ঠ উচ্চারণ করিতে ইচ্ছা করিয়াছে, কোন লোক সেই বাণীর মিষ্টতার স্বাদ গ্রহণ করিলে, তাহার অধিকারে পৃথিবীর সঞ্চিত ধনসমূহ থাকিলেও সে উহাদের সবকিছু পরিত্যাগ করিবে, যাহাতে স্রষ্টার উদার তত্ত্বাবধানের ও সদয় অনুগ্রহের প্রভাতের উপরে দীপ্তিমান আদেশাবলীর মধ্যে সে একটির হইলেও ইহার যথার্থতা প্রতিপাদন করিতে পারিবে।
4বল ঃ আমার আইনসমূহ হইতে আমার পোশাকের মধুর সুঘ্রাণ আস্বাদন করা যাইবে এবং উহাদের সাহায্যে বিজয় পতাকাসমূহ সর্বোচ্চ চূড়া সমূহে স্থাপিত করা হইবে। আমার সর্বশক্তিশালী মহিমার আকাশ হইতে আমার শক্তির রসনা, আমার সৃজনকুলের উদ্দেশ্যে এই কথা বলিতেছে : “আমার সৌন্দর্যের প্রেমের জন্য, আমার আদেশাবলী মানিয়া চল।’’ সুখী সেই প্রেমিক যে তাহার প্রিয়তমের এই সকল কথা হইতে একটি অনুগ্রহের সুগন্ধি সহকারে প্রবাহিত ঐশী সুরভির শ্বাস গ্রহণ করিয়াছে, যাহা কোন রসনা বর্ণনা করিতে পারে না। আমার জীবনের শপথ! যে আমার উদার অনুগ্রহের হস্ত হইতে সুবিচারের সর্বোৎকৃষ্ট মদিরা পান করিয়াছে, সে আমার আদেশাবলীকে প্রদক্ষিণ করিবে, যেইগুলি আমার সৃজনকুলের প্রভাতের উপর দীপ্তিমান হইয়াছে।
5মনে করিও না যে আমরা তোমাদের প্রতি কেবল আইনসমূহের একটি সংহিতা প্রকাশ করিয়াছি। না, বরং আমরা শক্তি ও পরাক্রমের অঙ্গুলীসমূহ দ্বারা সর্বোৎকৃষ্ট মদিরার সিলমোহর ভাঙ্গিয়াছি। প্রত্যাদেশের লেখনী যাহা কিছু অবতীর্ণ করিয়াছে, তাহা এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। হে অন্তর্দৃষ্টিস¤পন্ন লোকসকল! ইহার উপর গভীরভাবে চিন্তা কর।
6আমরা তোমাদের প্রতি শ্লোকসমূহের অবতীর্ণকারী, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দ্বিপ্রহরে ও প্রভাতে এবং সন্ধ্যায় নয় রাকাত বাধ্যতামূলক প্রার্থনা নিবেদনের জন্য আদেশ প্রদান করিয়াছি। ঈশ্বরের গ্রন্থে একটি আদেশস্বরূপ আমরা তোমাদিগকে একটি বৃহত্তর সংখ্যা হইতে অব্যাহতি দিয়াছি। সত্য সত্যই, তিনি আদেশদাতা, সর্বশক্তিমান, অনিয়ন্ত্রিত। যখন তোমরা এই প্রার্থনা সম্পাদন করিতে ইচ্ছা করিবে, তখন তোমরা আমার পরম পবিত্র উপস্থিতির প্রাঙ্গণের দিকে মুখ ফিরাইবে, এই পবিত্র স্থান যাহাকে ঈশ্বর উচ্চরাজ্যের অধিবাসীদের প্রদক্ষিণের জন্য কেন্দ্রবিন্দু করিয়াছেন, যাহাকে তিনি অমরত্বের নগরসমূহের অধিবাসীদের উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু হইবার জন্য আদেশ করিয়াছেন, এবং যাহারা স্বর্গে এবং মর্ত্যে রহিয়াছে তাহাদের সকলের প্রতি আদেশের উৎস করিয়াছেন; এবং যখন সত্য ও উচ্চারণের সূর্য অস্তমিত হইবে, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ঐ স্থানের দিকে ফিরাইবে যাহা আমরা তোমাদের জন্য আদেশ করিয়াছি। তিনি, সত্য সত্যই, সর্বশক্তিমান ও সর্বদর্শী।
7প্রত্যেকটি বস্তু তাঁহার অনিবার্য আদেশের মাধ্যমে অস্তিত্বপ্রাপ্ত হইয়াছে। যখনই আমার আইনসমূহ আমার উচ্চারণের আকাশে সূর্যের ন্যায় আবির্ভূত হয়, তখন সেইগুলি অবশ্যই বিশ্বস্ততা সহকারে সকলের দ্বারা মান্য হইতে হইবে, যদি আমার আদেশ এমনও হয় যে উহা প্রত্যেক ধর্মের আকাশকে বিদীর্ণ করে। তিনি তাহাই করেন, যাহা তিনি ইচ্ছা করেন। তিনি পছন্দ করেন এবং কেহই তাঁহার পছন্দ সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলিতে পারে না। সকলের প্রিয়তম, তিনি যাহা কিছু আদেশ করেন, সত্য সত্যই, তাহা-ই প্রিয়তম। তিনি, যিনি সমস্ত সৃজনকুলের পরম প্রভু আমার এই কথার সাক্ষী। যে কেহ পরম করুণাময়ের মিষ্ট-সুরভির শ্বাস গ্রহণ করিয়াছে এবং এই উচ্চারণের উৎসকে স্বীকার করিয়াছে, সে তাহার নিজের চক্ষুদ্বয়ের দ্বারা শত্রুর তীরসমূহকে সাদর অভ্যর্থনা করিবে, যাহাতে সে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের আইনসমূহের সত্য প্রতিষ্ঠিত করিতে পারে। মঙ্গল তাহারই যে উহাদের প্রতি ফিরিয়াছে এবং তাঁহার চূড়ান্ত আদেশের অর্থ উপলব্ধি করিয়াছে।
8আমরা অন্য একটি ফলকলিপিতে বাধ্যতামূলক প্রার্থনার বিশদ বর্ণনা প্রদান করিয়াছি। আশীষপূতঃ সেই জন যে তাহা পালন করে, যাহা তাঁহার-ই দ্বারা আদিষ্ট হইয়াছে, যিনি সমগ্র মানব জাতিকে শাসন করেন। মৃতদের জন্য প্রার্থনায় শ্লোকসমূহের অবতীর্ণকারী, ঈশ্বর কর্তৃক নির্দিষ্ট ছয়টি অনুচ্ছেদ অবতীর্ণ করা হইয়াছে। যে পড়িতে সক্ষম, সে এই অনুচ্ছেদগুলির অগ্রবর্তী অবতীর্ণ শ্লোকসমূহ আবৃত্তি করুক ; এবং যে অক্ষম, ঈশ্বর তাহাকে এই প্রয়োজনীয়তা হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন। তিনি, সত্যই, শক্তিমান, মার্জনাকারী।
9চুল তোমাদের প্রার্থনাকে অসিদ্ধ করে না, অথবা যাহা হইতে আত্মা বিচ্ছিন্ন হইয়াছে, যেমন অস্থিসমূহ এবং অনুরূপ কোন কিছু। তোমরা নকুল জাতীয় জন্তু যেমন বীবর, কাঠবিড়ালী এবং অন্যান্য প্রাণীর পশমের পোশাক পরিধান করিতে স্বাধীন; ইহাদের ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা কোরআন হইতে আরোপিত হয় নাই বরং ধর্মোপদেষ্টাদের ভ্রান্ত ধারণা হইতে উদ্ভূত হইয়াছে। সত্য সত্যই, তিনি সর্বগৌরবময়, সর্বজ্ঞ।
10আমরা তোমাদের বয়ঃপ্রাপ্তির শুরু হইতেই প্রার্থনা ও উপবাস ব্রত পালনের জন্য আদেশ দিয়াছি; ইহা তোমাদের পরম প্রভু এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের পরম প্রভু, ঈশ্বর কর্তৃক আদিষ্ট হইয়াছে। তিনি তাঁহার সকাশ হইতে বদান্যতাস্বরূপ ইহা হইতে তাহাদিগকে অব্যাহতি দিয়াছেন যাহারা অসুস্থতা অথবা বার্ধক্যের কারণে দুর্বল, তিনি ক্ষমাশীল এবং উদার। ঈশ্বর তোমাদের পরিষ্কার পরিছন্ন যে কোন কিছুর উপর প্রণতিপাতের অনুমতি প্রদান করিয়াছেন, কারণ, এই স¤পর্কে ধর্মগ্রন্থে যে সীমা প্রদান করা হইয়াছিল, তাহা আমরা অপসারণ করিয়াছি; বাস্তবিক-ই, ঈশ্বর যাহা কিছু জানেন তাহা তোমরা অবগত নও। অভিসিঞ্চনের জন্য কেহ জল না পাইলে সে পাঁচ বার “পরম পবিত্র, পরম পবিত্র ঈশ্বরের নামে’’ এই বাক্যসমূহ পুনরাবৃত্তি করিবে এবং তাঁহার উপাসনা শুরু করিবে। এইরূপ-ই হইল জগৎসমূহের পরম প্রভুর আদেশ। যেই সকল অঞ্চলে দিবস ও রাত্রিসমূহ দীর্ঘ হয়, সেইখানে ঘড়ি ও অনুরূপ যন্ত্রাদি, যাহা সময়ের অতিক্রমকে চিহ্নিত করে তদ্বারা প্রার্থনার সময় নির্ধারিত হইবে। সত্য সত্যই, তিনি ব্যাখ্যাদানকারী, বিজ্ঞ।
11আমরা তোমাদিগকে লক্ষণসমূহের জন্য প্রার্থনার প্রয়োজনীয়তা হইতে অব্যাহতি দিয়াছি। ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক ঘটনাবলী আবির্ভূত হইলে তোমরা তোমাদের প্রভুর শক্তিমত্তা ও মহিমার কথা স্মরণ করিবে, তিনি যিনি সবকিছু শ্রবণ এবং দর্শন করেন; এবং বলিবে “আধিপত্য ঈশ্বরের, যিনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যের পরম প্রভু, সৃজনকুলের পরম প্রভু।’’
12আদেশ প্রদান করা হইয়াছে যে বাধ্যতামূলক প্রার্থনা তোমাদের প্রত্যেকের দ্বারা স্বতন্ত্রভাবে স¤পাদিত হইবে। মৃতদের জন্য প্রার্থনা ব্যতীত, সংঘবদ্ধ প্রার্থনার রীতি রহিত করা হইয়াছে। তিনি সত্য-ই, আদেশদাতা, সর্ববিজ্ঞ।
13ঈশ্বর ঋতুমতী নারীদের বাধ্যতামূলক প্রার্থনা ও উপবাস ব্রত পালন হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন। তদস্থলে তাহারা একদিনের দ্বিপ্রহর হইতে পরবর্তীটির মধ্যে অভিসিঞ্চনের পর “প্রভা ও সুষমার পরম প্রভু ঈশ্বর মহিমান্বিত হউন’’ পঁচানব্বই বার পুনরাবৃত্তির দ্বারা ঈশ্বরের প্রশংসা করিবে। এইরূপ-ই গ্রন্থটিতে আদেশ দেওয়া হইয়াছে, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা উপলব্ধি করে।
14ভ্রমণকালীন তোমরা কোন নিরাপদ স্থানে পৌঁছাইলে এবং বিশ্রাম গ্রহণ করিলে প্রত্যেক অস¤পাদিত বাধ্যতামূলক প্রার্থনার পরিবর্তে -নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে Ñ একটি মাত্র প্রণতিপাত করিবে এবং প্রণতিপাতকালে বলিবে, “শক্তি ও মহিমা, কৃপা ও বদান্যতার পরম প্রভু ঈশ্বর মহিমান্বিত হউন।’’ যে কেহ ইহা করিতে অক্ষম, সে শুধু বলিবে, “ঈশ্বর মহিমান্বিত হউন ’’; ইহা নিশ্চিতভাবে তাহার জন্য যথেষ্ট হইবে। সত্যই, তিনি সর্বপর্যাপ্তময়, চিরস্থায়ী, ক্ষমাশীল, করুণাময় ঈশ্বর। তোমাদের প্রণতিপাতসমূহ সমাপনের পর - নারী-পুরুষ নির্বিশেষে - তোমরা পদযুগল আড়াআড়ি করিয়া উপবিষ্ট হও এবং আঠার বার আবৃত্তি কর, “স্বর্গ ও মর্ত্যরে রাজ্যসমূহের পরম প্রভু ঈশ্বর মহিমান্বিত হউন।’’ এইরূপ-ই পরম প্রভু সত্য ও দিক-নির্দেশনার পথসমূহকে সুগম করিয়া থাকেন, যে পথসমূহ একই পথের দিকে পরিচালনা করে, যাহা হইল এই সরল পথ। এই সর্বাধিক সদয় অনুগ্রহের জন্য ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন কর ; এই উদারতার জন্য তাঁহার প্রশংসা কীর্তন কর যাহা স্বর্গসমূহ ও মর্ত্যকে পরিবেষ্টন করিয়াছে ; এই করুণার জন্য তাঁহার উচ্চপ্রশংসা কর, যাহা সমগ্র সৃজনকুলকে পরিব্যাপ্ত করিয়াছে।
15বল ঃ ঈশ্বর আমার নিহিত প্রেমকে ধনাগারের চাবিস্বরূপ করিয়াছেন; যদি তোমরা এই কথা উপলব্ধি করিতে! এই চাবি ব্যতীত রতœরাজি অনন্তকাল যাবত লুক্কায়িত থাকিত, যদি তোমরা এই কথা বিশ্বাস করিতে! বল ঃ! ইহাই প্রত্যাদেশের উৎস, প্রভার উদয়স্থল, যাহার উজ্জ্বলতা পৃথিবীর দিগন্তসমূহকে আলোকিত করিয়াছে। যদি তোমরা তাহা হৃদয়ঙ্গম করিতে! সত্য সত্যই, ইহা সেই নির্ধারিত আদেশ যাহার মাধ্যমে প্রত্যেক অপরিবর্তনীয় আদেশ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।
16হে সর্বোচ্চের লেখনী! বল ঃ হে বিশ্বের জনমন্ডলী! আমরা তোমাদের উপর একটি সংক্ষিপ্ত কালব্যাপী উপবাস ব্রত পালনের আদেশ প্রদান করিয়াছি এবং ইহার সমাপ্তিতে নওরোজকে তোমাদের জন্য একটি উৎসব রূপে নির্দিষ্ট করিয়াছি। উচ্চারণের প্রভাত তারকা এইরূপে তাঁহার আদেশানুযায়ী গ্রন্থটির দিগন্তের উপর ঔজ্জ্বল্য প্রদান করিতেছে, যিনি আদি-অন্তের পরম প্রভু। মাসগুলির অতিরিক্ত দিনগুলি উপবাস মাসের পূর্বে সন্নিবেশিত করা হউক। আমরা আদেশ দিয়াছি যে, ইহারা সকল রাত্রি ও দিনগুলির মধ্যে ‘হা’ বর্ণের প্রকাশস্বরূপ হইবে এবং সেইহেতু ইহারা বৎসর ও ইহার মাসগুলির সীমা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় নাই। বাহা’র জনমন্ডলীর উচিত হইবে, এই দিনগুলিতে তাহাদের নিজেদেরকে, তাহাদের জ্ঞাতিবর্গকে এবং তাহাদের ছাড়াও দরিদ্র ও নিঃস্বদের আনন্দিত করা এবং আনন্দ-উল্লাস সহকারে তাহাদের পরম প্রভুকে অভিবাদন ও মহিমান্বিত করা, তাঁহার প্রশংসা গীত করা ও তাঁহার নামের উচ্চপ্রশংসা করা; এবং এইগুলি যখন শেষ হইবে - দান করার এই দিনগুলি যাহা আত্মসংযম কালের পূর্ববর্তী হইয়াছে - তখন তাহারা উপবাসে প্রবেশ করুক। তাঁহার দ্বারা এইরূপ আদেশ প্রদান করা হইয়াছে যিনি সমগ্র মানবজাতির পরম প্রভু। ভ্রমণকারী, পীড়িত, যাহারা গর্ভবতী বা স্তন্যদুগ্ধদায়িনী, উপবাস ব্রত পালনে বাধ্য নহে; ঈশ্বরের অনুগ্রহের নিদর্শনস্বরূপ তাহাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছে। সত্য সত্যই, তিনি সর্বশক্তিমান, পরম উদার।
17এইগুলিই ঈশ্বরের আদেশাবলী যাহা তাঁহার সর্বাধিক প্রশংসিত লেখনী দ্বারা গ্রন্থাবলী ও ফলকলিপিসমূহে লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। তোমরা তাঁহার লিপিবদ্ধ আইনসমূহ ও আদেশাবলী দৃঢ়ভাবে আঁকড়াইয়া ধর এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা তাহাদের অলস কল্পনা ও অসার অনুমানসমূহ অনুসরণ করিয়া তাহাদের নিজেদের দ্বারা নির্ধারিত মানদ-সমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে অনুরক্ত রহিয়াছে এবং ঈশ্বর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মানদ-সমূহকে তাহাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করিয়াছে। সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার হইতে বিরত থাক এবং সতর্ক হও, যেন অভিলাষ তোমাদিগকে এই অনুগ্রহ হইতে বঞ্চিত না করে ; যাহা গ্রন্থে নির্ধারিত রহিয়াছে।
18আদেশ করা হইয়াছে যে, বিচারের পরম প্রভু, ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপনকারী প্রত্যেকে, প্রতিদিন, তাহার হস্তদ্বয় এবং অতঃপর মুখমন্ডল ধৌত করিয়া উপবিষ্ট হইবে এবং ঈশ্বরের দিকে মুখ ফিরাইয়া পঁচানব্বই বার “আল্লাহু-আব্হা’’ আবৃত্তি করিবে। এইরূপ-ই ছিল স্বর্গসমূহের স্রষ্টার আদেশ, যখন তিনি শক্তি ও মহিমা সহকারে নিজেকে তাঁহার নামাবলীর সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। অনুরূপভাবে তোমরা বাধ্যতামূলক প্রার্থনার জন্য অভিসিঞ্চন স¤পাদন কর ; ইহাই ঈশ্বরের আদেশ, যিনি অতুলনীয়, অনিয়ন্ত্রিত।
19তোমাদিগকে মানবহত্যা বা ব্যভিচার করা অথবা পরনিন্দা বা মিথ্যা অপবাদে লিপ্ত হইতে নিষেধ করা হইয়াছে; অতএব তোমরা তাহা পরিত্যাগ কর যাহা পবিত্র গ্রন্থাবলী ও ফলকলিপিসমূহে নিষিদ্ধ করা হইয়াছে।
20আমরা উত্তরাধিকারকে সাত শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছি: শিশুদের প্রতি, আমরা পাঁচ শত চল্লিশ অংশবিশিষ্ট নয় ভাগ বরাদ্দ করিয়াছি; স্ত্রীর প্রতি, চারি শত আশি অংশবিশিষ্ট আট ভাগ; পিতার প্রতি, চারি শত কুড়ি অংশবিশিষ্ট সাত ভাগ; মাতার প্রতি, তিন শত ষাট অংশবিশিষ্ট ছয় ভাগ; ভ্রাতাগণের প্রতি, তিন শত অংশবিশিষ্ট পাঁচ ভাগ; ভগিনীগণের প্রতি, চার ভাগ বা দুই শত চল্লিশ অংশ; এবং শিক্ষকগণের প্রতি, তিন ভাগ বা এক শত আশি অংশ। এইরূপ-ই ছিল আমার অগ্রদূতের অধ্যাদেশ, যিনি রাত্রিকালে ও প্রভাতে আমার নামের উচ্চ প্রশংসা করিয়াছেন। যখন আমরা এখনও জন্মগ্রহণ করে নাই এমন শিশুদের চিৎকার শ্রবণ করিলাম, তখন আমরা তাহাদের অংশকে দ্বিগুণ করিলাম এবং অন্যদের অংশ হ্রাস করিলাম। বাস্তবিক পক্ষে, যাহা কিছু তিনি ইচ্ছা করেন, তাহা আদেশ করিবার শক্তি তাঁহার রহিয়াছে এবং তাঁহার সার্বভৌম ক্ষমতাবলে তিনি তাহাই করেন, যাহা তিনি ইচ্ছা করেন।
21মৃত ব্যক্তি কোন সন্তান না রাখিয়া গেলে তাহাদের অংশ অনাথশিশু ও বিধবাদের জন্য এবং যাহা কিছু জনসাধারণের জন্য হিতকর হইবে তাহাতে পরম করুণাময়ের অছিবৃন্দ কর্তৃক ব্যয়ের নিমিত্তে বিচারালয়ের নিকট ফেরত যাইবে, যেন সকলে তাহাদের পরম করুণাময়, ক্ষমাশীল প্রভুর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতে পারে।
22মৃত ব্যক্তি যদি সন্তান রাখিয়া যায়, কিন্তু অন্যান্য শ্রেণীর উত্তরাধিকারীগণের কেহ না থাকে যাহাদের কথা গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হইয়াছে, তাহারা উত্তরলব্ধির দুই-তৃতীয়াংশ লাভ করিবে এবং অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ে ফেরত যাইবে এইরূপ-ই হইতেছে আদেশ, যাহা তাঁহারই দ্বারা মহত্ত্ব ও মহিমায় প্রদত্ত হইয়াছে, যিনি সর্বাধিকারী, সর্বোচ্চ।
23যদি মৃত ব্যক্তির সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত উত্তরাধিকারীগণের কেহ না থাকে, কিন্তু তাহার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে তাহার ভাই অথবা বোনের দিক হইতে ভ্রাতুষ্পুত্র, ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং ভাগিনেয়, ভাগিনেয়ীগণ থাকে তাহা হইলে উত্তরলব্ধির দুই-তৃতীয়াংশ তাহাদের প্রতি যাইবে; অথবা উহাদের অবর্তমানে, এই অংশ তাহার পিতা বা মাতা উভয় দিকের চাচা ও খালাগণের প্রতি, এবং অতঃপর, তাহাদের পুত্র ও কন্যাগণের প্রতি যাইবে। উত্তরলব্ধির অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ যে কোন অবস্থায় বিচারাসনে ফেরত যাইবে। এইরূপে ইহা তাঁহার দ্বারা এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হইয়াছে যিনি সমস্ত লোকের শাসনকর্তা।
24সর্বোচ্চের লেখনী দ্বারা যাহাদের নাম লিপিবদ্ধ হইয়াছে, তাহাদের কেহ মৃত ব্যক্তির জীবদ্দশায় বর্তমান না থাকিলে তাহার বিষয়- স¤পত্তি, ইহার সম্পূর্ণতায় পূর্বোল্লেখিত আসনের প্রতি ফেরত যাইবে, যেন ইহা সেই সকল খাতে ব্যয় হইতে পারে, যাহা ঈশ্বর কর্তৃক নির্দেশিত। সত্য সত্যই, তিনি আদেশদাতা, সর্বশক্তিমান।
25আমরা মৃত ব্যক্তির বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ পুরুষ সন্তানদের প্রতি নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছি, নারী সন্তান অথবা অন্য উত্তরাধিকারীদের প্রতি নহে। সত্য সত্যই, তিনি উদার, সর্ববদান্যতাপূর্ণ।
26মৃত ব্যক্তির জীবদ্দশায় তাহার পুত্র মৃত্যুবরণ করিলে এবং সন্তান রাখিয়া গেলে, ঈশ্বরের গ্রন্থের বিধানানুযায়ী তাহারা তাহাদের পিতার অংশের উত্তরাধিকার লাভ করিবে। তোমরা তাহাদের অংশ নিখুঁত ন্যায়পরায়ণতা সহকারে তাহাদের মধ্যে ভাগ করিয়া দিও। এইরূপে উচ্চারণ মহাসাগর উত্তালভাবে তরঙ্গায়িত হইয়াছে, যাহা সমগ্র মানবকুলের পরম প্রভু কর্তৃক আদিষ্ট আইনসমূহের রতœরাজি প্রদান করিয়াছে।
27মৃত ব্যক্তি অপরিণত বয়সের সন্তান রাখিয়া গেলে তাহাদের উত্তরলব্ধির অংশ অবশ্যই একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি অথবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে বিশ্বাসভরে অর্পণ করিতে হইবে, যাহাতে তাহারা পূর্ণবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত উহা তাহাদের পক্ষে ব্যবসা ও বাণিজ্যে বিনিয়োগ করা যাইতে পারে। বিনিয়োগ হইতে প্রাপ্ত লাভের একটি উপযুক্ত অংশ এইরূপ দায়িত্ব পালনের জন্য তত্ত্বাবধায়কের পাওনারূপে নির্দিষ্ট করিতে হইবে।
28হুকুকুল্লাহ্ প্রদান, কোন ঋণ থাকিলে তাহা পরিশোধ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও মৃতদেহ সমাহিতকরণের ব্যয় নির্বাহ এবং এমন ব্যবস্থা গ্রহণ যাহাতে সম্মান ও মর্যাদা সহকারে মৃত ব্যক্তিকে তাহার সমাধিস্থলে বহন করা যাইতে পারে কেবল তখনই বিষয়-সম্পত্তির বিভক্তিকরণ হইবে। এইরূপ-ই তাঁহার দ্বারা আদিষ্ট হইয়াছে যিনি আদি ও অন্তের পরম প্রভু।
29বল ঃ ইহা সেই নিহিত জ্ঞান, যাহা কখনও পরিবর্তিত হইবে না, যেহেতু ইহার শুরু নয় দ্বারা, একটি প্রতীক, যাহা লুক্কায়িত ও দৃশ্যমান, অলঙ্ঘনীয় এবং নাগালের অতীত মহিমান্বিত নামের পূর্বাভাস দান করে। আমরা সন্তানদের প্রতি যাহা নির্ধারিত করিয়াছি, তাহা তাহাদের উপর ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত একটি দান, যাহাতে তাহারা দয়াশীল, পরম করুণাময়, তাহাদের পরম প্রভুর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতে পারে। সত্য সত্যই, এইগুলি ঈশ্বরের আইনসমূহ ; তোমাদের হীন ও স্বার্থপর বাসনার তাড়নায় এইগুলিকে লঙ্ঘন করিও না। তোমাদের উপর তাঁহার লিপিবদ্ধ আদেশসমূহ পালন কর, যিনি উচ্চারণের উদয়স্থল। তাঁহার ভৃত্যগণের মধ্যে যাহারা অকপট, তাহারা ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত আদেশাবলীকে প্রতিটি ধর্মের বিশ্বাসীদের প্রতি জীবন-সলিলস্বরূপ এবং স্বর্গ ও মর্ত্যরে সমস্ত অধিবাসীদের প্রতি জ্ঞানের প্রদীপ ও প্রেমপূর্ণ দূরদর্শিতা মনে করিবে।
30পরম প্রভু আদেশ দিয়াছেন যে, প্রতিটি নগরে একটি করিয়া বিচারালয় প্রতিষ্ঠিত করা হইবে যেখানে বাহা’র সংখ্যক পরামর্শকগণ সমবেত হইবে, এই সংখ্যা অতিক্রম করিলেও দোষের কিছু থাকিবে না। তাহারা নিজেদেরকে মহিমান্বিত ও সর্বোচ্চ ঈশ্বরের উপস্থিতির দরবারে প্রবেশকারীরূপে এবং যিনি অদৃশ্যমান যেন তাঁহাকে দর্শন করিতেছে এইরূপ মনে করিবে। তাহাদের নিজেদেরকে মানবমন্ডলীর মধ্যে পরম করুণাময়ের বিশ্বস্ত ব্যক্তিবর্গ এবং যাহারা পৃথিবীতে বসবাস করিতেছে তাহাদের সকলের জন্য ঈশ্বর নিযুক্ত অভিভাবকবৃন্দরূপে গণ্য করা উপযুক্ত হইবে। তাহাদের উপর আরোপিত দায়িত্ব হইতেছে একত্রে পরামর্শ গ্রহণ করা এবং তাঁহার-ই কারণে, ঈশ্বরের ভৃত্যদের স্বার্থসমূহ সেইরূপ গণ্য করা যেইরূপ তাহারা তাহাদের নিজেদের স্বার্থসমূহকে গণ্য করিয়া থাকে এবং তাহাই মনোনীত করা, যাহা সন্তোষজনক ও উপযুক্ত। এইরূপ-ই পরম প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের আদেশ করিয়াছেন। সতর্ক হও, যেন তোমরা যাহা কিছু তাঁহার ফলকলিপিতে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা পরিত্যাগ না কর। ঈশ্বরকে ভয় কর, হে তোমরা যাহারা উপলব্ধি কর।
31হে বিশ্বের জনমন্ডলী! দেশসমূহের সর্বত্র তোমরা তাঁহারই নামে উপাসনালয়সমূহ নির্মাণ কর, যিনি সমস্ত ধর্মের পরম প্রভু। সৃষ্টির জগতে সেইগুলিকে সম্ভবমত নিখুঁত কর এবং উহাদের জন্য যাহা কিছু উপযুক্ত তাহা দ্বারা সজ্জিত কর, প্রতিমা ও প্রতিকৃতি দ্বারা নহে। অতঃপর উহাদের মধ্যে ঔজ্জ্বল্য ও আনন্দ সহকারে তোমাদের প্রভুর প্রশংসা কীর্তন কর, যিনি পরম করুণাময়। সত্য সত্যই, তাঁহারই স্মরণের দ্বারা চক্ষু দীপ্তি লাভ করে এবং হৃদয় আলোকে পরিপূর্ণ হয়।
32পরম প্রভু আদেশ দিয়াছেন যে, তোমাদের মধ্যে যাহারা সমর্থ, তাহারা পবিত্র গৃহটিতে তীর্থযাত্রা করিবে এবং তিনি তাঁহার পক্ষ হইতে করুণাস্বরূপ নারীগণকে ইহা হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন। বাস্তবিক-ই, তিনি সর্ববদান্যতাপূর্ণ, পরম উদার।
33হে বাহা’র জনমন্ডলী! তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের কর্তব্য হইল কোনপ্রকার পেশায় নিযুক্ত হওয়া Ñ যেমন, হস্তশিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা অনুরূপ কোনও কিছু। এইরূপ কর্মে তোমাদের নিয়োজিত হওয়াকে আমরা একক সত্য ঈশ্বরের উপাসনার মর্যাদায় উন্নীত করিয়াছি। হে লোকসকল, তোমাদের প্রভুর কৃপা ও আশীর্বাদসমূহ সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা কর এবং সন্ধ্যা ও প্রভাতকালে তাঁহাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন কর। অলসতায় ও নিষ্ক্রিয়তায় তোমরা সময় নষ্ট করিও না বরং নিজেদেরকে তাহাতেই নিয়োজিত কর, যাহা তোমাদিগকে এবং অন্যদিগকে লাভবান করিবে। এইরূপ এই ফলকলিপিতে আদেশ দেওয়া হইয়াছে, যাহার দিগন্ত হইতে বিজ্ঞতা ও উচ্চারণের প্রাভাতিক তারকা কিরণ বর্ষণ করিয়াছে। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে তাহারা সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত, যাহারা বসিয়া থাকে ও ভিক্ষা করে। তোমরা উপায়সমূহের রজ্জু শক্তভাবে আঁকড়াইয়া ধর এবং সকল উপায়ের দাতা ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের আস্থা স্থাপন কর।
34গ্রন্থে হস্ত চুম্বন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। ঈশ্বর কর্তৃক এই রীতি নিষিদ্ধ হইয়াছে, যিনি মহিমা ও আদেশের পরম প্রভু। অপর কোন আত্মা হইতে পাপের ক্ষমা প্রার্থনা করিবার অনুমতি কাহাকেও দেওয়া হয় নাই; অনুশোচনা তোমাদের ও ঈশ্বরের মধ্যে হইতে হইবে। সত্য সত্যই, তিনি ক্ষমাশীল, বদান্যতাপূর্ণ, পরম উদার, যিনি অনুতপ্তদের মার্জনাকারী।
35হে তোমরা পরম করুণাময়ের ভৃত্যগণ! ঈশ্বরের ধর্মের সেবা করিবার জন্য তোমরা এইরূপভাবে উত্থিত হও যেন ঈশ্বরের নিদর্শনাবলীর প্রভাতকে যাহারা অবিশ্বাস করিয়াছে, তাহাদের কার্যাবলী হইতে সৃষ্ট উদ্বেগ ও দুঃখ-কষ্ট তোমাদিগকে যন্ত্রণাগ্রস্ত করিতে না পারে। ঐ সময়ে যখন প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হইল এবং প্রতিশ্রুতজনকে প্রকাশ করা হইল, তখন পৃথিবীর জাতিবর্গের মধ্যে মতানৈক্যের উদ্ভব হইল এবং প্রতিটি সম্প্রদায় ইহার নিজের অসার এবং অলস কল্পনাসমূহের অনুসরণ করিল।
36জনমন্ডলীর মধ্যে ঐ ব্যক্তি রহিয়াছে যে দরজার পাশে পাদুকাগুলির মধ্যে বসিয়া থাকে, পক্ষান্তরে তাহার হৃদয় সম্মানের আসনের জন্য লালায়িত। বল ঃ তুমি কি প্রকৃতির লোক, হে দাম্ভিক ও অমনোযোগী ব্যক্তি, তুমি নিজে যাহা তাহা ব্যতীত অন্য কিছু দেখাইতে আকাঙ্খী? এবং জনমন্ডলীর মধ্যে ঐ ব্যক্তি রহিয়াছে, যে নিগূঢ় জ্ঞানের এবং এমনকি ঐ জ্ঞানের মধ্যে গভীরতর নিগূঢ় জ্ঞান লুক্কাইত বলিয়া দাবি করে। বল : তুমি মিথ্যা বলিতেছ! ঈশ্বরের শপথ! তুমি যাহার অধিকারী হইয়াছ তাহা তুষ ব্যতীত আর কিছুই নহে, যাহা আমরা তোমার জন্য সেইরূপে ছাড়িয়া দিয়াছি যেইরূপে কুকুরগুলির জন্য অস্থিসমূহ ছাড়িয়া দেওয়া হয়। একক সত্য ঈশ্বরের ন্যয়পরায়ণতার শপথ! যদি কেহ সমগ্র মানবজাতির পদ ধৌত করিয়া দেয় এবং সে যদি বনে-জঙ্গলে, উপত্যকাসমূহে, সুউচ্চ পাহাড়-পর্বতে, অত্যুচ্চ চূড়ায় ঈশ্বরের আরাধনা করে, কোন শিলাখ- অথবা বৃক্ষ, পৃথিবীর কোন ভূমিও যদি তাহার উপাসনার সাক্ষী হইতে বাদ না পড়ে - তাহা সত্ত্বেও, যদি তাহার নিকট হইতে আমার শুভ-সন্তুষ্টির সুঘ্রাণ না পাওয়া যায়, তাহার কর্মসমূহ ঈশ্বরের নিকট কখনও গ্রহণযোগ্য হইবে না। এইরূপ-ই তাঁহার দ্বারা আদিষ্ট হইয়াছে, যিনি সকলের পরম প্রভু। ভারতের ভূখন্ড সমূহের কত না লোক নিজেকে সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়াছে, ঈশ্বর যেইসব বস্তুকে বৈধ বলিয়া আদেশ করিয়াছেন সেইগুলি হইতে নিজেকে বঞ্চিত করিয়াছে, তাহারা নিজের উপর ইন্দ্রিয়নিগ্রহ ও কঠোর সংযম চাপাইয়া দিয়াছে এবং শ্লোকসমূহের প্রকাশক, ঈশ্বর তাহাদের স্মরণ করেন নাই। তোমাদের কর্মসমূহকে তোমাদের উচ্চাভিলাষের লক্ষ্যবস্তুকে আটকাইবার জন্য ফাঁদস্বরূপ ব্যবহার করিও না; এই পরম লক্ষ্যবস্তু হইতে তোমাদিগকে বঞ্চিত করিও না, যাহা অর্জনের নিমিত্তে এইরূপ সকলেই সর্বদা আকুল আকাঙ্খা প্রকাশ করিয়াছে, যাহারা ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করিয়াছে। বল ঃ সমস্ত কর্মের জীবন হইতেছে আমার শুভ-সন্তুষ্টি এবং সকল বস্তু-ই আমার গ্রহণশীলতার উপর নির্ভর করে। তোমরা ফলকলিপিগুলি পাঠ কর, যাহাতে তোমরা সর্বগৌরবময়, চির-বদান্যতাপূর্ণ ঈশ্বরের গ্রন্থসমূহে যাহা উদ্দেশ্য করা হইয়াছে তাহা জানিতে পার। যে কেহ আমার ভালবাসা লাভ করে, সে সমগ্র জগতের উপর সম্মান সহকারে উপবেশনের জন্য একটি স্বর্ণ সিংহাসনের যোগ্যতা অর্জন করে; যে কেহ ইহা হইতে বঞ্চিত হয়, সে ধূলির উপর উপবেশন করিলেও সেই ধূলি সকল ধর্মের পরম প্রভু, ঈশ্বরের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করিবে।
37যে কেহ একটি পূর্ণ সহস্র বর্ষ অতিক্রান্ত হইবার পূর্বে ঈশ্বর হইতে সরাসরি একটি প্রত্যাদেশের দাবি করে, ঐরূপ ব্যক্তি নিশ্চিতরূপে একজন মিথ্যাবাদী প্রতারক। আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি অনুগ্রহপূর্বক এইরূপ দাবি অস্বীকার ও পরিত্যাগ করিতে তাহাকে সাহায্য করেন। সে যদি অনুতাপ করে, তাহা হইলে নিঃসন্দেহে ঈশ্বর তাহাকে ক্ষমা করিবেন। কিন্তু সে যদি তাহার ভ্রান্তিতে অটল থাকে, তাহা হইলে ঈশ্বর নিশ্চিতরূপে এমন একজনকে প্রেরণ করিবেন, যে তাহার সহিত নির্দয় ব্যবহার করিবে। বাস্তবিক পক্ষে ঈশ্বর শাস্তিদানে ভয়ংকর। যে কেহ এই শ্লোকের সুস্পষ্ট অর্থ ছাড়া অন্য কোনভাবে ব্যাখ্যা করিবে, সে ঈশ্বরের আত্মা ও তাঁহার কৃপা হইতে বঞ্চিত হইবে যে কৃপা সমগ্র সৃষ্ট বস্তুসমূহকে পরিবেষ্টন করিয়া রাখিয়াছে। ঈশ্বরকে ভয় কর এবং তোমাদের অসার কল্পনাসমূহের অনুসরণ করিও না। শুধু তাহাই নহে বরং সর্বশক্তিমান, সর্ববিজ্ঞ তোমার পরম প্রভুর আদেশ পালন কর। শীঘ্রই অধিকাংশ দেশে গোলযোগপূর্ণ কলরব উত্থিত করা হইবে। হে আমার জনমন্ডলী, এইসকল এড়াইয়া চলিবে এবং অন্যায় ও অনিষ্টকারীদের অনুসরণ করিও না। ইহা তাহাই, যাহা সম্বন্ধে ইরাকে আমাদের বসবাসকালে এবং অতঃপর রহস্যময় দেশে তোমাদিগকে পূর্ব হইতে সতর্ক করিয়াছিলাম এবং এখন এই দীপ্তিশীল স্থান হইতে সতর্ক করিতেছি।
38হে বিশ্বের জাতিসমূহ, আতঙ্কিত হইও না, যখন সুষমার দিবস তারকা অস্তমিত যাইবে এবং আমার তাঁবুর স্বর্গ তোমাদের চক্ষু হইতে লুক্কায়িত হইবে। আমার ধর্মকে অগ্রসর করাইবার জন্য এবং জনমন্ডলীর মধ্যে আমার বাণীকে উচ্চে স্থাপন করিবার জন্য উত্থিত হও। আমরা সর্ব সময়েই তোমাদের সঙ্গে রহিয়াছি এবং সত্যের শক্তি দ্বারা তোমাদের শক্তিশালী করিব। সত্যই আমরা সর্বশক্তিমান। যে কেহ আমাকে স্বীকার করিয়াছে, সে উত্থিত হইবে এবং এমন প্রত্যয়ের সহিত আমার সেবা করিবে, যেন পৃথিবী ও স্বর্গের শক্তিসমূহ তাহার উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করিতে অক্ষম হইবে।
39পৃথিবীর জাতিসমূহ গভীর নিদ্রায় মগ্ন। যদি তাহারা তাহাদের নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইত তাহা হইলে তাহারা সর্বজ্ঞ, সর্ববিজ্ঞ ঈশ্বরের প্রতি আগ্রহ সহকারে দ্রুত অগ্রসর হইত। তাহাদের অধিকারভুক্ত সকল কিছু দূরে নিক্ষেপ করিত, তাহা পৃথিবীর সমস্ত সঞ্চিত ধন হউক না কেন, যাহাতে তাহাদের পরম প্রভু তাহাদের উদ্দেশ্যে একটি মাত্র শব্দ উচ্চারণে তাহাদিগকে স্মরণ করেন। তোমাদের প্রতি এইরূপ-ই হইতেছে তাঁহার আদেশ, যিনি একটি ফলকলিপিতে নিহিত বস্তুসমূহের জ্ঞান ধারণ করিয়াছেন, যাহা সৃজনকুলের চক্ষু দর্শন করে নাই এবং যাহা সকল জগতের সর্বশক্তিমান রক্ষক, তাঁহার নিজ সত্তা ব্যতীত অপর কাহারও নিকট প্রকাশিত করেন নাই। তাহাদের অশুভ আকাঙ্খা সমূহের মত্ততায় তাহারা এতই কিংকর্তব্যবিমূঢ় যে, তাহারা সর্বঅস্তিত্বের পরম প্রভুকে চিনিতে অসমর্থ, যাঁহার কন্ঠস্বর চারিদিক হইতে উচ্চস্বরে ঘোষণা করিতেছে “শক্তিমান, সর্ববিজ্ঞ আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই।’’
40বল ঃ তোমাদের অধিকারভুক্ত বস্তুসমূহ লইয়া আনন্দ করিও না, আজ রাতে এইগুলি তোমাদের, আগামীকাল এইগুলি অন্যেরা অধিকার করিবে। এইরূপে তিনি তোমাদিগকে সতর্ক করিয়াছেন, যিনি সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞাত। বল ঃ তোমরা কি দাবি করিতে পার যে, যাহা তোমাদের অধিকারভুক্ত তাহা স্থায়ী বা নিরাপদ? না! পরম করুণাময়, আমার শপথ, তোমরা তাহা পার না, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা নিরপেক্ষভাবে বিচার করে। একটি বায়ুপ্রবাহের মত তোমাদের জীবনের দিনগুলি দ্রুত অতিবাহিত হইবে এবং তোমাদের সকল জাঁকজমক ও গৌরব গুটাইয়া লওয়া হইবে, যেমন করিয়া তোমাদের পূর্বে যাহারা চলিয়া গিয়াছে তাহাদের জাঁকজমক ও গৌরব গুটাইয়া লওয়া হইয়াছিল। গভীরভাবে বিবেচনা কর, হে জনমন্ডলী! তোমাদের বিগত দিনগুলি, তোমাদের হারানো শতাব্দীগুলির কি হইয়াছে? সুখী সেই দিনগুলি যাহা ঈশ্বরের স্মরণে উৎসর্গ করা হইয়াছে, এবং আশীষপূতঃ সেই ক্ষণসমূহ যাহা তাঁহারই গুণকীর্তনে অতিবাহিত হইয়াছে, যিনি সর্ববিজ্ঞ। আমার জীবনের শপথ! না শক্তিমানদের জাঁকজমক, না ধনীদের স¤পদ, না অধার্মিকদের কর্তৃত্ব স্থায়ী হইবে। তাঁহার নিকট হইতে একটি কথায় সকল কিছুই বিনাশপ্রাপ্ত হইবে। সত্য সত্যই, তিনি সর্বক্ষমতাবান, সর্ববাধ্যকারী, সর্বশক্তিমান। মানুষের অধিকারভুক্ত পার্থিব বস্তুসমূহে কি সুযোগ-সুবিধা রহিয়াছে? যাহা তাহাদিগকে লাভবান করিত, তাহা তাহারা সম্পূর্ণরূপে অবহেলা করিয়াছে। শীঘ্রই তাহারা তাহাদের নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইবে এবং যাহা তাহাদের সর্বশক্তিশালী, সর্বপ্রশংসিত পরম প্রভুর দিনগুলিতে তাহাদের নিকট হইতে হারাইয়া গিয়াছে, তাহা লাভ করিতে নিজেদেরকে অক্ষম দেখিতে পাইবে। যদি তাহারা ইহা জানিত, তাহা হইলে তাহাদের সকল কিছু তাহারা পরিত্যাগ করিত, যাহাতে তাহাদের নামগুলি তাঁহার সিংহাসনের সম্মুখে উল্লেখিত হইতে পারে। সত্য সত্যই তাহারা মৃতদের মধ্যে পরিগণিত।
41জনমন্ডলীর মধ্যে সেই ব্যক্তি যাহার জ্ঞান তাহাকে গর্বিত করিয়াছে এবং তদ্বারা সে স্বয়ং-সত্তাময় আমার নাম স্বীকার করিতে বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছে, সে যখন তাহার পশ্চাতে অনুসরণকারী পাদুকার শব্দ শ্রবণ করে, তখন সে নিজের মর্যাদায় নমরুদ-এর চাইতেও শ্রেষ্ঠতর ভাব গ্রহণ করে। বল ঃ হে প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তি! এখন কোথায় তাহার বাসস্থান? ঈশ্বরের শপথ, উহা নিকৃষ্টতম অগ্নি। বল ঃ হে ধর্মোপদেষ্টাদের সমষ্টি! তোমরা কি আমার পরম মর্যাদাপূর্ণ লেখনীর তীক্ষè স্বর শ্রবণ কর নাই? তোমরা কি এই সূর্য প্রত্যক্ষ কর নাই যাহা সর্বগৌরবমন্ডিত দিগন্তের উপর দীপ্তিমান প্রভায় কিরণ বর্ষণ করিতেছে? কতকাল তোমরা তোমাদের অশুভ রিপুর প্রতিমূর্তিসমূহের উপাসনা করিবে? তোমাদের অসার কল্পনাসমূহ পরিত্যাগ কর ; এবং তোমাদের চিরন্তন পরম প্রভু, ঈশ্বরের দিকে নিজেদেরকে ফিরাও।
42দানের জন্য উৎসর্গীকৃত স¤পদসমূহ, নিদর্শনাবলীর প্রকাশক, ঈশ্বরের নিকট প্রত্যাবর্তন করিবে। যিনি প্রত্যাদেশের উদয়স্থল, তাঁহার অনুমতি ব্যতীত এইগুলি হস্তান্তর করিবার অধিকার কাহারো নাই। তাঁহার পরে এই কর্তৃত্ব আঘ্সানদের নিকট যাইবে এবং তাহাদের পরে বিচারালয়ের নিকট যাইবে - ইতোমধ্যে যদি উহা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয় - যাহাতে তাহারা এই উৎসর্গীকৃত দানগুলি সেইসব স্থানের উপকারে ব্যবহার করিতে পারে যেইগুলি এই ধর্মে মর্যাদাপ্রাপ্ত হইয়াছে, এবং যে কোন কিছুর জন্য যাহা তাঁহারই নিকট হইতে আদেশ দেওয়া হইয়াছে যিনি শক্তি ও পরাক্রমের ঈশ্বর। অন্যথায়, উক্ত উৎসর্গীকৃত দানগুলি বাহা’র সেই জনমন্ডলীর নিকট প্রত্যাবর্তন করিবে, যাহারা তাঁহার অনুমতি ব্যতীত কথা বলে না এবং এই ফলকলিপিতে ঈশ্বর যাহা আদেশ দিয়াছেন সেই অনুসারে ব্যতীত বিচার করে না - লক্ষ্য কর! তাঁহারাই স্বর্গ ও মর্ত্যরে মধ্যে বিজয়ীবর্গ - যাহাতে তাহারা ঐগুলিকে সেইরূপে ব্যবহার করিতে পারে, যাহা শক্তিমান, পরম দয়ালু, ঈশ্বর কর্তৃক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হইয়াছে।
43তোমাদের দুঃখ-কষ্টের সময়গুলিতে বিলাপ করিও না, ইহাতে আনন্দিতও হইও না; তোমরা মধ্য পন্থা অবলম্বন কর, যাহা হইল তোমাদের উপর দুঃখ-কষ্টসমূহে আমার স্মরণ এবং ভবিষ্যতে তোমাদের উপর যাহা কিছু পতিত হইতে পারে, সেই স¤পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা, এইরূপ-ই তিনি তোমাদিগকে অবগত করাইয়াছেন, তিনি যিনি সর্বদর্শী, তিনি যিনি অবগত।
44তোমাদের মস্তকসমূহ মুন্ডন করিও না, ঈশ্বর ইহাদিগকে চুল দ্বারা সজ্জিত করিয়াছেন এবং ইহাতে সৃষ্টির পরম প্রভুর নিকট হইতে তাহাদের জন্য নিদর্শনাবলী রহিয়াছে যাহারা প্রকৃতির প্রয়োজন সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করে। সত্য সত্যই, তিনি শক্তি ও বিজ্ঞতার ঈশ্বর। তথাপি চুলকে কর্ণের সীমা ছাড়াইয়া যাইতে দেওয়া উচিত নহে। এইরূপ-ই তাঁহার দ্বারা আদেশ প্রদান করা হইয়াছে যিনি জগতসমূহের পরম প্রভু।
45চোরের জন্য নির্বাসন ও কারাবাসের আইন জারি করা হইল এবং তৃতীয়বার অপরাধের জন্য তোমরা তাহার ললাটের উপর একটি চিহ্ন প্রদান কর, এইরূপে চিহ্নিত হওয়ায়, সে যেন ঈশ্বরের নগরসমূহ এবং তাঁহার দেশসমূহে গৃহীত হইতে না পারে। সতর্ক হও, যেন দয়াপরবশ হইয়া তোমরা ঈশ্বরের ধর্মের লিখিত আইনসমূহ পালনে অবহেলা না কর ; তোমরা তাহাই কর, যাহা করিতে তোমাদিগকে তাঁহারই দ্বারা আদেশ করা হইয়াছে, যিনি সহানুভুতিশীল ও পরম করুণাময়। আমরা তোমাদিগকে বিজ্ঞতা ও আইনসমূহের বেত্র দ্বারা শিক্ষাদান করিয়া থাকি, সেই পিতার মতই যে তাহার পুত্রকে শিক্ষিত করে এবং এই শিক্ষা তোমাদের নিজেদের প্রতিপালন ও তোমাদের পদমর্যাদার উন্নতি সাধন ব্যতীত আর কোন কিছুর জন্য নহে। আমার জীবনের শপথ! যদি তোমরা আবিষ্কার করিতে পারিতে যে, আমাদের পবিত্র আইনসমূহ অবতীর্ণ করিবার দ্বারা আমরা তোমাদের জন্য যাহা ইচ্ছা করিয়াছি, তাহা হইলে তোমরা এই পবিত্র, এই শক্তিশালী এবং মহামহিমান্বিত ধর্মের জন্য তোমাদের আত্মাগুলিও উৎসর্গ করিতে।
46যে কেহ রৌপ্য ও স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করিতে ইচ্ছা করে সে তাহা করিতে স্বাধীন। সতর্ক হও যেন তোমরা খাদ্যগ্রহণকালে বাটি ও থালাস্থিত বস্তুর মধ্যে তোমাদের হাতগুলি ডুবাইয়া না দাও। তোমরা এইরূপ রীতির অনুসরণ কর, যাহা পরিশুদ্ধতার সহিত অত্যধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। সত্য সত্যই, তিনি তাঁহার অতি বৃহৎ ও অতীব মহিমান্বিত রাজ্যে তোমাদের মধ্যে স্বর্গের অধিবাসীদের বিশুদ্ধতা প্রত্যক্ষ করিতে ইচ্ছা করেন। সর্বাবস্থায় তোমরা বিশুদ্ধতার সহিত দৃঢ়সংলগ্ন থাক যাহাতে তোমাদের নিজেদের এবং নন্দনকাননের অধিবাসীদের উভয়ের কাছেই যাহা অপ্রীতিকর তাহা দর্শন হইতে তোমাদের চক্ষু সংরক্ষিত থাকিতে পারে। কেহ ইহা হইতে বিচ্ছিন্ন হইলে সেই মুহূর্তে তাহার কর্ম বৃথায় পর্যবসিত হইবে ; তবে যদি তাহার উপযুক্ত কারণ থাকে তাহা হইলে ঈশ্বর তাহাকে ক্ষমা করিবেন। বাস্তবিক পক্ষে তিনিই উদার, সর্ববদান্যতাপূর্ণ।
47যিনি ঈশ্বরের ধর্মের প্রাভাতিক স্থল, তাঁহার সর্বমহান অভ্রান্ততায় কোন অংশীদার নাই। তিনিই সেই, যিনি সৃষ্টির রাজ্যে “যাহা তিনি ইচ্ছা করেন তাহা-ই তিনি করিয়া থাকেন’’ এর প্রকাশ। ঈশ্বর এই বৈশিষ্ট্য তাঁহার নিজের জন্য সংরক্ষণ করিয়াছেন এবং এইরূপ মহিমান্বিত ও সর্বোচ্চ পদমর্যাদায় অংশলাভের বিধান অন্য কাহাকেও প্রদান করেন নাই। ইহাই ঈশ্বরের বিধান, যাহা ইতিপূর্বে দুর্বোধ্য রহস্যের আবরণে লুক্কায়িত ছিল। আমরা এই প্রত্যাদেশে ইহা প্রকাশ করিয়াছি এবং ইহার দ্বারা আমরা এইরূপ লোকদের পর্দাসমূহ বিদীর্ণ করিয়াছি, যাহারা ঈশ্বরের গ্রন্থে যাহা উল্লেখিত হইয়াছে তাহা স্বীকার করিতে ব্যর্থ হইয়াছে এবং যাহারা অমনোযোগীদের মধ্যে পরিগণিত হইয়াছিল।
48প্রত্যেক পিতার প্রতি তাহার পুত্র ও কন্যাকে পঠন ও লিখনের কলা ও পবিত্র ফলকলিপিতে যাহা কিছু লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে তাহাতে প্রশিক্ষণ দান করিতে নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে।। তাহার প্রতি যাহা নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে, সে যদি উহা পালন না করে, যদি ঐ ব্যক্তি ধনী হয়, তখন তত্ত্বাবধায়কগণকে তাহার নিকট হইতে তাহা লইতে হইবে, যাহা তাহাদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন এবং যদি ধনী না হয় তাহা হইলে বিষয়টি বিচারালয়ের উপর বর্তাইবে। সত্য সত্যই, আমরা ইহাকে দরিদ্র ও নিঃস্বদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল করিয়াছি। যে তাহার নিজের পুত্রকে অথবা অন্য কাহারো পুত্রকে শিক্ষা দেয় সে যেন আমার-ই একজন পুত্রকে শিক্ষিত করিয়া গড়িয়া তুলিতেছে। তাহার উপর আমার জ্যোতি, আমার প্রেমপূর্ণ দয়ার্দ্রতা, আমার করুণা রহিল, যাহা বিশ্বকে পরিবেষ্টন করিয়া রাখিয়াছে।
49ঈশ্বর প্রত্যেক ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর উপর জরিমানা ধার্য করিয়াছেন, যাহা বিচারালয়ে পরিশোধ করিতে হইবে : নয় মিশ্-কাল স্বর্ণ, ইহা দ্বিগুণ হইবে যদি তাহারা অপরাধটি পুনরায় সংঘটিত করে। এই পৃথিবীতে তিনি তাহাদের জন্য এইরূপ শাস্তি ধার্য করিয়াছেন, যিনি নামাবলীর পরম প্রভু এবং পরবর্তী জগতে তাহাদের জন্য এক অবমাননাকর যন্ত্রণার আদেশ করিয়াছেন। কেহ যদি একটি পাপের জন্য অনুশোচনাগ্রস্ত হয়, তাহার জন্য উপযুক্ত হইবে ইহার জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং তাহার পরম প্রভুর নিকট প্রত্যাবর্তন করা। সত্য সত্যই, যাহাকে তিনি ইচ্ছা তাহার উপর ক্ষমাশীলতা মঞ্জুর করেন এবং যাহা তিনি ইচ্ছা করেন তাহা আদেশ করিবার বিষয়ে কেহ তাঁহাকে প্রশ্ন করিতে পারে না। বাস্তবিকপক্ষে, তিনি চিরক্ষমাশীল, সর্বশক্তিমান, সর্বপ্রশংসিত।
50সতর্ক হও যেন তোমরা গৌরবের আবরণ দ্বারা এই জীবন্ত ঝর্ণার স্ফটিকসদৃশ জল পান করা হইতে বাধাপ্রাপ্ত না হও। এই প্রভাতলগ্নে তাঁহারই নামে তোমরা মুক্তির পেয়ালা আঁকড়াইয়া ধর, যিনি দিবসের সূচনা করিয়া থাকেন এবং তাঁহারই প্রশংসায় পূর্ণ পরিমাণে পান কর, যিনি সর্বগৌরবমন্ডিত, অতুলনীয়।
51আমরা তোমাদের জন্য সঙ্গীত শ্রবণ ও গান গাওয়াকে বৈধ করিয়াছি। তথাপি, মনোযোগী হও, যেন উহাদের শ্রবণ তোমাদিগকে শোভনতা ও মর্যাদার সীমা লঙ্ঘন না করায়। তোমাদের আনন্দ আমার সর্বমহান নাম হইতে উদ্ভূত আনন্দ হউক, একটি নাম যাহা হৃদয়ে পরমানন্দ আনয়ন করে এবং তাহাদের সকলের মনগুলিকে উল্লাসে পরিপূর্ণ করে, যাহারা ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করিয়াছে। সত্য সত্যই, আমরা সঙ্গীতকে তোমাদের আত্মার জন্য একটি সোপানস্বরূপ করিয়াছি, একটি মাধ্যম যদ্বারা উহারা উর্ধ্বস্থিত রাজ্যে উত্তোলিত হইতে পারে ; সেই হেতু, ইহাকে স্বার্থ ও রিপুর ডানাস্বরূপ করিও না। সত্যই, আমরা তোমাদিগকে নির্বোধদের মধ্যে গণ্য দেখিতে অনিচ্ছুক।
52আমরা নির্দেশ দিয়াছি যে, সমস্ত জরিমানার এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ের নিকট যাইবে এবং আমরা ইহার ব্যক্তিবর্গকে নির্মল ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করিবার জন্য সতর্ক করিয়াছি, যাহাতে তাহারা এইভাবে সঞ্চিত অর্থ এইরূপ উদ্দেশ্যগুলিতে ব্যয় করিতে পারে, যেইরূপ তাহাদিগকে তিনিই নির্দেশ দিয়াছেন, যিনি সর্বজ্ঞ, সর্ববিজ্ঞ। হে তোমরা ন্যায়পরায়ণতার লোকসকল! তোমরা ঈশ্বরের রাজ্যে তাঁহার মেষদের জন্য মেষপালকস্বরূপ হও এবং তাহাদিগকে ছদ্মবেশে আগমনকারী সেই সকল ক্ষুধার্ত নেকড়েগুলি হইতে রক্ষা কর, যেমনভাবে তোমরা তোমাদের নিজেদের পুত্রদের রক্ষা করিবে। এইরূপে তিনি তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করিয়াছেন যিনি উপদেষ্টা, যিনি বিশ্বস্ত ।
53তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতভেদের উদ্ভব হইলে, যতক্ষণ এই স্বর্গের দিগন্তের উপর সূর্যটি কিরণ দান করিতে থাকিবে, তাহা ঈশ্বরের নিকট সমর্পণ করিবে এবং যখন উহা অস্তমিত যাইবে, তখন যাহা কিছু তাঁহার দ্বারা অবতীর্ণ হইয়াছে, তোমরা তাঁহার নিকট পেশ করিবে। সত্য সত্যই, ইহা বিশ্বের জনমন্ডলীর জন্য যথেষ্ট। বল ঃ হে লোকসকল! যখন আমার উপস্থিতির জ্যোতি প্রত্যাহার করা হইবে এবং আমার উচ্চারণের মহাসাগর নিস্তব্ধ হইয়া যাইবে, তখন তোমরা বিচলিত হইও না। তোমাদের মধ্যে আমার উপস্থিতির এক বিজ্ঞতা রহিয়াছে এবং আমার অনুপস্থিতিরও আর এক বিজ্ঞতা রহিয়াছে, যাহা অনুপম, সর্বজ্ঞ, ঈশ্বরের নিকট ব্যতীত সকলের কাছে দুর্জ্ঞেয়। সত্য সত্যই, আমরা তোমাদিগকে আমাদের প্রভার রাজ্য হইতে দর্শন করিয়া থাকি এবং যে কেহ আমাদের ধর্মের বিজয়ের জন্য উত্থিত হইবে তাহাকে আমরা উর্ধ্বস্থিত জনমন্ডলীর এবং আমাদের অনুগ্রহপ্রাপ্ত দেবদূতের একটি দল দ্বারা সাহায্য করিব।
54হে বিশ্বের জাতিসমূহ! শাশ্বত সত্য, ঈশ্বর, আমার সাক্ষী যে, তোমাদের পরম প্রভু, যিনি বন্ধনহীন, কর্তৃক উচ্চারিত বাক্যাবলীর মিষ্টতা সহকারে শিলাসমূহ হইতে বিশুদ্ধ ও ধীর বেগে প্রবাহিত জলধারাসমূহ প্রচুর পরিমাণে প্রবাহিত হইয়াছে ; এবং এখনও তোমরা ঘুমাইয়া রহিয়াছ। তোমাদের যাহা অধিকারে রহিয়াছে, তাহা দূরে নিক্ষেপ কর, এবং নিরাসক্তির ডানায় ভর করিয়া সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর নাগালের বাহিরে উড্ডয়ন কর। এইরূপে সৃষ্টির পরম প্রভু তোমাদিগকে আদেশ করিতেছেন, যাঁহার লেখনীর সঞ্চালন মানবজাতির আত্মায় আমূল পরিবর্তন আনিয়াছে।
55তোমরা কি জান কিরূপ উচ্চতাসমূহ হইতে তোমাদের সর্বগৌরবময়, পরম প্রভু আহ্বান করিতেছেন? তোমরা কি ধারণা কর যে, তোমরা সেই লেখনী চিনিতে পারিয়াছ যদ্বারা তোমাদের পরম প্রভু, সমস্ত নামাবলীর প্রভু তোমাদিগকে আদেশ করিতেছেন? না, আমার জীবনের শপথ! যদি তোমরা ইহা জানিতে, তাহা হইলে তোমরা পৃথিবী পরিত্যাগ করিতে এবং তোমরা সর্বান্তঃকরণে প্রিয়তমের সকাশে দ্রুত ছুটিয়া আসিতে। তাঁহার বাক্যের দ্বারা তোমাদের চেতনাসমূহ এমন প্রবল আবেগে অভিভূত হইত যেন বিশ্বব্রহ্মা-কে প্রচন্ড আন্দোলনে নিক্ষেপ করা হইয়াছে Ñ এই ক্ষুদ্র ও নগণ্যটির কি হইত! এইরূপে আমার কৃপার নিদর্শনস্বরূপ, আমার প্রেমপূর্ণ দয়ার্দ্রতার আকাশ হইতে আমার অনুগ্রহের ধারা বর্ষিত হইয়াছে, যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞদের মধ্যে গণ্য হইতে পার।
56কোন লোককে আহত বা আঘাত করিবার শাস্তি আঘাতজনিত কষ্টের তীব্রতার উপর নির্ভর করে ; প্রতিটি মাত্রার জন্য বিচারের পরম প্রভু একটি নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণের বিধান দিয়াছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি আদেশদাতা, মহাপরাক্রমশালী, মহামহিমান্বিত। যদি আমাদের ইচ্ছা হয়, আমরা এই ক্ষতিপূরণসমূহের সঠিক পরিমাণ প্রকাশ করিবÑ ইহা আমাদের পক্ষ হইতে একটি প্রতিশ্রুতি এবং সত্য সত্যই, তিনি তাঁহার প্রতিশ্রুতির রক্ষক, সর্ববিষয়ের জ্ঞাত।
57সত্য সত্যই, তোমাদিগকে প্রতিমাসে একবার ভোজ প্রদানের আদেশ দেওয়া হইয়াছে, তা যদি কেবল জল পরিবেশন করিয়াও হয়। কেননা, ঈশ্বর হৃদয়সমূহকে একতাবদ্ধ করিতে ইচ্ছা করিয়াছেন, যদিও তাহা পার্থিব ও স্বর্গীয় উভয়ের মাধ্যমে।
58সতর্ক হও, যেন দৈহিক ইচ্ছাসমূহ এবং কোন বিকৃত প্রবৃত্তি তোমাদের মধ্যে মতভেদের উস্-কানি না দেয়। তোমরা একটি হস্তের অঙ্গুলীসমূহ, একটি দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গস্বরূপ হও। এইরূপে প্রত্যাদেশের লেখনী তোমাদের উপদেশ প্রদান করিতেছে, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা বিশ্বাস করে।
59ঈশ্বরের করুণা ও তাঁহার দানসমূহ বিবেচনা কর। তিনি তোমাদিগকে তাহা-ই আদেশ করিতেছেন যাহা তোমাদিগকে লাভবান করিবে, যদিও তিনি নিজে সমস্ত সৃজনকুল ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ। তোমাদের অসৎ কর্ম কখনো আমাদের ক্ষতি করিতে পারে না, তোমাদের সৎ কর্মাবলীও আমাদিগকে লাভবান করিতে পারে না। আমরা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তোমাদের আহ্বান করি। এই বিষয়ে বুদ্ধিমান ও অন্তর্দৃষ্টিস¤পন্ন প্রত্যেক ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করিবে।
60যদি তোমরা শিকারি পশু অথবা পক্ষীসমূহের সাহায্যে শিকার কর, তাহা হইলে যখন তোমরা সেইগুলিকে তাহাদের শিকারের পশ্চাদ্ধাবনের জন্য প্রেরণ করিবে, তখন তোমরা ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করিবে : তাহা হইলে উহারা যাহা-কিছু শিকার করুক না কেন, তাহা তোমাদের জন্য বৈধ হইবে, এমনকি যদি তোমরা তাহা মৃত দেখিতে পাও। সত্য সত্যই, তিনি সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞাত। তথাপি, সতর্ক হও, যেন তোমরা মাত্রাতিরিক্ত শিকার না কর। সর্ববিষয়ে তোমরা ন্যায়বিচার ও ন্যায়পরায়ণতার পথে চলিবে। এইরূপ-ই তিনিই তোমাদের আদেশ করিতেছেন, যিনি প্রত্যাদেশের প্রাভাতিক স্থল, যদি তোমরা তাহা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিতে।
61ঈশ্বর আমার জ্ঞাতিবর্গের প্রতি সদয়ভাব প্রদর্শনের জন্য তোমাদের প্রতি আদেশ করিয়াছেন, তবে তিনি তাহাদিগকে অন্যের স¤পত্তি ভোগের অধিকার প্রদান করেন নাই। সত্য সত্যই, তিনি স্বয়ংস¤পূর্ণ, তাঁহার সৃষ্ট জীবকুলের কোন প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে।
62কেহ ইচ্ছাপূর্বক অগ্নিসংযোগে কোন আবাসগৃহ বিনাশ করিলে, তাহাকেও তোমরা অগ্নিসংযোগে পোড়াইয়া দিবে ; কেহ উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপরের জীবন হনন করিলে, তাহাকেও তোমরা মারিয়া ফেলিবে। তোমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগে তোমরা ঈশ্বরের বিধান শক্ত করিয়া আঁকড়াইয়া ধরিবে এবং মূর্খদের পথসমূহ পরিত্যাগ করিবে। তোমরা অগ্নিসংযোগকারী ও খুনীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিলেও তাহা এই ধর্মগ্রন্থের আইনের ধারা মোতাবেক অনুমোদনীয় হইবে। সত্য সত্যই, তিনি যাহা ইচ্ছা করেন তাহা আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা তাঁহার রহিয়াছে।
63ঈশ্বর তোমাদের প্রতি বিবাহের বিধান দিয়াছেন। সতর্ক হও, যেন তোমরা দুই-এর অধিক স্ত্রী গ্রহণ না কর। যে কেহ ঈশ্বরের সেবিকাদের মধ্য হইতে একজন সঙ্গী লইয়া নিজেকে সন্তুষ্ট করে, সেই ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই শান্তিতে জীবন-যাপন করিবে। এবং যেই ব্যক্তি তাহার সেবায় একজন পরিচারিকা নিয়োগ করিতে চাহে, সে তাহা শোভনতা সহকারে করিতে পারে। এইরূপ-ই হইতেছে আদেশ, যাহা প্রকৃতপক্ষে ও ন্যায়পরায়ণতা সহকারে প্রত্যাদেশের লেখনী দ্বারা লিপিবদ্ধ হইয়াছে। হে লোকসকল, বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হও, যাহাতে তোমরা এমন একজনকে জন্ম দিতে পার, যে আমার ভৃত্যদের মধ্যে আমার নাম উল্লেখ করিবে। তোমাদের প্রতি ইহা-ই আমার আদেশ; তোমাদের প্রতি একটি সহায়তাস্বরূপ ইহাতে দৃঢ়সংলগ্ন থাক।
64হে বিশ্বের জনমন্ডলী! অহং-এর প্ররোচনাসমূহকে অনুসরণ করিও না, কারণ ইহা পাপাচার ও কামপ্রবৃত্তির দিকে প্রবলভাবে আহ্বান করে, বরং তাঁহাকেই অনুসরণ কর যিনি সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর মালিক, যিনি তোমাদিগকে ঈশ্বরভক্তি প্রদর্শন এবং ঈশ্বরভীতি প্রকাশ করিতে আদেশ দিয়াছেন। সত্য সত্যই, তিনি তাঁহার সমস্ত জীবকুল হইতে স্বাধীন। মনোযোগী হও, দেশে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হইবার পর সেইখানে কলহ-বিবাদে সক্রিয় হইও না। যে কেহ এইরূপ করে, সে আমাদের নহে এবং আমরা তাহার নিকট হইতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। এইরূপ-ই আদেশ, যাহা সত্যের শক্তি দ্বারা প্রত্যাদেশের স্বর্গ হইতে সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত হইয়াছে।
65বায়ান গ্রন্থে ইহা লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে যে, উভয় পক্ষের সম্মতির উপর বিবাহ নির্ভরশীল। আমাদের ভৃত্যদের মধ্যে ভালবাসা, ঐক্য ও সমতা প্রতিষ্ঠাকল্পে, যুগলটির ইচ্ছা জানিবার পর মাতা-পিতার অনুমতি আমরা শর্তমূলক করিয়াছি, যেন তাহাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের উদ্ভব না হয়। এবং ইহাতে আমাদের অন্য উদ্দেশ্যাবলীও রহিয়াছে। এইভাবে আমাদের আদেশ বিধিবদ্ধ হইয়াছে।
66পণ প্রদান ব্যতীত কোন বিবাহের চুক্তি সম্পাদিত হইতে পারিবে না, যাহা শহরবাসীদের জন্য উনিশ মিশ্কাল খাঁটি স্বর্ণ এবং গ্রামবাসীদের জন্য ঐ একই পরিমাণ রৌপ্য নির্ধারিত করা হইয়াছে। যে কেহ এই পরিমাণ বৃদ্ধি করিতে ইচ্ছা করে, তাহাকে পঁচানব্বই মিশ্কালের সীমা অতিক্রম করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। এইরূপে শক্তি ও মহিমায় এই আদেশ লিখিত হইয়াছে, তবে সে যদি সর্বনিু পরিমাণ পণ প্রদানে সন্তুষ্ট হয়, তাহা হইলে গ্রন্থানুযায়ী ইহাই তাহার জন্য উত্তম হইবে। সত্য সত্যই, ঈশ্বর যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে স্বর্গীয় ও পার্থিব, উভয় সঙ্গতির দ্বারা সমৃদ্ধ করেন এবং প্রকৃতপক্ষে, সমস্ত বস্তুর উপর তাঁহার ক্ষমতা রহিয়াছে।
67ঈশ্বর আদেশ দিয়াছেন যে, তাঁহার ভৃত্যদের মধ্যে যে কেহ ভ্রমণে যাইবার ইচ্ছা করিলে, সে অবশ্যই তাহার স্ত্রীর জন্য একটি সময় নির্ধারণ করিবে যখন সে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবে। যদি সে প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে, তাহা হইলে সে তাহার পরম প্রভুর নির্দেশ পালন করিয়াছে এবং তাঁহার আদেশের লেখনী দ্বারা সে ন্যায়পরায়ণদের মধ্যে গণ্য হইবে ; পক্ষান্তরে, যদি তাহার বিলম্বের উপযুক্ত কারণ থাকে, তাহা হইলে সে অবশ্যই তাহার স্ত্রীকে অবগত করিবে এবং তাহার নিকট প্রত্যাবর্তনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করিবে। এই দুইটির সম্ভাব্য কোন ঘটনা না ঘটিলে স্ত্রীর উচিত হইবে নয় মাস যাবৎ অপেক্ষা করা, ইহার পর তাহার পক্ষে অন্য স্বামী গ্রহণ করিতে আর কোন বাধা থাকিবে না; কিন্তু সে যদি দীর্ঘতর সময় অপেক্ষা করে, তাহা হইলে ঈশ্বর, সত্য সত্যই, সেইসব নর ও নারীদের ভালবাসেন, যাহারা ধৈর্য ধারণ করে। তোমরা আমার আদেশাবলী পালন কর এবং অধার্মিকদের অনুসরণ করিও না যাহারা ঈশ্বরের পবিত্র ফলকলিপিতে পাপী বলিয়া গণ্য হইয়াছে। যদি তাহার অপেক্ষাকালীন সময়ে তাহার স্বামীর নিকট হইতে তাহার নিকট সংবাদ পৌঁছায়, তাহা হইলে তাহার সেই পন্থাই বাছিয়া লওয়া উচিত যাহা প্রশংসনীয়। বাস্তবিক পক্ষে তিনি ইচ্ছা করেন যে, তাঁহার সেবকগণ ও সেবিকাগণ একে অন্যের সহিত শান্তিতে থাকিবে। সতর্ক হও, তোমরা যাহা কিছু কর, তাহা যেন তোমাদের মধ্যে অনমনীয় মনোভাবের উদ্রেক না করে। এইরূপে আদেশ নির্দিষ্ট করা হইয়াছে এবং প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা হইয়াছে। তবে যদি তাহার স্বামীর মৃত্যু অথবা হত্যার সংবাদ পৌঁছে এবং সাধারণের প্রতিবেদন দ্বারা নিশ্চিত হয়, অথবা দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী দ্বারা সমর্থিত হয়, তাহা হইলে তাহার উচিত হইবে একাকী থাকা ; অতঃপর নির্দিষ্ট সংখ্যক মাস পূর্তির পর সে তাহার পথ বাছিয়া লইতে স্বাধীন। এইরূপ-ই হইতেছে তাঁহার আদেশ, যিনি তাঁহার আদেশে শক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী।
