[দ্বিপ্রহরের পর হইতে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে প্রত্যহ একবার পড়িতে হইবে]
আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, হে আমার প্রভু, তোমাকে জানিবার জন্য এবং তোমার উপাসনা করিবার জন্য তুমি আমাকে সৃষ্টি করিয়াছ। আমি,এই মুহূর্তে আমার শক্তিহীনতা ও তোমার সামর্থের, আমার দরিদ্রতা ও তোমার সম্পদের সাক্ষ্য দিতেছি। তুমি ঈশ্বর ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি বিপদে সাহায্যকারী, চির-সত্তাবিশিষ্ট।
চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে একবার মাত্র এই প্রার্থনা আবৃত্তি করিতে হইবে।
যে কেহ এই প্রার্থনা আবৃত্তি করিতে চাহে, তাহাকে দন্ডায়মান হইয়া ঈশ্বরের দিকে ফিরিতে হইবে এবং যখন সে তাহার স্থানে সুস্থিরভাবে দাড়াইয়া যাইবে, তখন তাহাকে ডান দিকে এবং বামদিকে স্থিরদৃষ্টিতে অবলোকন করিতে হইবে, যেন সে তাহার পরম প্রভুর দয়ার প্রতিক্ষা করিতেছে, যিনি পরম করুণাময়,পরম দয়ালু। তৎপর তাহাকে বলিতে হইবেঃ
‘‘হে নামাবলীর উপাস্য প্রভু এবং আকাশমন্ডলের সৃষ্টিকর্তা। আমি তোমার নিকট বিনীত প্রার্থনা করিতেছি, তাঁহাদের মাধ্যমে যাঁহারা তোমার অদৃশ্য সত্তার প্রভাতিক তারকাসমূহ, যাঁহারা পরম মহীয়ান, যাঁহারা পরম প্রভা, সমুজ্জ্বল, যেন তুমি আমার উপাসনাকে এইরূপ অগ্নিতে পরিণত কর, যাহা ঐ সকল অন্তরালকে ভস্মীভূত করিবে, যাহা আমাকে তোমার সুষমা দর্শন করিতে বাধা প্রদান করিয়াছে এবং এইরূপ আলোকে পরিণত কর যাহা তোমার সহিত মিলনের মহাসাগরের দিকে পরিচালিত করিয়া লইয়া যাইবে।”
তৎপর সে সানুনয় আবেদনের জন্য পবিত্র গৌরবান্তিত ঈশ্বরের দিকে তাহার হস্তদ্বয় উত্তোলন করিবে এবং বলিবে :
“হে পৃথিবীর সকলের অভিলাষিত ও জাতিসমূহের প্রিয়জন। তুমি আমাকে তোমারই দিকে প্রত্যাবৃত্ত হইতে এবং তুমি ব্যতীত অন্য সকলের আসক্তি হইতে মুক্ত থাকিতে এবং তোমার রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়া ধরিয়া থাকিতে দেখিতে পাইতেছ, যাহার গতিশক্তির প্রয়োগ দ্বারা সমুদয় পৃথিবী শক্তিশালী হইয়াছে। আমি তোমার সেবক হে আমার প্রভু এবং তোমার সেবকের সন্তান। তোমার ইচ্ছা ও আকাংখা অনুযায়ী কার্য করিবার জন্য তুমি আমাকে দন্ডায়মান ও প্রস্তুত দেখিতে পাইতেছ এবং তোমার সন্তোষ ব্যতীত আমি অন্য কিছুরই অভিলাষ করি না। আমি তোমার নিকট সানুনয় প্রার্থনা করিতেছি, তোমার করুণার মহাসাগর এবং তোমার অনুকম্পার সূর্যের মধ্যস্থতায়, যেন তুমি তোমার সেবকের সহিত সেরূপভাবে কার্য কর যেরূপ তুমি ইচ্ছা কর এবং বাসনা কর। তোমার সেই বিভূতির শপথ, যাহা সকল উল্লেখ ও প্রশংসা হইতে অনেক পবিত্র ও উচ্চ। তোমার নিকট হইতে যাহা কিছু অবতীর্ণ ও প্রকাশিত হয়, তাহা আমার অন্তরের অভিলাষ ও অন্তরাত্মার বাঞ্ছিত বস্তু। হে প্রভু, আমার প্রভু। আমার ইচ্ছা সমূহ ও আমার কার্যসমুহের প্রতি লক্ষ্য করিও না, বরং তোমার ইচ্ছার প্রতি লক্ষ্য কর, যাহা স্বর্গ ও মর্ত পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছে। তোমার পরম মহিমান্বিত নামের শপথ। হে সকল জাতির পরম প্রভু। তুমি যাহা ইচ্ছা করিয়াছ, আমি কেবল তাহাই ইচ্ছা করি এবং তুমি যাহা ভালবাস, আমি কেবল তাহাই ভালবাসি।”
তৎপর জানু পাতিয়া মাটির উপর মস্তক রাখিয়া বলিবে :
“তুমি ইহা হইতে এতই পবিত্র ও উন্নত যে তুমি ব্যতীত অপরের দ্বারা তোমার গুণাবলী বর্ণিত হইবে, অথবা তোমার বোধশক্তি ব্যতীত অপরের বোধশক্তি দ্বারা তুমি পরিচিত হইবে।”
তৎপর সে দাঁড়াইয়া যাইবে এবং বলিবে :
“হে আমার পরম প্রভু, আমার উপাসনাকে, স্বর্গীয় কাওসার প্রস্রবনের জীবন-সলিল সদৃশ কর, যেন তদ্বারা আমার অস্তিত্ব তোমার একাধিপত্যের স্থিতিকাল পর্যন্ত স্থায়ী থাকে এবং যেন তোমার জগৎসমূহের প্রত্যেক জগতে তোমার নাম উল্লেখ করিতে পারে।”
তৎপর সে সানুনয় আবেদনের জন্য তাহার হস্তদ্বয় পুনঃ উত্তোলন করিবে এবং বলিবে :
“হে তুমি, যাহার বিচ্ছেদে অন্তর ও অন্তরাত্মাসমূহ দ্রবীভূত হইয়াছে এবং যাহার প্রেমের অগ্নিতে সমস্ত পৃথিবীর লোকের অন্তর প্রজ্জ্বলিত হইয়াছে। আমি তোমার নিকট সবিনয় প্রার্থনা করিতেছি, তোমার সেই নামের সহায়তায়, যাহা দ্বারা তুমি সমগ্র সৃষ্টি-জগৎকে বশীভূত করিয়াছ, যেন তুমি আমাকে তাহা হইতে বঞ্চিত না কর, যাহা তোমার নিকট আছে, হে তুমি, যিনি সকল লোকের উপর প্রভুত্ব করিতেছ। তুমি দেখিতেছ, হে আমার পরম প্রভু, এই অজ্ঞাত ব্যক্তি তোমার মহিমার চন্দ্রাতপতলে ও তোমার করুণার পরিবেশের মধ্যে, তাহার পরম মহিমান্বিত আবাসের দিকে দ্রুততর অগ্রবর্তী হইতেছে, এই অপরাধী ব্যক্তি তোমার ক্ষমার মহাসাগর অন্বেষণ করিতেছে এবং এই বিনম্র ব্যক্তি তোমার প্রভাব প্রাঙ্গণ অনুসন্ধান করিতেছে, এই দরিদ্র প্রাণী তোমার ঐশ্বর্য্যের উদয়-স্থলের দিকে লক্ষ্য করিয়া রহিয়াছে। তুমি যাহা করিতে ইচ্ছা কর, আদেশ দানের কর্তৃত্ব তোমারই। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তুমি স্বর্গীয় কার্যে প্রশংসিত হওয়ার যোগ্য এবং তোমার আদেশসমূহ প্রতিপালিত হওয়ার যোগ্য এবং তোমার আদেশ-কার্যে তুমি সম্পুর্ণ স্বাধীন।”
তৎপর সে তাহার হস্তদ্বয় উত্তোলন করিবে এবং তিনবার ‘আল্লাহু আব্হা’ এই পরম মহীয়ান নাম উচ্চারণ করিবে। তৎপর হস্তদ্বয় জানুদ্বয়ের উপর স্থাপন করিয়া পরম পবিত্র ও পরম মবিহমান্বিত ঈশ্বরের জন্য মস্তক অবনত করিবে এবং বলিবেঃ
“তুমি দেখিতেছ, হে আমার প্রভু, তোমার উপাসনার স্পৃহায় তোমার স্মরণের ও উচ্চ প্রশংসার ঔৎসুক্যে, আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের মধ্যে আমার আত্মা কিরূপ আলোড়িত হইয়াছে, কিরূপে ইহা ঐ সমন্ধে সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে, যে সমন্ধে উচ্চারণের রাজ্যে এবং তোমার জ্ঞানের স্বর্গে তোমার অনুজ্ঞার রসনা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে। এই অবস্থায় হে আমার পরম প্রভু, তোমার নিকট হইতে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করিতে ভালবাসি, যেন আমি আমার দরিদ্রতা স্পষ্টরূপে প্রমাণ করিতে পারি এবং তোমার বদান্যতা ও তোমার ঐশ্বর্যের উচ্চ প্রশংসা করিতে পারি এবং তোমার শক্তি ও সামর্থ্য প্রকাশ করিতে পারি এবং তৎসঙ্গে আমার শক্তিহীনতা প্রচার করিতে পারি।”
তৎপর সে দাঁড়াইয়া যাইবে এবং বিনীত আবেদনের জন্য তৃতীয় বার তাহার হস্তদ্বয় উত্তোলন করিবে এবং বলিবেঃ
“তুমি প্রভু ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি সর্বশক্তিমান, তুমি সর্ব-বদান্যতাপূর্ণ। তুমি প্রভু ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি প্রাথমিক ও অন্তিম আদেশ-দাতা। হে প্রভু আমার ঈশ্বর। তোমার মার্জনা আমাকে সাহসী করিয়াছে এবং তোমার দয়া আমাকে সবল করিয়াছে, এবং তোমার আহ্বান আমাকে জাগ্রত করিয়াছে এবং তোমার অনুগ্রহ আমাকে উত্থিত করিয়াছে এবং তোমার দিকে আমাকে পরিচালিত করিয়াছে । পক্ষান্তরে, আমি কে ও আমার কি শক্তি আছে যে তোমার নৈকট্যের নগরের তোরণ-দ্বারে আমি দাঁড়াইতে সাহস করিব অথবা তোমার ইচ্ছার স্বর্গ হইতে যে সমুদয় আলোক উজ্জ্বলভাবে জ্বলিতেছে তাহার দিকে মুখ ফিরাইব? তুমি দেখিতেছ, হে আমার পরম প্রভু, এই হতভাগ্য ব্যক্তি তোমার অনুগ্রহের দ্বারে আঘাত করিতেছে, এবং এই দ্রুত অন্তর্ধানকারী আত্মা তোমার বদান্যতার হস্ত হইতে অনন্ত জীবনের কাওসার প্রস্রবণ অনুসন্ধান করিতেছে। সকল অবস্থায় সর্বসময়ে আদেশের আধিপত্য তোমারই, হে নাম সমূহের পরম প্রভু এবং আমার জন্য কেবল আত্মসমর্পণ এবং তোমার ইচ্ছার প্রতি স্বেচ্ছায় আনুগত্য, হে আকামন্ডলের সৃষ্টিকর্তা।”
তৎপর তিনবার সে তাহার হস্তদ্বয় উত্তোলন করিবে এবং বলিবেঃ
“প্রত্যেক মহান হইতে ঈশ্বর মহীয়ান”
তৎপর সে জানু পাতিয়া মাটির উপর মস্তক স্থাপন করিয়া বলিবে ?
“তুমি এতই পবিত্র, মহোচ্চ ও মহীয়ান যে, নৈকট্য প্রাপ্ত লোকদের প্রশংসা-গীতিও তোমার নৈকট্যের আকাশমন্ডলে আরোহণ করিতে সক্ষম নহে অথবা তোমার ভক্তদের অন্তর-পক্ষীসমূহ তোমার প্রবেশ-পথের দ্বারদেশেও পৌঁছিতে সমর্থ নহে। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে তুমি সকল গুণাবলী হইতে পবিত্রীকৃত এবং সকল নামাবলী হইতে পূত ও পবিত্র। তুমি প্রভু ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি পরম মহীয়ান, তুমি সর্ব প্রভাময়।”
তৎপর সে বসিয়া যাইবে এবং বলিবে :
“আমি তাহাই সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে যে সন্বন্ধে সকল সৃষ্ট-জীব উচ্চ স্বর্গস্থ জনমন্ডলী, সর্বোচ্চতম স্বর্গবাসীগণ এবং তাহারা ব্যতীত সর্ব-প্রভার দিকমন্ডল হইতে মহত্তের রসনা স্বয়ং সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে যে নিশ্চয়ই তুমি প্রভু, তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই এবং যিনি প্রকাশিত হইয়াছেন তিনি সত্যই, নিহিত রহস্য, অতি মুল্যবান নিভৃত সঞ্চিত নিদর্শন, যাহার মধ্যস্থতায় ‘কাফ’ ও ‘নুন’ (‘বি’ ও ‘ই’) বর্ণদ্বয় সংযুক্ত ও সম্মিলিত করা হইয়াছে। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, ইনি তিনিই যাঁহার নাম পরম সর্বোচ্চ লেখনী দ্বারা লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে এবং যিনি প্রভুর গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত হইয়াছেন, যিনি উচ্চতম সিংহাসনের ও মর্তের পরম প্রভু।
তৎপর সে সোজাভাবে দাঁড়াইয়া যাইবে এবং বলিবে :
“সে সর্ব অস্তিত্বের পরম প্রভু এবং সকল দৃশ্য ও অদৃশ্যের অধিপতি। তুমি আমার অশ্রুর প্রবাহ ও আমার উচ্চারিত দীর্ঘ নিঃশ্বাস সমূহ দেখিতেছ এবং তুমি আমার গভীর আর্তনাদ সমূহ ও আমার বিলাপধ্বনি এবং আমার অন্তরের শোক-বিলাপধ্বনি শ্রবণ করিতেছে। তোমার মহত্বের শপথ। আমার অবৈধ কার্যাবলী তোমার নৈকট্য লাভ করিতে আমাকে বাধা প্রদান করিয়াছে এবং আমার পাপ কার্যসমূহ তোমার পবিত্রতার প্রাঙ্গন হইতে আমাকে অনেক দূরে রাখিয়া দিয়াছে। তোমার প্রেম, হে আমার পরম প্রভু, আমাকে ঐশ্বর্যশালী করিয়াছে এবং তোমার নিকট হইতে বিচ্ছেদ আমাকে ধ্বংস করিয়াছে এবং তোমার নিকট হইতে দূরত্ব আমাকে দগ্ধ করিয়া দিয়াছে। আমি তোমার নিকট সবিনয় প্রার্থনা করিতেছি, এই মরুভূমিতে তোমার পদদ্বয়ের পদবিক্ষেপ সহায়ে এবং এই সীমাহীন অনন্তস্থানে তোমার মনোনীত জনগণের ‘আমি এখানে উপস্থিত’ ‘আমি এখানে উপস্থিত’ এই উচ্চারিত বাক্যের সহায়তায় এবং তোমার স্বর্গীয় প্রত্যাদেশের, নিঃশ্বাস-সমূহের এবং তোমার ঐশী-প্রকাশের মৃদূ প্রবাহিত প্রভাতিক সমীরণসমূহের সহায়তায় যেন তুমি আমাকে এইরূপ শক্তি প্রদান কর, যাহা দ্বারা আমি তোমার স্বর্গীয় সুষমা অবলোকন করিতে পারি এবং তোমার অবতীর্ণ গ্রন্থে যে সকল আদেশ প্রদত্ত হইয়াছে তদানুসারে কার্য করিতে পারি।
তৎপর সে তিনবার ‘আল্লাহু আব্হা ’ এই পরম মহীয়ান নাম উচ্চারণ করিবে এবং তৎপর হস্তদ্বয় জানুদ্বয়ের উপর স্থাপন করিয়া মাটির দিকে মস্তক অবনত করিয়া বলিবেঃ
“সকল প্রশংসা তোমারই হে আমার প্রভু, কেননা তোমাকে স্মরণ করিবার জন্য ও তোমার প্রশংসা স্তুতির জন্য তুমি আমাকে সাহায্য করিয়াছ, এবং যিনি তোমার নিদর্শনাবলীর প্রভাতিক তারকা তাঁহাকে আমার নিকট পরিচিত করিয়াছ, এবং তোমার পরম প্রভুত্বের সন্মুখে আমার মস্তক অবনত করিয়াছ এবং তোমার ঐশীত্বের নিকট আমাকে বিনয়াবনত করিয়াছ এবং তোমার মহত্বের রসনা দ্বারা যাহা উচ্চারিত হইয়াছে তাহা স্বীকার করিয়া লইতে বাধ্য করিয়াছ।”
তৎপর সে দাঁড়াইয়া যাইবে এবং বলিবে :
“হে প্রভু। আমার প্রভু। আমার পাপের ভারে আমার পৃষ্ঠদেশ অবনত হইয়াছে এবং অমনোযোগিতা আমাকে ধ্বংস করিয়াছে। আমি যখনই আমার মন্দ কার্যাবলী সমন্ধে এবং তোমার দয়ার উত্তম কার্য সমন্ধে চিন্তা করি, তখন আমার মধ্যে আমার অন্তর দ্রবীভূত হয়, এবং আমার শিরাসমূহে আমার রক্ত সিদ্ধ হইতে থাকে। তোমার সুষমার শপথ। হে পৃথিবীর সকলের আকাংখিত জন। তোমার দিকে আমার মুখ উত্তোলন করিতে আমার লজ্জাবোধ হইতেছে এবং আমার আকাংখার হস্ত তোমার বদান্যতার স্বর্গের দিকে উত্তোলিত হইতে লজ্জাবনত হইতেছে। তুমি দেখিতেছ, হে আমার প্রভু, কিরূপে আমার অশ্রুসমূহ তোমাকে স্মরণ করিতে ও তোমার গুণাবলীর প্রশংসা-গীতি গান করিতে আমাকে বাধা প্রদান করিতেছে, হে অত্যুচ্চ স্বর্গের সিংহাসনের এবং মর্তের পরম প্রভু। আমি তোমার নিকট সবিনয় প্রার্থনা করিতেছে, তোমার রাজত্বের নিদর্শনাবলী, তোমার আধিপত্যের রহস্যাবলীর সহায়তায়,-যেন তুমি তোমার প্রিয় ব্যক্তিগণের সহিত ঐরূপ কার্য কর যাহা তোমার বদান্যতার উপযুক্ত, হে সকল অস্তিত্বের পরম প্রভু এবং যাহা তোমার অনুকম্পার উপযোগী, হে দৃশ্য ও অদৃশ্য রাজ্যের সম্রাট।”