68স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিরক্তি ও বিদ্বেষের উদ্ভব হইলে, স্বামী তাহাকে তালাক না দিয়া পূর্ণ এক বৎসর যাবৎ ধৈর্য সহকারে প্রতীক্ষায় থাকিবে, যাহাতে, হয়ত তাহাদের মধ্যে অনুরাগের সৌরভ পুনরুজ্জীবিত হইতে পারে। যদি এই নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ হইবার পরেও তাহাদের ভালবাসা ফিরিয়া না আসে, তাহা হইলে বিবাহবিচ্ছেদ অনুমোদনীয়। সত্য সত্যই, ঈশ্বরের বিজ্ঞতা সব কিছুকে বেষ্টন করিয়া রাখিয়াছে। পরম প্রভু তাঁহার আদেশের লেখনী দ্বারা একটি ফলকলিপিতে ঐ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করিয়াছেন - যাহা ইতিপূর্বে তোমরা একজন স্ত্রীকে তিনবার তালাক দেয়ার পর অবলম্বন করিতে। তাঁহার পক্ষ হইতে অনুগ্রহের নিদর্শনস্বরূপ তিনি ইহা করিয়াছেন, যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞদের মধ্যে গণ্য হইতে পার। যে স্বামী তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়াছে, সে প্রতি অতিক্রান্ত মাসের পরে, যদি পারস্পরিক অনুরাগ ও সম্মতি থাকে, তাহাকে পুনরায় বিবাহ করিতে পারে যে পর্যন্ত না সে অন্য স্বামী গ্রহণ করিয়াছে। যদি সে পুনরায় বিবাহ করিয়া থাকে, তাহা হইলে এই পরবর্তী বিবাহ দ্বারা তালাক বহাল থাকিবে এবং বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তিরূপে গণ্য হইবে যদি না তাহার অবস্থা সুস্পষ্টরূপে পরিবর্তিত হয়। এইরূপ-ই আদেশ, এই মহিমান্বিত ফলকলিপিতে তাঁহারই মহত্ত্ব দ্বারা লিখিত হইয়াছে, যিনি সুষমার প্রাভাতিক স্থল।
69যদি স্ত্রী তাহার স্বামীর সফরসঙ্গী হয় এবং পথে দুইজনের মধ্যে মতবিরোধের উদ্ভব হয়, তাহা হইলে স্বামীকে তাহার স্ত্রীর পূর্ণ এক বৎসরের ভরণপোষণ যোগাইতে হইবে এবং হয় সে যেইখান হইতে আসিয়াছিল সেইখানে ফেরত পাঠাইতে হইবে, নতুবা তাহার ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য বস্তুসহ তাহাকে এমন একজন আস্থাভাজন লোকের নিকট সমর্পণ করিতে হইবে, যেই লোক সহযাত্রীস্বরূপ তাহাকে তাহার গৃহে পৌঁছাইয়া দিবে। সত্য সত্যই, তোমাদের পরম প্রভু তাহা আদেশ করেন যাহা তিনি ইচ্ছা করেন, এক সার্বভৌম ক্ষমতাবলে যাহা পৃথিবীর জাতিসমূহকে ছায়া দ্বারা আবৃত করিয়াছে।
70কোন নারী প্রমাণিত ব্যভিচার কর্মের ফলে তালাকপ্রাপ্তা হইলে, সে তাহার অপেক্ষাকালীন কোন ভরণ-পোষণ পাইবে না। এইরূপে আমাদের আদেশের প্রাভাতিক তারকা ন্যায়পরতার মহাকাশ হইতে সমুজ্জ্বল কিরণ বর্ষণ করিতেছে। সত্যই, পরম প্রভু, বৈবাহিক বন্ধন ও মতৈক্য ভালবাসেন এবং পৃথক্করণ ও বিবাহবিচ্ছেদ ঘৃণা করেন। হে লোকসকল, প্রফুল্লতা ও আনন্দ সহকারে একে অন্যের সঙ্গে জীবনযাপন কর। আমার জীবনের শপথ! পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে, তাহার সকল কিছু বিলীন হইয়া যাইবে, পক্ষান্তরে শুধুমাত্র সৎ কর্মাবলী রহিয়া যাইবে; স্বয়ং ঈশ্বর আমার এই কথার সাক্ষী। হে আমার সেবকগণ, তোমাদের মতানৈক্যসমূহের মীমাংসা কর ; অতঃপর তোমরা আমাদের জ্যোতির লেখনীর উপদেশে মনোযোগী হও এবং অহংকারী ও পথভ্রষ্টদের অনুসরণ করিও না।
71সতর্ক হও যেন জগৎ তোমাদিগকে প্রতারিত না করে যেইরূপ ইহা ঐ লোকদিগকে প্রতারিত করিয়াছিল যাহারা তোমাদের পূর্বে চলিয়া গিয়াছে! তোমাদের পরম প্রভুর সংবিধিগুলি ও উপদেশসমূহ পালন কর এবং সেই পথে চল, যেই পথ ন্যায়পরায়ণতা ও সত্য সহকারে তোমাদের সম্মুখে প্রদত্ত হইয়াছে। যাহারা অন্যায় আচরণ ও পাপ পরিহার করে, যাহারা নৈতিক উৎকর্ষে দৃঢ়সংলগ্ন থাকে, তাহারা একক সত্য ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তাঁহার সৃষ্ট জীবকুলের মধ্যে উৎকৃষ্টতম; তাহাদের নাম উর্ধ্বস্থিত রাজ্যসমূহের অধিবাসীগণ এবং ঈশ্বরের নামে উত্তোলিত এই তাঁবুর মধ্যে যাহারা বসবাস করে, তাহাদের দ্বারা উচ্চ প্রশংসিত হয়।
72দাস ক্রয়-বিক্রয় তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তাহারা নারী অথবা পুরুষ হউক। যে নিজে একজন ভৃত্য তাহার পক্ষে ঈশ্বরের ভৃত্যদের মধ্যে অপর একজনকে ক্রয় করা শোভনীয় নহে, এবং তাঁহার পবিত্র ফলকলিপিতে ইহা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। তাঁহার কৃপায়, ন্যায়বিচারের লেখনী দ্বারা এইরূপ আদেশ লিপিবদ্ধ হইয়াছে। কোন লোক নিজেকে অন্য লোকের উপর শ্রেষ্ঠতর মনে করিবে না; পরম প্রভুর নিকট সকলে দাস বা দাসী ব্যতীত আর কিছুই নহে এবং সকলে এই সত্যের দৃষ্টান্ত হইবে যে, তিনি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই। সত্য সত্যই, তিনি সর্বজ্ঞ, যাঁহার বিজ্ঞতা সর্ববস্তুকে পরিবেষ্টন করিয়াছে।
73তোমাদিগকে উৎকৃষ্ট কর্মাবলীর পোশাকে সজ্জিত কর। যে ব্যক্তি যাহার কর্মাবলী ঈশ্বরের শুভ-সন্তুষ্টি লাভ করিবে, সে নিশ্চিতরূপে বাহা’র জনমন্ডলীর অন্তর্ভুক্ত এবং তাহাকে তাঁহার সিংহাসনের সম্মুখে স্মরণ করা হয়। তোমরা ন্যায়পরায়ণতার কার্যাবলী দ্বারা এবং বিজ্ঞতার ও বাক্যের দ্বারাও সকল সৃষ্টির পরম প্রভুকে সাহায্য কর। বাস্তবিক পক্ষে, এইরূপে অধিকাংশ ফলকলিপিতে তোমাদিগকে তাঁহার-ই দ্বারা আদেশ প্রদান করা হইয়াছে, যিনি পরম করুণাময়। সত্য সত্যই, আমি যাহা বলিতেছি তাহা তিনি অবগত রহিয়াছেন। কেহ অন্য কাহারো সঙ্গে বিবাদ করিবে না এবং কোন আত্মা অন্য কাহাকে হত্যা করিবে না; সত্য সত্যই, ইহা তাহাই যাহা একটি গ্রন্থে তোমাদিগকে নিষেধ করিয়াছিল, যাহা প্রভার তাঁবুর মধ্যে লুক্কায়িত রহিয়াছে। কি করিবে! তোমরা কি তাহাকে হত্যা করিবে, যাহাকে ঈশ্বর জীবন্ত করিয়াছেন, যাহাকে তিনি তাঁহার নিকট হইতে একটি ফুৎকারের মাধ্যমে আত্মা দ্বারা বিভূষিত করিয়াছেন? তাহা হইলে তোমাদের এই সীমালঙ্ঘন তাঁহার সিংহাসনের সম্মুখে অত্যন্ত দুঃখজনক হইবে! ঈশ্বরকে ভয় কর এবং তিনি স্বয়ং যাহা সৃষ্টি করিয়াছেন তাহা বিনাশ করিবার জন্য অবিচার ও উৎপীড়নের হস্ত উত্তোলন করিও না; শুধু তাহাই নহে; একক সত্য ঈশ্বরের পথে পদক্ষেপ কর। যেই মুহূর্তে স্বর্গীয় উচ্চারণের পতাকাসমূহ বহন করিয়া প্রকৃত জ্ঞানের সেনাদল উপস্থিত হইল, ধর্মসমূহের গোত্রগুলি পলায়নপর হইল, শুধু তাহারা ব্যতীত যাহারা সর্ব-গৌরবমন্ডিত ঈশ্বরের ফুৎকারে সৃষ্ট একটি স্বর্গ-উদ্যানে চিরস্থায়ী জীবনের প্রবাহ হইতে পান করিতে ইচ্ছা করিয়াছিল।
74ঈশ্বর তাঁহার সৃষ্ট প্রাণীকুলের প্রতি তাঁহার কৃপার নিদর্শনস্বরূপ বিধান দিয়াছেন যে, শুক্র অপবিত্র নহে। আনন্দ ও প্রফুল্ল চিত্তে তাঁহার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন কর এবং যাহারা তাঁহার নৈকট্যের প্রাভাতিক স্থল হইতে দূরে রহিয়াছে তাহাদিগকে অনুসরণ করিও না। সর্বাবস্থায় ধর্মের সেবাদানকল্পে তোমরা উত্থিত হও, কারণ ঈশ্বর সুনিশ্চিতভাবে তাঁহার সার্বভৌম ক্ষমতা দ্বারা তোমাদিগকে সাহায্য করিবেন, যাহা জগৎসমূহকে ছায়াচ্ছন্ন করিয়াছে। তোমরা বিশুদ্ধতার রজ্জুর প্রতি এইরূপ সংলগ্ন হও যেন তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদের উপর ধূলির চিহ্নমাত্র না দেখা যায়। এইরূপ-ই হইল আদেশ যিনি সকল বিশুদ্ধতার উর্ধ্বে পবিত্র। যে কেহ উপযুক্ত কারণে এই মানদ- পালনে ব্যর্থ হইবে, সে দোষী হইবে না। সত্য সত্যই, ঈশ্বর ক্ষমাশীল, করুণাময়। প্রতিটি অপরিষ্কার বস্তু তোমরা এইরূপ জল দ্বারা ধৌত কর যাহার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কোনটি পরিবর্তিত হয় নাই ; বায়ু অথবা অন্য কোন পদার্থের সংস্পর্শের দ্বারা পরিবর্তিত হইয়াছে এইরূপ জল ব্যবহার হইতে সতর্ক থাক। মানবজাতির মধ্যে তোমরা পরিষ্কার-পরিছন্নতার যথার্থ নির্যাস হও। সত্যই, ইহাই তোমাদের অতুলনীয়, সর্ববিজ্ঞ, পরম প্রভু তোমাদের জন্য ইচ্ছা করেন।
75অনুরূপভাবে ঈশ্বর তাঁহার সকাশ হইতে বদান্যতাস্বরূপ “অপবিত্রতার’’ ধারণা রহিত করিয়াছেন যাহা দ্বারা নানাপ্রকার বস্তু ও সম্প্রদায়কে অপবিত্র বলিয়া ধারণা করা হইত। নিশ্চয় তিনি চিরক্ষমাশীল, সর্বাপেক্ষা উদার। সত্য সত্যই, রিজওয়ানের সেই প্রথম দিনে, সমস্ত সৃষ্টবস্তুকে শোধনের সাগরে নিমজ্জিত করা হইয়াছিল, আমরা সমগ্র সৃষ্টির উপর আমাদের সর্বোৎকৃষ্ট নামাবলী ও আমাদের মহামহিমান্বিত গুণাবলীর দীপ্তি বর্ষণ করিয়াছিলাম। সত্যই, ইহা আমার প্রেমপূর্ণ তত্ত্বাবধানের একটি নিদর্শন, যাহা জগৎসমূহকে পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছে। সেই হেতু তোমরা সমস্ত ধর্মের অনুসারীদের সহিত সদ্ভাব বজায় রাখ এবং যিনি সর্বাধিক সহানুভূতিশীল, তোমাদের পরম প্রভুর ধর্ম প্রচার কর; ইহা-ই প্রশংসনীয় কার্যাবলীর মুকুট, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও যাহারা উপলব্ধি করে।
76ঈশ্বর তোমাদিগকে সর্বাধিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখিতে নির্দেশ দিয়াছেন, কঠিন হইয়া যাওয়া ময়লা এবং অনুরূপ অপবিত্রতা এমনকি, ধূলি দ্বারা মলিন হইলেও তাহা ধৌত করিবে। তাঁহাকে ভয় কর, এবং তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা পবিত্র। কাহারো পোশাক যদি দৃশ্যমানভাবে মলিন হয় তবে তাহার প্রার্থনা ঈশ্বর অভিমুখে আরোহণ করিবে না এবং স্বর্গের অধিবাসীগণ তাহার নিকট হইতে মুখ ফিরাইয়া লইবে। গোলাপজল এবং বিশুদ্ধ সুগন্ধি ব্যবহার কর, বাস্তবিক-ই ইহা তাহাই, যাহা ঈশ্বর সেই আদিকাল হইতে ভালো বাসিয়াছেন, যাহার কোন আদি নাই, যাহাতে তোমাদের নিকট হইতে তাহা পরিব্যাপ্ত হইতে পারে যাহা তোমাদের পরম প্রভু পাইতে আকাঙ্খা করেন, যিনি অতুলনীয়, যিনি সর্বজ্ঞ।
77ঈশ্বর তোমাদিগকে পুস্তকসমূহের ধ্বংস সাধন বিষয়ক বায়ান-এ বিধিবদ্ধ আদেশ হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন। আমরা তোমাদিগকে এইরূপ বিজ্ঞানসমূহ অধ্যয়নের অনুমতি দিয়াছি যাহা তোমাদের জন্য লাভজনক ; এইরূপ নহে, যাহা অসার বাদানুবাদে শেষ হয়। তোমাদের পক্ষে ইহাই শ্রেষ্ঠতর, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা হৃদয়ঙ্গম করে।
78হে পৃথিবীর রাজন্যবর্গ! যিনি সকলের মহাপরাক্রান্ত পরম প্রভু, তিনি আসিয়াছেন। রাজত্ব ঈশ্বরের, যিনি সর্বশক্তিমান রক্ষক, স্বয়ংসত্তা বিশিষ্ট। ঈশ্বর ব্যতীত আর কাহারো উপাসনা করিও না এবং উজ্জ্বল অন্তঃকরণে তোমাদের পরম প্রভুর প্রতি তোমাদের মুখমন্ডল উত্তোলন কর, যিনি নামাবলীর প্রভু। ইহা এমনই একটি প্রত্যাদেশ যাহার সহিত তোমাদের অধিকারভুক্ত কোন কিছুর তুলনা করা যাইতে পারে না, যদি তোমরা ইহা জানিতে। মন্ডল
79আমরা তোমাদিগকে সেই সব বস্তুতে আনন্দিত দেখিতে পাই যাহা তোমরা অন্যদের জন্য সঞ্চিত করিয়াছ এবং সেই জগৎসমূহ হইতে তোমাদিগকে পর্দান্তরালে দেখিতে পাই যাহা আমার সুরক্ষিত ফলকলিপি ব্যতীত আর কেহ গণনা করিতে পারে না। যে ধন-সম্পদ তোমরা সঞ্চয় করিয়াছ, তাহা তোমাদের চরম লক্ষ্যবস্তু হইতে তোমাদিগকে দূরে সরাইয়া রাখিয়াছে। ইহা তোমাদের জন্য উপযুক্ত নহে, যদি তোমরা ইহা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিতে। তোমাদের হৃদয়সমূহ হইতে সমস্ত পার্থিব অপবিত্রতা মুছিয়া ফেল এবং তোমাদের পরম প্রভুর রাজ্যে প্রবেশ করিবার নিমিত্তে দ্রুত অগ্রসর হও, যিনি স্বর্গ ও মর্ত্যরে সৃষ্টিকর্তা, যিনি পৃথিবীকে প্রক¤িপত করিয়াছিলেন এবং ইহার সমস্ত অধিবাসীদের বিলাপ করাইয়াছিলেন, তাহাদের ব্যতীত যাহারা সকল কিছু পরিত্যাগ করিয়াছিল এবং নিহিত ফলকলিপিটি যাহা আদেশ করিয়াছে তাহার প্রতি দৃঢ়সংলগ্ন হইয়াছিল ।
80এই সেই দিবস যেই দিবসে তিনি, যিনি ঈশ্বরের সহিত কথোপকথন করিয়াছিলেন, যিনি দিবসসমূহের প্রাচীনের আলোকপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন এবং এই পেয়ালা হইতে পুনর্মিলনের পবিত্র সলিল আকণ্ঠ পান করিয়াছেন, যাহা সাগরসমূহকে স্ফীত করিয়াছিল। বল ঃ পরম সত্য ঈশ্বরের শপথ! সিনাই পর্বত প্রত্যাদেশের প্রভাতকে চক্রাকারে প্রদক্ষিণ করিতেছে, একই সময়ে স্বর্গরাজ্যের উচ্চভূমিসমূহ হইতে ঈশ্বরের আত্মার কন্ঠস্বরকে ঘোষণা করিতে শোনা যাইতেছে ঃ “হে পৃথিবীর গর্বিত লোকসকল, তোমরা নিজেদেরকে জাগ্রত ও সক্রিয় কর, এবং তোমরা তাঁহার নিকট দ্রুত অগ্রসর হও।’’ এই দিবসে কার্মেলপর্বত, উপাসনার উপস্থিতি প্রাঙ্গণে পৌঁছাইবার জন্য আকুল আকাক্সক্ষী হইয়া দ্রুত অগ্রসর হইয়াছে, একই সময়ে, জিওন গিরির হৃদয় হইতে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করা হইয়াছে ঃ “প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হইয়াছে। মহামহিমান্বিত, শক্তিমান, পরম প্রিয়তম, ঈশ্বরের গ্রন্থে যাহা কিছু ঘোষণা করা হইয়াছিল তাহা সুস্পষ্ট হইয়াছে।”
81হে পৃথিবীর রাজন্যবর্গ! সর্বাতিক্রমকারী প্রভার দৃশ্যপটের এই স্থানে সর্বমহান আইন প্রকাশিত হইয়াছে। সর্বোচ্চ আদেশদাতার ইচ্ছা- শক্তির দ্বারা প্রতিটি নিহিত বস্তুকে প্রকাশিত করা হইয়াছে, তিনি যিনি শেষ সময়ের সূচনা করিয়াছেন, যাঁহার মাধ্যমে চন্দ্র বিদীর্ণ হইয়াছে, এবং প্রতিটি অপরিবর্তনীয় আদেশ ব্যাখ্যাপ্রাপ্ত হইয়াছে।
82হে পৃথিবীর রাজন্যবর্গ! তোমরা অধীনস্থ ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত আর কিছুই নও। তিনি, যিনি রাজাদের রাজা, তাঁহার সর্বাধিক বিস্ময়কর মহিমায় সজ্জিত হইয়া আবির্ভূত হইয়াছেন এবং তোমাদিগকে তাঁহার নিজের প্রতি আহ্বান করিতেছেন, যিনি বিপদে সহায়, স্বয়ংসত্তাবিশিষ্ট। সতর্ক হও, যেন অহংকার প্রত্যাদেশের উৎসকে স্বীকার করা হইতে তোমাদিগকে বাধাগ্রস্ত না করে, যেন এই পৃথিবীর বিষয়াদি একটি আবরণের মত তোমাদিগকে তাঁহারই নিকট হইতে আড়াল না করে, যিনি স্বর্গের স্রষ্টা। উত্থিত হও এবং তাঁহার সেবা কর, যিনি সকল জাতির আকাক্সক্ষা, যিনি তোমাদিগকে তাঁহার একটি শব্দের মাধ্যমে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং সকল সময়ের জন্য তোমাদিগকে তাঁহার সার্বভৌম ক্ষমতার নিদর্শন হইতে আদেশ করিয়াছেন।
83ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতার শপথ। তোমাদের রাজ্যসমূহের উপর হস্তক্ষেপ করা আমাদের ইচ্ছা নহে। আমাদের উদ্দেশ্য হইল মানবের হৃদয়সমূহ অধিকারভুক্ত করা। বাহা’র চক্ষুযুগল উহাদের উপর নিবদ্ধ। নামাবলীর রাজ্য ইহার সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে, যদি তোমরা ইহা হৃদয়ঙ্গম করিতে। যে কেহ তাহার পরম প্রভুকে অনুসরণ করিবে, সে এই জগৎ ও ইহার মধ্যে যাহা কিছু আছে, তাহা পরিত্যাগ করিবে; অতঃপর, তাঁহার নিরাসক্তি কত বৃহত্তর হইবে যিনি এইরূপ মহান মর্যাদার অধিকারী! তোমাদের রাজপ্রাসাদসমূহ পরিত্যাগ কর এবং তাঁহার রাজ্যে প্রবেশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হও। প্রকৃতপক্ষে, ইহাই তোমাদিগকে এই জগৎ ও পরবর্তী উভয় জগতে লাভবান করিবে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বস্থিত রাজ্যের পরম প্রভু সাক্ষ্য দিয়াছেন, যদি তোমরা ইহা জানিতে।
84কত মহান সেই আশীর্বাদ যাহা সেই রাজার জন্য অপেক্ষা করিতেছে, যে আমার রাজ্যে আমার ধর্মের সাহায্যার্থে উত্থিত হইবে, যে আমি ছাড়া আর সকল কিছু হইতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিবে। এইরূপ রাজা লোহিত তরীর সঙ্গীদের মধ্যে গণ্য, যে তরীটি বাহা’র জনমন্ডলীর জন্য ঈশ্বর প্রস্তুত করিয়াছেন। সকলেই অবশ্যই তাঁহার নামের প্রশংসা করিবে, অবশ্যই তাঁহার পদমর্যাদাকে শ্রদ্ধা করিবে এবং সর্বশক্তিমান, রক্ষক, আমার নামের চাবিগুচ্ছ দ্বারা দৃশ্যমান ও দর্শনাতীত রাজ্যসমূহের মধ্যস্থিত নগরসমূহ উন্মোচন করিতে অবশ্যই তাঁহাকে সাহায্য করিবে। এইরূপ রাজা মানবজাতির প্রকৃত চক্ষু, সৃষ্টির ললাটে দীপ্তিমান ভূষণ, সমগ্র জগতের প্রতি আশীর্বাদসমূহের উৎসমূল। হে বাহা’র জনমন্ডলী, তাহার সহায়তার জন্য তোমাদের ধন-স¤পদ-ই নহে, তোমাদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ কর।
85হে অস্ট্রিয়ার সম্রাট! তিনি, যিনি ঈশ্বরের আলোর প্রভাত আক্কার কারাগারে বাস করিতেছিলেন, যখন তুমি আক্বসা মসজিদ পরিদর্শন করিবার জন্য যাত্রা করিয়াছিলে। তুমি তাঁহার নিকট দিয়া চলিয়া গেলে, এবং তাঁহার সম্বন্ধে জানিতে চাহিলে না, যাঁহার দ্বারা প্রতিটি গৃহ মহিমান্বিত হয় এবং প্রতিটি উচ্চ তোরণের তালা খোলা হয়। সত্য সত্যই, আমরা ইহাকে এমন এক স্থান করিয়াছি যাহার প্রতি বিশ্বকে ফিরিতে হইবে, যাহাতে তাহারা আমাকে স্মরণ করিতে পারে, এবং এতদসত্ত্বেও যখন তিনি তোমার পরম প্রভু এবং জগৎসমূহের পরম প্রভু, ঈশ্বরের রাজ্যসহকারে আবির্ভূত হইলেন, তুমি তাঁহাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছ যিনি এই স্মরণের লক্ষ্য। আমরা সর্বদাই তোমার সঙ্গে ছিলাম এবং তোমাকে শাখার প্রতি দৃঢ়সংলগ্ন ও মূলের প্রতি অমনোযোগী দেখিয়াছি। সত্য সত্যই, আমি যাহা বলিতেছি তোমার পরম প্রভু উহার সাক্ষী। যদিও আমরা তোমার মুখমন্ডলের সম্মুখে ছিলাম, আমাদের সম্বন্ধে অনবগত থাকিয়া আমাদের নামের চতুর্দিকে বৃত্তাকারে প্রদক্ষিণ করিতে দেখিয়া আমরা দুঃখিত হইয়াছি। তোমার চক্ষুদ্বয় উন্মীলিত কর, যাহাতে তুমি এই মহিমান্বিত দৃশ্য অবলোকন করিতে পার, এবং তাঁহাকে চিনিতে পার, যাঁহাকে তুমি দিবাভাগে ও নৈশকালে মিনতিপূর্ণভাবে আহ্বান করিয়া থাক এবং সেই আধ্যাত্মিক আলোর প্রতি স্থির দৃষ্টিতে তাকাইতে পার যাহা এই দীপ্তিমান দিগন্তের উপর কিরণ বর্ষণ করিতেছে।
86বল ঃ হে বার্লিনের রাজা! এই সুস্পষ্ট মন্দির হইতে আহ্বানকারী কণ্ঠস্বরের প্রতি কর্ণপাত কর ঃ “সত্য সত্যই, যিনি চিরস্থায়ী, অনুপম, দিবসসমূহের প্রাচীন, আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই।’’ সতর্ক হও যেন অহংকার তোমাকে স্বর্গীয় প্রত্যাদেশের প্রভাতকে স্বীকার করা হইতে বাধা প্রদান না করে, যেন পার্থিব অভিলাষসমূহ একটি পর্দার মত ঊর্ধ্বস্থিত স্বর্গ ও নিুস্থিত মর্ত্যরে সিংহাসনের পরম প্রভু হইতে তোমাকে আড়াল না করে। এইরূপেই সর্ব্বোচ্চের লেখনী তোমাকে উপদেশ প্রদান করিতেছে। সত্য সত্যই, তিনি পরম উদার, সর্ব-বদান্যতাপূর্ণ। তোমার কি সেই ব্যক্তিকে* মনে পড়ে যাহার শক্তি তোমার শক্তিকে অতিক্রম করিয়াছিল এবং যাহার পদমর্যাদা তোমার পদমর্যাদা হইতে উৎকৃষ্টতর ছিল? কোথায় সে? কোথায় গেল তাহার সেই সকল বস্তু যাহা সে অধিকারভুক্ত করিয়াছিল? সতর্ক হও এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা গভীর নিদ্রায় মগ্ন। সে ঐ ব্যক্তি, যে ঈশ্বরের ফলকলিপি তাহার পশ্চাতে নিক্ষেপ করিয়াছিল যখন আমরা তাহাকে জানাইয়াছিলাম, অত্যাচারের সেনাদল আমাদিগকে কি দুঃখ-কষ্ট ভোগ করিতে বাধ্য করিয়াছিল। যাহার ফলে অবমাননা তাহাকে সকল দিক হইতে প্রচ-ভাবে আক্রমণ করিয়াছিল এবং সে বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া ধূলিতে বিনষ্ট হইয়াছিল। হে রাজা, তাহার সম্বন্ধে এবং তাহাদের সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা কর, যাহারা তোমার-ই মত নগরসমূহ জয় করিয়াছিল এবং মানুষের উপর কর্তৃত্ব করিয়াছিল। পরম করুণাময় তাহাদিগকে তাহাদের রাজপ্রাসাদসমূহ হইতে তাহাদের কবরে আনয়ন করিয়াছেন। সতর্ক হও, তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা গভীরভাবে চিন্তা করে।
87আমরা তোমাদের নিকট হইতে কিছুই চাহি নাই। হে রাজাদের সমষ্টি! সত্য সত্যই, আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তোমাদিগকে উপদেশ দিয়া থাকি এবং ধৈর্যশীল থাকিব, যেইরূপ আমরা তাহাতে ধৈর্যশীল ছিলাম যাহা তোমাদের হাতে আমাদের উপর সংঘটিত হইয়াছিল ।
88হে আমেরিকার শাসকবর্গ ও উহার প্রজাতন্ত্রসমূহের রাষ্ট্রপতিগণ, তোমরা মনোযোগপূর্বক উহা শ্রবণ কর, যাহা অমরত্বের বৃক্ষশাখার উপর পারাবত সুমধুর সুরে গাহিতেছে : “যিনি চিরস্থায়ী, ক্ষমাশীল, সর্ববদান্যতাপূর্ণ, আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই”। তোমাদের অধিরাজ্যের মন্দিরকে ন্যায়পরায়ণতা ও ঈশ্বরভীতির অলংকারে এবং উহার চূড়াকে স্বর্গসমূহের স্রষ্টা, তোমাদের পরম প্রভুর স্মরণের মুকুট দ্বারা অলংকৃত কর। এইরূপ তিনি তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করিতেছেন যিনি নামাবলীর প্রভাত যেইরূপ তাঁহার দ্বারা আদিষ্ট হইয়াছিল, যিনি সর্বজ্ঞ, সর্ববিজ্ঞ। প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ এই গৌরবান্বিত মর্যাদায় আবির্ভূত হইয়াছেন, যাহা দ্বারা বিদ্যমান সকল কিছু , দৃশ্যমান ও দৃশ্যাতীত উভয়-ই উল্লাসিত হইয়াছে। তোমরা ঈশ্বরের দিবসের সুযোগ গ্রহণ কর। সত্য সত্যই, তোমাদের জন্য তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করা, সূর্য যাহা কিছুর উপর কিরণ বর্ষণ করিতেছে তাহাদের সকলের তূলনায় অধিকতর শ্রেয় ; যদি তোমরা ইহা জানিতে। হে শাসকদের সমষ্টি ! উহার প্রতি কর্ণপাত কর, যাহা বিশালতার প্রভাত হইতে উত্তোলিত হইয়াছে ; “ সত্য সত্যই, আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই, যিনি উচ্চারণের পরম প্রভু, যিনি সর্বজ্ঞ।’’ তোমরা ন্যায়পরায়ণতার হস্ত দ্বারা নিপীড়িতদের সাহায্য কর এবং যিনি আদেশদাতা, সর্ববিজ্ঞ, তোমাদের পরম প্রভুর আদেশাবলীর দ- দ্বারা বর্ধনশীল অত্যাচারীকে ধ্বংস কর।
89হে কন্সট্যান্টিনোপল-এর জনমন্ডলী! লক্ষ্য কর, তোমাদের মধ্য হইতে আমরা পেচকের অমঙ্গলজনক রব শুনিতে পাইতেছি। রিপুর মাতলামি কি তোমাদিগকে গ্রাস করিয়াছে অথবা তোমরা কি অমনোযোগিতায় নিমগ্ন রহিয়াছ? দুই সমুদ্রের তীরে অবস্থিত হে ভূখ-! সত্য সত্যই, অত্যাচারের সিংহাসন তোমার উপর প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছে, এবং ঘৃণার অগ্নিশিখা তোমার বক্ষের মধ্যে প্রজ্বলিত করা হইয়াছে, এইরূপভাবে যে উর্ধ্বস্থিত জনমন্ডলী এবং তাহারা, যাহারা ঐ মহিমান্বিত সিংহাসনের চতুর্দিকে বৃত্তাকারে প্রদক্ষিণ করে, তাহারা বিলাপ ও আর্তনাদ করিয়াছে। আমরা তোমাদের মধ্যে নির্বোধদিগকে বিজ্ঞজনদের শাসন করিতে এবং অন্ধকারকে আলোর বিরুদ্ধে গর্ব করিতে দেখিতেছি। বাস্তবিক-ই, তুমি সু¯পষ্ট অহংকারে পরিপূর্ণ। তোমার বাহ্যিক চাকচিক্যই কি তোমাকে অত্যধিক গর্বিত করিয়াছে? তাঁহারই শপথ, যিনি মানবজাতির পরম প্রভু, ইহা শীঘ্রই বিনাশপ্রাপ্ত হইবে এবং তোমার কন্যা ও তোমার বিধবাগণ এবং সমস্ত জ্ঞাতিবর্গ যাহারা তোমার মধ্যে বসবাস করিতেছে তাহারা বিলাপ করিবে। এইরূপে সর্বজ্ঞ ও সর্ববিজ্ঞ তোমাকে অবগত করিতেছেন।
90হে রাইন নদীর তীরসমূহ! আমরা তোমাকে জমাট-বাঁধা রক্তে আবৃত দেখিতে পাইতেছি, যেহেতু প্রতিশোধের তরবারীসমূহ তোমার বিরুদ্ধে কোষমুক্ত হইয়াছে ; এবং তুমি আর একটি সংকটে পতিত হইবে। এবং আমরা বার্লিনের বিলাপসমূহ শ্রবণ করিতেছি, যদিও আজ সে সুস্পষ্ট গৌরবের মধ্যে রহিয়াছে।
91হে ত্বা*-এর ভূমি, কোন কিছুই যেন তোমাকে দুঃখিত না করে, কারণ ঈশ্বর তোমাকে সমস্ত মানবজাতির আনন্দের উৎসরূপে মনোনীত করিয়াছেন। যদি তাঁহার ইচ্ছা হয় তাহা হইলে তিনি তোমার সিংহাসনকে এমন একজন দ্বারা মহিমান্বিত করিবেন যিনি ন্যায়পরায়ণতার সহিত শাসন করিবেন, ঈশ্বরের মেষপালকে একত্রিত করিবেন, যাহাদিগকে নেকড়ে বাঘগুলি নানা দিকে তাড়াইয়া দিয়াছে। এইরূপ শাসক আনন্দ ও উল্লাস সহকারে বাহা’র জনগণের দিকে মুখ ফিরাইবেন এবং তাহাদের প্রতি তাঁহার অনুগ্রহের হস্ত প্রসারিত করিবেন। বাস্তবিক-ই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তিনি মানবকুলের মধ্যে রতœতুল্য। তাঁহার উপর ঈশ্বরের জ্যোতি এবং তাঁহার প্রত্যাদেশের রাজ্যে যাহারা বসবাস করে তাহাদের সকলের জ্যোতি চিরকাল অবস্থান করুক।
92অত্যুল্লাস সহকারে আনন্দিত হও, কারণ ঈশ্বর তোমাকে “তাঁহার আলোকের প্রভাত’’ করিয়াছেন, যেহেতু তোমার মধ্যেই তাঁহার জ্যোতির প্রকাশ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । এই নামের জন্য তুমি আনন্দিত হও যাহা তোমাকে দেওয়া হইয়াছে, এমন একটি নাম যাঁহার মাধ্যমে করুণার প্রভাত-তারকা ইহার দীপ্তি বর্ষণ করিয়াছে, যাঁহার মাধ্যমে পৃথিবী এবং স্বর্গ উভয় আলোকিত হইয়াছে।
93শীঘ্রই তোমার অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলীর অবস্থায় পরিবর্তন আসিবে এবং শাসনভার জনগণের হাতে পতিত হইবে। সত্য সত্যই, তোমার প্রভু সর্বজ্ঞ। তাঁহার কর্তৃত্ব সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে। তোমার প্রভুর সদয় অনুগ্রহের বিষয়ে তুমি নিশ্চিত থাক। তাঁহার ¯েœহময় অনুগ্রহের চক্ষু চিরস্থায়ীভাবে তোমার দিকে স্থির থাকিবে। সেই দিন নিকটবর্তী হইতেছে, যখন তোমার অশান্তি, শান্তি ও নিবিড় প্রশান্তিতে পরিবর্তিত হইবে। বিস্ময়কর গ্রন্থে এইরূপ আদেশ প্রদান করা হইয়াছে।
94হে খাক্স-এর ভূমি! আমরা তোমার মধ্য হইতে সর্বাধিকারী, মহামহিমান্বিত তোমার প্রভুর প্রশংসায় উচ্চারিত বীরপুরুষদের কণ্ঠস্বর শুনিতে পাইতেছি। আশীষপূতঃ সেই দিবস, যখন সর্বগৌরবময়, আমার নামে সৃষ্টির রাজ্যে ঐশী নামাবলীর পতাকাসমূহ উত্তোলিত হইবে। সেই দিবসে বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের বিজয়ে আনন্দিত হইবে এবং অবিশ্বাসীরা বিলাপ করিবে।
95যাহারা জনগণের উপর শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করিতেছে, তাহাদের সঙ্গে অবশ্যই কেহ বিবাদ করিবে না, তাহাদের বিষয়াদি তাহাদের উপর ছাড়িয়া দাও, এবং তোমাদের মনোযোগ মানবকুলের হৃদয়সমূহের উপর নিবদ্ধ কর।
96হে মহাশক্তিশালী মহাসাগর! জাতিসমূহের উপর উহা ছিটাইয়া দাও, তুমি যাহার দায়িত্বপ্রাপ্ত হইয়াছ তাঁহার মাধ্যমে, যিনি অমরত্বের সম্রাট এবং পৃথিবীতে বসবাসকারী সকলের মন্দিরসমূহকে তাঁহার আইনসমূহের পরিচ্ছদ দ্বারা সজ্জিত কর, যাহার দ্বারা সমস্ত হৃদয় আনন্দিত হইবে এবং সমস্ত চক্ষু উজ্জ্বল হইবে।
97কেহ যদি একশত মিশ্কাল স্বর্ণের অধিকারী হয়, তন্মধ্যে উনিশ মিশ্কাল ঈশ্বরের, এবং উহা তাঁহাকে প্রদান করিতে হইবে, যিনি স্বর্গ ও মর্ত্যরে গঠনকর্তা। সতর্ক হও, হে লোকসকল, যেন তোমরা এত বড় অনুগ্রহ হইতে নিজেদেরকে বঞ্চিত না কর। আমরা তোমাদিগকে এই আদেশ প্রদান করিয়াছি, যদিও তোমাদের এবং স্বর্গসমূহে ও মর্ত্যে যাহারা রহিয়াছে, তাহাদের ব্যতীত আমরা সম্পূর্ণ সক্ষম। যে কল্যাণসমূহ ও বিজ্ঞতাসমূহ ইহাতে নিহিত রহিয়াছে তাহা সর্বজ্ঞাত, সর্বদর্শী ঈশ্বর ব্যতীত যে কাহারো জ্ঞানের ঊর্ধ্বে। বল ঃ ইহার দ্বারা তোমরা যাহা কিছুর অধিকারী হইয়াছ, তাহা পবিত্র করিতে এবং তোমাদিগকে এইরূপ মর্যাদাসমূহের নৈকট্য লাভে সমর্থ হইতে তিনি ইচ্ছা করিয়াছেন, যাহা তাহারা ব্যতীত আর কেহই উপলব্ধি করিতে পারে না যাহাদের ঈশ্বর ইচ্ছা করিয়াছেন। তিনি বাস্তবিক-ই দাতা, করুণাময়, বদান্যতাপূর্ণ। হে লোকসকল! ঈশ্বরের অধিকারে অবিশ্বাসী আচরণ করিও না, তাঁহার অনুমতি ব্যতীত ইহার হস্তান্তর যথেচ্ছ করিও না। এইরূপেই তাঁহার আদেশ পবিত্র ফলকলিপিসমূহে এবং এই মহিমান্বিত গ্রন্থে বিধিবদ্ধ করা হইয়াছে। যে কেহ ঈশ্বরের সহিত অবিশ্বাসী আচরণ করিবে, সে ন্যায়বিচারে নিজেই তাহার অবিশ্বাস্যতার সম্মুখীন হইবে; কিন্তু যে কেহ ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে কাজ করিবে, সে দিবসসমূহের আদি, করুণাময়, দাতা, উদার, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তাহার পরম প্রভুর বদান্যতার স্বর্গ হইতে একটি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইবে। সত্য সত্যই, তিনি তোমাদের জন্য এমন কিছু ইচ্ছা করিয়াছেন, যাহা এখনও তোমাদের জ্ঞানের সীমার ঊর্ধ্বে কিন্তু তোমরা তাহা জ্ঞাত হইবে যখন এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের পর তোমাদের আত্মা স্বর্গাভিমুখে উড্ডয়ন করিবে এবং তোমাদের পার্থিব আনন্দ-উল্লাসের কৃত্রিম জাঁকালো পোশাকগুলি গুটানো হইবে। এইরূপেই তিনি তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করিতেছেন, যাঁহার অধিকারে রহিয়াছে সুরক্ষিত ফলকলিপি।
98জগৎসমূহের পরম প্রভু, দৃশ্য-অদৃশ্যের পরম প্রভু - ঈশ্বরের আইনসমূহ স¤পর্কে বিশ্বাসীগণের নিকট হইতে আমাদের সিংহাসনের সম্মুখে বিবিধ আবেদন আসিয়াছে। ফলস্বরূপ আমরা এই পবিত্র ফলকলিপি প্রকাশ করিয়াছি এবং ইহাকে তাঁহার আইনের পোশাকে সজ্জিত করিয়াছি এইজন্য যেন লোকেরা তাহাদের পরম প্রভুর আদেশাবলী পালন করিতে পারে। পূর্ববর্তী কয়েক বৎসরে আমাদের নিকট অনুরূপ অনুরোধসমূহ করা হইয়াছিল, কিন্তু আমাদের বিজ্ঞতায়, আমরা আমাদের লেখনীকে সাম্প্রতিক দিবসগুলি পর্যন্ত সংযত করিয়াছিলাম, যখন কিছুসংখ্যক বন্ধুর নিকট হইতে পত্রাবলী আসিয়াছে এবং অতঃপর আমরা সত্যের ক্ষমতার মাধ্যমে, তাহা দ্বারা সাড়া প্রদান করিলাম, যাহা লোকগণের হৃদয়সমূহকে পুনরুজ্জীবিত করিবে।
99বল ঃ হে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ! ঈশ্বরের গ্রন্থকে এইরূপ মানদ-সমূহ ও বিজ্ঞানসমূহ দ্বারা বিবেচনা করিও না যেইরূপ বর্তমানে তোমাদের মধ্যে প্রচলিত রহিয়াছে, কারণ গ্রন্থটি স্বয়ং মানবের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত নির্ভুল নিক্তি। এই সর্বাপেক্ষা নিখুঁত নিক্তিতে পৃথিবীর জাতিসমূহ ও জ্ঞাতিবর্গ যাহা কিছুর অধিকারী হইয়াছে তাহা অবশ্যই পরিমাপ করা হইবে; একই সময়ে ইহার পরিমাপের মাত্রা ইহার নিজস্ব মানদ- অনুসারে পরীক্ষা করা হইবে, যদি তোমরা ইহা অবগত হইতে।
100আমার প্রেমপূর্ণ-দয়ার্দ্রতার চক্ষু তোমাদের জন্য নিদারুণভাবে রোদন করিতেছে, যেহেতু তোমরা তাঁহাকে চিনিতে ব্যর্থ হইয়াছ; যাঁহার জন্য তোমরা দিবাভাগে এবং রাত্রিকালে, সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে মিনতিপূর্বক প্রার্থনা করিয়া আসিয়াছ। অগ্রসর হও, হে লোকসকল! তুষারধবল আনন ও উজ্জ্বল অন্তঃকরণ সহকারে সেই আশীষপূতঃ ও লোহিতবর্ণ স্থানের দিকে যেই স্থানে ছিদ্রাতুল মুনতাহা উচ্চস্বরে ঘোষণা করিতেছে, “সত্য সত্যই, সর্বশক্তিমান রক্ষক, স্বয়ংসত্তাবিশিষ্ট, আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই।’’
101হে তোমরা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ! তোমাদের মধ্যে কে সেই ব্যক্তি যে আমার সঙ্গে দূরদৃষ্টি অথবা অন্তর্দৃষ্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারে? কোথায় তাহাকে পাওয়া যাইবে, যে বাক্যে ও বিজ্ঞতায় আমার সমকক্ষ বলিয়া দাবি করিতে সাহস করে? না, সর্বকরুণাময় আমার পরম প্রভুর শপথ! পৃথিবীতে অস্তিত্বমান সকল কিছু বিলীন হইয়া যাইবে; এবং ইহা-ই তোমার সর্বশক্তিমান, পরম প্রিয়তম, প্রভুর মুখমন্ডল।
102হে জনমন্ডলী! আমরা আদেশ করিয়াছি যে, সকল শিক্ষার সর্Ÿোচ্চ ও সর্বশেষ উদ্দেশ্য হইবে তাঁহাকেই স্বীকার করা, যিনি সমস্ত জ্ঞানের লক্ষ্যস্থল; এবং তাহা সত্ত্বেও, দেখ, কিভাবে তোমরা তোমাদের জ্ঞানকে তাঁহার নিকট হইতে তোমাদিগকে একটি পর্দার মত আড়াল করিতে দিয়াছ, যিনি এই আলোর প্রভাত, যাঁহার মাধ্যমে সমস্ত নিহিত বস্তু প্রকাশিত হইয়াছে। যদি তোমরা এই উৎস আবিষ্কার করিতে পারিতে, যেই স্থান হইতে এই বাক্য উচ্চারণের দীপ্তি পরিব্যাপ্ত হইয়াছে, তাহা হইলে পৃথিবীর সমস্ত জনগণ এবং তাহাদের অধিকারে যাহা কিছু রহিয়াছে তাহা তোমরা পরিত্যাগ করিতে এবং প্রভার এই পরম আশীষপূতঃ আসনের নিকটবর্তী হইতে।
103বল ঃ সত্য সত্যই, ইহাই সেই স্বর্গ, যাহার অভ্যন্তরে মাতৃগ্রন্থটি সংরক্ষিত রহিয়াছে, যদি তোমরা ইহা উপলব্ধি করিতে। তিনি-ই সে, যিনি প্রস্তরকে চিৎকার করাইয়াছিলেন এবং পবিত্র ভূমির উপর উত্থিত পর্বতোপরি জ্বলন্ত ঝোপের কন্ঠস্বর উত্তোলন করাইয়াছিলেন এবং ঘোষণা করিয়াছিলেন, “রাজ্য ঈশ্বরের, যিনি সকলের সার্বভৌম প্রভু, সর্বশক্তিমান, ¯েœহময়।’’
104আমরা কোন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করি নাই, অথবা তোমাদের তত্ত্বালোচনাসমূহের কোন কিছু পাঠ করি নাই। এই নিরক্ষর লোকটির সেই কথার প্রতি তোমাদের কর্ণসমূহ নিবিষ্ট কর, যাহা দ্বারা তিনি তোমাদিগকে চিরস্থায়ী ঈশ্বরের প্রতি আহ্বান করিতেছেন। ইহা তোমাদের জন্য পৃথিবীর সমস্ত সঞ্চিত ধন-সম্পদ অপেক্ষা মঙ্গলজনক, যদি তোমরা উপলব্ধি করিতে।
105প্রত্যাদেশের স্বর্গ হইতে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে, যে কেহ তাহার সুস্পষ্ট অর্থ পরিবর্তন করে, সত্য সত্যই, সে তাহাদের মধ্যে গণ্য, যাহারা ঈশ্বরের মহিমান্বিত বাণী বিকৃত করিয়াছে, এবং সুস্পষ্ট গ্রন্থে বিনাশপ্রাপ্তদের মধ্যে গণ্য হইবে।
106তোমাদের নখগুলিকে ছাটিয়া ফেলিতে, প্রতি সপ্তাহে তোমাদের দেহগুলিকে আবৃত করে এমন জল দ্বারা অবগাহন করিতে এবং পূর্বে যাহা কিছু ব্যবহার করিয়াছ তাহা দ্বারা নিজেদের পরিষ্কার করিতে তোমাদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। সতর্ক হও, যেন অবহেলা বশতঃ তোমাদের প্রতি তাঁহার-ই নির্দেশিত নিয়ম পালনে তোমরা ব্যর্থ না হও, যিনি অতুলনীয়, পরম করুণাময়। পরিষ্কার জলে নিজেদেরকে নিমজ্জিত কর; যে জল ইতোমধ্যে ব্যবহার করা হইয়াছে, এইরূপ জলে নিজেদের অবগাহন করানো অনুমোদনীয় নহে। লক্ষ্য রাখিও, তোমরা যেন পারস্যের সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ¯œানাগারের জলাধারসমূহে গমন না কর ; যে-কেহ এইরূপ ¯œানাগারসমূহের দিকে অগ্রসর হইবে, সে সেইখানে প্রবেশ করিবার পূর্বে-ই পুঁতিগন্ধময় দুর্গন্ধ পাইবে। ঐগুলি বর্জন কর, হে লোকসকল! এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা অসম্মানাস্পদভাবে এইরূপ জঘন্যতা মানিয়া লয়। বাস্তবিকই , ঐগুলি দূষিত ও রোগ সংক্রমণের আধারস্বরূপ, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে গণ্য হও, যাহারা উপলব্ধি করে। অনুরূপভাবে তোমরা পারস্যবাসীদের বাড়ির আঙ্গিনার দুর্গন্ধযুক্ত জলাধারগুলি পরিহার করিও, এবং তোমরা পুতঃপবিত্র লোকদের মধ্যে গণ্য হও। সত্যই, আমরা তোমাদিগকে পৃথিবীতে স্বর্গের প্রকাশসমূহরূপে দেখিতে ইচ্ছা করি, যাহাতে তোমাদের নিকট হইতে এইরূপ সুরভি পরিব্যাপ্ত হইতে পারে, যাহা ঈশ্বরের অনুগ্রহপ্রাপ্ত হৃদয়সমূহকে আনন্দিত করিবে। যদি ¯œানকারী জলের মধ্যে প্রবেশ করিবার পরিবর্তে শরীরের উপর জল ঢালিয়া নিজেকে ধৌত করে তাহা হইলে ইহা তাহার জন্য অধিকতর উত্তম হইবে এবং দৈহিক নিমজ্জনের প্রয়োজনের বাধ্যবাধকতার দায় হইতে নিজেকে মুক্ত করিবে। সত্য সত্যই, পরম প্রভু তাঁহার সকাশ হইতে একটি অনুক¤পাস্বরূপ তোমাদের জীবনকে সহজতর করিতে এই ইচ্ছা করিয়াছেন, যাহাতে তোমরা ঐসব লোকদের মধ্যে গণ্য হইতে পার, যাহারা সত্যই কৃতজ্ঞ।
107তোমাদিগকে তোমাদের পিতার পতœীগণকে বিবাহ করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। অত্যধিক লজ্জাজনক বিধায় আমরা বালকদের বিষয়টি আলোচনা করিতে সংকোচ বোধ করিতেছি। তোমরা করুণাময়কে ভয় কর, হে পৃথিবীর অধিবাসীগণ! এইরূপ কাজ করিও না যাহা আমাদের পবিত্র ফলকলিপিতে তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হইয়াছে, এবং তাহাদের মধ্যে গণ্য হইও না, যাহারা তাহাদের কামনা-বাসনার প্রান্তরে বিক্ষিপ্ত চিত্তে ইতস্ততঃ বিচরণ করে।
108রাস্তা অথবা বাজারে বিচরণকালে জনসমক্ষে পবিত্র শ্লোকসমূহ বিড়বিড় করিয়া পাঠ করিবার অনুমতি কাহাকেও প্রদান করা হয় নাই। বরং সে যদি ঈশ্বরের প্রশংসা করিতে ইচ্ছা করে তাহা হইলে তাহার পক্ষে এমন স্থানসমূহে, যেই সকল স্থান এই উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হইয়াছে অথবা তাহার নিজের গৃহে, ইহা করা শোভনীয় হইবে। ইহাই অকপটতা ও ঐশ্বরিকতার সহিত অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ। এইরূপে-ই আমাদিগের আদেশের সূর্য আমাদের বাক্যের দিগন্তের উপর কিরণ বর্ষণ করিয়াছে। অতএব, তাহারা আশীষপূতঃ হউক, যাহারা আমাদের আদেশ পালন করে।
109একটি ইষ্টিপত্র লিপিবদ্ধ করিতে প্রত্যেকের প্রতি আদেশ দেওয়া হইয়াছে। স¤পাদনকারী এই দলিলের শীর্ষদেশ সর্বমহান নাম দ্বারা অলংকৃত করিবে, সেইখানে তাঁহার প্রত্যাদেশের প্রভাতে ঈশ্বরের একত্বের প্রতি সাক্ষ্য প্রদান করিবে, এবং সে তাহার ইচ্ছানুযায়ী যাহা কিছু প্রশংসনীয় তাহা উল্লেখ করিবে, যাহাতে ইহা প্রত্যাদেশ ও সৃষ্টির রাজ্যসমূহে তাহার জন্য একটি প্রামাণিক সাক্ষ্য ও সর্Ÿোচ্চ-রক্ষক, পরম বিশ্বস্ত, তাহার প্রভুর নিকট একটি সঞ্চিত স¤পদ হইতে পারে।
110দুইটি সর্বমহান উৎসবের মধ্যে সমস্ত ভোজানুষ্ঠান এবং যমজ দিবসে সংঘটিত অপর দুইটি উৎসব উহাদের সম্পূর্ণতা লাভ করিয়াছে - সর্বমহান উৎসবের প্রথমটি ঐ দিবসগুলি যখন পরম করুণাময় ঈশ্বর সমগ্র সৃষ্টির উপর তাঁহার সর্বোৎকৃষ্ট নামাবলীর ও তাঁহার মহিমানি¦ত গুণাবলীর অত্যুজ্জ্বল দীপ্তি বর্ষণ করিয়াছেন এবং দ্বিতীয়টি সেই দিবস, যেই দিবসে আমরা তাঁহাকে উত্থিত করিয়াছিলাম, যিনি মানবজাতির কাছে এই নামের সু-সংবাদ প্রচার করিয়াছিলেন, যাঁহার মাধ্যমে মৃতগণকে পুনরুজ্জীবিত করা হইয়াছে এবং স্বর্গসমূহ ও পৃথিবীর সকলকে একত্রিত করা হইয়াছে। এইরূপ-ই তাঁহার দ্বারা আদেশ দেওয়া হইয়াছে, যিনি আদেশদাতা, সর্বদর্শী।
111সুখী সেই জন, যে বাহা মাসের প্রথম দিবসটিতে প্রবেশ করে, যেই দিবসকে ঈশ্বর এই মহিমান্বিত নামের প্রতি উৎসর্গ করিয়াছেন এবং সে-ই আশীষপূতঃ হউক, যে এই দিবসে ঈশ্বর যে সকল বদান্যতা দান করিয়াছেন তাহার সাক্ষ্য প্রদান করে; সত্য সত্যই, সে তাহাদের মধ্যে গণ্য, যাহারা পরম প্রভুর সেই অতিশয় দানশীলতার ইঙ্গিতবহ কর্মের দ্বারা ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে, যাহা জগৎসমূহকে পরিবেষ্টন করিয়াছে। বল ঃ সত্য সত্যই, এই দিবস সকল মাসের মুকুট ও উহাদের উৎস, যেই দিবসে সমস্ত সৃষ্টবস্তুর উপর দিয়া জীবনের ফুৎকার প্রবাহিত হইয়াছিল। সে পরম আশীষপূতঃ যে ঔজ্জ্বল্য ও প্রফুল্লতা সহকারে ইহাকে স্বাগত জানায়। আমরা সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি যে, সে বাস্তবিকই তাহাদের মধ্যে পরিগণিত যাহারা পরম সুখী।
112বল ঃ সর্বমহান উৎসবটি যথার্থ-ই উৎসবসমূহের সম্রাট। হে লোকসকল! তোমরা ঐ বদান্যতার কথা স্মরণ কর, যাহা ঈশ্বর তোমাদের উপর বর্ষণ করিয়াছেন। তোমরা গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলে, এবং দেখ! তিনি তাঁহার প্রত্যাদেশের পুনরুজ্জীবিতকারী মৃদুমন্দ সমীরণ দ্বারা তোমাদিগকে জাগ্রত করিয়াছেন এবং তাঁহার প্রকাশ ও অভ্রান্ত পথ সম্বন্ধে তোমাদিগকে জ্ঞাত করাইয়াছেন ।
113অসুস্থতার সময়গুলিতে তোমরা যোগ্য চিকিৎসকদের নিকট যাইবে। আমরা বস্তুগত উপায়সমূহকে অগ্রাহ্য করি নাই, বরং আমরা এই লেখনীর মাধ্যমে ইহাকে সমর্থন করিয়াছি যাহা ঈশ্বর তাঁহার উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত ধর্মের প্রাভাতিক স্থল করিয়াছেন।
114ঈশ্বর ইতিপূর্বে বিশ্বাসীদের প্রত্যেকের উপর তাহার অধিকারভুক্ত বস্তুসমূহ হইতে আমাদের সিংহাসনের সমীপে অমূল্য নৈবেদ্য দানের কর্তব্য আরোপ করিয়াছিলেন। এখন, আমাদের সদয় অনুগ্রহের নিদর্শনস্বরূপ, আমরা তাহাদিগকে এই বাধ্যবাধকতা হইতে অব্যাহতি প্রদান করিয়াছি। সত্যই, তিনি পরম উদার, সর্ববদান্যতাপূর্ণ।
115সেই ব্যক্তি-ই আশীষপূতঃ, যে প্রভাতকালে ঈশ্বরের উপর তাহার ভাবনাসমূহকে কেন্দ্রীভূত করিয়া, তাঁহার স্মরণে মগ্ন হইয়া এবং বিনীতভাবে তাঁহার ক্ষমা প্রার্থনা করিতে করিতে মাশ্রিকুল আয্কারের দিকে তাহার পদ পরিচালনা করে এবং তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়া সার্বভৌম, শক্তিমান, সর্বপ্রশংসিত ঈশ্বরের শ্লোকসমূহ মনোযোগের সহিত শ্রবণ করিবার জন্য নীরবতা সহকারে উপবেশন করে। বল ঃ মাশ্রিকুল আয্কার হইতেছে প্রত্যেকটি ভবন যাহা আমার প্রশংসা কীর্তনের জন্য নগরসমূহ ও গ্রামসমূহে নির্মিত হইয়াছে। জ্যোতির সিংহাসনের সমীপে এইরূপ নামের দ্বারা ইহা আখ্যায়িত হইয়াছে, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা উপলব্ধি করে।
116যাহারা পরম করুণাময়ের শ্লোকসমূহ মধুরতম সুরে আবৃত্তি করিবে তাহারা ঐগুলির মধ্যে যাহা উপলব্ধি করিবে তাহার সঙ্গে স্বর্গ ও মর্ত্যরে সর্বময় কর্তৃত্বের কখনই তুলনা হইতে পারে না। ঐগুলি হইতে তাহারা আমার জগৎসমূহের স্বর্গীয় সুঘ্রাণ গ্রহণ করিবে, যেই জগৎসমূহ এই দিবসে কেহ-ই দর্শন করিতে পারিবে না, তাহারা ব্যতীত, যাহারা এই মহিমান্বিত, এই সৌন্দর্যমন্ডিত প্রত্যাদেশের মাধ্যমে দূরদৃষ্টি দ্বারা ভূষিত হইয়াছে। বল ঃ এই শ্লোকগুলি ঐ হৃদয়সমূহকে আকর্ষণ করে যাহারা সেই আধ্যাত্মিক জগৎগুলির নিকট পবিত্র, যেইগুলি সম্বন্ধে না ভাষায় প্রকাশ করা যায়, না পরোক্ষভাবে উল্লেখের দ্বারা আভাস দেওয়া যায়। তাহারা আশীষপূতঃ হউক যাহারা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে।
117হে আমার জনমন্ডলী! তোমরা আমার মনোনীত সেবকগণকে সাহায্য কর, যাহারা আমার সৃষ্ট জীবকুলের মধ্যে আমার উল্লেখ এবং আমার রাজ্যের সর্বত্র আমার বাণীর মহিমা কীর্তন করিবার জন্য উত্থিত হইয়াছে। সত্যিকারভাবে ইহারাই আমার প্রেমপূর্ণ তত্ত্বাবধানের আকাশে নক্ষত্রসমূহ এবং সমগ্র মানবজাতির প্রতি আমার পথ নির্দেশনার প্রদীপসমূহ। কিন্তু যাহার উক্তিসমূহ আমার পবিত্র ফলকলিপিসমূহে যাহা কিছু অবতীর্ণ হইয়াছে তাহার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হইবে, সে আমার নহে। সতর্ক হও, যেন তোমরা কোন অধার্মিক ভ-ের অনুসরণ না কর। এই ফলকলিপিগুলি তাঁহারই সীলমোহর দ্বারা সু-শোভিত করা হইয়াছে, যিনি প্রভাতের আবির্ভাব ঘটান, যিনি তাঁহার কণ্ঠস্বর স্বর্গসমূহ এবং মর্ত্যরে মধ্যে উত্তোলন করেন। এই নিশ্চিত হাতলের উপর এবং আমার শক্তিমান ও অনাক্রম্য ধর্মের রজ্জুর উপর তোমাদের হস্ত সুদৃঢ় কর।
118যে কেহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় শিক্ষিত হইতে ইচ্ছা করে পরম প্রভু তাহাকে এই অনুমতি প্রদান করিয়াছেন যাহাতে সে পূর্বের সর্বত্র ও পশ্চিমে সর্বত্র ঈশ্বরের ধর্মের বাণী প্রচার করিতে পারে, যাহাতে সে পৃথিবীর জ্ঞাতিবর্গ ও জনমন্ডলীর মধ্যে এমনভাবে তাঁহার উল্লেখ করিতে পারে, যেন অন্তঃকরণসমূহ পুনরুজ্জীবিত হইতে পারে এবং ক্ষয়িষ্ণু অস্থিসমূহ প্রাণবন্ত হইতে পারে।
119ইহা গ্রহণযোগ্য নয় যে মানুষ, যাহাকে বিচারবুদ্ধি প্রদান করা হইয়াছে সে, এমন কিছু ব্যবহার করে যাহা ইহাকে নিঃশেষ করে। না, বরং তাহার পক্ষে এমন আচরণ শোভনীয়, যাহা মনুষ্য মর্যাদার উপযুক্ত এবং অমনোযোগী ও দ্বিধাগ্রস্ত লোকের অপকর্মগুলি অনুসারে নহে।
120তোমাদের মস্তকসমূহ বিশ্বাসভাজনতা ও সততার অলঙ্কার দ্বারা, তোমাদের হৃদয়সমূহ ঈশ্বরের ভীতির পরিচ্ছদ দ্বারা, তোমাদের রসনাগুলি নিরঙ্কুশ সত্যবাদিতা দ্বারা, তোমাদের দেহগুলি শিষ্টাচারিতার পোশাক দ্বারা সজ্জিত কর। বাস্তবিক-ই এইগুলি মানব মন্দিরের উপযুক্ত ভূষণাবলী, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা গভীরভাবে চিন্তা করে। হে বাহা’র জনমন্ডলী! একক সত্য ঈশ্বরের দাসত্বের রজ্জুর প্রতি দৃঢ়সংলগ্ন থাক, কারণ, তদ্বারা সংরক্ষিত ফলকলিপিতে তোমাদের অবস্থানসমূহ সুস্পষ্ট, তোমাদের নামসমূহ লিখন ও সংরক্ষণ, তোমাদের মর্যাদাসমূহ উচ্চতর এবং তোমাদের স্মরণ মহিমান্বিত করা হইবে। সতর্ক হও, যেন পৃথিবীর অধিবাসীগণ এই গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত মর্যাদা লাভ হইতে তোমাদিগকে বাধাগ্রস্ত না করে। এইরূপে আমরা আমাদের অধিকাংশ লিপিসমূহে এবং বর্তমানে এই পবিত্র ফলকলিপিতে তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করিয়াছি, যাহার উপর মহাপরাক্রমশালী, সর্ববিজ্ঞ পরম প্রভু তোমাদের ঈশ্বরের নিয়মাবলীর দিবস-তারকা কিরণ প্রদান করিতেছে।
121যখন আমার উপস্থিতির মহাসাগরে ভাটা পড়িবে এবং আমার প্রত্যাদেশ গ্রন্থ সমাপ্ত হইবে তখন তোমাদের মুখমন্ডল তাহার দিকে ফিরাইবে, যাহাকে ঈশ্বর অভিপ্রেত করিয়াছেন, যে এই প্রাচীন মূল হইতে শাখা বিস্তার করিয়াছে।
122মানবের হীনম্মন্যতা সম্বন্ধে বিবেচনা কর। তাহারা উহা আকাঙ্খাকরে, যাহা তাহাদের ক্ষতি করে এবং সেই বস্তু পরিত্যাগ করে, যাহা তাহাদের লাভবান করে। প্রকৃতপক্ষে, ইহারা তাহাদের মধ্যে গণ্য যাহারা অতিশয় বিপথগামী। আমরা কতিপয় লোককে স্বাধীনতায় আকাক্সক্ষী এবং ইহাতে গর্ববোধ করিতে দেখিতে পাইয়াছি। এইরূপ লোকেরা অজ্ঞতার গভীরে অবস্থান করিতেছে।
123স্বাধীনতা পরিণামে অবশ্যই বিদ্রোহের দিকে পরিচালিত করে, যাহার অগ্নিশিখাসমূহ কেহ নির্বাপিত করিতে পারে না। এইরূপে তিনি তোমাদের সতর্ক করিয়াছেন, যিনি বিচারক; সর্বজ্ঞ। তোমরা জানিয়া রাখ যে, স্বাধীনতার প্রতিরূপ এবং ইহার নিদর্শন হইতেছে পশু। যাহা কিছু মানুষের জন্য উপযুক্ত, তাহা হইতেছে এইরূপ নিয়ন্ত্রণসমূহের প্রতি অনুগত থাকা, যাহা তাহার নিজের অজ্ঞতা হইতে নিরাপদ করিবে এবং বিবাদ সৃষ্টিকারীর ক্ষতি হইতে তাহাকে রক্ষা করিবে। স্বাধীনতা মানুষকে ন্যায্যতার সীমানাগুলি অতিক্রম করিতে এবং তাহার মর্যাদার স্থানকে লঙ্ঘন করিতে সমর্থন করে। ইহা তাহাকে চরম নৈতিক বিচ্যুতি এবং পাপাচারের পর্যায়ে নামাইয়া আনে।
124লোকদের একটি মেষপালরূপে বিবেচনা কর, যাহার নিরাপত্তার জন্য একজন মেষপালকের প্রয়োজন রহিয়াছে। সত্য সত্যই, ইহাই সত্য, সুনিশ্চিত সত্য। নির্দিষ্ট অবস্থাগুলিতে আমরা স্বাধীনতা অনুমোদন করি এবং অন্যগুলিতে উহার অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করি। সত্য সত্যই, আমরা সর্বজ্ঞ।
125বল ঃ আমার আদেশসমূহের প্রতি আনুগত্যের মধ্যে মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা বিদ্যমান, যাহা সম্বন্ধে তোমরা সামান্য-ই অবগত। লোকেরা যদি তাহা পালন করিত যাহা আমরা প্রত্যাদেশের স্বর্গ হইতে দান করিয়াছি, তাহা হইলে নিশ্চিতরূপে তাহারা পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করিত। সুখী সেই জন যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করিয়াছে, তাঁহার ইচ্ছার স্বর্গ হইতে তিনি যাহা কিছু প্রকাশ করিয়াছেন যাহা সমগ্র সৃষ্ট বস্তুতে ব্যাপ্তিশীল হইয়াছে। বলঃ যেই স্বাধীনতা তোমাদেরকে লাভবান করিবে, তাহা শাশ্বত সত্য ঈশ্বরের প্রতি পরিপূর্ণ দাসত্বের মধ্যে ব্যতীত অন্য কোথাও পাওয়া যাইবে না। যে কেহ ইহার মিষ্টতার আস্বাদ লাভ করিয়াছে, সে ইহাকে পৃথিবী এবং স্বর্গের সকল রাজ্যের সহিত বিনিময় করিতে অস্বীকার করিবে।
126বায়ান গ্রন্থে আমাদের কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে তোমাদিগকে নিষেধ করা হইয়াছিল। পরম প্রভু এখন এই নিষেধাজ্ঞা হইতে তোমাদিগকে অব্যাহতি প্রদান করিয়াছেন, যাহাতে তোমরা যাহা জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা কর, তাহা জিজ্ঞাসা করিতে পার, তবে এইরূপ অসার প্রশ্নাবলী যেন না হয়, যাহা সম্বন্ধে পূর্ববর্তী সময়ের লোকজন অধিকক্ষণ আলোচনা করিতে অভ্যস্ত ছিল। ঈশ্বরকে ভয় কর এবং তোমরা ন্যায়পরায়ণদের মধ্যে গণ্য হও। তোমরা উহাই জিজ্ঞাসা কর, যাহা তোমাদিগকে ঈশ্বরের ধর্মে এবং তাঁহার রাজ্যে লাভবান করিবে, কারণ তাঁহার ¯েœহশীল সহানুভূতির দ্বারগুলি স্বর্গে ও মর্ত্যে বসবাসকারী সকলের সম্মুখে উন্মুক্ত রহিয়াছে ।
127ঈশ্বরের গ্রন্থে এক বৎসরে মাসগুলির সংখ্যা উনিশ নির্ধারিত হইয়াছে। ইহাদের মধ্যে প্রথমটি এই নামের দ্বারা অলংকৃত হইয়াছে, যাহা সমগ্র সৃজনকুলকে ছায়ায় আবৃত করিয়াছে।
128পরম প্রভু আদেশ করিয়াছেন যে মৃতদের স্ফটিক, শক্ত, প্রতিরোধক পাথর অথবা মসৃণ ও টেকসই কাঠের তৈয়ারী শবাধারে করিয়া সমাধিস্থ করিতে হইবে, এবং তাহাদের আঙ্গুলে ক্ষোদিত আংটি পরাইতে হইবে, সত্য সত্যই, তিনি সর্বোচ্চ আদেশদাতা, সর্বজ্ঞ।
129এই আংটিগুলির উৎকীর্ণ লিপি হইবে, পুরুষদের জন্য: “স্বর্গসমূহ এবং পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যাহা কিছু রহিয়াছে, তাহাদের সকলের মালিক ঈশ্বর এবং প্রকৃতপক্ষে তাঁহার সকল বস্তুর জ্ঞান রহিয়াছে’’ এবং নারীদের জন্য “স্বর্গসমূহ এবং পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যাহা কিছু রহিয়াছে তাহার মালিক ঈশ্বর, এবং প্রকৃতপক্ষে তিনি সকল বস্তুর উপর শক্তিমান।’’ সেই শ্লোকসমূহ, যাহা পূর্বে অবতীর্ণ হইয়াছিল, কিন্তু দেখ, বায়ানের কেন্দ্রবিন্দু এখন উচ্চস্বরে বলিতেছেন, “হে জগৎসমূহের পরম প্রিয়! ঐগুলির পরিবর্তে এইরূপ শব্দাবলী অবতরণ করুন, যাহা সমগ্র মানবজাতির উপর দিয়া আপনার সদয় অনুগ্রহের সুরভি প্রবাহিত করিবে। আমরা প্রত্যেকের কাছে ঘোষণা করিয়াছি যে, আপনার সকাশ হইতে মাত্র একটি শব্দ বায়ানে যাহা কিছু অবতীর্ণ হইয়াছে, তাহার সব কিছুকে শ্রেষ্ঠতায় অতিক্রম করিবে, সত্য সত্যই, যাহা কিছু আপনাকে সন্তুষ্ট করে, তাহা করিবার শক্তি আপনার রহিয়াছে। আপনার করুণা মহাসাগরের প্রচুর বদান্যতা হইতে আপনার ভৃত্যদের বঞ্চিত করিবেন না। বাস্তবিক-ই, আপনি তিনি, যাঁহার অনুক¤পা অসীম।’’ দেখ, আমরা তাঁহার আবেদন মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করিয়াছি এবং এখন তাঁহার ইচ্ছা পূরণ করিলাম। সত্য সত্যই, তিনি পরম প্রিয়তম, প্রার্থনাসমূহে সাড়াদানকারী। যদি পরবর্তী শ্লোক যাহা এই মুহূর্তে ঈশ্বর কর্তৃক অবতীর্ণ হইয়াছে, তাহা নারী এবং পুরুষ উভয়ের সমাধি আংটিসমূহের উপর খোদাই করা হয়, তাহা হইলে ইহা তাহাদের জন্য উত্তম হইবে; নিঃসন্দেহে আমরা সর্বোচ্চ আদেশদাতা : “আমি ঈশ্বরের নিকট হইতে আসিয়াছিলাম এবং তিনি ব্যতীত আর সব কিছু হইতে বিছিন্ন হইয়া করুণাময়, সহানুভূতিশীল তাঁহার নামের প্রতি দৃঢ়সংলগ্ন হইয়া তাঁহার কাছে প্রত্যাবর্তন করিতেছি।’’ এইরূপে পরম প্রভু যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে তাঁহার সকাশ হইতে একটি বদান্যতার জন্য পৃথক করিয়া থাকেন। তিনি, প্রকৃতপক্ষে, শক্তি ও পরাক্রমের ঈশ্বর।
130পরম প্রভু আরো আদেশ দিয়াছেন যে মৃতদের পাঁচখ- রেশম বা সুতি বস্ত্রে জড়াইতে হইবে। যাহাদের অর্থ সংকুলান সীমিত তাহাদের জন্য উহাদের যে কোন বস্ত্রের একটি খ- হইলেই যথেষ্ট হইবে। এইরূপ-ই তাঁহার দ্বারা আদেশ প্রদান করা হইয়াছে, যিনি সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞাত। মৃতদেহ শহর হইতে এক ঘণ্টার অধিকতর দূরত্বে পরিবহন করিতে তোমাদের নিষেধ করা হইয়াছে; বরং উহা ঔজ্জ্বল্য ও প্রশান্তি সহকারে নিকটবর্তী স্থানে সমাহিত করিতে হইবে।
131ঈশ্বর বায়ানে আরোপিত ভ্রমণ বিষয়ক নিষেধসমূহ তুলিয়া লইয়াছেন। সত্য সত্যই, তিনি অপ্রতিহত, তিনি যাহা ইচ্ছা করেন তিনি তাহা-ই করেন এবং তিনি যাহা ইচ্ছা করেন তাহা-ই আদেশ করেন।