এবং তৎপর সে তিনবার ‘আল্লাহু আব্হা’ এই পরম মহীয়ান নাম উচ্চারণ করিবে এবং তৎপর জানু পাতিয়া মাটির উপর মস্তক রাখিয়া এই প্রার্থনা আবৃত্তি করিবেঃ
“সকল প্রশংসা তোমারই, হে আমার প্রভু, যেহেতু তুমি আমাদের জন্য তাহাই অবতীর্ণ করিয়াছ যাহা আমাদিগকে তোমার নিকটবর্তী করে এবং তোমার গ্রন্থসমূহে এবং তোমার ধর্ম শাস্ত্রসমূহে প্রত্যেক উত্তম বাক্য যাহা তুমি অবতীর্ণ করিয়াছ তাহা আমাদের জন্যই ব্যবস্থা করিয়াছ। হে আমাদের পরম প্রভু, আমরা তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি যেন তুমি বৃথা কল্পনাসমূহের ও অর্থহীন অনুমানসমূহের সৈন্যদল হইতে আমাদিগকে রক্ষা কর। তুমি, সত্য সত্যই সর্বশক্তিমান, সর্ব জ্ঞান সম্পন্ন।”
তৎপর সে তাহার মস্তক উত্তোলন করিবে ও বসিয়া যাইবে এবং প্রার্থনা আবৃত্তি করিবে :
“আমি সাক্ষ্য দিতেছি হে আমার প্রভু, সেই সমন্ধে যেই সমন্ধে তোমার মনোনীত জনগণ সাক্ষ্য দিয়াছেন এবং আমি তাহাই স্বীকার করিতেছি যাহা সর্বোচ্চ স্বর্গের অধিবাসীগণ এবং যাঁহারা তোমার মহিমান্তিত সিংহাসন পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছেন তাঁহারাও স্বীকার করিয়াছেন। স্বর্গ ও মর্তের রাজত্বসমূহ তোমারই, হে সমগ্র বিশ্বের পরম প্রভু।”
(এই প্রার্থনাটি প্রত্যহ প্রাতঃকালে, মধ্যাহ্ন (অপরাহ্নে) ও সন্ধ্যাকালে-এই তিন সময়ে আবৃত্তি করিতে হইবে। যে কেহ এই প্রার্থনা করিতে ইচ্ছা করে তাহাকে তাহার হস্তদ্বয় ধৌত করিতে হইবে এবং যখন সে হস্ত ধৌত করিবে তখন তাহাকে বলিতে হইবে-)
আমার হস্ত সবল কর, হে আমার ঈশ্বর, যেন ইহা তোমার গ্রন্থ এইরূপ দৃঢ়তার সহিত ধারণ করিতে পারে যে, পৃথিবীর সৈন্যবাহিনীও ইহার উপর কোন প্রতিরোধ শক্তি থাকিবে না। তৎপর ইহাকে রক্ষা কর যেন যাহার উপর ইহার কোন কর্তৃত্ব নাই তৎ সম্বন্ধে ইহা হস্তক্ষেপ করিতে না পারে। তুমি, সত্যই, সর্বশক্তিমান,পরম ক্ষমতাশালী
এরপর যখন সে তাহার মুখম-ল ধৌত করিবে তখন তাহাকে বলিতে হইবে-
“আমি তোমার দিকে আমার মুখমন্ডল ফিরাইয়াছি, হে আমার পরম প্রভু। তোমার পবিত্র আননের আলোকে ইহাকে আলোকিত কর। তৎপর ইহাকে রক্ষা কর, যেন তুমি ব্যতীত আর কাহারও দিকে ইহা নিজেকে ফিরাইতে না পারে।”
তৎপর তাহাকে উত্তর পশ্চিম কোণে মুখ ফিরাইয়া প্রার্থনার আসনে বসিয়া ৯৫(পঁচানব্বই) বার ‘আল্লাহু আব্হা ’ এই শব্দটি আবৃত্তি করিতে হইবে।
তৎপর তাহাকে দাঁড়াইতে হইবে এবং উত্তর পশ্চিম কোণে মুখ ফিরাইয়া (অর্থ্যাৎ উপাসনা-কেন্দ্রে বা প্যালেষ্টাইনের অন্তর্গত আক্কা নগরীর বাহ্জীর পবিত্র সমাধি-সৌধের দিকে) আবৃত্তি করিতে ইহবেঃ
‘‘ ঈশ্বর সাক্ষ্য দিতেছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই। প্রত্যাদেশ ধর্মের ও সৃষ্টির রাজস্ব তাঁহারই। তিনিই বাস্তবিক তাঁহাকে প্রকাশিত করিয়াছেন যিনি ঐশী প্রকাশের উদয়-স্থল, যিনি সিনাই পর্বতোপরি কথোপকথনকারী, যাঁহার দ্বারা সর্বোচ্চ দিকমন্ডল আলোকিত করা হইয়াছে এবং সিদ্রা বৃক্ষ (লোত বৃক্ষ), যাহার সীমা অনতিক্রমনীয়-বাক্যোচ্চারণ করিয়াছে এবং তাঁহার মাধ্যমে স্বর্গ ও মর্তস্থ সকলের নিকট এই আহব্বান ধ্বনি ঘোষণা করা হইয়াছে, দেখ, সর্বাধিপতি আসিয়া গিয়াছেন। স্বর্গ ও মর্ত, প্রভা ও আধিপত্য, সকলই ঈশ্বরের জন্য, যিনি সকল মানবের পরম প্রভু এবং স্বর্গের সিংহাসনের ও মর্তের অধিপতি।’’
তৎপর হস্তদ্বয় জানুদ্বয়ের উপর স্থাপন করিয়া দেহ ও মস্তক অবনত করিবে এবং বলিবে :
“হে ঈশ্বর। তুমি আমার প্রশংসার ও আমি ব্যতীত অপর সকলেরও প্রশংসার উর্ধ্বে, গৌরবান্তিত এবং আমার বর্ণনা ও স্বর্গ-মর্তের সকলের বর্ণনার উর্ধ্বে পবিত্র।’’
তৎপর, খোলা হস্তদ্বয়ের সহিত দাঁড়াইয়া, করতলদ্বয় উর্ধ্বে মুখের দিকে স্থাপন করিয়া, তাহাকে বলিতে হইবে :
“হে আমার প্রভু। তুমি তাহাকে নিরাশ করিও না, যে মিনতিপূর্বক তোমার করুণার ও অনুকম্পার অঞ্চল আশার অঙ্গুলি দ্বারা জড়াইয়া ধরিয়া রহিয়াছে, হে সকল কৃপা প্রদর্শনকারীর মধ্যে পরম কৃপাময়।’’
তৎপর বসিয়া সে এই প্রার্থনা আবৃত্তি করিবে :
“আমি তোমার একত্বের ও তোমার অদ্বিতীয়ত্বের সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি এবং আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, তুমিই প্রভু, তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই। তুমি, সত্য সত্যই, তোমার প্রত্যাদেশ ধর্ম অবতীর্ণ করিয়াছ এবং তোমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিয়াছ এবং স্বর্গ ও মর্তের সকল অধিবাসীর জন্য তোমার অনুকম্পার দ্বার সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছ। আশীষ ও শান্তি, অভিবাদন ও প্রভা, তোমার ঐ সকল বন্ধুদের উপর বর্ষিত হউক, যাহাদিগকে পার্থিব পরিবর্তন ও সম্ভাবনাদি তোমার দিকে অগ্রবর্তী হইতে নিবৃত্ত করিতে পারে নাই এবং যাহারা তোমার নিকট যাহা আছে তাহা পাইবার আশায়, তাহাদের যথাসর্বস্ব¦ দান করিয়াছে। তুমি সত্যই, চির ক্ষমাশীল সর্ব-বদান্যতাপূর্ণ।’’
যদি কেহ প্রার্থনায় দন্ডায়মান অবস্থায় সুদীর্ঘ প্রার্থনা-শ্লোক আবৃত্তি করার পরিবর্তে এই সংক্ষিপ্ত শ্লোকটি আবৃত্তি করে, তবে তাহার পক্ষে তাহা যথেষ্ট হইবে :
“ঈশ্বর সাক্ষ্য দিতেছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তিনি বিপদে সাহায্যকারী, চির সত্তাবিশিষ্ট।”
এবং এই প্রকারে যদি প্রার্থনাকালে শেষ উপবিষ্ট অবস্থায় এই সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা আবৃত্তি করে , তবে তাহার পক্ষে যথেষ্ট হইবে :
‘‘আমি তোমার একত্বের ও অদ্বিতীয়ত্বের সাক্ষ্য দিতেছি এবং আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, তুমিই প্রভু, তুমি ব্যতীত অন্য উপাস্য নাই।’’
হে তুমি, যাহার নৈকট্য আমার একমাত্র অভিলাষ, যাহার উপস্থিতি আমার একমাত্র আশা, যাহার স্বরণ আমার একমাত্র ভরসা, যাহার প্রভার প্রাঙ্গণ আমার একমাত্র লক্ষ্যস্থল, যাহার বাসস্থান আমার একমাত্র লক্ষ্য, যাহার নাম আমার আরোগ্য, যাহার প্রেম আমার অন্তরের উজ্জ্বলতা, যাহার সেবা আমার উচ্চতম আকাংখা।
আমি তোমার নিকট সবিনয় প্রার্থনা করিতেছি, -তোমার পবিত্র নামের সহায়তায় যাহার মধ্য দিয়া তুমি, যাহারা তোমাকে চিনিয়া লইয়াছে, তাহাদিগকে তোমার সমন্ধে জ্ঞানের উচ্চতম শীর্ষে উড্ডয়ন করিতে সামর্থ্য প্রদান করিয়াছ এবং যাহারা আন্তরিক ভক্তিভাবে তোমার অর্চনা করে, তাহাদিগকে তোমার পবিত্র অনুগ্রহ সমুহের প্রাঙ্গনের সীমার মধ্যে আরোহণ করিতে শক্তিদান করিয়াছ, যেন তোমার আননের দিকে আমার মুখ ফিরাইতে, তোমার প্রতি আমার চক্ষুদ্বয় নিবদ্ধ করিতে এবং তোমার প্রভার প্রশংসা-গান করিতে তুমি আমাকে সাহায্য দান কর।
আমি সেই ব্যক্তি, হে আমার পরম প্রভু, যে তুমি ব্যতীত আর সকলকে ভুলিয়া গিয়াছে এবং তোমার অনুকম্পার প্রভাতিক তারকার দিকে মুখ ফিরাইয়াছে, যে তোমার দরবারের নৈকট্য লাভের আশায় তুমি ব্যতীত আর সকলকে পরিত্যাগ করিয়াছে। অতঃপর আমার চক্ষুদ্বয়, তোমার সেই পবিত্র সিংহাসনের দিকে, -যাহা তোমার পবিত্র আননের আলোকের উজ্জ্বলতা সমূহের সহিত দীপ্তি প্রদান করে, -উত্তোলিত অবলোকন করিবে। অতঃপর, হে আমার প্রিয়জন, আমার জন্য তাহাই অবতীর্ণ কর, যাহা তোমার প্রত্যাদেশ ধর্মে অটল থাকিতে আমাকে সক্ষম করিবে, যেন অবিশ্বাসীদের সন্দেহাদি তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করিতে বাধা প্রদান করিতে না পারে। তুমি, সত্য সত্যই, শক্তিশালী, প্রভু, বিপদের সাহায্যকারী, সর্ব প্রভাময়, সর্বশক্তিমান।
হে পরম কারুণিক প্রভু। তোমাকে ধন্যবাদ, যেহেতু তুমি আমাকে জাগ্রত ও সচেতন করিয়াছ, তুমি আমাকে দৃষ্টিশক্তিসষ্পন্ন চক্ষু প্রদান করিয়াছ এবং আমাকে একটি শ্রবণ-শক্তি সম্পন্ন কর্ণ প্রদান করিয়াছ, তোমার রাজত্বের দিকে চালাইয়া নিয়াছ এবং তোমার সত্য পথের দিকে আমাকে পরিচালিত করিয়াছ। তুমি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করিয়াছ এবং আমাকে মুক্তির নৌকায় আরোহণ করাইয়াছ। হে প্রভু আমাকে অটল রাখ এবং আমাকে সুদৃঢ়ভাবে সুরক্ষিত দুর্গে সংরক্ষণ কর ও আশ্রয় দান কর। তুমিই শক্তিশালী, তুমিই দৃষ্টি-শক্তিমান, তুমি শ্রবণ-শক্তিশালী, হে পরম করুনাময় প্রভু। আমাকে এমন একটি অন্তর প্রদান কর যাহা কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ, যাহা তোমার প্রেমের আলোকে আলোকিত হইতে পারে এবং আমার মধ্যে এইরূপ একটি বিবেচনা-শক্তি প্রদান কর যাহা আধ্যাত্মিক দানের মধ্য দিয়া এই পৃথিবীকে একটি গোলাপ উদ্যানে পরিবর্তিত করিতে পারে। তুমি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু, তুমিই পরম দানশীল ঈশ্বর।
হে তুমি যাঁহার মুখমন্ডল আমার আরাধনার একমাত্র লক্ষ্য, যাঁহার সুষমা আমার পবিত্র আশ্রয়স্থল, যাঁহার বাসস্থান আমার গন্তব্যস্থল, যাঁহার প্রশংসা-স্তুতি আমার একমাত্র ভরসা, যাঁহার বিধাতৃত্ব আমার একমাত্র সহচর, যাঁহার স্বরণ আমার একমাত্র সান্তনা, যাঁহার নৈকট্য আমার একমাত্র বাঞ্ছিত দ্রব্য, যাঁহার উপস্থিতি আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় অভিলাষ এবং উচ্চতম আকাঙ্খা। আমি তোমার নিকট অনুনয় বিনয় করিতেছি, তুমি আমার নিকট হইতে ঐ সমুদয় দ্রব্য প্রতিরোধ করিও না যাহা তুমি তোমার মনোনীত সেবকগণের জন্য ব্যবস্থা করিয়াছ। অতএব, এই পৃথিবী ও পরবর্তী পৃথিবীর মঙ্গলাদি আমার জন্য পরিপূর্ণ কর।
বাস্তবিক তুমিই সকল মানবের সম্রাট। তুমি ব্যতীত উপাস্য নাই। তুমি চিরক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[ঈশ্বরের সমস্ত বন্ধুগণের উচিত সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থভান্ডারে নিয়মিত দান করা। যদিও তাহাদের প্রদেয় দান আকারে বা পরিমাণে বড় না হয়। সৃষ্টিকর্তা কাউকেই তার সামর্থের বাইরে দায়িত্ব দেন না। এই দান সমুহ অবশ্যই সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে আসিবে। হে ঈশ্বরের বন্ধুগণ। এ বিষয়ে নিশ্চিত জানিবে যে, এই সমস্ত দানের পরিবর্তে তোমাদের কৃষি, শিল্প এবং তোমাদের বাণিজ্য সুন্দর উপহার সমুহের আর আশীর্বাদের সাথে বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাইবে। যে কেহ একটি মাত্র ভাল কাজ করিবে সে দশগুণ পুরস্কার লাভের অধিকারী হইবে। যাহারা নিজেদের ধন-সম্পত্তি তাঁহার পথে ব্যয় করিবে সৃষ্টিকর্তা তাহাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রদান করিবেন, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। ]
হে ঈশ্বর। আমার প্রভু। তোমার প্রকৃত প্রেমিকদের ললাট উজ্জ্বল কর ও নিশ্চিত বিজয়ের স্বর্গীয় সেনাদল দ্বারা তাহাদিগকে রক্ষা কর। তোমার ন্যায় পথে তাহাদের পদসমূহ দৃঢ়ভাবে স্থাপন কর এবং পুরাকালীন বদান্যতা ভিন্ন তোমার আশীর্বাদের দ্বার তাহাদের নিকট উন্মোচন কর। কারণ, তোমার ধর্ম রক্ষা করা, তোমার স্বরণে তাহাদের বিশ্বাস স্থাপন করা, তোমার ভালবাসায় তাহাদের অন্তর অর্পন করিয়া এবং তোমাকে সন্তুষ্ট করার উপায়গুলি অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টায় তোমার সৌন্দর্য্যরে স্তুতিগানে সর্বস্ব ব্যয় করিতেছে। তোমার সৌন্দর্যের আরাধনা ও তোমাকে সন্তুষ্ট করার অন্বেষনে যাহা তাহারা লাভ করিয়াছে তাহা দিতে তুমি অসম্মত হইও না।
হে আমার প্রভু। তাহাদের জন্য প্রচুর প্রতিদান, পুর্বনির্ধারিত নিশ্চিত পুরস্কার বহুল অংশে প্রদান কর।
সত্যই তুমি পুষ্টিদাতা, রক্ষাকারী, সাহায্যকারী, দয়ালু, উদার, চিরদাতা।
আমার মধ্যে একটি পবিত্র অন্তর সৃষ্টি কর, হে আমার প্রভু এবং আমার মধ্যে একটি প্রশান্ত বিবেক পুনরুজ্জীবিত কর, হে আমার ভরসা। তোমার প্রত্যাদেশ ধর্মে শক্তির আত্মা সহযোগে আমার বিশ্বাস সুদৃঢ় কর, হে আমার শ্রেষ্ঠতম প্রেমাস্পদ এবং তোমার প্রভার আলোকের সহায়তায় তোমার পথ আমার নিকট প্রকাশিত কর, হে আমার আকাংখার লক্ষ্যস্থল। তোমার অত্যুচ্চ অপার্থিব শক্তির প্রভাবে আমাকে তোমার পবিত্রতার স্বর্গে উত্তোলন কর, হে আমার সত্তার মূল উৎস এবং তোমার সনাতন সমীরণ দ্বারা আমাকে পুলকিত কর, হে আমার প্রভু। তোমার চিরস্থায়ী সুমধুর সঙ্গীত আমার উপর শান্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করুক, হে আমার সহচর এবং তোমার মুখমন্ডলের ঐশ্বর্যসমূহ তুমি ব্যতীত অপর সকল হইতে আমাকে পরিত্রাণ করুক, হে আমার প্রভু এবং তোমার অবিনশ্বর সত্তার প্রত্যাদেশ-অবতরণের সুসংবাদসমূহ আমার নিকট আনন্দ বহন করিয়া লইয়া আসুক, হে প্রকাশমানদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রকাশমান এবং নিহিতদের মধ্যে সর্বপেক্ষা নিহিত।
সমস্ত গুণগান তোমারই হে প্রভু, তুমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নাই, তোমার সান্নিধ্যে উন্নীত হওয়া, তোমার কাছাকাছি বসবাস করার, তোমার সাথে কথা বলার, যোগ্যতা প্রদান কর। তুমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নাই।
আমাকে পথ দেখাও, আমাকে রক্ষা কর, প্রভু হে তুমি আমার ঈশ্বর, আমার হৃদয়ের প্রদীপকে প্রজ্জ্বলিত কর। এক উজ্জ্বল তারকায়, তুমি শক্তিমান, তুমি ক্ষমতাবান।
হে প্রভু, আমাকে উচিত পথে চালিত কর। আমাকে রক্ষা কর, আমার হৃদয় প্রদীপ আলোকিত কর, আমাকে এক দীপ্তিমান নক্ষত্রে পরিণত কর। তুমি সর্ব শক্তিমান ও তেজময়।
আমাদের হৃদয়গুলিকে আলোকিত কর। আমাদের উপলব্ধি করিবার চক্ষু দাও। মনোযোগী কর্ণ প্রদান কর।
হে ঈশ্বর, আমার আত্মাকে সতেজ ও আনন্দপূর্ণ কর। আমার অন্তর পবিত্র কর। আমার শক্তিসমূহ উজ্জ্বল কর। আমি আমার সকল কার্য তোমারই হস্তে ন্যস্ত করিতেছি। তুমিই আমার পথ প্রদর্শক এবং আমার আশ্রয়। আমি আর দুঃখিত ও ব্যথিত হইব না। আমি একজন সুখী ও আনন্দপূর্ণ ব্যক্তি হইব হে আমার প্রভু। আমি আর চিন্তাযুক্ত হইব না, আর কোন বিপদ আমাকে ব্যতিব্যস্ত করিবে না। আমি জীবনের অপ্রীতিকর বিষয়সমূহ সন্বন্ধে কিছুই উল্লেখ করিব না।
হে প্রভু তুমি আমা অপেক্ষা আমার নিকট একজন বড় বন্ধু। আমি তোমারই নিকট আমার জীবন উৎসর্গ করিতেছি, হে পরম প্রভু।
(যখন আপনি সভাকক্ষে প্রবেশ করিবেন, তখন এই প্রার্থনাটি ঈশ্বরের প্রেমে আপ্লুত হইয়া স্পন্দিত হৃদয়ে এবং ঈশ্বরের স্বরণ ব্যতীত অন্যান্য সকল কিছু হইতে বাক্শক্তিকে পবিত্র করিয়া পাঠ করিবেন যাহাতে সর্বশক্তিমান সর্বোচ্চ বিজয়ার্জনে আপনাকে করুণাবশত সাহায্য করিতে পারেন।)
হে ঈশ্বর, হে ঈশ্বর। এই শুভ দিনে, তোমা ছাড়া অন্য সকল সম্পর্ক বিসর্জন দিয়া, আমরা সেবক ভক্তিভাবে তোমার মুখপানে ফিরিয়াছি। চিন্তা ও মতামতের ঐক্যবোধ এবং উদ্দেশ্যের মতৈক্যের দ্বারা গ্রথিত হইয়া এই আধ্যাত্মিক সভায় তোমার মহিমা মানবজাতির সন্মুখে তুলিয়া ধরিতে সমবেত হইয়াছি। হে পরম প্রভু, আমাদের ঈশ্বর আমাদিগকে তোমার স্বর্গীয় পথ প্রদর্শনের উদাহরণ স্বরূপ কর, মানুষের মধ্যে তোমার অত্যুচ্চ ধর্মের আদর্শ স্বরূপ কর, তোমার শক্তিশালী নিয়মের সেবক কর। হে মহোত্তম প্রভু, ’আভা’ রাজ্যের পবিত্র ঐক্যের ন্যায় আমাদের একতার বোধ প্রস্ফুটিত কর এবং এমন নক্ষত্রস্বরূপ কর, যাহার কিরণে দেশ বিদেশ ঝলমল করিয়া উঠে। হে সর্বশক্তিমান, তোমার অলৌকিক মহিমার সমীরাঘাতে উর্মি উদ্বেলিত মহাসমুদ্রের মত, তোমার সর্ব কৃপাশীল উচ্চাসরে পদতল হইতে নামিয়া আসা নির্ঝরের মত, তোমার ঐশ্বরীয় ধর্ম বৃক্ষের বিশুদ্ধ ফল এবং তোমার কৃপার সুরভি সমীরে আন্দোলিত ঐশ্বরীয় দ্রাক্ষাক্ষেত্রের শাখাসমুহের মত হইতে আমাদের সাহায্য কর।
হে ঈশ্বর, আদেশ কর যেন আমাদের আত্মা তোমার পবিত্র একতার স্তবগানে নিযুক্ত থাকে। তোমার কৃপা-দৃষ্টিতে আমাদের হৃদয় উৎসাহিত কর। আমরা যেন একই সমুদ্রের বিভিন্ন তরঙ্গের মত একত্রে পুনরায় লীন হইতে এবং তোমার তেজস্বী প্রকাশের কিরণগুলির মত একে অন্যতে মিশিয়া যাইতে পারি। যাহাতে আমাদের বিচার, আমাদের মত, আমাদের চিন্তা সমস্ত জগতে ঐক্যের ভাব প্রকটিত করিয়া সত্যের মতই এক হইতে পারে।
তুমি কৃপাবান, উদার, সর্বশক্তিমান, তাপহারী দয়াময়।
তোমার নামই আমার আরোগ্য, হে আমার প্রভু এবং তোমার স্মরণই আমার রোগ নিবারক ঔষধ। তোমার নৈকট্যই আমার একমাত্র আশা এবং তোমার প্রতি প্রেমই আমার একমাত্র সহচর। আমার প্রতি তোমার দয়াই আমার আরোগ্য এবং এই পৃথিবীতে ও পরবর্তী পৃথিবীতে, উভয় স্থানে, আমার সাহায্য। তুমি, সত্য সত্যই সর্ব বদান্যতাপূর্ণ, সর্বজ্ঞ, সর্ব-বিজ্ঞ।
হে আমার আল্লাহ, আমার আল্লাহ। আমি তোমার নিকট সানুনয় প্রার্থনা করিতেছি,-তোমার আরোগ্য মহাসাগরের মাধ্যমে, এবং তোমার করুণার প্রভাত-সূর্যের দীপ্তিসমূহের সহায়তায়, এবং তোমার নামের মাধ্যমে যাহা দ্বারা তুমি তোমার দাসগণকে দমন করিয়াছিলে এবং তোমার পরম গৌরবানি¦ত বাক্যের ব্যাপ্তিশীল ক্ষমতার এবং তোমার পরম মহিমান্বিত লেখনীর শক্তির প্রভাবে এবং তোমার করুণার সহায়ে যাহা স্বর্গ ও পৃথিবীস্থ সকলের সৃষ্টির অগ্রবর্তী হইয়াছে-যেন তুমি তোমার বদান্যতার সলিলসমূহ দ্বারা আমাকে সকল ক্লেশ ও বিশৃঙ্খলা ও সকল দুর্বলতা ও দুর্বলচিত্ততা হইতে মুক্ত কর।
তুমি দেখিতেছ, হে আমার পরম প্রভু, তোমার সানুনয় আবেদনকারীকে, যে তোমার বদান্যতার দ্বারে অপেক্ষা করিতেছে, এবং তাহাকে, যে তোমার উদারতার রজ্জু আঁকড়াইয়া ধরিয়া তাহার সকল আশা তোমারই উপর ন্যস্ত করিয়াছে। তুমি তাহাকে বঞ্চিত করিও না, আমি সানুনয়ে প্রার্থনা করিতেছি, ঐ সমুদয় দ্রব্য হইতে যাহা সে তোমার দয়ার মহাসাগর হইতে ও তোমার সদয় সহানুভূতির প্রভাত-তারকা (সূর্য) হইতে পাইতে ইচ্ছা করে।
যাহা করিতে তুমি ইচ্ছা কর তাহা করিতে তুমি শক্তিমান। তুমি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নাই, তুমি চির ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
“...........বাহা’উল্লাহ্র মৌলিক বিশ্ব-রাষ্ট্রের প্রধান তত্ত্বাবধায়কবৃন্দ, যাহারা তাঁহার পিতার ধর্মের নিরাপত্তা রক্ষার ও প্রচারের দ্বৈত কর্মের জন্য তাঁহার চুক্তিপত্রের কেন্দ্রস্থলের নির্ভূল লেখনীর দ্বারা পদাভিষিক্ত হইয়াছে।” -শৌগী এফেন্দী
এখন মানুষের আত্মা এবং মৃত্যুর পর আত্মার জীবিত থাকার প্রশ্ন সম্বন্ধে। তোমরা এই সত্যটি জানিবে যে আত্মা শরীর হইতে পৃথক হইবার পর ততক্ষণ উন্নতি করিতে থাকে যতক্ষণ না ইহা এমন এক মর্যাদা ও অবস্থায় ঈশ্বরের সামীপ্যে পৌঁছাইতে পারে, যাহা যুগ ও শতাব্দীর বিপ্লব এবং পৃথিবীর কোন আকষ্মিক পরির্তন বা ঘটনাবলী বদলাইতে পারে না। ইহা ততদিন স্থায়ী হইবে যতদিন ঈশ্বরের রাজত্ব, তাঁহার সার্বভৌমত্ব¦, তাঁহার শক্তি ও আধিপত্য অবিচল থাকিবে। ইহা ঈশ্বরের গুণ ও চিহ্নগুলিকে প্রকাশিত করিবে এবং তাঁহার পেমপূর্ণ দয়া ও বদান্যতাকে প্রকটিত করিবে।“
আলোক ও মহিমা, সম্ভাষণ ও প্রশংসা তাঁহার ধর্মের ধর্মবাহুগণের উপর বর্ষিত হউক, যাহাদের মাধ্যমে আত্মসংযমের আলো প্রদর্শিত হইয়াছে এবং এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে যে, পছন্দ করিবার কর্তৃত্ব ঈশ্বরের, যিনি শক্তিমান, ক্ষমতাবান, স্বাধীন, যাহার মাধ্যমে উদারতার মহাসাগর তরঙ্গায়িত হইয়াছে এবং ঈশ্বরের সদয় অনুগ্রহের সুরভি চারিদিকে ছড়াইয়া গিয়াছে, যিনি মানবজাতির পরম প্রভু। আমরা তাঁহার নিকট -- যিনি উচ্চ প্রশংসিত -- তাঁহার ঐশী সেনাদলের শক্তির মাধ্যমে তাহাদের নিরাপদ করিতে, তাঁহার কর্তৃত্বের শক্তিমত্তার মাধ্যমে তাহাদের রক্ষা করিতে এবং তাঁহার অদম্য শক্তির মাধ্যমে, যাহা সকল সৃষ্টবস্তুর উপর বিরাজমান, তাহাদের সাহায্য করিতে মিনতি করিতেছি। সার্বভৌম ক্ষমতা ঈশ্বরের, যিনি স্বর্গসমূহের সৃষ্টিকর্তা এবং নামাবলীর রাজত্বের পরম প্রভু।
হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, তোমার স্তবগানে চতুর্দিক মুখরিত হউক। এই দৈব প্রকাশের সাহায্যেই যাহা দ্বারা অন্ধকার আলোকে পরিণত হইয়াছে, যুগে যুগে ধর্মের পুনঃব্যবস্থাপনা হইয়াছে, লিপিবদ্ধ ঐশী বাণী প্রকাশিত হইয়াছে এবং বাস্তব কর্মজীবনের বিস্তৃতক্রমপত্র আবরণ মুক্ত হইয়াছে-আমি অনুনয় করিতেছি যে, আমার এবং আমার সহচরদের উপর তাহাই আদিষ্ট কর, যাহা তোমার সর্বোৎকৃষ্ট প্রভার গৌরবরাজ্যে আমাদের উন্নীত হইতে সাহায্য করিবে এবং সেই সমস্ত সংশয়ের কলঙ্ক হইতে মুক্ত করিবে, যাহা সন্দিগ্ধ চিত্তগণকে তোমার একত্বের ছত্র ছায়ায় প্রবেশ করিতে বাধা প্রদান করিয়াছে।
হে আমার প্রভু, আমিই তোমার সেই সেবক, যে তোমার করুণার রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করিয়া রহিয়াছে, তোমার অনুকম্পার আঁচল আঁকড়াইয়া ধরিয়াছে। আমার এবং আমার প্রিয়জনের জন্য ইহলোক ও পরলোকের মঙ্গলময় সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা কর। অতঃপর তাহাদিগকে সৃষ্ট জগতে তোমার অতি প্রিয় ভক্তগণের জন্য নির্ধারিত গুপ্ত উপহার প্রদান কর।
হে আমার প্রভু, এই দিবসগুলিতে তুমি তোমার সেবকদের উপবাস পালনের আদেশ করিয়াছ। সে প্রকৃতই অতি সৌভাগ্যশালী যে সম্পূর্ণ নিষ্ঠাসহকারে উপবাস পালন করিয়াছে এবং তোমা ব্যতীত অন্য সমস্ত কিছু হইতে নিরাসক্ত হইয়াছে। হে প্রভু আমাকে এবং তাহাদিগকে তোমার আজ্ঞা পালন করিতে, তোমার নিয়ম পত্রের আদেশানুরূপ চলিতে সাহায্য কর। সত্যই ইচ্ছামত কার্য করিতে তুমি সমর্থ। তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, সর্বজ্ঞ, সর্ব বুদ্ধিমান, হে সর্বলোকস্বামী! তোমার সার্বিক স্তুতি হউক।
হে আমার প্রভু। হে আমার প্রভু। তোমার সেবকগণের অন্তরসমূহ একতাবদ্ধ কর, এবং তাহাদের নিকট তোমার মহান উদ্দেশ্য ব্যক্ত কর, তাহারা তোমার আদেশাবলী অনুসরণ করুক এবং তোমার বিধান পালন করুক। হে প্রভু, তাহাদের উদ্যোমে তাহাদিগকে সাহায্য কর, এবং তোমার সেবা করিতে তাহাদিগকে শক্তিদান কর। হে প্রভু তাহাদিগকে নিজেদের হস্তে ছাড়িয়া দিও না, বরং জ্ঞানের আলোকে তাহাদের পদক্ষেপগুলি পরিচালিত কর এবং তোমার ভালবাসা দ্বারা তাহাদের অন্তর উৎসাহিত কর। সত্য সত্যই, তুমি তাহাদের সাহায্যকারী ও তাহাদের পরম প্রভু।
বলঃ কোন ব্যক্তি ন্যায়-বিচার ব্যতীত তাহার প্রকৃত মর্যাদা অর্জন করিতে পারিবেনা। একতা ব্যতীত কোন শক্তির অস্তিত্ব থাকিতে পারে না। পরামর্শ ব্যতীত মঙ্গল ও সমৃদ্ধি অর্জিত হইতে পারিবে না।
ঈশ্বর করুন, যেন সমগ্র বিশ্ব একতার আলোকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত হয়। ঈশ্বরের রাজত্ব, এই সীলমোহরটি যেন ইহার সকল বসবাসকারীর ললাটে অঙ্কিত হইয়া যায়।
হে আমার আল্লাহ্! হে আমার আল্লাহ্! সত্য সত্যই আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি এবং তোমার পবিত্র প্রাঙ্গনের সম্মুখে সানুনয় আবেদন করিতেছি, যেন এই সকল আত্মার উপর তোমার করুণারাশি অবতীর্ণ হয়। বিশিষ্টভাবে তাহাদিগকে তোমার অনুগ্রহ ও তোমার সত্য প্রদান কর। হে পরম প্রভু, অন্তরসমূহ মিলিত কর এবং ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ কর, সকল আত্মাকে একই সমন্বয়ে মিলিত কর এবং তোমার পবিত্রতা ও একত্বের নিদর্শনসমূহের দ্বারা আত্মাসমূহকে প্রাণবন্ত কর। হে পরম প্রভু। তোমার একত্বের আলোক দ্বারা এই সকল আননকে উজ্জ্বল কর। তোমার রাজত্বের সেবা কার্যে তোমার সেবকদের কটিদেশ শক্তিশালী কর। হে পরম প্রভু। তুমি অসীম দয়ার অধিকারী। হে ক্ষমা ও মার্জনার পরম প্রভু। আমাদের পাপ ক্ষমা কর, আমাদের ত্রুটিসমূহ মার্জনা কর এবং তোমার অনুকম্পার রাজত্বের দিকে, তোমার শক্তি ও ক্ষমতার রাজত্বের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিয়া তোমার পবিত্র প্রাঙ্গনে বিনীতভাবে এবং তোমার প্রমাণসমূহের প্রভার সম্মুখে বিনম্রভাবে ফিরিতে দাও। হে পরম প্রভু আল্লাহ্ । আমাদিগকে সমুদ্রে তরঙ্গরাশির সদৃশ, উদ্যানের পুষ্পরাজির ন্যায় একতাবদ্ধ কর, তোমার প্রেমের দানসমূহের মধ্য দিয়া ঐক্য সূত্রে মিলিত কর। হে পরম প্রভু। তোমার একত্বের নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে আমাদের বক্ষগুলি বিস্তৃত কর এবং মানবজাতির সকলকে প্রভার একই উচ্চস্থান হইতে দীপ্তিমান তারকাপুঞ্জের সদৃশ কর, যেন তাহারা তোমার জীবন বৃক্ষের উপরিস্থ পূর্ণাঙ্গ বর্ধমান ফলসমূহ। সত্য সত্যই, তুমি সর্ব শক্তিমান, স্বয়ং-সত্তাশীল, দাতা, ক্ষমাশীল, মার্জনাকারী, সর্বজ্ঞ, একক সৃষ্টিকর্তা।
মানবজাতির মধ্যে একতার পতাকা উন্নীত কর। হে প্রভু! হে ঈশ্বর মহান শান্তি প্রতিষ্ঠিত কর। হে প্রভু, সমস্ত মানব হৃদয়কে মিলিত করে এক করে দাও।
মহিমান্বিত তুমি, হে পরম প্রভু আমার ঈশ্বর। আমি মিনতিপূর্বক প্রার্থনা করিতেছি যে, তোমার মনোনীতগণের মাধ্যমে এবং তোমার ন্যস্ত দায়িত্ব-বহনকারিগণের মাধ্যমে এবং তাঁহার মাধ্যমে যাঁহাকে তুমি ভবিষ্যদ্বাদিগণের এবং ঐশী সংবাদ দাতাগণের ‘সীল-মোহর’ হওয়ার পদবী দান করিয়াছ,-যেন তোমার স্বরণ আমার সহচর হয়, এবং তোমার প্রতি প্রেম-ভালবাসা আমার লক্ষ্য হয়, এবং তোমার মুখম-ল আমার লক্ষ্যস্থল হয় এবং তোমার নাম আমার প্রদীপ এবং তোমার ইচ্ছা আমার আকাংখা এবং তোমার সন্তোষ আমার আনন্দের কারণ হয়।