132হে বিশ্বের জনমন্ডলী! তোমরা তাঁহারই আহ্বানে কর্ণপাত কর, যিনি নামাবলীর পরম প্রভু, যিনি সর্বমহান কারাগারে তাঁহার বাসস্থান হইতে তোমাদের প্রতি ঘোষণা করিতেছেন, “সত্য সত্যই, ক্ষমতাশীল, শক্তিমান, সর্বদমনকারী, মহামহিমান্বিত, সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই।’’ বাস্তবিক-ই, তিনি ব্যতীত কোন ঈশ্বর নাই, যিনি জগৎসমূহের শক্তিশালী শাসক। তাঁহার ইচ্ছা হইলে তাঁহার উপস্থিতি হইতে উদ্্গত মাত্র একটি শব্দ দ্বারা সমগ্র মানবজাতিকে করায়ত্ত করিতেন। সতর্ক হও, যেন তোমরা এই ধর্মকে মানিয়া লইতে ইতস্ততঃ না কর, যে ধর্মের সম্মুখে ঊর্ধ্বস্থিত জনমন্ডলী এবং নামাবলীর নগরসমূহের অধিবাসীরা নতজানু হইয়াছে। ঈশ্বরকে ভয় কর এবং ঐ সমস্ত লোকের মধ্যে হইও না, যাহারা একটি পর্দা দ্বারা আড়াল হইয়াছে। আমার প্রেমের অগ্নি দ্বারা পর্দাগুলিকে জ্বালাইয়া দাও এবং অলস কল্পনাসমূহের কুয়াশা এই নামের শক্তি দ্বারা দূর করিয়া দাও, যাহার মাধ্যমে আমরা সমগ্র সৃজনকুলকে বশীভূত করিয়াছি।
133গড়িয়া তোল এবং মহিমান্বিত কর যমজ পবিত্রস্থানে অবস্থিত গৃহ দুইটিকে এবং অন্য স্থানসমূহকে, যেইখানে পরম করুণাময় তোমাদের প্রভুর সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এইরূপ-ই প্রত্যেক বোধশক্তিস¤পন্ন হৃদয়ের প্রতি তোমাদের পরম প্রভু আদেশ করিয়াছেন।
134সতর্ক হও, যেন এই পৃথিবীর সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও কার্যসমূহের প্রতি নিবিষ্টতা তোমাদিগকে তাহা পালন করা হইতে বাধা না দেয়, যাহা পালন করিতে তিনি তোমাদিগকে আদেশ দিয়াছেন, যিনি পরাক্রমশালী, বিশ্বস্ত। তোমরা মানবজাতির মধ্যে এইরূপ অটলতার প্রতিমূর্তি হও যে তাহাদের সন্দেহ দ্বারা তোমাদিগকে ঈশ্বর হইতে দূরে সরাইয়া রাখা যাইবে না, যাহারা তাঁহাকে অবিশ্বাস করিয়াছিল, যখন তিনি সার্বভৌম ক্ষমতায় ভূষিত হইয়া নিজেকে প্রকাশ করিয়াছিলেন। মনোযোগী হও, যেন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ কোন কিছু এই জীবন্ত গ্রন্থের শ্রবণ হইতে তোমাদিগকে বাধাগ্রস্ত না করে, যাহা এই সত্যটি ঘোষণা করিতেছে: “সত্য সত্যই, পরমোৎকৃষ্ট, সর্বপ্রশংসিত, আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই।’’ ন্যায়পরায়ণতার চক্ষু সহকারে তোমরা তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত কর, যিনি ঐশী ইচ্ছা ও ক্ষমতার স্বর্গ হইতে অবতরণ করিয়াছেন এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা অন্যায় আচরণ করে।
135অতঃপর এই কথাগুলি স্মরণ কর যাহা এই প্রত্যাদেশের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিস্বরূপ তাঁহার লেখনী হইতে প্রবাহিত হইয়াছিল যিনি ছিলেন আমার অগ্রদূত এবং বিবেচনা কর আমার জীবনের দিনগুলিতে অত্যাচারীদের হস্তসমূহ কি করিয়াছিল। প্রকৃতপক্ষে তাহারা বিনাশপ্রাপ্তদের মধ্যে গণ্য। তিনি বলিয়াছিলেন, “ যদি তোমরা তাঁহার সান্নিধ্য লাভ কর যাঁহাকে আমরা প্রকাশ করিব, তাহা হইলে তোমরা ঈশ্বরের নিকট তাঁহার বদান্যতায় ইহা অনুমোদন করিতে সনির্বন্ধ প্রার্থনা জানাইবে, যেন তিনি তোমাদের আসনসমূহে উপবেশন করিতে প্রসন্ন হন, কারণ এই কাজটি তোমাদিগকে অতুলনীয় ও উচ্চতম সম্মান প্রদান করিবে। তিনি যদি তোমাদের গৃহে এক পেয়ালা জল পান করেন, তাহা হইলে তোমাদের পক্ষে কেবল প্রতিটি আত্মাকে-ই নয়, প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুকে ইহার জীবনদানকারী জল প্রদান অপেক্ষা অধিকতর গুরুত্বের কাজ হইবে। হে তোমরা আমার সেবকগণ, এই কথা জনিয়া রাখ।’’
136এই কথাগুলির দ্বারাই আমার অগ্রদূত আমার সত্তার প্রশংসা করিয়াছিলেন, যদি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করিতে। যে-কেহ এই কথাগুলি গভীরভাবে চিন্তা করিবে এবং ইহাদের মধ্যে সংরক্ষিত নিহিত মণিমুক্তাসমূহ উপলব্ধি করিবে, ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতার শপথ, সে এই কারাগারের দিক হইতে প্রবহমান পরম করুণাময়ের সুরভি অনুভব করিবে, এবং সর্বান্তঃকরণে, এইরূপ আকুল আকাক্সক্ষায় তাঁহার পানে ছুটিয়া আসিবে যে স্বর্গ ও মর্ত্যরে বাহিনীসমূহ তাহাকে বাধা প্রদান করিতে অক্ষম হইবে। বল ঃ ইহা এমনই একটি প্রত্যাদেশ যাহা প্রতিটি সাক্ষ্য ও প্রমাণ চক্রাকারে প্রদক্ষিণ করিতেছে। এইরূপে ইহা তোমাদের প্রভু কর্তৃক অবতরণ করা হইয়াছে, যিনি করুণার ঈশ্বর, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা সঠিক বিচার করে। বলঃ সমস্ত ধর্মগ্রন্থের ইহাই পরম আত্মা, যাহা সর্বোচ্চের লেখনীর মধ্যে ফুৎকার করা হইয়াছে, সৃষ্টির সকল অস্তিত্বকে বিস্ময়ে হতবাক করিয়াছে, কেবল তাহারা ব্যতীত যাহারা আমার এই ¯েœহময় অনুগ্রহের মৃদুমন্দ সমীরণ ও আমার বদান্যতাসমূহের মিষ্ট ঘ্রাণের দ্বারা পরমানন্দিত হইয়াছে, যাহা সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে অনুপ্রবেশ করিয়াছে।
137হে বায়ানের লোকসকল! তোমরা পরম করুণাময়কে ভয় কর এবং অন্য অনুচ্ছেদে তিনি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা বিবেচনা কর। তিনি বলিয়াছেন : “ প্রকৃতপক্ষে তিনিই কিব্লাহ্ যাহাকে ঈশ্বর প্রকাশ করিবেন, যখনই তিনি স্থানান্তরিত হইবেন, ইহা স্থানান্তরিত হইবে, যতক্ষণ না তিনি স্থির হইবেন।’’ এইরূপে এই কথা সর্বোচ্চ আদেশদাতা নির্দিষ্ট করিয়াছিলেন যখন তিনি এই পরম মহিমান্বিত সুষমার উল্লেখ করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন। হে জনমন্ডলী, এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা কর, এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা ভ্রান্তির বনভূমিতে উন্মাদের ন্যায় বিচরণ করে। তোমাদের অলস কল্পনাসমূহের তাড়নায় তোমরা যদি তাঁহাকে প্রত্যাখ্যান কর তাহা হইলে কোথায় সেই কিব্লাহ্, যাহার দিকে তোমরা মুখ ফিরাইবে, ওহে অমনোযোগীদের দল? তোমরা এই শ্লোক গভীরভাবে চিন্তা কর এবং ঈশ্বরের সমক্ষে ন্যায়পরায়ণতা সহকারে বিচার কর, যাহাতে হয়তো তোমরা সেই মহাসাগর হইতে রহস্যাবলীর মণিমুক্তা সংগ্রহ করিতে পার, যাহা সর্বগৌরবময়, সর্বোচ্চ আমার নামে তরঙ্গায়িত হইতেছে।
138এই দিবসে যাহা কিছু এই প্রত্যাদেশে প্রকাশিত হইয়াছে তাহা ব্যতীত কেহ যেন অন্য কিছু সুদৃঢ়ভাবে ধারণ না করে। অতীতে এবং ভবিষ্যতে এইরূপ-ই ঈশ্বরের আদেশ Ñ একটি আদেশ যাহা দ্বারা অতীতের বার্তাবাহকদের ধর্মগ্রন্থগুলি অলঙ্কৃত হইয়াছে। অতীতে এবং ভবিষ্যতে এইরূপ-ই পরম প্রভুর সতর্কীকরণ Ñ যে সতর্কীকরণ দ্বারা জীবন গ্রন্থের ভূমিকা সুশোভিত করা হইয়াছে, যদি তোমরা ইহা অনুভব করিতে। অতীতে এবং ভবিষ্যতে এইরূপ-ই পরম প্রভুর আদেশ; সতর্ক হও যেন তোমরা ইহার পরিবর্তে অবমাননা ও অসম্মানের অংশ পছন্দ না কর। এই দিবসে ঈশ্বর ব্যতীত আর কোন কিছু তোমাদের কাজে লাগিবে না অথবা তিনি ব্যতীত আর কোন আশ্রয়স্থল নাই, যিনি সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ। যে কেহ আমাকে জানিয়াছে, সে সমস্ত আকাক্সক্ষার লক্ষ্যবস্তুকে জানিয়াছে এবং যে কেহ আমার দিকে মুখ ফিরাইয়াছে, সে সমস্ত আরাধনার লক্ষ্যবস্তুর দিকে মুখ ফিরাইয়াছে । এইরূপেই ইহা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে এবং এইরূপেই সমস্ত জগৎসমূহের পরম প্রভু ঈশ্বর কর্তৃক আদেশ দেওয়া হইয়াছে। আমার প্রত্যাদেশের মাত্র একটি শ্লোক পাঠ করা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী উভয় প্রজন্মসমূহের ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠ করা অপেক্ষা অধিকতর উত্তম। ইহা-ই সর্বকরুণাময়ের বাক্য, যদি তোমাদের শ্রবণ করিবার কর্ণ থাকিত! বলঃ ইহাই জ্ঞানের নির্যাস, যদি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করিতে।
139অতঃপর অপর একটি অনুচ্ছেদে কি প্রকাশ করা হইয়াছে এখন বিবেচনা, ইহার দ্বারা হয়তো তোমরা তোমাদের নিজেদের ধারণাসমূহ পরিত্যাগ করিতে এবং সত্তার পরম প্রভু, ঈশ্বরের দিকে তোমাদের মুখ ফিরাইতে সক্ষম হইবে । তিনি* বলিয়াছেনঃ “বায়ানে বিশ্বাসীর সঙ্গে ব্যতীত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অবৈধ। যদি কোন বিবাহের কেবল একটি পক্ষ এই ধর্ম গ্রহণ করে, তাহা হইলে স্বামী অথবা স্ত্রীর অধিকারভুক্ত স¤পত্তি অপরজনের কাছে অবৈধ গণ্য হইবে, যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যজন ধর্মান্তরিত না হয়। তথাপি এই আইন তখনই বলবৎ হইবে, যখন তাঁহার ধর্মের, যাহাকে আমরা সত্যই প্রকাশ করিব, অথবা যাহা ইতোমধ্যে ন্যায়সংগতভাবে প্রকাশিত হইয়াছে উহার মর্যাদায় উন্নতিসাধন হইবে। ইহার পূর্বে তোমরা তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইতে পার, যাহাতে হয়তো এই উপায়ে তোমরা ঈশ্বরের ধর্মের উন্নতি সাধন করিতে পার।’’ এইরূপে, বুলবুলটি স্বর্গীয় বৃক্ষশাখার উপর ইহার সর্বকরুণাময় পরম প্রভুর প্রশংসায় সুমধুর সুরে গাহিয়াছে। মঙ্গল তাহাদেরই যাহারা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে।
140হে বায়ানের জনমন্ডলী! আমি তোমাদের প্রভু করুণাময় ঈশ্বরের দিব্য দিয়া তোমাদিগকে নিরপেক্ষতার দৃষ্টি সহকারে এই কথার প্রতি লক্ষ্য করিতে বলিতেছি যাহা সত্যের শক্তি দ্বারা অবতীর্ণ হইয়াছে এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা ঈশ্বরের সাক্ষ্য প্রমাণ দর্শন করা সত্ত্বেও তাহা প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার করে। বাস্তবিক-ই তাহারা ঐ সকল লোকের মধ্যে পরিগণিত যাহারা নিশ্চিতরূপে বিনাশপ্রাপ্ত হইবে। বায়ানের কেন্দ্রবিন্দু তাঁহার ধর্মের সম্মুখে আমার ধর্মের সুউচ্চ মর্যাদার কথা এই শ্লোকে বিশদভাবে উল্লেখ করিয়াছেন; প্রতিটি ন্যায়পরায়ণ ও বোধশক্তিস¤পন্ন মন এই কথার সাক্ষ্য দিবে। যেইরূপ তোমরা এই দিবসে এখন-ই প্রত্যক্ষ করিতেছ, ইহার মর্যাদা এইরূপ সুউচ্চ যে, যাহাদের চক্ষুসমূহ এই নশ্বর জীবনে নেশাচ্ছন্ন এবং পরবর্তী জীবনে যাহাদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি অপেক্ষা করিতেছে, তাহারা ব্যতীত কেহই তাহা অস্বীকার করিতে পারে না।
141বলঃ ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতার শপথ! সত্যই, আমি তাঁহার** পরম প্রিয়তম; এবং এই মুহূর্তে তিনি প্রত্যাদেশের স্বর্গ হইতে অবতরণশীল এই শ্লোকসমূহ শ্রবণ করিতেছেন এবং এই দিবসসমূহে তোমরা যে অপরাধসমূহ করিয়াছ তাহার জন্য তিনি বিলাপ করিতেছেন। ঈশ্বরকে ভয় কর, এবং আক্রমণকারীর সহিত যোগ দিও না। বলঃ হে লোকসকল, তোমরা তাঁহাকে** অবিশ্বাস করিতে পছন্দ করিলে, অন্ততঃ তাঁহার শত্রু হওয়া হইতে বিরত থাক। ঈশ্বরের শপথ! অত্যাচারীদের বাহিনীসমূহ-ই যথেষ্ট, যাহারা তাঁহার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হইয়াছে।
142সত্য সত্যই, তিনিএই প্রত্যাদেশে নির্দিষ্ট আইনসমূহ এইজন্য অবতীর্ণ করিয়াছিলেন যাহাতে পরম অত্যুচ্চের লেখনীকে মানুষের জ্ঞানাতীত তাঁহার নিজ পদমর্যাদা ও তাঁহার পরম অত্যুজ্জ্বল সুষমার মহিমা কীর্তন ব্যতীত অন্য কিছুর জন্য চালনা করার প্রয়োজন না হয়। তাহা সত্ত্বে¡ও, যেহেতু আমরা তোমাদের প্রতি আমাদের বদান্যতা প্রমাণ করিতে ইচ্ছুক হইয়াছি, সেই হেতু আমরা সত্যের শক্তির মাধ্যমে এই আইনসমূহ ¯পষ্টতা সহকারে লিপিবদ্ধ করিয়াছি এবং সেইগুলিকে লঘু করিয়াছি, যেইগুলি তোমাদের পালনের জন্য ইচ্ছা করিয়াছি। তিনি সত্য সত্যই উদার, দানশীল।
143এই স্বর্গীয় বিজ্ঞতার প্রভাত যাহা কিছু উচ্চারণ করিবে তাহা তিনি পূর্বাহ্ণে তোমাদিগকে জানাইয়াছিলেন। তিনি বলিয়াছিলেন এবং তিনি সত্য কথাই বলিয়া থাকেনঃ তিনিই সেইজন, যিনি সর্বাবস্থায় ঘোষণা করিবেনঃ “সত্য সত্যই, একক, অতুলনীয়, সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞাত, আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই।’’ ইহা এমনই একটি পদমর্যাদা যাহা ঈশ্বর একমাত্র এই সুমহান, এই অনন্য এবং বিস্ময়কর প্রত্যাদেশের প্রতি নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন। ইহা তাঁহার উদার অনুগ্রহের একটি নিদর্শন, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা উপলব্ধি করে, এবং ইহা তাঁহার অপ্রতিরোধ্য আদেশের একটি নিদর্শন। ইহাই তাঁহার সর্বমহান নাম, মহামহিমান্বিত উচ্চারণ এবং তাঁহার পরম উৎকৃষ্ট উপাধিসমূহের প্রভাতকাল, যদি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করিতে। শুধু তাহাই নহে, অধিকন্তু, তাঁহার দ্বারা ঐশী পথ নির্দেশনার প্রতিটি উৎস, প্রতিটি প্রাভাতিক স্থান প্রকাশ করা হইয়াছে। হে লোকসকল, উহাদের সম্বন্ধে ভাবিয়া দেখ, যাহা বাস্তবিক-ই অবতীর্ণ হইয়াছে, উহাদের সম্বন্ধে নিবিড়ভাবে চিন্তা কর এবং সীমা লঙ্ঘনকারীদের মধ্যে গণ্য হইও না।
144সকল ধর্মের লোকদের সহিত বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির সহিত মিলিত হও, যাহাতে তাহারা তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের মধুর সুরভি গ্রহণ করিতে পারে। সতর্ক হও, যেন লোকদের নির্বোধ মূর্খতার অগ্নিশিখা তোমাদের পরাভূত না করে। সমস্ত বস্তুই ঈশ্বর হইতে আগমন করে এবং তাঁহার নিকট প্রত্যাবর্তন করে। তিনি-ই সকল বস্তুর উৎস এবং তাঁহাতে-ই সকল বস্তুর সমাপ্তি ঘটে।
145সতর্ক হও যেন তোমরা কোন গৃহে ইহার মালিকের অনুপস্থিতিতে তাহার অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ না কর। সকল অবস্থায় তোমরা যথাযথ নৈতিক আচরণ করিবে এবং পথভ্রষ্টদের মধ্যে হইও না।
146যাকাত পরিশোধ-এর মাধ্যমে তোমাদের ভরণপোষণের উপায়সমূহ ও এইরূপ অন্যান্য বস্তুসমূহকে পবিত্র করিবার জন্য তোমাদিগকে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। এইরূপ-ই এই মহিমান্বিত ফলকলিপিতে তাঁহার-ই দ্বারা এই আদেশ দেওয়া হইয়াছে, যিনি শ্লোকসমূহের প্রকাশক। যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় হয়, আমরা শীঘ্রই ইহার পরিমাণ নির্ধারণের পদ্ধতি প্রকাশ করিব। সত্য সত্যই, তিনি যাহা কিছু ইচ্ছা করেন তাহা-ই তিনি তাঁহার জ্ঞানের দ্বারা ব্যাখ্যা করেন এবং সত্যই, তিনি সর্বদর্শী এবং সর্বজ্ঞ ।
147ভিক্ষা করা অবৈধ এবং যে ভিক্ষা করে তাহাকে ভিক্ষা দেওয়া নিষিদ্ধ। জীবিকা উপার্জনের জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে এবং যাহারা ইহাতে অক্ষম, তাহাদের জন্য ঈশ্বরের প্রতিনিধিবর্গ ও ধনবানদের উপর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার দায়িত্ব ন্যস্ত রহিয়াছে। তোমরা ঈশ্বরের বিধি ও আদেশাবলী মানিয়া চলিবে; শুধু তাহাই নহে, এইগুলিকে তোমাদের নিজেদের চক্ষুর মত রক্ষা করিও এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা দুঃখজনকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
148ঈশ্বরের গ্রন্থে তোমাদিগকে দ্বন্দ্ব ও কলহে লিপ্ত হইতে, কাহাকেও আঘাত করিতে অথবা অনুরূপ কাজ করিতে যাহাতে হৃদয় ও আত্মাসমূহ দুঃখিত হইতে পারে তাহা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। অতীতে যে কেহ অন্যের দুঃখের কারণ হইত, তাহার জন্য উনিশ মিশ্কাল স্বর্ণের জরিমানা তাঁহার দ্বারা নির্ধারিত হইয়াছিল, যিনি সমগ্র মানবজাতির পরম প্রভু; তবে এই প্রত্যাদেশে তিনি তোমাদিগকে তাহা হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন এবং ন্যায়পরায়ণতা ও ধার্মিকতা প্রদর্শন করিতে উপদেশ দিয়াছেন। এই সমুজ্জ্বল ফলকলিপিতে তিনি এইরূপ আদেশ দিয়াছেন। তোমরা যাহা নিজেদের জন্য কামনা কর না, তাহা তোমরা অন্যের জন্য কামনা করিও না। ঈশ্বরকে ভয় কর, এবং অহংকারীদের মধ্যে গণ্য হইও না। জল হইতে তোমাদিগকে সৃষ্টি করা হইয়াছে, এবং তোমরা ধুলায় প্রত্যাবর্তন করিবে। তোমাদের পরিণতির কথা গভীরভাবে চিন্তা কর যাহা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে এবং অত্যাচারীর পথসমূহে বিচরণ করিও না। ঈশ্বরের শ্লোকগুলির প্রতি কর্ণপাত কর যাহা তিনি তোমাদের নিকট আবৃত্তি করিয়াছেন যিনি পবিত্র লোত-বৃক্ষ। উহারা নিশ্চিতরূপে ইহজগৎ ও পরজগতের পরম প্রভু ঈশ্বর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নির্ভুল নিক্তি। এইগুলির মাধ্যমে মানব আত্মাকে প্রত্যাদেশের প্রভাতের প্রতি উড্ডয়ন করিতে পাখাযুক্ত করা হয় এবং প্রত্যেক প্রকৃত বিশ্বাসীর হৃদয় আলোকে পরিপূর্ণ হইয়া যায়। আইনসমূহ এইরূপ-ই যাহা ঈশ্বর আরোপ করিয়াছেন, ঐশী বিধানাবলী এইরূপ-ই যাহা তিনি তাঁহার পবিত্র ফলকলিপিতে নির্দেশ করিয়াছেন; আনন্দ ও উল্লাস সহকারে সেইগুলি পালন কর, কারণ ইহাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানিতে।
149তোমরা ঈশ্বরের শ্লোকসমূহ সকাল এবং সন্ধ্যায় আবৃত্তি কর। যে কেহ এইগুলি আবৃত্তি করিতে ব্যর্থ হইবে, সে ঈশ্বরের চুক্তিপত্র ও তাঁহার ধর্মগ্রন্থের প্রতি বিশ্বস্ত নহে এবং যে কেহ এই যুগে এই পবিত্র শ্লোকসমূহ হইতে মুখ ফিরাইয়াছে সে তাহাদের মধ্যে গণ্য যাহারা অনন্তকাল ব্যাপী ঈশ্বর হইতে মুখ ফিরাইয়াছে। হে আমার ভৃত্যগণ! তোমরা প্রত্যেকে ঈশ্বরকে ভয় কর। দিবা-রাত্রে অধিক পরিমাণে শ্লোকগুলি পড়িবার জন্য অথবা বহু সংখ্যায় সৎকার্যাবলী সাধনে গর্ববোধ করিও না, কারণ কোন লোক যদি একটিমাত্র শ্লোক আনন্দ ও উজ্জ্বলতা সহকারে পাঠ করে তাহা হইলে তাহার পক্ষে বিপদে সহায়, স্বয়ংসত্তাবিশিষ্ট ঈশ্বরের সমস্ত ধর্মগ্রন্থ নিস্তেজভাবে পাঠ করা অপেক্ষা ইহা-ই অধিকতর উত্তম হইবে। তোমরা পবিত্র বাণীসমূহ এইরূপ পরিমাণে আবৃত্তি কর যেন তোমরা ক্লান্তি ও অবসন্নতার বশীভূত না হও। তোমাদের আত্মার উপর এমন কিছু চাপাইয়া দিও না, যাহা ইহাকে ক্লান্ত ও ভারাক্রান্ত করে বরং এমনভাবে কর যাহা ইহাকে প্রসন্ন ও স্বতঃস্ফূর্ত করে, এইজন্য, যাহাতে ইহা স্বর্গীয় বাণীসমূহের ডানায় ভর করিয়া ঈশ্বরের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীর প্রাভাতিক স্থলের দিকে উড্ডয়ন করিতে পারে; ইহা তোমাদিগকে ঈশ্বরের নিকটতর করিবে, যদি তোমরা উপলব্ধি করিতে।
150তোমাদের শিশুদিগকে মহিমা ও শক্তির স্বর্গ হইতে অবতীর্ণ বাণীসমূহ শিক্ষা দিবে, এইজন্য যাহাতে তাহারা মাশ্রিকুল আয্কারসমূহের মধ্যস্থিত আংশিক ঘেরা স্থানসমূহে উপবিষ্ট হইয়া মধুরতম সুরে পরম করুণাময়ের ফলকলিপিগুলি আবৃত্তি করিতে পারে। যে কেহ পরম করুণাময় আমার নামের আরাধনাপ্রসূত ভাবাবেগে আত্মহারা হইয়াছে; সে ঈশ্বরের শ্লোকসমূহ এইরূপভাবে আবৃত্তি করিবে, যেন তাহা ঐ সকল হৃদয়কে আকৃষ্ট করিবে যাহারা এখনও গভীর নিদ্রায় মগ্ন। মঙ্গল তাহারই, যে আমার নামে তাহার করুণাময় প্রভুর বাণী হইতে চিরস্থায়ী জীবনের অতীন্দ্রিয় মদিরা আকণ্ঠ পান করিয়াছে-একটি নাম যাহার মাধ্যমে প্রতিটি অত্যুচ্চ ও গৌরবের পর্বত ধুলায় পরিণত হইয়াছে।
151তোমাদিগকে প্রতি উনিশ বছর অতিবাহিত হইবার পর, তোমাদের গৃহের আসবাব-পত্রাদি নবায়নের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে; এইরূপ-ই তাঁহার দ্বারা আদেশ প্রদান করা হইয়াছে, যিনি সর্বদর্শী ও সবকিছু অনুভবকারী। সত্য সত্যই, তিনি বিশুদ্ধতার আকাক্সক্ষী - তোমাদের নিজেদের এবং তোমরা যাহা কিছুর অধিকারী হইয়াছ উভয়ের জন্য; ঈশ্বরভীতি অগ্রাহ্য করিও না এবং অবহেলাকারীদের মধ্যে গণ্য হইও না। যে কেহ দেখিতে পাইবে যে এই উদ্দেশ্যে তাহার আর্থিক সংস্থান পর্যাপ্ত নয় সে ঈশ্বর কর্তৃক অব্যাহতি লাভ করিয়াছে, তিনি চিরক্ষমাশীল, সর্ববদান্যতাপূর্ণ।
152গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন একবার এবং শীতকালে প্রতি তিনদিনে একবার তোমাদের পদসমূহ ধৌত করিবে।
153কেহ তোমাদের উপর ক্রুদ্ধ হইলে, তোমরা তাহার প্রতি ভদ্রভাবে সাড়া দিবে এবং কেহ তোমাদের তিরস্কার করিলে প্রতিদানে তাহাকে ধৈর্যশীলতা প্রদর্শন করিবে, কিন্তু তাহাকে তাহার উপর ছাড়িয়া দাও এবং ঈশ্বরের উপর তোমাদের আস্থা রাখ, যিনি সর্বশক্তিমান প্রতিশোধ গ্রহণকারী, শক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার পরম প্রভু।
154তোমাদিগকে প্রচারবেদি ব্যবহার করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। যে কেহ তাহার প্রভুর শ্লোকসমূহ তোমাদিগকে আবৃত্তি করিয়া শোনাইতে ইচ্ছা করে, সে মঞ্চের উপর একটি চেয়ারে উপবেশন করুক, যেন সে তাহার পরম প্রভু এবং সমগ্র মানবজাতির পরম প্রভু, ঈশ্বরের নাম উল্লেখ করিতে পারে। ঈশ্বরের কাছে ইহাই প্রীতিকর যে তাঁহার প্রতি এবং তাঁহার মহিমাময় ও সমুজ্জ্বল ধর্মের প্রকাশের প্রতি তোমাদের যে প্রেম রহিয়াছে, তাহার সম্মানের নিদর্শনস্বরূপ তোমরা চেয়ার ও বেঞ্চের উপর উপবেশন করিবে।
155জুয়া খেলা ও আফিম সেবন তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। হে লোকসকল! উহাদের উভয়কে বর্জন কর এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা সীমা লঙ্ঘন করে। এইরূপ যে কোন দ্রব্যের ব্যবহার হইতে সতর্ক হও যাহা মানব মন্দিরে আলস্য ও অসাড়তা সৃষ্টি করে এবং দেহের ক্ষতিসাধন করে। সত্য সত্যই, যাহা তোমাদের উপকার করিবে তাহা ব্যতীত অন্য কিছু আমরা তোমাদের জন্য আকাঙ্খাকরি না এবং সমস্ত সৃষ্টবস্তু ইহার সাক্ষ্য প্রদান করে, যদি তোমাদের শ্রবণ করিবার মত কর্ণ থাকিত।
156যখনই তোমরা কোন ভোজানুষ্ঠান অথবা উৎসব উপলক্ষে নিমন্ত্রিত হইবে, তখন আনন্দ ও উল্লাস সহকারে সাড়া দিবে এবং যে কেহ তাহার প্রতিশ্রুতি পূরণ করিবে সে নিন্দা হইতে নিরাপদ থাকিবে। ইহা একটি দিবস যখন ঈশ্বরের জ্ঞানগর্ভ আদেশাবলীর প্রত্যেকটির ব্যাখ্যা প্রদান করা হইয়াছে।
157লক্ষ্য কর, “সার্বভৌমত্বের নিদর্শনে মহা উত্থান-পতনের রহস্যটি’’ এখন সুস্পষ্ট করা হইয়াছে। মঙ্গল তাহারই, যাহাকে ঈশ্বর এই “খাড়া আলিফ’’-এর শক্তি দ্বারা উত্তোলিত “ছয়’’-কে চিনিতে সাহায্য করিয়াছেন; সে সত্যই তাহাদের মধ্যে গণ্য যাহাদের বিশ্বাস যথার্থ। বাহ্যতঃ ধার্মিক কতজন অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়াছে, এবং একগুঁয়ে কতজন নিকটবর্তী হইয়া ঘোষণা করিয়াছে, “সর্বপ্রশংসা তোমার! হে তুমি জগৎসমূহের আকাক্সক্ষা।’’ প্রকৃতপক্ষে, তিনি যাহা ইচ্ছা করেন যাহাকে ইচ্ছা করেন তাহা প্রদান করিতে এবং যাহা ইচ্ছা করেন যাহার নিকট হইতে গুটাইয়া লইতে চাহেন, তাহা ঈশ্বরের হাতে রহিয়াছে। তিনি হৃদয়সমূহের অভ্যন্তরের গোপন বিষয়াদি এবং একজন উপহাসকারীর গোপন ইঙ্গিতের অর্থ জানেন। কত অমনোযোগিতার প্রতিমূর্তি, যাহারা পবিত্র অন্তঃকরণে আমাদের সকাশে আসিয়াছিল, আমরা তাহাদিগকে আমাদের গ্রহণের আসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি; এবং কত বিজ্ঞতার ব্যাখ্যাকারীকে সার্বিক ন্যায়পরায়ণতায় আমরা অগ্নিতে নিক্ষেপ করিয়াছি। প্রকৃতপক্ষে আমরা-ই বিচার করিতে পারি। ইহা তিনি যিনি “ঈশ্বর যাহা ইচ্ছা করেন, তাহাই করেন’’-এর প্রকাশ এবং “তিনি যাহা পছন্দ করেন তাহাই তিনি আদেশ করেন’’-এর সিংহাসনে তিনি আসীন।
158আশীষপূতঃ সেই জন যে এই লেখনীর চিহ্নসমূহ হইতে অন্তর্নিহিত অর্থসমূহ উদ্্ঘাটন করে যাহার সঞ্চালনের দ্বারা ঈশ্বরের মৃদুমন্দ সমীরণসমূহ সমুদয় সৃষ্ট জগতের উপর দিয়া প্রবাহিত হয় এবং যাহার নিশ্চলতার দ্বারা অস্তিত্ব জগতে প্রশান্তির যথার্থ নির্যাস আবির্ভূত হয়। পরম করুণাময় মহিমান্বিত হউন, যিনি এমন একটি অমূল্য বদান্যতার প্রকাশক। বলঃ যেহেতু তিনি অন্যায় অবিচার সহ্য করিয়াছিলেন, সেহেতু পৃথিবীতে ন্যায়বিচার আবির্র্ভূত হইয়াছে এবং যেহেতু তিনি অবমাননা গ্রহণ করিয়াছিলেন, সেহেতু মানবজাতির মধ্যে ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশিত হইয়াছে।
159অত্যাবশ্যক না হইলে তোমাদিগকে অস্ত্র বহন করিতে নিষেধ করা হইয়াছে এবং রেশমী বস্ত্র পরিধান করিতে তোমাদিগকে অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। পরম প্রভু, তাঁহার নিকট হইতে একটি বদান্যতাস্বরূপ, তোমাদিগকে পোশাক পরিধান ও দাড়ি কাটার উপর অতীতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসমূহ হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন। সত্যই, তিনি আদেশদাতা, সর্বদর্শী। তোমাদের আচরণে যেন এমন কিছু না থাকে যাহা সুস্থ ও সরল মনের অধিকারীগণ অপছন্দ করে এবং নিজেদেরকে অজ্ঞদের খেলনাসমূহ করিও না। মঙ্গল তাহারই যে নিজেকে যথাযথ আচরণ ও প্রশংসনীয় চরিত্রের পোশাকে সজ্জিত করে। সে নিশ্চিতরূপেই ঐ সমস্ত লোকদের মধ্যে গণ্য, যাহারা স্বতন্ত্র এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কার্যাবলীর দ্বারা তাহাদের প্রভুকে সাহায্য করে।
160তোমরা ঈশ্বরের নগরগুলি ও তাঁহার গ্রামগুলির উন্নয়ন সাধন কর এবং তাঁহার পরম অনুগৃহীতজনদের আনন্দদায়ক স্বরভঙ্গিতে তাঁহার প্রশংসা কীর্তন কর। প্রকৃতপক্ষে, বাক্শক্তির মাধ্যমে মানুষের হৃদয়সমূহের নৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়, ঠিক যেমন হাত এবং অন্যান্য উপায়ের দ্বারা গৃহসমূহ এবং নগরসমূহ নির্মিত হয়। প্রতিটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আমরা ইহার মাধ্যম নির্দিষ্ট করিয়াছি; তোমরা উহার সদ্ব্যবহার কর এবং ঈশ্বরের উপর তোমাদের বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন কর, যিনি সর্বজ্ঞ ও সর্ববিজ্ঞ।
161সেই ব্যক্তিই আশীষপূতঃ যে ঈশ্বর ও তাঁহার নিদর্শনাবলীতে তাহার বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে এবং স্বীকার করিয়াছে যে, “তাঁহার কার্যাবলী সম্বন্ধে তাঁহাকে প্রশ্ন করা যাইবে না।’’ এইরূপ একটি স্বীকৃতিকে ঈশ্বর প্রতিটি বিশ্বাসের অলংকার ও ইহার ভিত্তিস্বরূপ করিয়াছেন। প্রতিটি উৎকৃষ্ট কাজের গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যই ইহার উপর নির্ভর করিবে। তোমাদের চক্ষুসমূহ ইহার উপর নিবদ্ধ কর, যাহাতে বিদ্রোহীদের রটনা তোমাদিগকে বিচ্যুত করিতে না পারে।
162স্মরণাতীত কাল হইতে যাহা নিষিদ্ধ ছিল, তাহা যদি তিনি আইনসম্মত বলিয়া আদেশ প্রদান করেন এবং সর্বযুগে যাহা আইনসম্মত বলিয়া গণ্য হইয়া আসিতেছিল তাহা যদি তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, তাহা হইলে তাঁহার কর্তৃত্ব সম্বন্ধে প্রশ্ন করিবার অধিকার কাহারো নাই। এক মুহূর্তেরও কম সময়ের জন্যও যে কেহ ইতস্ততঃ করিবে, সে একজন সীমালঙ্ঘনকারীরূপে গণ্য হইবে।
163যে কেহ এই মহিমান্বিত এবং মৌলিক সত্য স্বীকার করে নাই এবং এই পরম মহিমান্বিত মর্যাদালাভে ব্যর্থ হইয়াছে, সন্দেহের নিঃশ্বাসসমূহ তাহাকে আন্দোলিত করিবে এবং অবিশ্বাসীদের উক্তিসমূহ তাহার আত্মাকে হতবুদ্ধি করিবে। যে এই মূলনীতি স্বীকার করিয়াছে সে সর্বোৎকৃষ্ট স্থৈর্যে ভূষিত হইবে। সকল সম্মান এই সর্বগৌরবময় মর্যাদার রহিয়াছে, যাহার স্মরণ প্রতিটি মহিমান্বিত ফলকলিপিকে অলংকৃত করিয়া থাকে। এইরূপই হইতেছে সেই উপদেশ, যাহা ঈশ্বর তোমাদিগকে প্রদান করিয়াছেন, একটি উপদেশ যাহা, সর্বপ্রকার সন্দেহ ও হতবুদ্ধিতা হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিবে এবং ইহজগৎ ও পরজগৎ উভয় জগতে মুক্তিলাভে তোমাদিগকে সমর্থ করিবে। সত্য সত্যই তিনি চিরক্ষমাশীল, সর্ববদান্যতাপূর্ণ। তিনি-ই সেই, যিনি বার্তাবাহকগণকে প্রেরণ করিয়াছেন এবং গ্রন্থসমূহ এই ঘোষণা করিবার জন্য অবতরণ করিয়াছেন “সর্বশক্তিমান, সর্ববিজ্ঞ, আমি ব্যতীত কোন ঈশ্বর নাই’’ ।
164হে ‘কাফ’ ও রা*-এর ভূমি! সত্য সত্যই, আমরা তোমাকে ঈশ্বরের নিকট অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখিতেছি এবং তোমার মধ্য হইতে এমন কিছু নির্গত হইতে দেখিতেছি যাহা সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞাত তিনি ব্যতীত যে কাহারো নিকট দুর্জ্ঞেয়; এবং যাহা তোমার নিকট হইতে গুপ্তভাবে ও চুপিসারে চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত হইতেছে, তাহা আমরা উপলব্ধি করিতেছি। আমাদের নিকট সর্ববস্তুর জ্ঞান একটি স্পষ্ট ফলকলিপিতে উৎকীর্ণ রহিয়াছে। তোমার উপর যাহা পতিত হইয়াছে তজ্জন্য তুমি দুঃখ করিও না। ঈশ্বর তোমার মধ্য হইতে শক্তিমান শৌর্যের লোকদিগকে উত্থিত করিবেন, যাহারা এইরূপ দৃঢ়তার সহিত আমার নামের প্রশংসা করিবে, যাহা না তাহারা ধর্মোপদেষ্টাগণের অনিষ্টকর প্রস্তাবনাসমূহ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হইবে, না তাহারা সন্দেহের বীজ বপনকারীদের বক্র উক্তিসমূহের দ্বারা পশ্চাৎপদ হইবে। তাহারা তাহাদের নিজ চক্ষু সহকারে ঈশ্বরকে দর্শন করিবে এবং তাহাদের নিজেদের জীবন দিয়া তাঁহাকে বিজয়ী করিবে। সত্যিকারভাবে ইহারাই তাহাদের মধ্যে গণ্য যাহারা স্থির-সংকল্প।
165হে ধর্মোপদেষ্টাগণ! যখন আমার বাণীসমূহ অবতীর্ণ হইয়াছিল এবং আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী প্রকাশিত হইয়াছিল তখন আমরা তোমাদিগকে পর্দাসমূহের অন্তরালে দেখিতে পাইয়াছিলাম। ইহা সত্যই এক অদ্ভুত ব্যাপার। তোমরা আমার নামের প্রশংসাকীর্তন কর, অথচ যেই সময় পরম করুণাময় তোমাদিগের পরম প্রভু সাক্ষ্য প্রমাণসহ তোমাদিগের মধ্যে আবির্ভূত হইলেন তখন তোমরা আমাকে চিনিলে না। আমরা পর্দাসমূহ বিদীর্ণ করিয়া দিয়াছি। সতর্ক হও যেন তোমরা লোকদিগকে আরেকটি পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত না কর। সমস্ত মানুষের প্রভুর নামে অনর্থক কল্পনাসমূহের শৃঙ্খলগুলি বিছিন্ন করিয়া ফেল এবং প্রবঞ্চকদের মধ্যে গণ্য হইও না। যদি তোমরা ঈশ্বরের দিকে ফির এবং তাঁহার ধর্ম গ্রহণ কর তাহা হইলে ইহার মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিও না এবং ঈশ্বরের গ্রন্থকে তোমাদিগের স্বার্থপর কামনা-বাসনা দ্বারা পরিমাপ করিও না। সত্য সত্যই, ইহা ঈশ্বরের পূর্বের ও ভবিষ্যতের উপদেশ এবং ঈশ্বর ও তাঁহার মনোনীত ব্যক্তিগণ এই বাণীর সাক্ষী, হ্যাঁ, আমরা প্রত্যেকেই ধর্মতঃ সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি।
166তোমরা সেই শেখ-এর কথা স্মরণ কর, যাহার নাম ছিল মুহাম্মদ হাসান, যে তাহার যুগের সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ধর্মোপদেষ্টাগণের মর্যাদা লাভ করিয়াছিল। যখন সত্যপুরুষকে প্রকাশ করা হইল, তখন এই শেখ তাহার অন্যান্য সহগামীদের লইয়া তাঁহাকে প্রত্যাখ্যান করিল, একই সময়ে জনৈক গম ও যব পরিষ্কারকারী তাঁহাকে স্বীকার করিল এবং প্রভুর দিকে মুখ স্থাপন করিল। যদিও দিবস ও রাত্রি উভয় সময়ে সে যেইগুলিকে ঈশ্বরের আইনসমূহ ও অধ্যাদেশাবলী বলিয়া মনে করিয়াছিল উহা লিপিবদ্ধ করায় ব্যস্ত থাকিত, তথাপি, যখন তিনি, যিনি অপ্রতিহত আবির্ভূত হইলেন, তখন ঐ লিপিবদ্ধ জ্ঞানের একটি অক্ষরও তাহার কাজে লাগিল না অথবা তাহা না হইলে সে এইরূপ একটি আনন হইতে মুখ ফিরাইত না, যাহা পরম প্রভুর অত্যন্ত অনুগৃহীতদের মুখমন্ডলসমূহকে আলোকিত করিয়াছে। যখন তিনি নিজেকে প্রকাশ করিলেন তোমরা যদি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করিতে, তাহা হইলে লোকেরা তাঁহার হইতে অন্য দিকে মুখ ফিরাইত না, অথবা আজ তোমরা যাহা কিছু প্রত্যক্ষ করিতেছ তাহা আমাদের উপর পতিত হইত না। তোমরা ঈশ্বরকে ভয় কর এবং অমনোযোগীদের মধ্যে গণ্য হইও না।
167সতর্ক হও, কোন নাম যেন তোমাদিগকে তাঁহার নিকট হইতে প্রতিহত না করে, যিনি সমস্ত নামাবলীর অধিকারী, অথবা কোন শব্দ যেন তোমাদের মধ্যে বিজ্ঞতার এই উৎস, ঈশ্বরের এই স্মরণ হইতে তোমাদিগকে বাধাগ্রস্ত না করে। ওহে ধর্মোপদেষ্টাদের দল, ঈশ্বরের দিকে মুখ ফিরাও এবং তাঁহার আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং নিজেদেরকে আমি এবং আমার সৃষ্টজীবগণের মাঝে একটি পর্দাস্বরূপ করিও না। এইরূপ-ই তোমাদিগের প্রভু তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করিতেছেন এবং তোমাদিগকে ন্যায়পরায়ণ হইতে আদেশ প্রদান করিতেছেন, যেন তোমাদিগের কর্মকা-গুলি অনর্থক না হয় এবং তোমরা স্বয়ং তোমাদের অবস্থা বিস্মৃত না হও। যে কেহ এই ধর্ম অস্বীকার করে, সে কি সৃষ্টির সর্বত্র কোন ধর্মের সত্যতা প্রমাণ করিতে সমর্থ হইবে? না, যিনি বিশ্ব-ব্রহ্মা-ের সৃষ্টিকর্তা, তাঁহারই শপথ! তবুও লোকেরা সুস্পষ্ট পর্দান্তরালে রহিয়াছে। বলঃ এই ধর্মের মাধ্যমে সাক্ষ্যপ্রমাণের দিবস তারকা উদয় হইয়াছে এবং প্রমাণের আলো ইহার দীপ্তি পৃথিবীতে বসবাসকারী সকলের উপর বর্ষণ করিতেছে। ঈশ্বরকে ভয় কর, হে অন্তর্দৃষ্টিস¤পন্ন মনুষ্যগণ এবং তাহাদের মধ্যে হইও না, যাহারা আমাতে অবিশ্বাস করে। মনোযোগী হও, যেন “নবী” শব্দটি তোমাদিগকে এই মহামহিম ঘোষণা হইতে বাধাগ্রস্ত না করে, অথবা, “প্রতিনিধিত্বের’’ কোন উল্লেখ তোমাদিগকে তাঁহারই সর্বময় কর্তৃত্ব হইতে বঞ্চিত না করে, যিনি ঈশ্বরের প্রতিনিধি যাহা জগৎসমূহকে ছায়াছন্ন করিয়াছে। প্রতিটি নাম তাঁহার বাণী দ্বারা সৃষ্ট হইয়াছে এবং প্রতিটি ধর্ম তাঁহার অনিবার্য, তাঁহার শক্তিমান ও বিস্ময়কর উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল। বল ঃ ইহাই ঈশ্বরের দিবস, যেই দিবসে তাঁহার স্বয়ংসত্তা ব্যতীত আর কিছুর উল্লেখ করা যাইবে না, যিনি জগৎসমূহের সর্বশক্তিমান রক্ষক। এই সেই ধর্ম যাহা তোমাদিগের সমস্ত কুসংষ্কার ও প্রতিমাগুলিকে প্রকম্পিত করিয়াছে।
168সত্য সত্যই, আমরা তোমাদিগের মধ্যে তাহাকে দেখিতেছি, যে ঈশ্বরের গ্রন্থ আকড়াইয়া ধরে এবং তাহার প্রভুকে অস্বীকার করিবার জন্য ইহা হইতে প্রমাণসমূহ ও যুক্তিসমূহ উচ্চারণ করে, ঠিক যেমন অন্যান্য প্রতিটি ধর্মের অনুসারীগণ তাহাদের পবিত্র গ্রন্থসমূহে তাহাকে ভ্রান্ত প্রমাণের জন্য যুক্তির সন্ধান করিত, যিনি বিপদে সহায়, স্বয়ংসত্তাবিশিষ্ট। বলঃ একক সত্য ঈশ্বর আমার সাক্ষী যে এই দিবসে, এই জীবন্ত গ্রন্থ ব্যতীত না জগতের ধর্মগ্রন্থসমূহ, না অস্তিত্বে বিদ্যমান গ্রন্থসমূহ ও রচনাবলীর কোন কিছু, তোমাদিগের কোন উপকারে আসিবে “সত্য সত্যই আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই, যিনি সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী’’ যাহা সৃষ্টির মর্মস্থল হইতে ঘোষণা করিতেছে ।
169হে ধর্মোপদেষ্টাদের দল! সতর্ক হও, যেন তোমরা দেশের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদের কারণ না হও, ঠিক যেমন প্রাথমিক দিবসগুলিতে তোমরা এই ধর্ম অস্বীকারের কারণ হইয়াছিলে। এই বাণীর চতুর্দিকে লোকদিগকে সমবেত কর, যাহা প্রস্তরসমূহকে উচ্চস্বরে বলিতে সক্ষম করিয়াছে “রাজ্য ঈশ্বরের যিনি সমস্ত নিদর্শনের প্রাভাতিক স্থল।’’ এইরূপ-ই তোমাদিগের প্রভু, তাঁহার পক্ষ হইতে বদান্যতাস্বরূপ তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করিতেছেন, তিনি সত্যই চিরক্ষমাশীল, পরম উদার।
170তোমরা করিমের কথা স্মরণ কর, যখন আমরা তাহাকে ঈশ্বরের প্রতি আহ্বান করিয়াছিলাম তখন কিভাবে সে তাহার নিজের কামনা-বাসনার বশবর্তী হইয়া অবজ্ঞা প্রদর্শন করিয়াছিল; তবুও আমরা তাহার কাছে তাহাই প্রেরণ করিয়াছিলাম, যাহা ছিল অস্তিত্বের জগতে প্রমাণের চোখে একটি প্রশান্তি এবং স্বর্গ ও পৃথিবীস্থ সমস্ত অধিবাসীদের প্রতি ঈশ্বরের সাক্ষ্যপ্রমাণের পূর্ণতা। যিনি অত্যুচ্চ, সর্বাধিকারী, তাঁহারই কৃপার নিদর্শনস্বরূপ আমরা তাহাকে সত্য গ্রহণ করিতে আদেশ করিয়াছিলাম। কিন্তু সে অন্য দিকে মুখ ফিরাইল যতক্ষণ না ঈশ্বরের নিকট হইতে ন্যায়বিচারস্বরূপ প্রচন্ড ক্রোধের দূতগণ তাহাকে ঘিরিয়া ফেলিল। সত্য সত্যই, আমরা এই বিষয়ের সাক্ষী ছিলাম।
171আবরণসমূহ এইভাবে বিদীর্ণ কর যেন স্বর্গরাজ্যের অধিবাসীরা সেইগুলি ছিন্ন হওয়ার শব্দ শুনিতে পায়। ইহাই অতীত ও ভবিষ্যত দিবসসমূহের জন্য ঈশ্বরের আদেশ। সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে তাহা-ই পালন করিয়া থাকে, যাহা করিতে তাহাকে আদেশ প্রদান করা হইয়াছে এবং অবহেলাকারী দুর্দশাগ্রস্ত হউক।
172এই পার্থিব রাজ্যে ঈশ্বরকে প্রকাশ করানো এবং তাঁহার সর্বময় কর্তৃত্ব অবহিত করানো ব্যতীত নিশ্চয়ই আমাদিগের আর কোন উদ্দেশ্য নাই; আমার পক্ষে সাক্ষীরূপে ঈশ্বর-ই যথেষ্ট। স্বর্গীয় রাজ্যে তাঁহার ধর্মকে মহিমান্বিত করা ও তাঁহার প্রশংসাকীর্তন করা ব্যতীত নিশ্চয়ই আমাদিগের আর কোন উদ্দেশ্য নাই; আমার পক্ষে রক্ষকরূপে ঈশ্বর-ই যথেষ্ট। ঊর্ধ্বরাজ্যে যাহা কিছু তিনি দান করিয়াছেন তাঁহার উচ্চ প্রশংসা করা ব্যতীত নিশ্চয়ই আমাদিগের আর কোন আকাঙ্খানাই; আমার পক্ষে সাহায্যকারীরূপে ঈশ্বর-ই যথেষ্ট।
173তোমরাই সৌভাগ্যবান, হে তোমরা বাহা’র বিজ্ঞজনেরা। পরম প্রভুর শপথ! তোমরা সর্বশক্তিমান মহাসাগরের বিশাল তরঙ্গসমূহ, জ্যোতির মহাকাশের নক্ষত্রমালা, পৃথিবী এবং স্বর্গের মধ্যে বিজয়ের দোলায়মান পতাকাসমূহ। তোমরা লোকদিগের মধ্যে অটলতার প্রকাশসমূহ এবং ধরাবক্ষে বসবাসরত সকলের প্রতি স্বর্গীয় বাণীর প্রভাতসমূহ। মঙ্গল তাহারই যে তোমাদিগের প্রতি মুখ ফিরায় এবং বিপথগামীদের জন্য রহিয়াছে দুর্দশা। এই দিবসে, যে তাহার পরম প্রভু - করুণাময় ঈশ্বরের ¯েœহময় অনুগ্রহের হস্ত হইতে চিরস্থায়ী জীবনের অতীন্দ্রিয় মদিরা আকণ্ঠ পান করিয়াছে, তাহার পক্ষে উপযুক্ত হইবে মানবজাতির দেহে ¯পন্দনশীল শিরাস্বরূপ প্রাণচঞ্চল হওয়া যাহাতে তাহার দ্বারা পৃথিবী ও প্রতিটি ক্ষয়িষ্ণু অস্থি উজ্জীবিত হইতে পারে।
174হে বিশ্বের জনমন্ডলী! যখন এই অতীন্দ্রিয় পারাবত ইহার প্রশংসার আশ্রয়স্থল হইতে উড্ডয়নের ডানা মেলিবে এবং ইহার দূরবর্তী লক্ষ্য, ইহার নিহিত বাসস্থান অন্বেষণ করিবে, তখন গ্রন্থটির যাহা কিছু তোমাদিগের বোধগম্য নহে, তাহার জন্য তোমরা তাঁহারই শরণাপন্ন হইবে যিনি বৃক্ষের শক্তিশালী কা- হইতে শাখা বিস্তার করিয়াছেন।
175হে সর্বোচ্চের লেখনী! তোমার পরম প্রভুর আদেশের ফলকলিপিটির দিকে চালিত হও, যিনি স্বর্গসমূহের স্রষ্টা এবং সেই সময় সম্বন্ধে বল, যখন তিনি, যিনি ঐশী একতার প্রভাত মানুষের জ্ঞানাতীত একত্বের বিদ্যাপীঠ-এর দিকে তাঁহার পদক্ষেপসমূহ চালনা করিতে অভিপ্রায় করিয়াছিলেন; হয়ত তদ্বারা পবিত্র অন্তঃকরণবিশিষ্ট লোকেরা শক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী তোমার পরম প্রভুর রহস্যাবলীর ক্ষণিক দৃষ্টি লাভ করিতে পারে, হোক না তাহা একটি সুচের ছিদ্রতুল্য বিন্দু পরিমাণ, যাহা আবরণসমূহের অন্তরালে লুক্কায়িত রহিয়াছে। বলঃ বস্তুত আমরা গূঢ় অর্থ ও ব্যাখ্যার বিদ্যাপীঠে পদার্পণ করিয়াছিলাম যখন সমস্ত সৃষ্ট বস্তু অজ্ঞাত ছিল। আমরা তাঁহার দ্বারা অবতীর্ণ বাণীসমূহ দর্শন করিয়াছি, যিনি পরম করুণাময় এবং আমরা ঈশ্বরের শ্লোকসমূহ গ্রহণ করিয়াছিলাম, যিনি বিপদে সহায়, স্বয়ংসত্তাবিশিষ্ট, যাহা তিনি* আমাদিগকে প্রদান করিয়াছিলেন এবং মনোযোগ সহকারে আমরা তাহা শ্রবণ করিয়াছিলাম যাহা তিনি ফলকলিপিটিতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিসহকারে নিশ্চিত করিয়াছিলেন। নিশ্চিতরূপেই আমরা ইহা দর্শন করিয়াছিলাম। এবং আমাদিগের আদেশের মাধ্যমে আমরা তাঁহার ইচ্ছায় সম্মতি প্রদান করিয়াছিলাম, সত্যই আমরা আদেশ প্রদানে শক্তিমান।
176হে বায়ানের জনমন্ডলী! আমরা, সত্য সত্যই, ঈশ্বরের বিদ্যালয়টিতে পদার্পণ করিয়াছিলাম যখন তোমরা ঘুমন্ত ছিলে, এবং আমরা মনোযোগ সহকারে ফলকলিপিটি পাঠ করিয়াছিলাম যখন তোমরা গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলে। একক সত্য ঈশ্বরের শপথ! প্রকাশিত হইবার পূর্বেই আমরা ফলকলিপিটি পাঠ করিয়াছিলাম, যখন তোমরা অজ্ঞ ছিলে, আমাদের নিকট গ্রন্থটির পরিপূর্ণ জ্ঞান ছিল, যখন তোমরা জন্মগ্রহণ কর নাই। এই কথাগুলি তোমাদের পরিমাপ অনুযায়ী, ঈশ্বরের নহে। তাঁহার জ্ঞানের মধ্যে যাহা সযতেœ রক্ষিত রহিয়াছে উহা-ই এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করিবে, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও যাহারা উপলব্ধি করিয়া থাকে; এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের রসনা এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করিবে, যদি তোমরা ঐ সমস্ত লোকদিগের মধ্যে হও, যাহারা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে। আমি ঈশ্বরের শপথ করিয়া বলিতেছি, আমরা যদি পর্দা উন্মোচন করি, তোমরা হতবুদ্ধি হইয়া পড়িবে।
177সতর্ক হও, তোমরা যেন সর্বশক্তিমান ও তাঁহার ধর্ম সম্বন্ধে অনর্থক বিরোধিতা না কর, কারণ লক্ষ্য কর! তিনি তোমাদিগের মধ্যে এত মহান এক প্রত্যাদেশ সহকারে আবির্ভূত হইয়াছেন যাহা সবকিছুকে বেষ্টন করিয়াছে, তাহা অতীতের হউক অথবা ভবিষ্যতের হউক। যদি স্বর্গরাজ্যের অধিবাসীদের ভাষায় আমাদিগের বক্তব্য বিষয় বলিতে হয়, আমরা বলিবঃ “প্রকৃতপক্ষে, স্বর্গ ও মর্ত্য সৃষ্টি করিবার পূর্বেই ঈশ্বর ঐ বিদ্যালয় সৃষ্টি করিয়াছিলেন, এবং ‘হ’ এবং ‘ও’ অক্ষরদ্বয় সংযুক্ত এবং একত্রে গ্রথিত হইবার পূর্বে আমরা ইহাতে প্রবেশ করিয়াছিলাম।’’ এইরূপ-ই আমাদের স্বর্গরাজ্যে আমাদের ভৃত্যদের ভাষা; বিবেচনা কর আমাদিগের মহিমান্বিত রাজ্যের অধিবাসীদের রসনা কি উচ্চারণ করিবে, যেহেতু আমরা তাহাদিগকে আমাদের জ্ঞান শিক্ষা দিয়াছি এবং ঈশ্বরের বিজ্ঞতায় যাহা কিছু নিহিত রহিয়াছে উহা তাহাদের নিকট প্রকাশ করিয়াছি। অতঃপর কল্পনা কর, ক্ষমতা ও মহত্ত্বের রসনা তাঁহার পরম মহিমান্বিত বাসস্থানে কি উচ্চারণ করিবে।
178ইহা এমন একটি ধর্ম নহে, যাহা তোমাদের অলস কল্পনাসমূহের খেলার বস্তু হইতে পারে, না ইহা নির্বোধ ও দুর্বলচিত্তদিগের জন্য একটি ক্ষেত্র। ঈশ্বরের শপথ! ইহা অন্তর্দৃষ্টি ও নিরাসক্তি, দূরদৃষ্টি ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের কর্মক্ষেত্র, যেইখানে পরম করুণাময়ের নির্ভীক অশ্বারোহী সেনাদল ব্যতীত কেহই তাহাদের যুদ্ধাশ্বকে দ্রুতবেগে অগ্রসর করিতে পারে না, যাহারা সৃষ্টির জগৎ হইতে নিজদিগকে বিচ্ছিন্ন করিয়াছে। ইহারা, সত্যই, ঐ সকল ব্যক্তি যাহারা পৃথিবীতে ঈশ্বরকে বিজয়ী করে এবং মানবজাতির মধ্যে তাহারা তাঁহার সার্বভৌম ক্ষমতার প্রাভাতিক স্থল।
179সতর্ক হও, যেন বায়ান-এ যাহা কিছু প্রকাশিত হইয়াছে তাহা তোমাদিগকে পরম করুণাময় তোমাদিগের প্রভু হইতে দূরে না রাখে। ঈশ্বর আমার সাক্ষী যে আমার প্রশংসাকীর্তন ব্যতীত আর কোন উদ্দেশ্যে বায়ান অবতীর্ণ হয় নাই, যদি তোমরা জানিতে। পবিত্র হৃদয় ইহাতে একমাত্র আমার প্রেমের সুঘ্রাণ, একমাত্র আমার নাম খুঁজিয়া পাইবে যাহা দৃষ্টিশীল ও দৃশ্যমান সকল কিছুকে ছায়ায় বেষ্টন করিয়া রাখিয়াছে। বলঃ হে জনমন্ডলী, আমার মহিমান্বিত লেখনী হইতে যাহা কিছু নির্গত হইয়াছে, তাহার প্রতি মুখ ফিরাও। যদি তোমরা উহা হইতে ঈশ্বরের সুরভি লাভ করিয়া থাক, তাহা হইলে তোমাদিগকে তাঁহার বিরোধী করিও না অথবা তাঁহার সদয় অনুগ্রহ এবং তাঁহার বহুবিধ দানের অংশ হইতে নিজদিগকে বঞ্চিত করিও না। এইরূপ-ই তোমাদিগের পরম প্রভু তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করিতেছেন; তিনি, সত্য সত্যই, উপদেষ্টা, সর্বদর্শী।
180বায়ান-এর যাহা কিছু তোমরা বুঝিতে পার না, তাহা ঈশ্বরের নিকট জিজ্ঞাসা কর, যিনি তোমাদিগের পরম প্রভু এবং তোমাদিগের পূর্বপুরুষদিগের পরম প্রভু। তিনি ইচ্ছা করিলে, উহাতে যাহা কিছু প্রকাশিত হইয়াছে তাহা ব্যাখ্যা করিবেন এবং তোমাদিগের নিকট তাহার ঐশী জ্ঞান ও বিজ্ঞতার মণি-মুক্তাসমূহ প্রকাশ করিবেন যাহা তাহার শব্দ মহাসাগরের মধ্যে নিহিত রহিয়াছে।। সত্য সত্যই, তিনি সমস্ত নামাবলীর ঊর্ধ্বে সর্বোৎকৃষ্ট, বিপদে সহায়, স্বয়ংসত্তাবিশিষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই।
181এই সর্বমহান, এই নতুন বিশ্ব-নিয়মতন্ত্রের স্পন্দনশীল প্রভাবের দ্বারা জগতের ভারসাম্য বিপর্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে। এই অনুপম, এই বিস্ময়কর পদ্ধতির শক্তির মাধ্যমে মানবজাতির প্রচলিত জীবন আমূল পরিবর্তিত হইয়াছে Ñ যেইরূপ নশ্বর চক্ষুসমূহ কখনও প্রত্যক্ষ করে নাই।
182আমার বাণীর মহাসাগরে তোমাদিগকে নিমজ্জিত কর, যাহাতে তোমরা ইহার রহস্যাবলী উদ্ঘাটন করিতে পার এবং বিজ্ঞতার সকল মণি-মুক্তা আবিষ্কার করিতে পার যাহা ইহার গভীর তলদেশে নিহিত রহিয়াছে। মনোযোগী হও যাহাতে তোমরা এই ধর্মের সত্যকে স্বীকার করিতে তোমাদের সংকল্পের দৃঢ়তায় ইতস্ততঃ না কর Ñ ইহা একটি ধর্ম, যাহার মাধ্যমে ঈশ্বরের ক্ষমতার শক্তিসমূহ প্রকাশিত হইয়াছে এবং তাঁহার সার্বভৌমত্ব স্থাপিত হইয়াছে। উজ্জ্বল ও প্রফুল্ল আননে তোমরা তাঁহার প্রতি দ্রুত অগ্রসর হও। ইহা ঈশ্বরের অপরিবর্তনীয় ধর্ম, অতীতে শাশ্বত, ভবিষ্যতে শাশ্বত। যে পাইতে চাহে সে ইহা লাভ করুক; এবং যে ইহা অনুসন্ধান করিতে অস্বীকার করে তাহার প্রতি Ñ সত্য সত্যই, ঈশ্বর স্বয়ংসম্পূর্ণ, তাঁহার সৃষ্ট জীবকুলের যে কোন প্রয়োজনের ঊর্র্ধ্বে।
183বলঃ ইহাই সেই নির্ভুল নিক্তি, যাহা ঈশ্বরের হস্ত ধারণ করিয়া রাখিয়াছে, যাহাতে যাহারা স্বর্গসমূহে রহিয়াছে এবং যাহারা মর্ত্যে রহিয়াছে তাহাদের ওজন করা হয় এবং তাহাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও যাহারা বিশ্বাস করে এবং এই সত্য স্বীকার করে। বলঃ ইহা-ই সেই সর্বমহান সাক্ষ্য, যাহা দ্বারা সকল যুগে প্রতিটি প্রমাণের বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে; যদি তোমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হইতে। বলঃ ইহার দ্বারা দরিদ্ররা সমৃদ্ধ হইয়াছে এবং বিজ্ঞজনেরা আলোকিত হইয়াছে এবং অন্বেষণকারীগণ ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আরোহণ করিতে সমর্থ হইয়াছে। সতর্ক হও, যেন তোমরা ইহাকে তোমাদের মধ্যে মতভেদের কারণ না কর। তোমরা শক্তিমান, ¯েœহময়, তোমাদের পরম প্রভুর ধর্মে অবিচল পর্বতের মত দৃঢ়ভাবে অটল হও।
184বলঃ হে কু-প্রবৃত্তির উৎস! তোমার একগুঁয়ে অন্ধত্ব পরিত্যাগ কর এবং লোকদের মধ্যে সত্য তুলে ধর। আমি ঈশ্বরের নামের শপথপূর্বক বলিতেছি যে - তোমাকে তোমার স্বার্থপর রিপুর অনুসরণপূর্বক তাঁহাকেই অস্বীকার করিতে দেখিয়া আমি তোমার জন্য রোদন করিতেছি, যিনি তোমাকে গঠন করিয়াছেন ও অস্তিত্বে আনয়ন করিয়াছেন। স্মরণ কর তোমার প্রভুর ¯েœহশীল অনুক¤পার কথা এবং স্মরণ কর কিভাবে ধর্মের সেবার জন্য আমরা তোমাকে দিবা-রাত্র প্রতিপালন করিয়াছিলাম। ঈশ্বরকে ভয় কর এবং তুমি যথার্থভাবে অনুতপ্তদের মধ্যে গণ্য হও। স্বীকার্য যে, লোকেরা তোমার পদমর্যাদা সম্বন্ধে বিভ্রান্ত ছিল, কিন্তু ইহা কি কল্পনা করা যায় যে তুমিও অনুরূপভাবে বিভ্রান্ত হইয়াছ? তোমার প্রভুর সম্মুখে ভয়ে প্রক¤িপত হও, এবং সেই দিবসগুলিকে স্মরণ কর, যখন তুমি আমাদের সিংহাসনের সম্মুখে দন্ডায়মান হইয়াছিলে এবং শ্লোকগুলি লিপিবদ্ধ করিয়াছিলে, যাহা আমরা তোমার প্রতি উল্লেখ করিয়াছিলাম Ñ যেই শ্লোকগুলি ক্ষমতা ও পরাক্রমের পরম প্রভু সর্বশক্তিমান রক্ষক ঈশ্বর কর্তৃক অবতীর্ণ হইয়াছিল। সতর্ক হও, যেন তোমার অহংকারের তেজ ঈশ্বরের পবিত্র প্রাঙ্গণে পৌঁছাইতে তোমাকে বাধা প্রদান না করে। তাঁহার দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমার কার্যাবলীর জন্য ভীত হইও না। সত্য সত্যই, তিনি তাঁহার পক্ষে বদান্যতাস্বরূপ যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে ক্ষমা করেন, তিনি ব্যতীত চিরক্ষমাশীল পরম করুণাময় আর কোন ঈশ্বর নাই। আমরা একমাত্র ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তোমাকে উপদেশ প্রদান করিতেছি। যদি তুমি এই উপদেশ গ্রহণ কর, তাহা হইলে তুমি তোমার নিজের উপকারের স্বার্থে কাজ করিবে, আর যদি তুমি এই উপদেশ প্রত্যাখ্যান কর, সত্য সত্যই, তোমার প্রভু, তুমি এবং যাহারা প্রকাশ্য বিভ্রমে তোমাকে অনুসরণ করিয়াছে, তাহাদের প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে। দেখ! ঈশ্বর তাহাকে করায়ত্ত করিয়াছেন, যে তোমাকে বিপথগামী করিয়াছে। বিনয়াবনতা, আনুগত্য ও দীনতা সহকারে ঈশ্বরের পানে মুখ ফিরাও; সত্য সত্যই, তিনি তোমার পাপ মোচন করিবেন, কারণ তোমার প্রভু নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল, শক্তিমান, পরম করুণাময়।
185ইহাই ঈশ্বরের উপদেশ; যদি তুমি এই কথায় মনোযোগী হইতে! ইহাই ঈশ্বরের বদান্যতা; যদি তুমি এই বদান্যতা গ্রহণ করিতে। ইহাই ঈশ্বরের উচ্চারিত বাক্য; যদি তুমি কেবল ইহা হৃদয়ঙ্গম করিতে। ইহাই ঈশ্বরের স¤পদ; যদি তুমি কেবল ইহা উপলব্ধি করিতে পারিতে।
186ইহা একটি গ্রন্থ, যাহা জগতের প্রতি অবিনশ্বরের প্রদীপ হইয়াছে এবং জগৎবাসীর মধ্যে তাঁহার সোজা, সঠিক পথ হইয়াছে। বলঃ ইহাই স্বর্গীয় জ্ঞানের প্রভাত, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা হৃদয়ঙ্গম করে এবং ঈশ্বরের আদেশসমূহের প্রাভাতিক স্থল, যদি তোমরা তাহাদের মধ্যে হও, যাহারা উপলব্ধি করে।
187কোন পশুকে তাহার পক্ষে বহন ক্ষমতার অধিক ভারগ্রস্ত করিও না। সত্যই, আমরা গ্রন্থে অতি অবশ্য পালনীয় নিষেধাজ্ঞা দ্বারা এইরূপ আচরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়াছি। সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে তোমরা ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের প্রতিমূর্তি হও।
188যদি কেহ অনিচ্ছাকৃতভাবে কাহারো জীবন হনন করে, তাহা হইলে তাহার উপর আরোপিত দায়িত্ব হইতেছে মৃতের পরিবারকে একশত মিশ্কাল স্বর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। এই ফলকলিপিতে যাহা আদেশ দেওয়া হইয়াছে, তাহা তোমরা পালন করিবে এবং ঐ সমস্ত লোকদের মধ্যে হইও না যাহারা ইহার সীমা লঙ্ঘন করে।
189হে বিশ্বের সর্বত্র মন্ত্রণা-সভার সদস্যগণ! পৃথিবীতে ব্যবহারের জন্য তোমরা একটিমাত্র ভাষা বাছিয়া লও এবং অনুরূপভাবে তোমরা একটি অভিন্ন বর্ণমালা গ্রহণ কর। সত্য সত্যই, যাহা কিছু তোমাদের উপকার করিবে ও তোমাদের স্বাবলম্বী হইতে সক্ষম করিবে, ঈশ্বর তোমাদের জন্য তাহা সহজ সরল করিতে ইচ্ছা করেন। সত্য সত্যই, তিনি পরম করুণাময়, সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞাত। ইহা-ই ঐক্যের কারণ হইবে, যদি তোমরা তাহা উপলব্ধি করিতে এবং সমন্বয় ও সভ্যতার উন্নতি সাধনের ক্ষেত্রে বৃহত্তম মাধ্যম হইবে, যদি তোমরা তাহা হৃদয়ঙ্গম করিতে। আমরা মানবজাতির বয়ঃপ্রাপ্তির দুইটি সংকেতচিহ্ন ধার্য করিয়াছি, প্রথমটি হইতেছে সর্বাপেক্ষা অটল ভিত্তি, যাহা সম্বন্ধে আমরা আমাদের ফলকলিপির অপর একটিতে লিপিবদ্ধ করিয়াছি, পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি এই বিস্ময়কর গ্রন্থে প্রকাশ করা হইয়াছে।
190আফিম সেবন করিতে তোমাদিগকে নিষেধ করা হইয়াছে। অতি গুরুত্বের সহিত আমরা এই গ্রন্থে অতি অবশ্য পালনীয় নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এই অভ্যাস ত্যাগ করিতে আদেশ প্রদান করিয়াছি। কেহ ইহা সেবন করিলে, সে নিশ্চিতরূপে-ই আমার নয়। ঈশ্বরকে ভয় কর, হে তোমরা উপলব্ধিস¤পন্ন ব্যক্তিগণ।
Bahá'u'lláh
1
প্রশ্ন: সর্বমহান উৎসব সম্বন্ধে।
উত্তর: বায়ান গ্রন্থানুযায়ী সর্বমহান উৎসব বৎসরের দ্বিতীয় মাসের ত্রয়োদশ দিবসের অপরাহ্ণের শেষের দিকে শুরু হয়। এই উৎসবের প্রথম, নবম ও দ্বাদশ দিবসে, কাজ নিষিদ্ধ।
2প্রশ্ন: যমজ জন্মদিনের উৎসব সম্বন্ধে।
উত্তর: আবহা সৌন্দর্যের জন্ম মুহররম+ মাসের দ্বিতীয় দিন ভোরবেলায় হইয়াছিল, যাহার প্রথম দিনটি তাঁহার অগ্রদূতের জন্ম দ্বারা চিহ্নিত। এই দুইটি দিন ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এক দিন রূপে গণ্য হয়।
3প্রশ্ন: বিবাহের শ্লোকসমূহ সম্বন্ধে।
উত্তর: পুরুষদের জন্যঃ “সত্য সত্যই, আমরা সকলেই অবশ্যই ঈশ্বরের ইচ্ছা মানিয়া চলিব”। নারীদের জন্যঃ “সত্য সত্যই, আমরা সকলেই অবশ্যই ঈশ্বরের ইচ্ছা মানিয়া চলিব”।
4প্রশ্ন: কোন পুরুষ তাহার প্রত্যাবর্তনের একটি সময়, অন্য কথায়, তাহার অনুপস্থিতির প্রত্যাশিত সময়কাল নির্দিষ্ট না করিয়া সফরে যাইলে এবং অতঃপর তাহার সম্বন্ধে কোন সংবাদ পাওয়া না যাইলে, এবং তাহার আর কোন খোঁজ পাওয়া না যাইলে, তাহার স্ত্রী কোন পন্থা অবলম্বন করিবে?
উত্তর: এ বিষয়ে কিতাব-ই-আক্বদাস-এর শর্ত সম্বন্ধে জ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও তাহার প্রত্যাবর্তনের একটি সময় স্থির করিতে সে উপেক্ষা করিয়া থাকিলে, তাহার স্ত্রীকে পূর্ণ এক বৎসর অপেক্ষা করিতে হইবে, তারপর সে - হয় সে প্রশংসনীয় পথ অবলম্বন করিতে অথবা নিজের জন্য অন্য স্বামী পছন্দ করিতে মুক্ত হইবে। তথাপি, যদি পুরুষটি এই শর্ত সম্বন্ধে জ্ঞাত না থাকে, তাহা হইলে তাহার স্ত্রীর উচিত হইবে ধৈর্যের সহিত এইরূপ সময় পর্যন্ত প্রতীক্ষা করা যতক্ষণ না ঈশ্বর তাহার স্বামীর নিয়তিকে তাহার কাছে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করিবেন। এই প্রসঙ্গে প্রশংসনীয় পথ বলিতে ধৈর্যের অনুশীলন বুঝায়।
5প্রশ্ন: পবিত্র শ্লোকটি সম্বন্ধে: “যখন আমরা এখনও জন্ম গ্রহণ করে নাই এমন শিশুদের চিৎকার শ্রবণ করিলাম, তখন আমরা তাহাদের অংশ দ্বিগুণ করিলাম এবং অন্যদের অংশ হ্রাস করিলাম।”
উত্তর: ঈশ্বরের গ্রন্থানুসারে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ২,৫২০ অংশে বিভক্ত করা হইয়াছে, যে সংখ্যা নয় পর্যন্ত সমস্ত পূর্ণসংখ্যার সর্বনিম্ন সাধারণ গুণিতক, এবং অতঃপর এই অংশগুলিকে সাত ভাগে বিভক্ত করা হইয়াছে, গ্রন্থের উল্লেখ অনুযায়ী উহাদের প্রত্যেকটিকে নির্দিষ্ট শ্রেণীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হইয়াছে। উদাহরণস্বরূপ, শিশুদেরকে ৬০ অংশের নয়টি অংশসমষ্টিতে বণ্টন করা হইয়াছে যাহাতে সর্বমোট ৫৪০ ভাগ অন্তর্ভুক্ত। “আমরা তাহাদের অংশ দ্বিগুণ করিলাম” বিবৃতিটির অর্থ হইতেছে এইরূপ যে, শিশুরা ৬০ অংশের আরও নয়টি অংশ একক লাভ করিবে- ইহাতে তাহারা সর্বসাকুল্যে ১৮টি অংশসমষ্টির অধিকারী হইবে। যে অতিরিক্ত অংশ তাহারা লাভ করিয়াছে তাহা অন্য শ্রেণীর উত্তরাধিকারীদের অংশগুলি হইতে বাদ যাইবে, এই জন্য, যদিও ইহা প্রকাশিত যে পতি বা পত্নী -“চারি শত আশি অংশবিশিষ্ট আট একক”-এর অধিকারী - যাহা ৬০ অংশের আট অংশসমষ্টির সমান, এখন, এই পুনর্বিন্যাসের ফলে, সর্বমোট ৯০ অংশের দেড় অংশসমষ্টি পতি বা পত্নীর অংশ হইতে বিয়োগ হইয়াছে এবং শিশুদের জন্য পুনর্বণ্টন করা হইয়াছে, এবং বিষয়টি অন্যদের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। ফল এই দাঁড়াইতেছে যে, বিয়োগকৃত সর্বমোট পরিমাণ শিশুদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দেওয়া অতিরিক্ত নয়টি অংশসমষ্টির সমান।
6প্রশ্ন: ইহা কি অপরিহার্য যে ভাইকে তাহার উত্তরলব্ধি অংশের প্রাপ্তিযোগ্যতা অর্জন করিতে মৃত ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়ের বংশোদ্ভূত হইতে হইবে অথবা শুধু পিতা ও মাতার একজনের বংশোদ্ভূত হইলেই কি যথেষ্ট হইবে?
উত্তর: যদি মৃত ব্যক্তির ভাই তাহার পিতার বংশোদ্ভূত হয় তাহা হইলে পবিত্র গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট পরিমাণে উত্তরলব্ধির অংশ লাভ করিবে; কিন্তু সে যদি মাতার বংশোদ্ভূত হয়, সে উত্তরলব্ধির দুই-তৃতীয়াংশ লাভ করিবে, অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ে ফেরত যাইবে। এই নিয়ম ভগ্নির প্রতিও প্রযোজ্য।
7প্রশ্ন: উত্তরাধিকার বিষয়ক অনুবিধিসমূহে ইহা নির্দিষ্ট করা হইয়াছে যে, মৃত ব্যক্তি যদি কোন সন্তান রাখিয়া না যায়, তাহাদের অংশ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তনের কথা রহিয়াছে। যদি উক্ত অধিকারীদের অন্যান্য শ্রেণী, যথা পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগ্নি ও শিক্ষক অনুরূপভাবে বিদ্যমান না থাকে, তাহা হইলেও কি তাহাদের উত্তরলব্ধির অংশ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করে, অথবা তাহাদের অংশ কি অন্য কোন প্রকারে বণ্টিত হইয়া থাকে?
উত্তর: পবিত্র শ্লোকই ইহার জন্য যথেষ্ট। তিনি বলিয়াছেন. তাঁহার কথা মহিমান্বিত হউক: “মৃত ব্যক্তি সন্তান না রাখিয়া গেলে, তাহাদের অংশ বিচারালয়ের নিকট ফেরত যাইবে”, ইত্যাদি এবং “মৃত ব্যক্তি যদি সন্তান রাখিয়া যায় কিন্তু অন্যান্য শ্রেণীর উত্তরাধিকারীগণের কেহ না থাকে যাহাদের কথা গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হইয়াছে, তাহারা উত্তরাধিকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ লাভ করিবে এবং অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ে ফেরত যাইবে” অন্য কথায়, যে ক্ষেত্রে কোন সন্তান-সন্ততি বিদ্যমান নাই, সেই ক্ষেত্রে তাহাদের জন্য ধার্যকৃত উত্তরলব্ধির অংশ বিচারালয়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করিবে; এবং যেখানে সন্তান বিদ্যমান কিন্তু উত্তরাধিকারীর অন্য শ্রেণী অবিদ্যমান, সেই ক্ষেত্রে এই উত্তরলব্ধির দুই-তৃতীয়াংশ সন্তানদের হস্তগত হইবে, অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করিবে। এই বিধানের সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট উভয় প্রয়োগ রহিয়াছে, যাহা ব্যাখ্যা করে যে, যখনই উত্তরাধিকারীদের এই শেষোক্ত শ্রেণীর কোন বর্গ অবিদ্যমান থাকে, তখন তাহাদের উত্তরলব্ধির দুই-তৃতীয়াংশ সন্তানদের হস্তগত হয় এবং অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করে।
8প্রশ্ন: মূল টাকার পরিমাণ সম্বন্ধে যাহার উপর হুকুকুল্লাহ্ প্রদানযোগ্য।
উত্তর: যে মূল টাকার পরিমাণের উপর হুকুকুল্লাহ্ দেওয়া হয় তাহা হইতেছে উনিশ মিশ্কাল স্বর্ণ। অন্য কথায়, যখন সমপরিমাণ মূল্যের টাকা অর্জিত হয়, তখন হুকুকুল্লাহ্ প্রদানযোগ্য হয়। অনুরূপভাবে, হুকুক্ তখন প্রদানযোগ্য যখন অন্যান্য প্রকারের সম্পত্তির মূল্য, উহাদের সংখ্যা নহে, নির্ধারিত পরিমাণে পৌঁছায়। হুকুকুল্লাহ্ একবারের বেশি প্রদানযোগ্য নহে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, এক ব্যক্তি, যে এক হাজার মিশ্কাল স্বর্ণ অর্জন করিয়াছে, এবং হুকুক্ প্রদান করিয়াছে, সে পুনরায় এই পরিমাণের উপর অর্থ প্রদানে বাধ্য নহে, কিন্তু ব্যবসায়, বাণিজ্য এবং অনুরূপ কোন কিছুর মাধ্যমে অর্জিত অতিরিক্ত অর্থের উপর হুকুক্ দেওয়া হয়।
যখন এই বৃদ্ধি, অর্থাৎ অর্জিত মুনাফা নির্ধারিত পরিমাণে পৌঁছাইবে, তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্য ঈশ্বর যাহা আদেশ করিয়াছেন তাহা পালন করতে হইবে।
শুধুমাত্র যখন মূলধনের মালিকানা বদল হয় তখন আর একবার হুকুকুল্লাহ্ দেয় বাধ্যতামূলক হয়, ঠিক প্রথমবারের মত। আদিবিন্দু বিধান দিয়াছিলেন যে, যাহা কিছু কোন লোকের অধিকারে থাকিবে তাহার মূল্যের উপর অবশ্যই হুকুকুল্লাহ্ পরিশোধ করিতে হইবে; এতদসত্ত্বেও, এই মহাশক্তিশালী ধর্মবিধানে, আমরা গৃহস্থালী আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জাকে - অর্থাৎ এইরূপ আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জা যাহা প্রয়োজন এবং স্বয়ং বসতবড়িটিকে অব্যাহতি প্রদান করিয়াছি।
9প্রশ্ন: কোন্টি অগ্রগণ্যতা লাভ করিবে: হুকুকুল্লাহ্ মৃত ব্যক্তির ঋণ, অথবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও সমাধিস্থকরণের ব্যয়?
উত্তর: অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও সমাধিস্থকরণ অগ্রগণ্যতা লাভ করিবে, তারপর ঋণ পরিশোধ, তারপর হুকুকুল্লাহ্। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তাহার ঋণ শোধ করিবার জন্য অপর্যাপ্ত হইলে, তাহার সম্পত্তির অবশিষ্টাংশ এই সব ঋণের মধ্যে আনুপাতিকভাবে বণ্টন করিয়া দিতে হইবে।
10প্রশ্ন: কিতাব-ই-আক্বদাস-এ মস্তক মু-ন নিষিদ্ধ হইয়াছে কিন্তু সুরাই-ই-হজ্জ-এ আদেশ দেওয়া হইয়াছে।
উত্তর: সবাইকে কিতাব-ই-আক্বদাস-এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের আদেশ দেওয়া হইয়াছে; যাহা কিছু ইহাতে প্রকাশিত হইয়াছে তাহা তাঁহার ভৃত্যদের মধ্যে ঈশ্বরের আইন হইয়াছে। পবিত্র গৃহে তীর্থযাত্রীদের মস্তক মু-ন করিবার আদেশ তুলিয়া লওয়া হইয়াছে।
11প্রশ্ন: যদি একটি দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ-পূর্ব ধৈর্য ধারণের এক বৎসর সময়কালে যৌন সংসর্গ ঘটে, এবং তারপর আবার তাহারা বিচ্ছিন্ন হয়, তাহা হইলে কি তাহাদের ধৈর্য ধারণের বৎসর পুনরায় শুরু করিতে হইবে? অথবা যৌন সংসর্গের পূর্ববর্তী দিনগুলি বৎসর গণনায় অন্তর্ভুক্ত হইবে? এবং ইহা কি অপরিহার্য যে বিবাহবিচ্ছেদ হইবার পর আরও একটি অপেক্ষার কাল পালন করিতে হইবে?
উত্তর: যদি তাহাদের ধৈর্য ধারণের বৎসরকালীন উক্ত দম্পতির মধ্যে ¯েœহ-ভালবাসা পুনরায় আরম্ভ হয় তাহা হইলে বিবাহবন্ধন বৈধ ও বহাল থাকিবে, এবং ঈশ্বরের যাহা আদেশ হইয়াছে তাহা অবশ্যই পালন করিতে হইবে; কিন্তু ধৈর্য ধারণের এক বৎসর একবার পূর্ণ হইবার পর এবং ঈশ্বর যাহা বিধান দিয়াছেন তাহা সংঘটিত হইলে, আরও একটি অপেক্ষার কালের প্রয়োজন নাই। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তাহাদের ধৈর্য ধারণের সময়কালীন যৌন সংসর্গ নিষিদ্ধ; এবং যে-কেহ এই কাজ করে তাহাকে অবশ্যই ঈশ্বরের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতে হইবে, এবং, শাস্তিস্বরূপ, ন্যায় বিচারালয়কে ১৯ মিশ্কাল স্বর্ণের একটি জরিমানা প্রদান করিতে হইবে।
12প্রশ্ন: বিবাহের শ্লোকসমূহ পড়িবার ও পণ প্রদানের পর একটি দম্পতির মধ্যে বিরাগ-বিতৃষ্ণার উদ্ভব হইলে, ধৈর্যের বৎসর পালন ছাড়া-ই কি বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিতে পারে?
উত্তর: বিবাহের শ্লোকসমূহ পড়িবার ও পণ প্রদানের পর বৈধভাবেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিতে হইবে- তবে তাহা বিবাহ কার্য আইনতঃ সিদ্ধ হইবার পূর্বে। এইরূপ অবস্থায়, ধৈর্য ধারণের এক বৎসর পালন করিবার প্রয়োজন নাই, তবে প্রদত্ত পণ ফেরত নেওয়া অনুমোদনীয় নহে।
13প্রশ্ন: বিবাহে উভয় পক্ষের পিতামাতার সম্মতি লাভ কি পূর্বশর্ত, অথবা একদিকের সম্মতি যথেষ্ট? এই আইন কি শুধুমাত্র কুমারী অথবা অন্যদের জন্যও প্রযোজ্য?
উত্তর: বিবাহে উভয় পক্ষের পিতা-মাতার সম্মতির উপর বিবাহ শর্তযুক্ত এবং এ বিষয়ে এই আইন কোন পার্থক্যের অবকাশ দেয় না, তাহা কনে একজন কুমারী হউক অথবা না-ই হউক।
14প্রশ্ন: বাধ্যতামূলক প্রার্থনাসমূহ আবৃত্তিকালীন বিশ্বাসীদেরকে কিব্লাহ্র দিকে মুখ ফিরাইতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে; অন্যান্য প্রার্থনাকালীন তাহারা কোন্ দিকে ফিরিবে?
উত্তর: বাধ্যতামূলক প্রার্থনা আবৃত্তিকালীন কিব্লাহ্মুখী হওয়া একটি অপরিহার্য শর্ত, কিন্তু অন্যান্য প্রার্থনাকালীন কোন লোক কোরআনে যাহা করুণাময় প্রভু প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা অনুসরণ করিতে পারে: “যে দিকেই তোমরা মুখ ফিরাইবে, সেই দিকেই রহিয়াছে ঈশ্বরের মুখমন্ডল”।
15প্রশ্ন: “ঊষালগ্নে” মাশ্রিকুল আয্কারে ঈশ্বরের স্মরণ সম্পর্কে।
উত্তর: যদিও ঈশ্বরের গ্রন্থে “ঊষালগ্নে” শব্দগুলি ব্যবহৃত হইয়াছে, দিনের সবচেয়ে শুরুতে, প্রভাত ও সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়ে, অথবা সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা পর পর্যন্ত হইলেও ঈশ্বরের নিকট গ্রহণযোগ্য।
16প্রশ্ন: মৃতদেহ এক ঘণ্টার ভ্রমণের অধিকতর দূরত্বে বহন করা যাইবে না বিষয়ক অনুবিধিটি কি স্থল ও সমুদ্র উভয় পরিবহনে প্রযোজ্য?
উত্তর: এই আদেশটি সমুদ্র পথের ও স্থল পথের দূরত্বের প্রতি প্রযোজ্য। এই এক ঘণ্টা বাষ্পীয় জাহাজ দ্বারা অথবা ট্রেন দ্বারা হউক; উদ্দেশ্য হইতেছে এক ঘণ্টার সময়, পরিবহনের মাধ্যম যাহাই হউক না-কেন। যদিও, যত শীঘ্রই সমাধিস্থকরণ সম্পন্ন হইবে, তত-ই অধিক উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হইবে।
17প্রশ্ন: হারাইয়া যাওয়া সম্পত্তি খুঁজিয়া পাওয়া সম্বন্ধে কি কার্যপ্রণালী অনুসরণ করিতে হইবে?
উত্তর: যদি এইরূপ সম্পত্তি শহরে খুঁজিয়া পাওয়া যায়, ইহা খুঁজিয়া পাওয়ার বিষয়টি নগরঘোষক দ্বারা একবার ঘোষণা করিতে হইবে। তখন যদি সম্পত্তিটির মালিককে পাওয়া যায় তাহা হইলে উহা তাহার কাছে পৌঁছাইয়া দিতে হইবে। অন্যথায় সম্পত্তিটির আবিষ্কারককে এক বৎসর অপেক্ষা করিতে হইবে, এবং যদি এই সময়ের মধ্যে ইহার মালিক আত্মপ্রকাশ করে, তাহা হইলে আবিষ্কারক তাহার নিকট হইতে ঘোষকের পারিশ্রমিক গ্রহণ করিবে এবং তাহার সম্পত্তি তাহাকে হস্তান্তর করিবে; মালিকের কোন খোঁজ ছাড়া-ই যদি এক বৎসর অতীত হয়, তাহা হইলে আবিষ্কারক স্বয়ং ঐ সম্পত্তি দখল করিতে পারিবে। যদি সম্পত্তির মূল্য ঘোষকের পারিশ্রমিক অপেক্ষা কম বা সমান হয়, আবিষ্কারক ইহার আবিষ্কারের সময় হইতে মাত্র একদিন অপেক্ষা করিবে, এবং এই দিনের অবসানে যদি ইহার মালিক আত্মপ্রকাশ না করে, তাহা হইলে সে নিজেই ইহা দখল করিতে পারে; এবং একটি জনশূন্য এলাকায় আবি®কৃত সম্পত্তির বেলায়, আবিষ্কারককে তিন দিনের জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে; এই তিন দিনের অতিক্রান্তিতে যদি মালিকের খোঁজ অজ্ঞাত থাকে, তাহা হইলে সে তাহার আবিষ্কারটি অধিকার করিতে মুক্ত।
18প্রশ্ন: অভিসিঞ্চন সম্বন্ধে: দৃষ্টান্তস্বরূপ, একজন লোক সবেমাত্র জল দ্বারা তাহার সমস্ত দেহ ধৌত করিয়াছে, তাহা হইলেও কি তাহাকে অভিসিঞ্চন করিতে হইবে?
উত্তর: যে কোন অবস্থাতেই হউক অভিসিঞ্চন সম্বন্ধীয় আদেশ অবশ্যপালনীয়।
19প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি দেশান্তরে যাইয়া বসবাসের পরিকল্পনা করিলে এবং তাহার স্ত্রী বিরোধিতা করিলে, এবং এই মতভেদ বিবাহ বিচ্ছেদের সীমায় পৌঁছাইলে এবং এক বৎসর অতীত না হওয়া পর্যন্ত তাহার যাত্রার প্রস্তুতি বি¯তৃত করিলে, এই সময় কি ধৈর্যের এক বৎসর রূপে গণ্য হইবে? অথবা এই দম্পতির বিচ্ছেদের দিন ঐ বৎসরের আরম্ভ বিন্দুরূপে গণ্য হইবে?
উত্তর: “যে দিন স্বামী-স্ত্রী যুগল বিচ্ছিন্ন হয়, ঐ দিন হইতে গণনার দিন” শুরু হয়, এবং যদি স্বামীর প্রস্থানের এক বৎসর পূর্বে তাহারা বিচ্ছিন্ন হইয়া থাকে, এবং যদি ঐ দম্পতির মধ্যে পুনরায় ¯েœহ-ভালবাসার সুঘ্রাণের সূত্রপাত না হইয়া থাকে, তাহা হইলে, বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হইতে পারে। অন্যথায় তাহার প্রস্থানের দিন হইতেই ঐ বৎসর গণনা করিতে হইবে, এবং কিতাব-ই-আক্বদাস-এ বর্ণিত শর্তাবলী মানিয়া চলিতে হইবে।
20প্রশ্ন: ধর্মীয় কর্তব্য পালনে পূর্ণ বয়স প্রাপ্তি সম্বন্ধে।
উত্তর: নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পূর্ণ বয়স হইতেছে পনেরো।
21প্রশ্ন: পবিত্র শ্লোকটি সম্বন্ধে: “ভ্রমণকালীন তোমরা যদি কোন নিরাপদ স্থানে যাত্রা বিরতি কর এবং বিশ্রাম গ্রহণ কর, তাহা হইলে তোমরা প্রতিটি অপঠিত বাধ্যতামূলক প্রার্থনার পরিবর্তে মাত্র একটি প্রণতিপাত করিবে..।”
উত্তর: এই প্রণতিপাত ভ্রমণকালীন বাদপড়া বাধ্যতামূলক প্রার্থনার ক্ষতিপূরণ, এবং কারণ হইতেছে নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি। প্রার্থনার সময়ে, ভ্রমণকারী যদি নিজেকে একটি নিরাপদ স্থানে বিশ্রামরত পায়, তাহাকে এই প্রার্থনা সম্পাদন করিতে হইবে। ক্ষতিপূরণকারী ভূমিগত প্রণতিপাত বিষয়ক এই শর্ত গৃহ ও সফর উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
22প্রশ্ন: ভ্রমণের সংজ্ঞা সম্বন্ধে:।*
উত্তর: একটি ভ্রমণের সংজ্ঞা হইতেছে ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী নয় ঘণ্টা। ভ্রমণকারী একটি স্থানে এই অনুমান করিয়া যাত্রা বিরতি করিলে যে, বায়ান-এর গণনামতে কমপক্ষে এক মাস সে সেইখানে অবস্থান করিবে, এমতাবস্থায় উপবাস পালন তাহার পক্ষে অপরিহার্য কর্তব্য; কিন্তু এক মাসের কম হইলে, সে উপবাস পালন হইতে অব্যাহতি প্রাপ্ত। যদি সে উপবাস চলাকালীন একটি স্থানে উপস্থিত হয়,যেখানে বায়ানের গণনা অনুযায়ী তাহার এক মাস থাকার কথা, তাহা হইলে তিন দিন পর্যন্ত তাহাকে উপবাস ব্রত পালন করিতে হইবে না, তারপর অবশিষ্ট দিনগুলিতে পালন করিতে হইবে, তবে যদি সে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে পূর্বে সে যেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিল, তাহা হইলে অবশ্যই আগমনের প্রথম দিনে তাহার উপবাস শুরু করিতে হইবে।
23প্রশ্ন: ব্যভিচার ও ব্যভিচারিণীর শাস্তি সম্বন্ধে ।
উত্তর: প্রথম অপরাধের জন্য নয় মিশ্কাল, দ্বিতীয়বারের জন্য আঠার মিশ্কাল, তৃতীয়বারের জন্য ছত্রিশ মিশ্কাল, এবং এইভাবে যথাক্রমে পূর্ববর্তীটির দ্বিগুণ জরিমানা ধার্য হইবে। এক মিশ্কালের ওজন বায়ান-এর নির্দিষ্টকরণ অনুসারে ঊনিশ নাখুদ্-এর সমপরিমাণ।
24প্রশ্ন: শিকার করা সম্বন্ধে।
উত্তর: তিনি মহিমান্বিত হউন, তিনি বলেন, “যদি তোমরা শিকারি পশু অথবা পক্ষী দ্বারা শিকার কর” এবং এইরূপ অন্যান্য উপায়ে যথা তীর ও ধনুক, বন্দুক এবং শিকারে ব্যবহৃত অনুরূপ সরঞ্জামের অন্তর্ভুক্তি। কিন্তু যদি ফাঁদ ও জাল ব্যবহৃত হয়, এবং যদি শিকার হস্তগত হইবার আগেই মারা যায়, তাহা হইলে ইহা ভক্ষণের জন্য অবৈধ।
25প্রশ্ন: তীর্থযাত্রা সম্বন্ধে:
উত্তর: দুইটি পবিত্র গৃহের একটিতে তীর্থযাত্রা করা একটি কর্তব্য; কিন্তু কোনটিতে, তাহা স্থির করিবার দায়িত্ব তীর্থযাত্রীর।
26প্রশ্ন: পণ সম্বন্ধে।
উত্তর: পণ সম্বন্ধে, উদ্দেশ্য থাকিবে নিম্নতম স্তর উনিশ মিশ্কাল রৌপ্য লইয়া পরিতৃপ্ত থাকা।
27প্রশ্ন: পবিত্র শ্লোকটি সম্বন্ধে: “যদি, কোনভাবে তাহার স্বামীর মৃত্যুর খবর তাহার নিকট পৌঁছায়”, ইত্যাদি।
উত্তর: অপেক্ষার সময় সম্বন্ধে একটি “স্থিরীকৃত মাসের সংখ্যা” নয় মাস সময়ের একটি ব্যাপ্তিকাল অভিপ্রেত।
28প্রশ্ন: শিক্ষকের উত্তরাধিকারের অংশ সম্বন্ধে পুনরায় অনুসন্ধান করা হইয়াছে।
উত্তর: যদি শিক্ষকটি মৃত্যুবরণ করিয়া থাকে, তাহা হইলে উত্তরাধিকারের তাহার অংশের এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করিবে, এবং অবশিষ্ট তিন ভাগের দুই ভাগ মৃতের সন্তানদের অংশে যাইবে, শিক্ষকের নহে।
29প্রশ্ন: তীর্থযাত্রা সম্বন্ধে পুনরায় অনুসন্ধান করা হইয়াছে।
উত্তর: লোকদের প্রতি পবিত্র গৃহে তীর্থযাত্রার আদেশদানের দ্বারা - বাগদাদের মহামহিম গৃহ এবং শিরাজে আদিবিন্দুর গৃহ- উভয়কেই বুঝাইতেছে; এই গৃহদ্বয়ের যে কোনটিতে তীর্থযাত্রা যথেষ্ট হইবে। তাহারা যেখানে বসবাস করে তাহার নিকটবর্তী যে কোনটিতে তাহারা তীর্থযাত্রা করিতে পারে।
30প্রশ্ন: শ্লোকটি সম্বন্ধে: “যে কেহ একজন কুমারীকে তাহার সেবায় নিয়োগ করিতে ইচ্ছা করিবে, সে তাহা শালীনতার সঙ্গে করিতে পারে”।
উত্তর: এইটি শুধুমাত্র সেবার জন্য- যেরূপ যে কোন শ্রেণীর ভৃত্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সম্পাদন করিয়া থাকে তাহা তাহারা তরুণী হউক অথবা বৃদ্ধা হউক; এইরূপ একজন কুমারী যে কোন সময় তাহার ইচ্ছা মাফিক একজন স্বামী বাছিয়া লইতে মুক্ত, কারণ নারীদের ক্রয় করা এবং একজন পুরুষের দুইয়ের অধিক স্ত্রী থাকা অবৈধ।
31প্রশ্ন: পবিত্র শ্লোকটি সম্বন্ধেঃ “পরম প্রভু নিষিদ্ধ করিয়াছেন... ঐ প্রচলিত প্রথা, পূর্বে তোমরা যে প্রথার আশ্রয় লইয়াছিলে যখন তিন বার তোমরা একজন নারীকে তালাক দিয়াছিলে”।
উত্তর: প্রসঙ্গটি হইতেছে সেই আইনের প্রতি যাহা পূর্ববর্তী সময়ে একজন নারীকে তাহার প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইবার পূর্বে অন্য একজন পুরুষের সহিত তাহার বিবাহ অপরিহার্য ছিল; এই প্রচলিত প্রথা কিতাব-ই-আক্বদাস-এ নিষিদ্ধ ঘোষিত হইয়াছে।
32প্রশ্ন: যমজস্থানে গৃহ দুইটি এবং অন্য স্থানসমূহ যেইখানে সিংহাসনটি প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, উহাদের সংস্কার ও সংরক্ষণ সম্বন্ধে।
উত্তর: দুইটি গৃহের দ্বারা মহামহিম গৃহ ও আদিবিন্দুর গৃহ বুঝাইতেছে। অন্য স্থানসমূহের ক্ষেত্রে - যেখানে সেইগুলি অবস্থিত - সেখানকার লোকেরা হয়; প্রতিটি গৃহ, যেখানে সিংহাসনটি প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল অথবা উহাদের যে কোন একটিকে সংরক্ষণের জন্য মনোনীত করিতে পারে।
33প্রশ্ন: শিক্ষকের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে পুনরায় অনুসন্ধান করা হইয়াছে।
উত্তর: যদি শিক্ষকটি বাহা’র জনগণের মধ্য হইতে না হয়, তাহা হইলে সে উত্তরাধিকার লাভ করিবে না। যদি কয়েকজন শিক্ষক থাকে, তাহা হইলে অংশটি তাহাদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করিয়া দিতে হইবে। যদি শিক্ষকটি মৃত হয়, তাহা হইলে তাহার সন্তান-সন্ততি উত্তরাধিকার সূত্রে তাহার অংশ পাইবে না, বরং ইহার দুই-তৃতীয়াংশ সম্পত্তির মালিকের শিশুদের কাছে প্রত্যাবর্তন করিবে, এবং অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশটি বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করিবে।
34প্রশ্ন: বাসগৃহ প্রসঙ্গে যাহা কেবল পুরুষ সন্তানের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
উত্তর: যদি কয়েকটি বাসগৃহ থাকে, এইগুলির মধ্যে উৎকৃষ্টতম ও দেখিতে চমৎকারতম বাসগৃহটিকে উপলক্ষ্য করা হইয়াছে, অন্যগুলি যে কোন সম্পত্তির ন্যায় সমস্ত উত্তরাধিকারের মধ্যে ভাগ করিয়া দিতে হইবে। যে কোন উত্তরাধিকারী, যে ঈশ্বরের ধর্ম-বহির্ভূত, অস্তিত্ববিহীনরূপে গণ্য হইবে এবং উত্তরাধিকার লাভ করিবে না।
35প্রশ্ন: নওরোজ সম্বন্ধে।
উত্তর: নওরোজ উৎসব শুরু হয় যেই দিন সূর্য মেষরাশিতে* প্রবেশ করে, এমনকি যদি ইহা সূর্যাস্তের অনধিক এক মিনিট পূর্বেও সংঘটিত হয়।
36প্রশ্ন: যদি যমজ জন্মদিবসসমূহ অথবা বা’ব-এর ঘোষণা দিবসের কোন একটি বার্ষিকী উপবাসব্রত পালনকালীন ঘটে, তাহা হইলে কি করতে হবে?
উত্তর: যমজ জন্মদিবসসমূহ অথবা বা’ব-এর ঘোষণা দিবসের উৎসবের ভোজানুষ্ঠান উপবাসের মাসের মধ্যে পতিত হয়, উপবাস পালনের আদেশ ঐ দিনে প্রযোজ্য হইবে না।
37প্রশ্ন: উত্তরাধিকার নির্ণয়কারী পবিত্র অনুবিধিসমূহে, মৃতের বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ পুরুষ সন্তানের সন্ততিকে বণ্টন করিয়া দেওয়া হইয়াছে। এই শর্ত কি শুধুমাত্র পিতার সম্পত্তিকে নির্দেশ করিতেছে, অথবা মাতার সম্পত্তির প্রতিও ইহা প্রযোজ্য হইতেছে?
উত্তর: মাতার ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ কন্যাদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করিয়া দিতে হইবে, কিন্তু তাহার অবশিষ্ট ভূসম্পত্তি, তন্মধ্যে বিষয়-সম্পত্তি, সর্বপ্রকার অলংকার এবং অব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ কিতাব-ই-আক্বদাস-এ প্রকাশিত রীতিতে তাহার সমস্ত উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিতে হইবে। কিন্তু, যদি মৃতের কোন কন্যা সন্তান না থাকে, তাহা হইলে সম্পূর্ণভাবে তাহার সম্পত্তি পবিত্র গ্রন্থে পুরুষদের জন্য বর্ণিত রীতিতে ভাগ করিয়া দিতে হইবে।
38প্রশ্ন: তালাক সম্বন্ধে- যাহা অবশ্য ধৈর্য্য ধারণের এক বৎসর দ্বারা অনুসৃত হইতে হইবে: যদি মাত্র একটি পক্ষ পুনর্মিলনে ইচ্ছুক হয়, তাহা হইলে কি করিতে হইবে?
উত্তর: কিতাব-ই-আক্বদাস-এ প্রকাশিত আদেশ অনুসারে উভয় পক্ষকেই রাজি হইতে হইবে। উভয় পক্ষ ইচ্ছুক না হইলে পুনর্মিলন ঘটিতে পারিবে না।
39প্রশ্ন: পণের বিষয়ে, কি হইবে যদি বর এই পণের সম্পূর্ণ পরিমাণ পরিশোধ না করিতে পারে, কিন্তু তদস্থলে বিবাহ উৎসবের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে সে তাহার নববধূকে এই মর্মে একটি লিখিত অঙ্গীকার প্রদান করিয়া থাকে যে যখন সে ইহা পালনে সক্ষম হইবে, সে ইহা পরিশোধ করিবে।
উত্তর: বিধিসংগত ক্ষমতার উৎস হইতে এই প্রথা গ্রহণ করিতে অনুমতি দেওয়া হইয়াছে।
40প্রশ্ন: যদি ধৈর্যের বৎসর চলাকালীন স্নেহ-মমতার সুঘ্রাণের পুনরুদ্ভব হয়কিন্তু তাহার পরেই বিতৃষ্ণা-বিরাগের আগমন ঘটে এবং দম্পতিটি সারা বৎসর ব্যাপিয়া স্নেহ-মমতা ও বিদ্বেষ-বিতৃষ্ণার মধ্যে দোলায়মান হয়, এবং বৎসরটি বিদ্বেষ-বিতৃষ্ণার মধ্য দিয়া শেষ হয়, তাহা হইলে বিবাহ-বিচ্ছেদ কার্যকরী হইতে পারে কি-না?
উত্তর: প্রত্যেক অবস্থায় যে কোন সময় বিদ্বেষ-বিতৃষ্ণার উদ্ভব ঘটে, ধৈর্যের বৎসর ঐ দিনেই শুরু হয়, এবং বৎসরটিকে গণনায় পূর্ণ বৎসর হইতে হইবে।
41প্রশ্ন: মৃতের বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ পুরুষ সন্তানকে বরাদ্দ করা হইয়াছে, নারী সন্তানকে নহে, অন্য কোন উত্তরাধিকারীকেও দেওয়া হয় নাই; মৃত ব্যক্তিটি কোন পুরুষ সন্তান রাখিয়া না গেলে, কি করিতে হইবে?
উত্তর: তিনি মহিমান্বিত হউন, তিনি বলেন ঃ “মৃত ব্যক্তিটি সন্তান রাখিয়া না গেলে, তাহাদের অংশ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করিবে...”। এই পবিত্র শ্লোক অনুসারে, মৃত ব্যক্তিটির বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করিবে।
42প্রশ্ন: হুকুকুল্লাহ্র অধ্যাদেশ কিতাব-ই-আক্বদাস-এ প্রকাশিত হইয়াছে। বাসগৃহটি কি ইহার সহিত যুক্ত বস্তুসমূহ ও প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জামসহ সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত, যাহার উপর হুকুক্ প্রদানযোগ্য কি-না?
উত্তর: পারস্য ভাষায় প্রকাশিত আইনসমূহে আমরা আদেশ করিয়াছি যে, এই মহাশক্তিশালী ধর্মবিধানে বাসগৃহ ও পারিবারিক সাজ-সরঞ্জাম অব্যাহতি প্রাপ্ত অর্থাৎ এইরূপ সাজ-সরঞ্জাম যাহা অত্যাবশ্যক।
43প্রশ্ন: বয়ঃপ্রাপ্তিতে পৌঁছার পূর্বে একটি বালিকার বিবাহের বাগদান সম্বন্ধে।
উত্তর: বিধিসংগত ক্ষমতার উৎস দ্বারা এই প্রচলিত প্রথা অবৈধ ঘোষিত হইয়াছে, এবং বিবাহের পূর্বে পঁচানব্বই দিনের পূর্বে একটি বিবাহের ঘোষণা দেওয়া অবৈধ।
44প্রশ্ন: দৃষ্টান্তস্বরূপ, যদি এক ব্যক্তির একশত তুমান থাকে, এই পরিমাণের উপর হুকুকুল্লাহ্ প্রদান করে, এবং অসফল লেনদেনের ফলে এই অংকের অর্ধেক হাতছাড়া হইয়া যায় এবং অতঃপর ব্যবসায়ের দ্বারা পুনরায় ঐ পরিমাণ অর্থ হাতে আসে যাহার উপর হুকুক্ প্রদানযোগ্য হয়, Ñ এইরূপ লোককে অবশ্যই হুকুকুল্লাহ্ পরিশোধ করিতে হইবে কি-না?
উত্তর: এইরূপ অবস্থায় হুকুকুল্লাহ্ প্রদানযোগ্য নহে।
45প্রশ্ন: যদি হুকুক্ পরিশোধের পর একশত তুমানের এই একই পরিমাণ সম্পূর্ণ খোয়া যায়, কিন্তু পরবর্তীকালে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যমে হস্তগত হয়, দ্বিতীয় বার অবশ্যই হুকুক্ পরিশোধ করিতে হইবে কি-না?
উত্তর: এই অবস্থায়ও হুকুক্ পরিশোধের প্রয়োজন নাই।
46প্রশ্ন: পবিত্র শ্লোকটি সম্বন্ধে, “ঈশ্বর তোমাদের প্রতি বিবাহের বিধান দিয়াছেন”, এই বিধান বাধ্যতামূলক কি-না?
উত্তর: ইহা বাধ্যতামূলক নহে।
47প্রশ্ন: ধরা যাক একজন পুরুষ একজন নারীকে কুমারী বলিয়া বিশ্বাস করিয়া বিবাহ করিল এবং তাহাকে তাহার পণ পরিশোধ করিয়াছে, কিন্তু বিবাহকার্যটি আইনতঃ সিদ্ধ করিবার সময় ইহা স্পষ্ট হইল যে সে কুমারী নহে, এমতাবস্থায় বিবাহের ব্যয় ও পণ ফেরত দিতে হইবে কি-না? এবং যদি বিবাহটি কুমারীত্বের শর্ত সাপেক্ষে হইয়া থাকে, তাহা হইলে কি অসম্পূর্ণ শর্তটি - যাহার উপর ইহা শর্তাধীন ছিল- ইহাকে বাতিল বা অসিদ্ধ করিবে?
উত্তর: এইরূপ ক্ষেত্রে বিবাহের ব্যয় ও পণ ফেরত দেওয়া যাইতে পারে। অসম্পূর্ণ শর্ত, যাহার উপর বিষয়টি শর্তাধীন উহাকে বাতিল করে। তবে বিষয়টি গোপন এবং ক্ষমা করা হইলে, তাহা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে একটি বদান্য পুরস্কারের যোগ্য হইবে।
48প্রশ্ন: “তোমাদের উপর একটি ভোজানুষ্ঠানের আদেশ দেওয়া হইয়াছে...” ইহা বাধ্যতামূলক কি না?
উত্তর: ইহা বাধ্যতামূলক নহে।
49প্রশ্ন: ব্যভিচার, পায়ুকাম এবং চুরির জরিমানা ও উহার পরিমাণ সম্বন্ধে।
উত্তর: এই জরিমানাসমূহের পরিমাণ নির্ধারণের দায়িত্ব বিচারালয়ের আওতাধীন।
50প্রশ্ন: আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিবাহের বৈধতা বা অবৈধতা সম্বন্ধে।
উত্তর: একইভাবে, এই বিষয়গুলি বিচারালয়ের অছিবৃন্দের আওতাধীন।
51প্রশ্ন: অভিসিঞ্চন সম্বন্ধে, ইহা প্রকাশিত হইয়াছে, “অভিসিঞ্চনের জন্য জল না পাওয়া গেলে সে পাঁচ বার এই কথাগুলি আবৃত্তি করুক, ‘পরমপবিত্র, পরমপবিত্র ঈশ্বরের নামে”: তীব্র শীতের সময়ে, অথবা হস্তদ্বয় বা মুখমন্ডল যদি ক্ষতযুক্ত থাকে, তখনও কি এই শ্লোক আবৃত্তি করা অনুমোদনীয়?
উত্তর: তীব্র শীতের সময় উষ্ণ জল ব্যবহার করা যাইতে পারে। হস্তদ্বয় বা মুখমন্ডল যদি ক্ষতযুক্ত থাকে, অথবা অন্য কারণ থাকে যেমন বেদনা ও যন্ত্রণা যাহার জন্য জলের ব্যবহার ক্ষতিকর হইবে, তাহা হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উক্ত নির্ধারিত শ্লোকটি অভিসিঞ্চনের পরিবর্তে আবৃত্তি করিতে পারে।
52প্রশ্ন: শুভ-অশুভ লক্ষণাদির প্রার্থনাটিকে প্রতিস্থাপন করিবার জন্য প্রকাশিত শ্লোকটির আবৃত্তিকরণ কি বাধ্যতামূলক?
উত্তর: ইহা বাধ্যতামূলক নহে।
53প্রশ্ন: উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে, যখন আপন ভাইয়েরা ও আপন বোনেরা বিদ্যমান, তখন কি বিমাতার দিকের ভাইয়েরা এবং বোনেরাও একটি অংশ পাইবে?
উত্তর: তাহারা কোন অংশ পাইবে না।
54প্রশ্ন: তিনি মহিমামন্বিত হউন, তিনি বলেন: “মৃত ব্যক্তির পুত্রটি পিতার জীবদ্দশায় সন্তান রাখিয়া মৃত্যুবরণ করিলে, তাহারা তাহাদের পিতার অংশ উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করিবে.... ” যদি কন্যাটি তাহার পিতার জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করে, তাহা হইলে কি হইবে?
উত্তর: পবিত্র গ্রন্থের অধ্যাদেশ অনুসারে তাহার উত্তরলব্ধির অংশ সাত শ্রেণীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিতে হইবে।
55প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তিটি যদি একজন নারী হয়, তাহা হইলে “স্ত্রীর” উত্তরলব্ধির অংশ কাহাকে বণ্টন করিয়া দিতে হইবে?
উত্তর: “স্ত্রীর” উত্তরলব্ধির অংশ স্বামীকে দিতে হইবে।
56প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির শবাচ্ছাদন প্রসঙ্গে পাঁচটি চাদরের বিধান দেওয়া হইয়াছে: এই পাঁচ কি ৫টি বস্ত্রকে নির্দেশ করে যাহা গতানুতিকভাবে অদ্যাবধি ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে অথবা একটির উপর অপরটি মোড়ানো ৫টি পূর্ণাবয়ব শবাচ্ছাদনকে বুঝাইতেছে?
উত্তর: পাঁচটি বস্ত্রের ব্যবহার অভিপ্রেত।
57প্রশ্ন: নির্দিষ্ট কিছু অবতীর্ণ শ্লোকের মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে।
উত্তর: অনেক ফলকলিপি অবতীর্ণ হইয়াছিল এবং পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ ব্যতীত এইগুলির মূল আকারে প্রেরণ করা হইয়াছিল। ফলস্বরূপ, আদিষ্ট হইয়া, এইগুলিকে পবিত্র উপস্থিতির সম্মুখে পুনরায় পাঠ করা হইয়াছিল এবং ধর্মের বিরোধীদের অসার আপত্তির সম্ভাবনা অনুমান করিয়া তাহা ব্যর্থ করিয়া দেওয়ার জন্য জনগণের মধ্যে প্রচলিত ব্যাকরণের প্রয়োগ পদ্ধতির সহিত সংগতিশীল করা হইয়াছিল। এই প্রয়োগ পদ্ধতির অপর কারণ হইতেছে, অগ্রদূত, যিনি ব্যতীত অপর সকলের আত্মা তাঁহার জন্য উৎসর্গীকৃত হউক, কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নূতন পদ্ধতিতে ব্যাকরণের নিয়মাবলী পালনে উদারতা পরিলক্ষিত হইয়াছিল; এইজন্য পবিত্র শ্লোকগুলি অতঃপর এমন এক পদ্ধতিতে অবতীর্ণ হইয়াছিল যাহা সহজ বোধগম্যতা এবং প্রকাশের সংক্ষিপ্ততায় অধিকাংশ প্রচলিত প্রয়োগ পদ্ধতির সহিত সংগতিশীল।
58প্রশ্ন: পবিত্র শ্লোকটি প্রসঙ্গে, “ভ্রমণকালীন যদি তোমরা কোন নিরাপদ স্থানে যাত্রা বিরতি কর ও বিশ্রাম গ্রহণ কর, তাহা হইলে তোমরা... যে প্রার্থনা করিতে পার নাই তাহার পরিবর্তে একটিমাত্র প্রণতিপাত কর”: ইহা কি অনিরাপদ অবস্থার কারণে বাদ পড়া বাধ্যতামূলক প্রার্থনার জন্য ক্ষতিপূরণ, অথবা সফরকালে বাধ্যতামূলক প্রার্থনা কি সম্পূর্ণরূপে স্থগিত এবং প্রণতিপাত ইহার স্থান গ্রহণ করে?
উত্তর: যখন বাধ্যতামূলক প্রার্থনার সময় আসে, তখন যদি সেইখানে নিরাপত্তা না থাকে, তাহা হইলে নিরাপদ পরিবেশে আগমনের পর ব্যক্তিটি বাদ পড়া প্রতিটি বাধ্যতামূলক প্রার্থনার পরিবর্তে একটি করিয়া প্রণতিপাত করিবে, এবং শেষ প্রণতিপাতের পর পদযুগল আড়াআড়ি করিয়া বসিয়া নির্দিষ্ট শ্লোকটি আবৃত্তি করিতে হইবে। যদি নিরাপদ স্থান হয়, তাহা হইলে ভ্রমণকালে বাধ্যতামূলক প্রার্থনা স্থগিত নহে।
59প্রশ্ন: যদি একজন ভ্রমণকারীর যাত্রা বিরতি ও বিশ্রামের পর বাধ্যতামূলক প্রার্থনার সময় হইয়া যায়, তাহা হইলে কি তাহাকে বাধ্যতামূলক প্রার্থনা পড়িতে হইবে, অথবা ইহার পরিবর্তে প্রণতিপাত করিতে হইবে?
উত্তর: অনিরাপদ পরিবেশ ছাড়া বাধ্যতামূলক প্রার্থনা বাদ দেওয়া অনুমোদনীয় নহে।
60প্রশ্ন: বাদ পড়া বাধ্যতামূলক প্রার্থনাসমূহের জন্য যদি কিছুসংখ্যক প্রণতিপাতের প্রয়োজন হয়, তাহা হইলে প্রতিটি ক্ষতিপূরক প্রণতিপাতের পর শ্লোকটি আবৃত্তি করিতে হইবে কি-না?
উত্তর: শেষ প্রণতিপাতের পর নির্দিষ্ট শ্লোকটি আবৃত্তি করা যথেষ্ট। কয়েকটি প্রণতিপাতের জন্য শ্লোকটির পৃথক পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নাই।
61প্রশ্ন: যদি একটি বাধ্যতামূলক প্রার্থনা গৃহে বাদ পড়ে, একটি প্রণতিপাতের দ্বারা ইহার ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে কি-না?
উত্তর: পূর্বের প্রশ্নাবলীর উত্তরে ইহা লিখিত হইয়াছে; “ক্ষতিপূরণ প্রণতিপাত সম্বন্ধে এই অনুবিধি গৃহে ও ভ্রমণে উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য”।
62প্রশ্ন: যদি কোন লোক অন্য উদ্দেশ্যে অভিসিঞ্চন করিয়া থাকে, এবং বাধ্যতামূলক প্রার্থনার সময় হইয়া যায়, তাহা হইলে কি এই অভিসিঞ্চন-ই যথেষ্ট হইবে, না এইগুলি নবায়ন করিতে হইবে?
উত্তর: এই একই অভিসিঞ্চন যথেষ্ট, এইগুলি নবায়নের প্রয়োজন নাই।
63প্রশ্ন: কিতাব-ই-আক্বদাস-এ অপরাহ্ণে, প্রভাতে ও সন্ধ্যায় নয় রাকাতের অন্তর্ভুক্ত বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সম্পাদনের আদেশ দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু বাধ্যতামূলক প্রার্থনাসমূহের ফলকলিপি* -ইহা হইতে ভিন্ন বলিয়া মনে হয়।
উত্তর: কিতাব-ই-আক্বদাস-এ যাহা প্রকাশিত হইয়াছে তাহা একটি ভিন্ন বাধ্যতামূলক প্রার্থনা প্রসঙ্গে। কয়েক বৎসর পূর্বে কিতাব-ই-আক্বদাস-এর কিছুসংখ্যক অধ্যাদেশসহ ঐ বাধ্যতামূলক প্রার্থনাটি, বিজ্ঞতাবশতঃ, পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং অন্যান্য পবিত্র লিখনাবলীর সহিত একত্রে নিরাপত্তা ও সংরক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হইয়াছিল। পরবর্তীকালে এই তিনটি বাধ্যতামূলক প্রার্থনা প্রকাশ করা হইয়াছিল।
64প্রশ্ন: সময় নির্ধারণের জন্য কি বড় ঘড়ি ও হাতঘড়ির উপর নির্ভর করা অনুমোদনীয়?
উত্তর: বড় ঘড়ি ও হাতঘড়িসমূহের উপর নির্ভর করা অনুমোদনীয়।
65প্রশ্ন: বাধ্যতামূলক প্রার্থনাসমূহের ফলকলিপিতে তিনটি প্রার্থনা প্রকাশিত হইয়াছে; এই তিনটি প্রার্থনার সবগুলির সম্পাদন প্রয়োজন কি-না?
উত্তর: এই তিনটির মধ্যে একটি করার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে; যে কোনটির সম্পাদন যথেষ্ট হইবে।
66প্রশ্ন: ভোরের প্রার্থনার জন্য করা অভিসিঞ্চন কি দ্বিপ্রহরের প্রার্থনার জন্য বৈধ? এবং অনুরূপভাবে, দ্বিপ্রহরে করা অভিসিঞ্চন কি সান্ধ্য প্রার্থনায় বৈধ?
উত্তর: অভিসিঞ্চন বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সম্পাদনের সহিত সংশ্লিষ্ট, এবং প্রত্যেক প্রার্থনার জন্য অবশ্য-ই নবায়ন করিতে হইবে।
67প্রশ্ন: দীর্ঘ বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সম্বন্ধে, সোজা হইয়া দাঁড়ানো ও “ঈশ্বরের পানে মুখ ফিরানো” প্রয়োজন। মনে হইতেছে ইহা নির্দেশ করে যে কিব্লাহ্মুখী হইবার প্রয়োজন নাই; ইহা কি তদ্রƒপ? অথবা না।
উত্তর: কিব্লাহ্মুখী হওয়া অভিপ্রেত।
68প্রশ্ন: পবিত্র শ্লোকটি সম্বন্ধে: “তোমরা ঈশ্বরের পবিত্র শ্লোকসমূহ প্রতি সকাল ও সন্ধ্যায় আবৃত্তি কর”।
উত্তর: উদ্দেশ্য হইতেছে উহাদের সবগুলি যাহা ঐশী উচ্চারণের স্বর্গ হইতে অবতীর্ণ হইয়াছে । ঈশ্বরের বাণী পাঠ করিবার জন্য প্রধান আবশ্যকীয় হইতেছে আগ্রহ ও পবিত্র আত্মার ভালবাসা। আনন্দ ও উজ্জ্বলতার চেতনায় একটি শ্লোক, অথবা এমনকি একটি শব্দ পাঠ করা, অনেক পবিত্র গ্রন্থ পাঠ অপেক্ষা অধিকতর বাঞ্ছনীয়।
69প্রশ্ন: একজন লোক কি তাহার ইষ্টিপত্র রচনাকালে Ñ হুকুকুল্লাহ্ প্রদান ও ঋণসমূহ পরিশোধের জন্য বরাদ্দকৃত পরিমাণের অতিরিক্ত Ñ তাহার সম্পত্তির কিছু অংশ দাতব্য কাজে বণ্টন করিতে পারে? না-কি সে তাহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও সমাধিস্থ করিবার ব্যয় নির্বাহ করিবার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি বণ্টনের অধিকারী নহে, যেন তাহার সম্পত্তির অবশিষ্টাংশ ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে মনোনীত শ্রেণীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হইতে পারে?
উত্তর: একজন লোকের তাহার সম্পত্তির উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব রহিয়াছে। যদি সে হুকুকুল্লাহ্র ভার মুক্ত করিতে সমর্থ হয় এবং ঋণমুক্ত হয়, তাহা হইলে যাহা কিছু তার ইষ্টিপত্রে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে এবং যে কোন ঘোষণা অথবা প্রতিশ্রুতি ইহার মধ্যে থাকে, তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে। সত্য সত্যই, ঈশ্বর তাহাকে যাহা কিছু প্রদান করিয়াছেন তাহা তাহার ইচ্ছামত যে কোনভাবে বণ্টনের অনুমতি তাহাকে দিয়েছেন।
70প্রশ্ন: সমাধিস্থ করিবার সময় প্রদত্ত আংটিটি কি কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্দেশিত? অথবা ইহা কি অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও?
উত্তর: ইহা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। অনুরূপভাবে, মৃতদের জন্য প্রার্থনা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।
71প্রশ্ন: একজন লোক “আলা” মাসে ছাড়া অন্য কোন সময় উপবাস করিতে ইচ্ছা করিলে ইহা অনুমোদনীয় হইবে কি না? এবং সে যদি নিজে এইরূপ একটি উপবাস ব্রত পালনের প্রতিজ্ঞা অথবা অঙ্গীকার করিয়া থাকে, তাহা হইলে ইহা কি বৈধ ও গ্রহণযোগ্য?
উত্তর: উপবাসের বিধান তদ্রƒপ যাহা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হইয়াছে। তাহা সত্ত্বেও, একটি ইচ্ছাপূরণের লক্ষ্যে এইভাবে কেহ যদি ঈশ্বরের কাছে একটি উপবাস সমর্পণ করিতে অঙ্গীকার করিলে তাহা পূর্বের ন্যায় এখনও অনুমোদনযোগ্য। তথাপি, ইহা ঈশ্বরের ইচ্ছা যে, তাঁহার গৌরব মহিমান্বিত হউক, ব্রত পালনের প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারসমূহ এইরূপ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হউক, যাহা মানবজাতিকে লাভবান করিবে।
72প্রশ্ন: বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ সম্বন্ধে আবার একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হইয়াছে: পুরুষ সন্তানের অবর্তমানে কি এইগুলি বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করিবে? অথবা এইগুলি কি সম্পত্তির বাকি অংশের ন্যায় বণ্টিত হইবে?
উত্তর: বাসগৃহের ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদের দুই-তৃতীয়াংশ কন্যা সন্তানের এবং এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ের হস্তগত হইবে, ঈশ্বর বিচারালয়কে লোকদের ধনাগার করিয়াছেন।
73প্রশ্ন: যদি ধৈর্যের বৎসরান্তে, স্বামী বিবাহবিচ্ছেদ অস্বীকার করে, স্ত্রী কোন পন্থা অবলম্বন করিবে?
উত্তর: যখন ব্যাপ্তিকাল শেষ হইবে, তখন বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হইয়া যাইবে। তবে ইহা অত্যাবশ্যক যে, এই সময়ের শুরু ও শেষ হইবার একাধিক সাক্ষী থাকিতে হইবে, যাহাতে প্রয়োজন হইলে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাহাদেরকে ডাকা যাইতে পারে।
74প্রশ্ন: বার্ধক্যের সংজ্ঞা সম্বন্ধে।
উত্তর: আরবদের কাছে ইহা বার্ধক্যের দূরবর্তীতম প্রান্ত নির্দেশ করে, কিন্তু বাহা'র জনগণের জন্য ইহা সত্তর বৎসর বয়স হইতে।
75প্রশ্ন: পদব্রজে ভ্রমণরত কোন লোকের জন্য উপবাসের সীমা সম্বন্ধে।
উত্তর: সীমা দুই ঘণ্টায় নির্ধারিত হইয়াছে। এই সময়সীমা অতিক্রান্ত হইলে উপবাস ভঙ্গ করা অনুমোদনীয়।
76প্রশ্ন: উপবাসের মাসে কঠোর পরিশ্রমে লিপ্ত লোকদের উপবাস পালন সম্বন্ধে।
উত্তর: এইরূপ লোকদের উপবাস পালন হইতে অব্যহতি দেওয়া হইয়াছে; তাহা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ও উপবাসের মর্যাদা সমুন্নত রাখিবার জন্য পরিমিত ভাবে ও নির্জনে খাদ্যগ্রহণ করা সর্বাধিক প্রশংসনীয় ও উপযুক্ত।
77প্রশ্ন: বাধ্যতামূলক প্রার্থনার জন্য কৃত অভিসিঞ্চন সর্বমহান নামের পঁচানব্বই বার আবৃত্তির জন্য যথেষ্ট হইবে?
উত্তর: অভিসিঞ্চনের নবায়ন অপ্রয়োজনীয়।
78প্রশ্ন: স্ত্রীর জন্য স্বামীর ক্রয় করা পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলংকার সম্বন্ধে: স্বামীর মৃত্যুর পর এইগুলি কি তাহার (স্বামীর) উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করিতে হইবে? অথবা এইগুলি কি বিশেষভাবে স্ত্রীর জন্য?
উত্তর: ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যতীত, যাহা কিছু আছে, তাহা অলংকার বা অন্য কিছু হউক, উহাদের সব-ই স্বামীর অধিকারভুক্ত কেবল নিশ্চিতভাবে স্ত্রীকে প্রদত্ত উপহারসমূহ ব্যতীত।
79প্রশ্ন: দুইজন ন্যায়বান সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর নির্ভরশীল কোন বিষয় প্রমাণকালীন ন্যায়পরায়ণতার মানদ- সম্বন্ধে।
উত্তর: ন্যায়পরায়ণতার মানদ- হইল লোকদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সুনাম। ঈশ্বরের সমস্ত ভৃত্যদের সাক্ষ্য, যে কোন ধর্ম বা মতের হোক না কেন, তাঁহার সিংহাসনের সম্মুখে গ্রহণযোগ্য।
80প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তিটি যদি তাহার হুকুকুল্লাহ্ প্রদান না করিয়া থাকে, এমনকি অন্যান্য ঋণও পরিশোধ না করিয়া থাকে, তাহা হইলে কি এইসব বাসগৃহ, ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ ও সম্পত্তির অবশিষ্টাংশ হইতে যথানুপাতিক হারে বাদ দিয়া ঋণমুক্ত করিতে হইবে? না-কি বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ পুরুষ সন্তানের জন্য আলাদা করিয়া রাখিতে হইবে এবং ফলস্বরূপ, ঋণসমূহ কি সম্পত্তির অবশিষ্টাংশ হইতে পরিশোধ করিতে হইবে? এবং সম্পত্তির এই অবশিষ্টাংশ এই উদ্দেশ্যের জন্য যদি অপর্যাপ্ত হয়, ঋণসমূহ কিভাবে পরিশোধ করিতে হইবে?
উত্তর: অপরিশোধিত ঋণসমূহ ও হুকুকুল্লাহ্র নিষ্পত্তি সম্পত্তির অবশিষ্টাংশ হইতে করিতে হইবে, কিন্তু এই উদ্দেশ্যে যদি ইহা অপর্যাপ্ত হয়, তাহা হইলে তাহার বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ হইতে ঘাটতি পূরণ করিতে হইবে।
81প্রশ্ন: তৃতীয় বাধ্যতামূলক প্রার্থনাটি কি বসা অবস্থায় অথবা দাঁড়ানো অবস্থায় করিতে হইবে?
উত্তর: একটি বিনীত ভক্তির মনোভাব লইয়া দন্ডায়মান হওয়া পছন্দনীয় ও অধিকতর উপযুক্ত।
82প্রশ্ন: প্রথম বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সম্বন্ধে আদেশ দেওয়া হইয়ছে, “কোন লোক যে কোন সময় যখন নিজেকে অতীব বিনম্রতা ও আকুল আকাক্সক্ষাপূর্ণ আরাধনার একটি মানসিক অবস্থায় দেখিতে পাইবে, তখন তাহাকে ইহা সম্পাদন করিতে হইবে,” ইহা কি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একবার নাকি একাধিক বার সম্পাদন করিতে হইবে?
উত্তর: চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একবারই যথেষ্ট; ইহা তাহা-ই যাহা স্বর্গীয় আদেশের রসনা দ্বারা উচ্চারিত হইয়াছে।
83প্রশ্ন: “সকাল”, “দুপুর” ও “সন্ধ্যার” সংজ্ঞা সম্বন্ধে।
উত্তর: এইগুলি হইতেছে সূর্যোদয়, দ্বিপ্রহর ও সূর্যাস্ত। বাধ্যতামূলক প্রার্থনার অনুমোদনীয় সময়গুলি হইতেছে সকাল হইতে দুপুর পর্যন্ত, দুপুর হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, এবং সূর্যাস্ত হইতে দুই ঘণ্টার পর পর্যন্ত। কর্তৃত্ব ঈশ্বরের হস্তে, যিনি দুইটি নামের বাহক।
84প্রশ্ন: একজন বিশ্বাসীর পক্ষে কি একজন অবিশ্বাসীকে বিবাহ করা অনুমোদনীয়?
উত্তর: বিবাহ করা ও বিবাহ দেওয়া, উভয়ই অনুমোদনীয়; এইরূপই পরম প্রভু আদেশ দিয়াছিলেন, যখন তিনি উদারতার ও করুণার সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন।
85প্রশ্ন: মৃতদের জন্য প্রার্থনা সম্বন্ধে: এই প্রার্থনা সমাধিস্থ করিবার পূর্বে না পরে? এবং কিব্লাহ্মুখী হওয়া কি প্রয়োজনীয়?
উত্তর: এই প্রার্থনার আবৃত্তি সমাধিস্থ করিবার পূর্বে হইতে হইবে; এবং কিব্লাহ্ সম্বন্ধে: “যেই দিকেই তোমরা মুখ ফিরাইবে, সেই দিকেই ঈশ্বরের মুখমন্ডল”*।
86প্রশ্ন: বাধ্যতামূলক প্রার্থনাসমূহের যথা সংক্ষিপ্ত মধ্যাহ্ন প্রার্থনা এবং সকালে, দুপুরে এবং সন্ধ্যায় করণীয় প্রার্থনার মধ্যে দুইটির সময় হইতেছে দুপুরে; এইক্ষেত্রে দুইবার অভিসিঞ্চন অপরিহার্য, নাকি একবার যথেষ্ট হইবে?
উত্তর: অভিসিঞ্চনের নবায়ন অপ্রয়োজনীয়।
87প্রশ্ন: গ্রামের অধিবাসীদের দেয় রৌপ্যের পণ সম্বন্ধে: ইহা কি কনেকে অথবা বরকে, অথবা উভয়কেই বুঝাইতেছে? এবং কি হইবে একজন যদি শহরের অধিবাসী এবং অন্যজন গ্রামের অধিবাসী হয়?
উত্তর: পণ নির্ধারিত হয় বরের আবাসস্থল দ্বারা; সে যদি একজন শহরের অধিবাসী হয়, তাহা হইলে পণ হইবে স্বর্ণের, এবং সে যদি একজন গ্রামের অধিবাসী হয়, তাহা হইলে পণ হইবে রৌপ্যের।
88প্রশ্ন: একজন শহরের অধিবাসী এবং একজন গ্রামের অধিবাসী নির্ধারণের নীতিটি কি? একজন শহরের অধিবাসী যদি গ্রামে অথবা একজন গ্রামের অধিবাসী শহরে স্থায়ী বসবাস শুরু করে, তাহা হইলে কোন্ আদেশ প্রযোজ্য হইবে? জন্মস্থানই কি বিচার্য বিষয় হইবে?
উত্তর: নির্ধারণের নীতি হইতেছে স্থায়ী বাসস্থান এবং তাহা কোথায় তাহার উপর নির্ভর করিয়া পবিত্র গ্রন্থের নির্দেশ পালন করিতে হইবে।
89প্রশ্ন: পবিত্র ফলকলিপিসমূহে প্রকাশিত হইয়াছে যে, যখন কোন লোক উনিশ মিশ্কাল সমতুল্য স্বর্ণ অর্জন করিয়াছে, তখন তাহাকে সেই অর্থের পরিমাণের উপর ঈশ্বরের অধিকার পরিশোধ করিতে হইবে। ব্যাখ্যা করা যাইবে কি এই ঊনিশের মধ্যে কত প্রদান করিতে হইবে?
উত্তর: ঈশ্বরের অধ্যাদেশ দ্বারা একশতের মধ্যে ঊনিশ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইহার উপর ভিত্তি করিয়া হিসাব করিতে হইবে। অতঃপর ঊনিশের উপর কি পরিমাণ দেয় তাহা নির্ণয় করা যাইতে পারে।
90প্রশ্ন: যখন কাহারও সম্পদ উনিশ ছাড়াইয়া যায়, তখন কি পুনরায় হুকুক্ দেয় হইবার পূর্বে ইহাকে আরও এক উনিশ পরিমাণে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন? না-কি যে কোন পরিমাণে বৃদ্ধির উপর দেয় হইবে?
উত্তর: উনিশের সহিত যুক্ত যে কোন পরিমাণ হুকুকুল্লাহ্ প্রদান হইতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত, যতক্ষণ না তাহা আরও এক উনিশে পৌঁছায়।
91প্রশ্ন: বিশুদ্ধ জল এবং যে পর্যায়ে ইহা ব্যবহৃত বলিয়া বিবেচিত হইয়া থাকে, তাহা সম্বন্ধে।
উত্তর: জলের অল্প পরিমাণসমূহ, যেমন এক অথবা এমনকি দুই বা তিন পেয়ালা জল মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাত্র একবার ধৌত করিবার পর অবশ্যই ব্যবহৃত বলিয়া বিবেচিত হইবে। কিন্তু যদি এক কুর* অথবা ইহার বেশি পরিমাণ জল এক বা দুই বার মুখমন্ডল ধৌতকরণের পর অপরিবর্তিত থাকে তাহা হইলে ইহার ব্যবহারে কোন আপত্তি নাই, যদি ইহার তিনটি গুণের মধ্যে কোন একটি পরিবর্তিত না হয়; দৃষ্টান্তস্বরূপ ইহার বর্ণ পরিবর্তিত হইয়াছে, এইরূপ অবস্থায় ইহা ব্যবহৃত রূপে বিবেচিত হইবে।
92প্রশ্ন: বিবিধ প্রশ্ন সম্বন্ধে: পারস্য ভাষায় লিখিত একটি গ্রন্থে প্রাপ্ত বয়ঃপ্রাপ্তি ১৫ বৎসরে স্থির করা হইয়াছে; বিবাহ কি অনুরূপ বয়ঃপ্রাপ্তির উপর শর্তযুক্ত? নাকি ঐ সময়ের পূর্বেও অনুমোদনীয়?