আমি একজন পাপী, হে আমার পরম প্রভু, এবং চিরমার্জনাকারী। যেই মুহূর্তে আমি তোমাকে চিনিতে পারিয়াছিলাম, সেই মুহূর্তে আমি তোমার সদয় সহানুভূতির গৌরবান্বিত বিচার-আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য দ্রুত অগ্রসর হইয়াছিলাম। আমার পাপসমূহ ক্ষমা কর, হে আমার পরম প্রভু, যাহা আমাকে তোমার সন্তোষ লাভের পথসমূহে ভ্রমণ করিতে এবং তোমার একত্বের মহাসাগরের উপকূলসমূহ লাভ করিতে বাধা প্রদান করিয়াছে।
এমন কেহ নাই, হে আমার পরম প্রভু, যাহার দিকে আমি ফিরিতে পারি, যে আমার সহিত বদান্যভাবে আচরণ করিতে পারে, যেন আমি তাহার দয়া প্রার্থনা করিতে পারি। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, তুমি আমাকে তোমার অনুকম্পার সান্নিধ্য হইতে বিতাড়িত করিও না, আর তোমার দয়া ও বদান্যতার আবেগের প্রকাশসমূহ হইতে দূরে রাখিও না। আমার জন্য তুমি তাহাই ব্যবস্থা কর, হে আমার পরম প্রভু, যাহা তুমি তাহাদের জন্য ব্যবস্থা করিয়াছ যাহারা তোমাকে ভালবাসে এবং আমার জন্য তুমি তাহাই লিপিবন্ধ কর যাহা তুমি তোমার মনোনীত জনগণের জন্য লিপিবদ্ধ করিয়াছ। সর্ব সময়ে, আমার স্থিরদৃষ্টি তোমার দয়াময় বিধাতৃত্বের চক্রবালের দিকে নিবদ্ধ রহিয়াছে এবং আমার চক্ষুদ্বয় তোমার সদয় করুণা রাশির প্রাঙ্গণের দিকে তাকাইয়া রহিয়াছে। আমার জন্য এইরূপ ব্যবস্থা কর যাহা তোমারই উপযুক্ত। তুমি প্রভু ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি শক্তিশালী প্রভু, তুমি প্রভাময় ঈশ্বর, যাহার সাহায্য সকল লোকেই ভিক্ষা করিয়া থাকে।
হে পরম প্রভু, হে তুমি যিনি লোকগণের আশাস্থল। তুমিই তোমার এই সকল দাসের আশ্রযস্থল। তুমিই গোপনীয় বিষয়সমূহ ও রহস্যাবলী সম্পর্কে অবগত আছ। আমরা সকলেই পাপী এবং তুমি পাপীদের আশ্রয়স্থল, তুমি দয়াময়, তুমি পরম করুনাময়। হে পরম প্রভু। আমাদের ক্রুটিসমুহের প্রতি লক্ষ্য করিও না। তোমার দয়া ও বদান্যতা অনুসারে আমাদের সহিত ব্যবহার কর। আমাদের ত্রুটিসমুহ অনেক অধিক, কিন্তু তোমার ক্ষমাশীলতার মহাসাগর অসীম। অতএব, আমাদিগকে বিশ্বাসে সুদৃঢ় ও সবল কর। আমাদিকে সেই বিষয়ে সাহায্য কর যাহা আমাদিগকে তোমার প্রবেশ- দ্বারে গ্রহণযোগ্য করিবে। অন্তঃকরণসমূহ আলোকিত কর, চক্ষুগুলিকে দর্শন-ক্ষম কর, কর্ণগুলিকে মনোযোগী কর, মৃতকে পুনর্জীবিত কর এবং পীড়িতকে আরোগ্যদান কর, দরিদ্রকে ধনশালী কর এবং পলাতককে নিশ্চিত বিশ্বাসী কর। আমাদিগকে তোমার ঐশী-রাজত্বে গ্রহণ কর। দয়ার আলোকে আমাদিগকে আলোকিত কর। তুমিই উদার প্রকৃতি বিশিষ্ট। তুমিই পরম দয়ালু। তুমিই দয়াশীল।
হে প্রভু, আমি তোমার একত্বের সাম্রাজ্যের দিকে মুখ করিয়াছি ও তোমার করুণা সাগরে নিমজ্জিত রহিয়াছি। হে প্রভু, এই তিমিরাবৃত রাত্রে তোমার আলোকের সাহায্যে আমার দৃষ্টিশক্তিকে উজ্জ্বলতা দান কর এবং এই পরম আশ্চর্য যুগে আমাকে তোমার প্রেমের মদিরা দ্বারা আনন্দিত কর। হে প্রভু, আমাকে তোমার আহ্বান ধ্বনি শ্রবণ করিতে দাও এবং আমার সন্মুখে তোমার স্বর্গের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করিয়া দাও, যেন আমি তোমার গৌরবের আলোক সন্দর্শন করিতে পারি ও তোমার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করিতে পারি।
নিশ্চয়ই, তুমিই দাতা, দয়ালু, করুণাময়, ক্ষমাশীল।
তোমার জন্যই প্রভা, হে অনন্তের সম্রাট এবং জাতিসমূহের সৃষ্টিকর্তা এবং প্রত্যেক ধূমায়িত অস্থির পুনঃগঠনকারী। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, তোমার সেই পরম নামের সহায়তায় যাহা দ্বারা তুমি মানবজাতিকে তোমার মহত্ত্বের ও প্রভার দিকমন্ডলের দিকে আহ্বান করিয়াছিলে এবং তোমার সেবকগণকে তোমার অনুকম্পা ও অনুগ্রহের প্রাঙ্গনের দিকে পরিচালিত করিয়াছিলে যেন তুমি আমাকে তাহাদের সহিত গণনা করিতে পার যাহারা তুমি স্বয়ং ব্যতীত আর প্রত্যেক কিছু হইতে নিজেদের মুক্ত করিয়া লইয়াছে এবং তোমারই দিকে ফিরিয়াছে এবং তোমার নির্বন্ধানুসারে তাহাদের উপর যে সকল বিপদ পতিত হইয়াছিল তাহা তোমার দানসমূহের দিকে প্রত্যাবর্তন করা হইতে তাহাদিগকে পশ্চাদপদ করে নাই।
হে আমার পরম প্রভু, আমি তোমার বদান্যতার হাতল ধরিয়া রহিয়াছি এবং দৃঢ়তার সহিত তোমার অনুগ্রহের পরিচ্ছদের অঞ্চল আঁকড়াইয়া ধরিয়া রহিয়াছি। অতঃপর তোমার উদারতার মেঘমালা হইতে আমার উপর তাহাই অবতরণ কর যাহা আমার নিকট হইতে তুমি ব্যতীত অপর সকলের স্মৃতি অপসারিত করিবে এবং আমাকে তাঁহার দিকে ফিরিতে সক্ষম করিবে যিনি মনুষ্য জাতির সকলের আরাধনার একমাত্র লক্ষ্য, যাঁহার বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার উত্তেজনা প্রদানকারিগণকে শ্রেণীবদ্ধ করিয়া রাখা হইয়াছে, যাহারা তোমার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়াছে এবং তোমাকে ও তোমার নিদর্শনাবলীকে অবিশ্বাস করিয়াছে।
হে আমার পরম প্রভু, তোমার দিবসসমূহে তোমার পরিচ্ছদের সৌরভসমূহ হইতে আমাকে বঞ্চিত করিও না এবং তোমার আননের আলোকের উজ্জ্বলতাসমূহের আবির্ভাব সময়ে তোমার অবতীর্ণ বাণীসমূহের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসসমূহ হইতে আমাকে নিরাশ করিও না। তুমি যাহা করিতে ইচ্ছা কর তাহা করিতে তুমি শক্তিশালী। কোন কিছুই তোমার ইচ্ছা-শক্তিকে প্রতিরোধ করিতে পারেনা, আর তোমার শক্তির সহায়তায় তুমি যাহা করিতে উদ্দেশ্য করিয়াছ কেহই তাহা ব্যর্থ করিতে পারে না।
তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি সর্ব-শক্তিমান, তুমি সর্ব-বিজ্ঞ।
তোমার নাম মহিমান্বিত হউক, হে পরম প্রভু আমার ঈশ্বর! আমি তোমার নিকট মিনতি করিতেছি, তোমার কর্তৃত্বের দ্বারা যাহা সমগ্র সৃষ্টবস্তুকে পরিবেষ্টিত করিয়াছে এবং তোমার সার্বভৌম ক্ষমতার দ্বারা যাহা সমগ্র সৃষ্টিকে অতিক্রম করিয়াছে এবং তোমার উচ্চারিত শব্দের দ্বারা যাহা তোমার বিজ্ঞতায় নিহিত ছিল এবং যাহা দ্বারা তুমি তোমার স্বর্গ ও তোমার পৃথিবী উভয় সৃষ্টি করিয়াছ এবং তোমার জন্য ভালোবাসায় আমাদিগকে দৃঢ় হইতে এবং তোমার ইচ্ছার প্রতি আমাদের বশবর্তীতায় সক্ষম করিতে এবং তোমার মুখমন্ডলের প্রতি আমাদের স্থিরদৃষ্টি স্থাপন করিতে এবং তোমার মহিমার গুণকীর্তন করিতে সক্ষম কর। অতঃপর, হে আমার ঈশ্বর, তোমার সৃষ্টজীবদের মধ্যে তোমার নিদর্শনসমূহ চারিদিকে ছড়াইয়া দিতে এবং তোমার রাজ্যে তোমার ধর্ম রক্ষা করিতে আমাদিগকে শক্তি দান কর। তুমি তোমার সৃষ্টজীবদের কাহারো উল্লেখ ব্যতীত চিরদিন স্বাধীনভাবে বিরাজমান ছিলে এবং চিরদিন বিরাজমান থাকিবে।
আমি তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা স্থাপন করিয়াছি এবং তোমার প্রতি আমার মুখমন্ডল ফিরাইয়াছি, তোমার প্রেমপূর্ণ দয়ার্দ্রতার রজ্জু আমি দৃঢ়ভাবে ধারণ করিয়াছি এবং তোমার করুণার ছায়ার প্রতি আমি দ্রুত অগ্রসর হইয়াছি। আমাকে তোমার দ্বার হইতে একজন হতাশাগ্রস্থের মত দূরে নিক্ষেপ করিও না, হে আমার ঈশ্বর এবং আমা হইতে তোমার কৃপা অস্বীকার করিও না, কারণ আমি কেবল তোমাকেই অন্বেষণ করি। তুমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই, যিনি চির ক্ষমাশীল, সর্ব - বদান্যতাপূর্ণ।
সকল প্রশংসা তোমারই, হে তুমি যিনি তাহাদের প্রিয়তম যাহারা তোমাকে জানিয়াছে !
আমি আমার মুখম-ল তোমার সদয় অনুগ্রহের অভয়স্থল ও তোমার মহিমার ভক্তিপূর্ণ উপাসনালয়ের দিকে ফিরাইয়াছি। আমাকে সেই সকল কিছু হইতে পবিত্র কর যাহা তোমার নহে এবং তোমাকে ভালোবাসিতে এবং তোমাকে তুষ্ট করিতে আমাকে শক্তি দাও, যেন আমি তোমার সৌন্দর্যের ধ্যানে নিজেকে আনন্দিত করিতে পারি এবং তোমার সৃষ্টজীবদের কাহারো প্রতি সকল আসক্তি হইতে নিজেকে মুক্ত করিতে পারি এবং যেন প্রতিটি মুহূর্তে ঘোষণা করিতে পারি: “ঈশ্বর উচ্চ-প্রশংসিত হউন, যিনি জগৎসমূহের পরম প্রভু!”
তোমার সুষমাকে আমার খাদ্য হইতে দাও, হে আমার পরম প্রভু এবং তোমার উপস্থিতির আলো আমার পানীয় এবং তোমার সন্তুষ্টি আমার আশা এবং তোমার প্রশংসা আমার কাজ এবং তোমার স্মরণ আমার সহচর এবং তোমার সার্বভৌম ক্ষমতা আমার সাহায্য, এবং তোমার গৃহ আমার বাসস্থান এবং আমার গৃহকে সেই আসনস্বরূপ কর যাহা তুমি তাহাদের সীমাবদ্ধতাসমূহের উর্দ্ধে মর্যদাসম্পন্ন করিয়াছ যাহারা তোমা হইতে যেন একটি পর্দা দ্বারা অবরুদ্ধ হইয়াছে।
তুমি, সত্যই, ক্ষমতা, শক্তি ও মহিমার ঈশ্বর।
“যদি তুমি ’হে আমার দাসী‘ উপাধিটির মিষ্টতা হৃদয়ঙ্গম করিতে তাহা হইলে তুমি নিজেকে সমগ্র মানবজাতি হইতে বিযুক্ত, দিবস ও রজনীতে ভক্তিপূর্ণভাবে তাঁহার সহিত পরস্পর কথোপকথনে ব্যস্ত দেখিতে পাইতে, যিনি বিশ্বের একমাত্র আকাঙ্খা.”
হে তুমি, যাহার ভয়ঙ্কর রাজকীয় ক্ষমতায় সকল বস্তু কম্পমান, যাহার হস্তমুষ্টিতে সকল লোকের বিষয়াদি বিদ্যমান, যাহার অনুগ্রহ ও করুণার দিকে তোমার সকল সৃষ্টজীবের মুখম-ল স্থাপিত রহিয়াছে ! তোমার সেই নামের দ্বারা আমি বিনীত অনুরোধ করিতেছি, যাহা তুমি সকল নামের আত্মা হইবার জন্য আদেশ করিয়াছ, যাহা নামাবলীর রাজত্বে বিদ্যমান। তাহাদের অপবাদ হইতে আমাদিগকে রক্ষা কর যাহারা তোমা হইতে বিমুখ হইয়াছে এবং এই প্রত্যাদেশে তোমার সর্বমহান সত্যকে এবং তোমার সর্ব প্রশংসিত সত্তাকে অস্বীকার করিয়াছে, যাহা তোমার নামাবলীর রাজত্বকে কম্পিত করিয়াছে।
আমি তোমার দাসীদের একজন, হে আমার পরম প্রভু !
আমি আমার মুখমন্ডল তোমার সদয় অনুগ্রহের অভয়স্থল ও তোমার মহিমার ভক্তিপূর্ণ উপাসনালয়ের দিকে ফিরাইয়াছি। আমাকে সেই সকল কিছু হইতে পবিত্র কর যাহা তোমার নহে এবং তোমাকে ভালোবাসিতে এবং তোমাকে তুষ্ট করিতে আমাকে শক্তি দাও, যেন আমি তোমার সৌন্দর্যের ধ্যানে নিজেকে আনন্দিত করিতে পারি এবং তোমার সৃষ্টজীবদের কাহারো প্রতি সকল আসক্তি হইতে নিজেকে মুক্ত করিতে পারি এবং যেন প্রতিটি মুহূর্তে ঘোষণা করিতে পারি: “ঈশ্বর উচ্চ-প্রশংসিত হউন, যিনি জগৎসমূহের পরম প্রভু!”
তোমার সুষমাকে আমার খাদ্য হইতে দাও, হে আমার পরম প্রভু এবং তোমার উপস্থিতির আলো আমার পানীয় এবং তোমার সন্তুষ্টি আমার আশা এবং তোমার প্রশংসা আমার কাজ এবং তোমার স্মরণ আমার সহচর এবং তোমার সার্বভৌম ক্ষমতা আমার সাহায্য, এবং তোমার গৃহ আমার বাসস্থান এবং আমার গৃহকে সেই আসনস্বরূপ কর যাহা তুমি তাহাদের সীমাবদ্ধতাসমূহের উর্দ্ধে মর্যদাসম্পন্ন করিয়াছ যাহারা তোমা হইতে যেন একটি পর্দা দ্বারা অবরুদ্ধ হইয়াছে।
তুমি, সত্যই, ক্ষমতা, শক্তি ও মহিমার ঈশ্বর।
তুমিই আরোগ্যকারী, পর্যাপ্তকারী, সাহায্যকারী, সর্ব -ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে প্রশংসিত, হে বিশ্বস্ত, হে গৌরবান্বিত !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সম্রাট, হে উত্থানকারী, হে বিচারক !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে অতুলনীয়, চিরন্তন, হে অনন্য !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সর্ব প্রশংসিত, হে পবিত্র, হে সাহায্যকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সর্বদর্শী, হে সর্ব বিজ্ঞ, হে সর্ব মহান !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে দয়াশীল, হে রাজকীয়, হে আদেশকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে প্রিয়তম, হে কাঙ্খিত, হে পরমানন্দ দানকারী!
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সর্ব শক্তিমান, হে শক্তিদানকারী, হে শক্তিশালী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে শাসক, হে স্বয়ংসত্তাশীল, হে সর্বজ্ঞ !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে পরমাত্মা, হে আলো, সর্ব প্রকাশমান !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে তুমি যিনি সকলের দ্বারা বারংবার পরিদর্শিত,
হে তুমি যিনি সকলের নিকট পরিচিত, হে তুমি যিনি সকলের কাছে নিহিত !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে লুক্কায়িত, হে বিজেতা, হে দানশীল !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সর্ব শক্তিমান, পরিত্রাতা, হে লুক্কায়িত !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে গঠনকারী, হে পরিতুষ্টকারী, হে উৎপাটনকারী!
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে উত্থানকারী, হে সমাবেশকারী, হে উচ্চপ্রশংসাকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে পূর্ণতাদানকারী, হে বন্ধনহীন, হে বদান্যতাপূর্ণ !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে দয়ালু, হে সংযতকারী, হে সৃজনকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সর্ব মহান, হে সুন্দরতম, হে পরম উদার !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে ন্যায়পরায়ণ, হে করুণাময়, হে উদার !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে বাধ্যকারী, হে চির স্থায়ী, হে সর্বজ্ঞ !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে অত্যুৎকৃষ্ট, হে দিবসসমূহের প্রাচীন, হে মহানুভব !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সু-রক্ষিত, হে আনন্দের পরম প্রভু, হে কাঙ্খিত !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে তুমি যিনি সকলের প্রতি দয়ালু,
হে তুমি যিনি সকলের প্রতি করুণাময়, হে পরম হিতৈষী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সকলের জন্য আশ্রয়স্থল, হে সকলের প্রতি স্মরণ,
হে সর্ব - রক্ষাকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে তুমি যিনি সকলের উদ্ধারকারী,
হে তুমি যিনি সকলের প্রার্থনার লক্ষ্যস্থল, হে প্রাণবন্তকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে উন্মোচনকারী, হে ধ্বংসকারী, হে ক্ষমাশীল !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে তুমি যিনি আমার আত্মা,
হে তুমি যিনি আমার প্রিয়তম, হে তুমি যিনি আমার বিশ্বাস !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে তৃষ্ণাসমূহের নিবারণকারী,
হে সর্বোৎকৃষ্ট পরম প্রভু, হে সর্বাধিক প্রাণপ্রিয়!
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে মহত্তম স্মরণ, হে মহত্তম নাম, হে প্রাচীনতম পথ !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে সর্বোচ্চ প্রশংসিত, হে পবিত্রতম, হে পবিত্র !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে বন্ধনমুক্তকারী, হে পরামর্শদাতা, হে নিবেদনকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে বন্ধু, হে চিকিৎসক, হে বিমুগ্ধকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে গৌরব, হে সৌন্দর্য, হে উদার !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে পরম বিশ্বস্ত, হে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমিক, হে ঊষার পরম প্রভু !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে উদ্দীপ্তকারী, হে প্রফুল্লকারী, হে উল্লাস আনয়ণকারী !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে বদান্যতার পরম প্রভু,
হে পরম করুণাময়, হে পরম ক্ষমাশীল !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে নির্ভরযোগ্য, হে জীবনদানকারী, হে সকল সত্তার উৎস !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে তুমি যিনি সকল বস্তুতে প্রবেশকারী,
হে সর্বদর্শী ঈশ্বর, হে উচ্চারণের পরম প্রভু !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে নিহিত সত্ত্বেও প্রকাশিত, হে অদৃশ্য সত্ত্বেও বিখ্যাত, হে দর্শক যাহাকে সকলে অন্বেষণ করে !
তুমিই পর্যাপ্তকারী, তুমিই আরোগ্যকারী, তুমিই চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী !
আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে তুমি যিনি প্রেমিকগণকে হত্যা করে,
হে দুষ্টদের প্রতি কৃপার ঈশ্বর !
হে পর্যাপ্তকারী, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে পর্যাপ্তকারী !
হে আরোগ্যকারী, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে আরোগ্যকারী !
হে বাধিতকারী, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, হে বাধিতকারী !
তুমিই সর্বদা চিরস্থায়ী, হে তুমি চিরস্থায়ী।
তুমি পবিত্রকৃত, হে আমার ঈশ্বর ! আমি তোমার নিকট সাগ্রহে প্রার্থনা করিতেছি তোমার উদারতার দ্বারা, যাহা দ্বারা তোমার বদান্যতা এবং অনুগ্রহের সিংহদ্বারসমূহ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হইয়াছে, যাহা দ্বারা তোমার পবিত্রতার উপাসনালয় অনন্তকালের সিংহাসনের উপর প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে; এবং তোমার কৃপার দ্বারা, যাহা দ্বারা তুমি সকল সৃষ্ট বস্তুকে তোমার উদারতা ও প্রদানসমূহের ভোজন-টেবিলে নিমন্ত্রণ করিয়াছ; এবং তোমার অনুগ্রহের দ্বারা, যাহা দ্বারা তুমি তোমার নিজ সত্ত্বায় সকল স্বর্গ ও পৃথিবীর পক্ষ হইতে ‘হ্যাঁ’ সাড়া দিয়াছ, এমন এক সময়ে যখন তোমার সার্বভৌম ক্ষমতা এবং তোমার মহিমা প্রকাশমান হইয়াছে, প্রভাতকালে যখন তোমার আধিপত্য প্রতীয়মান করা হইয়াছে। এবং পুনরায় তোমার নিকট মিনতি করিতেছি, এই সকল সর্বাধিক সুষমামন্ডিত নামাবলীর দ্বারা, এই সকল সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত ও মহিমান্বিত বৈশিষ্টের দ্বারা এবং তোমার সর্বাধিক উচ্চপ্রশংসিত স্মরণের দ্বারা এবং তোমার বিশুদ্ধ ও নিখুঁত সৌন্দর্যের দ্বারা এবং সর্বাধিক নিহিত পটমন্ডপে তোমার নিহিত আলোর দ্বারা এবং তোমার নামের দ্বারা, প্রতিটি সকাল ও সন্ধ্যায় ক্লেশের পরিচ্ছদে আচ্ছাদিত, এই পবিত্র ফলকলিপির বাহককে রক্ষা করিতে এবং যে কেহ ইহা আবৃত্তি করে এবং যে কেহ ইহা আক্রমণ করে এবং যে কেহ গৃহের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করে যেখানে ইহা অবস্থিত। অতঃপর, তুমি আরোগ্য কর, ইহা দ্বারা প্রত্যেক অসুস্থ, রোগাক্রান্ত ও দুর্বলকে, প্রতিটি কষ্ট ও যন্ত্রণা হইতে, প্রতিটি বিরক্তিকর ক্লেশ ও দুঃখ হইতে এবং ইহা দ্বারা তুমি তাহাকে পথপ্রদর্শন কর, যে কেহ তোমার নির্দেশনার পথসমূহে এবং তোমার ক্ষমাশীলতা ও অনুগ্রহের পথসমূহে চলিতে ইচ্ছা করে।
তুমি সত্যসত্যই শক্তিশালী, সর্ব পর্যাপ্তকারী, আরোগ্যকারী, রক্ষাকারী, দাতা, করুণাময়, পরম উদার, পরম দয়ালু।
বলঃ হে ঈশ্বর, আমার প্রভু। ন্যায়ের মুকুট দ্বারা আমার মস্তক ও নিরপেক্ষতার অলংকারে আমার মন্দির সজ্জ্বিত কর। সত্য সত্যই, তুমি সকল দান ও বদান্যতার অধিকারী।
হে আমার ঈশ্বর, আমার পরম প্রভু, আমার আকাংখার লক্ষ্যস্থল। তোমার এই দাস তোমারই করুণার আশ্রয়ে নিদ্রা অন্বেষণ করে এবং তোমার তত্ত্বাবধানে ও তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করিয়া তোমারই অনুকম্পার চন্দ্রাতপতলে বিশ্রাম লাভ করিতে বাসনা করে।
তোমারই নিকট প্রার্থনা করিতেছি হে আমার পরম প্রভু, তোমার নিদ্রাবিহীন চক্ষুর সাহায্যে, যেন তুমি আমার চক্ষুদ্বয়কে তুমি ব্যতীত অপর কিছু অবলোকন করা হইতে রক্ষা কর। অতঃপর তাহাদের দৃষ্টিশক্তি সবল কর যেন তাহারা তোমার নিদর্শনাবলী বিচার করিতে সক্ষম হয় এবং তোমার প্রত্যাদেশের আবির্ভাবের চিকচক্রবাল অবলোকন করিতে পারে। তুমিই তিনি যাঁহার সর্বশক্তিমত্তার আবির্ভাবসমুহের নিকট সারভূত শক্তির অধিকারীও কম্পিত হইয়াছে।
তুমি প্রভু ব্যতীত আর কোন উপাস্য নাই, তুমি সর্বশক্তিমান, তুমি সর্বদমনকারী, অনিয়ন্ত্রিত।
আমার প্রভু। আমার প্রভু। তুমি আশা ও প্রেমাস্পদ, আমার অভিপ্রেত, লক্ষ্য ও অভিলাষ। অতীব বিনয় ও গভীর ভক্তি সহকারে তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি যেন তুমি আমাকে তোমার স্বর্গীয় রাজ্যে প্রেমের স্মৃতি-মিনার, তোমার সৃষ্ট জীবদের মধ্যে তোমার জ্ঞানের প্রদীপ এবং তোমার রাজত্বে তোমার দানের পতাকা স্বরূপ কর।
আমাকে তোমার উপাসকদের মধ্যে একজন উপাসক কর, যাহারা তুমি ব্যতীত সকল হইতে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে, যাহারা পার্থিব সকল কিছু হইতে নিজেদের পবিত্র করে এবং যাহারা সন্দিগ্ধ লোকদের ক্রটিসমূহ হইতে নিজেদের ভিন্ন দিকে ফিরাইয়া লয়।
তোমার ঐশী রাজ্যের অনুমোদনের উৎসাহের মধ্য দিয়া আমার অন্তর আনন্দে প্রসারিত হইতে দাও এবং তোমার সর্বশক্তিমানতা হইতে কৃতকার্যতার বাহিনীসমূহ একের পর অন্য আমার উপর অবতীর্ণ হওয়ার দৃশ্য দ্বারা আমার দৃষ্টিশক্তি উজ্জ্বল কর।
তুমি সর্বশক্তিমান, অপরাজেয়, ক্ষমতাশালী।
“যে কেহ এই দিবসে আমাদের ধর্মের সাহায্যার্থে উত্থিত হয় এবং তাহাকে সাহায্য করিবার জন্য প্রশংসনীয় চরিত্র এবং অকপট আচরণের একটি বিপুল সংখ্যাকে একত্রিত করে, যে প্রভাব এইরূপ কাজ হইতে প্রবাহিত হইবে, তাহা অতি নিশ্চিতভাবে, সমগ্র পৃথিবীব্যাপী ছড়াইয়া যাইবে।”
তুমি জানিতেছ, হে ঈশ্বর এবং আমার সাক্ষী, যে আমার হৃদয়ে তোমার শুভ-সন্তুষ্টি অর্জন করা, তোমার প্রতি দাসত্বে নিশ্চিত হওয়া, তোমার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা, তোমার বিশাল দ্রাক্ষাক্ষেত্রে শ্রম দেয়া এবং তোমার পথে সকল কিছু উৎসর্গ করা ব্যতীত অন্য কোন আকাঙ্খা নাই। তুমি-ই সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী। তোমার জন্য আমার ভালোবাসায় আমার পদক্ষেপসমূহ চালনা করা, পর্বত ও মরুভূমিগুলির উদ্দেশ্যে তোমার রাজত্বের আগমন উচ্চঃস্বরে ঘোষণা করা এবং তোমার আহ্বান সমগ্র মানবের মধ্যে তুলিয়া ধরা ব্যতীত আমার কোন ইচ্ছা নাই । হে ঈশ্বর! এই অসহায়ের জন্য পথ উন্মুক্ত কর, এই পীড়িত জনের জন্য নিরাময় অনুমোদন কর এবং এই রুগ্ন জনের উপর তোমার আরোগ্য প্রদান কর। জলন্ত হৃদয় ও অশ্রুপূর্ণ চক্ষু সহকারে আমি তোমার দ্বারপ্রান্তে তোমার নিকট মিনতি করিতেছি।
হে ঈশ্বর ! তোমার পথে যে কোন অগ্নিপরীক্ষা সহ্য করিতে আমি প্রস্তুত রহিয়াছি এবং যে কোন কষ্টকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করিতে আমি সর্বান্তঃকরণে আকাঙ্খা করিতেছি।
হে ঈশ্বর ! পরীক্ষাসমূহ হইতে আমাকে রক্ষা কর। তুমি সম্পূর্ণভাবে অবগত রহিয়াছ যে, আমি সকল কিছু হইতে আমার মুখ ফিরাইয়াছি এবং সকল চিন্তা-ভাবনা হইতে নিজেকে মুক্ত করিয়াছি। তোমার উল্লেখ ব্যতীত আমার কোন পেশা নাই এবং তোমার সেবা ব্যতীত কোন আকাঙ্খা নাই।
(যখন বাহা’ই অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময় এই প্রার্থনা পঠিত হয়, তখন সকলকে দাঁড়াইতে হইবে)
তিনিই প্রভু, গৌরবান্বিত তিনি, সস্নেহ সহানুভূতি ও বদান্যতার পরম প্রভু।
গৌরব তোমারই জন্য, তুমি হে আমার প্রভু, সর্বশক্তিমান প্রভু। আমি সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি তোমার সর্বশক্তিমত্তা ও তোমার ক্ষমতার, তোমার একাধিপত্য ও তোমার সস্নেহ দয়ার, তোমার কৃপা ও তোমার শক্তির, তোমার সত্তার একত্ব ও তোমার মৌলিক সত্তার অদ্বিতীয়ত্বের, অস্তিত্ব¦ জগতের ও তন্মধ্যস্থ সকল কিছুরই উপর তোমার পবিত্রতার ও মহিমার।
হে আমার প্রভু। তুমি আমাকে তুমি ভিন্ন আর সকল হইতে বিচ্ছিন্ন দেখিতে পাইতেছ, তোমাকেই দৃঢ়ভাবে আঁকড়াইয়া ধরিয়া এবং তোমার বদন্যতার মহাসাগরের দিকে, তোমার অনুকম্পার স্বর্গের দিকে, তোমার করুণার প্রভাত-তারকার দিকে মুখ ফিরাইয়াছি।
পরম প্রভু আমি সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি যে, তুমি তোমার সেবকের উপর তোমার বিশ্বাস ন্যস্ত করিয়াছ এবং তাহা হইতেছে সেই আধ্যাত্মিক শক্তি যাহা দ্বারা তুমি পৃথিবীকে জীবনী-শক্তি প্রদান করিয়াছ।
তোমার অবতীর্ণ প্রত্যাদেশ-সূর্যের উজ্জ্বলতার শপথ করিয়া তোমার নিকট সানুনয় প্রার্থনা করিতেছি যেন তোমার দিবসসমূহে সে যেই সফলতা লাভ করিয়াছে, তাহা তাহার নিকট হইতে কৃপা পূর্বক গ্রহণ কর। অতঃপর ইহাতে সম্মতি দান কর যেন সে তোমার শুভ অনুগ্রহের প্রভায় ভূষিত হইতে পারে এবং তোমার অনুমোদনে অলংকৃত হইতে পারে।
হে আমার পরম প্রভু। আমি স্বয়ং এবং সমুদয় সৃষ্ট পদার্থ তোমার শক্তিমত্তার সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি এবং তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি যেন তুমি এই আত্মাকে তোমার নিকট হইতে ফিরাইয়া না দাও, যে তোমার দিকে, তোমার স্বর্গীয় স্থানের, তোমার উন্নত স্বর্গের এবং তোমার নৈকট্যের আশ্রয়স্থানের দিকে আরোহণ করিয়াছে।