উত্তর: যেহেতু ঈশ্বরের গ্রন্থে উভয় পক্ষের সম্মতির প্রয়োজন হয়, এবং যেহেতু বয়ঃপ্রাপ্তির পূর্বে তাহাদের সম্মতি অথবা ইহার অভাব নিরূপণ করিতে পারা যায় না, সেইহেতু বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তিতে পৌঁছানোর উপর শর্তযুক্ত এবং ঐ সময়ের পূর্বে অনুমোদনীয় নহে।
93প্রশ্ন: রুগ্ন ব্যক্তিদের দ্বারা উপবাস ও বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সম্পাদন সম্বন্ধে।
উত্তর: সত্যই, আমি বলিতেছি যে বাধ্যতামূলক প্রার্থনা ও উপবাসের উচ্চ মহিমান্বিত একটি মর্যাদা রহিয়াছে। যদিও, শরীরের একটি বিশেষ অবস্থায় উহাদের গুণাবলী উপলব্ধি করা যাইতে পারে। শারীরিক অসুস্থতার সময় এই অবশ্যকরণীয় বিধানগুলির পালন অনুমোদনীয় নহে, পরম প্রভুর, তাঁহার গৌরব মহিমান্বিত হউক, সর্ব সময়ে তাঁহার আদেশ এইরূপ-ই ছিল। এইরূপ পুরুষ ও মহিলাগণ আশীষপূতঃ যাহারা মনোযোগ দেয়, এবং তাঁহার আদেশসমূহ পালন করে। সমস্ত প্রশংসা ঈশ্বরের, তিনি-ই শ্লোকসমূহ অবতীর্ণ করিয়াছেন এবং তিনি সন্দেহাতীত প্রমাণাবলীর প্রকাশক।
94প্রশ্ন: মসজিদ, গির্জা ও মন্দিরসমূহ সম্বন্ধে।
উত্তর: একক সত্য ঈশ্বরের আরাধনার জন্য যাহা কিছু নির্মিত হইয়াছে, যথা মসজিদ, গির্জা ও মন্দিরসমূহ, তাঁহার নামের স্মরণার্থে ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাইবে না। ইহা ঈশ্বরের একটি আদেশ, এবং যে ইহাকে অমান্য করে সে সত্যই তাহাদের মধ্যে গণ্য, যাহারা সীমা লঙ্ঘন করিয়াছে। কোন ক্ষতিই নির্মাতাকে স্পর্শ করিতে পারে না কারণ সে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তাহার কর্ম সম্পাদন করিয়াছে; এবং তাহার সঠিক পুরস্কার লাভ করিয়াছে এবং করিতে থাকিবে।
95প্রশ্ন: একটি কর্মস্থলের আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র সম্বন্ধে: সেইগুলি কাহার কাজ অথবা ব্যবসায় চালাইয়া যাওয়ার জন্য প্রয়োজন এইগুলি হুকুকুল্লাহ্ প্রদানের অধীন, অথবা সেইগুলি পারিবারিক সাজসজ্জার অনুরূপ একই বিধানের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর: এইগুলি পারিবারিক সাজসজ্জার ন্যায় একই বিধানের অন্তর্ভুক্ত।
96প্রশ্ন: অবচয় অথবা ক্ষতি হইতে রক্ষা করিবার নিমিত্তে অছি ব্যবস্থাধীন সম্পত্তি নগদ টাকায় বা অন্য কোন আকৃতির সম্পত্তিতে বিনিময় সম্বন্ধে।
উত্তর: অবচয় অথবা ক্ষতিজনিত মূল্যহ্রাস হইতে রক্ষা করিবার জন্য অছি দ্বারা পরিচালিত সম্পত্তির বিনিময় সম্বন্ধে লিখিত প্রশ্ন বিষয়ে এইরূপ বিনিময় এই শর্তে অনুমোদনীয় যে বিনিময়টি মূল্যমানে সমান হইবে। সত্য সত্যই, তোমাদের পরম প্রভু ব্যাখ্যাদানকারী, সর্বদর্শী, এবং তিনি, সত্যই, আদেশদাতা, দিবসসমূহের প্রাচীন।
97প্রশ্ন: শীত ও গ্রীষ্মে পদ ধৌতকরণ সম্বন্ধে।
উত্তর: উভয় ক্ষেত্রে বিধান একই; উষ্ণ জল বাঞ্ছনীয়, তবে শীতল জলে কোন আপত্তি নাই।
98প্রশ্ন: বিবাহবিচ্ছেদ সম্বন্ধে আর একটি প্রশ্ন।
উত্তর: যেহেতু ঈশ্বর, তাঁহার গৌরব মহিমান্বিত হউক, বিবাহ বিচ্ছেদ সমর্থন করেন নাই, এই বিষয়ে কোন কিছু অবতীর্ণ হয় নাই। তবে একে অন্য হইতে আলাদা থাকাকালীন এক বৎসর শেষ না হওয়া পর্যন্ত, দুই জন বা ততোধিক লোককে সাক্ষীরূপে অবশ্যই অবগত থাকিতে হইবে; যদি শেষ পর্যন্ত, পুনর্মিলন না ঘটে তাহা হইলে বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হইবে। এই বিষয় বিচারালয়ের অছিদের দ্বারা নিযুক্ত শহরের ধর্মীয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা কর্তৃক নিবন্ধন দপ্তরে অবশ্যই নথিভুক্ত করিতে হইবে। এই কার্যপ্রণালীর পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য, যেন, যাহারা বোধশক্তিসম্পন্ন হৃদয়ের অধিকারী, তাহারা দুঃখভারাক্রান্ত না হয়।
99প্রশ্ন: পরামর্শ সম্বন্ধে।
উত্তর: যদি সমবেত লোকদের প্রথম দলের মধ্যে পরামর্শ সভা মতানৈক্যে শেষ হয়, তখন ইহাতে নূতন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে, তারপর তাহাদের মধ্য হইতে সর্বমহান নামের সংখ্যা, অথবা কিছু কম বা বেশি সংখ্যক লোককে লটারি দ্বারা মনোনীত করিতে হইবে। অতঃপর পুনরায় পরামর্শ সভা শুরু করিতে হইবে, এবং ফলাফল যাহাই হউক না কেন, তাহা মানিয়া লইতে হইবে। তাহা সত্ত্বেও যদি আবারও মতভেদ দেখা দেয়, তাহা হইলে আর একবার একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করিতে হইবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত জয়ী হইবে। সত্য সত্যই, তিনি যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে সঠিক পথে পরিচালনা করেন।
100প্রশ্ন: উত্তরাধিকার সম্বন্ধে।
উত্তর: উত্তরাধিকার সম্বন্ধে আদিবিন্দু যাহা কিছু আদেশ করিয়াছিলেন Ñ তিনি ব্যতীত আর সকলের আত্মা তাঁহার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত হউক- তাহা অত্যন্ত সন্তোষজনক। বিদ্যমান উত্তরাধিকারীগণ তাহাদের জন্য নির্ধারিত অংশসমূহ লাভ করিবে, অপরদিকে অবশিষ্টাংশের একটি বিবৃতি সর্বোচ্চের প্রাঙ্গণে অবশ্যই পেশ করিতে হইবে। তাঁহার হস্তেই রহিয়াছে কর্তৃত্বের উৎস; তিনি যাহা ইচ্ছা করেন তাহা-ই আদেশ করেন। এই বিষয়ে রহস্যের দেশে একটি আইন অবতীর্ণ হইয়াছিল, যাহা সাময়িকভাবে নিরুদ্দিষ্ট উত্তরাধিকারীদের অংশ বিদ্যমান উত্তরাধিকারীদের প্রদান করে, এইরূপ সময় না আসা পর্যন্ত যখন বিচারালয় প্রতিষ্ঠিত হইবে, তখন এই বিষয়ে আদেশ ঘোষণা করা হইবে। যদিও, তাহাদের উত্তরলব্ধি যাহারা প্রাচীন সুষমার ন্যায় একই বৎসরে দেশত্যাগ করিয়াছিল, তাহাদের উত্তরাধিকারীদেরকে প্রদান করা হইয়াছে এবং ইহা তাহাদের প্রতি ঈশ্বর প্রদত্ত একটি বদান্যতা।
101প্রশ্ন: গুপ্ত ধন সম্বন্ধে আইন।
উত্তর: কোন গুপ্ত ধন পাওয়া গেলে, উহার এক-তৃতীয়াংশ আবিষ্কারকের অধিকারভুক্ত হইবে এবং অপর দুই-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ের ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সমস্ত লোকের মঙ্গলের জন্য ব্যয় করা হইবে। ইহা করা হইবে বিচারালয়ের প্রতিষ্ঠার পর এবং সেই সময় না আসা পর্যন্ত প্রতিটি স্থান ও অঞ্চলের বিশ্বাসভাজন লোকদের তত্ত্বাবধানে রাখিতে হইবে। সত্যই তিনি শাসক, আদেশদাতা, সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞাত।
102প্রশ্ন: যে স্থাবর সম্পত্তি মুনাফা জোগায় না তাহার উপর হুকুক্ সম্বন্ধে।
উত্তর: ঈশ্বরের আদেশ এই যে স্থাবর সম্পত্তি যাহা হইতে আয় বন্ধ হইয়া গিয়াছে, অর্থাৎ যাহা হইতে কোন লাভ অর্জিত হয় না, তাহার হুকুকুল্লাহ্ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নাই। সত্য সত্যই তিনি শাসক, দয়ালু।
103প্রশ্ন: পবিত্র শ্লোকটি সম্বন্ধে, “যে সকল অঞ্চলে দিন ও রাতগুলি দীর্ঘ হয়, সেই সকল স্থানে ঘড়ির দ্বারা প্রার্থনার সময় নিরূপণ করিতে হইবে...”।
উত্তর: ইহা ঐ সকল ভূখন্ডকে নির্দেশ করিতেছে যেইগুলি দূরবর্তী। তবে ঐ সকল অঞ্চলে দৈর্ঘ্যরে ব্যবধান মাত্র কয়েক ঘণ্টা হইলে এই বিধান প্রযোজ্য নহে।
104আ’বা বাদী’র প্রতি ফলকলিপিতে, এই পবিত্র শ্লোকটি অবতীর্ণ হইয়াছে: “সত্য সত্যই, আমরা প্রত্যেক পুত্রকে তাহার পিতার সেবা করিতে নির্দেশ দিয়াছি”। আদেশটি এইরূপ যাহা আমরা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করিয়াছি।
105এবং অন্য একটি ফলকলিপিতে, এই মহিমান্বিত কথাগুলি অবতীর্ণ হইয়াছে; হে মুহম্মদ! দিবসসমূহের প্রাচীন তাঁহার মুখমন্ডল তোমার দিকে ফিরাইয়াছেন- তোমার নাম উল্লেখ করিয়াছেন এবং ঈশ্বরের জনমন্ডলীকে তাহাদের সন্তানদিগকে শিক্ষাদান করিতে উপদেশ প্রদান করিতেছেন। কোন পিতা যদি শাশ্বত সম্রাটের লেখনী দ্বারা কিতাব-ই-আক্বদাস-এ লিপিবদ্ধ এই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আদেশ অবহেলা করে, সে তাহার পিতৃত্বের অধিকারসমূহ হারাইবে, এবং ঈশ্বরের সম্মুখে অপরাধীরূপে গণ্য হইবে। মঙ্গল তাহার-ই যে পরম প্রভুর উপদেশসমূহ তাহার হৃদয়ে অঙ্কিত করিয়া রাখে এবং সুদৃঢ়ভাবে উহাদের প্রতি সংলগ্ন থাকে। সত্যই ঈশ্বর তাঁহার ভৃত্যগণের প্রতি তাহা-ই নির্দেশ করিয়াছেন যাহা তাহাদিগকে সাহায্য এবং লাভবান করিবে এবং তাঁহার নৈকট্য লাভে তাহাদিগকে সমর্থ করিবে। তিনিই আদেশদাতা, চিরস্থায়ী।
106তিনি ঈশ্বর, মহিমা ও শক্তির পরম প্রভু, তিনি মহিমান্বিত হউন! ন্যায়পরায়ণতা ও বোধগম্যতার প্রাণবন্ত সলিলসমূহ দ্বারা মানব অস্তিত্বের বৃক্ষসমূহকে পরিপুষ্ট করিবার জন্য একক সত্য ঈশ্বর, তাঁহার গৌরব উচ্চপ্রশংসিত হউক, সমস্ত বার্তাবাহকগণ ও মনোনীতগণের উপর দায়িত্বভার অর্পণ করিয়াছেন, যেন তাহাদের হইতে উহা প্রকাশিত হইতে পারে যাহা ঈশ্বর তাহাদের অন্তরতম সত্তাসমূহের মধ্যে গচ্ছিত রাখিয়াছেন। যেইরূপ সহজেই লক্ষ্য করা যাইতে পারে, প্রতিটি বৃক্ষ একটি নির্দিষ্ট ফল প্রদান করে, এবং একটি ফলহীন বৃক্ষ কেবল অগ্নির উপযুক্ত হইয়া থাকে। এই সমস্ত ঐশী শিক্ষাদানকারী যাহা কিছু তাহারা বলিয়াছেন ও শিক্ষা দিয়াছেন, তাহার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের উন্নত মর্যাদাকে সংরক্ষণ করা। মঙ্গল তাহার-ই যে ঈশ্বরের এই দিবসে তাঁহার শিক্ষাসমূহের প্রতি দৃঢ়সংলগ্ন রহিয়াছে এবং তাঁহার সত্য ও মৌলিক আইন হইতে বিপথগামী হয় নাই। যে ফলগুলি মানব জীবন-বৃক্ষের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত সেইগুলি হইতেছে বিশ্বাসভাজনতা ও ঈশ্বরভক্তি, সত্যবাদিতা ও অকপটতা; ঈশ্বরের একত্ব স্বীকার করিবার পর, তিনি প্রশংসিত ও গৌরবমন্ডিত হউন, সর্বাপেক্ষা বৃহৎ হইতেছে সেই অধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন যাহা পিতামাতার প্রাপ্য। এই শিক্ষা ঈশ্বরের সমস্ত গ্রন্থে উল্লেখ করা হইয়াছে এবং সর্বমহান লেখনী দ্বারা পুনঃনিশ্চিত করা হইয়াছে। করুণাময় পরম প্রভু কোরআনে যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা বিবেচনা কর, তাহার উক্তিসমূহ প্রশংসিত হউক ঃ “তোমরা ঈশ্বরের উপাসনা কর, তাঁহার সহিত কোন সমকক্ষ বা সাদৃশ্য যুক্ত করিও না; এবং তোমাদের পিতামাতার প্রতি সদয়ভাব ও কোমলতা প্রদর্শন কর....”। লক্ষ্য কর, একক সত্য ঈশ্বরের স্বীকৃতির সহিত কিভাবে পিতামাতার প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ দয়ার্দ্রতাকে যুক্ত করা হইয়াছে! তাহারা-ই সুখী, যাহারা প্রকৃত বিজ্ঞতা ও ধীশক্তি সম্পন্ন, যাহারা দর্শন করে ও উপলব্ধি করে, যাহারা পাঠ করে ও হৃদয়ঙ্গম করে এবং যাহারা উহা পালন করে যাহা ঈশ্বর অতীতের গ্রন্থসমূহে এবং এই অতুলনীয় ও বিস্ময়কর ফলকলিপিতে অবতীর্ণ করিয়াছেন।
107ফলকলিপিসমূহের একটিতে তিনি, তাঁহার উক্তিসমূহ মহিমান্বিত হউক, প্রকাশ করিয়াছেন: যাকাতের বিষয়ে আমরা অনুরূপভাবে আদেশ প্রদান করিয়াছি তোমরা তাহা অনুসরণ করিবে যাহা কোরআনে অবতীর্ণ হইয়াছে।
Bahá'u'lláh
1
আমার পোশাকের মধুর সুঘ্রাণ আস্বাদন। ¶4
এটি কোরআন ও পুরাতন নিয়মে বর্ণিত ইউসুফের কাহিনীর প্রতি একটি পরোক্ষ উল্লেখ, এতে ইউসুফের ভ্রাতাগণ কর্তৃক তাদের পিতা ইয়াকুবের কাছে আনীত ইউসুফের পোশাক ইয়াকুবকে তাঁর দীর্ঘকাল পূর্বে হারানো পুত্র সনাক্ত করতে সমর্থ করেছিল। সুরভিত “পোশাক”-এর রূপক উপমাটি ঈশ্বরের প্রকাশ ও তাঁর প্রত্যাদেশের স্বীকৃতি উল্লেখের জন্য বাহা’ই লিখনাবলীতে বারংবার ব্যবহৃত হয়েছে।
বাহা’উল্লাহ তাঁর ফলকলিপিসমূহের একটিতে নিজেকে “স্বর্গীয় ইউসুফ” রূপে বর্ণনা করেন যাকে অমনোযোগীদের দ্বারা “অতি নগণ্য মূল্যে” বিনিময় করা হয়েছে। ক্বায়ুমুল আসমায় বা’ব, বাহা’উল্লাহকে “প্রকৃত ইউসুফ” রূপে সনাক্ত করেন এবং সেই কঠোর পরীক্ষাসমূহের ভবিষ্যদ্বাণী করেন যা তিনি তাঁর বিশ্বাসঘাতক ভ্রাতার হাতে ভোগ করবেন (টীকা 190 দ্রষ্টব্য)। অনুরূপভাবে, আব্দুল বাহা’র প্রসিদ্ধি তাঁর বৈমাত্রেয় ভ্রাতা মির্জা মুহাম্মদ আলীর মধ্যে যে তীব্র হিংসা জাগ্রত করেছিল, এবং ঐ মারাত্মক ঈর্ষা “যা ইউসুফের অধিকতর উৎকর্ষ তাঁর ভ্রাতাদের হৃদয়ে প্রজ্বলিত করেছিল” এতদুভয়ের মধ্যে শৌগী এফেন্দী একটি সমান্তরাল রেখা এঁকেছেন।
2শক্তি ও পরাক্রমের অঙ্গুলীসমূহ দ্বারা সর্বোৎকৃষ্ট মদিরার সিলমোহর ভাঙ্গিয়াছি ¶5
কিতাব-ই-আক্বদাস-এ মদ ও অন্যান্য নেশা উদ্রেককর বস্তুসমূহের ব্যবহার নিষিদ্ধ (টীকা 144 টীকা 170 দ্রষ্টব্য)।
“মদিরা” ব্যবহার করার উল্লেখ একটি রূপকার্থক অনুভূতি ¬ যেমন আধ্যাত্মিক পরমানন্দ লাভের কারণ - কেবল বাহা’উল্লাহর প্রত্যাদেশে-ই নয়, বাইবেলে, কোরআনে, এবং প্রাচীন হিন্দু শ্রুতিশাস্ত্রেও দৃষ্ট হয়।
দৃষ্টান্তস্বরূপ, কোরআনে ধার্মিকদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে, তাদেরকে “সর্বোৎকৃষ্ট সিলমোহরযুক্ত মদিরা” পান করতে দেওয়া হবে। বাহা’উল্লাহ তাঁর ফলকলিপিসমূহে “সর্বোৎকৃষ্ট মদিরা”কে তাঁর প্রত্যাদেশের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত করেছেন যার “কস্তুরীযুক্ত সুঘ্রাণ” “সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর” উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি এই “মদিরার সিলমোহর ভাঙ্গিয়াছেন”, তদ্বারা সেই সব আধ্যাত্মিক সত্যসমূহ প্রকাশ করেছেন যেগুলো অদ্যাবধি অজ্ঞাত ছিল এবং যারা এর থেকে আকণ্ঠ পান করে, তাদেরকে “ঐশী একতার আলোর দীপ্তিসমূহ উপলব্ধি করিতে” এবং “ঈশ্বরের ধর্মগ্রন্থসমূহে অন্তর্নিহিত অপরিহার্য উদ্দেশ্য অনুধাবন করিতে” সমর্থ করেছেন।
বাহা’উল্লাহ তাঁর ধ্যানসমূহের একটিতে বিশ্বাসীদের প্রতি “তাঁর করুণার সর্বোৎকৃষ্ট মদিরা” প্রদানের জন্য ঈশ্বরের নিকট সনির্বন্ধ মিনতি করেন, “যেন ইহা তাহাদিগকে তোমা ব্যতীত অপর সকলের প্রতি বিস্মৃতিশীল হইতে, এবং তোমার ধর্মের সেবা করিতে উত্থিত হইতে, এবং তোমার প্রতি তাহাদের প্রেমে অটল রাখিতে পারে।”
আমরা তোমাদের প্রতি শ্লোকসমূহের অবতীর্ণকারী, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দ্বিপ্রহরে ও প্রভাতে এবং সন্ধ্যায় নয় রাকাত বাধ্যতামূলক প্রার্থনা নিবেদনের জন্য আদেশ প্রদান করিয়াছি ।
3আমরা তোমাদের প্রতি......বাধ্যতামূলক প্রার্থনা নিবেদনের জন্যক আদেশ প্রদান করিয়াছি ¶6
আরবী ভাষায় প্রার্থনার জন্য কয়েকটি শব্দ রয়েছে। “সালাত” শব্দটি যা এখানে মূলগ্রন্থে দেখা যায় তা প্রার্থনাসমূহের একটি বিশেষ শ্রেণীকে নির্দেশ করে, যা বিশ্বাসীদেরকে দিনের নির্দিষ্ট সময়গুলোতে আবৃত্তি করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। অন্যান্য প্রকারের প্রার্থনা থেকে এই শ্রেণীকে পৃথক করার জন্য শব্দটিকে “বাধ্যতামূলক প্রার্থনা” রূপে অনুবাদ করা হয়েছে।
বাহা’উল্লাহ বর্ণনা দিয়েছেন যে, “বাধ্যতামূলক প্রার্থনা ও উপবাস ঈশ্বরের দৃষ্টিতে একটি মহিমান্বিত মর্যাদা লাভ করেছে” ( প্রশ্ন ও উত্তর 93)। আব্দুল-বাহা দৃঢ়রূপে ঘোষণা করেন যে, এইরূপ প্রার্থনাসমূহ “বিনম্রতা ও আনুগত্যে, ঈশ্বরের প্রতি কারো মুখমন্ডল স্থাপনে ও তাঁর প্রতি ভক্তি প্রকাশে সহায়ক” এবং এই প্রার্থনাসমূহের মাধ্যমে “মানুষ ঈশ্বরের সাথে কথোপকথন করে, তাঁর নৈকট্য লাভে চেষ্টা করে, তাঁর হৃদয়ের প্রকৃত প্রিয়তমের সাথে কথাবার্তা বলে এবং আধ্যাত্মিক মর্যাদাসমূহ অর্জন করে”।
এই শ্লোকে উল্লেখিত বাধ্যতামূলক প্রার্থনাটি (টীকা 9 দ্রষ্টব্য) বাহা’উল্লাহ কর্তৃক পরবর্তীকালে প্রকাশিত তিনটি প্রার্থনা (প্রশ্ন ও উত্তর 63) দ্বারা রদ করা হয়েছে। এই গ্রন্থে বর্তমানে প্রচলিত তিনটি প্রার্থনার মূলপাঠসমূহ, এইগুলোর আবৃত্তি সংক্রান্ত নির্দেশনাবলীসহ, কিতাব-ই-আক্বদাস-এর সম্পূরক কতিপয় রচনাবলীতে পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন ও উত্তরসমূহের কিছুসংখ্যক বিষয়, এই নতুন তিনটি বাধ্যতামূলক প্রার্থনার বিভিন্ন দিক আলোচনা করেছে। বাহা’উল্লাহ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই তিনটি প্রার্থনার মধ্যে যে কোন একটি একজন লোক বেছে নিতে অনুমতিপ্রাপ্ত (প্রশ্ন ও উত্তর 65)। অন্যান্য অনুবিধিসমূহ প্রশ্ন-উত্তরসমূহের প্রশ্ন-উত্তর 66, প্রশ্ন-উত্তর 67, প্রশ্ন-উত্তর 81, এবং প্রশ্ন-উত্তর 82 নম্বরে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন দিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতার ওঠ.অ. 1-17 অধ্যায়ে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে।
4নয় রাকাত ¶6
একটি রাকাত হচ্ছে, উপাসনাকালে জানু দ্বারা ভূমি স্পর্শ করা ও একপ্রস্ত নির্দিষ্ট বিচলনের সাথে সুনির্দিষ্টভাবে অবতীর্ণ শ্লোকসমূহের আবৃত্তি।
বাহা’উল্লাহ কর্তৃক তাঁর অনুসারীদের প্রতি আদিষ্ট বাধ্যতামূলক প্রার্থনা মূলতঃ নয় রাকাত নিয়ে গঠিত ছিল। এই প্রার্থনাটির যথার্থ প্রকৃতি এবং ইহার আবৃত্তির নির্দিষ্ট নির্দেশনাসমূহ অজ্ঞাত, কারণ প্রার্থনাটি হারিয়ে যায়। (টীকা 9 দ্রষ্টব্য)
বর্তমানে অবশ্যপালনীয় বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সম্বন্ধে মন্তব্যকারী একটি ফলকলিপিতে আব্দুল-বাহা প্রকাশ করেন যে, “বাধ্যতামূলক প্রার্থনাটির প্রতিটি শব্দে ও বিচলনে পরোক্ষ উল্লেখসমূহ, রহস্যাবলী ও একটি বিজ্ঞতা রয়েছে, যা মানুষ হৃদয়ঙ্গম করতে অক্ষম, লিপিসমূহ ও পত্রাবলীও তা ধারণ করতে পারে না।”
শৌগী এফেন্দী ব্যাখ্যা করেন যে, বাহা’উল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত নির্দিষ্ট প্রার্থনাসমূহের আবৃত্তির জন্য অল্প কিছু সহজ নির্দেশনাসমূহের যে কেবল একটি আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে তাই নয়, বরং এগুলো ব্যক্তিকে “প্রার্থনা ও ধ্যানকালীন সম্পূর্ণরূপে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে” সাহায্য করে।
5দ্বি-প্রহরে ও প্রভাতে এবং সন্ধ্যায় ¶6
“প্রভাত”, “দ্বিপ্রহর” ও “সন্ধ্যা” শব্দগুলির সংজ্ঞা সম্বন্ধে, যে সময়গুলিতে বর্তমানে অবশ্যপালনীয় মধ্যম বাধ্যতামূলক প্রার্থনা আবৃত্তি করতে হবে, বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, এইগুলি “সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্তের”(প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 83) সাথে যুগপৎ। তিনি বিশদভাবে বর্ণনা করেন যে, “বাধ্যতামূলক প্রার্থনাগুলির আবৃত্তির অনুমোদনযোগ্য সময়গুলি হচ্ছে প্রভাত থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত, মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, এবং সূর্যাস্ত থেকে দুই ঘণ্টা পর পর্যন্ত”। এ ছাড়াও, আব্দুল-বাহা বিবৃত করেন যে, প্রাভাতিক বাধ্যতামূলক প্রার্থনাটি উষালগ্নের মতো প্রাথমিক সময়ে আবৃত্তি করা যেতে পারে।
6আমরা তোমাদিগকে একটি বৃহত্তর সংখ্যা হইতে অব্যাহতি দিয়াছি ¶6
বা’বী ও ইসলামী ধর্মবিধানে নির্ধারিত বাধ্যতামূলক প্রার্থনার সম্পাদন,
কিতাব-ই-আক্বদাস-এ নির্দিষ্ট করে দেওয়া নয় রাকাত বিশিষ্ট বাধ্যতামূলক প্রার্থনার সম্পাদন অপেক্ষা অধিকতর কঠিন ছিল। (টীকা 4 দ্রষ্টব্য)
বায়ান-এ বা’ব ঊনিশ রাকাতবিশিষ্ট একটি বাধ্যতামূলক প্রার্থনার বিধান দেন যা একদিনের মধ্যাহ্ন থেকে পরবর্তী মধ্যাহ্ন পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একবার সম্পাদন করতে হতো।
মুসলিম প্রার্থনা এক দিনে পাঁচ বার আবৃত্তি করা হয়, যেমন, অতি-প্রত্যুষে, মধ্যাহ্নে, অপরাহ্ণে, এবং সন্ধ্যায়, এবং রাত্রে। আবৃত্তির সময়ানুসারে রাকাতের সংখ্যা বিভিন্ন হয়ে থাকে। এক দিনে মোট সতের রাকাত প্রার্থনা করা হয়।
7যখন তোমরা এই প্রার্থনা সম্পাদন করিতে ইচ্ছা করিবে, তখন তোমরা আমার পরম পবিত্র উপস্থিতির প্রাঙ্গণের দিকে মুখ ফিরাইবে, এই পবিত্র স্থান যাহাকে ঈশ্বর ........অমরত্বের নগরসমূহের অধিবাসীদের উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু হইবার জন্য আদেশ করিয়াছেন ¶6
“উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু”টি সেই স্থান, যার প্রতি একজন উপাসক বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সম্পাদনকালে মুখ ফিরাবে, যাকে কিব্লাহ্ বলা হয়। কিব্লাহ্-র ধারণা পূর্বেকার ধর্মসমূহে বিদ্যমান ছিল। এই উদ্দেশ্যের জন্য অতীতে জেরুজালেমকে নির্ধারণ করা হয়েছিল। মুহম্মদ উক্ত কিব্লাহ্ মক্কার দিকে পরিবর্তন করেন।
আরবী ভাষার বায়ান-এ বা’ব-এর নির্দেশ ছিল:
“প্রকৃতপক্ষে তিনিই কিব্লাহ্ যাহাকে ঈশ্বর প্রকাশ করিবেন, যখনই তিনি স্থানান্তরিত হইবেন, ইহা স্থানান্তরিত হইবে, যতক্ষণ না তিনি স্থির হইবেন।’’
বাহা’উল্লাহ কর্তৃক এই রচনাংশটি কিতাব-ই-আক্বদাস-এ উদ্ধৃত হয়েছে (টীকা 137) এবং উপরে উল্লেখিত শ্লোকটি অনুমোদিত হয়েছে। তিনি অধিকন্তু প্রকাশ করেছেন যে, “বাধ্যতামূলক প্রার্থনা আবৃত্তিকালীন কিব্লাহ্মুখী হওয়া একটি অপরিহার্য শর্ত” (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 14 ও প্রশ্ন-উত্তর 67)। কিন্তু অন্যান্য প্রার্থনা ও উপাসনার জন্য কোন লোক যে কোন দিকে মুখ ফেরাতে পারে।
8যখন সত্য ও উচ্চারণের সূর্য অস্তমিত হইবে, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ঐ স্থানের দিকে ফিরাইবে যাহা আমরা তোমাদের জন্য আদেশ করিয়াছি ¶6
বাহা’উল্লাহ্, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বিশ্রামস্থলকে কিব্লাহ্ রূপে আদেশ করেছেন। পরম পবিত্র সমাধিটি আক্কার বাহ্জীতে অবস্থিত। আব্দুল-বাহা ঐ স্থানকে “উজ্জ্বল সমাধি” রূপে, “যে স্থানে চতুর্দিকে ঊর্ধ্বস্থিত জনতা প্রদক্ষিণ করে” রূপে বর্ণনা করেছেন ।
তাঁর পক্ষ থেকে লেখা একটি পত্রে শৌগী এফেন্দী কিব্লাহ্র দিকে মুখ ফেরানোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার জন্য সূর্যের দিকে উদ্ভিদের মুখ ফিরানোর উপমা দিয়েছেন:
.... ঠিক উদ্ভিদ যেরূপ সূর্যালোকের দিকে প্রসারিত হয় - তা থেকে ইহা জীবন ও ক্রমবিকাশ লাভ করে - তদ্রƒপ যখন আমরা প্রার্থনা করি আমাদের হৃদয়সমূহকে আমরা ঈশ্বরের প্রকাশ, বাহা’উল্লাহর দিকে ফিরাই; ... আভ্যন্তরিক ক্রিয়ার একটি নিদর্শনস্বরূপ আমরা আমাদের মুখমন্ডল সেই স্থানের দিকে ফিরাই, যেখানে এই পৃথিবীতে তাঁর ধূলি বিদ্যমান রয়েছে।
9আমরা অন্য একটি ফলকলিপিতে বাধ্যতামূলক প্রার্থনার বিশদ বর্ণনা প্রদান করিয়াছি ¶8
“বিজ্ঞতাবশতঃ” বাহা’উল্লাহ কর্তৃক একটি পৃথক ফলকলিপিতে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 63) মূল বাধ্যতামূলক প্রার্থনাটি প্রকাশিত হয়েছিল। এটি তাঁর জীবদ্দশায় বিশ্বাসীদের প্রতি দেওয়া হয়নি যা বর্তমানে প্রচলিত তিনটি বাধ্যতামূলক প্রার্থনার দ্বারা রদ করা হয়েছিল।
বাহা’উল্লাহর স্বর্গারোহণের পর পরই এই প্রার্থনাটির মূলপাঠ, কিছুসংখ্যক অন্যান্য ফলকলিপিসহ, তাঁর চুক্তিপত্রের প্রধান ভঙ্গকারী, মুহম্মদ আলী কর্তৃক চুরি হয়েছিল।
10মৃতদের জন্য প্রার্থনা ¶8
মৃতদের জন্য প্রার্থনাটিই (দ্রষ্টব্যঃ কিতাব-ই-আক্বদাস-এর সম্পূরক কতিপয় পবিত্র রচনাবলী) একমাত্র বাহা’ই বাধ্যতামূলক প্রার্থনা যা সংঘবদ্ধভাবে আবৃত্তি করতে হবে; উপস্থিত সবাই নীরবে দাঁড়ানো অবস্থায় একজন বিশ্বাসীকে এটি আবৃত্তি করতে হবে (টীকা 19 দ্রষ্টব্য)। বাহা’উল্লাহ স্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করেছেন যে, মৃতদের জন্য প্রার্থনাটি প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য (প্রশ্ন-উত্তর 70), এবং মৃত ব্যক্তিটিকে সমাধিস্থ করার পূর্বে আবৃত্তি করতে হবে, এবং এ ক্ষেত্রে কিব্লাহ্মুখী হওয়ার প্রয়োজন নেই (প্রশ্ন-উত্তর 85)।
মৃতদের জন্য প্রার্থনা বিষয়ক অধিক বর্ণনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতা, ভাগ চার. ক. 13-14-তে সংক্ষিপ্ত আকারে দেওয়া হয়েছে।
11শ্লোকসমূহের অবতীর্ণকারী, ঈশ্বর কর্তৃক নির্দিষ্ট ছয়টি অনুচ্ছেদ অবতীর্ণ করা হইয়াছে ¶8
যে অনুচ্ছেদগুলি মৃতদের জন্য প্রার্থনার অংশ গঠন করে ছয় বার অভিনন্দন জ্ঞাপক “আল্লাহু-আব্হা” (ঈশ্বর সর্বগৌরবময়) উক্তির আবৃত্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রতিবারের পর সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশিত ছয়টি শ্লোকের মধ্যে একটি আবৃত্তি করতে হবে। এই শ্লোকগুলি বায়ান-এ বা’ব কর্তৃক মৃতদের জন্য প্রকাশিত প্রার্থনার শ্লোকগুলির অনুরূপ। বাহা’উল্লাহ এই অনুচ্ছেদগুলির পূর্বে একটি বিনীত প্রার্থনা যুক্ত করেছেন।
12চুল তোমাদের প্রার্থনাকে অসিদ্ধ করে না, অথবা যাহা হইতে আত্মা বিচ্ছিন্ন হইয়াছে, যেমন অস্থিসমূহ এবং অনুরূপ কোন কিছু। তোমরা নকুল জাতীয় জন্তু যেমন বীবর, কাঠবিড়ালী এবং অন্যান্য প্রাণীর পশমের পোশাক পরিধান করিতে স্বাধীন ¶9
পূর্বের কোন কোন ধর্মবিধানে নির্দিষ্ট প্রাণীসমূহের পশম পরিধানকরণ, অথবা নির্দিষ্ট অন্যান্য বস্তু কারো দেহে ধারণ করা তাঁর প্রার্থনাকে অসিদ্ধ করে বলে গণ্য করা হতো। এখানে বাহা’উল্লাহ আরবী বায়ান গ্রন্থে বা’ব-এর ঘোষণাকে অনুমোদন করেছেন যে এইরূপ বস্তুসমূহ কারো প্রার্থনা অসিদ্ধ করে না।
13আমরা তোমাদের বয়ঃপ্রাপ্তির শুরু হইতেই প্রার্থনা ও উপবাস ব্রত পালনের জন্য আদেশ দিয়াছি ¶10
বাহা’উল্লাহ “ধর্মীয় কর্তব্য পালনে পূর্ণ বয়স প্রাপ্তি সম্বন্ধে” “নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পূর্ণ বয়স হইতেছে পনেরো” নির্ধারণ করেছেন (প্রশ্ন-উত্তর 20)। উপবাসের কালের বি¯তৃত বিবরণের জন্য টীকা 25 দ্রষ্টব্য।
14। তিনি ... ইহা হইতে তাহাদিগকে অব্যাহতি দিয়াছেন যাহারা অসুস্থতা অথবা বার্ধক্যের কারণে দুর্বল ¶10
যারা অসুস্থতা অথবা বার্ধক্যের কারণে দুর্বল তাদের বাধ্যতামূলক প্রার্থনা সম্পাদন ও উপবাস ব্রত পালন করা থেকে অব্যাহতি দান সম্বন্ধে প্রশ্ন ও উত্তরসমূহে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বাহা’উল্লাহ নির্দেশ দেন ‘‘শারীরিক অসুস্থতার সময় এই অবশ্যকরণীয় বিধানগুলির পালন অনুমোদনীয় নহে” (প্রশ্ন-উত্তর 93)। এই সম্বন্ধে তিনি সত্তর বৎসর বয়সকে বার্ধক্যরূপে সংজ্ঞা দিয়েছেন (প্রশ্ন ও উত্তর 74)। একটি প্রশ্নের জবাবে শৌগী এফেন্দী স্পষ্ট করেছেন যে, লোকেরা যারা 70 বৎসর বয়স প্রাপ্ত হয় তারা অব্যাহতিপ্রাপ্ত, তারা দুর্বল হোক বা না-হোক।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতায় তালিকাভুক্ত অন্যান্য নির্দিষ্ট শ্রেণীর লোকদেরকেও উপবাস থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে (চার. খ.5)। অতিরিক্ত আলোচনার জন্য টীকা 20, টীকা 30 এবং 31 টীকা দ্রষ্টব্য।
15ঈশ্বর তোমাদের পরিষ্কার-পরিছন্ন যে কোন কিছুর উপর প্রণতিপাতের অনুমতি প্রদান করিয়াছেন, কারণ, এই স¤পর্কে ধর্মগ্রন্থে যে সীমা প্রদান করা হইয়াছিল, তাহা আমরা অপসারণ করিয়াছি ¶10
পূর্ববর্তী ধর্মবিধানসমূহে প্রার্থনাসমূহের প্রয়োজনসমূহের মধ্যে প্রায়ই প্রণতিপাত যুক্ত হতো। আরবী বায়ান-এ বা’ব বিশ্বাসীদেরকে প্রণতিপাত কালে স্ফটিকের উপরিভাগে তাদের ললাট স্থাপন করতে আহ্বান করেছিলেন। একইভাবে, ইসলাম ধর্মে যে সকল বস্তুর উপরিভাগে প্রণতিপাত করার জন্য মুসলিমগণ অনুমতিপ্রাপ্ত সেগুলো সম্বন্ধে কিছু নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। বাহা’উল্লাহ এইরূপ সীমাবদ্ধতাগুলি রদ করেন, এবং কেবল তদস্থলে “পরিষ্কার যে কোন কিছুর উপরিভাগ” নির্দিষ্ট করেন।
16অভিসিঞ্চনের জন্য কেহ জল না পাইলে সে পাঁচবার “পরমপবিত্র, পরমপবিত্র ঈশ্বরের নামে’’ এই বাক্যসমূহ পুনরাবৃত্তি করিবে এবং তাঁহার উপাসনা শুরু করিবে ¶10
বাধ্যতামূলক প্রার্থনার প্রস্তুতিতে বিশ্বাসীদের অভিসিঞ্চন করতে হবে। এগুলো হস্তদ্বয় ও মুখমন্ডল ধৌতকরণের অন্তর্ভুক্ত। যদি জল না পাওয়া যায়, তাহলে সুনির্দিষ্টভাবে অবতীর্ণ শ্লোকের পাঁচবার আবৃত্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। অভিসিঞ্চনের সাধারণ আলোচনার জন্য টীকা 34 দ্রষ্টব্য।
জল পাওয়া না গেলে পূর্ববর্তী ধর্মবিধানসমূহের অনুসৃত বিকল্প নিয়মাবলী কোরআন ও আরবী বায়ানে দেখতে পাওয়া যায়।
17যেই সকল অঞ্চলে দিবস ও রাত্রিসমূহ দীর্ঘ হয়, সেইখানে ঘড়ি ও অনুরূপ যন্ত্রাদি, যাহা সময়ের অতিক্রমকে চিহ্নিত করে তদ্বারা প্রার্থনার সময় নির্ধারিত হইবে ¶10
এই জনপদ উত্তর অথবা দক্ষিণের শেষ সীমায় অবস্থিত অঞ্চলসমূহকে নির্দেশ করছে, যেখানে দিনগুলির ও রাতগুলির স্থিতিকাল লক্ষণীয়ভাবে পার্থক্যপূর্ণ হয় (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 64 ও প্রশ্ন-উত্তর 103)।
এই অনুবিধি উপবাসের প্রতিও প্রযোজ্য হয়।
18আমরা তোমাদিগকে লক্ষণসমূহের জন্য প্রার্থনার প্রয়োজনীয়তা হইতে অব্যাহতি দিয়াছি ¶11
লক্ষণসমূহে প্রার্থনা মুসলিম বাধ্যতামূলক প্রার্থনার একটি বিশেষ আকার, যা প্রাকৃতিক ঘটনাবলী সংঘটনের সময় পড়ার জন্য নিরূপিত ছিল। এগুলো হচ্ছে ভূমিকম্প, চন্দ্র-সূর্যাদির গ্রহণ, এবং অন্যান্য যেগুলি ভীতির উদ্রেক করতে পারে এবং ঈশ্বরের লক্ষণাদি বা কার্যাবলীরূপে গণ্য হয়। এই প্রার্থনা সম্পাদনের প্রয়োজন রহিত করা হয়েছে। তদস্থলে একজন বাহা’ই আবৃত্তি করতে পারে “আধিপত্য ঈশ্বরের, যিনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যের পরম প্রভু, সৃজনকুলের পরম প্রভু।’’ তবে এটা বাধ্যতামূলক নয় (প্রশ্ন-উত্তর 52)।
19মৃতদের জন্য প্রার্থনা ব্যতীত, সংঘবদ্ধ প্রার্থনার রীতি রহিত করা হইয়াছে ¶12
সংঘবদ্ধ প্রার্থনা আনুষ্ঠানিক অর্থে বাধ্যতামূলক প্রার্থনার, যা একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় আচার অনুসারে আবৃত্তি করতে হবে, যেমন, দৃষ্টান্তস্বরূপ, ইসলাম ধর্মের রীতি অনুসারে শুক্রবারের প্রার্থনা মসজিদে একজন ইমাম দ্বারা পরিচালিত হয়, বাহা’ই ধর্মবিধানে রদ করা হয়েছে। বাহা’ই আইনে মৃতদের জন্য প্রার্থনাটি-ই একমাত্র সংঘবদ্ধ প্রার্থনা (টীকা 10 দ্রষ্টব্য)। উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে একজন এটি আবৃত্তি করবে, অংশগ্রহণকারীদের অন্যান্য সবাই নীরবে দাঁড়িয়ে থাকবে ; আবৃত্তিকারীর বিশেষ কোন মর্যাদা নেই। সমবেত লোকদের কিব্লাহ্মুখী হওয়ার প্রয়োজন নেই (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 85)।
তিনটি দৈনিক বাধ্যতামূলক প্রার্থনা একাকী আবৃত্তি করতে হবে, সংঘবদ্ধভাবে নয়।
অন্য অনেক বাহা’ই প্রার্থনার আবৃত্তির জন্য কোন নির্দিষ্ট করে দেওয়া পদ্ধতি নেই, এবং এইরূপ অ-বাধ্যতামূলক প্রার্থনাসমূহ সমাবেশগুলিতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তাদের ইচ্ছানুযায়ী আবৃত্তি করতে সবাই স্বাধীন। এ বিষয়ে শৌগী এফেন্দী বিবৃত করেন যে:
.... যদিও বন্ধুদের নিজেদের ইচ্ছা অনুসরণ করার জন্য এইভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে .... তবুও তাদেরকে অত্যধিক যতœশীল হতে হবে যেন তারা যে কোন পদ্ধতির অনুশীলন করুক না কেন, তা যেন অত্যধিক কঠোর একটি বৈশিষ্ট্য লাভ না করে, এবং এইভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের রূপ ধারণ না করে। এটি একটি বিষয় যা বন্ধুদেরকে সর্বদাই মনে রাখতে হবে, যেন তারা শিক্ষাবলীর সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিত পথ থেকে বিপথগামী না হয়।
20ঈশ্বর ঋতুমতী নারীদের বাধ্যতামূলক প্রার্থনা ও উপবাস ব্রত পালন হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন ¶13
বাধ্যতামূলক প্রার্থনা ও উপবাস থেকে সেই সব নারীদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে যাদের ঋতুস্রাব হচ্ছে; প্রার্থনা ও উপবাসের পরিবর্তে তারা অভিসিঞ্চন করবে (টীকা 34 দ্রষ্টব্য) এবং এক মধ্যাহ্ন থেকে ও পরবর্তী মধ্যাহ্নের মধ্যে দৈনিক 95 বার “প্রভা ও সুষমার পরম প্রভু - ঈশ্বর মহিমান্বিত হউন’’ - শ্লোকটি আবৃত্তি করবে। আরবী বায়ান-এ এই অনুবিধির দৃষ্টান্ত আছে - যেখানে অনুরূপ বিধান দেওয়া হয়েছিল।
পূর্ববর্তী কতিপয় ধর্মীয় বিধানসমূহে, ঋতুমতী নারীদের প্রথাগতভাবে অপবিত্র বিবেচনা করা হতো এবং প্রার্থনা ও উপবাস ব্রত পালন করা নিষিদ্ধ ছিল। বাহা’উল্লাহ কর্তৃক উক্ত প্রথাগত অপবিত্রতার ধারণা রহিত করা হয়েছে (টীকা 106 দ্রষ্টব্য)।
সার্বজনীন বিচারালয় ব্যাখ্যা করছেন যে, নির্দিষ্ট কর্তব্যসমূহ ও দায়িত্বসমূহ থেকে অব্যাহতি দানকারী কিতাব-ই-আক্বদাস-এ প্রকাশিত অনুবিধি হচ্ছে, কথাটির অভিব্যক্তি মতে, অব্যাহতি এবং নিষিদ্ধ নয়। এমতাবস্থায় যে কোন বিশ্বাসী একটি প্রযোজ্য অব্যাহতির সুযোগ গ্রহণ করার ব্যাপারে স্বাধীন, যদি সে, পুরুষ বা নারী, ঐরূপ ইচ্ছা করে। তবে বিচারালয় উপদেশ দিচ্ছেন যে, এই অব্যাহতি গ্রহণ করা বা না করা স্থির করার ক্ষেত্রে বিশ্বাসীকে বিজ্ঞতা প্রয়োগ করতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে যে, বাহা’উল্লাহ উপযুক্ত কারণে এই অব্যাহতিসমূহ অনুমোদন করেছেন।
বাধ্যতামূলক প্রার্থনা থেকে এই নির্দিষ্ট অব্যাহতি মূলতঃ নয় রাকাত বিশিষ্ট বাধ্যতামূলক প্রার্থনার জন্য দেওয়া হয়েছিল। এখন যে তিনটি বাধ্যতামূলক প্রার্থনা তার স্থান নিয়েছে, তার জন্যও প্রযোজ্য।
21ভ্রমণকালীন তোমরা কোন নিরাপদ স্থানে পৌঁছাইলে এবং বিশ্রাম গ্রহণ করিলে প্রত্যেক অস¤পাদিত বাধ্যতামূলক প্রার্থনার পরিবর্তে নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে - একটি মাত্র প্রণতিপাত করিবে ¶14
বাধ্যতামূলক প্রার্থনা থেকে অব্যাহতি তাদেরকে দেওয়া হয়েছে, যারা নিজেদেরকে এমন এক নিরাপত্তাহীন অবস্থায় দেখতে পায় যে বাধ্যতামূলক প্রার্থনাসমূহের সম্পাদন সম্ভব নয়। একজন লোক ভ্রমণরত হোক বা গৃহে অবস্থান করুক এই অব্যাহতি উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং এই অব্যাহতি একটি উপায় প্রদান করে যদ্বারা এইসব অ-নিরাপদ অবস্থার কারণে বাদপড়া বাধ্যতামূলক প্রার্থনাসমূহের ক্ষতিপূরণ করা যেতে পারে।
বাহা’উল্লাহ এই বিষয়টিকে পরিষ্কার করেছেন যে, “ভ্রমণকালে বাধ্যতামূলক প্রার্থনা স্থগিত নয়” যদি কেউ একটি “নিরাপদ স্থান” খুঁজে পায় যেখানে সে এটা সম্পাদন করতে পারে (প্রশ্ন ও উত্তর 58)।
প্রশ্ন ও উত্তরসমূহে প্রশ্ন-উত্তর 21, প্রশ্ন-উত্তর 58, প্রশ্ন-উত্তর 59, প্রশ্ন-উত্তর 60 এবং প্রশ্ন-উত্তর 61 নম্বর এই বিধানের বিশদ ব্যাখ্যা করছে।
22তোমাদের প্রণতিপাতসমূহ সমাপনের পর - নারী-পুরুষ নির্বিশেষে - তোমরা পদযুগল আড়াআড়ি করিয়া উপবিষ্ট হও ¶14
আরবী অভিব্যক্তি “হায়কলুৎ তওহীদ”, এখানে “পা আড়াআড়ি” রূপে অনূদিত, “ঐক্যের আসনে”র অর্থ প্রকাশ করছে। ঐতিহ্যগতভাবে ইহা পা আড়াআড়ি অবস্থানের অর্থ বুঝিয়েছে।
23বলঃ ঈশ্বর আমার নিহিত প্রেমকে ধনাগারের চাবিস্বরূপ করিয়াছেন ¶15
ঈশ্বর ও তাঁর সৃষ্টি সম্বন্ধে ইসলামের একটি সুবিদিত হাদিস রয়েছে ঃ
আমি একটি গুপ্তধন ছিলাম। আমি প্রকাশিত হইতে ইচ্ছা করিলাম এবং অতএব আমি বিশ্বব্রহ্মা- সৃষ্টি করিলাম যাহাতে আমি পরিচিত হইতে পারি।
এই হাদিসের প্রসঙ্গ ও পরোক্ষ উল্লেখসমূহ বাহা’ই লিখনাবলীর সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, তাঁর প্রার্থনাসমূহের একটিতে বাহা’উল্লাহ প্রকাশ করেছেন:
তোমার নাম উচ্চপ্রশংসিত হউক, হে পরম প্রভু আমার ঈশ্বর! আমি সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি যে, তোমার স্মরণাতীত সত্তার মধ্যে তুমি একটি আবৃত গুপ্তধন ছিলে এবং তোমার নিজের অস্তিত্বের মধ্যে সুরক্ষিত একটি দুর্ভেদ্য রহস্য ছিল। নিজেকে প্রকাশ করিবার ইচ্ছায় তুমি বৃহত্তর ও ক্ষুদ্রতর জগৎসমূহ সৃষ্টি করিয়াছিলে, এবং তোমার সমস্ত সৃষ্ট জীবকুলের উপর মানুষকে মনোনীত করিয়াছিলে, এবং তাহাকে এই উভয় জগতের একটি নিদর্শন করিয়াছিলে, হে তুমি, যিনি, আমাদের পরম প্রভু, পরম করুণাময় ।
তোমার সৃষ্টির সমস্ত লোকের সম্মুখে তোমার সিংহাসন অধিকার করিবার জন্য তুমি তাহাকে ঊর্ধ্বে উত্তোলন করিয়াছিলে। তোমার রহস্যাবলী প্রকাশ করিতে, এবং তোমার অনুপ্রেরণা ও তোমার প্রত্যাদেশের আলোকসমূহ দ্বারা উজ্জ্বল হইতে, এবং তোমার নামাবলী ও তোমার গুণাবলী প্রকাশ করিতে তুমি তাহাকে সমর্থ করিয়াছিলে। তাহার মাধ্যমে তুমি তোমার সৃষ্টির গ্রন্থের প্রস্তাবনা সজ্জিত করিয়াছিলে, হে তুমি যিনি বিশ্বব্রহ্মা-ের শাসনকর্তা যাহা তুমি গঠন করিয়াছ। (প্রেয়ারস্ এন্ড মেডিটেশনস্ বাহা’উল্লাহ্, ঢঢঢঠওওও)
অনুরূপভাবে, নিহিত বাক্যাবলীতে তিনি বিবৃত করেনঃ
হে মানব সন্তান! তোমার সৃষ্টি আমার প্রিয় ছিল। সুতরাং আমি তোমাকে সৃষ্টি করিলাম। অতএব, তুমি আমাকে ভালবাস, যেন আমি তোমাকে স্মরণ করিতে; এবং তোমাকে আধ্যাত্মিক জীবনে সুনিশ্চিত করিতে পারি।
আব্দুল-বাহা উপরোল্লেখিত হাদিসটি সম্বন্ধে তাঁর ভাষ্যে লিখেছেন:
হে প্রিয়তমের পথের পথিক! জানিয়া রাখ যে, এই পবিত্র হাদিসের প্রধান উদ্দেশ্য হইতেছে সত্যের মূর্তপ্রতীকগণের মধ্যে, যাঁহারা তাঁহার সর্বগৌরবময় সত্তার উদয়স্থল, ঈশ্বরের গোপনীয়তা ও প্রকাশের পর্যায়গুলির উল্লেখ করা। দৃষ্টান্তস্বরূপ, অবিনশ্বর অগ্নির শিখাটি প্রজ্বলিত ও প্রকাশিত হইবার পূর্বে, ইহা সার্বজনীন প্রকাশগণের মধ্যে নিহিত একত্বে নিজ দ্বারাই নিজের মধ্যেই অস্তিত্ববান ছিল এবং ইহাই ‘গুপ্তধন’-এর পর্যায়। এবং যখন আশীষপূতঃ বৃক্ষটি নিজ দ্বারা নিজের মধ্যেই প্রজ্বলিত হয় এবং স্বর্গীয় অগ্নি ইহার সত্তা দ্বারা ইহার সত্তার মধ্যে প্রজ্বলিত হয়, তখন ইহাই ‘আমি প্রকাশিত হইতে ইচ্ছা করিয়াছিলাম’-এর পর্যায়। এবং যখন ইহা বিশ্বব্রহ্মা-ের দিগন্তের উপর হইতে অসীম স্বর্গীয় নামাবলী ও গুণাবলী সহকারে দৈব ও স্থানহীন জগৎসমূহের উপর কিরণ বর্ষণ করে, তখন ইহা একটি নতুন ও বিস্ময়কর সৃষ্টির উদ্ভব ঘটায় যে সৃষ্টি ‘আমি বিশ্বব্রহ্মা- সৃষ্টি করিলাম’-এর পর্যায়ের অনুরূপ হয়। এবং যখন পবিত্রীকৃত আত্মাসমূহ সমস্ত পার্থিব আসক্তিসমূহ ও জাগতিক অবস্থাসমূহের পর্দাগুলি বিদীর্ণ করে, এবং স্বর্গীয় উপস্থিতির সুষমার উপর স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করিবার সোপানের প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়, এবং ঐশী প্রকাশকে স্বীকৃতির দ্বারা সম্মানিত হয় এবং তাহাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের পরম মহান নিদর্শনের দীপ্তি স্বচক্ষে দর্শন করিতে সক্ষম হয়, তখন সৃষ্টির উদ্দেশ্য, যাহা তাঁহারই জ্ঞান, যিনি চিরন্তন সত্য, প্রকাশিত হয়।
24হে সর্বোচ্চের লেখনী ¶16
“সর্বোচ্চের লেখনী” “সর্বোচ্চ লেখনী” এবং “পরম মহিমান্বিত লেখনী” ঈশ্বরের বাক্যের প্রকাশকারীরূপে তাঁর দায়িত্বের উদাহরণস্বরূপ বাহা’উল্লাহর প্রতি নির্দেশ করে ।
25আমরা তোমাদের উপর একটি সংক্ষিপ্ত কালব্যাপী উপবাস ব্রত পালনের আদেশ প্রদান করিয়াছি ¶16
উপবাস ও বাধ্যতামূলক প্রার্থনা দুইটি স্তম্ভ গঠন করে, যা ঈশ্বরের প্রকাশিত আইনকে পরিপুষ্ট করে। বাহা’উল্লাহ তাঁর একটি ফলকলিপিতে দৃঢ়রূপে বলেছেন যে, তিনি বাধ্যতামূলক প্রার্থনা ও উপবাসের আইনসমূহ প্রকাশ করেছেন যাতে এগুলির মাধ্যমে বিশ্বাসীগণ ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করতে পারে।
শৌগী এফেন্দী প্রকাশ করেছেন যে, উপবাস কাল, যা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে পূর্ণ নিবৃত্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে, তা হচ্ছে
....ধ্যানের ও প্রার্থনার, আত্মিক শক্তি পুনরুদ্ধারের অপরিহার্যরূপে একটি সময়-বিভাগ, যে সময়ে বিশ্বাসী তার আভ্যন্তরিক জীবনে অত্যাবশ্যক পুনঃসমন্বয় সাধন করতে, এবং তার আত্মার মধ্যে সুপ্ত আধ্যাত্মিক শক্তিসমূহকে সতেজ ও বলশালী করার জন্য অবশ্য কঠোর চেষ্টা করবে। অতএব, ইহার তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য, মৌলিকভাবে আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ। উপবাস হচ্ছে প্রতীক, এবং স্বার্থপরতা ও কামলালসা থেকে সংযমের একটি স্মারক।
15 বৎসর বয়ঃপ্রাপ্ত হলে এবং 70 বৎসর বয়সে পৌঁছানো পর্যন্ত সমস্ত বিশ্বাসীদেরকে উপবাস পালন করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
উপবাসের ও নির্দিষ্ট শ্রেণীর লোকদেরকে প্রদত্ত অব্যাহতি সংক্রান্ত আইনের বিস্তারিত শর্তাবলীর একটি সারাংশ সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বিভাগ 4. খ. 1-6; উপবাস থেকে অব্যাহতি সম্বন্ধে আলোচনার জন্য টীকা 14, টীকা 20, টীকা 30 ও টীকা 31 দ্রষ্টব্য।
উপবাসের 19 দিন সময়কাল বাহা’ই আ’লা মাসের সমকালীন হয় সচরাচর 2-20শে মার্চ, মলমাসের দিনগুলির অব্যবহিত পরে শুরু হয় এবং ইহার সমাপ্তিতে (টীকা 27 ও টীকা 147 দ্রষ্টব্য) নওরোজ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
26ইহার সমাপ্তিতে নওরোজকে তোমাদের জন্য একটি উৎসব রূপে নির্দিষ্ট করিয়াছি ¶16
বা’ব একটি নতুন পঞ্জিকা প্রবর্তন করেছিলেন, যা এখন বা’দী বা বাহা’ই পঞ্জিকারূপে পরিচিত। এই পঞ্জিকা অনুসারে, এক দিনের ব্যাপ্তিকাল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত । বায়ানে বা’ব আ’লা মাসকে উপবাসের মাসরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, বিধান দিয়েছিলেন যে নওরোজের দিনটি ঐ ব্যাপ্তিকাল সমাপ্তি দ্বারা চিহ্নিত হবে, এবং নওরোজকে ঈশ্বরের দিনরূপে আখ্যায়িত করেন। বাহা’উল্লাহ বা’দী পঞ্জিকা অনুমোদন করেন যার মধ্যে নওরোজকে একটি উৎসবরূপে আখ্যায়িত করেন।
নওরোজ হচ্ছে নববর্ষের প্রথম দিন। ইহা উত্তর গোলার্ধে মহাবিষুবের সাথে সমকালীন হয়, যা সচরাচর 21শে মার্চ ঘটে। বাহা’উল্লাহ ব্যাখ্যা করেন যে, এই উৎসব দিবসকে উদ্যাপন করতে হবে যে-দিনই সূর্য মেষ রাশির নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে (অর্থাৎ মহাবিষুব), তাই সূর্যাস্তের এক মিনিট পূর্বে ঘটলেও (প্রশ্ন ও উত্তর 35)। এই কারণে মহাবিষুবের সময়ের উপর নির্ভর করে নওরোজ 20, 21, অথবা 22শে মার্চে পড়তে পারে।
বাহা’উল্লাহ বহু আইনের পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে স্পষ্ট বর্ণনা পূরণ করার ভার সার্বজনীন বিচারালয়ের উপর ন্যস্ত করেছেন। এইগুলির মধ্যে রয়েছে বাহা’ই পঞ্জিকা সংশ্লিষ্ট কিছুসংখ্যক বিষয়। অভিভাবক বিবৃত করেছেন যে, বিশ্বব্যাপী নওরোজের সময় নির্ধারণ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ কার্যকর করার জন্য পৃথিবীতে একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচনের প্রয়োজন হবে, যা মহাবিষুবের সময় স্থির করার মানরূপে কাজ করবে। তিনি আরও প্রকাশ করেন যে, এই স্থান নির্বাচনের ভার সার্বজনীন বিচারালয়ের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
27মাসগুলির অতিরিক্ত দিনগুলি উপবাস মাসের পূর্বে সন্নিবেশিত করা হউক ¶16
বা’দী পঞ্জিকা 365 দিন, 5 ঘণ্টা, এবং 50 অসম মিনিটের সৌরবর্ষের উপর ভিত্তিশীল। অতিরিক্ত 4 দিন (অধিবর্ষে- 5 দিন) সংযোজনসহ প্রতি 19 দিনের 19 মাস নিয়ে বৎসর গঠিত (অর্থাৎ 361 দিন)। বা’ব নতুন দিনপঞ্জিতে মলমাসের দিনগুলির জন্য নির্দিষ্টরূপে স্থান নির্ধারণ করেননি। কিতাব-ই-আক্বদাস দিনপঞ্জিতে উপবাস মাস “আ’লা”-র অব্যবহিত পূর্বে অতিরিক্ত দিনগুলিকে একটি স্থিরীকৃত অবস্থানে সন্নিবেশ করে আলোচ্য বিষয়টির সমাধান করেছে। আরও বিস্তারিত বিবরণের জন্য, বাহা’ই ওয়ার্ল্ড-ভলিউম ঢঠওওও-এ বাহা’ই পঞ্জিকা বিভাগ দ্রষ্টব্য।
28আমরা আদেশ দিয়াছি যে, ইহারা ..... মধ্যে ‘হা’ বর্ণের প্রকাশস্বরূপ হইবে ¶16
আইয়্যাম-ই-হা (হা-র দিনগুলি) রূপে পরিচিত মলমাসের দিনগুলি “হা” বর্ণের সাথে যুক্ত হওয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আবজাদের গণনায় এই আরবী অক্ষরটির সংখ্যাসূচক মান হচ্ছে পাঁচ, যা মলমাসের দিনগুলির প্রচ্ছন্ন সংখ্যার অনুরূপ।
পবিত্র লিখনাবলীতে “হা” অক্ষরটিকে কতিপয় আধ্যাত্মিক অর্থ দেওয়া হয়েছে, যেগুলির মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরের সত্তার একটি নিদর্শন।
29দান করার এই দিনগুলি যাহা আত্মসংযম কালের পূর্ববর্তী হইয়াছে ¶16
বাহা’উল্লাহ তাঁর অনুসারীদের এই দিনগুলিকে ভোজ দানে, আনন্দিতকরণে ও দাতব্যকাজে নিবেদন করতে আদেশ দিয়েছেন। শৌগী এফেন্দীর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, “মলমাসের দিনগুলিকে অতিথি সৎকার ও উপহারসমূহ প্রদান, ইত্যাদির জন্য বিশেষভাবে আলাদা করে রাখা হয়েছে ”।
30ভ্রমণকারী.....উপবাস ব্রত পালনে বাধ্য নহে ¶16
কোন যাত্রার সর্বনিম্ন স্থায়িত্বকাল, যা উপবাস থেকে বিশ্বাসীকে অব্যাহতি দেয়, তা বাহা’উল্লাহ যথাযথভাবে সীমানির্দেশ করে দিয়েছেন (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 22 ও প্রশ্ন-উত্তর 75)। এই অনুবিধির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতায় দেওয়া হয়েছে, অধ্যায় 4.খ.5.ক-ঝ।
শৌগী এফেন্দী ব্যাখ্যা করেছেন যে, যখন ভ্রমণকারীদের উপবাস থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তখন তারা উপবাস করায় স্বাধীন, যদি তারা ইচ্ছা করে। তিনি আরও প্রকাশ করেছেন যে, অব্যাহতি কোন লোকের ভ্রমণের সম্পূর্ণ সময়ব্যাপী প্রযোজ্য হয়, ঠিক এই সময় না যখন কেউ ট্রেনে অথবা মোটর গাড়ি ইত্যাদিতে অবস্থান করে।
31ভ্রমণকারী, পীড়িত, যাহারা গর্ভবতী বা স্তন্যদুগ্ধদায়িনী, উপবাস ব্রত পালনে বাধ্য নহে; ঈশ্বরের অনুগ্রহের নিদর্শনস্বরূপ তাহাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছে ¶16
উপবাস থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে যারা পীড়িত অথবা বার্ধক্যে উপনীত (টীকা 14 দ্রষ্টব্য), ঋতুমতী (টীকা 20 দ্রষ্টব্য), ভ্রমণকারী (টীকা 30 দ্রষ্টব্য), গর্ভবতী, এবং বুকের দুধ পান করাচ্ছে। এই অব্যাহতি অধিকন্তু সেই সমস্ত লোকদের প্রতি সম্প্রসারিত করা হয়েছে যারা কঠোর পরিশ্রমে লিপ্ত একই সময় তাদেরকে “পরিমিত ভাবে ও নির্জনে খাদ্যগ্রহণ করার মাধ্যমে” “ঈশ্বরের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ও উপবাসের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য” উপদেশ দেওয়া হয়েছে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 76)। শৌগী এফেন্দী নির্দেশ করেছেন যে, যে-ধরনের কাজ উপবাস থেকে লোকদের অব্যাহতি দেবে তা সার্বজনীন বিচারালয় যথাযথভাবে নির্ধারণ করবেন।
32সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার হইতে বিরত থাক ¶17
ইহা উপবাসের ব্যাপ্তিকালের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাঁর ফলকলিপিসমূহের একটিতে, খাদ্য ও পানীয় থেকে নিবৃত্তি উপবাসের অন্তর্ভুক্ত, এই কথা বিবৃত করার পর আব্দুল বাহা আরও প্রকাশ করেন যে, ধূমপান “পান করা”র একটি ধরন। আরবীতে “পান করা” ক্রিয়াপদটি সমানভাবে ধূমপানের প্রতি প্রযোজ্য।
33আদেশ করা হইয়াছে যে, ....ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপনকারী প্রত্যেকে, প্রতিদিন, .....পঁচানব্বই বার “আল্লাহু-আব্হা’’ আবৃত্তি করিবে ¶18
“আল্লা-হু-আব্হা” একটি আরবী বাক্যাংশ। ইহা ঈশ্বরের মহত্তম নামের একটি আকার (টীকা 137 দ্রষ্টব্য)। ইসলাম ধর্মে একটি হাদিস আছে যে, ঈশ্বরের বহু নামের মধ্যে একটি ছিল মহত্তম; কিন্তু এই মহত্তম নামের পরিচিতি নিহিত ছিল। বাহা’উল্লাহ দৃঢ়তা সহকারে প্রতিপন্ন করেছেন যে মহত্তম নামটি হচ্ছে “বাহা”।
“বাহা” শব্দের বহুবিধ প্রত্যয়সিদ্ধ শব্দসমূহও মহত্তম নামরূপে বিবেচিত। শৌগী এফেন্দীর সেক্রেটারী তাঁর পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করেন যে:
মহত্তম নাম হচ্ছে বাহা’উল্লাহর নাম। “ইয়া বাহা’উল-আবহা” হচ্ছে একটি মিনতিপূর্ণ আহ্বান যার অর্থ: “হে তুমি জ্যোতিসমূহের জ্যোতি!” “আল্লা-হু-আব্হা” একটি অভিবাদন, যার অর্থ: “ঈশ্বর সর্বজ্যোতির্ময়”। উভয়-ই বাহা’উল্লাহ্কে নির্দেশ করছে। সর্বোত্তম নাম এই অর্থ প্রকাশ করে যে, বাহা’উল্লাহ ঈশ্বরের মহত্তম নামে আবির্ভূত হয়েছেন, অন্য কথায়, তিনিই ঈশ্বরের সর্বোচ্চ প্রকাশ।
আল্লা-হু-আব্হা অভিবাদনটি আদ্রিয়ানাপোলে বাহা’উল্লাহর নির্বাসন কালে গৃহীত হয়েছিল।
পঁচানব্বই বার “আল্লা-হু-আব্হা” আবৃত্তির পূর্বে অভিসিঞ্চন সম্পাদন করতে হবে। (টীকা 34 দ্রষ্টব্য)
34তোমরা বাধ্যতামূলক প্রার্থনার জন্য অভিসিঞ্চন স¤পাদন কর ¶18
অভিসিঞ্চন নির্দিষ্ট প্রার্থনাসমূহের সাথে বিশেষরূপে যুক্ত। তিনটি বাধ্যতামূলক প্রার্থনা নিবেদনের পূর্বে, দৈনিক 95 বার আল্লাহু-আব্হা আবৃত্তি করার পূর্বে, নারীদের ঋতুমতী হওয়াকালীন বাধ্যতামূলক প্রার্থনা ও উপবাসের বিকল্পস্বরূপ নির্দিষ্ট করে দেওয়া শ্লোকের আবৃত্তির পূর্বে অপরিহার্যভাবে অভিসিঞ্চন করতে হবে (টীকা 20 দ্রষ্টব্য)।
প্রার্থনার প্রস্তুতিকল্পে, হস্তদ্বয় ও মুখমন্ডল ধৌতকরণ নির্দেশিত অভিসিঞ্চন অন্তর্ভুক্ত। মধ্যম বাধ্যতামূলক প্রার্থনার ক্ষেত্রে এই অভিসিঞ্চন নির্দিষ্ট শ্লোকের আবৃত্তি সহযোগে সম্পন্ন হয় (বাহা’উল্লাহ কর্তৃক প্রকাশিত কিতাব-ই-আক্বদাস-এর সম্পূরক কতিপয় লিখনাবলী দ্রষ্টব্য)।
ধৌতাবস্থাকে ছাড়িয়েও যে অভিসিঞ্চনের একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে তা এই বিষয়টি দেখা যেতে পারে যে, একজন লোক ¯œান করে থাকলেও বাধ্যতামূলক প্রার্থনার অব্যবহিত পূর্বেই অভিসিঞ্চন সম্পাদন করার প্রয়োজন হবে (প্রশ্ন ও উত্তর, 18)।
অভিসিঞ্চনের জন্য যখন কোন জল পাওয়া যায় না বা যাবে না, তখন একটি নির্দিষ্ট করে দেওয়া শ্লোক 5 বার আবৃত্তি করতে হবে (টীকা 16 দ্রষ্টব্য), এবং এই বিধান তাদের প্রতি প্রযোজ্য যাদের কাছে জলের ব্যবহার শারীরিকভাবে ক্ষতিকর হবে (প্রশ্ন-উত্তর, 51 দ্রষ্টব্য)।
অভিসিঞ্চন সংক্রান্ত আইনের বিস্তারিত অনুবিধিসমূহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতার অধ্যায়সমূহ যথা 4.ক, 11.ক-ছ, ও প্রশ্ন ও উত্তরে নম্বর প্রশ্ন-উত্তর 51, প্রশ্ন-উত্তর 62, প্রশ্ন-উত্তর 66, প্রশ্ন-উত্তর 77 ও প্রশ্ন-উত্তর 86 তে প্রকাশিত হয়েছে।
35তোমাদিগকে মানবহত্যা ........ লিপ্ত হইতে নিষেধ করা হইয়াছে ¶19
কারো জীবন হরণ করার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কিতাব-ই-আক্বদাস-এর অনুচ্ছেদ 73-এ বাহা’উল্লাহ কর্তৃক বারংবার উল্লেখিত হয়েছে। পূর্ব-পরিকল্পিত খুনের জন্য দেয় জরিমানাসমূহ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে (টীকা 86 দ্রষ্টব্য)। অনিচ্ছাকৃত নরহত্যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তিটির পরিবারে একটি নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ করা অত্যাবশ্যক (কিতাব-ই-আক্বদাস ¶188 দ্রষ্টব্য)।
36ব্যভিচার ¶19
আরবী শব্দ “জিনা”, এখানে “ব্যভিচার” রূপে অনূদিত হয়েছে, অবিবাহিত অবস্থায় যৌন সহবাস ও ব্যভিচার উভয় অর্থই প্রকাশ করে। ইহা শুধুমাত্র একজন বিবাহিত ব্যক্তি ও এমন একজন যে তার স্বামী বা স্ত্রী নয় এইরূপ দুই জনের মধ্যে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এছাড়াও সাধারণভাবে বিবাহ-বন্ধনের বহির্ভূত যৌন সহবাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। “জিনা”র অপর একটি ধরন হচ্ছে ধর্ষণ। যারা অবিবাহিত অবস্থায় যৌন সহবাসের অপরাধ করে শুধুমাত্র তাদের জন্য বাহা’উল্লাহ কর্তৃক শাস্তি ধার্য করা হয়েছে (টীকা 77 দ্রষ্টব্য); অন্যান্য প্রকার যৌন অপরাধের জন্য শাস্তিসমূহ নির্ধারণ করার ভার সার্বজনীন বিচারালয়ের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
37পরনিন্দা বা মিথ্যা অপবাদ ¶19
পরনিন্দা, অপবাদ এবং অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকা বাহা’উল্লাহ কর্তৃক বারংবার নিন্দিত হয়েছে। তাঁর নিহিত বাক্যাবলীতে, তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বিবৃত করেন; ‘‘হে অস্তিত্বের সন্তান! কিরূপে তুমি তোমার নিজের দোষ বিস্মৃত হইয়াছ, এবং আমার সেবকদের দোষকীর্তনে নিজেকে নিযুক্ত করিয়া রাখিয়াছ? যে কেহ এইরূপ করে, তাহার উপর আমার অভিসম্পাত’’। এবং পুনরায়; ‘‘হে মানব সন্তান! যতদিন তুমি স্বয়ং পাপ কর্মে রত থাকিবে, ততদিন তুমি অপরের দোষকীর্তন করিও না। যদি তুমি আমার এই আদেশের বিপরীত কার্য কর, তবে অভিশপ্ত তুমি এবং আমি স্বয়ং এই বিষয়ের সাক্ষী।” এই কড়া সতর্কীকরণের পুনরুক্তি তাঁর শেষ রচনা “আমার চুক্তিপত্রের গ্রন্থে” করা হয়; “সত্য সত্যই, আমি বলিতেছি, যাহা কিছু উত্তম তাহা উল্লেখ করিবার জন্যই রসনা, ইহাকে অশোভন কথাবার্তার দ্বারা কলুষিত করিও না। যাহা অতীত হইয়াছে ঈশ্বর তাহা ক্ষমা করিবেন। এখন হইতে প্রত্যেকেই তাহাই উচ্চারণ করিবে যাহা উপযুক্ত ও যথাযথ, এবং মিথ্যা অপবাদ রটনা, গালিগালাজ হইতে ও যাহা কিছু মানুষের মধ্যে বিষণœতা সৃষ্টি করে তাহা হইতে বিরত থাকিবে।”
38আমরা উত্তরাধিকারকে সাত শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছি ¶20
বাহা’ই উত্তরাধিকারের আইনসমূহ শুধুমাত্র ইষ্টিপত্র না করে মারা যাওয়ার পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য হয়, অর্থাৎ যখন কোন লোক ইষ্টিপত্র না রেখে মারা যায়। কিতাব-ই-আক্বদাস-এ (¶109), বাহা’উল্লাহ প্রত্যেক বিশ্বাসীকে একটি ইষ্টিপত্র রচনা করতে আদেশ দিয়েছেন। তিনি অন্যত্র সুস্পষ্টরূপে বিবৃত করেছেন যে, সংশ্লিষ্ট লোকটির তার সম্পত্তির উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব রয়েছে এবং কি প্রকারে তার (নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে) সম্পত্তি ভাগ করা হবে এবং ইষ্টিপত্রে তাদের নাম উল্লেখ করতে স্বাধীন, যারা উত্তরাধিকার সূত্রে অংশ লাভ করবে, তা তারা বাহা’ই হোক বা অ-বাহা’ই হোক (প্রশ্ন-উত্তর 69)। এই বিষয়ে, শৌগী এফেন্দীর তরফ থেকে লিখিত একটি পত্র ব্যাখ্যা করছে যে ঃ
... যদিও একজন বাহা’ই তার ইষ্টিপত্রে সে যেভাবে ইচ্ছা করে সেভাবে তার সম্পদ বণ্টন করতে অনুমতিপ্রাপ্ত, তবুও সে ইষ্টিপত্র রচনাকালে সম্পদের সামাজিক ভূমিকা সম্বন্ধে বাহা’উল্লাহর নীতিকে তুলে ধরার অত্যাবশ্যকতা এবং অল্পসংখ্যক ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সমষ্টির মধ্যে ইহার অত্যধিক পুঞ্জীভূত ও কেন্দ্রীভূতকরণ পরিণতি পরিহার করার আবশ্যকতার বিষয়টি নৈতিকতা ও সচেতনতার সাথে সর্বদা মনে রাখতে বাধ্য।
আক্বদাস-এর এই শ্লোকটি একটি দীর্ঘ অনুচ্ছেদ উপস্থাপিত করেছে, যার মধ্যে বাহা’উল্লাহ উত্তরাধিকার আইন বিশদ করেছেন। এই অনুচ্ছেদ পড়ার সময় মনে রাখতে হবে যে, আইন বিধিবদ্ধ করা হয় এই প্রাক-অনুমান সহকারে যে, মৃত একজন পুরুষ; ইহার অনুবিধিসমূহ, সঁঃধঃরং সঁঃধহফরং, মৃত একজন নারী হলেও একইভাবে প্রযোজ্য।
উত্তরাধিকারের পদ্ধতি যা সাত শ্রেণীর (সন্তানদের, স্ত্রী/স্বামী, পিতা, মাতা, ভ্রাতাদের, ভগিনীদের ও শিক্ষকদের) মধ্যে ব্যক্তিটির সম্পত্তি বিলি-বণ্টনের ব্যবস্থা করে, তা বায়ানে বা’ব কর্তৃক প্রকাশিত অনুবিধিসমূহের উপর ভিত্তিশীল। মৃত ব্যক্তি ইষ্টিপত্র না করে মারা গেলে বাহা’ই উত্তরাধিকার আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি এইরূপ:
1। যদি মৃত ব্যক্তিটি একজন পিতা হয় এবং একটি ব্যক্তিগত বাসগৃহ তার সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে এইরূপ বাসগৃহ জ্যেষ্ঠপুত্রের অধিকারভুক্ত হবে (প্রশ্ন ও উত্তর 34)।
2। যদি মৃত ব্যক্তিটির কোন পুরুষ বংশধর না থাকে, তাহলে বাসগৃহটির দুই-তৃতীয়াংশ তার নারী বংশধরদের মালিকানাভুক্ত হবে এবং বাকি তৃতীয় অংশ বিচারালয়ের অধিকারভুক্ত হবে (প্রশ্ন ও উত্তর 41, 72)। যে বিচারালয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি এই আইন প্রযোজ্য তার স্তর প্রসঙ্গে টীকা 42 দ্রষ্টব্য (টীকা 44ও দ্রষ্টব্য)।
3। সম্পত্তির অবশিষ্টাংশ সাত শ্রেণীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। প্রতি শ্রেণীর প্রাপ্য অংশসমূহের সংখ্যার বিস্তারিত বিবরণের জন্য প্রশ্ন ও উত্তরের 5 এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতার অধ্যায় 4.গ. 3.ক দ্রষ্টব্য।
4। যদি কোন শ্রেণীভুক্ত একের বেশি উত্তরাধিকারী থাকে, তাহলে এই শ্রেণীর জন্য ধার্য করা অংশ সমানভাবে তাদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে- তারা পুরুষ বা নারী হোক না কেন।
5। কোন সন্তান নেই - এরূপ অবস্থায় সন্তানদের অংশ বিচারালয়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে (প্রশ্ন ও উত্তর 7, 41 দ্রষ্টব্য)।
6। কেউ সন্তান রেখে গেলে, এবং অন্য যে কোন পক্ষের অথবা আর সব শ্রেণীর উত্তরাধিকারী বিদ্যমান না থাকলে, তাদের দুই-তৃতীয়াংশ উক্ত সন্তানের অধিকারভুক্ত হবে এবং এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ের অধিকারভুক্ত হবে (প্রশ্ন ও উত্তর 7)।
7। যদি বিধিবর্ণিত নির্দিষ্ট শ্রেণীসমূহের কেউ বিদ্যমান না থাকে, তাহলে সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ মৃত ব্যক্তিটির ভ্রাতুষ্পুত্র, ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং ভাগিনেয়, ভাগিনেয়ীগণ পাবে। যদি এরাও বিদ্যমান না থাকে, তাহলে ঐ একই অংশ পিতা-মাতার ভাই-বোন লাভ করবে; এদেরও অস্তিত্ব না থাকলে এদের পুত্র-কন্যারা লাভ করবে। যা ঘটুক না কেন অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ বিচারালয়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।
8। কোন লোক পূর্ববর্ণিত উত্তরাধিকারীদের কাউকে না রেখে গেলে সমুদয় সম্পত্তি বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।
9। বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেছেন যে, অ-বাহা’ইদের তাদের বাহা’ই পিতা-মাতা অথবা আত্মীয়দের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ করার কোন অধিকার নেই (প্রশ্ন ও উত্তর 34)। শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে প্রকাশ করেন যে, এই বাধা “শুধুমাত্র এইরূপ অবস্থায় প্রযোজ্য হয়, যখন একজন বাহা’ই ইষ্টিপত্র না রেখে মৃত্যুবরণ করে এবং এমতাবস্থায়, কিতাব-ই-আক্বদাস-এ ঘোষিত নিয়মাবলী অনুসারে তার সম্পত্তি বণ্টন করতে হবে। অন্যথায় একজন বাহা’ই, ধর্ম-নির্বিচারে যে কোন লোককে তার সম্পত্তি দান করতে স্বাধীন যদি সে তার ইচ্ছাসমূহকে সুনির্দিষ্ট করে একটি ইষ্টিপত্র রেখে যায়”। অতএব একটি ইষ্টিপত্র করে রেখে গেলে, একজন বাহা’ই-এর পক্ষে তার অ-বাহা’ই অংশীদার পুত্র-কন্যা অথবা আত্মীয়স্বজনকে সম্পত্তি দান করা সর্বদাই সম্ভব।
উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনের বিস্তারিত অনুবিধিসমূহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতার অধ্যায়সমূহ 4.গ.3.ক-ণ। দ্রষ্টব্য।
প্রশ্ন-উত্তর 7 প্রশ্ন-উত্তর 34 প্রশ্ন-উত্তর 41 প্রশ্ন-উত্তর 69 প্রশ্ন-উত্তর 72
39ভ্রাতাগণের ......পাঁচ ভাগ; ভগিনীগণের ....... চার ভাগ ¶20
প্রশ্ন ও উত্তরসমূহ মৃত ব্যক্তিটির ভ্রাতা-ভগ্নিদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া উত্তরলব্ধি সংশ্লিষ্ট আইনের অনুবিধিসমূহ ও শর্তাবলী সম্প্রসারিত করেছে। যদি ভ্রাতাটি অথবা ভগিনীটি মৃত ব্যক্তিটির ন্যায় একই পিতা থেকে হয়, তাহলে সে তার জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া পূর্ণ অংশ উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করবে। কিন্তু যদি ভ্রাতাটি অথবা ভগিনীটি অন্য পিতা থেকে হয়ে থাকে, তাহলে নির্দিষ্ট করে দেওয়া অংশের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ সে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করবে, অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করবে (প্রশ্ন ও উত্তর 6)। অধিকন্তু, এইরূপ ক্ষেত্রে, যেখানে, মৃত ব্যক্তিটির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তার আপন ভ্রাতা-ভগিনীরা বিদ্যমান, সেখানে মায়ের পক্ষের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা-ভগিনীরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ করবে না (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 53)। বৈমাত্রেয় ভ্রাতা-ভগিনীরা অবশ্য তাদের নিজেদের পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভের উপযুক্ত হবে।
40শিক্ষকগণের ¶20
একটি ফলকলিপিতে আব্দুল-বাহা শিশুর আধ্যাত্মিক শিক্ষার সাথে জড়িত শিক্ষকদেরকে “আধ্যাত্মিক পিতার” সাথে তুলনা করেছেন যে পিতা “তার শিশুকে চিরস্থায়ী জীবন দ্বারা ভূষিত করেন”। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, ইহা-ই কারণ যে “ঈশ্বরের আইনে শিক্ষকগণ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তালিকাভুক্ত হইয়াছে”।
বাহা’উল্লাহ সেইসব শর্তাবলী নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যে সব শর্তাবলী অনুযায়ী শিক্ষকটি (নারী বা পুরুষ) উত্তরাধিকার সূত্রে অংশ লাভ করবে (প্রশ্ন ও উত্তর 33)।
41যখন আমরা এখনও জন্মগ্রহণ করে নাই এমন শিশুদের চিৎকার শ্রবণ করিলাম, তখন আমরা তাহাদের অংশকে দ্বিগুণ করিলাম এবং অন্যদের অংশ হ্রাস করিলাম ¶20
বা’ব-এর উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তিটির শিশুদের জন্য 540 অংশের অন্তর্ভুক্ত নয় অংশের বণ্টন ধার্য করা হয়। এই বণ্টন সম্পূর্ণ সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশেরও কম ছিল। বাহা’উল্লাহ তাদের অংশকে দ্বিগুণ করে 1,080 তে উন্নীত করেন এবং অন্য ছয় শ্রেণীর উত্তরাধিকারীদের জন্য ধার্যকৃত অংশ হ্রাস করেন। অধিকন্তু তিনি এই শ্লোকের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং উত্তরাধিকারের অংশ বণ্টনের ক্ষেত্রে ইহার নিহিতার্থের রূপরেখাও প্রদান করেন (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 5)।
42বিচারালয় ¶21
কিতাব-ই-আক্বদাস-এ বিচারালয়ের উল্লেখে বাহা’উল্লাহ সার্বজনীন বিচারালয় ও স্থানীয় বিচারালয়ের মধ্যে সব সময় সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য করেন না, উভয় প্রতিষ্ঠানই ঐ কিতাবে প্রতিষ্ঠিত। সমগ্র প্রতিষ্ঠানের স্তর বা স্তরসমূহ যাদের প্রতি প্রতিটি আইন প্রযোজ্য হবে তা পরে বিশদ- করণের জন্য উন্মুক্ত রেখে তিনি সচরাচর কেবল “বিচারালয়” উল্লেখ করেন।
স্থানীয় কোষাগারের বার্ষিক আয়ের খাতসমূহ উল্লেখকারী একটি ফলকলিপিতে আব্দুল-বাহা ঐ সব উত্তরলব্ধি অন্তর্ভুক্ত করেন যার কোন উত্তরাধিকারী নেই, এই প্রকারে প্রকাশ পাচ্ছে যে, উত্তরলব্ধি সম্পর্কীয় আক্বদাস-এর এইসব অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বিচারালয় হচ্ছে স্থানীয় বিচারালয়।
43মৃত ব্যক্তি যদি সন্তান রাখিয়া যায়, কিন্তু অন্যান্য শ্রেণীর উত্তরাধিকারীগণের কেহ না থাকে ¶22
বাহা’উল্লাহ ব্যাখ্যা করেছেন যে,“এই বিধানের সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট - উভয় প্রয়োগ রহিয়াছে, যাহা ব্যাখ্যা করে যে, যখনই উত্তরাধিকারীদের এই শেষোক্ত শ্রেণীর কোন বর্গ অবিদ্যমান থাকে, তখন তাহাদের উত্তরলব্ধির দুই-তৃতীয়াংশ সন্তানদের হস্তগত হয় এবং অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ বিচারালয়ে প্রত্যাবর্তন করে” (প্রশ্ন-উত্তর 7)।
44আমরা মৃত ব্যক্তির বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ পুরুষ সন্তানদের প্রতি নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছি, নারী সন্তান অথবা অন্য উত্তরাধিকারীদের প্রতি নহে ¶25
একটি ফলকলিপিতে আব্দুল-বাহা প্রকাশ করেন যে, একজন মৃত ব্যক্তির বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ পুরুষ বংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এগুলি বড় ছেলের অধিকারভুক্ত হয় এবং বড় ছেলের অবিদ্যমানতায়, এগুলি দ্বিতীয় বড় ছেলের উপর বর্তায় এবং এইভাবে চলতে থাকে। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, এই শর্ত জ্যেষ্ঠত্বের আইনের একটি প্রকাশ, যা ঈশ্বরের আইন দ্বারা অপরিবর্তনীয়ভাবে সমর্থিত হয়েছে। পারস্যে বাহা’ই ধর্মের একজন অনুসারীর কাছে একটি ফলকলিপিতে তিনি লিখেছিলেন: “সমস্ত স্বর্গীয় ধর্মবিধানে জ্যেষ্ঠপুত্রকে অসাধারণ মর্যাদা দেওয়া হইয়াছে। এমনকি বার্তাবাহকের মর্যাদায় তাহার জন্মগত অধিকার রহিয়াছে”। জ্যেষ্ঠ পুত্রটিকে প্রদত্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মর্যাদার সাথে আনুষঙ্গিক কর্তব্যসমূহের পালন অনুসরণ করছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে, তাঁর নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে তাঁর মায়ের যতœ নেওয়া ও অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের প্রয়োজনসমূহকে বিবেচনা করা।
বাহা’উল্লাহ উত্তরাধিকার আইনের এই অংশটির বিভিন্ন দিকের বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বিশেষরূপে বিশদ করেছেন যে, যদি একাধিক বাসগৃহ থাকে, তাহলে প্রধানটি ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণটি পুত্র সন্তানটির অধিকারভুক্ত হবে। বাকি বাসগৃহগুলি মৃত ব্যক্তিটির অন্যান্য মালামালসহ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 34) এবং তিনি প্রকাশ করেন যে, পুত্র সন্তানের অবিদ্যমানতায় মৃত পিতার প্রধান বাসগৃহটির ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদের দুই-তৃতীয়াংশ কন্যা সন্তানের অধিকারে যাবে ও এক-তৃতীয়াংশ বিচারালয়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 72)। অধিকন্তু, বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, যখন মৃত ব্যক্তিটি একজন নারী, তখন তার সব ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ তার কন্যাদের মধ্যে সমানভাগে বণ্টন করে দিতে হবে। তার অব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ, অলংকার এবং সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে এবং তার পরিহিত পোশাক-পরিচ্ছদও, যদি সে কোন কন্যা না রেখে গিয়ে থাকে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 37)।
45মৃত ব্যক্তির জীবদ্দশায় তাহার পুত্র মৃত্যুবরণ করিলে এবং সন্তান রাখিয়া গেলে, ঈশ্বরের গ্রন্থের বিধানানুযায়ী তাহারা তাহাদের পিতার অংশের উত্তরাধিকার লাভ করিবে ¶26
আইনের এই দিকটা শুধুমাত্র ঐ পুত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যে পুত্র তার পিতা অথবা মাতার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে। যদি মৃত ব্যক্তিটি কন্যা হয় এবং সন্তান রেখে যায়, তাহলে তার অংশ পরম পবিত্র গ্রন্থে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া সাত শ্রেণী অনুসারে ভাগ করে দিতে হবে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 54)।
46মৃত ব্যক্তি অপরিণত বয়সের সন্তান রাখিয়া গেলে তাহাদের উত্তরলব্ধির অংশ অবশ্যই একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি অথবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে বিশ্বাসভরে অর্পণ করিতে হইবে ¶27
এই অনুচ্ছেদে “বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি” ও “অছি” রূপে অনূদিত “আমিন” শব্দটি আরবীতে প্রধানতঃ বিশ্বাসভাজনতার ধারণার সাথে যুক্ত অর্থসমূহের এক প্রশস্ত পরিসর বহন করে। তবে এই শব্দটি এইরূপ গুণাবলীও প্রকাশ করে যেমন বিশ্বাসযোগ্যতা, আনুগত্য, বিশ্বস্ততা , ন্যায়পরায়ণতা, সততা, এবং এইরূপ আরও অনেক। “আমিন”-এর আইন সম্বন্ধীয় কথনে ব্যবহৃত অন্যগুলোর মধ্যে, একজন অছি, জামিনদার, তত্ত্বাবধায়ক অভিভাবক এবং একজন রক্ষককে নির্দেশ করে।
47হুকুকুল্লাহ্ প্রদান, কোন ঋণ থাকিলে তাহা পরিশোধ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও মৃতদেহ সমাহিতকরণের ব্যয় নির্বাহ ........................ পারে কেবল তখনই বিষয়-স¤পত্তির বিভক্তিকরণ হইবে ¶28
বাহা’উল্লাহ সুস্পষ্ট করেছেন যে, এইসব ব্যয় মেটানোর অগ্রগণ্যতার ক্রম অনুসারে প্রথমটি হচ্ছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও সমাধিস্থকরণের ব্যয়, তারপর মৃত ব্যক্তিটির ঋণসমূহ পরিশোধ, তারপর হুকুকুল্লাহ্ পরিশোধ (টীকা 125 দ্রষ্টব্য) (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 9)। তিনি আরও সুস্পষ্ট করেছেন যে, এইসব পরিশোধে যখন সম্পত্তি ব্যবহার করা হবে সর্বপ্রথম অবশ্যই সম্পত্তির অবশিষ্টাংশ থেকে অর্থ প্রদান করতে হবে, তারপর, এটা যদি অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে মৃত ব্যক্তিটির বাসভবন ও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে প্রদান করতে হবে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 80)।
48ইহা সেই নিহিত জ্ঞান, যাহা কখনও পরিবর্তিত হইবে না, যেহেতু ইহার শুরু নয় দ্বারা ¶29
আরবী বায়ান-এ বা’ব তাঁর উত্তরাধিকার আইনকে “ঈশ্বরের গ্রন্থে একটি নিহিত জ্ঞান অনুসারে রচনা করিয়াছেন- যে জ্ঞান কখনও পরিবর্তিত হইবে না অথবা প্রতিস্থাপিত হইবে না” বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি আরও বিবৃত করেন যে, যে সংখ্যাগুলি দ্বারা উত্তরাধিকারের বিভাজনকে প্রকাশ করা হয়েছিল সেই সংখ্যাগুলিকে ঈশ্বর যাকে প্রকাশ করবেন, তাকে স্বীকারকরণে সাহায্য করার অভিপ্রেত অন্তর্নিহিত তাৎপর্য দ্বারা ভূষিত করা হয়েছিল ¶
এখানে উল্লেখিত “নয়” সংখ্যাটি আরবী মূল পাঠে “তা” অক্ষরের প্রতীকরূপে ব্যবহার করা হয়েছে, যা আবজাদ-এর গণনায় ইহার সমান (পুস্তকের শব্দকোষ দ্রষ্টব্য)। ইহাই বা’ব-এর উত্তরাধিকার বণ্টনের প্রথম উপাদান, যেখানে তিনি শিশুদের অংশস্বরূপ “নয় অংশ” মনোনীত করেন। এই শ্লোকের পরবর্তী অংশে পরোক্ষভাবে উল্লেখিত “গুপ্ত এবং সুস্পষ্ট, পবিত্র ও অনভিগম্য মহিমান্বিত নাম” রূপে “নয়”-এর অন্তর্নিহিত অর্থ সর্বমহান নাম “বাহা”র সংখ্যাসূচক সমান হওয়ার মধ্যে নিহিত রয়েছে (টীকা প্রশ্ন-উত্তর 33 দ্রষ্টব্য)।
49পরম প্রভু আদেশ দিয়াছেন যে, প্রতিটি নগরে একটি করিয়া বিচারালয় প্রতিষ্ঠিত করা হইবে ¶30
বিচারালয়ের প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত পরিষদসমূহ নিয়ে গঠিত যেগুলো সমাজের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্য সম্পাদন করে। বাহা’উল্লাহ কিতাব-ই-আক্বদাস-এ সার্বজনীন বিচারালয় ও স্থানীয় বিচারালয় উভয়ের আদেশ দিয়াছেন। আব্দুল-বাহা, তাঁর ইষ্টিপত্রে, দ্বিতীয় পর্যায়ের (জাতীয় বা আঞ্চলিক) বিচারালয়সমূহ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সার্বজনীন বিচারালয়ের নির্বাচনের জন্য অনুসরণীয় পদ্ধতির ব্যাখ্যা করেছেন।
উপরে উল্লেখিত শ্লোক স্থানীয় বিচারালয়কে নির্দেশ করছে। এটি একটি প্রতিষ্ঠান যা একটি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যখনই সেখানে নয় বা নয়-এর অধিক সংখ্যক বসবাসকারী বয়স্ক বাহা’ই রয়েছে। এই উদ্দেশ্যে বয়স্কের সংজ্ঞা অভিভাবক কর্তৃক সাময়িকভাবে 21 বৎসর নির্ধারিত হয়েছিল, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে সার্বজনীন বিচারালয় কর্তৃক এর পরিবর্তনের পথ উন্মুক্ত রাখা হলো।
স্থানীয় ও দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত বিচারালয়গুলি আপাতত স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ ও জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ রূপে পরিচিত। শৌগী এফেন্দী প্রকাশ করেছেন যে, এটি একটি “অস্থায়ী নাম” যা
...... বাহা’ই ধর্মের অবস্থান ও লক্ষ্যসমূহ যত অধিক উত্তমরূপে উপলব্ধি করা হবে ও অধিকতর পূর্ণভাবে স্বীকৃত হবে, ক্রমান্বয়ে ইহা বিচারালয়ের জন্য অধিকতর উপযুক্ত ও স্থায়ী পদবী দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। বর্তমান দিনের আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ ভবিষ্যতে শুধুমাত্র ভিন্ন রূপেই অভিহিত হবে না, বরং এই পরিষদগুলি ইহাদের বর্তমান ক্রিয়াকলাপের সাথে বাহা’উল্লাহর ধর্মের স্বীকৃত ঐ সব শক্তিসমূহ ও কর্তব্যসমূহও এবং অত্যাবশ্যক বিশেষ ক্ষমতাসমূহ যুক্ত করতে সমর্থ হবে কেবলমাত্র পৃথিবীর স্বীকৃত ধর্মীয় পদ্ধতিসমূহের মধ্যে একটি রূপে নয় বরং একটি স্বাধীন সার্বভৌম শক্তির রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপে।
50বাহা’র সংখ্যক ¶30
“বাহা”-র আবজাদ সংখ্যা সূচক মান হচ্ছে নয়। সার্বজনীন বিচারালয় এবং জাতীয় ও স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের প্রত্যেকটিতে বর্তমানে নয় জন সদস্য আছে এটিই বাহা’উল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত সর্বনিম্ন সংখ্যা।
51তাহাদের নিজেদেরকে মানবমন্ডলীর মধ্যে পরম করুণাময়ের বিশ্বস্ত ব্যক্তিবর্গ...ঈশ্বর নিযুক্ত অভিভাবকবৃন্দরূপে গণ্য করা উপযুক্ত হইবে ¶30
সার্বজনীন বিচারালয়ের, জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের ও স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের সাধারণ ক্ষমতা ও করণীয় কর্তব্যসমূহ সম্বন্ধে এবং সদস্য হওয়ার যোগ্যতাসমূহ বাহা’উল্লাহ ও আব্দুল বাহা’র লিখনাবলীতে, শৌগী এফেন্দীর পত্রসমূহে, এবং সার্বজনীন বিচারালয়ের বিশদীকরণের মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধান কার্যাবলী সার্বজনীন বিচারালয়ের সংবিধানে এবং জাতীয় ও স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের সংবিধানে বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
52একত্রে পরামর্শ গ্রহণ করা ¶30
বাহা’উল্লাহ তাঁর ধর্মের মৌলিক নীতিমালাসমূহের মধ্যে পরামর্শকে অন্যতমরূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং “সর্ব বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করিতে” তাঁর অনুসারীদের উপদেশ দিয়েছেন। তিনি পরামর্শকে “পথ নির্দেশনার আলো” রূপে এবং “বুদ্ধিবৃত্তি দানকারী” রূপে বর্ণনা করেছেন। শৌগী এফেন্দী বিবৃত করেন যে, “পরামর্শের নীতি” বাহা’ই প্রশাসনিক নিয়মতন্ত্রের “মৌলিক আইনসমূহের একটি গঠন করে”।
প্রশ্ন-উত্তর 99 নম্বর প্রশ্ন ও উত্তরে বাহা’উল্লাহ পরামর্শের প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বিশেষ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঐকমত্যে পৌঁছানোর গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন, এতে ব্যর্থ হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। সার্বজনীন বিচারালয় বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, পরামর্শ সংশ্লিষ্ট এই নির্দেশনা আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এটি হয়েছিল পরামর্শ সম্বন্ধে বাহা’ই শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ সম্বন্ধে একটি প্রশ্নের উত্তরে। সার্বজনীন বিচারালয় দৃঢ়রূপে ঘোষণা করেন যে, আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের উদ্ভব, যার প্রতি বন্ধুরা সাহায্যের জন্য সর্বদাই মুখ ফেরাতে পারে, প্রশ্ন ও উত্তরসমূহে বর্ণিত কার্যপ্রণালী অনুসরণ করা থেকে কোন অবস্থায় তাদেরকে নিষেধ করে না। ইচ্ছা করলে বন্ধুদের দ্বারা এই প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হতে পারে, যখন তারা তাদের নিজস্ব সমস্যাবলীতে পরামর্শ করতে ইচ্ছা করে।
53দেশসমূহের সর্বত্র তোমরা.... উপাসনালয়সমূহ নির্মাণ কর ¶31
বাহা’ই উপাসনালয় ঈশ্বরের প্রশংসাকীর্তনের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত। উপাসনালয়টি মাশ্রিকুল-আয্কারের (ঈশ্বরের প্রশংসার প্রাভাতিক স্থান) কেন্দ্রীয় অট্টালিকা গঠন করে, বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত একটি স্থাপত্য যা ভবিষ্যতে বি¯তৃতি প্রাপ্তির পরিসর অনুসারে উক্ত উপাসনালয়টি ছাড়াও-সামাজিক, মানবহিতৈষী, শিক্ষামূলক এবং বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান অনুসরণের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত কিছুসংখ্যক অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করবে। আব্দুল-বাহা মাশ্রিকুল-আয্কারকে “পৃথিবীতে সর্বাপেক্ষা অত্যাবশ্যক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অন্যতম” রূপে বর্ণনা করেছেন, এবং শৌগী এফেন্দী প্রকাশ করেন যে, ইহা “বাহা’ই উপাসনা ও সেবার” বিভিন্ন অংশের একত্রীকরণকে সুস্পষ্ট আকারে দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রদর্শন করে। এই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ ক্রমবিকাশ পূর্বাহ্ণেই উপলব্ধি করে, শৌগী এফেন্দী বিবেচনা করেন যে, এই উপাসনালয় ও ইহার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলি “দুঃখ-কষ্ট ভোগরত ব্যক্তিদের যন্ত্রণা লাঘব করবে, দরিদ্রদের জীবন রক্ষার উপায় যোগাবে, পথিকদের আশ্রয় দেবে, প্রিয়জন বিয়োগে বিধুর ব্যক্তিদের সান্ত¡না যোগাবে, এবং অজ্ঞদের শিক্ষাদান করবে”। ভবিষ্যতে, বাহা’ই উপাসনালয়গুলি প্রতিটি শহরে ও গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হবে।
54পরম প্রভু আদেশ দিয়াছেন যে, তোমাদের মধ্যে যাহারা সমর্থ, তাহারা পবিত্র গৃহটিতে তীর্থযাত্রা করিবে ¶32
এই অধ্যাদেশের অন্তর্ভুক্ত দুইটি পবিত্র গৃহ শিরাজে বা’ব-এর গৃহ এবং বাগদাদে বাহা’উল্লাহর গৃহ। বাহা’উল্লাহ সবিস্তারে পরিষ্কার বর্ণনা করেছেন যে, এই দুইটি গৃহের যে কোনটিতে তীর্থযাত্রা এই অনুচ্ছেদের প্রয়োজন পূর্ণ করবে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 25, প্রশ্ন-উত্তর 29)। সুরা-ই-হজ্জ্ব নামে পরিচিত দুইটি পৃথক ফলকলিপিতে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 10), বাহা’উল্লাহ এই তীর্থযাত্রার দুইটির প্রতিটির জন্য নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠানের বিধান দিয়েছেন। এই অর্থে, একটি তীর্থযাত্রার সম্পাদন এই দুইটি গৃহ সাধারণভাবে দর্শন অপেক্ষা অনেক অধিক।
বাহা’উল্লাহর মৃত্যুর পর আব্দুল-বাহা বাহ্জীতে অবস্থিত বাহা’উল্লাহর সমাধিমন্দিরকে একটি তীর্থস্থানরূপে আখ্যায়িত করেন। একটি ফলকলিপিতে তিনি প্রকাশ করেন যে, “পরম পবিত্র সমাধিমন্দির, বাগদাদে অবস্থিত পবিত্র গৃহ এবং শিরাজে অবস্থিত বা’ব-এর শ্রদ্ধাস্পদ গৃহ তীর্থযাত্রার জন্য উৎসর্গীকৃত হইয়াছে”-এবং এই স্থান দুইটি দর্শন করা “বাধ্যতামূলক”, “যদি কাহারো সামর্থ্য থাকে এবং সক্ষম হয়, এবং কারুর পথে যদি কোন বাধা-বিঘœ না থাকে”। পরম পবিত্র সমাধিমন্দিরে তীর্থ- যাত্রার জন্য কোন আচার-অনুষ্ঠানের বিধান দেওয়া হয়নি।
55এবং তিনি তাঁহার পক্ষ হইতে করুণাস্বরূপ নারীগণকে ইহা হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন ¶32
বায়ান-এ বা’ব তাঁর ঐ সব অনুসারীদেরকে জীবনে একবার তীর্থযাত্রার জন্য আদেশ করেছিলেন, যারা ঐ যাত্রা করার জন্য আর্থিকভাবে সমর্থ ছিল। তিনি বিবৃত করেছিলেন, ভ্রমণের কঠোরতা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য এই ধর্মীয় কর্তব্য নারীদের জন্য অবশ্যপালনীয় নয়।
অনুরূপভাবে বাহা’উল্লাহ তাঁর তীর্থস্থানে যাত্রার প্রয়োজন থেকে নারীদের অব্যাহতি দেন। সার্বজনীন বিচারালয় বিশদ করেছেন যে, এই অব্যাহতি একটি নিষেধাজ্ঞা নয়, নারীরা তীর্থযাত্রা করায় স্বাধীন।
56কোন প্রকার পেশায় নিযুক্ত হওয়া ¶33
একটি ব্যবসায় বা পেশায় নিযুক্ত হওয়া নারী-পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক। বাহা’উল্লাহ “এইরূপ কর্মে নিযুক্তিকে” ঈশ্বরের “আরাধনার পর্যায়ে” উন্নীত করেছেন। এই আইনের আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক তাৎপর্য, এবং ইহার বাস্তবায়নের জন্য ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পরিক দায়িত্ব সম্বন্ধে শৌগী এফেন্দীর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে ব্যাখ্যা করা হয়েছে :
বিশ্বাসীদের যে কোন প্রকার পেশায় নিযুক্তি সম্বন্ধে বাহা’উল্লাহর আদেশ সম্পর্কে ঃ এ বিষয়ে বাহা’ই শিক্ষা অত্যধিক জোরালো - বিশেষরূপে এই মর্মে আক্বদাস-এ বিবৃতিটি - যা সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করে যে, যে সমস্ত লোকেরা কর্মবিমুখ - অর্থাৎ কাজ করতে অনিচ্ছুক, নব বিশ্ব-নিয়মতন্ত্রে তাদের কোন স্থান নেই। এই নীতির একটি অনুসিদ্ধান্তরূপে বাহা’উল্লাহ আরও বিবৃত করেন যে, ভিক্ষাবৃত্তিকে শুধুমাত্র নিরুৎসাহিত করলেই চলবে না, এটাকে সমাজের মুখমন্ডল থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে হবে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কর্তব্য হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তিকে কোন প্রকার পেশায় অত্যাবশ্যক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ প্রদান করা, এবং এইরূপ একটি দক্ষতা কাজে লাগানোর উপায় দান করা, যাতে সে তার জীবিকার জন্য অর্থ-সম্পদ অর্জন করতে পারে। যতই প্রতিবন্ধী অথবা সীমাবদ্ধ হোক না কেন, প্রত্যেক ব্যক্তি কোন না কোন কাজে বা পেশায় নিযুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতার অধীন, কারণ কাজ, বিশেষরূপে যখন সেবার উদ্দীপনায় সম্পাদিত হয়, তখন তাহা, বাহা’উল্লাহর শিক্ষা অনুযায়ী, উপাসনার রূপ লাভ করে। ইহার যে শুধুমাত্র একটি উপযোগবাদী উদ্দেশ্য রয়েছে তাই নয়, ইহার সত্তার মধ্যেই একটি মূল্য রয়েছে, কারণ ইহা আমাদেরকে ঈশ্বরের নিকটতর করে, এবং ইহজগতে আমাদের জন্য তাঁর উদ্দেশ্যকে উত্তমরূপে উপলব্ধি করতে আমাদের সমর্থ করে। অতএব এটা সুস্পষ্ট যে, সম্পদের উত্তরাধিকার কাউকে দৈনিক কাজ থেকে মুক্তি দিতে পারে না।
তাঁর ফলকলিপিসমূহের একটিতে আব্দুল-বাহা ইহা বিবৃত করেন যে “যদি একজন লোক জীবিকা অর্জনে অসমর্থ হয়, নিদারুণ দারিদ্র্যে পীড়িত হয় অথবা অসহায় হয়ে পড়ে, তাহলে ধনবানদের অথবা প্রতিনিধিদের অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে এই লোকের জীবন-ধারণের জন্য একটি মাসিক ভাতা বরাদ্দ করা.. “প্রতিনিধিদের” দ্বারা লোকদের প্রতিনিধি বোঝাচ্ছে, অর্থাৎ বিচারালয়ের সদস্যদের বোঝাচ্ছে”। (ভিক্ষাবৃত্তি সম্বন্ধে টীকা 162 দ্রষ্টব্য)।
বাহা’উল্লাহর নির্দেশ কি স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রী ও মাতাকেও জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করতে বলে, এই বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে সার্বজনীন বিচারালয় ব্যাখ্যা করেছেন যে, বন্ধুদের জন্য বাহা’উল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে একটি পেশায় নিযুক্ত হওয়া - যা তাদের নিজেদেরকে ও অন্যদেরকে উপকার করবে, এবং সংসারের পরিচর্যা সমাজের কাছে একটি অত্যধিক সম্মানজনক ও দায়িত্বপূর্ণ মৌলিক গুরুত্বের কাজ।
নির্দিষ্ট বয়সে উপনীত লোকদের জন্য কাজ থেকে অবসর গ্রহণ সম্বন্ধে শৌগী এফেন্দী, তাঁর পক্ষে লিখিত একটি পত্রে, বিবৃত করেছিলেন যে “এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয়কে আইন প্রণয়ন করতে হবে, কারণ এ বিষয়ে আক্বদাস-এ কোন অনুবিধি নেই”।
57গ্রন্থে হস্তচুম্বন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে ¶34
পূববর্তী কিছুসংখ্যক ধর্মবিধানে ও নির্দিষ্ট সংস্কৃতিতে একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব অথবা একজন খ্যাতনামা ব্যক্তির হস্তচুম্বন এইরূপ ব্যক্তিদের কাছে শ্রদ্ধা ও ভক্তির একটি চিহ্নস্বরূপ ও তাদের কর্তৃত্বের কাছে বশ্যতার নিদর্শনস্বরূপ আশা করা হতো। বাহা’উল্লাহ হস্তচুম্বন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, এবং তাঁর ফলকলিপিতে তিনি অধিকন্তু একজন লোককে অন্য একজনের সামনে ভূমিগত প্রণতিপাত করার ন্যায় এইরূপ প্রথাসমূহ এবং অন্যপ্রকারের আচরণকেও নিন্দা করেন - যে আচরণ একজন লোককে অপরের কাছে হীনপদস্থ করে (টীকা 58 দ্রষ্টব্য)।
58অপর কোন আত্মা হইতে পাপের ক্ষমা প্রার্থনা করিবার অনুমতি কাহাকেও দেওয়া হয় নাই ¶34
বাহা’উল্লাহ কোন ব্যক্তির নিকট পাপ স্বীকার এবং একজন মানুষের কাছ থেকে কারো পাপের ক্ষমা প্রার্থনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এর পরিবর্তে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে হবে। বিশারৎ-এর ফলকলিপিতে তিনি বিবৃত করেছেন যে “লোকদের সামনে এইরূপ পাপ স্বীকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবমাননা ও মর্যাদাহানিতে পরিণত হয়,” এবং তিনি দৃঢ়রূপে বলেন যে, ঈশ্বর “তাঁর ভৃত্যদের অবমাননা কামনা করেন না”।
শৌগী এফেন্দীর পক্ষ থেকে তাঁর সচিব লিখেছেন যে, ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা যেরূপ তাদের পুরোহিতদের কাছে তাদের পাপ স্বীকার করে, এইরূপ আমাদেরকে কোন লোকের কাছে প্রকাশ্য পাপ ও দোষ-ত্রুটি স্বীকার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু যদি আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করতে ইচ্ছা করি যে আমরা কোন কিছুতে অন্যায় করে ফেলেছি, অথবা মনে করি যে আমাদের নৈতিক চরিত্রে কিছু দোষ-ত্রুটি আছে, এবং অন্য লোকের কাছে ক্ষমা বা মার্জনা ভিক্ষা করি, তাহলে এইরূপ করতে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন।
সার্বজনীন বিচারালয়ও বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন যে, পাপ স্বীকার সংক্রান্ত বাহা’উল্লাহর নিষেধাজ্ঞা বাহা’ই প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুষ্ঠিত পরামর্শ সভায় নিজের ভুল স্বীকার করা থেকে নিবৃত্ত করে না। অনুরূপভাবে, এইরূপ বিষয়-ব্যাপারে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বা একজন পেশাদার উপদেষ্টার কাছ থেকেও উপদেশ গ্রহণের সম্ভাবনাকে নাকচ করে না।
59জনমন্ডলীর মধ্যে ঐ ব্যক্তি রহিয়াছে যে দরজার পাশে পাদুকাগুলির মধ্যে বসিয়া থাকে, পক্ষান্তরে তাহার হৃদয় সম্মানের আসনের জন্য লালায়িত ¶36
ঐতিহ্যগতভাবে প্রাচ্যে একটি জনসভায় প্রবেশের পূর্বে জুতা খোলার প্রথা বহাল হয়ে এসেছে। প্রবেশ পথ থেকে কক্ষের দূরবর্তী অংশটি কক্ষটির প্রধান অংশ ও সম্মানের একটি স্থান রূপে বিবেচিত হয়। এই স্থানে উপস্থিত লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা খ্যাতনামা ব্যক্তিগণ উপবিষ্ট হয়। অন্যান্য লোকেরা মর্যাদার ক্রম অনুসারে দরজার দিকে বসে যেখানে জুতা ও পাদুকা রাখা হয় সেখানে নিু শ্রেণীর লোকেরা বসে।
60এবং জনমন্ডলীর মধ্যে ঐ ব্যক্তি রহিয়াছে, যে নিগূঢ় জ্ঞানের ...দাবি করে ¶36
এটি ঐ সমস্ত লোকের প্রতি ইঙ্গিত করে যারা গূঢ় জ্ঞান উপলব্ধি করার ক্ষমতা দাবি করে এবং এইরূপ জ্ঞানের সাথে তাদের সংযুক্তি ঈশ্বরের প্রকাশের প্রত্যাদেশ থেকে তাদেরকে পর্দাবৃত করে। অন্যত্র বাহা’উল্লাহ দৃঢ়রূপে বলেন ঃ ‘‘যাহারা তাহাদের কল্পনাসমূহের সৃষ্ট প্রতিমার পূজারী, এবং ইহাকে অন্তরতর সত্যরূপে অভিহিত করে, এইরূপ লোকেরা প্রকৃতপক্ষে পৌত্তলিকদের মধ্যে গণ্য’’।
61ভারতের ভূ-খ-সমূহের কত না লোক নিজেকে সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়াছে, ঈশ্বর যেসব বস্তুকে বৈধ বলিয়া আদেশ করিয়াছেন সেইগুলি হইতে নিজেকে বঞ্চিত করিয়াছে, তাহারা নিজের উপর ইন্দ্রিয়নিগ্রহ ও কঠোর সংযম চাপাইয়া দিয়াছে ¶36
এই শ্লোকগুলি সন্ন্যাস জীবনের ও কঠোর সংযমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, সংক্ষিপ্তবিবরণ ও সংহিতা, অধ্যায় 4.ঘ.ঠ.ম.3 দ্রষ্টব্য। স্বর্গের বাণীতে বাহা’উল্লাহ এই অনুবিধিগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি বিবৃত করেন ঃ “নির্জন বাস অথবা কঠোর সংযম চর্চা ঈশ্বরের সমক্ষে গ্রহণযোগ্য নহে,” এবং যারা এতে বিজড়িত তাদেরকে “যাহা কিছু আনন্দ ও উজ্জ্বলতা ঘটাইবে তাহা পালন করিতে” আহ্বান করেন, যারা “পাহাড়-পর্বত-গুহায়” তাদের গৃহ স্থাপন করেছে, অথবা যারা “রাত্রে কবরস্থানে গমন করে”, তাদেরকে এইসব প্রথা পরিত্যাগ করতে এবং মানবজাতির জন্য ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট এই জগতের “দানসমূহ” থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত না করতে আদেশ করেন। এবং বিশারতের ফলকলিপিতে সন্ন্যাসীদের ও পুরোহিতদের “সৎ কার্যাবলী’’ প্রতি স্বীকৃতিপূর্বক, বাহা’উল্লাহ তাদেরকে “নির্জন জীবনযাপন পরিত্যাগ করিতে এবং মুক্ত পৃথিবীতে তাহাদের পদক্ষেপগুলি পরিচালনা করিতে এবং যাহা কিছু তাহাদেরকে ও অন্যদের উপকার করিবে তাহা নিয়া তাহাদেরকে ব্যস্ত রাখিতে আহ্বান করেন”। অধিকন্তু তিনি তাঁদের অনুমতি দেন “বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হইতে যাহাতে এমন কাহাকে জন্ম দিতে পারে যে ঈশ্বরের নাম উল্লেখ করিবে”।
62যে কেহ একটি পূর্ণ সহস্র বর্ষ অতিক্রান্ত হইবার পূর্বে ঈশ্বর হইতে সরাসরি একটি প্রত্যাদেশের দাবি করে ¶37
ঈশ্বরের পরবর্তী প্রকাশ আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত বাহা’উল্লাহর ধর্মবিধান স্থায়ী থাকবে, যার আগমন “পূর্ণ এক হাজার বৎসর” অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত সংঘটিত হবে না। বাহা’উল্লাহ “এই শ্লোকের” প্রতি ইহার “সুস্পষ্ট অর্থ” ব্যতীত অন্য কোন কিছু আরোপ না করতে সতর্ক করে দেন, এবং তাঁর একটি ফলকলিপিতে তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেন যে, এই হাজার বৎসর ব্যাপ্তিকালের “প্রতি বৎসর কোরআন অনুসারে বার মাস নিয়ে গঠিত এবং বায়ান অনুসারে প্রতি 19 দিনের 19 মাস নিয়ে গঠিত”।
1852 সালের অক্টোবর মাসে, তেহরানের সিয়াহ্চাল কারাগারে বাহা’উল্লাহর প্রতি তাঁর প্রত্যাদেশের ইঙ্গিত, তাঁর দৌত্যের জন্মকে চিহ্নিত করে, এই সময় থেকেই শুরু করে ঈশ্বরের পরবর্তী প্রকাশের পূর্বে এক হাজার বৎসর অথবা এর বেশি অবশ্যই অতিবাহিত হবে।
63যাহা সম্বন্ধে ইরাকে আমাদের বসবাসকালে এবং অতঃপর রহস্যময় দেশে তোমাদিগকে পূর্ব হইতে সতর্ক করিয়াছিলাম এবং এখন এই দীপ্তিশীল স্থান হইতে সতর্ক করিতেছি ¶37
“রহস্যময় দেশ” আদ্রিয়ানাপোলকে নির্দেশ করছে, এবং “এই দীপ্তিশীল স্থান’’ আক্কা-কে নির্দেশ করছে।
64জনমন্ডলীর মধ্যে সেই ব্যক্তি যাহার জ্ঞান তাহাকে গর্বিত করিয়াছে .....সে যখন তাহার পশ্চাতে অনুসরণকারী পাদুকার শব্দ শ্রবণ করে, তখন সে .... শ্রেষ্ঠতর ভাব গ্রহণ করে ¶41
প্রাচ্যদেশে একজন ধর্মীয় নেতার অনুসারীদের জন্য শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নিমিত্ত তাঁর থেকে এক বা দুই পদক্ষেপ পিছনে হাঁটার প্রচলিত রীতি রয়েছে।।
65নমরুদ ¶41
এই শ্লোকে উল্লেখিত নমরুদ হচ্ছে ইহুদী ও ইসলামের উভয় ধর্মের গ্রন্থে উল্লেখিত প্রখ্যাত একজন রাজা যে ইব্রাহিমকে উৎপীড়িত করেছিল এবং যার নাম অত্যধিক অহংকারের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
66আঘ্সান ¶42
‘‘আঘ্সান’’(ঘুসন-এর বহুবচন) শাখাসমূহের আরবী প্রতিশব্দ। বাহা’উল্লাহ তাঁর পুরুষ বংশধরদের আখ্যায়িত করার জন্য এই পদ ব্যবহার করেছেন। ইহার নির্দিষ্ট সংশ্লেষ শুধুমাত্র প্রদত্ত সম্পত্তির হস্তান্তরিতকরণের জন্য নয় বরং বাহা’উল্লাহর (টীকা 145 দ্রষ্টব্য) এবং আব্দুল বাহা’র মৃত্যুর পর কর্তৃত্বের উত্তরসূরির জন্যও বটে। বাহা’উল্লাহ তাঁর চুক্তিপত্রের গ্রন্থে, তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আব্দুল-বাহা’কে তাঁর চুক্তিপত্রের কেন্দ্রবিন্দু এবং ধর্মের প্রধান রূপে নিযুক্ত করেছেন। আব্দুল-বাহা তাঁর ইষ্টিপত্রে তাঁর দৌহিত্র শৌগী এফেন্দীকে ধর্মের অভিভাবক এবং প্রধান রূপে নিযুক্ত করেছেন।
এমতাবস্থায়, আক্বদাস-এর এই অনুচ্ছেদটি মনোনীত আঘ্সানদের ও এইরূপে অভিভাবকত্বের উত্তরসূরি প্রত্যাশা করে এবং তাদের বংশাদির পরম্পরায় একটি বিযুক্তির সম্ভাবনা মনশ্চক্ষে কল্পনা করে। 1957 সালে শৌগী এফেন্দীর মৃত্যু, এই অনুচ্ছেদে শর্ত-আরোপিত অবস্থাটি-ই ত্বরান্বিত করে, এই অবস্থায় যে, সার্বজনীন বিচারালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে আঘ্সানদের বংশপরম্পরা শেষ হয়ে গিয়েছিল (টীকা 67 দ্রষ্টব্য)।
67বাহা’র সেই জনমন্ডলীর নিকট প্রত্যাবর্তন করিবে ¶42
বাহা’উল্লাহ সম্ভাবনার শর্ত আরোপ করেন যে, আগসানদের বংশপরম্পরা সার্বজনীন বিচারালয়ের প্রতিষ্ঠার পূর্বে শেষ হয়ে যেতে পারে। তিনি প্রকাশ করেন যে, এমতাবস্থায় ‘দানকৃত সম্পত্তিসমূহ বাহা’র জনমন্ডলীর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে”। “বাহা’র জনমন্ডলী” উক্তিটি বাহা’ই লিখনাবলীতে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে, ঐ লোকগুলিকে বর্ণনা করা হয়েছে তাদের মত যারা “তাঁর অনুমতি ব্যতীত কথা বলে না এবং এই ফলকলিপিতে ঈশ্বর যে বিধান দিয়েছেন সেই নিয়ম ছাড়া বিচার করে না”। 1957 সালে শৌগী এফেন্দীর মৃত্যুর পরে 1963 সালে সার্বজনীন বিচারালয়ের নির্বাচন-পূর্ব পর্যন্ত ঐশী ধর্মবাহুগণ ধর্মের বিষয়াদি পরিচালনা করেছিলেন। (টীকা 183 দ্রষ্টব্য)
68তোমাদের মস্তকসমূহ মুন্ডন করিও না ¶44
কোন কোন ধর্মীয় প্রথায় মস্তক মু-ন বাঞ্ছনীয় বলে বিবেচিত হতো। মস্তক মুন্ডন বাহা’উল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছে, এবং তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন যে, শিরাজে অবস্থিত পবিত্র গৃহে তীর্থযাত্রীদের জন্য মস্তকমুন্ডনের বিধান যা তাঁর সুরা-ই-হজ্জ-এ দেওয়া হয়েছিল কিতাব-ই-আক্বদাস-এর এই শ্লোক দ্বারা রদ করা হয়েছে (টীকা 183 দ্রষ্টব্য)।
69চুলকে কর্ণের সীমা ছাড়াইয়া যাইতে দেওয়া উচিত নহে ¶44
শৌগী এফেন্দী সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন যে, মস্তক মু-ন সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞার বিপরীত, কর্ণের নিুভাগ ছাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধি নিষিদ্ধকারী এই আইন শুধুমাত্র পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই আইনের প্রয়োগ সম্বন্ধে সার্বজনীন বিচারালয় কর্তৃক ব্যাখ্যাদানের প্রয়োজন হবে।
70চোরের জন্য নির্বাসন ও কারাবাসের আইন জারি করা হইল ¶45
বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে দন্ডের পরিমাণ নির্ধারণ ন্যায়বিচারের আওতাধীন থাকছে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 49)। চুরির জন্য শাস্তিসমূহ সমাজের একটি ভবিষ্যৎ অবস্থার জন্য অভিপ্রেত, যখন সার্বজনীন বিচারালয় এইসব শাস্তির বিধান সম্পূরক ও প্রয়োগ করবেন।
71তৃতীয়বার অপরাধের জন্য তোমরা তাহার ললাটের উপর একটি চিহ্ন প্রদান কর, এইরূপে চিহ্নিত হওয়ায়, সে যেন ঈশ্বরের নগরসমূহ এবং তাঁহার দেশসমূহে গৃহীত হইতে না পারে ¶45
চোরের ললাটের উপর অঙ্কিত চিহ্নটি তার প্রবণতাসমূহ সম্বন্ধে লোকদেরকে সতর্কীকরণের উদ্দেশ্য সাধন করবে। এই চিহ্নটির প্রকৃতি, এই চিহ্নটি কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে, কতকাল এটি অবশ্যই ধারণ করতে হবে, কোন অবস্থাতে তা অপসারণ করা যেতে পারে, তাছাড়া চুরির বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্ব বিচার সম্পর্কে সমস্ত বিস্তারিত বিষয়সমূহ নির্ধারণ করার দায়িত্ব বাহা’উল্লাহ যখন এই আইন প্রয়োগ করা হবে সেই সময় সার্বজনীন বিচারালয়ের উপর ন্যস্ত করেছেন।
72যে কেহ রৌপ্য ও স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করিতে ইচ্ছা করে সে তাহা করিতে স্বাধীন ¶46
বায়ানে বা’ব স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত পাত্রসমূহের ব্যবহার বৈধ করেন যেগুলোর ব্যবহার ইসলামে নিন্দনীয় ছিল। তা এইরূপে রদ হলো যা কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ মোতাবেক নিন্দনীয় হয়নি, মুসলিম হাদিসসমূহ থেকে এর উদ্ভব হয়েছিল। এক্ষেত্রে বাহা’উল্লাহ বা’ব-এর বিধানকে অনুমোদন করেন।
73সতর্ক হও যেন তোমরা খাদ্যগ্রহণকালে বাটি ও থালাস্থিত বস্তুর মধ্যে তোমাদের হাতগুলি ডুবাইয়া না দাও ¶46
“খাবারের মধ্যে কারো হাত ডুবিয়ে দেওয়া” সম্বন্ধে শৌগী এফেন্দী এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা করেছিলেন। পৃথিবীর বহু অংশে প্রথানুযায়ী সবার জন্য একটি সাধারণ পাত্র থেকে হাত দিয়ে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
74তোমরা এইরূপ রীতির অনুসরণ কর, যাহা পরিশুদ্ধতার সহিত অত্যধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ ¶46
বিশুদ্ধতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব নির্দেশক কতিপয় অনুচ্ছেদের মধ্যে এইটিই প্রথম। এখানে “ বিশুদ্ধতা ” রূপে অনূদিত মূল আরবী “লাতাফাহ্” শব্দটির আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক উভয় সংশ্লেষ সহ অর্থসমূহের এক ব্যাপক পরিসর রয়েছে, যথা রুচিশীলতা, মার্জিত ভাব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার, নম্রতা, কোমলতা ও সৌজন্যময়তা এবং তার সাথে সূক্ষ্ম, মার্জিত, পবিত্রীকৃত ও নিষ্কলুষ হওয়া। বিভিন্ন অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ অনুসারে কিতাব-ই-আক্বদাস-এ যেখানে ইহা দৃষ্ট হয়েছে, সেখানে ইহা হয় “বিশুদ্ধতা” অথবা “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা” রূপে অনূদিত হয়েছে।
75যিনি ঈশ্বরের ধর্মের প্রাভাতিক স্থল, তাঁহার সর্বমহান অভ্রান্ততায় কোন অংশীদার নাই ¶47
ইশ্রাকাত-এর ফলকলিপিতে বাহা’উল্লাহ দৃঢ়রূপে বলেছেন যে, মহামহিম অভ্রান্ততা ঈশ্বরের প্রকাশগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
কতিপয় প্রশ্নের উত্তরে 45 অধ্যায়, আক্বদাস-এর এই শ্লোকের, আব্দুল বাহা’র একটি ব্যাখ্যার প্রতি নিয়োজিত। এই অধ্যায়ে তিনি অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, ঈশ্বরের প্রকাশগণের থেকে, অপরিহার্য “অভ্রান্ত-তায়” অবিচ্ছেদ্যতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং নিশ্চয় করে বলেন যে, “যাহা কিছু তাঁহাদের হইতে উদ্ভব হয়, তাহা সত্যের সহিত অভিন্ন, এবং বাস্তবতার অনুরূপ হয়”, এবং “সেইগুলি পূর্বের আইনসমূহের ছায়াধীন নহে”, এবং “যাহা কিছু তাঁহারা বলেন, তাহা ঈশ্বরের বাণী, এবং যাহা কিছু তাঁহারা সম্পাদন করেন, তাহা সব সৎ কাজ”।
76প্রত্যেক পিতার প্রতি তাহার পুত্র ও কন্যাকে .....প্রশিক্ষণ দান করিতে নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে ¶48
আব্দুল-বাহা, তাঁর ফলকলিপিসমূহে, পিতা-মাতাকে শুধুমাত্র তাদের সকল পুত্র-কন্যাদেরকে শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলার দায়িত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি, বরং অধিকন্তু তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে “কন্যাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পুত্রদের অপেক্ষা অধিকতর অত্যাবশ্যক”, কারণ কন্যারা একদিন মা হবে, এবং মায়েরা নতুন প্রজন্মের প্রথম শিক্ষাদাতা। এমতাবস্থায় যদি একটি পরিবারের পক্ষে সকল পুত্র-কন্যাকে শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা সম্ভব না হয়, তাহলে কন্যাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, কারণ শিক্ষিতা মাতাদের মাধ্যমেই জ্ঞানের উপকারসমূহ অত্যন্ত ফলপ্রদভাবে ও দ্রুত সমাজের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত করা যেতে পারে।
77ঈশ্বর প্রত্যেক ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর উপর জরিমানা ধার্য করিয়াছেন, যাহা বিচারালয়ে পরিশোধ করিতে হইবে ¶49
যদিও এখানে শব্দটি ব্যভিচার রূপে অনূদিত হয়েছে, ব্যাপকতম অর্থে ইহা বিবাহিত অথবা অবিবাহিত ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে অবৈধ যৌন সংগমকে নির্দেশ করে (শব্দটির সংজ্ঞার জন্য টীকা 36 দ্রষ্টব্য)। আব্দুল-বাহা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এখানে নির্দেশিত শাস্তি অবিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যৌন মিলনের জন্য হচ্ছে। তিনি প্রকাশ করেন যে, একজন বিবাহিত ব্যক্তির দ্বারা কৃত ব্যভিচারের জন্য শাস্তি বা জরিমানা নির্ধারণ করার দায়িত্ব সার্বজনীন বিচারালয়ের অধিকারভুক্ত থাকছে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 49 দ্রষ্টব্য)।
তাঁর ফলকলিপিসমূহের একটিতে আব্দুল-বাহা নৈতিকতার আইনগুলি লঙ্ঘনের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক সংশ্লেষসমূহের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করেন, এবং এখানে শাস্তি সম্বন্ধে তিনি প্রকাশ করেন যে, এই আইনের লক্ষ্য হচ্ছে সকলের কাছে স্পষ্ট করা যে, এইরূপ কর্মকা- ঈশ্বরের দৃষ্টিতে লজ্জাকর এবং এক্ষেত্রে অপরাধ প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে এবং জরিমানা ধার্য হতে পারে, প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাধীদেরকে জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়া যাতে তারা সমাজের চক্ষে লজ্জিত ও অপমানিত হয়। তিনি নিশ্চয় করে বলেন যে, এইরূপ প্রকাশ পাওয়াই সর্বাপেক্ষা বড় শাস্তি।
এই শ্লোকে উল্লেখিত বিচারালয় অনুমেয়রূপে স্থানীয় বিচারালয়, যা বর্তমানে স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ রূপে জ্ঞাত।
78নয় মিশ্কাল স্বর্ণ, ইহা দি¦গুণ হইবে যদি তাহারা অপরাধটি পুনরায় সংঘটিত করে ¶49
মিশ্কাল হচ্ছে ওজনের একটি একক। মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবহৃত ঐতিহ্যগত মিশ্কাল 24 নাখুদের সমান। কিন্তু বাহা’ইদের দ্বারা ব্যবহৃত মিশ্কাল “বায়ান-এর বিনির্দেশ অনুসারে” 19 নাখুদের সমষ্টি (প্রশ্ন ও উত্তর 23)। এই মিশ্কালগুলির নয়-এর ওজন 32.775 গ্রাম অথবা 1.05374 ট্রয় আউন্সের সমান ।
জরিমানা প্রয়োগ সম্বন্ধে বাহা’উল্লাহ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, প্রতিটি পরবর্তী জরিমানা পূর্ববর্তী জরিমানাটির দ্বিগুণ (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 23); এভাবে ধার্যকৃত জরিমানা জ্যামিতিক ক্রমবৃদ্ধিতে বৃদ্ধি পায়। এই জরিমানা ধার্যকরণ সমাজের একটি ভবিষ্যৎ অবস্থার জন্য অভিপ্রেত যে সময়ে সার্বজনীন বিচারালয় আইনটিকে সম্পূরক করবেন ও প্রয়োগ করবেন।
79আমরা তোমাদের জন্য সঙ্গীত শ্রবণ ও গান গাওয়াকে বৈধ করিয়াছি ¶51
আব্দুল-বাহা লিখেছেন যে, “প্রাচ্যের কতিপয় জাতির মধ্যে, গান-বাজনা নিন্দনীয় বলে গণ্য ছিল”। যদিও কোরআনে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন নির্দেশ নেই, তবুও কোন কোন মুসলমান সঙ্গীত শ্রবণ অবৈধ বলে বিবেচনা করে, পক্ষান্তরে অন্যেরা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ও নির্দিষ্ট শর্তাধীনে সঙ্গীত শ্রবণে আপত্তি করে না।
বাহা’ই লিখনাবলীতে সঙ্গীতের প্রশংসায় কিছুসংখ্যক অনুচ্ছেদ রয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আব্দুল-বাহা নিশ্চয় করে বলেন যে, “সঙ্গীত গাওয়া অথবা বাজানো, আত্মা ও হৃদয়ের পক্ষে আধ্যাত্মিক খাদ্য”।
80হে তোমরা ন্যায়পরায়ণতার লোক সকল ¶52
আব্দুল-বাহা ও শৌগী এফেন্দীর লিখনাবলীতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, যদিও সার্বজনীন বিচারালয়ের সদস্যপদ পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবুও নারী-পুরুষ উভয়ই দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত এবং স্থানীয় বিচারালয়সমূহে নির্বাচনের যোগ্য (বর্তমানে এগুলি স্থানীয় ও জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদরূপে আখ্যায়িত)।
81কোন লোককে আহত বা আঘাত করিবার শাস্তি আঘাতজনিত কষ্টের তীব্রতার উপর নির্ভর করে; প্রতিটি মাত্রার জন্য বিচারের পরম প্রভু একটি নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণের বিধান দিয়াছেন ¶56
যদিও বাহা’উল্লাহ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, জরিমানার পরিমাণ “ক্ষতির তীব্রতার” উপর নির্ভর করে, তবে অপরাধের প্রতিটি স্তরের জন্য ক্ষতিপূরণের তাঁর ব্যাখ্যার বিস্তারিত বিবরণের কোন দলিল নেই। এসব নির্ধারণ করার দায়িত্ব সার্বজনীন বিচারালয়ের উপর ন্যস্ত ।
82সত্য সত্যই, তোমাদিগকে প্রতিমাসে একবার ভোজ প্রদানের আদেশ দেওয়া হইয়াছে ¶57
এই আদেশ মাসিক বাহা’ই উৎসব অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে এবং এইভাবে ঊনবিংশ দিবস ভোজের দৃষ্টান্ত গঠন করেছে। আরবী বায়ানে বা’ব আতিথেয়তা ও সাহচর্য প্রদর্শন করার জন্য প্রতি ঊনিশ দিনে একবার তাঁর অনুসারীদের একত্রিত হতে আহ্বান করেন। বাহা’উল্লাহ এখানে ইহাকে সমর্থন ও অনুমোদন করেন এবং এইরূপ উপলক্ষসমূহের ঐক্যসাধনকারী ভূমিকা লিপিবদ্ধ করেন।
বাহা’উল্লাহর পর, আব্দুল বাহা ও শৌগী এফেন্দী এই আদেশের প্রাতিষ্ঠানিক তাৎপর্য পর্যায়ক্রমে উদ্ঘাটিত করেছিলেন। আব্দুল-বাহা এই সমাবেশগুলির আধ্যাত্মিক ও ভক্তিমূলক বৈশিষ্ট্যের গুরুত্বের উপর জোর দেন। শৌগী এফেন্দী ভোজ উৎসবটির ভক্তিমূলক ও সামাজিক দিকসমূহের আরও বিস্তৃতিসাধন ছাড়াও, এইরূপ সমাবেশসমূহের প্রশাসনিক উপাদানকে বিকশিত করেছেন, এবং পদ্ধতিগতভাবে ভোজ উৎসবটিকে প্রতিষ্ঠা করতঃ, সংবাদ ও বাণীসমূহের আদান-প্রদানসহ বাহা’ই সমাজের বিষয়াদি সম্বন্ধে পরামর্শ গ্রহণের একটি ব্যাপ্তিকাল যোগ করেছেন।
এই আদেশ বাধ্যতামূলক কি-না এ সম্বন্ধে একটি প্রশ্নের উত্তরে বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেছিলেন যে, ইহা বাধ্যতামূলক নয় (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 48)। শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে আরও মন্তব্য করেন ঃ
ঊনবিংশ দিবসের ভোজ উৎসবে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক নয়, তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এইরূপ উপলক্ষসমূহে উপস্থিত হওয়াকে একটি কর্তব্য ও সুযোগরূপে প্রত্যেক বিশ্বাসীর বিবেচনা করা উচিত।
83যদি তোমরা শিকারি পশু অথবা পক্ষীসমূহের সাহায্যে শিকার কর, তাহা হইলে যখন তোমরা সেইগুলিকে তাহাদের শিকারের পশ্চাদ্ধাবনের জন্য প্রেরণ করিবে, তখন তোমরা ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করিবে: তাহা হইলে উহারা যাহা-কিছু শিকার করুক না কেন, তাহা তোমাদের জন্য বৈধ হইবে, এমনকি যদি তোমরা তাহা মৃত দেখিতে পাও। ¶60
এই আইনের দ্বারা, বাহা’উল্লাহ শিকার সম্পর্কে অতীতের প্রচলিত রীতি ও ধর্মীয় নিয়ম-বিধিসমূহকে বহুলাংশে সহজ করেছেন। তিনি আরও বিবৃত করেছেন যে, তীর ও ধনুক, বন্দুক ও অনুরূপ অস্ত্র দ্বারা শিকারকরণ এই আদেশের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু ফাঁদে অথবা জালে পাওয়া মৃত শিকারের মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 24)।
84মাত্রাতিরিক্ত শিকার না কর ¶60
যদিও শিকারকরণ বাহা’উল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়নি, তবুও অতিরিক্ত শিকারের বিরুদ্ধে তিনি সতর্ক করেছেন। যথোপযুক্ত সময়ে, সার্বজনীন বিচারালয় নির্ণয় করবেন কোন্ মাত্রা “অতিরিক্ত” শিকার বলে গণ্য হবে।
85তিনি তাহাদিগকে অন্যের স¤পত্তি ভোগের অধিকার প্রদান করেন নাই ¶61
বাহা’উল্লাহর আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের আদেশটি অন্যের সম্পত্তিতে তাদের একটি অংশ প্রদানের আদেশ দান করে না। এই আদেশটি শিয়া মুসলিম রীতির বিপরীত - যে রীতিতে মুহম্মদের সরাসরি বংশধরেরা একটি নির্দিষ্ট করের একটি অংশ লাভের অধিকারী।
86কেহ ইচ্ছাপূর্বক অগ্নিসংযোগে কোন আবাসগৃহ বিনাশ করিলে, তাহাকেও তোমরা অগ্নিসংযোগে পোড়াইয়া দিবে; কেহ উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপরের জীবন হনন করিলে, তাহাকেও তোমরা মারিয়া ফেলিবে ¶62
তাঁর ফলকলিপিসমূহে, আব্দুল-বাহা প্রতিশোধ ও শাস্তির মধ্যে পার্থক্যের ব্যাখ্যা করেন। তিনি দৃঢ়রূপে বলেন যে, ব্যক্তিদের প্রতিশোধ গ্রহণ করার কোন অধিকার নেই, প্রতিশোধ গ্রহণ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত, এবং শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যটি প্রতিশোধ নয়, বরং ইহা কৃত অপরাধের জন্য দ- নির্ধারণ করা। কতিপয় প্রশ্নের উত্তরে, তিনি নিশ্চিত করেন যে, সমাজের অধিকার হচ্ছে ইহার সদস্যদের রক্ষা করার ও ইহার অস্তিত্বের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে অপরাধীদের উপর শাস্তি প্রয়োগ করা।
এই অনুবিধি সম্বন্ধে শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে নি¤œলিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন ঃ
কিতাব-ই-আক্বদাস-এ বাহা’উল্লাহ খুনের জন্য শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদ- দেন। কিন্তু, তিনি ইহার বিকল্পস্বরূপ যাবজ্জীবন কারাদ- অনুমোদন করেছেন। উভয় প্রথাই তাঁর আইনানুসারে প্রচলিত থাকবে। আমাদের মধ্যে অনেকে এই আলোচ্য বিষয়টির বিজ্ঞতা অনুধাবন করতে না-ও সক্ষম হতে পারে যখন এটি আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধ পরিজ্ঞানের সঙ্গে মেলে না, তবুও তাঁর বিজ্ঞতা, তাঁর করুণা এবং সমস্ত জগৎবাসীর মুক্তির লক্ষ্যে তাঁর ন্যায়বিচার নির্ভুল - ইহা জেনে আমাদেরকে এই বিধান অবশ্যই মেনে নিতে হবে। যদি একজন লোককে মিথ্যাভাবে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে কি আমরা বিশ্বাস করতে পারি না যে, পরজগতে এই মানবীয় অবিচারের জন্য ঈশ্বর তাকে বহুগুণ প্রতিদান দেবেন? তুমি একটি হিতকর আইন বাদ দিতে পার না, কেবল এই কারণে যে কখনো কখনো নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তিপ্রাপ্ত হতে পারে।
খুন ও গৃহে অগ্নিসংযোগের জন্য শাস্তির বাহা’ই আইন সমাজের একটি ভবিষ্যৎ অবস্থার প্রেক্ষাপটে পরিকল্পিত একটি আইন, তার পুঙ্খানুুপুঙ্খ ও সবিশেষ বর্ণনা, বাহা’উল্লাহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেননি। আইনটির বিভিন্নমুখী দিকের পুঙ্খানুপুঙ্খ ও সবিশেষ বর্ণনা - যথা অপরাধের গুরুত্ব, মাত্রাসমূহ, অপরাধের গুরুত্ব লাঘব করে এমন অবস্থা বিবেচনা করা হবে কি-না, এবং শাস্তি দুইটির মধ্যে কোন্টি আদর্শস্বরূপ হবে - তা যখন আইনটি কার্যকর করা হবে তখন বিদ্যমান অবস্থার আলোকে স্থির করার দায়িত্ব সার্বজনীন বিচারালয়ের উপর ন্যস্ত হয়েছে। গৃহে অগ্নিসংযোগ বিষয়ে, এটা নির্ভর করে কি “গৃহ” ভস্ম করা হয়েছে। যে ব্যক্তি একটি শূন্য গুদামঘর পুড়িয়ে ভস্ম করে এবং একজন যে শিশুদের দ্বারা পূর্ণ একটি বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে - এই দুইজনের অপরাধের পর্যায় ও মাত্রায় সুস্পষ্টভাবে ভীষণ পার্থক্য রয়েছে।
87তোমরা অগ্নিসংযোগকারী ও খুনীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিলেও তাহা এই ধর্মগ্রন্থের আইনের ধারা মোতাবেক অনুমোদনীয় হইবে ¶62
কিতাব-ই-আক্বদাস-এর এই শ্লোকটি সম্বন্ধে একটি প্রশ্নের উত্তরে শৌগী এফেন্দী দৃঢ়রূপে বলেন যে, যদিও মৃত্যুদ-ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, একটি বিকল্প “যাবজ্জীবন কারাদ-ের”- বিধান দেওয়া হয়েছে “যদ্বারা এইরূপ একটি দ-ের কঠোরতা গুরুতররূপে প্রশমিত করা যাইতে পারে”। তিনি বিবৃত করেন যে, “বাহা’উল্লাহ আমাদেরকে বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন, সুতরাং তিনি তাঁর আইন দ্বারা আরোপিত সীমার মধ্যে আমাদের নিজেদের বিচক্ষণতা প্রয়োগ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন”। বাহা’ই আইনের এই দিকটার প্রয়োগ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নির্দেশ না থাকায় এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সার্বজনীন বিচারালয়ের আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজন হবে।
88ঈশ্বর তোমাদের প্রতি বিবাহের বিধান দিয়াছেন ¶63
বাহা’উল্লাহ্, তাঁর ফলকলিপির একটিতে, বিবৃত করেন যে, ঈশ্বর এই আইন প্রতিষ্ঠার দ্বারা বিবাহকে “মঙ্গল ও মুক্তির একটি দুর্গে” পরিণত করেছেন।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতা, অধ্যায় 4.গ.1.ক-ণ, বিবাহ এবং যে শর্তাবলীতে বিবাহ করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে কিতাব-ই-আক্বদাস-এ অনুবিধিগুলিকে সংক্ষেপে উপস্থাপিত ও সমন্বয় করেছে (প্রশ্ন ও উত্তর 3,13,46,50,84, এবং 92), বিবাহের বাগ্দান আইন (প্রশ্ন ও উত্তর 43), পণ প্রদান (প্রশ্ন ও উত্তর 12, 26, 39, 47,87, এবং 88), দীর্ঘকাল স্বামী বা স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে যে ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে (প্রশ্ন ও উত্তর 4 এবং 27), এবং কতিপয় অন্য অবস্থা (প্রশ্ন ও উত্তর 12 এবং 47) (টীকা 89 টীকা 90 টীকা 91 টীকা 92 টীকা 93 টীকা 94 টীকা 95 টীকা 96 টীকা 97 টীকা 98 টীকা 99 দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন-উত্তর 3 প্রশ্ন-উত্তর 4 প্রশ্ন-উত্তর 12 প্রশ্ন-উত্তর 13 প্রশ্ন-উত্তর 26 প্রশ্ন-উত্তর 27 প্রশ্ন-উত্তর 39 প্রশ্ন-উত্তর 43 প্রশ্ন-উত্তর 46 প্রশ্ন-উত্তর 47 প্রশ্ন-উত্তর 50 প্রশ্ন-উত্তর 84 প্রশ্ন-উত্তর 87 প্রশ্ন-উত্তর 88 প্রশ্ন-উত্তর 92
89সতর্ক হও, যেন তোমরা দুই-এর অধিক স্ত্রী গ্রহণ না কর। যে কেহ ঈশ্বরের সেবিকাদের মধ্য হইতে একজন সঙ্গী লইয়া নিজেকে সন্তুষ্ট করে, সেই ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই শান্তিতে জীবনযাপন করিবে ¶63
যদিও কিতাব-ই-আক্বদাস-এর মূল ভাষ্য দুই বিবাহের অনুমতি দান করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, বাহা’উল্লাহ উপদেশ দিচ্ছেন যে, সুখ ও পরিতৃপ্তি এক বিবাহ থেকে উদ্ভূত হয়। অন্য একটি ফলকলিপিতে তিনি কোন ব্যক্তির “নিজের ও তাহার জীবনসঙ্গিনীর জন্য স্বস্তি সৃষ্টি করিতে” এইরূপ পথ অবলম্বনের গুরুত্বের উপর জোর দেন। বাহা’ই লিখনাবলীর অধিকারপ্রাপ্ত ব্যাখ্যাকারী আব্দুল-বাহা দৃঢ়ভাবে বলেন যে, আক্বদাস-এর মূল পাঠে কার্যতঃ এক-বিবাহেরই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিম্নলিখিত বিষয়সহ, তিনি এই মূল বিষয়বস্তুটিকে কয়েকটি ফলকলিপিতে বিশদ করেন ঃ
তোমরা জনিয়া রাখ যে, ঈশ্বরের আইনে বহুবিবাহের অনুমতি দেওয়া হয় নাই, কারণ এক স্ত্রীতে পরিতৃপ্ত থাকা সুস্পষ্টভাবে শর্তযুক্ত হইয়াছে। দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ, দুইটি স্ত্রীর মধ্যে সর্বাবস্থায় সমতা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখিবার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু দুই স্ত্রীর প্রতি সমতা ও ন্যায়পরায়ণতা পালন করা সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। দ্বি-বিবাহের বিষয়টি যে একটি অসম্ভব শর্তের উপর নির্ভরশীল করা হইয়াছে তাহা ইহার সন্দেহাতীত নিষেধের সুস্পষ্ট প্রমাণ। এমতাবস্থায় একজন লোকের পক্ষে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করা অনুমোদনীয় নহে।
বহুবিবাহ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানবজাতির মধ্যে, একটি অতি প্রাচীন প্রথা। এক-বিবাহের প্রচলন ঈশ্বরের বার্তবাহকদের দ্বারা কেবল ক্রমে ক্রমে সম্পাদিত হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, যিশুখ্রিষ্ট বহুবিবাহ নিষেধ করেন নাই, কিন্তু ব্যভিচারের ক্ষেত্র ব্যতীত তালাক প্রথা তুলে দেন; মুহম্মদ স্ত্রীর সংখ্যা চার-এ সীমাবদ্ধ করেন, কিন্তু একাধিক স্ত্রী গ্রহণকে ন্যায়বিচারের সাথে শর্তযুক্ত করেন, এবং তালাকের অনুমতি পুনঃপ্রচলন করেন; বাহা’উল্লাহ যিনি একটি মুসলমান সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে তাঁর ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষা প্রদান করছিলেন, তিনি বিজ্ঞতা ও তাঁর উদ্দেশ্যের প্রগতিশীল নীতিমালা অনুসারে এক বিবাহের প্রসঙ্গভুক্ত বিষয়টি ক্রমে ক্রমে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি যে তাঁর অনুসারীদেরকে তাঁর প্রকাশিত লিখনাবলীর এক নির্ভুল ব্যাখ্যাকারীর কাছে রেখে গিয়েছিলেন এই সত্যটিই তাঁকে কিতাব-ই-আক্বদাস-এ বাহ্যিকভাবে দুই স্ত্রীর অনুমতি দিতে সমর্থ করেছিল, কিন্তু একটি শর্ত তিনি তুলে ধরেছিলেন যা আব্দুল বাহা’কে পরবর্তীকালে বিশদ ব্যাখ্যা করতে সমর্থ করে সে আইনটির উদ্দেশ্য ছিল এক-বিবাহ বলবৎ করা।
90যেই ব্যক্তি তাহার সেবায় একজন পরিচারিকা নিয়োগ করিতে চাহে, সে তাহা শোভনতা সহকারে করিতে পারে ¶63
বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, একজন লোক তার পারিবারিক সেবার জন্য একজন কুমারী মেয়েকে নিযুক্ত করতে পারে। ইহা শিয়া মুসলিম প্রথাধীনে অনুমোদনীয় ছিল না - যদি না গৃহকর্তা তার সঙ্গে একটি বিবাহের চুক্তিতে আবদ্ধ হতো। বাহা’উল্লাহ জোর দিয়ে বলেন যে, এই শ্লোকে উল্লেখিত “সেবাটি” হচ্ছে শুধুমাত্র “এইরূপ যা বেতনের বিনিময়ে অন্য যে কোন শ্রেণীর ভৃত্য দ্বারা সম্পাদিত হয়, তাই তারা তরুণী বা বৃদ্ধা হোক না কেন” (প্রশ্ন ও উত্তর 30)। একজন মালিকের তার পরিচারিকার উপর কোন যৌন অধিকার নেই। সে (পরিচারিকা) “যে কোন সময় তার ইচ্ছানুযায়ী একজন স্বামী বেছে নিতে স্বাধীন”, কারণ নারী ক্রয় নিষিদ্ধ (প্রশ্ন ও উত্তর 30)।
91তোমাদের প্রতি ইহা-ই আমার আদেশ; তোমাদের প্রতি একটি সহায়তাস্বরূপ ইহাতে দৃঢ়সংলগ্ন থাক ¶63
যদিও কিতাব-ই-আক্বদাস-এ বিবাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বাহা’উল্লাহ ব্যাখ্যা করেছেন যে, ইহা বাধ্যতামূলক নয় (প্রশ্ন ও উত্তর 46)। শৌগী এফেন্দীও তাঁর পক্ষ হতে লিখিত একটি পত্রে ঘোষণা করেন যে “বিবাহ কোন মতেই বাধ্যতামূলক নয়”, এবং তিনি দৃঢ়রূপে বলেন যে, “শেষ উপায় হিসেবে ইহা ব্যক্তিটির স্থির করার বিষয় যে, সে পারিবারিক জীবনযাপন করতে ইচ্ছা করে, না কৌমার্যের অবস্থায় জীবনযাপন করতে ইচ্ছা করে”। যদি একজনকে একটি স্বামী অথবা স্ত্রী খুঁজে পাওয়ার পূর্বে বেশ কিছুকাল অপেক্ষা করতে হয়, অথবা শেষ পর্যন্ত একাকী জীবনযাপন করতে হয়, তার অর্থ এই নয় যে এর ফলে ব্যক্তিটি তার জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ করতে অসমর্থ হয়েছে, যা মূলতঃ আধ্যাত্মিক।
92মাতা-পিতার অনুমতি আমরা শর্তমূলক করিয়াছি ¶65
তাঁর পক্ষ হতে লিখিত একটি পত্রে, শৌগী এফেন্দী আইনের এই শর্তটির উপর মন্তব্য করেছেন:
বাহা’উল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেছেন একটি বাহা’ই বিবাহে জীবিত সকল পিতা-মাতার সম্মতি প্রয়োজন। পিতা-মাতা বাহা’ই হোক বা অবাহা’ই, অনেক বছর পূর্বে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে থাকুক বা না থাকুক এটা প্রযোজ্য হবে। তিনি এই মহান আইন প্রদান করেছেন সামাজিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য, পারিবারিক জীবনের বন্ধনগুলিকে ঘনিষ্ঠতর করার জন্য, যারা তাদের জীবন দিয়েছে এবং তাদের স্রষ্টা অভিমুখে তাদের শ্বাশত যাত্রার উদ্দেশ্যে তাদের আত্মাগুলোকে অবমুক্ত করেছিল তাদের প্রতি সন্তানদের হৃদয়ে নির্দিষ্ট কিছু কৃতজ্ঞতা ও সম্মান স্থাপনের জন্য।
93পণ প্রদান ব্যতীত কোন বিবাহের চুক্তি স¤পাদিত হইতে পারিবে না ¶66
সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতা, অধ্যায় 4.গ.1.ঞ.1-5 পণ বিষয়ক অনুবিধিগুলির সারাংশভাবে উপস্থাপিত করেছে। বায়ান-এ এই অনুবিধিসমূহের উদাহরণ রয়েছে।
বরকে এই পণ কনেকে দিতে হবে। এই পণ শহরে বাসিন্দাদের জন্য 19 মিশ্কাল খাঁটি স্বর্ণে, এবং গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য 19 মিশ্কাল রৌপ্যে স্থির করা হয়েছে (টীকা 94 দ্রষ্টব্য)। বাহা’উল্লাহ প্রকাশ করেছেন যে, যদি বিবাহের সময় বর এই পণ পূর্ণ পরিমাণে শোধ করতে অক্ষম হয়, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে কনেকে অর্থ প্রত্যর্পণের একটি অঙ্গীকারপত্র দেওয়া অনুমোদনীয় (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 39)।
বাহা’উল্লাহর প্রত্যাদেশের সঙ্গে সঙ্গেই অনেক প্রচলিত মতবাদ ধ্যান-ধারণা, রীতি-নীতি, প্রথা এবং প্রতিষ্ঠান এসবের সংজ্ঞা পুনরায় নিরূপণ হয়েছে এবং নতুন অর্থ গ্রহণ করেছে। এগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে পণ। পণ-এর প্রতিষ্ঠানটি বহু সংস্কৃতিতে একটি অতি প্রাচীন প্রথা এবং এটা নানা আকারে। কোন কোন দেশে কনের পিতা-মাতারা এটা বরকে প্রদান করে থাকে; আবার অনেক দেশে এটি “কনের মূল্য” নামে পরিচিত। এটা বর কনের পিতা-মাতাকে প্রদান করে থাকে। উভয় ক্ষেত্রে পরিমাণটি বেশ অধিক হয়। বাহা’উল্লাহর আইন এইরূপ সব বিভিন্নতা তুলে দিয়ে পণটিকে একটি প্রতীকী আইনে পরিবর্তিত করেন, যদ্বারা বর একটি নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ মূল্যের একটি উপহার কনেকে প্রদান করে।
94শহরবাসীদের জন্য উনিশ মিশ্কাল খাঁটি স্বর্ণ এবং গ্রামবাসীদের জন্য ঐ একই পরিমাণ রৌপ্য ¶66
বাহা’উল্লাহ সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন যে, পণ প্রদান নির্ধারণের নির্ণায়ক হবে বরের স্থায়ী আবাসস্থলের উপর, কন্যার নয় (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 87 প্রশ্ন-উত্তর 88)।
95যে কেহ এই পরিমাণ বৃদ্ধি করিতে ইচ্ছা করে, তাহাকে পঁচানব্বই মিশ্কালের সীমা অতিক্রম করিতে নিষেধ করা হইয়াছে।.....তবে সে যদি সর্বনিু পরিমাণ পণ প্রদানে সন্তুষ্ট হয়, তাহা হইলে গ্রন্থানুযায়ী ইহাই তাহার জন্য উত্তম হইবে ¶66