হে তুমি যিনি সকল লোকের প্রভু। অতঃপর, হে আমার ঈশ্বর , ইহাতে সম্মতি প্রদান কর যেন তোমার সেবক তোমার মনোনীত ব্যক্তিগণের, তোমার পবিত্র সিদ্ধ সাধু পুরুষদের এবং তোমার ঐশী বার্তাবাহকদের সহিত স্বর্গীয় স্থানসমূহে সম্মিলিত হইতে পারে, যে স্থানসমূহ সমন্ধে লেখনী কিছুই বলিতে অথবা বাক্শক্তি বর্ণনা করিতে অক্ষম।
হে আমার পরম প্রভু। দরিদ্র ব্যক্তি তোমার সম্পদের রাজ্যের দিকে, বিদেশাগত তোমার পবিত্র সীমাসমূহের মধ্যে স্বর্গীয় আবাস-স্থানের দিকে, যে অত্যন্ত পিপাসার্ত সে তোমার দয়ার স্বর্গীয় স্রোতস্বতীর সলিলের দিকে সত্যই দ্রুতগতিতে অগ্রবর্তী হইয়াছে। তুমি তাহাকে, হে পরম প্রভু তোমার অনুকম্পার ভোজে তাহার অংশ হইতে এবং তোমার বদান্যতার অনুগ্রহ হইতে বঞ্চিত করিও না। সত্য সত্যই তুমি সর্বশক্তিমান, তুমি করুণাময়, তুমি সর্ববদান্যতাপূর্ণ।
হে আমার প্রভু। তোমার ন্যস্ত দ্রব্য তোমাকে প্রত্যর্পণ করা হইয়াছে। তোমার অনুকম্পা ও তোমার বদান্যতা যাহা তোমার পার্থিব ও স্বর্গস্থ রাজ্যসমূহ পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছে, ইহাতে তোমার পক্ষে উপযুক্ত যে, তুমি তোমার নূতন অভ্যার্থিত জনকে তোমার দানসমূহ, তোমার উপহারসমূহ এবং তোমার কৃপাবৃক্ষের ফলসমূহ প্রদান করিবে। তুমি যাহা করিতে ইচ্ছা কর তাহা করিতে তুমি শক্তিশালী। তুমি ব্যতীত অপর কোন উপাস্য নাই। তুমি করুণাময়, পরম বদান্য, দয়ালু, দাতা, ক্ষমাশীল, মহীয়ান, সর্বজ্ঞ।
আমি সাক্ষ্য দিতেছি, হে আমার পরম প্রভু, তুমি সকল লোকের প্রতি তাহাদের অতিথিকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আদেশ করিয়াছ এবং যে তোমার দিকে আরোহণ করিয়াছে, নিশ্চয় সে তোমার নিকট পৌঁছিতে সক্ষম হইয়াছে এবং তোমার সকাশে উপস্থিত হইয়াছে। অতঃপর তাহার সহিত তোমার করুণা ও দয়া অনুযায়ী ব্যবহার কর। তোমার প্রভার শপথ। আমি নিশ্চিতভাবে জানি যে, তোমার সেবকগণকে তুমি যেই আদেশ দান করিয়াছ, তুমি নিজকে তাহা হইতে বঞ্চিত করিবে না যে তোমার দানশীলতার রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে জড়াইয়া ধরিয়া রাখিয়াছে এবং তোমার সম্পদের উৎসমূলে আরোহণ করিয়াছে।
তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি একক, তুমি অদ্বিতীয়, তুমি শক্তিশালী, তুমি সর্বজ্ঞ, তুমি বদান্যতাপূর্ণ।
হে আমার প্রভু, হে পাপ মার্জনাকারী, তুমি উপহার প্রদানকারী, দুঃখ হরণকারী। সত্য-সত্যই আমি অনুনয় করিতেছি যে, যাহারা পার্থিব পরিধেয় ত্যাগ করিয়া আধ্যাত্মিক জগতে আরোহণ করিয়াছে তাহাদের পাপ মার্জনা কর।
হে আমার প্রভু, অবাঞ্ছনীয় আচরণ হইতে তাহাদের শুদ্ধ কর, তাহাদের দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত কর, আর তাহাদের মনের অন্ধকার আলোকে পরিবর্তিত কর। সুখোদ্যানে তাহাদের প্রবেশ করিতে সমর্থ কর, পবিত্রতম সলিলে তাহাদের শুদ্ধ কর, আর অত্যুচ্চ গিরি শিখরে তোমার গৌরবপ্রভা অবলোকন করার সুযোগ দাও।
তাদের দোষ তুমি মুক্ত কর, দুঃখ দূর কর। হে আমার প্রভু। তাদের অন্ধকার আলোকে পরিণত কর, তাদের আনন্দ উদ্যানে প্রবেশ করিতে দাও। পরম পবিত্র বারিধারায় তাদের তুমি নির্মল কর এবং সর্বোচ্চ গিরি শিখরে তোমার প্রভা তাদের দেখতে দাও।
হে আমার ঈশ্বর এবং আমার পরম প্রভু। আমি তোমার ভৃত্য এবং তোমার ভৃত্যের সন্তান। এই প্রভাতকালে আমি আমার শয্যা হইতে উত্থিত হইয়াছি, যখন তোমার ইচ্ছাশক্তির প্রভাত হইতে তোমার একত্বের প্রভাতিক তারকা উজ্জ্বল আলোক প্রদান করিয়াছে এবং তোমার প্রত্যাদেশ গ্রন্থসমুহে যে আদেশের ব্যবস্থা প্রদান করা হইয়াছে, সেই মতে সমস্ত জগতে ইহার প্রভা বিস্তার করিয়াছে।
সকল প্রশংসা তোমারই জন্য, হে আমার প্রভু, কেননা আমরা তোমারই জ্ঞানের আলোকের দীপ্তি সমূহের দিকে জাগরিত হইয়াছি। অতএব, তাহাই আমাদের নিকট অবতরণ কর, হে আমার পরম প্রভু যাহা তুমি ব্যতীত অপর সকলকে পরিত্যাগ করিতে আমাদিগকে সামর্থ্য প্রদান করিবে এবং তুমি ব্যাতীত অপর সকল কিছুর আসক্তি হইতে আমাদিগকে মুক্ত করিবে। আরও লিপিবদ্ধ কর, আমার জন্য এবং তাহাদের জন্য,যাহারা আমার প্রিয় এবং স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে আমার জ্ঞাতিবর্গের জন্য, এই পৃথিবীর এবং পরবর্তী পৃথিবীর সকল মঙ্গল। অতঃপর আমাদিগকে নিরাপদে রক্ষা কর তোমার অব্যর্থ প্রিয় রক্ষনাবেক্ষণ দ্বারা, হে তুমি, যিনি সমগ্র সৃষ্টির প্রিয় এবং সমগ্র বিশ্বের আকাংখিত ঐ সকলের নিকট হইতে যাহাদিগকে তুমি মন্দ রটনাকারীর প্রকাশ স্বরুপ করিয়াছ, যাহারা মানব অন্তরে কুৎসা প্রবেশ করাইয়া দেয়। সত্যই তুমি সর্বশক্তিমান, বিপদে সহায়,স্বয়ং সত্তাবিশিষ্ট।
আশীর্বাদ কর তুমি, হে পরম প্রভু, আমার ঈশ্বর, তাহাকে যাহাকে তুমি তোমার অতি উৎকৃষ্ট উপাধি সমুহের উপর প্রতিষ্ঠিত করিয়াছ এবং যাহার মাধ্যমে তুমি লোককে ধার্মিক ও অধার্মিক এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছ এবং অনুগ্রহপুর্বক তুমি আমাদের তাহাই করিবার জন্য সাহায্য কর যাহা তুমি ভালবাস ও অভিলাষ কর। তুমি তাহাদিগকে আশীর্বাদ কর, হে আমার ঈশ্বর, যাহারা তোমারই ব্যক্যাবলী এবং তোমারই অক্ষরসমূহ এবং তাহাদিগকেও যাহারা তোমারই দিকে আনন ফিরাইয়াছে এবং তোমার আননের দিকে ফিরিয়াছে এবং তোমার আহ্বান ধ্বনি মনোযোগপুর্বক শ্রবণ করিয়াছে। তুমি সত্যই পরম প্রভু এবং সকল লোকেরই সম্রাট এবং সকল কিছুর উপর শক্তিশালী।
হে আমার প্রভু। এই তোমার সেবক এবং তোমার সেবকের সন্তান, যে তোমাকে বিশ্বাস করিয়াছে ও তোমার নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে এবং তুমি ব্যতীত সকল কিছু হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হইয়া তোমার দিকে মুখ ফিরাইয়াছে। প্রকৃতপক্ষে, তুমি তাহাদের নিকট সর্বকৃপাবান যাহারা কৃপা প্রদর্শন করে।
তাহার সস্পর্কে আস, হে তুমি যে মানুষের পাপ ক্ষমা করিয়াছে এবং তাহাদের ভুলভ্রান্তি গোপন করিয়াছে এবং তোমার বদান্যতার স্বর্গ ও কৃপাসমুদ্রের উপযুক্ত হইয়াছে। তোমার অত্যুৎকৃষ্ট কৃপামন্দিরে তাহাকে প্রবেশাধিকার প্রদান কর যাহা পূর্বে স্বর্গ-মর্তের ভিত্তি ছিল। তুমি ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বর নাই, চির ক্ষমাশীল, সর্ব-উদার।
(তারপর তাহাকে ছয়বার ‘‘আল্লাহু আবহা’’ বলিতে হইবে এবং নিম্নের শ্লোকগুলির প্রত্যেকটি উনিশবার করে বলিতে হইবে।)
- আমরা সবাই প্রকৃত পক্ষে, ঈশ্বরের উপাসনা করি।
- আমরা সবাই প্রকৃত পক্ষে, ঈশ্বরের সন্মুখে মাথা নত করি।
- আমরা সবাই প্রকৃত পক্ষে, ঈশ্বরের পথে উৎসর্গীকৃত।
- আমরা সবাই প্রকৃত পক্ষে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি।
- আমরা সবাই প্রকৃত পক্ষে, প্রভুতেই ধৈর্যশীল। -বাহা’উল্লাহ্
(যদি মৃতদেহটি মহিলা হয় তাহলে সেবকের স্থলে সেবিকা বলিতে হইবে)
প্রভা তোমারই জন্য, হে পরম প্রভু আমার ঈশ্বর। তোমার চিরস্থায়ী একাধিপত্যের শক্তি দ্বারা যাহাকে তুমি গৌরবান্বিত করিয়াছ, তাহাকে তোমার নিকট হইতে অধিক দূরে সরাইয়া লইও না। তুমি কি তাহাকে দূরে নিক্ষেপ করিবে, হে আমার প্রভু, যাহাকে তুমি তোমার আধিপত্যের ছায়া দ্বারা আবৃত করিয়াছ এবং তুমি কি তাহাকে তোমার নিকট হইতে বিতাড়িত করিবে, হে আমার বাঞ্ছিত, তুমি যাহার আশ্রয়স্থল হইয়াছ? তুমি যাহাকে উন্নত করিয়াছ তাহাকে কি হীনপদস্থ করিতে পার, অথবা তোমাকে স্মরণ করিবার জন্য যাহাকে সামর্থ্য দিয়াছিলে, তাহাকে কি তুমি ভুলিয়া যাইতে পার?
মহিমান্বিত তুমি, অপরিমেয়রূপে মহিমান্বিত তুমি। তুমি তিনিই যিনি অনন্তকাল হইতে সমগ্র সৃষ্টির সম্রাট এবং ইহার আদি কারণ এবং অনন্তকাল যাবৎ তুমি সমুদয় সৃষ্টির প্রভু এবং ইহার নিয়ামক থাকিবে। মহিমান্বিত তুমি, হে আমার প্রভু। যদি তুমি তোমার সেবকদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করিতে বিরত হও, তবে কে তাহাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করিবে? এবং যদি তুমি তোমার প্রিয়জনদের সাহায্য করিতে অস্বীকার কর, তবে কে এইরূপ লোক আছে যে তাহাদের সাহায্য করিতে পারে?
মহিমান্বিত তুমি, অপরিমেয়রূপে মহিমান্বিত তুমি। তুমি তোমারই সত্যেই পূজিত হইতেছ এবং বাস্তবিক আমরা সকলে তোমারই উপাসনা করি।
তোমার ন্যায়বিচারেই তুমি প্রকাশিত এবং তোমার প্রতিই আমরা সকলে, সত্য সত্যই, সাক্ষ্যদান করিতেছি। তোমার করুণাতেই বাস্তবিক পক্ষে তুমি সকলের প্রিয়। তুমি ব্যতীত অন্য উপাস্য নাই, তুমি বিপদে বন্ধু, তুমি স্বয়ংসত্তা-বিশিষ্ট।
আমার দুঃখ দূর কর, তোমার বদান্যতা ও তোমার উদারতার সাহায্যে, হে সাহায্যকারী। তুমি আমাকে দেখিতে পাইতেছ, হে আমার প্রভু। যখন দুঃখ আমাকে চতুর্দিকে বেষ্টন করিয়াছে, তোমারই দিকে আমার মুখ স্থাপন করিয়া রহিয়াছি। আমি তোমার নিকট মিনতি পূর্বক প্রার্থনা করিতেছি, হে তুমি যিনি সকল সত্তার পরম প্রভু এবং যিনি সকল দৃশ্য ও অদৃশ্য বস্তুকে তোমার ছায়ায় আশ্রয় দ্বারা আবৃত করিয়াছ এবং তোমার নামের সহায়তায়, যাহা দ্বারা তুমি মানবের অন্তর ও আত্মাসমূহ বশীভূত করিয়াছ এবং তোমার করুণার মহাসাগরের তরঙ্গসমূহের সহায়তায় এবং তোমার বদান্যতার প্রভাতিক তারকার উজ্জ্বলতাসমূহের সাহায্যে, যেন তুমি আমাকে তাহাদের সহিত গণনা কর যাহাদিগকে কোন কিছুই তোমার দিকে তাহাদের মুখ স্থাপন করা হইতে নিবৃত্ত করে নাই, হে তুমি যিনি সকল নামের পরম প্রভু এবং স্বর্গসমূহের সৃষ্টিকর্তা।
তুমি দেখিতে পাইতেছ, হে আমার পরম প্রভু, তোমার দিবস সমূহে আমার উপর যে সকল বিপদ পতিত হইয়াছে। আমি তোমার নিকট মিনতিপূর্বক প্রার্থনা করিতেছি, তাঁহারই সহায়তায় যিনি তোমার নামাবলীর প্রভাতিক সূর্য ও তোমার গুণাবলীর উদয়-স্থল, যেন তুমি আমার জন্য তাহাই ব্যবস্থা কর যাহা তোমার সেবার জন্য দন্ডায়মান হইতে এবং তোমার গুণাবলীর উচ্চ প্রশংসা করিতে আমাকে সক্ষম করিবে। তুমি, সত্যই, সর্বশক্তিমান, পরম ক্ষমাশীল, যিনি সকল মানবের প্রার্থনাসমূহের উত্তরদিতে প্রস্তুত।
এবং অবশেষে, তোমার আননের আলোকের সহায়তায় আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছি, যেন তুমি আমার কার্যসমূহের জন্য আশীর্বাদ কর এবং আমার ঋণসমূহের দায় হইতে আমাকে মুক্তিদান কর এবং আমার অভাবসমূহ পুরণ কর। তুমি তিনিই যাঁহার শক্তি ও একাধিপত্য সমন্ধে প্রত্যেক ব্যক্তির রসনা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে এবং যাঁহার মহিমা ও যাঁহার সর্বাধিনায়কতা প্রত্যেক উপলব্ধিসম্পন্ন অন্তর স্বীকার করিয়াছে। তুমি ব্যতীত অন্য উপাস্য নাই, তুমিই শ্রবণ কর এবং তুমিই প্রত্যুত্তর দিতে প্রস্তুত।
ঈশ্বর ব্যতিরেকে অপর কে আছে যে সঙ্কট মোচন করিতে পারে? বলঃ ঈশ্বর প্রশংসিত হউন, তিনিই ঈশ্বর , সকলে তাহার ভৃত্য, সকলে তাহার আজ্ঞাবাহী।
দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত করিতে পারে প্রভু ব্যতীত এইরূপ আর কেহ আছে কি? বলঃ সকল প্রশংসা তারই। তিনিই প্রভু সকলেই তাঁহার সেবক এবং সকলেই তাহার আদেশ প্রতিপালন করে।
বলঃ সকলের জন্য সকল কিছুর উপর ঈশ্বরই যথেষ্ট এবং আকাশ মন্ডলে বা ভূমন্ডলে এমন কিছুই নাই, যাহার জন্য ঈশ্বর যথেষ্ট নহেন। সত্য সত্যই তিনি স্বয়ংই জ্ঞানী রক্ষাকারী, সর্বশক্তিমান।
তুমি দেখিতেছ, হে প্রভু আমাদের অনুনয়কারী হস্তসমূহ তোমার করুণা ও অনুগ্রহের স্বর্গের দিকে উত্তোলিত। অনুমোদন কর যেন উক্ত হস্তসমূহ তোমার অনুগ্রহ ও বদান্যতার সম্পদ দ্বারা পরিপূর্ণ হয়। আমাদিগকে ও আমাদের পিতামাতাকে ক্ষমা কর এবং পূর্ণ কর যাহা কিছু আমরা তোমার অনুকম্পা ও স্বর্গীয় উদারতার সমুদ্র হইতে আকাঙ্খা করিয়াছি। হে আমাদের অন্তরের প্রিয়জন। আমাদের সকল কর্মকান্ড তোমার পথে গ্রহণ কর। সত্য সত্যই তুমি মহাশক্তিশালী। মহামহিমাময়, অতুলনীয় একক ক্ষমাশীল, দয়াময়।