পণ সম্বন্ধে একটি প্রশ্নের উত্তরে, বাহা’উল্লাহ দৃঢ়ভাবে বলেছেন : শহরে ও গ্রামে বসবাসকারীদের সম্বন্ধে বায়ান-এ যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে তা অনুমোদিত হয়েছে এবং তা পালন করতে হবে। অধিকন্তু, কিতাব-ই আক্বদাস-এ নিুতম পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বায়ান-এ গ্রামবাসীদের জন্য 19 মিশ্কাল রৌপ্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। ঈশ্বরের কাছে ইহাই অধিকতর প্রীতিকর - যদি উভয় পক্ষ রাজি হয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে সকলের স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করা এবং লোকদের মধ্যে মিল ও ঐক্য ঘটানো। অতএব, এই বিষয়ে যত মহত্তর বিবেচনা প্রদর্শন করা হবে, ততই উত্তম হবে...। বাহা’র জনমন্ডলীকে অবশ্যই একে অন্যের সাথে মেলামেশা করতে হবে এবং অত্যধিক প্রীতি ও আন্তরিকতার সাথে আচার-আচরণ করতে হবে। তাদেরকে সকলের স্বার্থের প্রতি মনোযোগী হতে হবে - বিশেষ করে ঈশ্বরের বন্ধুদের প্রতি।
আব্দুল-বাহা তাঁর ফলকলিপির একটিতে পণ-এর পরিমাণ নির্ধারণের অনুবিধিগুলির কয়েকটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। নিম্নে বর্ণিত, উদ্ধৃতাংশে উল্লেখিত মাত্রা হচ্ছে “ওয়াহিদ”। এক “ওয়াহিদ” ঊনিশ মিশ্কালের সমান। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন:
শহরবাসীদেরকে স্বর্ণে এবং গ্রামবাসীদেরকে অবশ্যই রৌপ্যে পরিশোধ করতে হবে। এটা বরের সম্পূর্ণ অধিকারে আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যদি সে দরিদ্র হয় তাহলে তাকে এক ওয়াহিদ দিতে হবে; যদি সে মধ্যবিত্ত হয় তাহলে দুই ওয়াহিদ, যদি সে সচ্ছল হয় তাহলে তিন ওয়াহিদ, যদি সে সম্পদশালী হয় তাহলে চার ওয়াহিদ, এবং যদি খুব ধনী হয় তাহলে তাকে 5 ওয়াহিদ দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে এটি বর, কনে এবং তাদের পিতামাতার মধ্যে ঐকমত্যের ব্যাপার। যে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে, সেটা পালন করতে হবে।
এই একই ফলকলিপিতে আব্দুল-বাহা বিশ্বাসীদেরকে সার্বজনীন বিচারালয়ের কাছে এই আইনের প্রয়োগ সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করেছেন। সার্বজনীন বিচারালয়ের “আইন প্রণয়ন করার অধিকার রয়েছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই সেই সংস্থা যা আইন প্রণয়ন করে এবং গৌণ বিষয়সমূহের উপর আইন প্রণয়ন করবে যেসব বিষয় পবিত্র গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে নেই”।
96তাঁহার ভৃত্যদের মধ্যে যে কেহ ভ্রমণে যাইবার ইচ্ছা করিলে, সে অবশ্যই তাহার স্ত্রীর জন্য একটি সময় নির্ধারণ করিবে যখন সে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবে ¶67
যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তার প্রত্যাবর্তনের তারিখটি না জানিয়ে চলে যায়, এবং তার কোন সংবাদ স্ত্রীর কাছে না পৌঁছায়, এবং তার আর কোন খোঁজ পাওয়া না যায়, তাহলে বাহা’উল্লাহ বলেছেন যে, যদি ঐ স্বামী কিতাব-ই-আক্বদাস-এর বিধিবদ্ধ আইনটি সম্বন্ধে অবগত হয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রীটি একটি পূর্ণ বছর অপেক্ষা করার পর পুনরায় বিবাহ করতে পারে। কিন্তু যদি স্বামীটি আইনটি সম্বন্ধে জ্ঞাত না হয়ে থাকে, তাহলে তার স্বামীর সংবাদ তার কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত তাকে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 4)।
97স্ত্রীর উচিত হইবে নয় মাস যাবৎ অপেক্ষা করা, ইহার পর তাহার পক্ষে অন্য স্বামী গ্রহণ করিতে আর কোন বাধা থাকিবে না ¶67
নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময়ের ব্যাপ্তি শেষে স্বামীটি প্রত্যাবর্তন করতে ব্যর্থ হলে, অথবা বিলম্বের কথা তার স্ত্রীর গোচরীভূত না করলে স্ত্রীকে অবশ্যই নয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তারপর সে পুনর্বিবাহ করায় স্বাধীন, যদিও আরও বিলম্ব করা তার পক্ষে বাঞ্ছনীয় (বাহা’ই পঞ্জিকার জন্য টীকা 147 দ্রষ্টব্য)।
বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেছেন যে, এমতাবস্থায় যদি “তার স্বামীর মৃত্যু অথবা খুন” হওয়ার সংবাদ তার কাছে পৌঁছায়, পুনর্বিবাহের পূর্বে তাকে আরও নয় মাস অপেক্ষা করতে হবে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 27)। একটি ফলকলিপিতে আব্দুল-বাহা আরও স্পষ্ট করেছেন যে, মৃত্যু সংবাদের পর, নয় মাসের অপেক্ষাকাল প্রযোজ্য হবে শুধুমাত্র স্বামীটি যদি তার মৃত্যুর সময় দূূরবর্তী স্থানে থেকে থাকে, গৃহে থাকাকালীন যদি মারা যায় তাহলে নয়।
98তাহার সেই পন্থাই বাছিয়া লওয়া উচিত যাহা প্রশংসনীয় ¶67
বাহা’উল্লাহ “প্রশংসনীয় পথ বলিতে” উক্তিটির ব্যাখ্যা করেছেন “ধৈর্যের অনুশীলন” রূপে (প্রশ্ন ও উত্তর 4)।
99দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী ¶67
বাহা’উল্লাহ সাক্ষীদের “ন্যায়পরায়ণতার মানদ-” সম্বন্ধে “লোকদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সুনাম” রূপে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বিবৃত করেন যে, ইহা অত্যাবশ্যক নয় যে, সাক্ষীরা সব বাহা’ই হবে, কারণ “ঈশ্বরের সমস্ত ভৃত্যদের সাক্ষ্য, যে কোন ধর্মের বা মতের হোক না কেন, তাঁর সিংহাসনের সম্মুখে গ্রহণযোগ্য” (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 79)।
100স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিরক্তি ও বিদ্বেষের উদ্ভব হইলে, স্বামী তাহাকে তালাক না দিয়া পূর্ণ এক বৎসর যাবৎ ধৈর্য সহকারে প্রতীক্ষায় থাকিবে ¶68
বাহা’ই শিক্ষাবলীতে বিবাহবিচ্ছেদ কঠোরভাবে নিন্দিত হয়েছে। তবে যদি স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিরক্তি ও বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় তাহলে পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বিবাহবিচ্ছেদ অনুমোদনযোগ্য। ধৈর্য ধারণের এই বৎসরব্যাপী, স্বামীটিকে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদেরকে, আর্থিক সাহায্য দান করতে হবে, এবং দম্পতিটিকে তাদের মতভেদসমূহের মীমাংসা করার জন্য কঠোর চেষ্টা করতে জোরালোভাবে আহ্বান করা হয়েছে। শৌগী এফেন্দী দৃঢ়রূপে বলেন যে, “স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই বিবাহবিচ্ছেদ দাবি করার সমান অধিকার রয়েছে” যখনই যে কোন সঙ্গী “এইরূপ করা সম্পূর্ণরূপে অপরিহার্য মনে করিলে”।
প্রশ্ন ও উত্তরসমূহে, বাহা’উল্লাহ ধৈর্যের বছর সংক্রান্ত কিছুসংখ্যক বিষয় বিশদভাবে উল্লেখ করেন। ইহার নিয়ম-বিধি পালন (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 12), ইহার আরম্ভের তারিখ নির্দিষ্টকরণ (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 19 প্রশ্ন-উত্তর 40), পুনর্মিলনের শর্তাবলী (প্রশ্ন ও উত্তর 38 ) এবং সাক্ষীদের ভূমিকা ও স্থানীয় বিচারালয় (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 73 প্রশ্ন-উত্তর 98)। সাক্ষীদের সম্পর্কে, সার্বজনীন বিচারালয় স্পষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন যে, বর্তমান সময়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ বিষয়ে সাক্ষীদের কর্তব্যসমূহ আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের দ্বারা সম্পাদিত হয়।
বিবাহ-বিচ্ছেদ সম্বন্ধে বাহা’ই আইনসমূহের বিস্তারিত অনুবিধিসমূহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতায়, 4.গ.2.ক-ঝ. অধ্যায়ে সংক্ষেপে উপস্থাপিত হয়েছে।
101পরম প্রভু .....নিষিদ্ধ করিয়াছেন - যাহা ইতিপূর্বে তোমরা একজন স্ত্রীকে তিনবার তালাক দেওয়ার পর অবলম্বন করিতে ¶68
এই প্রসঙ্গটি কোরআন-এ বর্ণিত ইসলাম ধর্মের একটি আইনের বর্ণনা করছে। কোরআন বিধান দিয়েছিল যে, নির্দিষ্ট অবস্থাধীনে, একজন লোক তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে না, যদি না সে অন্য একজনকে বিবাহ করে এবং তালাকপ্রাপ্তা না হয়। বাহা’উল্লাহ দৃঢ়রূপে বলেছেন, এইটিই সেই প্রথা যা কিতাব-ই-আক্বদাস-এ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 31)।
102যে স্বামী তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়াছে, সে প্রতি অতিক্রান্ত মাসের পরে, যদি পারস্পরিক অনুরাগ ও সম্মতি থাকে, তাহাকে পুনরায় বিবাহ করিতে পারে যে পর্যন্ত না সে অন্য স্বামী গ্রহণ করিয়াছে...... যদি না তাহার অবস্থা সুস্পষ্টরূপে পরিবর্তিত হয় ¶68
শৌগী এফেন্দী, তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে বিবৃত করেন যে, “প্রতি অতিক্রান্ত মাসের” উদ্দেশ্য কোন সীমা আরোপ করা নয় এবং একটি তালাকপ্রাপ্ত দম্পতির পক্ষে তাদের তালাকের পর যে কোন সময় পুনরায় বিবাহ করা সম্ভব যে পর্যন্ত না কোন এক পক্ষ অন্য কারো সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে।
103শুক্র অপবিত্র নহে ¶74
কিছুসংখ্যক ধর্মীয় হাদিস এবং শিয়া মুসলিমদের প্রথা অনুযায়ী শুক্র অপবিত্র ঘোষিত হয়েছে। বাহা’উল্লাহ এই ধারণা রহিত করেছেন (নি¤েœ টীকা 106 টীকা দ্রষ্টব্য)।
104তোমরা বিশুদ্ধতার রজ্জুর প্রতি এইরূপ সংলগ্ন হও ¶74
আব্দুল-বাহা “মানুষের অন্তরতম সত্তার বিকাশ” এবং “মানবীয় অবস্থার” উন্নয়নে “বিশুদ্ধতা এবং পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও শিষ্টাচারের” প্রভাবের উল্লেখ করেন। তিনি বিবৃত করেনঃ “একটি পবিত্র ও নিষ্কলুষ দেহ লাভের প্রকৃত অবস্থা মানুষের আত্মার উপর প্রভাব বিস্তার করে” (টীকা 74 দ্রষ্টব্য)।
105প্রতিটি অপরিষ্কার বস্তু তোমরা এইরূপ জল দ্বারা ধৌত কর যাহার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কোনটি পরিবর্তিত হয় নাই ¶74
এই শ্লোকে উল্লেখিত “তিনটি বৈশিষ্ট্য” হচ্ছে জলের বর্ণ, স্বাদ অথবা ঘ্রাণে পরিবর্তন। বাহা’উল্লাহ বিশুদ্ধ জল এবং যে পর্যায়ে এটা ব্যবহারের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয় তার বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণের বিষয়ে আরও উপদেশ দিয়েছেন (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 91)।
106ঈশ্বর.....“অপবিত্রতার’’ ধারণা রহিত করিয়াছেন যাহা দ্বারা নানাপ্রকার বস্তু ও সম্প্রদায়কে অপবিত্র বলিয়া ধারণা করা হইত ¶75
প্রথাগত “অপবিত্রতার” ধারণা, কিছু উপজাতীয় সমাজে ও পূর্ববর্তী কোন কোন ঐশ্বরিক বিধানের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ধারণা ও অনুশীলনকে বাহা’উল্লাহ রহিত করেছেন। তিনি বিবৃত করেন যে, তাঁর প্রত্যাদেশের মাধ্যমে “সমস্ত সৃষ্টবস্তুকে শোধনের সাগরে নিমজ্জিত করা হইয়াছিল”। (টীকা 12, টীকা 20, এবং টীকা 103 দ্রষ্টব্য)
107রিজওয়ানের সেই প্রথম দিনে ¶75
এটি বাগ্দাদ শহরের বাইরে নজিবিয়াহ্ উদ্যানে বাহা’উল্লাহ ও তাঁর সঙ্গীদের আগমনের একটি প্রসঙ্গ, পরবর্তীকালে বাহা’ইদের দ্বারা রিজওয়ানের উদ্যানরূপে উল্লেখিত হয়। এই ঘটনাটি, যা নওরোজের 31 দিন পরে 1863 সালের এপ্রিল মাসে সংঘটিত হয়েছিল, উহা সময়ের শুরুকে চিহ্নিত করেছিল, যে সময় বাহা’উল্লাহ তাঁর সঙ্গীদের কাছে তাঁর দৌত্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। একটি ফলকলিপিতে তিনি তাঁর ঘোষণাটিকে “সর্বোৎকৃষ্ট আনন্দের দিন” রূপে উল্লেখ করেন, এবং তিনি রিজওয়ানের উদ্যানটিকে “সেই স্থান রূপে বর্ণনা করেন, যে স্থান থেকে তিনি পরম করুণাময় তাঁর নামের দীপ্তি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মা-ের উপর বর্ষণ করেছিলেন”। বাহা’উল্লাহ ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করার পূর্বে 12 দিন এই উদ্যানে অতিবাহিত করেন। ইস্তাম্বুলে বাহা’উল্লাহ্কে নির্বাসিত করা হয়েছিল। বাহা’উল্লাহর ঘোষণা দিবসটি প্রতি বৎসর দ্বাদশ দিবসব্যাপী রিজওয়ান উৎসবরূপে উদ্যাপিত হয়। শৌগী এফেন্দী এটিকে “সকল বাহা’ই উৎসবের মধ্যে পবিত্রতম ও সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ” রূপে বর্ণনা করেছেন (টীকা 138 ও 140 দ্রষ্টব্য)।
108বায়ান ¶77
বা’বী প্রত্যাদেশের মাতৃগ্রন্থ বায়ান, বা’ব কর্তৃক দুই ভাগে অবতীর্ণ হয়েছিল একটি ফারসী, অন্যটি আরবী। ইহা বা’বী প্রত্যাদেশের আইনকানুন ও নীতি শিক্ষার ভান্ডার এবং “তাহাকে ঈশ্বর যাহাকে প্রকাশ করিবেন”(বাহা’উল্লাহ) , যার আগমন বার্তা তিনি ঘোষণা করেছিলেন তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অধিকাংশ উল্লেখ ইহা সযতেœ ধারণ করছে। গড পাসেস বাই গ্রন্থে শৌগী এফেন্দী প্রকাশ করেন যে, বায়ানকে “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী পথপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত আইনসমূহের একটি সংহিতা ও অধ্যাদেশ রূপে বিবেচনা না করে মূলতঃ প্রতিশ্রুত মহাপুরুষের উচ্চপ্রশংসাসূচক গ্রন্থরূপে” বিবেচনা করতে হবে।
আব্দুল-বাহা লিখেছেন: “কিতাব-ই-আক্বদাস দ্বারা বায়ান রহিত হয়েছে, এইরূপ আইনসমূহ ব্যতীত, যেগুলি কিতাব-ই-আক্বদাসে অনুমোদিত ও উল্লেখিত হয়েছে”।
109পুস্তকসমূহের ধ্বংস সাধন ¶77
বা’ব তাঁর ধর্মীয় বিধান পালনের অনুপ্রেরণাধীনে বায়ান-এর আইনসমূহ রচনা করেছিলেন, এই বাস্তবতার উল্লেখ করে বাহা’উল্লাহ ইশ্রাকাৎ-এর ফলকলিপিতে বিবৃত করেন যে, তিনি বা’ব-এর কিছু কিছু আইন বলবৎ রেখেছেন “সেগুলিকে কিতাব-ই-আক্বদাসে বিভিন্ন ভাষ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন”, পক্ষান্তরে অন্যগুলিকে রহিত করেন। পুস্তকসমূহের বিনাশ সাধন সম্বন্ধে, যেসব পুস্তক ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ও ধর্মের সমর্থনে লিখিত হয়েছিল, সেগুলি ছাড়া আর সব বইপুস্তক ধ্বংস করার জন্য বায়ান, বা’ব-এর অনুসারীদেরকে আদেশ দিয়েছিল। বাহা’উল্লাহ বায়ান-এর এই নির্দিষ্ট আইনটিকে রহিত করেন।
বায়ান-এর আইনগুলির বৈশিষ্ট্য ও কঠোরতা সম্বন্ধে শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষে লিখিত একটি পত্রে নিুলিখিত মন্তব্য করেন:
বা’ব কর্তৃক প্রকাশিত কঠোর আইনগুলি ও নির্দেশগুলির বৈশিষ্ট্য কেবল তখনই যথাযথভাবে অনুধাবন করা ও জ্ঞাত হওয়া যাবে যখন তাঁর নিজের ধর্মবিধানের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে তাঁর নিজ বিবৃতিসমূহের আলোকে ব্যাখ্যা করা হবে। যেহেতু এই বিবৃতিগুলি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে, বা’ব-এর ধর্মবিধানগুলি অত্যাবশ্যকীয়ভাবে একটি ধর্মীয় এবং বস্তুতঃ সামাজিক বিপ্লবের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছিল, এবং এইজন্য ইহার ব্যাপ্তিকাল হতে হয়েছিল সংক্ষিপ্ত, তবে তা বিষাদময়, বিস্তীর্ণ ও কঠোর সংস্কারসমূহের ঘটনাবলীতে পরিপূর্ণ ছিল। বা’ব এবং তাঁর অনুসারীদের দ্বারা প্রবর্তিত ঐ সব কঠোর ব্যবস্থা শিয়াদের গোঁড়ামির প্রকৃত ভিতসমূহকে উপড়ে ফেলার এবং এইভাবে বাহা’উল্লাহর আগমনের পথ সুগম করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছিল। নতুন ধর্মবিধানের স্বাতন্ত্র্য সুনিশ্চিত করার জন্য, এবং অধিকন্তু বাহা’উল্লাহর আসন্ন প্রত্যাদেশের ভিত্তি প্রস্তুত করার জন্য বা’বকে অত্যন্ত কঠোর আইনসমূহ প্রকাশ করতে হয়েছিল, যদিও সেই আইনগুলির অধিকাংশ কখনও প্রবর্তিত হয়নি। কিন্তু যে অবিমিশ্র বাস্তবতায় তিনি সেগুলি প্রকাশ করেছিলেন তার মধ্যেই তাঁর ধর্মবিধানের স্বাধীন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের একটি প্রমাণ ছিল এবং এইরূপ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট ছিল, এবং ধর্মোপদেষ্টাদের দিক থেকে বিরোধিতা উস্-কিয়ে দেওয়ার জন্যও যথেষ্ট ছিল যা তাঁর চূড়ান্ত আত্মবলিদানে তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল।
110আমরা তোমাদিগকে এইরূপ বিজ্ঞানসমূহ অধ্যয়নের অনুমতি দিয়াছি যাহা তোমাদের জন্য লাভজনক। এইরূপ নহে, যাহা অসার বাদানুবাদে শেষ হয় ¶77
বাহা’ই লিখনাবলী জ্ঞান অর্জনের এবং কলা ও বিজ্ঞানসমূহের চর্চার নির্দেশ দেয়। বাহা’ইদেরকে জ্ঞানী ও গুণী লোকদের শ্রদ্ধা করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে, এবং ঐ সব পুস্তকের পাঠাভ্যাসের পশ্চাদ্ধাবন না করতে সতর্ক করা হয়েছে যা কেবল তুচ্ছ বিবাদ-বিত-ার উৎপাদক।
তাঁর ফলকলিপিসমূহে বাহা’উল্লাহ বিশ্বাসীদের এইরূপ বিজ্ঞানসমূহ ও শিল্পকলা অধ্যয়নের উপদেশ দিয়েছেন যেগুলো “উপকারী” এবং সমাজের “উন্নতি ও অগ্রগতিকে” এগিয়ে নিয়ে যাবে, এবং তিনি ঐ সকল বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন যা “বাক্যাবলী দিয়ে শুরু হয় এবং বাক্যাবলী দিয়ে শেষ হয়”, যার পশ্চাদ্ধাবন “অসার বাদানুবাদের” দিকে নিয়ে যায়। শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে এইরূপ বিজ্ঞানসমূহকে যা “বাক্যাবলী দিয়ে শুরু হয় এবং বাক্যাবলী দিয়ে শেষ হয়”কে “দর্শন শাস্ত্রীয় বিষয়ক নিষ্ফল অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের চুল-চেরা বিশ্লেষণ”-এর সাথে তুলনা করেন এবং অপর একটি পত্রে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, বাহা’উল্লাহ এইরূপ “বিজ্ঞানসমূহ বলতে মূলতঃ যা বুঝাতে চেয়েছিলেন, তা হচ্ছে ঐ সমস্ত ধর্মতাত্ত্বিক প্রবন্ধসমূহ ও ভাষ্যসমূহ যা মানব মনকে সত্য লাভ করতে সাহায্য করা অপেক্ষা বরং বিভ্রান্ত করে।”
111তিনি, যিনি ঈশ্বরের সহিত কথোপকথন করিয়াছিলেন ¶80
ইহা ইহুদী ও ইসলামী হাদিসে মুসার একটি খেতাব। বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, তাঁর প্রত্যাদেশ ধর্মের আগমনের দ্বারা “মানুষের কর্ণসমূহ তাহা শ্রবণ করিতে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হইয়াছে, যাহা তিনি, যিনি ঈশ্বরের সহিত কথোপকথন করিয়াছিলেন, সিনাই পর্বতের উপর শ্রবণ করিয়াছিলেন”।
112সিনাই ¶80
সেই পর্বত যেখানে মুসার কাছে ঈশ্বর আইন অবতীর্ণ করেছিলেন।
113ঈশ্বরের আত্মা ¶80
ইহা ইসলামী ও বাহা’ই লিখনাবলীতে ব্যবহৃত যিশুখ্রিষ্টের খেতাবসমূহের মধ্যে একটি।
114কার্মেল.... জিওন ¶80
“ঈশ্বরের দ্রাক্ষাক্ষেত্র”, কার্মেল হচ্ছে পবিত্রভূমিতে ঐ পর্বতটি যেখানে বা’ব-এর সমাধিমন্দির এবং ধর্মের বিশ্ব-প্রশাসনিক কেন্দ্রের আসন অবস্থিত।
জাইয়ন হচ্ছে জেরুজালেমে অবস্থিত একটি পাহাড়, রাজা দাউদের ঐতিহ্যগত সমাধিস্থল এবং একটি পবিত্র নগর রূপে জেরুজালেমের প্রতীকস্বরূপ।
115লোহিত তরী ¶84
“লোহিত তরী ” বাহা’উল্লাহর ধর্মকে নির্দেশ করছে। তাঁর অনুসারীগণ “লোহিত তরীর সঙ্গীগণ” রূপে আখ্যায়িত হয়েছে, ক্বাইয়্যূমুল্-আস্মায় বা’ব কর্তৃক উচ্চপ্রশংসিত হয়েছে।
116হে অস্ট্রিয়ার সম্রাট! তিনি, যিনি ঈশ্বরের আলোর প্রভাত আক্কার কারাগারে বাস করিতেছিলেন, যখন তুমি আক্ব্সা মসজিদ পরিদর্শন করিবার জন্য যাত্রা করিয়াছিলে ¶85
ফ্রান্সিস যোশেফ (ফ্রান্জ জোসেফ, 1830-1916) অস্ট্রিয়ার সম্রাট এবং হাঙ্গেরীর রাজা 1869 সালে জেরুজালেমে তীর্থযাত্রা করেছিলেন। পবিত্রভূমিতে অবস্থানকালে তিনি বাহা’উল্লাহর সম্বন্ধে খোঁজখবর লওয়ার সুযোগ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছিলেন যিনি ঐ সময় আক্কায় একজন কারাবন্দী ছিলেন।
আক্সা মসজিদটি, আক্ষরিকভাবে “সর্বাপেক্ষা দূরবর্তী” মসজিদরূপে কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে, এবং জেরুজালেমের পর্বত-মন্দির-এর সাথে অবিচ্ছেদ্যরূপে সনাক্ত হয়েছে।
117হে বার্লিনের রাজা ¶86
প্রুশিয়ার সপ্তম রাজা প্রথম কাইজার উইলিয়াম 1 (উইলহেম ফ্রেডারিক লুডউইগ, 1797-1888), ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ার যুদ্ধে ফ্রান্সের উপর জার্মানীর বিজয়লাভের পর ভার্সাইসে 1871 সালের জানুয়ারিতে জার্মানীর প্রথম সম্রাটরূপে অভিনন্দিত হয়েছিলেন।
118যাহার শক্তি তোমার শক্তিকে অতিক্রম করিয়াছিল এবং যাহার পদমর্যাদা তোমার পদমর্যাদা হইতে উৎকৃষ্টতর ছিল ¶86
এটি ফরাসীদের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন (1804-1873) সম্বন্ধে একটি উক্তি, যিনি বহু ঐতিহাসিক দ্বারা, তাঁর সময়ে, পাশ্চাত্যের সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত সম্রাট রূপে পরিগণিত হয়েছিলেন।
বাহা’উল্লাহ এই তৃতীয় নেপোলিয়নকে সম্বোধন করে দুইটি ফলকলিপি প্রেরণ করেছিলেন যার দ্বিতীয়টিতে তিনি সুস্পষ্টরূপে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, নেপোলিয়নের রাজ্য “বিশৃঙ্খলাপূর্ণ অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হবে”, আরও বলেছিলেন যে, তাঁর হাত থেকে তাঁর “সাম্রাজ্য চলে যাবে”, এবং তাঁর জনমন্ডলী প্রচ- “হাঙ্গামায়” পড়বে।
এক বৎসরের মধ্যেই, 1870 সালে সিডানের যুদ্ধে, প্রথম কাইজার উইলিয়ামের হাতে তৃতীয় নেপোলিয়ন আলোড়ন সৃষ্টিকারী পরাজয় বরণ করেন। তাঁকে ইংল্যা-ে নির্বাসিত করা হয়, তিন বৎসর পর সেখানেই মারা যান।
119হে কন্সট্যান্টিনোপল -এর অধিবাসীগণ ¶89
“কন্সট্যান্টিনোপল ” রূপে এখানে অনূদিত শব্দটি হচ্ছে মূলতঃ “আর-রুম” অথবা “রোম”। এই শব্দটি মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণতঃ কন্সট্যান্টিনোপল ও প্রাচ্যের রোম সাম্রাজ্য, অতঃপর বাইজানটিয়ামের শহরটিকে ও ইহার সাম্রাজ্যকে, এবং পরবর্তীকালে তুরস্ক সাম্রাজ্যকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হতো।
120দুই সমুদ্রের তীরে অবস্থিত হে ভূখ- ¶89
এইটি বর্তমানে ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত কন্সট্যান্টিনোপল সম্বন্ধে একটি উদ্ধৃতি। বস্ফোরাসে অবস্থিত প্রায় 31 কিলোমিটার দীর্ঘ একটি প্রণালী যা কৃষ্ণসাগর ও মারমারা সাগরকে যুক্ত করেছে এটি তুরস্কের বৃহত্তম শহর ও সামুদ্রিক বন্দর। কন্সট্যান্টিনোপল 1453 সাল থেকে 1922 সাল পর্যন্ত তুরস্ক সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। এই শহরে বাহা’উল্লাহর স্বল্পকালীন অবস্থানকালে অত্যাচারী নৃশংস সুলতান আব্দুল আজিজ সিংহাসন অধিকার করেন। তুরস্কের সুলতানগণ খলিফাও ছিলেন, অর্থাৎ সুন্নী ইসলামের প্রধান ছিলেন। বাহা’উল্লাহ পূর্বাহ্ণেই এই খিলাফতের পতন অনুমান করেছিলেন যা 1924 সালে বিলুপ্ত হয়।
121হে রাইন নদীর তীরসমূহ ¶90
আব্দুল-বাহা ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (1914-1918) পূর্বে তাঁর লিখিত ফলকলিপিসমূহের একটিতে “জমাটবাঁধা রক্তে আবৃত” দেখা রাইন নদীর তীরগুলি সম্বন্ধে বাহা’উল্লাহর উল্লেখ ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ার যুদ্ধ (1870-1871)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত এবং আরও দুঃখ-দুর্ভোগ সামনে অপেক্ষা করছিল।
“গড পাসেস বাই” গ্রন্থে শৌগী এফেন্দী বিবৃত করেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর পরাজয়ের পর জার্মানীর উপর “নিপীড়নমূলকভাবে কঠোর সন্ধি” চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, উহা “বার্লিনের আর্তনাদের উদ্রেক করেছিল” যে বিষয়ে অর্ধশতাব্দী পূর্বে, অমঙ্গলসূচক ভাবেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।
122হে ত্বা*-এর ভূমি ¶91
“ত্বা” হচ্ছে তিহরান শব্দের প্রথম অক্ষর, যা ইরানের রাজধানী। বাহা’উল্লাহ প্রায়ই নির্দিষ্ট স্থানের নামসমূহকে তাদের প্রথম অক্ষরের উল্লেখ দ্বারা উপস্থাপন করতেন। গণনার আব্জাদ পদ্ধতি অনুসারে ত্বা-এর সংখ্যাসূচক মান হচ্ছে “নয়”, যা “বাহা” নামের সংখ্যাসূচক মানের সমান।
123তোমার মধ্যেই তাঁহার জ্যোতির প্রকাশ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন ¶92
এটি 1817 সালের 12ই নভেম্বর তেহ্রানে বাহা’উল্লাহর জন্মের একটি উদ্ধৃতি।
124হে খাক্স-এর ভূমি ¶94
খুরাসান ও সন্নিহিত এলাকাসমূহের একটি উল্লেখ যে এলাকা ইশ্কাবাদের (আশ্কাবাদ) শহরকে অন্তর্ভুক্ত করছে।
125কেহ যদি একশত মিশ্কাল স্বর্ণের অধিকারী হয়, তন্মধ্যে উনিশ মিশ্কাল ঈশ্বরের, এবং উহা তাঁহাকে প্রদান করিতে হইবে ¶97
এই শ্লোকটি বিশ্বাসীদের অধিকারভুক্ত সম্পত্তির মূল্যের একটি স্থিরীকৃত অংশ প্রদান, ঈশ্বরের অধিকার, হুকুকুল্লাহ্ প্রতিষ্ঠা করে। এই প্রদান ঈশ্বরের প্রকাশরূপে বাহাউল্লাহকে দেওয়া হয়েছিল, এবং পরে, তাঁর স্বর্গারোহণের পর, চুক্তিপত্রের কেন্দ্রবিন্দুস্বরূপ আব্দুল-বাহা’কে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর ইষ্টিপত্রে, আব্দুল-বাহা, বিধান দেন যে, হুকুকুল্লাহ্ “ঈশ্বরের ধর্মের অভিভাবকের মাধ্যমে প্রদান করিতে হইবে”। এখন অভিভাবক না থাকায়, হুকুকুল্লাহ্ ধর্মের প্রধানস্বরূপ সার্বজনীন বিচারালয়ের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। এই অর্থ তহবিল ঈশ্বরের ধর্মের উন্নতিবিধান ও ইহার স্বার্থ সংরক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন লোকহিতকর উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়। হুকুকুল্লাহ্ প্রদান একটি আধ্যাত্মিক কর্তব্য যার সংসাধন প্রতিটি বাহা’ইয়ের বিবেকের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। যখন সম্প্রদায়টিকে হুকুকুল্লাহ্র আইনটির শর্তাবলী সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখন কোন বিশ্বাসীর নিকট গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ইহা শোধ করার কথা বলতে হবে না।
প্রশ্ন ও উত্তরসমূহের কয়েকটিতে এই আইনটির আরও বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হুকুকুল্লাহ্র টাকা প্রদান ব্যক্তির অধিকারভুক্ত সম্পত্তির মূল্যের হিসাবের উপর ভিত্তিশীল। যদি একজন লোকের কমপক্ষে 19 মিশ্কাল স্বর্ণমূল্যের সমান সম্পত্তি থাকে (প্রশ্ন ও উত্তর 8), তাহলে মোট পরিমাণের শতকরা 19 ভাগ হুকুকুল্লাহ্ স্বরূপ মাত্র একবার প্রদান করা একটি আধ্যাত্মিক কর্তব্য (প্রশ্ন ও উত্তর 89)। অতঃপর, সমস্ত ব্যয় নির্বাহের পর, যখনই কারো আয় তার সম্পত্তির মূল্য কমপক্ষে 19 মিশ্কাল স্বর্ণের পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, তাহলে তার এই বৃদ্ধির উপর শতকরা 19 ভাগ হুকুকুল্লাহ্ পরিশোধ করতে হবে, এবং অতঃপর আরও বৃদ্ধিতে এইভাবে দিতে হবে (প্রশ্ন ও উত্তর 8, 90)।
নির্দিষ্ট শ্রেণীর সম্পত্তি, যথা কারো বাসভবন, হুকুকুল্লাহ্ পরিশোধ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত (প্রশ্ন ও উত্তর 8, 42,95), এবং আর্থিক ক্ষতি পূরণ করার জন্য বিষয়ে নির্দিষ্ট অনুবিধিসমূহের ব্যাখ্যা করা হয়েছে (প্রশ্ন ও উত্তর 44,45), মুনাফা উৎপাদনে অর্থ বিনিয়োগের ব্যর্থতা (প্রশ্ন ও উত্তর 102) এবং লোকটির মৃত্যু হলে হুকুকুল্লাহ্ প্রদানের জন্য (প্রশ্ন ও উত্তর 9; 69, 80)। এই শেষোক্তটির ব্যাপারে, টীকা 47 দ্রষ্টব্য।
ফলকলিপিসমূহ, প্রশ্ন ও উত্তরসমূহ, এবং হুকুকুল্লাহ্র আধ্যাত্মিক তাৎপর্য সম্বন্ধে অন্যান্য লিখনাবলী থেকে ব্যাপক উদ্ধৃতি এবং ইহার প্রয়োগের বিস্তারিত বিবরণসমূহ, হুকুকুল্লাহ্ নামক একটি সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন-উত্তর 8 প্রশ্ন-উত্তর 9 প্রশ্ন-উত্তর 42 প্রশ্ন-উত্তর 45 প্রশ্ন-উত্তর 69 প্রশ্ন-উত্তর 80 প্রশ্ন-উত্তর 89 প্রশ্ন-উত্তর 90 প্রশ্ন-উত্তর 95 প্রশ্ন-উত্তর 102
126ঈশ্বরের আইনসমূহ স¤পর্কে বিশ্বাসীগণের নিকট হইতে আমাদের সিংহাসনের সম্মুখে বিবিধ আবেদন আসিয়াছে। ফলস্বরূপ আমরা এই পবিত্র ফলকলিপি প্রকাশ করিয়াছি এবং ইহাকে তাঁহার আইনের পোশাকে সজ্জিত করিয়াছি এইজন্য যেন লোকেরা তাহাদের পরম প্রভুর আদেশাবলী পালন করিতে পারে ¶98
বাহা’উল্লাহ তাঁর একটি ফলকলিপিতে বিবৃত করেন যে, “কয়েক বছর ধরে ঈশ্বরের আইনসমূহ প্রেরণের আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পরম পবিত্র সত্তার কাছে অবেদনপত্রসমূহ পৌঁছেছিল, কিন্তু নির্ধারিত সময় না হওয়া পর্যন্ত আমরা লেখনীটিকে সংযত করেছিলাম”। তেহ্রানের সিয়াহ্চালে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ দৌত্যের জন্ম থেকে বিশ বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই বাহা’উল্লাহ তাঁর ধর্মবিধানের আইনসমূহের ভান্ডার কিতাব-ই-আক্বদাস প্রকাশ করেন। আক্বদাস-এর প্রকাশের পরেও, পারস্যের বন্ধুদের কাছে প্রেরণের পূর্বে কিছুকাল বাহা’উল্লাহ আক্বদাস নিজের কাছে রাখেন। এই যুগের জন্য ঈশ্বরের মৌলিক আইনসমূহের প্রকাশে এই দৈবভাবে উদ্দেশ্যমূলক বিলম্ব এবং পরবর্তীকালে এই আইনগুলির অনুবিধিসমূহের ধীর ও ক্রমান্বয়িক প্রয়োগ সেই প্রগতিশীল প্রত্যাদেশের মূলনীতিসমূহকে বিশদ করে যা প্রত্যেক বার্তাবাহকের সেবাকালের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
127লোহিত স্থান ¶100
এই প্রসঙ্গটি আক্কার কারা শহরের একটি উল্লেখ। বাহা’ই রচনাবলীতে “লোহিত” শব্দটি কতিপয় রূপক ও প্রতীকমূলক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে (টীকা 115 দ্রষ্টব্য)।
128ছিদ্রাতুল মুনতাহা ¶100
আক্ষরিক অর্থে “সর্বাপেক্ষা দূরবর্তী লোত-বৃক্ষটি” শৌগী এফেন্দী কর্তৃক অনূদিত হয়েছে “ঐ বৃক্ষটি, যার সীমা অতিক্রম করা যায় না ”। উক্তিটি ইসলাম ধর্মে একটি প্রতীকরূপে ব্যবহৃত হয়েছে, দৃষ্টান্তস্বরূপ, মুহম্মদের নৈশ ভ্রমণের বিবরণের নভোমন্ডলে সেই সীমাকে চিহ্নিত করার জন্য, যে সীমা অতিক্রম করে মানুষেরা বা দেবদূতেরা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে যেতে পারে না, এবং এইরূপে মানুষের কাছে প্রকাশিত ঐশীজ্ঞানের সীমা নির্দেশ করা হয়েছে। এই কারণে স্বয়ং ঈশ্বরের প্রকাশকে নির্দেশ করার জন্য এটি বাহা’ই রচনাবলীতে প্রায়-ই ব্যবহৃত হয়েছে (টীকা 164 দ্রষ্টব্য)।
129মাতৃগ্রন্থটি ¶103
“মাতৃগ্রন্থ” শব্দটি সাধারণতঃ একটি ধর্মীয় বিধানের মূল গ্রন্থটিকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কোরআন ও ইসলামের হাদিসে শব্দটি কোরআনকেই নির্দিষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। বা’ব-এর ধর্মবিধানে বায়ান হচ্ছে মাতৃগ্রন্থ এবং বাহা’উল্লাহর ধর্মবিধানের মাতৃগ্রন্থ হচ্ছে কিতাব-ই-আক্বদাস। অধিকন্তু, শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে বিবৃত করেন যে “বাহা’উল্লাহর প্রকাশিত শিক্ষাসমূহের একটি সমষ্টিবাচক পদ” রূপেও এই ধারণা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই পদ প্রত্যাদেশ ধর্মের ঐশী ভান্ডারকে সূচিত করার জন্য এক ব্যাপকতর অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
130প্রত্যাদেশের স্বর্গ হইতে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে, যে কেহ তাহার সুস্পষ্ট অর্থ পরিবর্তন করে ¶105
তাঁর কয়েকটি ফলকলিপিতে, বাহা’উল্লাহ্, রূপক আকারে বর্ণিত শ্লোকসমূহ, যেগুলির ব্যাখ্যাদান সংবেদনশীল হয়, এবং ঐ শ্লোকগুলি যা আইনসমূহ ও অধ্যাদেশাবলী, উপাসনা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহ পালনের সাথে সম্পর্কিত, যার অর্থগুলি সুস্পষ্ট এবং যেগুলি বিশ্বাসীদের পক্ষ থেকে প্রতিপালন দাবি করে, এতদুভয়ের মধ্যে দৃঢ়রূপে পার্থক্য নির্ণয় করেন।
টীকা 145 এবং টীকা 184 টীকাসমূহে বর্ণিত মতে, বাহা’উল্লাহর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র আব্দুল-বাহা’কে তাঁর উত্তরসূরি ও তাঁর শিক্ষাবলীর ব্যাখ্যাকাররূপে নিযুক্ত করেছিলেন। আব্দুল-বাহা তাঁর সময়ে, ধর্মের অভিভাবক ও পবিত্র গ্রন্থের ব্যাখ্যাকাররূপে তাঁর জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র শৌগী এফেন্দীকে নিযুক্ত করেন। আব্দুল বাহা’র ও শৌগী এফেন্দীর ব্যাখ্যাসমূহ ঐশী নির্দেশিত বলে বিবেচিত হয় এবং বাহা’ইদের পক্ষে মেনে নেওয়া বাধ্যতামূলক।
প্রামাণিক ব্যাখ্যাসমূহের এই বিদ্যমানতা ব্যক্তিকে বাহা’ই শিক্ষণীয় বিষয়সমূহের অধ্যয়নে রত হতে এবং তদ্বারা একটি ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা বা ধারণায় উপনীত হতে বাধা দেয় না। তবে, প্রামাণিক ব্যাখ্যা এবং শিক্ষাবলীর অধ্যয়ন থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, এতদুভয়ের মধ্যে বাহা’ই লিখনাবলীতে সুস্পষ্ট পার্থক্যের রেখা টানা হয়েছে। শিক্ষাবলীর ধারণার উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত ব্যাখ্যাসমূহ ব্যক্তিটির বুদ্ধিগত শক্তির ফল উৎপাদন করে এবং ধর্মের একটি বৃহত্তর উপলব্ধিতে উত্তম অবদান রাখতে পারে। তা সত্ত্বেও, এইরূপ মতামতসমূহের প্রামাণ্যতা থাকে না। লোকদের ব্যক্তিগত ধারণাসমূহের উপস্থাপনায় প্রকাশিত উক্তিসমূহের প্রামাণিক গুরুত্ব রহিত না করতে, প্রামাণ্য ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান না করতে এবং মতবিরোধে রত না হতে, তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, বরং তাদের মতামতগুলি কেবলমাত্র তাদের নিজেদের, এটা সুস্পষ্ট করে, তাদের সুচিন্তিত মতামতগুলো জ্ঞানের ক্ষেত্রে অবদানস্বরূপ উৎসর্গ করা উচিত।
131তোমরা যেন পারস্যের সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ¯œানাগারের জলাধারসমূহে গমন না কর ¶106
বাহা’উল্লাহ পারস্যদেশীয় ঐতিহ্যগত জনসাধারণের ¯œানাগারে অবস্থিত জলাশয়সমূহ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। এইসব ¯œানাগারে বহু লোকের ¯œান করার প্রচলন ছিল, এর ফলে জল পরিবর্তনের কাজটি অনিয়মিত হত। ফলস্বরূপ জল বিবর্ণ, মলিন, কলুষিত এবং অস্বাস্থ্যকর হয়ে যেত, এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ত।
132অনুরূপভাবে তোমরা পারস্যবাসীদের বাড়ির আঙ্গিনার দুর্গন্ধযুক্ত জলাধারগুলি পরিহার করিও ¶106
পারস্যে অধিকাংশ বাড়িতে তাদের উঠানে একটি জলাশয় থাকত। এই জলাশয় জিনিসপত্র পরিষ্কার করা, স্নান করা, ও পারিবারিক অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জলের আধাররূপে কাজ করত। যেহেতু এই জলাশয়ের জল ছিল বদ্ধ এবং সাধারণতঃ সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে একবারও পরিবর্তন করা হত না, তাই ইহা অত্যন্ত অপ্রীতিকর গন্ধের বিকাশ ঘটাত।
133তোমাদিগকে তোমাদের পিতার পত্নীগণকে বিবাহ করিতে নিষেধ করা হইয়াছে ¶107
বিমাতার সাথে কারো বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে এখানে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধ সৎপিতার ক্ষেত্রেও সুস্পষ্টভাবে প্রযোজ্য। যখন বাহা’উল্লাহ একটি পুরুষ ও একটি নারীর মধ্যে একটি আইন প্রকাশ করেছেন তখন ইহা একটি নারী ও একটি পুরুষের মধ্যে মুতাতিস মুতানদিস প্রয়োগ করে যদি না প্রসঙ্গটি এই বিষয়টিকে অসম্ভব না করে।
আব্দুল-বাহা ও শৌগী এফেন্দী দৃঢ়তার সাথে প্রতিপন্ন করেছিলেন যে, যখন এই ভাষ্যে আত্মীয় শ্রেণীর মধ্যে কেবল বিমাতাদের উল্লেখ করা হয়েছে তখন এর অর্থ এই নয় যে একই পরিবারের মধ্যে অন্যান্য বিয়ে অনুমোদনীয়। বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, “কারো আত্মীয়কে বিবাহ করার বৈধতা সম্বন্ধে” আইন প্রণয়ন করার দায়িত্ব বিচারালয়ের উপর বর্তায় (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 50)। আব্দুল-বাহা লিখেছেন যে, দম্পতিটির মধ্যে রক্ত সম্পর্ক যত দূরবর্তী হবে, ততই উত্তম, কারণ এইরূপ বিবাহসমূহ মানবজাতির পার্থিব মঙ্গলের ভিত্তি প্রদান করে এবং মানবজাতির মধ্যে সাহচর্যের পক্ষে হিতকর।
134বালকদের বিষয়টি ¶107
এখানে “বালকদের” রূপে অনূদিত শব্দটির এই প্রসঙ্গে আরবী মূল ফলকলিপিতে বালকদের সঙ্গে পুরুষের যৌন সংসর্গের সংশ্লেষ রয়েছে। শৌগী এফেন্দী সমস্ত সমকামমূলক সম্পর্কের উপর একটি নিষেধ রূপে এই প্রসঙ্গটির ব্যাখ্যা করেছেন।
যৌননীতি সম্বন্ধে বাহা’ই শিক্ষাসমূহ সমগ্র মানব সমাজ কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তররূপে বিবাহ ও পরিবারকে কেন্দ্রীভূত করেছে এবং এই শিক্ষাসমূহ বিবাহের স্বর্গীয় প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা ও শক্তিশালী করার জন্য পরিকল্পিত। এইভাবে বাহা’ই আইন অনুমোদনীয় যৌনমিলন ঐরূপ একজন পুরুষ এবং একজন নারীর মধ্যে সীমিত করে, যাকে সে বিবাহ করেছে।
শৌগী এফেন্দীর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে বিবৃত করা হয়েছে ঃ
একই লিঙ্গের লোকদের মধ্যে প্রেম যতই গভীর ও চমৎকার হোক না কেন, যৌন কর্মের দ্বারা এর প্রকাশ অন্যায়। এটিকে কোন মতেই আদর্শ কাজ বলা চলে না। বাহা’উল্লাহ যে কোন ধরনের নীতিহীন কর্মকা-কে প্রকৃতপক্ষেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, এবং সমকামমূলক সম্পর্ককে প্রকৃতি-বিরুদ্ধ বলে মনে করেন। একজন বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন লোকের পক্ষে এতে আক্রান্ত হওয়া অত্যন্ত পীড়াদায়ক। তবে ডাক্তারদের উপদেশ ও সাহায্যের মাধ্যমে, একটি প্রচ- ও দৃঢ়সংকল্প প্রচেষ্টায় এবং প্রার্থনার মাধ্যমে একজন লোক এই বাধাসমূহ অতিক্রম ও জয় করতে পারে।
বাহা’উল্লাহ অপরাধের মাত্রা অনুসারে ব্যভিচার ও পায়ুকামের শাস্তি নির্ধারণের জন্য সার্বজনীন বিচারালয়ের উপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 49)।
135রাস্তা অথবা বাজারে বিচরণকালে জনসমক্ষে পবিত্র শ্লোকসমূহ বিড়বিড় করিয়া পাঠ করিবার অনুমতি কাহাকেও প্রদান করা হয় নাই ¶108
ইহা পূর্ববর্তী ধর্মবিধানসমূহের নির্দিষ্ট কিছু যাজক ও ধর্মীয় নেতাদের অভ্যাসের প্রতি একটি পরোক্ষ উল্লেখ, যারা কপটতা ও ভন্ডামির মধ্য দিয়ে এবং তাদের অনুসারীদের প্রশংসা লাভের জন্য তাদের ধর্মনিষ্ঠার একটি প্রদর্শনীস্বরূপ জনসমাগম স্থলসমূহে পবিত্র শ্লোকসমূহ বিড়বিড় করে উচ্চারণ করত। বাহা’উল্লাহ এইরূপ আচরণ করতে নিষেধ করেছেন এবং ঈশ্বরে প্রতি বিনম্রতা ও অকপট ধর্মনিষ্ঠার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।
136একটি ইষ্টিপত্র লিপিবদ্ধ করিতে প্রত্যেকের প্রতি আদেশ দেওয়া হইয়াছে ¶109
বাহা’উল্লাহর শিক্ষাবলী অনুসারে প্রতিটি ব্যক্তির একটি ইষ্টিপত্র রচনা করার একটি কর্তব্য রয়েছে, এবং তার সম্পত্তি যেভাবে সে ইচ্ছা করে সেইভাবে হস্তান্তর করতে সে স্বাধীন (টীকা 38 দ্রষ্টব্য)।
বাহাউল্লাহ্ দৃঢ়রূপে বলেন যে, তার উইল রচনায় “একজন ব্যক্তির সম্পত্তির উপর তার পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে”, কারণ ঈশ্বর প্রত্যেক ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছেন, “যাহা কিছু তিনি তাহাকে প্রদান করিয়াছেন, সে তাহা তাহার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন প্রকারে ব্যবহার করিতে পারে” (প্রশ্ন ও উত্তর 69)। ইষ্টিপত্র সম্পাদন না করে মৃত্যুবরণ করলে উত্তরলব্ধির বণ্টনের অনুবিধিসমূহ কিতাব-ই-আক্বদাস-এ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (টীকা 38 টীকা 39 টীকা 40 টীকা 41 টীকা 42 টীকা 43 টীকা 44 টীকা 45 টীকা 46 টীকা 47 টীকা 48) দ্রষ্টব্য।
প্রশ্ন-উত্তর 69
137সর্বমহান নাম ¶109
টীকা 33 নং টীকায় যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ঈশ্বরের মহত্তম নাম বিভিন্ন আকার ধারণ করতে পারে, যেগুলির সবই “বাহা” শব্দের উপর ভিত্তিশীল। প্রাচ্যের বাহা’ইগণ তাদের ইষ্টিপত্রগুলির শিরোনামে “হে তুমি সর্বগৌরবময়ের গৌরব”, “সর্বগৌরবময় ঈশ্বরের নামে” অথবা “তিনি-ই সর্বগৌরবময়” অনুরূপ উক্তি লিপিবদ্ধ করে আক্বদাস-এর এই আদেশ কার্যকরী করেছে।
138দুইটি সর্বমহান উৎসবের মধ্যে সমস্ত ভোজানুষ্ঠান এবং যমজ দিবসে সংঘটিত অপর দুইটি উৎসব উহাদের সম্পূর্ণতা লাভ করিয়াছে ¶110
এই অনুচ্ছেদ বাহা’ই বৎসরের 4টি মহান উৎসবকে প্রতিষ্ঠা করে। “দুইটি সর্বমহান উৎসব” রূপে যে দুইটিকে বাহা’উল্লাহ আখ্যায়িত করেছেন, তার প্রথমটি হচ্ছে, রিজওয়ানের উৎসব, যা বাহা’উল্লাহর 1863 সালের এপ্রিল/মে মাসে 12 দিন ব্যাপী বাগদাদে রিজওয়ানের উদ্যানে তাঁর ধর্মপ্রবর্তকীয় দৌত্যের ঘোষণার স্মৃতি রক্ষা করে, এবং এটাকে তিনি “উৎসবসমূহের রাজা” উল্লেখ করেন এবং দ্বিতীয়টি, বা’ব-এর ঘোষণা, যা 1844 সালের মে মাসে শিরাজে ঘটেছিল। রিজওয়ান উৎসবের প্রথম, নবম ও দ্বাদশ দিনগুলি পবিত্র দিবস (প্রশ্ন ও উত্তর 16), বা’ব-এর ঘোষণা দিবসটিও তদ্রƒপ।
“অপর দুইটি উৎসব” হচ্ছে বাহা’উল্লাহর ও বা’ব-এর জন্মবার্ষিকী। মুসলিম চান্দ্র পঞ্জিকায় এই দিনগুলির অবস্থান ধারাবাহিক, যথাক্রমে, বাহা’উল্লাহর জন্ম 1233 হিজরীর মুহররম মাসের দ্বিতীয় দিনে (12ই নভেম্বর 1817), এবং বা’ব-এর জন্ম একই মাসের প্রথম দিনে 1235 হিজরীর (1819 সালের 20 শে অক্টোবরের) । এরূপে, এগুলি “যমজ জন্মদিবস” রূপে উল্লেখিত হয়েছে, এবং বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, এই দুইটি দিন ঈশ্বরের দৃষ্টিতে একদিন রূপে গণ্য হয় (প্রশ্ন ও উত্তর 2)। তিনি বিবৃত করেন যে, এই দিনগুলি উপবাস মাসে পড়লে, ঐ দিনগুলিতে উপবাস আদেশ প্রযোজ্য হবে না (প্রশ্ন ও উত্তর 36)। বাহা’ই দিন পঞ্জিকা (টীকা 26 , টীকা 147 দ্রষ্টব্য) একটি সৌর পঞ্জিকারূপে স্বীকৃত, যমজ পবিত্র জন্মদিন দুইটি সৌর না-কি চান্দ্র ভিত্তিতে উদ্যাপিত হবে, তা সার্বজনীন বিচারালয় নির্ধারণ করবে।
প্রশ্ন-উত্তর 1 প্রশ্ন-উত্তর 2 প্রশ্ন-উত্তর 36
139বাহা মাসের প্রথম দিবসটিতে ¶111
বাহা’ই পঞ্জিকায় বৎসরের প্রথম মাস এবং প্রত্যেক মাসের প্রথম দিনটিকে “বাহা” নাম দেওয়া হয়েছে। বাহা মাসের বাহা দিনটি তাই বাহা’ই নববর্ষ, নওরোজ, যা বা’ব একটি উৎসবরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, এবং এখানে বাহা’উল্লাহ এটি সমর্থন করেন (টীকা 26 , টীকা 147 দ্রষ্টব্য)।
কিতাব-ই-আক্বদাস-এর এই অনুচ্ছেদগুলিতে প্রতিষ্ঠিত সাতটি পবিত্র দিন ছাড়াও, বাহাউল্লাহ্র জীবদ্দশায় বা’ব-এর আত্মবলিদানের বার্ষিকীটি একটি পবিত্র দিন রূপে স্মৃতিস্বরূপ উদ্যাপিত হয়েছিল, এবং এই প্রতি একটি অনুসিদ্ধান্তস্বরূপ, আব্দুল-বাহা বাহা’উল্লাহর স্বর্গারোহণের স্মৃতিবার্ষিকী পালন যুক্ত করেন, ফলে সর্বমোট নয়টি পবিত্র দিন হল। অন্য আরও দুইটি বার্ষিকী যা পালিত হয়ে থাকে যে বার্ষিকীতে কাজকর্ম স্থগিত থাকে না, সেগুলি চুক্তিপত্রের দিবস ও আব্দুল বাহা’র মৃত্যুবার্ষিকী। “দি বাহা’ই ওয়ার্ল্ড” ভলিউম ঢঠওওও-এ বাহা’ই পঞ্জিকা অধ্যায়টি দেখুন।
140সর্বমহান উৎসবটি যথার্থ-ই উৎসবসমূহের সম্রাট ¶112
“রিজওয়ান-উৎসবের একটি উদ্ধৃতি (উদ্ধৃতি (টীকা 107 ও টীকা 138)
)
141ঈশ্বর ইতিপূর্বে বিশ্বাসীদের প্রত্যেকের উপর তাঁহার অধিকারভুক্ত বস্তুসমূহ হইতে আমাদের সিংহাসনের সমীপে অমূল্য নৈবেদ্য দানের কর্তব্য আরোপ করিয়াছিলেন। এখন....এই বাধ্যবাধকতা হইতে অব্যাহতি প্রদান করিয়াছি ¶114
এই অনুচ্ছেদটি বায়ানের একটি অনুবিধিকে রহিত করছে, যা আদেশ করেছিল যে, ঈশ্বর যাকে প্রকাশ করবেন তাঁর আবির্ভাবে, ইহাদের বৈশিষ্ট্যে অতুলনীয় সমস্ত বস্তু তাঁর সমীপে পেশ করতে হবে। বা’ব বর্ণনা করেছিলেন যে, যেহেতু ঈশ্বরের প্রকাশ তুলনাতীত, তাই যা কিছু ইহার বৈশিষ্ট্যে অতুলনীয়, তা ন্যায়সংগতভাবে তাঁর জন্য সংরক্ষণ করতে হবে, যদি না তিনি ভিন্ন কোন আদেশ প্রদান করেন।
142প্রভাতকালে ¶115
বাহা’ই উপাসনালয় মাশ্রিকুল আয্কারে প্রভাতকালীন যদিও ঈশ্বরের কিতাবে নির্ধারিত প্রকৃত সময় হচ্ছে যদিও ঈশ্বরের গ্রন্থে “ঊষালগ্নে” শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়েছে, “দিনের সবচেয়ে শুরুতে, প্রভাত ও সূর্যোদয়ের মধ্যেবর্তী সময়ে, অথবা সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা পর পর্যন্ত ” হলেও ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য। (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 15)।
143এই ফলকলিপিগুলি তাঁহারই সীলমোহর দ্বারা সু-শোভিত করা হইয়াছে, যিনি প্রভাতের আবির্ভাব ঘটান, যিনি তাঁহার কন্ঠস্বর স্বর্গসমূহ এবং মর্ত্যরে মধ্যে উত্তোলন করেন ¶117।
বাহা’উল্লাহ পুনঃ পুনঃ তাঁর লিখনাবলীসমূহের সম্পূর্ণ অখ-তাকে ঈশ্বরের বাণীস্বরূপ দৃঢ়রূপে ঘোষণা করেছেন। তাঁর কয়েকটি ফলকলিপি তাঁর সিলমোহরসমূহের মধ্যে একটি চিহ্নও বহন করছে। দি বাহা’ই ওয়ার্ল্ড, ভলিউম, চার পৃষ্ঠায়, বাহা’উল্লাহর কয়েকটি সিলমোহরের একটি আলোকচিত্র রয়েছে।
144ইহা গ্রহণযোগ্য নহে যে মানুষ, যাহাকে বিচারবুদ্ধি প্রদান করা হইয়াছে সে, এমন কিছু ব্যবহার করে যাহা ইহাকে নিঃশেষ করে ¶119
বাহা’ই লিখনাবলীতে অনেক উল্লেখ রয়েছে যা মদের ব্যবহার ও অন্যান্য উত্তেজনাকারী পানীয়সমূহের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এবং যা উল্লেখ করে যে, এইরূপ উত্তেজক দ্রব্যসমূহ ব্যক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।
তাঁর ফলকলিপিসমূহের একটিতে বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে:
সতর্ক হও যেন তোমরা ঈশ্বরের মদিরাকে তোমাদের নিজেদের মদিরার সহিত বিনিময় না কর, কারণ ইহা তোমাদের মনকে হতবুদ্ধি করিবে, এবং সর্বগৌরবময়, অতুলনীয়, অনধিগম্য ঈশ্বরের মুখমন্ডল হইতে তোমাদের মুখমন্ডলসমূহকে অন্যদিকে ফিরাইয়া দিবে। ইহার নিকটবর্তী হইও না, কারণ, মহিমান্বিত, সর্বশক্তিমান, ঈশ্বরের আদেশে ইহা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হইয়াছে।
আব্দুল-বাহা ব্যাখ্যা করেন যে, আক্বদাস “হালকা ও কড়া উভয় পানীয়কেই” নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, এবং তিনি বিবৃত করেন যে, সুরাসার ঘটিত পানীয়সমূহের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কারণ হচ্ছে “সুরাসার মনকে বিপথে পরিচালনা করে এবং দেহকে দুর্বলতর করে”।
শৌগী এফেন্দী, তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে বিবৃত করেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র মদের ব্যবহারকেই অন্তর্ভুক্ত করে না, বরং “প্রতিটি বস্তু যা মনকে বুদ্ধিভ্রংশ করে” এবং তিনি বিশদ করেন যে, সুরাসারের ব্যবহার অনুমোদনীয় শুধু যখন এটি একটি ডাক্তারি চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত হয়, যা “একজন সুযোগ্য ও বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন চিকিৎসকের উপদেশ অনুযায়ী প্রয়োগ করা হয়, যাকে কোন বিশেষ পীড়া নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়”।
145তোমাদের মুখমন্ডল তাহার দিকে ফিরাইবে, যাহাকে ঈশ্বর অভিপ্রেত করিয়াছেন, যে এই প্রাচীন মূল হইতে শাখা বিস্তার করিয়াছে ¶121
বাহা’উল্লাহ এখানে তাঁর উত্তরাধিকারীরূপে আব্দুল বাহা’র সম্বন্ধে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করছেন এবং বিশ্বাসীদেরকে তাঁর প্রতি মুখ ফিরাতে আহ্বান করছেন। চুক্তিপত্রের গ্রন্থ, তাঁর ইষ্টিপত্রে, বাহা’উল্লাহ এই শ্লোকের উদ্দেশ্য প্রকাশ করেন। তিনি বিবৃত করেন : “এই পবিত্র শ্লোকের লক্ষ্য মহাশক্তিশালী শাখা ব্যতীত আর কেউ নয়”। “মহাশক্তিশালী শাখা”, বাহা’উল্লাহ কর্তৃক আব্দুল-বাহা’কে প্রদত্ত খেতাবগুলির একটি (টীকা 66 ও টীকা 184 ও দেখুন)।
146বায়ান গ্রন্থে আমাদের কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে তোমাদিগকে নিষেধ করা হইয়াছিল ¶126
ঈশ্বর যাকে প্রকাশ করবেন (বাহা’উল্লাহ্) তাঁর কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে বা’ব তাঁর অনুসারীদের নিষেধ করেছিলেন, যদি না তাদের প্রশ্নগুলি লিখিতভাবে উপস্থাপিত হয় এবং সেগুলির বিষয়বস্তু তাঁর অত্যুচ্চ মর্যাদার উপযুক্ত হয়। বা’ব-এর লিখনাবলী থেকে সংকলন দেখুন।
বাহা’উল্লাহ বা’ব-এর এই নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করেছেন, তিনি বিশ্বাসীদের এইরূপ প্রশ্ন করতে বলেছেন যা তাদের “জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন” এবং তিনি তাদেরকে এইরূপ “অসার প্রশ্নসমূহ” থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেন যেগুলি “পূর্ববর্তী সময়ের লোকদের” মনকে সম্পূর্ণরূপে আচ্ছন্ন করে রাখত।
147ঈশ্বরের গ্রন্থে এক বৎসরে মাসগুলির সংখ্যা উনিশ নির্ধারিত হইয়াছে। ইহাদের মধ্যে প্রথমটি এই নামের দ্বারা অলংকৃত হইয়াছে ¶127
বা’দী পঞ্জিকা অনুসারে বাহা’ই বৎসর প্রত্যেক 19 দিনের 19 মাস নিয়ে গঠিত, সৌরবর্ষের সহিত পঞ্জিকাটিকে সুবিন্যস্ত করার জন্য অষ্টাদশ ও ঊনবিংশতম মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট মলমাসের দিনগুলি (সাধারণ বর্ষে চার এবং অধিবর্ষে 5 দিন) সংযোজনসহ প্রত্যেক 19 দিনের 19 মাস নিয়ে গঠিত। বা’ব ঈশ্বরের নির্দিষ্ট গুণাবলী অনুসারে মাসগুলির নামকরণ করেছিলেন। বাহা’ই নববর্ষ, নওরোজ মার্চের মহাবিষুবের সহিত সমকালে সংঘটিত জ্যোতির্বিদ্যা অনুযায়ী স্থিরীকৃত (টীকা 26 দেখুন)। সপ্তাহের দিনগুলির এবং মাসগুলির নামসহ, আরও বিস্তারিত বিবরণের জন্য, বাহা’ই ওয়ার্ল্ড, ভলিউম ঢঠওওও-এ বাহা’ই দিনপঞ্জিকা অধ্যায়টি দেখুন।
148যাহা সমগ্র সৃজনকুলকে ছায়ায় আবৃত করিয়াছে ¶127
(ফারসী বায়ান-এ বা’ব বৎসরের প্রথম মাসটির নাম “বাহা” রেখেছিলেন। (টীকা 139 দেখুন)।
149পরম প্রভু আদেশ করিয়াছেন যে মৃতদের.....শবাধারে করিয়া সমাধিস্থ করিতে হইবে ¶128
বায়ান-এ বা’ব বিধান দিয়েছিলেন যে, মৃত ব্যক্তিটিকে স্ফটিক অথবা মসৃণ পাথর দ্বারা নির্মিত কফিনে সমাধিস্থ করতে হবে। শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে ব্যাখ্যা করেন যে, এই শর্তের তাৎপর্য ছিল মানবদেহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা যা “একদা মানুষের অমর আত্মা দ্বারা মহিমান্বিত করা হয়েছিল”।
সংক্ষেপে, মৃতদেহটির কবরস্থকরণের বাহা’ই আইনটি বিবৃত করছে যে, মৃত্যুর স্থান থেকে মৃতদেহটিকে এক ঘণ্টার রাস্তার বেশি বয়ে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ; দেহটিকে সিল্ক অথবা কার্পাস বস্ত্রের আচ্ছাদনে মোড়াতে হবে, এবং এর আঙ্গুলে একটি আংটি পরাতে হবে এর উপর উৎকীর্ণ লিপি থাকবে এই অর্থে “আমি ঈশ্বরের নিকট হইতে আসিয়াছিলাম এবং তিনি ব্যতীত আর সব কিছু হইতে বিছিন্ন হইয়া করুণাময়, সহানুভূতিশীল তাঁহার নামের প্রতি দৃঢ়সংলগ্ন হইয়া তাঁহার কাছে প্রত্যাবর্তন করিতেছি।’’; এবং কফিনটি স্ফটিকের, পাথরের অথবা শক্ত উত্তম কাঠের হবে। সমাধিস্থকরণের পূর্বে মৃতদের জন্য আদিষ্ট একটি নির্দিষ্ট প্রার্থনা পড়তে হবে (টীকা 10 দেখুন)। আব্দুল-বাহা ও অভিভাবকের দৃঢ়রূপে কথিত মতে, এই আইন শবদাহ নিবারণ করছে। আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা ও আংটি ব্যবহার প্রযোজ্য হবে তাদের জন্য যারা বয়ঃপ্রাপ্ত 15 বৎসর বয়স্ক (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 70)।
কফিনটি যে বস্তু দ্বারা নির্মিত হবে সে সম্পর্কিত আইনটির অর্থ হচ্ছে যে কফিনগুলি যথাসম্ভব টেকসই বস্তু দ্বারা নির্মাণ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে, সার্বজনীন বিচারালয় ব্যাখ্যা করেছেন যে, আক্বদাস-এ নির্দিষ্ট করে দেওয়া দ্রব্যাদি ছাড়াও, শবাধারটির জন্য প্রাপ্ত সর্বাপেক্ষা শক্ত কাঠ বা সিমেন্ট, বালি ও নুড়ির মিশ্রণে ঢালাই দ্বারা প্রস্তুত হলেও বাধ নেই। আপাততঃ এই বিষয়ে বাহা’ইগণ তাদের নিজেদের পছন্দে স্বাধীন।
150বায়ানের কেন্দ্রবিন্দু ¶129
বায়ান-এর বিন্দু হচ্ছে উপাধিসমূহের মধ্যে একটি, যদ্বারা বা’ব নিজেকে উল্লেখ করেছেন।
151মৃতদের পাঁচ খ- রেশম বা সুতি বস্ত্রে জড়াইতে হবে ¶130
বায়ান-এ, বা’ব নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, মৃতব্যক্তির দেহটি রেশম অথবা সুতি বস্ত্রের পাঁচটি চাদরে আবৃত করতে হবে। বাহা’উল্লাহ এই অনুবিধি সমর্থন ও অনুমোদন করেছেন এবং এই শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তাদের জন্য “যাহাদের সংগতি সীমাবদ্ধ তাহাদের জন্য দুই প্রকারের বস্ত্রের যে কোন একটির একটিমাত্র চাদর যথেষ্ট হইবে”।
আইনে উল্লেখিত “5টি চাদর” প্রসঙ্গে “পাঁচটি পূর্ণ-দৈর্ঘ্য আচ্ছাদন” অথবা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়ে আসা পাঁচ খ- বস্ত্র” সম্বন্ধে এতদুভয়ের মধ্যে কোনটি জিজ্ঞাসা করা হলে, বাহা’উল্লাহ উত্তর দেন যে, “5টি বস্ত্রের ব্যবহার” অভিপ্রেত (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 56)।
যে প্রক্রিয়ায় দেহটি মোড়ানো সে প্রসঙ্গে, কিভাবে দেহটিকে মোড়াতে হবে, যখন “5টি বস্ত্র” ব্যবহৃত হবে অথবা মাত্র “একটি চাদর” ব্যবহৃত হবে এ বিষয়ে বাহা’ই লিখনাবলীতে কোন ব্যাখ্যা নেই আপাততঃ এই বিষয়ে বাহা’ইগণ তাদের নিজেদের পছন্দে স্বাধীন।
152মৃতদেহ শহর হইতে এক ঘণ্টার অধিকতর দূরত্বে পরিবহন করিতে তোমাদের নিষেধ করা হইয়াছে ¶130
এই আদেশটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাধিস্থলে মৃতদেহটি বয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবহন নির্বিশেষে সময়ের স্থিতিকালকে এক ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা। বাহা’উল্লাহ দৃঢ়রূপে বলেন যে, যত শীঘ্রই সমাধিস্থকরণ সম্পন্ন হয়, “তত বেশি উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হবে” (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 16)।
যে স্থানে লোকটির মৃত্যু হয়েছে, যদি সেই শহর বা নগরটির সীমানা নিরূপণ করা যায়, তাহলে শহরটির সীমানা থেকে কবরস্থান পর্যন্ত এক ঘণ্টার যাত্রা হিসাব করা যেতে পারে। বাহা’উল্লাহর এই আইনটির মর্ম হচ্ছে মৃত লোকটি যেখানে মারা গেছে তার নিকটবর্তী স্থানে তাকে কবরস্থ করা।
153ঈশ্বর বায়ানে আরোপিত ভ্রমণ বিষয়ক নিষেধসমূহ তুলিয়া লইয়াছেন ¶131
বা’ব ভ্রমণ সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিলেন যা বায়ান-এর প্রতিশ্রুত সত্তার আগমনকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকার কথা, যে সময়ে বিশ্বাসীদেরকে এমনকি পদব্রজে হলেও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য বেরিয়ে পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কারণ তাঁর উপস্থিতি লাভ করা ছিল তাদের অস্তিত্বের-ই ফল ও উদ্দেশ্য।
154গড়িয়া তোল এবং মহিমান্বিত কর যমজ পবিত্রস্থানে অবস্থিত গৃহ দুইটিকে এবং অন্য স্থানসমূহকে, যেইখানে পরম করুণাময় তোমাদের প্রভুর সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে ¶133
বাহা’উল্লাহ “গৃহদ্বয়” রূপে বাগদাদে অবস্থিত তাঁর গৃহকে যা তিনি “সর্ব মহান গৃহ” রূপে আখ্যায়িত করেছেন এবং শিরাজে অবস্থিত বা’ব-এর গৃহকে সনাক্ত করেছেন, যার দুইটিকেই তিনি তীর্থস্থানরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন (প্রশ্ন-উত্তর 29, প্রশ্ন-উত্তর 32 এবং টীকা 54 দেখুন)।
শৌগী এফেন্দী ব্যাখ্যা করেছেন যে, “অন্য স্থানসমূহকে, যেখানে তোমাদের ....প্রভুর সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে” ঐ স্থানগুলিকে নির্দেশ করছে যেখানে ঐশী প্রকাশের ব্যক্তিসত্তা বসবাস করেছেন। বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, “যেখানে সেগুলি অবস্থিত - সেখানকার লোকেরা হয় প্রতিটি গৃহ, যেখানে সিংহাসনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছি ” যেখানে তিনি বসবাস করেছিলেন “অথবা উহাদের যে কোন একটিকে সংরক্ষণের জন্য মনোনীত করতে পারে” (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 32)। বাহা’ই প্রতিষ্ঠানসমূহ যমজ প্রকাশগণের সাথে সংযুক্ত কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থানকে সনাক্ত, দলিল দ্বারা প্রমাণ করেছে, এবং যেখানে সম্ভব হয়েছে, দখল নিয়েছে, এবং পুনঃস্থাপিত করেছে।
প্রশ্ন-উত্তর 29
155মনোযোগী হও, যেন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ কোন কিছু এই জীবন্ত গ্রন্থের শ্রবণ হইতে তোমাদিগকে বাধাগ্রস্ত না করে ¶134
“গ্রন্থ” হচ্ছে ঈশ্বরের প্রকাশগণের অবতীর্ণ বাণীর প্রমাণ-লিপি। “জীবন্ত গ্রন্থ” হচ্ছে ঐশী প্রকাশের ব্যক্তিসত্তার একটি উল্লেখ।
“জীবন্ত গ্রন্থ” সম্বন্ধে ফারসী বায়ানে বা’ব-এর একটি বিবৃতির প্রতি এই শব্দাবলীর পরোক্ষ উল্লেখ রয়েছে, যেখানে তিনি তাঁহাকে ঈশ্বর যাহাকে প্রকাশ করিবেন রূপে সনাক্ত করছেন। তাঁর ফলকলিপিসমূহের একটিতে বাহা’উল্লাহ স্বয়ং বিবৃত করেন: “ঈশ্বরের গ্রন্থটি এই যুবকের দেহ কাঠামোতে অবতীর্ণ হইয়াছে।”
আক্বদাস-এর এই শ্লোকটিতে এবং পুনরায় আক্বদাস-এর 168 নং অনুচ্ছেদে, বাহা’উল্লাহ নিজেকে “জীবন্ত গ্রন্থ” রূপে উল্লেখ করেন। তিনি “জীবন্ত গ্রন্থ” উক্তিসমূহকে খ-ন করার জন্য “অন্য প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীগণ”কে “তাদের পবিত্র গ্রন্থসমূহে যুক্তিতর্ক” অনুসন্ধান না করার জন্য সতর্ক করেন। তাঁর মর্যাদা স্বীকার করতে এবং এই নতুন প্রত্যাদেশে যা রয়েছে তার প্রতি দৃঢ়সংলগ্ন হতে তাদেরকে বিরত করার জন্য “গ্রন্থে” যা লিপিবদ্ধ রয়েছে তা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত না হওয়ার জন্য তিনি লোকদের উপদেশ দিয়েছেন।
156এই প্রত্যাদেশের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিস্বরূপ তাঁহার লেখনী হইতে প্রবাহিত হইয়াছিল যিনি ছিলেন আমার অগ্রদূত ¶135
এই অনুচ্ছেদে বাহা’উল্লাহ যে “শ্রদ্ধাঞ্জলি” উদ্ধৃত করছেন তা আরবী বায়ান থেকে গৃহীত।
157প্রকৃতপক্ষে তিনিই কিব্লাহ্ যাহাকে ঈশ্বর প্রকাশ করিবেন, যখনই তিনি স্থানান্তরিত হইবেন, ইহা স্থানান্তরিত হইবে, যতক্ষণ না তিনি স্থির হইবেন ¶137
এই শ্লোক সম্বন্ধে আলোচনার জন্য টীকা 7 ও টীকা 8 দেখুন।
158বায়ানে বিশ্বাসীর সঙ্গে ব্যতীত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অবৈধ। যদি কোন বিবাহের কেবল একটি পক্ষ এই ধর্ম গ্রহণ করে , তাহা হইলে স্বামী অথবা স্ত্রীর অধিকারভুক্ত স¤পত্তি অপরজনের কাছে অবৈধ গণ্য হইবে ¶139
এখানে বাহা’উল্লাহ বায়ান-এর যে অনুচ্ছেদটি উদ্ধৃত করেছেন তা “তাঁহাকে ঈশ্বর যাহাকে প্রকাশ করিবেন” তাঁর আগমনের আসন্নতার প্রতি বিশ্বাসীদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। একজন অ-বা’বীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার উপর ইহার নিষেধাজ্ঞা এবং ইহার অনুবিধি যে একজন স্বামী অথবা স্ত্রী যে এই ধর্ম গ্রহণ করেছে তার সম্পত্তি আইনসংগতভাবে অ-বাবী স্বামী বা স্ত্রীকে হস্তান্তর করা যাবে না তা বা’ব কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল, এবং পরবর্তীকালে এই অনুবিধি কার্যকর হওয়ার পূর্বে বাহা’উল্লাহ কর্তৃক রদ হয়েছিল। এই আইনটির উদ্ধৃতি দ্বারা বাহা’উল্লাহ ঐ বাস্তবতার আভাস দেন যে, এই প্রকাশ কালে বা’ব সুস্পষ্টভাবে অনুমান করেছিলেন যে, বাহা’উল্লাহর ধর্ম স্বয়ং বা’ব-এর ধর্মাপেক্ষা প্রসিদ্ধি লাভ করবে।
গড পাসেস বাই গ্রন্থে শৌগী এফেন্দী উল্লেখ করেন যে, বায়ানকে “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী পথপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত আইনসমূহের একটি সংহিতা ও অধ্যাদেশরূপে বিবেচনা না করে মূলতঃ প্রতিশ্রুত মহাপুরুষের উচ্চপ্রশংসাসূচক গ্রন্থরূপে” বিবেচনা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, “ইহার আরোপিত নিয়ম-কানুনগুলি পরিকল্পিতভাবে কঠোর, ইহার সঞ্চারিত নীতিসমূহ বৈপ্লবিক, ধর্মোপদেষ্টা ও লোকদেরকে তাদের বহু যুগের পুরাতন অসাড়তা থেকে জাগ্রত করার জন্য পূর্ব থেকে নিরূপিত, এবং সেকেলে ও নীতিহীন প্রতিষ্ঠানসমূহে একটি আকস্মিক ও মারাত্মক আঘাত হানতে ইহার কঠোর অনুবিধিগুলির মাধ্যমে সেই প্রত্যাশিত দিনটির আগমন বার্তার ঘোষণা করে, যখন “আহ্বানকারী একটি কঠিন বিষয়ের প্রতি আহ্বান করবেন, যখন তিনি “ যা কিছু তাঁর সম্মুখে রয়েছে তা ধ্বংস করবেন, এমন কি তাদের পথসমূহকে ধ্বংসসাধনকারী ঈশ্বরের বার্তাবাহকের মত যারা তাঁর পূববর্তী হয়েছিল”। (টীকা 109 দেখুন)
159বায়ানের কেন্দ্রবিন্দু ¶140
বা’ব-এর খেতাবসমূহের একটি।
160“সত্য সত্যই, আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই।’’ ¶143
বাহা’ই লিখনাবলীতে অনেক অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলি ঐশী প্রকাশ ও ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করে। বাহা’উল্লাহ ঐশ্বরের অনুপম ও অজ্ঞেয় প্রকৃতির উপর অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, “যেহেতু একক সত্য ঈশ্বরের সাথে তাঁর সৃষ্টির সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কোন বন্ধনসূত্র থাকিতে পারে না,” ঈশ্বর আদেশ করেছেন যে, “প্রত্যেক যুগে ও ধর্মবিধানে একটি পবিত্র ও নিষ্কলুষ আত্মাকে মর্ত্য ও স্বর্গের রাজ্যসমূহে প্রকাশ করা হইবে”। এই “নিগূঢ় ও স্বর্গীয় সত্তা”, ঈশ্বরের প্রকাশ, এর একটি মানবীয় প্রকৃতি রয়েছে যা “জড়জগতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত”, এবং একটি আধ্যাত্মিক প্রকৃতি রয়েছে যা “স্বয়ং ঈশ্বরের সত্তা থেকে জাত”। এ ছাড়াও তিনি এক “দৈত মর্যাদায়” ভূষিত।
প্রথম অবস্থাটি, যা তাঁর অন্তরতম সত্তার সহিত সম্বন্ধযুক্ত, তাঁকে সেই সত্তার কণ্ঠস্বর রূপে উপস্থাপন যা স্বয়ং ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর... দ্বিতীয় অবস্থাটি হচ্ছে মানবীয় মর্যাদা, নিুলিখিত শ্লোকগুলি উদাহরণ দ্বারা ব্যাখ্যা করছে : “আমি তোমাদের মত একজন মানুষ ব্যতীত আর কেহ নহি”। “বল প্রশংসা আমার পরম প্রভুর!” আমি একজন মানুষ, একজন বার্তাবাহক হইতে অধিক কিছু ?