তিনি পরম দয়ালু, সর্ব বদান্যতাপূর্ণ।
সকল প্রশংসা ঈশ্বরের জন্য, তিনি প্রাচীন, তিনি চিরস্থায়ী অপরিবর্তনশীল, শাশ্বত-সনাতন। তিনি যিনি নিজের সত্তায় সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন যে, তিনি, সত্য সত্যই, একক, অদ্বিতীয়, অব্যাহত, পরম মহিমান্বিত। আমরা সাক্ষ্য দিতেছি যে, সত্যই তিনি প্রভু ব্যতীত অন্য উপাস্য নাই। আমরা তাঁহার একত্ব স্বীকার করিতেছি, তাঁহার অদ্বিতীয়ত্ব মানিয়া লইতেছি। তিনি চিরকালই অনধিগম্য উচ্চতাসমূহে বাস করিয়াছে, তাঁহার উচ্চতার চুড়াসমূহে, তিনি ব্যতীত অন্য কিছুরই উল্লেখ হইতে তিনি পবিত্র, তিনি ব্যতীত অন্য যে কাহারও বর্ণনা হইতে তিনি মুক্ত।
এবং যখন তিনি মানবের প্রতি অনুকম্পা ও দয়া প্রদর্শন করিতে এবং পৃথিবীকে নিয়ম ও শৃংখলায় আনয়ন করিতে ইচ্ছা করিলেন, তখন তিনি ধর্ম-কর্মের আনুষ্ঠানিক কার্যসমূহ প্রকাশ করিলেন এবং আইন কানুন সৃষ্টি করিলেন, তাহাদের মধ্যে তিনি বিবাহের আইন বিধিবদ্ধ করিলেন, ইহাকে মানবের উন্নতি ও মুক্তির জন্য একটি দূর্গ সদৃশ করিলেন এবং তাঁহার পরম পবিত্র গ্রন্থে যাহা পরম পবিত্র স্বর্গ হইতে অবতীর্ণ করা হইয়াছিল, আমাদের প্রতি এই আদেশ দেওয়া হইয়াছিল। তিনি বলেন, তাঁহার মহিমা অতি শ্রেষ্ঠ, ‘‘হে লোক সকল তোমরা বিবাহ কর, যেন তোমাদের মধ্য হইতে এইরূপ এক সন্তান আবির্ভূত হইতে পারে যে আমার সেবকদের মধ্যে আমাকে স্মরণ করিবে, তোমাদের প্রতি আমার আদেশগুলির মধ্যে ইহা একটি আদেশ, ইহা মানিয়া চল, যেন ইহা তোমাদের জন্য একটি সহায়তা স্বরূপ হয়।’
তিনিই ঈশ্বর! হে অতুলনীয় পরম প্রভু। তোমার সর্বশক্তিমান বিজ্ঞতায় তুমি জাতিসমূহের প্রতি বিবাহের আদেশ প্রদান করিয়াছ, যেন এই বর্তমান জগতে লোক বংশ পরম্পরাক্রমে, এক অন্যের অনুগামী হইতে পারে এবং যেন সর্বদা, যতদিন এই পৃথিবী স্থায়ী থাকিবে, তাহারা তোমার একতার প্রাঙ্গনে, তোমার সেবায় ও উপাসনায়, অভিবাদন, ভক্তি-আরাধনা ও প্রশংসায় রত থাকিতে পারে। “আমি জিন ও মানবকে (আর কিছুর জন্য) সৃষ্টি করি নাই কেবল (এই জন্য) যেন তাহারা আমার উপাসনা করে” (কোরআন ৫১-৫৬)। অতএব হে আল্লাহ্ !) তুমি তোমার করুণার স্বর্গে তোমার প্রেম-ভালবাসার নীড়ের এই দুইটি পক্ষীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ কর এবং তাহাদিগকে চিরস্থায়ী অনুকম্পা আকর্ষণ করিবার উপায়স্বরূপ কর যেন প্রেমের এই দুইটি সাগরের মিলন হইতে দয়াশীলতার তরঙ্গ উত্থিত হইতে পারে এবং জীবন-সমুদ্রতটে পবিত্র ও সুন্দর সন্তান-সন্তুতি রূপ মুক্তাসমূহ নিক্ষেপ করিতে পারে। “তিনি দুইটি সমুদ্র মুক্ত ও প্রবাহমান করিয়া দিয়াছেন, যেন তাহারা পরস্পর মিলিত হয়; তাহাদের উভয়ের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক রহিয়াছে, যাহা তাহারা অতিক্রম করিতে পারেনা। তোমরা, তবে, তোমাদের পরম প্রভুর বদান্যতাসমূহের মধ্য হইতে কোন্ বদান্যতা অস্বীকার করিতেছ? তাহাদের প্রত্যেকটি হইতে তিনি মুক্তা ও মনিসমূহ বহির্গত করিয়া থাকে।” (কোরআন ৫৫-১৯-২২)
হে পরম দয়ালু প্রভু! তুমি এই বিবাহ-বন্ধনকে এইরূপ আশীষ প্রদান কর যেন ইহা প্রবাল ও মুক্তাসমূহের জন্মদান করিতে পারে। তুমি সত্যই সর্বশক্তিমান, পরম মহিয়ান, চির-ক্ষমাশীল।
হে ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, তোমার প্রেমের রজ্জু আকড়াইয়া ধরিয়া আজ গৃহত্যাগ করিয়াছি। তোমার আশ্রয়ে, তোমার সংরক্ষণে আত্মসমর্পণ করিয়াছি। তোমার প্রিয়জনকে পথভ্রষ্টতা ও দুর্বুদ্ধি এবং প্রত্যেক অত্যাচারী ও দুষ্ট, যাহারা তোমা হইতে দূরে সরিয়া গিয়াছে, তাহাদের প্রভাব হইতে যে শক্তি দ্বারা তুমি তোমার প্রিয়জনকে রক্ষা করিয়া থাক সেই শক্তিতে, আমি প্রার্থনা করিতেছি, তোমার উদার বিপুলতা এবং তোমার কৃপার দ্বারা আমায় রক্ষা কর। তোমার সামর্থ্য এবং শক্তি দ্বারা গৃহে প্রত্যাবর্তনের জন্য আমায় সাহায্য কর। বাস্তবিক তুমিই শক্তিমান, বিপদের সাহায্যকারী, স্বয়ং বিদ্যমান।
সকল প্রশংসা তোমারই, হে পরম প্রভু, আমার ঈশ্বর। আমি তোমার সেই নামের সাহায্যে তোমার নিকট বিনীত প্রার্থনা করিতেছি, যেই নাম কেহই উপযুক্তরূপে চিনিতে পারে নাই এবং যাহার নিহিতার্থ কোন আত্মা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে নাই, আমি তাঁহারই সহায়তায় তোমার নিকট মিনতি করিতেছি যিনি তোমার প্রত্যাদেশ অবতরণের উৎস-মূল এবং তোমার নিদর্শনাবলীর প্রভাতিক-তারকা, যেন তুমি আমার অন্তরকে তোমার প্রেম ও তোমার স্মৃতির একটি আধাররূপে পরিণত কর। অতঃপর ইহাকে তোমার মহান মহাসাগরের সহিত সংযুক্ত কর, যেন ইহা হইতে তোমার বিজ্ঞতার জীবন্ত সলিল রাশি এবং তোমার গৌরব-গীতি ও প্রশংসা-গীতির স্বচ্ছ স্রোতস্বতীসমূহ প্রবাহিত হইতে পারে।
আমার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তোমার একতার সাক্ষ্য প্রদান করে এবং আমার মস্তকের কেশ তোমার সর্বাধিপত্যের ও শক্তির প্রভাব ঘোষণা করিতেছে। সম্পূর্ণ আত্ম-বিলোপ ও সম্পূর্ণ আত্মোৎসর্গের সহিত তোমার অনুকস্পার দ্বারে দন্ডায়মান হইয়াছি এবং তোমার বদান্যতার অঞ্চল আঁকড়িয়া ধরিয়াছি এবং তোমার দয়ার দানের চক্রবালের উপর আমার চক্ষুদ্বয় স্থির নিবিষ্ট করিয়া রাখিয়াছি।
তুমি আমার ভাগ্যে তাহাই নির্দিষ্ট কর, হে আমার প্রভু, যাহা তোমার মহিমার মহত্ত্বের উপযুক্ত এবং তোমার বলবৎকারী অনুকম্পার সাহায্যে আমার আত্মাকে এইরূপ সাহায্য দান কর যেন আমি তোমার প্রত্যাদেশ ধর্ম এইরূপভাবে শিক্ষাদান করিতে পারি, যাহাতে মৃত ব্যক্তিগণ তাহাদের সমাধিসমূহ হইতে দ্রুত বহির্গত হইতে পারে এবং তোমার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ন্যস্ত করিয়া এবং প্রত্যাদেশ-ধর্মের উদয়-স্থান---প্রাচীর দিকে এবং তোমার প্রত্যাদেশ প্রকাশের উদয়স্থলের দিকে, তাহাদের দৃষ্টি দৃঢ়ভাবে নিবদ্ধ করিয়া তোমার দিকে দ্রুত অগ্রগামী হইতে পারে।
তুমি, সত্য সত্যই, পরম শক্তিশালী, পরম মহীয়ান, সর্বজ্ঞ, সর্ব-বিজ্ঞ।
হে প্রভু, আমার ঈশ্বর। অনুগ্রহ করে এই শিশুটিকে তোমার সময়োচিত ব্যবস্থায় তোমার অনুকম্পার বক্ষস্থল হইতে দুগ্ধ পান করিতে দাও, আর তোমার স্বর্গীয় বৃক্ষের ফলসমুহের দ্বারা তাহার পুষ্টিসাধন কর। তুমি ছাড়া অন্য কাহারও তত্ত্বাবধানে রেখে তাকে কষ্ট পাইতে দিও না। যেহেতু তুমি তাহাকে তোমার সর্বময় কর্তৃত্বের ইচ্ছা শক্তিতে সৃষ্টি করিয়াছ। তুমি ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বর নাই, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ।
হে আমার শ্রেষ্ঠ প্রিয়তম। তুমি অতীব প্রশংসিত। তোমার অত্যুৎকৃষ্ট বদান্যতার অনুপম আস্বাদন আর তোমার পবিত্র আশীর্বাদের সৌরভ-সমীরণ তাহার উপর প্রবাহিত কর। তোমার অতি প্রশংসিত নামের ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করিতে তাহাকে সমর্থ কর। হে তুমি, যে নিজে সমস্ত নাম ও গুণাবলীসমূহ বশে রাখিয়া থাক। সত্য-সত্যই ইচ্ছামত কাজ করিতে তুমি সমর্থ এবং তুমি বাস্তবিকই শক্তিশালী, অতি প্রশংসিত, সর্বদা ক্ষমাশীল, অনুগ্রহশীল, দানশীল, কৃপাময়।
হে প্রভু আমার ঈশ্বর। এই ছোট শিশুকে তোমার ভালবাসায় তোমার অন্তরে লালিত পালিত কর ও ঐশ্বরিক প্রেমের দুগ্ধ ইহাকে প্রদান কর। এই সতেজ চারাগাছটিকে (কচি শিশুটিকে) তোমার ভালবাসার গোলাপ উদ্যানে রোপিত কর এবং তোমার বদান্যতার বর্ষণে ইহাকে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইতে সাহায্য কর। ইহাকে স্বর্গরাজ্যের শিশু কর ও তোমার স্বর্গরাজ্যে পরিচালনা কর। তুমি সর্বশক্তিমান ও দয়ালু, তুমি দাতা, তুমি উদার, অনুপম, বদান্যতার প্রভু।
হে প্রভু। আমাকে পরিচালনা কর, আমাকে রক্ষা কর, আমাকে একটি জলন্ত প্রদীপে ও উজ্জ্বল তারকায় পরিণত কর। তুমি সামর্থ্যবান ও শক্তিমান।
হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, তোমার জয় হউক। আমি তোমারই সেবক, তোমারই স্বাভাবিক আনুকূল্যে তোমার অপার করুণামৃত পান করিতে সমর্থ হইয়াছি এবং তোমার যুগে তোমার অনুগ্রহের আস্বাদন লাভ করিয়াছি। আমি তোমার সেই পবিত্র নামাবলীর প্রেমবন্দনার সাহায্যে নিবেদন করিতেছি যে, কোন দুঃখ কষ্টই তোমার প্রেমে উল্লসিত হইতে অথবা তোমার দর্শনাকাঙ্খায় আত্মবিভোর হইতে যাহাকে বাধা দিতে পারে না এবং অচেতনতা কিংবা ধর্মহীনতার কোন শক্তিই যাহাকে পথভ্রষ্ট করিতে পারে না, তুমি তোমার সেই সেবককে তোমার সৎবস্তুসমূহ প্রদান কর এবং এত উচ্চতর স্তরে উন্নীত কর যাহাতে সে এই সৃষ্ট জগতকে এক অতি ক্ষণস্থায়ী প্রতিবিম্বরূপে মনে করিতে পারে।
অধিকন্তু হে প্রভু, তোমার অপরিমেয় রাজোচিত মর্যাদার শক্তিবলে তাহাকে তোমার সমস্ত ঘৃন্য বস্তুসমূহ হইতে রক্ষা কর। সত্যই তুমি তাহার প্রভু ও সর্বজগতের প্রভু।
তোমারই আশ্রয়ে আমি জাগ্রত হইয়াছি, হে আমার প্রভু এবং যে সেই আশ্রয় অন্বেষণ করে তাহার উচিত তোমারই সংরক্ষণের পবিত্র প্রত্যাদেশ মন্দিরে এবং তোমারই আত্মরক্ষার পবিত্র দূর্গে অবস্থান করে। আমার আভ্যন্তরীণ সত্তা আলোকিত কর, হে আমার পরম প্রভু, তোমার স্বর্গীয় প্রত্যাদেশের প্রভাতিক সুর্যের উজ্জ্বলতাসমুহ দ্বারা, ঠিক তেমনই, যেমন তুমি তোমার অনুকম্পার প্রভাতকালীন আলোক দ্বারা আমার বহিঃস্থ সত্তাকে আলোকমন্ডিত করিয়াছ।
হে আমার প্রভু, তোমার কৃপায় আজ প্রাতঃকালে আমি উঠিয়াছি এবং তোমাতে সম্পুর্ণ বিশ্বাস রাখিয়া এবং নিজেকে তোমার আশ্রয়ে অর্পন করিয়া গৃহত্যাগ করিয়াছি। অতএব, তোমার দয়ার স্বর্গ হইতে তোমার আশীর্বাদ বর্ষন কর যেন যে ভাবে আমার বিবেক, আমার চিন্তা তোমার সংরক্ষণে তোমাতে দৃঢ়ভাবে সংযোগ স্থাপন করিয়া গৃহ হইতে বাহির হইতে সমর্থ হইয়াছি, ঠিক সেই ভাবেই যেন নিরাপদে ফিরিয়া আসিতে পারি। তোমা ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বর নাই-তুমি একক, অতুলনীয়, সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানী।
হে আমার পরম প্রভু ! আমি তোমার প্রতি উহা উৎসর্গ করিতেছি যাহা আমার গর্ভে রহিয়াছে। অতঃপর ইহাকে তোমার রাজত্বে একটি প্রশংসনীয় শিশু হইতে এবং তোমার অনুগ্রহ এবং তোমার উদারতা দ্বারা ভাগ্যবান হইতে; তোমার শিক্ষার তত্ত্বাবধানে বিকশিত ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইতে দাও। সত্য সত্যই, তুমি করুণাময় ! সত্য সত্যই, তুমি মহান অনুগ্রহের পরম প্রভু!
“হে করুণাময়ের সেবিকাগণ! তোমাদের অবশ্য কর্তব্য হইতেছে শিশুগণকে তাহাদের শৈশবের প্রারম্ভ হইতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা! ... এবং ইহাতে শৈথিল্য আদৌ অনুমোদনযোগ্য নহে।”-আব্দুল-বাহা"
আমার পরম প্রভু ! আমার পরম প্রভু! আমি তোমার মহিমাকীর্তন করিতেছি এবং আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতেছি, উহার জন্য যাহা দ্বারা তুমি তোমার বিনীত সেবিকাকে অনুগৃহীত করিয়াছ, তোমার ক্রীতদাসী তোমার প্রতি মিনতি করিতেছে এবং বিনীতভাবে ও আন্তরিকতার সাথে প্রার্থনা করিতেছে, যেহেতু তুমি সত্য সত্যই তাহাকে তোমার সুস্পষ্ট রাজত্বের দিকে পথ প্রদর্শন করিয়াছ এবং তাহাকে সম্ভাব্যতার জগতে তোমার উচ্চপ্রশংসিত আহ্বান শ্রবণ করাইয়াছ এবং তোমার নিদর্শনসমূহ দর্শন করাইয়াছ যাহা সকল বস্তুর উপর তোমার বিজয়দৃপ্ত রাজত্বের দৃষ্টিগোচরতা প্রমাণ করে।
হে আমার পরম প্রভু ! আমি তোমার প্রতি উহা উৎসর্গ করিতেছি যাহা আমার গর্ভে রহিয়াছে। অতঃপর ইহাকে তোমার রাজত্বে একটি প্রশংসনীয় শিশু হইতে এবং তোমার অনুগ্রহ এবং তোমার উদারতা দ্বারা ভাগ্যবান হইতে; তোমার শিক্ষার তত্ত্বাবধানে বিকশিত ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইতে দাও। সত্য সত্যই, তুমি করুণাময় ! সত্য সত্যই, তুমি মহান অনুগ্রহের পরম প্রভু!