এ ছাড়াও বাহা’উল্লাহ দৃঢ়রূপে বলেন যে, আধ্যাত্মিক রাজ্যে ঈশ্বরের সমস্ত বার্তাবাহকগণের মধ্যে এক “অপরিহার্য একত্ব” বিদ্যমান রয়েছে। তাঁরা সবাই “ঈশ্বরের সুষমা” প্রকাশ করেন, তাঁর নামাবলী ও গুণাবলী প্রকাশ করেন, এবং তাঁর প্রত্যাদেশ ধর্মের বাণী উচ্চারণ করেন। এই বিষয় তিনি বিবৃত করেন:
যদি ঈশ্বরের সর্বপরিবষ্টনকারী প্রকাশগণের কেহ ঘোষণা করেন: “আমি-ই ঈশ্বর”, সত্য সত্যই তিনি সত্য কথাই বলেন, এবং এতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ বারংবার প্রদর্শিত করা হয়েছে যে, তাঁদের প্রকাশ, তাঁদের নামাবলী ও তাঁদের গুণাবলী প্রকাশের মাধ্যমেই, ঈশ্বরের প্রকাশ, তাঁর নামাবলী এবং তাঁর গুণাবলী প্রকাশ করা হয়.....।
যদিও ঐশী প্রকাশগণ ঈশ্বরের নামাবলী ও গুণাবলী প্রকাশ করেন এবং মাধ্যমসমূহ যা দ্বারা মানব জাতি ঈশ্বর ও তাঁর প্রত্যাদেশ ধর্মের জ্ঞান লাভ করে , তা সত্ত্বেও শৌগী এফেন্দী বিবৃত করেন যে, ঐশী প্রকাশগণ “কখনও স্বয়ং ঈশ্বরের সারাৎসার, ঐ অদৃশ্য সত্তার সাথে অভিন্নরূপে গণ্য হবেন না”। বাহা’উল্লাহর সাথে সম্পর্ক সম্বন্ধে শৌগী এফেন্দী লিখেছিলেন যে, “যে মানব মন্দির এইরূপ একটি অতীব শক্তিশালী প্রত্যাদেশের মাধ্যমে হয়েছে,” তা ঈশ্বরের “সত্তার” সাথে অভিন্নরূপে গণ্য হবে না।
বাহা’উল্লাহর অবস্থার অনুপমতা এবং তাঁর প্রত্যাদেশের মহত্ত্ব সম্বন্ধে শৌগী এফেন্দী দৃঢ়রূপে বলেন যে, বাহা’উল্লাহর আগমনের দ্বারা অতীত প্রত্যাদেশসমূহের পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহে দৃষ্ট “ঈশ্বরের দিবস” সম্বন্ধে ভবিষদ্বাণীগুলি পূর্ণ হয়েছে :
তিনি ইসরাইলের প্রতি “চিরস্থায়ী পিতা”র অবতার, “দশ সহস্র ধার্মিক ব্যাক্তিসহ” অবতরণকারী “সেনাদলের পরম প্রভু” অপেক্ষা কোন অবস্থায় কম ছিলেন না; খ্রিষ্টীয় জগতে “পিতার জ্যোতিতে” প্রত্যাবর্তনকারী যিশুখ্রিষ্ট; শিয়া ইসলামে ইমাম হুসাইন-এর প্রত্যাবর্তন; সুন্নী ইসলামে “ঈশ্বরের আত্মা” যিশুখ্রিষ্টের অবতরণ; জোরোস্টারিয়ানদের প্রতি প্রতিশ্রুত শাহ্-বাহরাম; হিন্দুদের প্রতি কৃষ্ণের পুনঃঅবতরণ; বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রতি পঞ্চম বুদ্ধ।
ঈশ্বরের সমস্ত প্রকাশগণের সাথে তিনি যার অংশীদার সেই “ঈশ্বরত্ব ” অবস্থার যে বর্ণনা বাহা’উল্লাহ করেন তা হচ্ছে
...যে অবস্থায় কেহ তার নিজের কাছে মৃত্যুবরণ করে এবং ঈশ্বরের মধ্যে জীবিত থাকে। ঈশ্বরত্ব, যখনই আমি ইহার উল্লেখ করি, উহা আমার সম্পূর্ণ ও সুনিশ্চিত আত্মবিলোপ প্রকাশ করে। ইহা সেই অবস্থা যাহার মধ্যে আমার নিজের সুখ বা দুঃখের উপর, অথবা আমার জীবনের উপর, অথবা আমার পুনরুত্থানের উপর কোনই নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
এবং ঈশ্বরের সহিত তাঁর নিজের সম্পর্ক সম্বন্ধে, তিনি সাক্ষ্য দিচ্ছেন:
হে আমার ঈশ্বর, যখন আমি ঐ সম্পর্ক সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করি যাহা আমাকে তোমার সহিত সংযুক্ত করে, তখন আমি সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর কাছে ঘোষণা করিতে অনুপ্রাণিত হই “সত্য সত্যই আমি ঈশ্বর”; এবং যখন আমি আমার নিজ সত্তা বিবেচনা করি, দেখ, আমি ইহাকে কর্দম অপেক্ষা নিকৃষ্টতর দেখিতে পাই।
161যাকাত পরিশোধ ¶146
কোরআন-এ মুসলমানদের উপর অবশ্যপালনীয় একটি নিয়মিত দাতব্যরূপে যাকাত উল্লেখিত হয়েছে । সময়ের সাথে সাথে ধারণাটি একটি ভিক্ষাদান কর-এ পরিণত হয় যা সুনির্দিষ্ট সীমাসমূহকে ছাড়িয়ে, নির্দিষ্ট শ্রেণীর আয়সমূহ থেকে একটি নির্ধারিত অংশ গরীবদের ত্রাণকার্যের জন্য, বিভিন্ন দাতব্য উদ্দেশ্যে, এবং ঈশ্বরের ধর্মের সাহায্যার্থে প্রদান অবশ্যপালনীয় রূপে আরোপ করেছিল। বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রে অব্যাহতির সীমা বিভিন্ন হতো এবং করযোগ্য অংশের উপর দেয় শতকরা হারও বিভিন্ন হতো।
বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, যাকাতের আইন “কোরআন-এ যাহা প্রকাশিত হইয়াছে” তা অনুসরণ করবে ”(প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 107)। যেহেতু এইরূপ বিচার্য বিষয়সমূহ যেমন অব্যাহতির সীমা নির্ধারণসমূহ, সংশ্লিষ্ট আয়ের শ্রেণী, কতবার প্রদান করতে হবে, এবং বিভিন্ন শ্রেণীর যাকাতের মাত্রা সম্বন্ধে কোরআন-এ উল্লেখ করা হয় নাই, এই বিষয়গুলি ভবিষ্যতে সার্বজনীন বিচারালয়কে নির্ধারণ করতে হবে। শৌগী এফেন্দী উল্লেখ করেছেন যে, এইরূপ আইন প্রণীত হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাসীগণ তাদের উপায় ও সম্ভাব্যতা অনুসারে বাহা’ই অর্থভান্ডারে নিয়মিত দান করবে।
162ভিক্ষা করা অবৈধ এবং যে ভিক্ষা করে তাহাকে ভিক্ষা দেওয়া নিষিদ্ধ ¶147
একটি ফলকলিপিতে আব্দুল-বাহা এই শ্লোকটির অর্থ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বিবৃত করেন যে, “ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ এবং যে সমস্ত লোক ভিক্ষা করাকে তাহাদের পেশারূপে গ্রহণ করিয়াছে, তাহাদেরকে ভিক্ষা দান করা নিষিদ্ধ”। একই ফলকলিপিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, “লক্ষ্য হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির সমূলে উৎপাটন করা। তা সত্ত্বেও যদি একজন লোক জীবিকা অর্জনে অসমর্থ হয়, নিদারুণ দারিদ্র্যে পীড়িত হয় অথবা অসহায় হয়ে পড়ে, তাহলে ধনবানদের অথবা প্রতিনিধিদের অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে এই লোকের জীবন-ধারণের জন্য একটি মাসিক ভাতা বরাদ্দ করা.. “প্রতিনিধিদের” দ্বারা লোকদের প্রতিনিধি বোঝাচ্ছে, অর্থাৎ বিচারালয়ের সদস্যদের বোঝাচ্ছে।”
যারা ভিক্ষা করে, তাদের ভিক্ষা দেওয়া নিষেধ, উক্তিটি ব্যক্তিবর্গ এবং আধ্যাত্মিক পরিষদগুলিকে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদেরকে আর্থিক সাহায্য দান অথবা তাদেরকে এইরূপ কর্মদক্ষতা অর্জনের সুযোগ প্রদানে বাধা দান করে না যা তাদেরকে জীবিকা অর্জনে সমর্থ করবে (টীকা 56 দেখুন)।
163অতীতে যে কেহ অন্যের দুঃখের কারণ হইত, তাহার জন্য ...জরিমানার ... নির্ধারিত হইয়াছিল ¶148
কারো দ্বারা তার প্রতিবেশীর দুঃখ ঘটানোর কারণে একটি জরিমানা প্রদান বিষয়ক ফারসী বায়ানের আইনটি বাহা’উল্লাহ রদ করেন।
164পবিত্র লোত-বৃক্ষ ¶148
“পবিত্র লোত-বৃক্ষ”টি সাদরাতুল মুন্তাহা’র প্রতি একটি উল্লেখ “ঐ বৃক্ষটি, যার সীমা অতিক্রম করা যায় না” (টীকা 128 দেখুন); এখানে ইহা প্রতীকস্বরূপ বাহা’উল্লাহ্কে নির্দেশ ব্যবহার করা হয়েছে।
165তোমরা ঈশ্বরের শ্লোকসমূহ সকাল এবং সন্ধ্যায় আবৃত্তি কর ¶149
বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, “ঈশ্বরের শ্লোকসমূহ” আবৃত্তি করার জন্য অপরিহার্য “প্রয়োজন” হচ্ছে “ঈশ্বরের বাণী পাঠ করার” জন্য বিশ্বাসীদের “আগ্রহ ও প্রেমানুভূতি” (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 68)।
“ঈশ্বরের শ্লোকসমূহের” সংজ্ঞা সম্বন্ধে বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেন যে, ইহাা “যাহা কিছু বাক্যোচ্চারণের স্বর্গ হইতে অবতারিত হইয়াছে” তা নির্দেশ করে। প্রাচ্যের বিশ্বাসীদের একজনের প্রতি লিখিত একটি পত্রে শৌগী এফেন্দী বিশদ করেছেন যে, “ঈশ্বরের শ্লোকসমূহ” আব্দুল বাহা’র লিখনাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে না ; তিনি অনুরূপভাবে বিবৃত করেছেন, এই উক্তি তাঁর নিজের লিখনাবলীর প্রতিও প্রযোজ্য নয়।
166তোমাদিগকে প্রতি উনিশ বছর অতিবাহিত হইবার পর, তোমাদের গৃহের আসবাব-পত্রাদি নবায়নের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে ¶151
নবায়ন সম্বন্ধে আরবী বায়ান-এর এই আদেশ বাহা’উল্লাহ সমর্থন করেন, যদি কোন ব্যক্তি প্রতি 19 বৎসর অন্তর তার গৃহের আসবাব-পত্রাদি নবায়ন করতে সমর্থ হয়। আব্দুল-বাহা এই আদেশকে সুরুচি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, এই আইনটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে কোন ব্যক্তির উচিত তার ঐ সকল আসবাব-পত্র পরিবর্তন করা যেগুলি পুরাতন হয়ে গেছে, যেগুলির ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়েছে এবং বিরক্তিকর হয়েছে। এই আইন ঐরূপ সব বস্তুর উপর প্রযোজ্য নয় যেগুলি বিরল অথবা সংরক্ষিত সঞ্চিত সম্পদ, প্রাচীন নিদর্শন অথবা স্বর্ণালঙ্কার।
167তোমাদের পদসমূহ ধৌত করিবে ¶152
কিতাব-ই-আক্বদাস-এ বিশ্বাসীগণকে নিয়মিতভাবে øান করতে, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতে এবং সাধারণতঃ পরিচ্ছন্ন ও সুরুচির নির্যাস হতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। আইন ও অধ্যাদেশসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সংহিতা অধ্যায় 4.ঘ.3. ভ.1-7, প্রাসঙ্গিক অনুবিধিগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে পদ ধৌতকরণ সম্বন্ধে বাহা’উল্লাহ বিবৃত করেছেন যে, এক্ষেত্রে উষ্ণ জল ব্যবহার করাই অধিকতর বাঞ্ছনীয়; যদিও শীতল জলে ধৌত করা অনুমোদনীয় (প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-উত্তর 97)।
168তোমাদিগকে প্রচারবেদি ব্যবহার করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। যে কেহ তাহার প্রভুর শ্লোকসমূহ তোমাদিগকে আবৃত্তি করিয়া শোনাইতে ইচ্ছা করে, সে মঞ্চের উপর একটি চেয়ারে উপবেশন করুক ¶154
ফারসী বায়ান-এ এই অনুবিধিগুলির পূর্ববর্তী ঘটনা রয়েছে। বা’ব ধর্মোপদেশ প্রদান ও ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার জন্য বেদির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, ইহার পরিবর্তে, ঈশ্বরের বাণী স্পষ্টরূপে শ্রবণে সকলকে সমর্থ করার নিমিত্তে বক্তার জন্য মঞ্চের উপর একখানা চেয়ার রাখতে হবে।
এই আইনের মন্তব্য প্রসঙ্গে আব্দুল-বাহা এবং শৌগী এফেন্দী এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মাশ্রিকুল আয্কার (যেখানে ধর্মোপদেশ প্রদান নিষিদ্ধ, কেবল পবিত্র ধর্মগ্রন্থের বাণী পাঠ করা যেতে পারে), এখানে পাঠক দাঁড়াতে বা বসতে পারে। কিন্তু যদি স্পষ্টতরভাবে শ্রবণের জন্য প্রয়োজন হয় তাহলে একটি অল্প উচ্চতাবিশিষ্ট অস্থায়ী মঞ্চ ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু বেদি অনুমোদনীয় নয়। তাঁর ফলকলিপিসমূহের একটিতে যে কোন স্থানে বেদির ব্যবহার নিষেধ সম্পর্কে বারংবার উল্লেখ করেছেন, আব্দুল-বাহা জোর দিয়ে বলেন যে, বাহা’ইরা যখন জনসমাবেশসমূহে তাদের বক্তব্য প্রদান করবে, তখন তাদেরকে তা একটি অত্যন্ত বিনম্র ও আত্মত্যাগী মনোভাব সহকারে করতে হবে ।
169জুয়াখেলা ¶155
এই নিষেধাজ্ঞায় যেসব কার্যকলাপকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা বাহা’উল্লাহর লিখনাবলীতে ব্যাখ্যা করা হয় নাই। আব্দুল-বাহা ও শৌগী এফেন্দী উভয়েই যেরূপ উল্লেখ করেছেন এই বিস্তারিত নির্দিষ্টকরণের দায়িত্ব সার্বজনীন বিচারালয়কে দেওয়া হয়েছে। লটারিসমূহ, ঘোড়-দৌড় এবং ফুটবল খেলা, বিংগো এবং অনুরূপ কিছুর দফার উপর বাজী ধরা জুয়াখেলার নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত কি-না এই প্রশ্নের উত্তরে সার্বজনীন বিচারালয় প্রকাশ করেছেন যে, ইহা এইরূপ একটি বিষয় যা ভবিষ্যতে বিস্তারিতভাবে বিবেচিত হবে। ইতোমধ্যে এই বিষয়গুলি নিয়ে একটি সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য এবং এটা ব্যক্তি বিশ্বাসীদের বিবেকের উপর ছেড়ে দিতে পরিষদসমূহকে ও ব্যক্তিবর্গকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিচারালয় নির্দেশ দিয়েছেন যে, লটারিসমূহ, প্রতিযোগিতামূলক লটারিতে অংশগ্রহণ, ভাগ্যের খেলা ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্মের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা উপযুক্ত নয়।
170আফিম সেবন ....কোন দ্রব্যের ব্যবহার.... যাহা মানব মন্দিরে আলস্য ও অসাড়তা সৃষ্টি করে এবং দেহের ক্ষতিসাধন করে ¶155
বাহা’উল্লাহ কিতাব-ই-আক্বদাস-এর শেষ অনুচ্ছেদে আফিম ব্যবহারের এই নিষেধাজ্ঞা পুনঃ পুনঃ ব্যক্ত করেছেন। এই বিষয়ে শৌগী এফেন্দী বিবৃত করেন যে, “একটি সুরুচিসম্পন্ন ও পবিত্র জীবন”-এর জন্য অত্যাবশ্যক প্রয়োজনসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে “আফিম সেবন এবং অনুরূপ অভ্যাস গঠনকারী মাদকদ্রব্যসমূহ সম্পূর্ণরূপে বর্জন”। হিরোইন, হ্যাশিশ এবং অন্যান্য ক্যানাবিশ যেমন মারিযুয়ানা থেকে প্রাপ্ত দ্রব্যসমূহ, এছাড়াও মতিভ্রমকারী ভেষজ দ্রব্য যেমন খঝউ, পেইয়োটি এবং অনুরূপ দ্রব্যাদি এই নিষেধের অন্তর্ভুক্ত রূপে গণ্য।
আব্দুল-বাহা লিখেছেন:
আফিম সম্বন্ধে, ইহা নোংরা এবং অভিশপ্ত। ইহার ব্যবহারকারীকে ঈশ্বর যে শাস্তি প্রদান করেন তা থেকে ঈশ্বর আমাদিগকে রক্ষা করুন। পরম পবিত্র গ্রন্থের মূল ভাষ্যানুসারে ইহা নিষিদ্ধ, এবং ইহার ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিন্দিত। যুক্তি প্রমাণ করে যে, আফিম সেবন এক প্রকার উন্মাদনা, এবং অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, ইহার সেবনকারী মানবীয় রাজ্য থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়। ঈশ্বর এইরূপ এক জঘন্য কার্যের সম্পাদন থেকে সকলকে রক্ষা করুন, একটি কাজ যা মানুষের একেবারে প্রকৃত ভিতকে ধ্বংস করে দেয় এবং সেবনকারীকে চিরকালের জন্য নিঃস্ব করে। কারণ “আফিম আত্মাকে আঁকড়ে ধরে, যার জন্য সেবনকারীর বিবেক মরে যায়, তার মন নষ্ট হয়ে যায়, তার অনুভূতিসমূহ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ইহা স্বাভাবিক উত্তাপ নির্বাপিত করে। আফিম যে ক্ষতি সাধন করে, তার অপেক্ষা অধিকতর কোন ক্ষতি কল্পনা করা যায় না। ভাগ্যবান তারা যারা এর নামও উচ্চারণ করে না, তাহলে চিন্তা কর ঐ সেবনকারী কত চরম দুর্দশাগ্রস্ত।
হে তোমরা ঈশ্বরের প্রেমিকগণ! সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এই কালচক্রে উৎপীড়ন ও বল প্রয়োগ, বাধ্যকরণ ও অত্যাচার একযোগে নিন্দিত। তা সত্ত্বেও, এটা আদেশাত্মক যে, যে কোন উপায়ে আফিম সেবন নিবারণ করতে হবে, যাতে হয়তো মানব জাতি এই অত্যন্ত শক্তিশালী উপদ্রব থেকে মুক্ত হতে পারে। এবং অন্যথায় দুঃখ এবং যন্ত্রণা তারই উপর পতিত হবে যে তার প্রভুর প্রতি কর্তব্য পালনে অপারগ হবে।
তাঁর ফলকলিপিসমূহের একটিতে আব্দুল-বাহা আফিম সম্বন্ধে বিবৃত করেছেন: “ব্যবহারকারী, বিক্রেতা ও ক্রেতা সবাই ঈশ্বরের বদান্যতা ও করুণা থেকে বঞ্চিত”।
আরও একটি ফলকলিপিতে আব্দুল-বাহা লিখেছেন:
হ্যাশিশ সম্বন্ধে তুমি উল্লেখ করেছ যে অনেক পারস্যবাসী ইহার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। করুণাময় ঈশ্বর। সমস্ত মাদকদ্রব্যের মধ্যে এটা সর্বাপেক্ষা খারাপ এবং সুস্পষ্টভাবে ইহার নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ করা হয়েছে। এর ব্যবহার চিন্তাকে এলোমেলো করে দেয় এবং আত্মার সম্পূর্ণ অসাড়তা ঘটায়। কেমন করে একজন লোক নারকীয় বৃক্ষের ফল অনুসন্ধান করতে পারে, এবং এর অংশ গ্রহণপূর্বক একটি দানবের গুণাবলীর উদাহরণ হতে পারে ? কেমন করে একজন লোক এই নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য ব্যবহার করতে পারে এবং এইরূপে পরম করুণাময়ের আশীর্বাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারে?
অ্যালকোহল মনকে আচ্ছন্ন করে এবং মানুষকে অসংগতিপূর্ণ কাজে লিপ্ত করে, কিন্তু এই আফিম, নারকীয় বৃক্ষে এই নোংরা ফল, এবং এই অনিষ্টকর হ্যাশিশ্ মনকে সম্পূর্ণ বিলোপ করে, চেতনাকে নিশ্চল করে, আত্মাকে পাষাণে পরিণত করে, দেহকে ধ্বংস করে এবং মানুষকে হতাশাগ্রস্ত ও মতিচ্ছন্ন করে।
মনে রাখতে হবে যে, নির্দিষ্ট শ্রেণীর মাদকদ্রব্য গ্রহণের উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞা একটি ডাক্তারি চিকিৎসার অংশরূপে যোগ্য চিকিৎসকগণ কর্তৃক ব্যবস্থাপত্র অনুয়ায়ী ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করে না।
171“সার্বভৌমত্বের নিদর্শনে মহা উত্থান-পতনের রহস্যটি’’ ¶157
শেখ আহ্মদ-ই-আহসাই (1753-1831), যিনি ছিলেন শেখী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং “যমজ জ্যোতিষ্ক, যারা বা’ব-এর ধর্মের আগমন বার্তা ঘোষণা করেছিলেন” তাদের প্রথম, ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, প্রতিশ্রুত মহাপুরুষের আবির্ভাবে সব কিছুর অবস্থান পরিবর্তিত হবে, শেষটি প্রথমে হবে, প্রথমটি শেষে। বাহা’উল্লাহ তাঁর একটি ফলকলিপিতে “সার্বভৌমত্বের নিদর্শনে মহা উত্থান-পতনের রহস্যটি’’র “নিদর্শন ও পরোক্ষ উল্লেখ” উদ্ধৃত করেন। তিনি বিবৃত করেন: “এই উত্থান-পতনের মাধ্যমে তিনি মর্যাদাপূর্ণ জনকে হীনপদস্থ এবং হীনপদস্থ জনকে মর্যাদাপূর্ণ করেছেন”, এবং তিনি স্মরণ করেন যে, “যিশুখ্রিষ্টের সময়ে তাহারা যাহারা তাহাদের শিক্ষার জন্য বিখ্যাত ছিল, প-িত ও ধার্মিক ব্যক্তিগণ তাঁহাকে অস্বীকার করিয়াছিল, পক্ষান্তরে হীনপদস্থ মৎসজীবীরা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হইয়াছিল”। (টীকা 172 দেখুন)। শেখ আহমদ আহ্সাই সম্বন্ধে অতিরিক্ত তথ্যের জন্য দি ডন ব্রেকার অধ্যায় 1 এবং 10 দেখুন।
172এই “খাড়া আলিফ’’-এর শক্তি দ্বারা উত্তোলিত “ছয়’’ ¶157
তাঁর লিখনাবলীতে শেখ আহমদ আহ্সাই আরবী অক্ষর “ওয়াও”-এর উপর অত্যধিক জোর দেন। ডন ব্রেকারে নাবিল বিবৃত করেন যে, এই অক্ষর “বা’ব-এর জন্য স্বর্গীয় প্রত্যাদেশের একটি নূতন কালচক্রের আগমন সংকেত দিয়েছিল, এবং সেই সময় থেকে বাহা’উল্লাহ কিতাব-ই-আক্বদাস এইরূপ অনুচ্ছেদসমূহে “মহা উত্থান-পতনের রহস্যটি’’ এবং “সার্বভৌমত্বের নিদর্শন” ইত্যাদি পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে আসছেন।
“ওয়াও” অক্ষরের নামটি তিনটি অক্ষর নিয়ে গঠিত: ওয়াও, আলিফ, ওয়াও। আব্জদের গণনানুসারে, এই অক্ষরগুলির প্রতিটির সংখ্যাসূচক মান হচ্ছে, যথাক্রমে 6, 1 এবং 6 । শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত প্রাচ্যের বিশ্বাসীদের মধ্যে একজনের কাছে একটি পত্রে আক্বদাস-এর এই শ্লোকটির একটি ব্যাখ্যা দান করেন। তিনি বিবৃত করেন যে, “খাড়া আলিফ”টি বা’ব-এর আগমন নির্দেশ করে। আলিফের পূর্বে আগত প্রথম অক্ষরটির মান ছয়, যা আলিফ পূর্বে আসে, যা পূর্ববর্তী ধর্ম বিধানসমূহ ও প্রকাশগণের একটি নিদর্শন যা বা’ব-এর সময়ের পূর্ববর্তী সময়ের নির্দেশক, পক্ষান্তরে তৃতীয় শব্দটি, ইহারও একটি সংখ্যাসূচক মান ছয় রয়েছে, যা বাহা’উল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট প্রত্যাদেশের নিদর্শন প্রকাশ করছে, আলিফটির পর যা প্রকাশ করা হয়েছিল।
173অত্যাবশ্যক না হইলে তোমাদিগকে অস্ত্র বহন করিতে নিষেধ করা হইয়াছে ¶159
বাহা’উল্লাহ বায়ান-এর একটি আদেশকে সমর্থন করেন যাতে অত্যাবশ্যক না হলে অস্ত্র বহন করা অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। যে পরিস্থিতিগুলিতে কোন লোকের পক্ষে অস্ত্র বহন করা “অত্যাবশ্যক” হবে, এ বিষয়ে আব্দুল-বাহা একজন বিশ্বাসীকে একটি বিপজ্জনক পরিবেশে আত্মরক্ষার জন্য অনুমতি দেন। শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত একটি পত্রে আরও প্রকাশ করেছেন যে, একটি জরুরী অবস্থায়, যখন সাহায্যের জন্য আবেদন করার মত কোন বৈধ শক্তি নেই তখন একজন বাহা’ই তার জীবন রক্ষার্থে অনুমতিপ্রাপ্ত। আরও অনেকগুলি পরিস্থিতি রয়েছে যখন অস্ত্র প্রয়োজন হয় এবং বৈধভাবে ব্যবহার করা যাবে ; দৃষ্টান্তস্বরূপ, যেসব দেশে লোকেরা তাদের খাদ্য ও পোশাকের জন্য শিকার করে, এবং ধনুর্বিদ্যা, লক্ষ্য ভেদে নৈপুণ্য ও তরবারি দ্বারা আক্রমণ ও প্রতিরোধ করার কৌশলের অর্জনের অনুরূপ খেলাগুলিতে প্রয়োজন হয়।
সামাজিক পর্যায়ে বাহা’উল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত সমষ্টিগত নিরাপত্তার নীতিটি (গ্লিনিংস ফ্রম দি রাইটিংস অব্ বাহা’উল্লাহ্, ঈঢঠওও দেখুন) এবং শৌগী এফেন্দী কর্তৃক ব্যাখ্যায় (দি ওয়ার্ল্ড অর্ডার অব্ বাহা’উল্লাহ্-য় অভিভাবকের পত্র দেখুন) শক্তি প্রয়োগের বিলোপ করা হয়নি, বরং নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে “একটি পদ্ধতিতে শক্তিকে ন্যায়বিচারের সেবক করা হয়েছে” এবং যা একটি আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষাকারী বাহিনীর অস্তিত্ব ব্যবস্থা করে যা “সমগ্র রাষ্ট্রমন্ডলের জৈবিক ঐক্যকে রক্ষা করবে”। বিশারাৎ-এর ফলকলিপিতে বাহা’উল্লাহ আশা প্রকাশ করেন যে, “বিশ্বের সর্বত্র যুদ্ধের অস্ত্রগুলিকে পুনর্গঠনের যন্ত্রে পরিবর্তিত করা যাইতে পারে এবং মানুষের মধ্য হইতে কলহ ও বিবাদ দূরীভূত করা যাইতে পারে”।
অন্য একটি ফলকলিপিতে বাহা’উল্লাহ সমস্ত ধর্মের অনুসারীদের সাথে সাহচর্যের গুরুত্বের উপর জোর দেন; তিনি আরও বিবৃত করেন যে, “গ্রন্থ হইতে ধর্মযুদ্ধের আইনটি মোচন করা হইয়াছে”।
174রেশমী বস্ত্র পরিধান করিতে তোমাদিগকে অনুমতি দেওয়া হইয়াছে ¶159
ইসলামী প্রথানুসারে, ধর্মযুদ্ধের সময় ব্যতীত, সাধারণতঃ পুরুষদের রেশমী বস্ত্র পরিধান নিষিদ্ধ ছিল। এই নিষেধাজ্ঞা, কোরআন-এর শ্লোকসমূহের উপর ভিত্তিশীল ছিল না বিধায় বা’ব এটা রহিত করেন।
175পরম প্রভু, ....পোশাক পরিধান ও দাড়ি কাটার উপর অতীতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসমূহ হইতে অব্যাহতি দিয়াছেন ¶159
পৃথিবীর ধর্মসমূহের আইন ও ঐতিহ্যগত প্রথায় পোশাক সম্বন্ধে অনেক বিধি-নিষেধের উৎপত্তি হয়েছিল। দৃষ্টান্তস্বরূপ, শিয়া ধর্মোপদেষ্টাগণ নিজেদের জন্য একটি বৈশিষ্ট্যসূচক মস্তকাবরণ ও লম্বা ও ঢিলা বহির্বাস পরিধানকে গ্রহণ করেন এবং একসময়ে, লোকদেরকে ইউরোপীয় পোশাক পরতে নিষেধ করেন। পয়গম্বরের পোশাকের স্বরূপ হওয়ার আকাক্সক্ষায় মুসলিম প্রথাও গোঁফ ছাঁটার ও দাড়ির দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করে।
বাহা’উল্লাহ কোন লোকের পোশাক ও দাড়ির উপর এসব সীমাবদ্ধতা তুলে দেন। তিনি এসব বিষয় ব্যক্তির “বিচক্ষণতার” উপর ছেড়ে দেন এবং একই সময় বিশ্বাসীদেরকে শোভনতার সীমাসমূহ লঙ্ঘন না করতে এবং পোশাক সম্বন্ধে সকল বিষয়ে মধ্যপথ অবলম্বন করতে বলেন।
176হে ‘ক্কাফ’ ও রা*-এর ভূমি ¶164
ক্কাফ এবং রা হচ্ছে কিরমানের প্রথম দুইটি ব্যঞ্জনবর্ণ ইরানের একটি নগর ও প্রদেশের নাম।
177যাহা তোমার নিকট হইতে গুপ্তভাবে ও চুপিসারে চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত হইতেছে, তাহা আমরা উপলব্ধি করিতেছি ¶164
এই অনুচ্ছেদটি কিরমান শহরের সাথে সম্পর্কিত, মির্জা ইয়াহিয়ার অনুসরণকারী আজালীদের একটি দলের ষড়যন্ত্রসমূহের একটি উল্লেখ (টীকা 190 দেখুন)। তাদের মধ্যে মুল্লা জাফর, তার পুত্র শেখ আহমদ-ই-রুহি এবং মির্জা আকা খান-ই-কিরমানি (উভয়েই মির্জা ইয়াহিয়ার জামাতা), অধিকন্তু মির্জা আহমদ-ই-কিরমানি অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা শুধুমাত্র গোপনে ধর্মের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র-ই করেনি, তারা নিজেদেরকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রেও বিজড়িত করেছিল যা নাসিরুদ্দিন শাহ্-এর গুপ্তহত্যার শেষ সীমায় পৌঁছায়।
178তোমরা সেই শেখ-এর কথা স্মরণ কর, যাহার নাম ছিল মুহাম্মদ হাসান ¶166
শেখ মুহাম্মদ হাসান, শিয়া ইসলামের নেতৃস্থানীয় ব্যাখ্যাকারদের মধ্যে একজন, বা’বকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। শিয়া ব্যবহারতত্ত্বের বৃহদাকার রচনাবলীর গ্রন্থকার, তিনি 1850 সালের নিকটবর্তী সময়ে মৃত্যুবরণ করেন বলে শোনা যায়।
দি ডন ব্রেকার্স গ্রন্থে নাবিল, জীবন্ত বর্ণমালার একজন, মুল্লা আলী-ই-বস্তামি এবং শেখ মুহম্মদ হাসানের মধ্যে নজফে অনুষ্ঠিত পরস্পরের মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের বর্ণনা প্রদান করেন। মুল্লা আলি বা’ব-এর প্রকাশের ঘোষণা দেন এবং তাঁর প্রত্যাদেশের শক্তির উচ্চ প্রশংসা করেন। উক্ত শেখের প্ররোচনায় মুল্লা আলিকে তাৎক্ষণিকভাবে একজন বিধর্মী ঘোষণা করা হয় এবং পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিচার করা হয়েছিল, ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়, এবং কঠোর পরিশ্রমের দন্ডাদেশ প্রদান করা হয়।
179গম ও যব পরিষ্কারকারী ¶166
ইস্পাহানের বা’ব-এর ধর্ম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি মুল্লা মুহম্মদ জাফর গনদুম-পাক-কুন সম্বন্ধে এটি একটি পরোক্ষ উল্লেখ। ফারসী বায়ান-এ তিনি “শিষ্যত্বের পোশাক পরিধানকারী” একজন হিসাবে উল্লেখিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। দি ডন ব্রেকার্সে, নাবিল এই “গম পরিষ্কারক” কর্তৃক ঐশ্বরিক বাণীর অকপট গ্রহণ সম্বন্ধে এবং নতুন প্রত্যাদেশের প্রতি তার অত্যন্ত আগ্রহশীল পক্ষ সমর্থনের বিবরণ দেন। তিনি শেখ তার্বাসির দুর্গে প্রতিরক্ষাকারীদের দলে যোগদান করেছিলেন এবং ঐ অবরোধকালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
180মনোযোগী হও, যেন “নবী”, শব্দটি তোমাদিগকে এই মহামহিম ঘোষণা হইতে বাধাগ্রস্ত না করে ¶167
বাহা’উল্লাহ “অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন” লোকদেরকে সতর্ক করেন যে, পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে তাদের ব্যাখ্যাগুলি যেন ঈশ্বরের প্রকাশকে মেনে নেওয়া থেকে তাদেরকে বিরত না করতে পারে। প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীগণকে তাদের ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার প্রতি তাদের নিষ্ঠা তাঁর প্রত্যাদেশকে ঈশ্বরের সর্বশেষ বাণীরূপে হৃদয়ঙ্গম করতে এবং পরবর্তী কোন বার্তাবাহকের আবির্ভাবের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করার প্রবণতা যুগিয়েছে। ইহুদী ধর্মের, খ্রিষ্ট ধর্মের ও ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অনুরূপ ছিল। বাহা’উল্লাহ অতীত ধর্মবিধানসমূহের ও তাঁর নিজেরটি - উভয়ের সম্পর্কে সর্বশেষের ধারণাটি অস্বীকার করেন। মুসলিমদের সম্বন্ধে তিনি কিতাব-ই-ইক্কান-এ লিখেছিলেন যে, “কোরআন-এর লোকেরা .... ‘নবীদের সিলমোহর’ শব্দগুলিকে তাহাদের চক্ষুসমূহকে আবৃত করিতে”, “তাহাদের ধীশক্তিকে ক্ষীণ ও ম্লান করিতে, এবং তাঁহার বহুবিধ অনুকম্পার কৃপা হইতে তাহাদিগকে বঞ্চিত করিতে দিয়াছে”। তিনি দৃঢ়রূপে বলেন যে, “এই প্রসঙ্গটি.... সমগ্র মানবজাতির প্রতি একটি কঠিন পরীক্ষাস্বরূপ হইয়াছে”, এবং তাদের ভাগ্যে বিলাপ করছে “যাহারা এই শব্দগুলির প্রতি দৃঢ়সংলগ্ন থাকিয়া তাঁহাকেই অবিশ্বাস করিয়াছে, যিনি তাহাদের প্রকৃত অবতরণকারী”। বা’ব এই একই প্রসঙ্গের উল্লেখ করেন যখন তিনি তাদের সতর্ক করেছিলেন: “নামাবলীকে একটি পর্দার মত তোমাদিগকে তাঁহার নিকট হইতে আড়াল করিতে দিও না যিনি তাহাদের পরম প্রভু, এমন কি নবী নামটিও নহে, কারণ এইরূপ একটি নাম তাঁহার উচ্চারণের একটি সৃষ্টি ব্যতীত অন্য কিছু নহে।”
181“প্রতিনিধিত্বের’’ কোন উল্লেখ তোমাদিগকে তাঁহারই সর্বময় কর্তৃত্ব হইতে বঞ্চিত না করে, যিনি ঈশ্বরের প্রতিনিধি ¶167
এখানে অনূদিত “প্রতিনিধিত্ব” শব্দটি মূল আরবীতে হচ্ছে “বিলায়েত”, যার “প্রতিনিধিত্ব”, “অভিভাবকত্ব”, “তত্ত্বাবধায়কত্ব” ও “উত্তরাধিকারিত্ব” সহ আরও কয়েকটি অর্থ রয়েছে। ইহা স্বয়ং ঈশ্বর, তাঁর বার্তাবাহক অথবা ঐ সমস্ত লোকদের সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়, যারা একজন বার্তাবাহকের নিযুক্ত উত্তরাধিকারী।
আক্বদাস-এর এই শ্লোকে, বাহা’উল্লাহ এইরূপ ধারণাসমূহকে বাস্তবিক “ঈশ্বরের প্রতিনিধি”, এই নব ঐশী প্রকাশের “সার্বভৌম ক্ষমতার” ন্যায্যতা স্বীকারে বাধাগ্রস্ত করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।
182তোমরা করিমের কথা স্মরণ কর ¶170
হাজী মির্জা মুহম্মদ করিম খাঁন-ই-কিরমানি (1810-সিরকা 1873) সৈয়দ কাজিম যিনি শেখ আহমদ-ই-আহ্সাই-এর নিযুক্ত উত্তরাধিকারী ছিলেন (টীকা 171 এবং 172 দেখুন) এর মৃত্যুর পর শেখী সম্প্রদায়ের স্ব-নিযুক্ত নেতা ছিলেন। তিনি শেখ আহমদের শিক্ষা-দীক্ষার উন্নতি বিধানের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। যেসব মত তিনি প্রকাশ করেছিলেন তা তাঁর সমর্থক ও বিপক্ষদের মধ্যে একইভাবে বাদানুবাদের বিষয়বস্তু হয়েছিল।
তিনি তাঁর যুগে নেতৃস্থানীয় প-িত ও ফলপ্রসূ গ্রন্থকারদের মধ্যে অন্যতম হিসাবে গণ্য ছিলেন, তিনি জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য পুস্তক ও পত্র রচনা করেছিলেন - যা ঐ সময়ে অধ্যয়ন করা হতো। তিনি সক্রিয়ভাবে বা’ব ও বাহা’উল্লাহ উভয়ের বিরোধিতা করতেন, এবং বা’বকে ও তাঁর শিক্ষা-দীক্ষাকে আক্রমণ করার জন্য তাঁর প্রবন্ধসমূহ ব্যবহার করতেন। কিতাব-ই ইক্কান, বাহা’উল্লাহ তার রচনাবলীর ভাব ও বিষয়বস্তুর নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং সেগুলির মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেন যার মধ্যে বা’ব-এর প্রতি অস্বীকারসূচক পরোক্ষ উল্লেখ ছিল। শৌগী এফেন্দী তাঁকে “অপরিমিতরূপে উচ্চাভিলাষী ও কপটাচারী” রূপে বর্ণনা করেন, এবং বর্ণনা করেন কিভাবে তিনি “শাহ্-এর বিশেষ অনুরোধে নূতন ধর্মটি ও ইহার শিক্ষাবলীকে তাঁর একটি প্রবন্ধে বিদ্বেষপূর্ণভাবে আক্রমণ করেছিলেন”।
183হে তোমরা বাহা’র বিজ্ঞজনেরা ¶173
বাহা’উল্লাহ তাঁর অনুসারীদের মধ্যে বিজ্ঞজনদের উচ্চ প্রশংসা করেন। তাঁর চুক্তিপত্রের গ্রন্থে, তিনি লিখেছিলেন: “বাহা’র জনমন্ডলীর মধ্যে শাসকবর্গ ও বিজ্ঞজনেরা আশীষপূতঃ”। এই বিবৃতি উল্লেখ করে শৌগী এফেন্দী লিখেছেন:
এই পবিত্র কালচক্রে “বিজ্ঞজনেরা” একদিকে ঈশ্বরের ধর্মবাহুগণ; এবং অন্যদিকে শিক্ষকগণ এবং তাঁর শিক্ষা-দীক্ষার বিস্তারকারীগণ এরা ধর্মবাহুর মর্যাদাসম্পন্ন নয়, কিন্তু এরা শিক্ষাদান কার্যে উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছে। “শাসকবর্গ” সম্বন্ধে, এদেরকে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের সদস্য বুঝাচ্ছে। এইসব মহান ব্যক্তিবর্গের করণীয় কর্তব্য ভবিষ্যতে নির্ধারিত হবে।
ঈশ্বরের ধর্মবাহুগণ বাহা’উল্লাহ কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং তাঁদের উপর বিভিন্ন দায়িত্ব ন্যস্ত, বিশেষভাবে তাঁর ধর্ম রক্ষার ও প্রচারের দায়িত্বসমূহ। “বিশ্বাসীগণের স্মরণে” নামক গ্রন্থে আব্দুল-বাহা অন্যান্য বিখ্যাত বিশ্বাসীগণকে ধর্মবাহু রূপে উল্লেখ করেছিলেন, এবং তাঁর ইষ্টিপত্রে তিনি ধর্মের অভিভাবককে তাঁর বিচক্ষণতায় ধর্মবাহু নিযুক্ত করার একটি অনুবিধি যুক্ত করেছিলেন। শৌগী এফেন্দী প্রথমে কিছুসংখ্যক বিশ্বাসীকে মরণোত্তর ধর্মবাহুর পদে উন্নীত করেছিলেন, এবং তাঁর জীবনের শেষ ভাগে সবগুলি মহাদেশ থেকে মোট 32 জন বিশ্বাসীকে এই পদে নিযুক্ত করেছিলেন। 1957 সালে শৌগী এফেন্দীর মৃত্যুর এবং 1963 সালে সার্বজনীন বিচারালয়ের নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়কালে, বাহা’উল্লাহর প্রাথমিক পর্যায়ের বিশ্ব রাষ্ট্রমন্ডলীর কান্ডারী হিসাবে ধর্মবাহুগণ তাঁদের যোগ্যতায় ধর্মের বিষয়াদি পরিচালনা করেন (টীকা 67 দেখুন)। 1964 সালের নভেম্বরে, সার্বজনীন বিচারালয় সিদ্ধান্তে আসেন যে, ইহা ধর্মবাহু নিযুক্ত করাকে সম্ভব করার জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে না। এর পরিবর্তে, 1968 সালে বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্মের রক্ষণ ও প্রচার সংক্রান্ত ধর্মবাহুদের করণীয় কার্যকলাপ মহাদেশীয় উপদেষ্টা বোর্ড গঠন এবং 1973 সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠার দ্বারা ভবিষ্যতে সম্প্রসারিত করা হয়েছিল, যার একটি আসন পবিত্রভূমিতে রয়েছে।
সার্বজনীন বিচারালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেন্দ্রের উপদেষ্টা সদস্য এবং মহাদেশীয় উপদেষ্টাদের নিয়োগ করেন। সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যগণ মহাদেশীয় উপদেষ্টাদের দ্বারা নিযুক্ত হন। এই সকল ব্যক্তি শৌগী এফেন্দী কর্তৃক উপর্যুক্ত উদ্ধৃতিতে “বিজ্ঞজন”-এর সংজ্ঞায় পড়েন।
184গ্রন্থটির যাহা কিছু তোমাদিগের বোধগম্য নহে, তাহার জন্য তোমরা তাঁহারই শরণাপন্ন হইবে যিনি বৃক্ষের শক্তিশালী কা- হইতে শাখা বিস্তার করিয়াছেন ¶174
তাঁহার পবিত্র আদেশের ব্যাখ্যার অধিকার বাহাউল্লাহ্ আব্দুল বাহা’র উপর অর্পণ করিয়াছেন (145 নং টিকাও দেখুন)।
185জ্ঞানাতীত একত্বের বিদ্যাপীঠ ¶175
এই শ্লোকে এবং ইহার অব্যবহিত পরেরগুলিতে বাহা’উল্লাহ যে সকল কারণে কিছু সংখ্যক বা’বী বায়ান-এর প্রতিশ্রুত পুরুষরূপে তাঁর দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল সেগুলির একটির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাদের প্রত্যাখ্যান বা’ব কর্তৃক “তাহাকে যাহাকে ঈশ্বর প্রকাশ করিবেন”-এর প্রতি লিখিত একটি ফলকলিপির ভাষ্যের উপর ভিত্তিশীল ছিল যার বিপরীত পার্শ্বে বা’ব লিখেছিলেন, “তাহার ক্ষণিক দৃষ্টি ঈশ্বর যাহাকে প্রকাশ করিবেন প্রাথমিক বিদ্যালয় এই পত্র আলোকিত করুক”। এই ফলকলিপি সিলেকশান্স ফ্রম দি রাইটিংস অব দি বা’ব গ্রন্থে প্রকাশিত।
এই সকল বা’বী দৃঢ়তার সাথে বলেছিল যে, যেহেতু বাহা’উল্লাহ বা’ব অপেক্ষা দুই বৎসরের বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন, সেই হেতু “প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” এই ফলকলিপি তাঁর পক্ষে লাভ করা সম্ভব ছিল না।
এখানে বাহা’উল্লাহ ব্যাখ্যা করেন যে, এই উদ্ধৃতিটি এই অস্তিত্ব জগৎকে ছাড়িয়ে আধ্যাত্মিক জগৎসমূহে সংঘটিত ঘটনাবলীর অন্তর্ভুক্ত।
186আমরা ঈশ্বরের শ্লোকসমূহ গ্রহণ করিয়াছিলাম, যাহা তিনি আমাদিগকে প্রদান করিয়াছিলেন ¶175
তাঁর প্রতি “তাহাকে যাহাকে প্রকাশ করিবেন” লিখিত ফলকলিপিতে বা’ব তাঁর পক্ষ থেকে বাহা’উল্লাহর প্রতি বায়ান’কে একটি নৈবেদ্যস্বরূপ আখ্যায়িত করেন। সিলেকশান্স ফ্রম দি রাইটিংস অব দি বা’ব দেখুন।
187হে বায়ানের জনমন্ডলী ¶176
বা’ব-এর অনুসারীদের উল্লেখ।
188‘হ’ এবং ‘ও’ অক্ষরদ্বয় সংযুক্ত এবং একত্রে গ্রথিত ¶177
শৌগী এফেন্দী তাঁর পক্ষ থেকে লিখিত পত্রসমূহে “হ এবং ও” অক্ষরের গূঢ় তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। এগুলি “হও’ শব্দ গঠন করে, যা তিনি বিবৃত করেন, “ঈশ্বরের সৃজনী শক্তির অর্থ প্রকাশ করে যিনি তাঁর আদেশের মাধ্যমে সমস্ত বস্তুকে অস্তিত্বপ্রাপ্ত করেন”, এবং “ঈশ্বরের প্রকাশের শক্তি, তাঁর মহান আধ্যাত্মিক সৃজনী শক্তি”।
মূল আরবীতে আদেশব্যঞ্জক “হও” শব্দটি “ক্কাফ” এবং “নুন” অক্ষরদ্বয় দ্বারা গঠিত “কুন” শব্দ। সেগুলি শৌগী এফেন্দী কর্তৃক উপর্যুক্ত রীতিতে অনূদিত হয়েছে। এই শব্দটি সৃষ্টিকে অস্তিত্বপ্রাপ্ত হতে ঈশ্বরের আদেশের প্রতীক রূপে কোরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
189এই নতুন বিশ্ব-নিয়মতন্ত্র ¶181
ফারসী বায়ান-এ বা’ব বিবৃত করেন : “মঙ্গল তাহারই, যে বাহা’উল্লাহর নিয়মতন্ত্রের উপর তাহার স্থিরদৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং তাহার পরম প্রভুর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে। কারণ, নিশ্চিতরূপে তাঁহাকে প্রকাশিত করা হইবে। ঈশ্বর বাস্তবিকই অপরিবর্তনীয়ভাবে বায়ান-এ ইহা প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন”। শৌগী এফেন্দী এই “নিয়মতন্ত্র”-কে আক্বদাস-এ বাহা’উল্লাহর মনশ্চক্ষে দৃষ্ট পদ্ধতির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত করেন, যাতে তিনি মানব জীবনের উপর ইহার আমূল পরিবর্তনকারী ফলাফলের সাক্ষ্য প্রদান করেন এবং আইনসমূহ ও নীতিমালা প্রকাশ করেন যা ইহাকে কার্যসমূহ পরিচালনা করে।
“নতুন বিশ্ব-নিয়মতন্ত্রের” বৈশিষ্ট্য সমূহ বাহা’উল্লাহ ও আব্দুল বাহা’র লিখনাবলী এবং শৌগী এফেন্দী ও সার্বজনীন বিচারালয়ের পত্রসমূহে পুঙ্খনুপুঙ্খরূপে বর্ণিত হয়েছে। বর্তমান দিনের বাহা’ই প্রশাসনিক নিয়মতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলি যা বাহা’উল্লাহর বিশ্ব-নিয়মতন্ত্রের “কাঠামোগত ভিত্তি” গঠন করে, সেগুলি বর্ধিত হবে এবং বাহা’ই বিশ্ব রাষ্ট্র-মন্ডলীতে বিকশিত হবে। এই বিষয়ে শৌগী এফেন্দী দৃঢ়রূপে বলেন যে, যখন প্রশাসনিক নিয়মতন্ত্রে “ইহার সহায়ক অংশসমূহ, ইহার গঠনমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ, দক্ষতা ও উদ্দীপনা সহকারে কাজ করতে শুরু করবে, ইহার দাবি নিশ্চয়তার সাথে উপস্থাপন করবে এবং ইহার সামর্থ্য প্রদর্শন করবে কেবল মূল চালিকাশক্তিরূপে নয় - বরং সময়ের পূর্ণতায় সমগ্র মানব জাতিকে পরিবেষ্টন করার লক্ষ্যে নতুন বিশ্ব-নিয়মতন্ত্রের প্রকৃত দৃষ্টান্তরূপে গণ্য হবে”।
এই নতুন বিশ্ব-নিয়মতন্ত্রের ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে অতিরিক্ত তথ্যের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ, বাহা’উল্লাহর বিশ্ব-নিয়মতন্ত্রে প্রকাশিত শৌগী এফেন্দীর পত্রগুলি দেখুন।
190হে কু-প্রবৃত্তির উৎস ¶184
ইহা সুভ্-ই-আজল (অনন্তকালের প্রভাত) রূপে পরিচিত, বাহা’উল্লাহর এক কনিষ্ঠ বৈমাত্রেয় ভ্রাতা মির্জা ইয়াহিয়ার প্রতি একটি উল্লেখ, যিনি তাঁর বিরুদ্ধে উত্থিত হন এবং তাঁর ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করেন। আসন্ন প্রতিশ্রুত মহাপুরুষের প্রকাশ অবধি বা’বী সম্প্রদায়ের জন্য প্রধান নেতারূপে সেবাদানের জন্য মির্জা ইয়াহ্য়িা বা’ব কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। সৈয়দ মুহম্মদ-ই-ইস্ফাহানির প্ররোচনায় (টীকা 192 দেখুন), মির্জা ইয়াহিয়া বা’ব কর্তৃক ন্যস্ত দায়িত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেন, এবং তাঁর উত্তরাধিকারী বলে দাবি করেন, এবং বাহা’উল্লাহ্্ বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন, এমন কি তাঁকে হত্যা করাতে চেষ্টা করেন। যখন বাহা’উল্লাহ আদ্রিয়ানাপোলে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর কাছে তাঁর দৌত্য ঘোষণা করেন তখন মির্জা ইয়াহিয়া একটি স্বাধীন প্রত্যাদেশের প্রাপক বলে নিজের দাবি তুলে ধরার মাধ্যমে তাঁর প্রতি সাড়া দেন। অবশেষে অল্প কয়েকজন ব্যতীত সবাই তার মিথ্যা দাবি প্রত্যাখ্যান করে। যারা আজালিস্ রূপে পরিচিত হয়। (টীকা 177 দেখুন)। শৌগী এফেন্দী তাঁকে “বা’ব-এর চুক্তিপত্রের প্রধান ভঙ্গকারী” রূপে বর্ণনা করেন (গড পাসেস বাই, অধ্যায় 10 দেখুন)।
191স্মরণ কর কিভাবে ধর্মের সেবার জন্য আমরা তোমাকে দিবা-রাত্র প্রতিপালন করিয়াছিলাম ¶184
গড পাসেস বাই গ্রন্থে, শৌগী এফেন্দী এই ঘটনাটি উল্লেখ করেন যে, বাহা’উল্লাহ্, যিনি মির্জা ইয়াহিয়ার চেয়ে তের বৎসরের বড় ছিলেন, তাঁকে উপদেশ দিয়েছিলেন এবং তাঁর শৈশব ও যৌবন কালে তাঁর তত্ত্বাবধান করেছিলেন।
192ঈশ্বর তাহাকে করায়ত্ত করিয়াছেন, যে তোমাকে বিপথগামী করিয়াছে ¶184
এটি সৈয়দ মুহম্মদ-ই-ইস্ফাহানির প্রতি একটি উল্লেখ, শৌগী এফেন্দী তাঁকে “বাহা’ই প্রত্যাদেশের বিরোধী” রূপে বর্ণনা করেছেন। তিনি একজন নীতিহীন চরিত্রের এবং অত্যন্ত আত্ম-অভিলাষী লোক ছিলেন যিনি বাহা’উল্লাহর বিরোধিতা করতে ও নিজের জন্য বার্তাবাহকত্বের দাবি করার জন্য মির্জা ইয়াহিয়াকে প্ররোচিত করেছিলেন (টীকা 190 দেখুন)। যদিও তিনি ছিলেন মির্জা ইয়াহিয়ার একজন ভক্ত, তবুও সৈয়দ মুহম্মদকে বাহা’উল্লাহর সঙ্গে আক্কায় নির্বাসিত করা হয়েছিল। তিনি বাহা’উল্লাহর বিরুদ্ধে লোকদের উত্তেজিত ও ষড়যন্ত্র করা অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরিস্থিতিসমূহের বর্ণনায় শৌগী এফেন্দী গড পাসেস বাই গ্রন্থে লিখেছেন:
“এক নতুন বিপদ এখন সুস্পষ্টরূপে বাহা’উল্লাহর জীবনের উপর ঘনিয়ে এলো। যদিও তিনি স্বয়ং বিভিন্ন উপলক্ষে, তাঁর অনুসারীদেরকে মৌখিক ও লিখিত উভয় প্রকারে তাদের উৎপীড়কদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন, এমন কি একজন দায়িত্বহীন আরব ধর্মান্তরিত ব্যক্তিকে বৈরুতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন, যে তার প্রিয়তম প্রভু যেসব অত্যাচার বরদাস্ত করেছিলেন, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছিল; সঙ্গীদের মধ্যে সাত জন গোপনে তাদের উৎপীড়কদের মধ্যে তিন জনকে খুঁজে বের করে হত্যা করেছিল, যাদের মধ্যে সৈয়দ মুহম্মদ এবং আকা’জান ছিল।”
একটি অত্যাচারিত সম্প্রদায় যে আতঙ্কগ্রস্ত হলো তা ছিল বর্ণনাতীত। বাহা’উল্লাহর ঘৃণামিশ্রিত ক্রোধের সীমা ছিল না। এই কাজ সংঘটিত হওয়ার অব্যবহিত পরে একটি প্রকাশিত ফলকলিপিতে তিনি এইভাবে তাঁর মনের আবেগ প্রকাশ করেন, “আমাদের উপর যাহা পতিত হইয়াছিল তাহা যদি আমরা উল্লেখ করি, আকাশসমূহ বিদীর্ণ হইবে এবং পর্বতসমূহ খ- খ- হইয়া ভাঙ্গিয়া পড়িবে”। তিনি আর এক উপলক্ষে লিখেছিলেন, “আমার বন্দীদশা আমার কোন ক্ষতি করিতে পারে না। যাহা কিছু আমার ক্ষতি করিতে পারে তাহা হইল তাহাদেরই আচরণ যাহারা আমাকে ভালবাসে, যাহারা আমার সহিত সম্পর্কযুক্ত বলিয়া দাবি করে এবং তথাপি এইরূপ অসৎকর্ম সম্পাদন করে যাহা আমার হৃদয়কে ও আমার লেখনীকে আর্তনাদ করায়।”
193একটিমাত্র ভাষা বাছিয়া লও এবং অনুরূপভাবে তোমরা একটি অভিন্ন বর্ণমালা গ্রহণ কর। ¶189
বাহা’উল্লাহ একটি সার্বজনীন ভাষা ও বর্ণমালা প্রবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর লিখনসমূহ এই প্রক্রিয়ায় দুইটি পর্যায় বিবেচনা করে। প্রথম পর্যায়ের একটি বিদ্যমান ভাষার নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত করে অথবা একটি আবি®কৃত ভাষা যা মাতৃভাষাসমূহের একটি সহায়করূপে পৃথিবীর সমস্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষা দিতে হবে। বিশ্বের সরকারগুলিকে তাদের সংসদের মাধ্যমে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ আইনকে কার্যকরী করতে আহ্বান করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়টি হবে, সুদূর ভবিষ্যতে, পৃথিবীর সকলের জন্য একটি মাত্র ভাষা ও একটি সাধারণ বর্ণমালার সার্বজনীন প্রবর্তন।
194আমরা মানবজাতির বয়ঃপ্রাপ্তির দুইটি সংকেতচিহ্ন ধার্য করিয়াছি ¶189
বাহা’উল্লাহর লিখনাবলীতে উল্লেখিত মানবজাতির বয়ঃপ্রাপ্তির প্রথম লক্ষণ হচ্ছে একটি বিজ্ঞানের উদ্ভব যা “স্বর্গীয় দর্শন” রূপে বর্ণিত, যা পদার্থসমূহের রূপান্তরপ্রাপ্তির একটি মৌলিক রীতির আবিষ্কারকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এটি জ্ঞানের ভবিষ্যৎ বিস্ময়কর প্রসারণের দীপ্তিসমূহের একটি আভাস।
“দ্বিতীয়” লক্ষণটি সম্বন্ধে কিতাব-ই-আক্বদাস-এ প্রকাশিত করা হয়েছে বলে বাহা’উল্লাহ উল্লেখ করেন; শৌগী এফেন্দী বিবৃত করেন যে, বাহা’উল্লাহ “তাঁর পরমপবিত্র গ্রন্থে পৃথিবীতে বসবাসকারী সকলের জন্য মাত্র একটি ভাষা মনোনয়নের ও একটি সার্বজনীন বর্ণমালা প্রবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন। ইহা এমন এক নির্দেশ, যখন ইহা পালিত হবে, সে সম্বন্ধে তিনি ঐ গ্রন্থে দৃঢ়রূপে বলেছেন, তা “মানবজাতির বয়ঃপ্রাপ্তির” নিদর্শনসমূহের একটি হবে।
মানবজাতির বয়ঃপ্রাপ্তির এই প্রক্রিয়া এবং পূর্ণতা প্রাপ্তির অগ্রগমনের উপর আরও অন্তর্দৃষ্টি বাহা’উল্লাহর নিলখিত বিবৃতিতে প্রদান করা হয়েছে:
বিশ্বের পূর্ণতা প্রাপ্তির নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হইল রাজার মর্যাদার গুরুদায়িত্ব কেহ গ্রহণ করিবে না। কাহারো নিকট রাজার মর্যাদা থাকিবে না যে ইহার গুরুদায়িত্ব একা বহন করিতে ইচ্ছুক। ঐ দিবস হইবে সেই দিবস যখন মানবজাতির মধ্যে বিজ্ঞতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হইবে।
মানবজাতির বয়ঃপ্রাপ্তিকে শৌগী এফেন্দী সমগ্র মানবজাতির ঐক্যসাধনের, একটি বিশ্ব রাষ্ট্রমন্ডলীর প্রতিষ্ঠার এবং “সমগ্র মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিগত, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের” এক নজিরবিহীন উদ্দীপনার সাথে সংশ্লিষ্ট করেছেন।
Bahá'u'lláh