হে ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর ! তোমার এই দাসী তোমার নিকট প্রার্থনা করিতেছে, তোমার উপর ভরসা করিয়া, তোমার প্রতি তাহার মুখমন্ডল ফিরাইয়া, তোমার স্বর্গীয় বদান্যতাসমূহ তাহার উপর অর্পণ করিতে এবং তোমার আধ্যাত্মিক রহস্যাবলী তাহার নিকট উন্মোচন করিতে এবং তোমার ঐশ্বরিক প্রকৃতির আলোকসমূহ তাহার উপর বর্ষণ করিতে তোমার প্রতি অনুনয় করিতেছে।
হে আমার পরম প্রভু ! আমার স্বামীর চক্ষুদ্বয়কে অবলোকন করিতে দাও। তোমার জ্ঞানের আলো দ্বারা তাহার হৃদয়কে আনন্দিত কর, তোমার উজ্জ্বল সৌন্দর্যের প্রতি তাহার মন আকৃষ্ট কর, তোমার সুস্পষ্ট মহিমা তাহার নিকট প্রকাশের দ্বারা তাহার আত্মাকে উদ্দীপিত কর।
হে আমার পরম প্রভু ! তাহার দৃষ্টির সম্মুখ হইতে পর্দা তুলিয়া লও। তোমার প্রাচুর্যময় বদান্যতাসমূহ তাহার উপর বর্ষিত কর, তোমার প্রেমের মদিরা দ্বারা তাহাকে মাতাল কর, তাহাকে তোমার সেই সকল দেবদূতগণের একজনে পরিণত কর যাহাদের পা এই ধরাপৃষ্ঠে বিচরণ করিলেও তাহদের আত্মাগুলি যেন উচ্চ স্বর্গসমূহে উড্ডয়ণ করিতেছে। তাহাকে তোমার জনম-লীর মধ্যে তোমার বিজ্ঞতার আলো সহকারে দীপ্তিমান একটি উজ্জ্বল প্রদীপে পরিণত কর।
সত্য সত্যই, তুমি-ই প্রাণপ্রিয়, চির উদার, দানশীল।
সকল প্রশংসা তোমারই, হে আমার প্রভু, তুমিই সকল গৌরব ও মহিমা, শ্রেষ্ঠত্ব ও সন্মান, একাধিপত্য ও রাজত্ব, মহত্ত্ব ও কৃপা, ভীতি ও শক্তির পবিত্র মুল উৎস। যাহাকে তুমি ইচ্ছা কর তাহাকে তুমি পরম মহান সমুদ্রের নিকট আকৃষ্ট কর এবং যাহাকে ইচ্ছা কর, তোমার পরম সনাতন নামের পরিচয় বহন করার গৌরব তাহার উপর তুমি অর্পণ কর। স্বর্গে ও মর্তে যাহারা আছে, তাহাদের কেহই তোমার মহাপরাক্রমশালী ইচ্ছাশক্তির কর্মফল প্রতিরোধ করিতে সক্ষম নহে। অনন্তকাল হইতে তুমিই সমুদয় সৃষ্ট জগৎ শাসন করিয়াছ এবং তুমিই চিরকাল সমুদয় সৃষ্ট জগতের উপর তোমার একাধিপত্য পরিচালনা করিতে থাকিবে। তুমি ঈশ্বর ব্যাতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি সর্বশক্তিমান,পরম মহিমান্বিত,সর্বক্ষমাশীল,সর্ব-বিজ্ঞ।
তোমার পবিত্র নাম মহিমান্বিত হউক, হে পরম প্রভু আমার ঈশ্বর। তুমি তিনিই যাহাকে সকলেই উপাসনা করে এবং যিনি কাহারও উপাসনা করেন না, যিনি সকলেরই প্রভু এবং কাহারও অধীনস্থ ভৃত্য নহেন, যিনি সকলকেই জানেন এবং যাঁহাকে কেহই জানে না। তুমি ইচ্ছা করিয়াছিলে লোকের নিকট নিজেকে পরিচিত করিতেঃ সুতরাং তুমি, তোমার মুখের একটি বাক্যের মধ্য দিয়া, সৃষ্টিকে সত্তায় আনয়ন করিয়াছিলে এবং বিশ্বজগৎকে গঠিত করিয়াছিলে। তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই। তুমি গঠনকারী, তুমি সৃষ্টিকর্তা, তুমি সর্বশক্তিমান, পরম ক্ষমতাশালী।
আমি তোমার নিকট মিনতি পুর্বক প্রার্থনা করিতেছি-তোমার ইচ্ছার দিকমন্ডলের উপর যে বাক্য উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত হইয়াছে, তাহারই মাধ্যমে যেন তুমি আমাকে সেই জীবন্ত স্রোতস্বতীর সলিল প্রচুর পরিমাণে পান করিতে সক্ষম কর যাহা দ্বারা তুমি তোমার মনোনীত জনগণের অন্তর পুনরুজ্জীবিত করিয়াছ এবং যাহারা তোমাকে ভালবাসে তাহাদের আত্মাগুলিকে জীবিত করিয়াছ, যেন আমি, সকল সময় ও সর্ব অবস্থায়, তোমারই দিকে সম্পুর্ণরূপে আমার মুখ ফিরাইতে পারি।
তুমি প্রভু, শক্তি, প্রভা ও দয়ার একমাত্র অধিকারী। তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি সর্বোচ্চ অধিপতি, সর্বপ্রভাময়, সর্বজ্ঞ।
তুমি গৌরবান্বিত হে পরম প্রভু আমার ঈশ্বর! আমি তোমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি, কেননা তুমি তোমার নিজেরই প্রকাশকে চিনিয়া লইতে আমাকে সক্ষম করিয়াছ এবং আমাকে তোমার শত্রুগণ হইতে পৃথক করিয়াছ এবং তোমার দিবস সমূহে তাহাদের অপকার্যসমূহ ও অসৎ কর্মসমূহ আমার চক্ষের সম্মুখে মেলিয়া ধরিয়াছ এবং তাহাদের প্রতি সকল প্রকার আসক্তি হইতে আমাকে মুক্ত করিয়াছ এবং সম্পূর্ণরূপে তোমার অনুকম্পা ও বদান্য অনুগ্রহসমূহের দিকে আমার মুখ ফিরাইয়াছ। তোমাকে আরও ধন্যবাদ দিতেছি, কেননা তুমি তোমার ইচ্ছার মেঘমালা হইতে আমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছ, তাহা আমাকে অবিশ্বাসীদের ইঙ্গিতসমূহ অবিশ্বাসীদের পরোক্ষ উক্তিসমূহ হইতে এইরূপ পবিত্র করিয়াছ যে, আমি তোমারই উপর আমার অন্তর সুদৃঢ়ভাবে ন্যস্ত করিয়াছি এবং যাহারা তোমার আননের আলোক অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের নিকট হইতে পলায়ন করিয়াছি, যেহেতু তুমি আমাকে তোমার প্রেমে স্থির সঙ্কল্প হইতে এবং তোমার প্রশংসা করিতে ও তোমার গুণাবলীর উচ্চ প্রশংসা করিতে শক্তি দান করিয়াছ এবং তুমি আমাকে তোমার করুণার পান পাত্র হইতে পান করিতে দিয়াছ, যাহা সর্ব দৃশ্য ও অদৃশ্য বস্তুকে অতিক্রম করিয়াছে।
তুমি সর্ব শক্তিমান, পরম মহিমান্বিত, সর্ব গৌরবময়, সর্ব প্রেমময়।
প্রভু আমার, আরাধ্য আমার, প্রভু আমার, বাঞ্ছিত আমার। কোন্ রসনা তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতে পারে? আমি অমনোযোগী ছিলাম, তুমি আমাকে জাগরিত করিয়াছিলে। আমি তোমার নিকট হইতে পশ্চাদপদ হইয়াছিলাম, তুমি কৃপা পূর্বক তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করিতে আমার সহায়তা করিয়াছিলে। আমি একজন মৃত ব্যক্তির ন্যায় ছিলাম, তুমি জীবন-সলিল দ্বারা আমাকে সঞ্জীবিত করিয়াছিলে। আমি বিশুস্ক হইয়া গিয়াছিলাম, সর্ব-কৃপাময়ের পবিত্র লেখনী হইতে প্রবাহিত তোমার উচ্চারিত বাণীর স্বর্গীয় প্রস্রবনের সলিল স্রোতের দ্বারা তুমি আমাকে পুনরুজ্জীবিত করিয়াছিলে।
হে স্বর্গীয় বিধাতা, সকল অস্তিত্ব তোমার বদান্যতা হইতেই জন্মলাভ করিয়াছে, ইহাকে তোমার উদারতার সুমদ্রের জলরাশি হইতে বঞ্চিত করিওনা, তোমার করুণার মহাসাগর হইতেও ইহাকে প্রতিরোধ করিও না। সকল সময় এবং সর্ব অবস্থায় আমাকে সাহায্য ও সহায়তা করিবার জন্য তোমার নিকট মিনতি করিতেছি এবং তোমার অনুকম্পার স্বর্গ হইতে তোমার সনাতন অনুগ্রহ প্রার্থনা করিতেছি। তুমি সত্য সত্যই, বদান্যতার পরম প্রভু এবং চিরস্থায়ী রাজত্বের মহা পরাক্রান্ত সম্রাট।
হে আমার প্রভু, তোমার গৌরবান্বিত নাম ধরিয়া বলিতেছি যে, তুমি আমাকে তাহাই সাহায্য কর যাহা তোমার সৌভাগ্যশালী ও তোমার সেবকগণের উন্নতির কারণস্বরূপ হইবে। প্রকৃতপক্ষে সকল কিছুর উপর তোমার শক্তি বর্তমান।
“বৎসরের মাসগুলির দিনসমুহের সমষ্টির (কারণ ১৯ মাসে বৎসর, এক মাসে ১৯দিন) অতিরিক্ত দিনগুলি (চার বা পাঁচ দিন) উপবাস মাসের পুর্বে স্থাপন কর। এই দিনগুলিকে রাত্র-দিন একত্রে গণনা করতঃ আরবী আবজাদ গণনার হিসাব মতে আরবী ‘হা’ অক্ষরের প্রকাশরূপে নির্দিষ্ট করিয়াছি। এইরূপে বৎসরের দিনগুলির ও বৎসরের মাসগুলির সংখ্যা নির্ধারিত হইয়াছে। এই দিবসসমুহে বাহা’ই ধর্মালম্বীদের উচিত নিজদিগকে ও আত্মীয়-স্বজনকে এবং দরিদ্র, অভাবগ্রস্থজনকে ভোজন করাইবে এবং মনের আনন্দ ও উৎফুল্লতা সহকারে তাহাদের নিকট ঈশ্বরের একত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারী শ্লোকসমুহ আবৃতি করিবে এবং যখন দানসমূহের দিবসগুলি অতীত হইয়া যাইবে, তখন উপবাস-মাসে প্রবেশ করিবে-মানবের পরম প্রভু এইরূপই আদেশ করিয়াছেন।’’ কিতাবে আক্বদাস-৪৫ শ্লোক
আইয়্যামে-হা অর্থাৎ আবজাদের ‘হা’ বর্ণের সংখ্যার দিনগুলি যাহা পাঁচ দিন, ২৬শে ফেব্রুয়ারী হইতে পহেলা মার্চ পর্যন্ত চার কিম্বা পাঁচ দিন, এইগুলি উপবাসের জন্য প্রস্তুতির দিনসমূহ, অতিথি সৎকারের দিন, দান ও উপহার প্রদানের দিন।’’
প্রভু আমার, অগ্নি আমার এবং আলোক আমার। যে দিবসসমূহকে তোমার ঐশী গ্রন্থে তুমি ‘আইয়্যামে-হা’ নাম দিয়াছ, সেই দিবস সমূহ আরম্ভ হইয়াছে, হে তুমি যিনি নামসমূহের সম্রাট এবং যে উপবাস, তোমার পরম মহিমানি¦ত লেখনী দ্বারা, যাহারা তোমার সৃষ্টির রাজ্যে অবস্থান করিতেছে তাহাদের সকলকে, প্রতিপালন করার জন্য আদেশ করিয়াছ, তাহা নিকটবর্তী হইতেছে। হে আমার পরম প্রভু। এই সমুদয় দিবসের সহায়তায় এবং তাহাদের সকলের সহায়তায়, যাহারা এই নির্ধারিত সময়ে তোমার আদেশসমূহের রজ্জু আঁকড়াইয়া ধরিয়াছে এবং তোমার বিধি-বিধানসমূহের হাতল ধৃত করিয়া রহিয়াছে, আমি তোমার নিকট অনুনয় করিতেছি যেন তুমি প্রত্যেক আত্মার জন্য তোমার প্রাঙ্গণের সীমার মধ্যে একটি স্থান নির্দিষ্ট করিয়া দাও এবং তোমার মুখমন্ডলের আলোকের প্রভাবসমূহের প্রকাশের স্থানে একটি আসন দান করিতে সম্মত হও।
ইহারা তোমার সেবক, হে আমার পরম প্রভু, যাহাদিগকে তুমি তোমার ঐশী গ্রন্থে যাহা অবতীর্ণ করিয়াছিলে তাহা হইতে কোন প্রকার দূষিত অনুরাগ পশ্চাদপদ হইতে দেয় নাই। তাহারা তোমার প্রত্যাদেশের সন্মুখে তাহাদের মস্তক অবনত করিয়াছে এবং তাহারা তোমার অবতীর্ণ গ্রন্থ এইরূপ দৃঢ়ভাবে ও দৃঢ় সংকল্পের সহিত গ্রহণ করিয়াছে, যাহা কেবল তোমারই দানে সম্ভব এবং তাহারা তাহাই প্রতিপালন করিয়াছে, যাহা তুমি তাহাদের জন্য ব্যবস্থা প্রদান করিয়াছিলে এবং যাহা তোমা কর্তৃক অবতীর্ণ করা হইয়াছিল, তাহাই তাহারা অনুসরণ করিতে মনোনীত করিয়াছে।
তুমি দেখিতে পাইতেছ, হে আমার পরম প্রভু, তুমি তোমার ধর্মগ্রন্থসমূহে যাহা অবতীর্ণ করিয়াছ তাহারা কি প্রকারে তাহা চিনিতে পরিয়াছে এবং স্বীকার করিয়া লইয়াছে। হে আমার প্রভু, তোমার কৃপার হস্ত হইতে তোমার অনন্তকালীন জলরাশি তাহাদিগকে পান করিতে দাও। অতঃপর তাহাদের জন্য সেই প্রতিদান লিপিবদ্ধ কর যাহা তাহার জন্য ব্যবস্থা করা হইয়াছে, যে তোমার উপস্থিতি মহাসাগরে নিজেকে নিমজ্জিত করিয়াছে এবং তোমার সাক্ষাৎকার লাভের উৎকৃষ্ট সুরা পান করিয়াছে।
আমি তোমার নিকট বিনীত প্রার্থনা করিতেছি, হে তুমি, যিনি রাজাদের সম্রাট এবং উৎপীড়িতদের প্রতি দয়ালু, যেন তুমি তাহাদের জন্য এই পৃথিবীর ও পরবর্তী পৃথিবীর মঙ্গলের ব্যবস্থা কর। অধিকিন্তু, তাহাদের জন্য উহা লিপিবদ্ধ কর, যাহা তোমার সৃষ্ট জীবদের কেহই আবিস্কার করিতে সমর্থ হয় নাই এবং তাহাদিগকে তাহাদের সহিত গণনা কর, যাহারা তোমার চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করিয়াছে এবং যাহারা তোমার জগৎসমূহের প্রত্যেক জগতে তোমার সিংহাসনের নিকটে পরিভ্রমণ করে।
সত্যই তুমি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ,সর্ব বিজ্ঞ।
পবিত্র আক্বদাস গ্রন্থ এই আদেশ দান করিতেছেঃ “তোমরা পুরুষ ও স্ত্রীলোক বয়ঃপ্রাপ্তির (১৬ বৎসরে পদার্পণের) প্রারম্ভ-কাল হইতে আমরা তোমাদের জন্য উপবাস ও উপাসনা বাধ্যতামূলক করিয়াছি। তোমাদের পরম প্রভু ও তোমাদের পূর্ব পুরুষদের পরম প্রভু কর্তৃক ইহা আদেশ করা হইয়াছে’’ কিতাবে আক্বদাস, ২৩ শ্লোক।
“হে মহিমান্বিত লেখনী। বলঃ হে পৃথিবীর নেতৃবৃন্দ তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক (উনিশ) দিনের উপবাস বাধ্যতামূলক করিয়াছি এবং ইহা পরিসমাপ্তির পর নও-রোজকে (নব-বর্ষের প্রথম দিনকে) তোমাদের জন্য একটি পর্ব-দিন রূপে নির্দিষ্ট করিয়াছি।’’ কিতাবে আক্বদাস, ৪৫ শ্লোক।
“ভ্রমনণকারী, পীড়িত ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারিণী নারীর উপবাস বাধ্যতামূলক নহে এবং তাহারা উপবাস মাস পালন না করিলে কোন দোষ নাই। ঈশ্বর নিজ অনুকম্পায় তাহাদিগকে ক্ষমা করেন, নিশ্চয় তিনি অতি শক্তিশালী ও অতি দানশীল।’’ কিতাবে আক্বদাস, ৪৬ শ্লোক।
“এই উনিশ দিন যাবৎ প্রত্যহ সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় হইতে নিজেদের বিরত রাখ এবং সাবধান হও, পাছে পবিত্র গ্রন্থে নির্ধারিত ও মহান অনুগ্রহ হইতে তোমাদের বাসনা তোমদিগকে বঞ্চিত করে।’’ কিতাবে আক্বদাস, ৪৭ শ্লোক।
তোমার জন্য সর্ব প্রশংসা, হে পরম প্রভু, আমার ঈশ্বর। আমি তোমার নিকট বিনীতভাবে প্রার্থনা করিতেছি, এই অবতীর্ণ বাণীর মাধ্যমে যাহা দ্বারা অন্ধকারকে আলোকে পরিণত করা হইয়াছে, যাহার মাধ্যমে প্রায় সর্ব সময়ে ব্যবহৃত ধর্ম মন্দির নির্মিত হইয়াছে এবং লিখিত ফলকলিপি অবতীর্ণ করা হইয়াছে এবং বিস্তৃত তালিকা খোলা হইয়াছে, যেন আমার উপর এবং যাহারা সংগে আছে তাহাদের উপর তাহাই প্রেরিত হয় যাহা আমাদিগকে তোমার অত্যুৎকৃষ্ট প্রভার স্বর্গসমূহে উড্ডীয়মান হইতে সক্ষম করিবে এবং আমাদিগকে সেইরূপ সন্দেহসমূহের কলঙ্ক হইতে মুক্ত করিবে যাহা সন্দিগ্ধ ব্যক্তিগণকে তোমার একত্বের মন্দিরে প্রবেশাধিকারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছে।
আমি সেই একক ব্যক্তি, হে আমার পরম প্রভু, যে তোমার সস্নেহ সহানুভূতির রজ্জু সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করিয়া রহিয়াছে এবং তোমার করুণা ও অনুগ্রহ সমুহের বস্ত্রাঞ্চল আঁকড়াইয়া ধরিয়াছে। তুমি আমার জন্য ও আমার প্রিয়জনগণের জন্য এই পৃথিবীর ও পরবর্তী পৃথিবীর মঙ্গলের ব্যবস্থা কর। অতঃপর তাহাদিগকে সেই গুপ্ত উপহার প্রদান কর, যাহা তুমি তোমার সৃষ্ট জীবদের মধ্যস্থ তোমার নির্বাচিতদের মধ্যে যাহারা শ্রেষ্ঠ তাহাদের জন্য নির্দিষ্ট করিয়াছ।
হে আমার পরম প্রভু, এই গুলি ঐ দিবস যে দিবসসমূহে তুমি তোমার সেবকগণকে উপবাস প্রতিপালন করিতে আদেশ দান করিয়াছ, কতই সৌভাগ্যবান সে, যে উপবাস সমন্ধে তোমার আদেশ প্রতিপালন করে এবং যে সম্পূর্ণরূপে তোমারই জন্য, তুমি ব্যতীত আর সকল দ্রব্য হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হইয়াছে। আমাকে সাহায্য কর এবং তাহাদের সাহায্য কর, হে আমার পরম প্রভু, তোমার আদেশ প্রতিপালন করিতে এবং তোমার উপদেশানুসারে চলিতে। সত্যই তুমি যাহা মনোনীত কর তাহা করিতে তুমি সক্ষম।
তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি সর্বজ্ঞ, সর্ব বিজ্ঞ, সকল প্রশংসা ঈশ্বরেরই, সর্ব-বিশ্বের পরম প্রভু।
(নওরোজ- “হে মহিমানি¦ত লেখনী,বলঃ হে পৃথিবীর নেতৃবৃন্দ তোমাদের জন্য নিদিষ্ট সংখ্যক (উনিশ) দিনের উপবাস বাধ্যতামূলক করিয়াছি এবং ইহা পরিসমাপ্তির পর নওরোজকে (নববর্ষের প্রথম দিনকে) তোমাদের জন্য একটি পর্ব-দিনরূপে নির্দিষ্ট করিয়াছি।’ - কিতাবে আক্বদাস।
তুমি সু-প্রশংসিত হও, হে আমার প্রভু, যেহেতু তুমি নওরোজকে তাহাদের জন্য একটি আনন্দ-উৎসবরূপে আদেশ দান করিয়াছ যাহারা তোমার প্রেমের জন্য উপবাস-বিধি পালন করিয়াছে এবং যে সকল বিষয় তোমার নিকট ঘৃণ্য, তাহা হইতে বিরত রহিয়াছে। ইহাই অনুমোদন কর, হে আমার পরম প্রভু, যেন তোমার প্রেমের অগ্নি এবং তোমা কর্তৃক আদিষ্ট উপবাস দ্বারা সৃষ্ট উষ্ণতা তাহাদিগকে তোমার প্রত্যাদেশ-ধর্মে উৎসাহিত করিতে পারে এবং তাহাদিগকে তোমার প্রশংসা ও তোমার স্মৃতি-কার্যে নিযুক্ত রাখিতে পারে।
যেহেতু তুমি তাহাদিগকে সুশোভিত করিয়াছ, হে আমার পরম প্রভু, তোমার দ্বারা নির্দেশিত উপবাস-রূপ অলংকারে, অতএব, তুমি তাহাদিগকে তোমার অনুকম্পা ও বদান্যতাপূর্ণ অনুগ্রহের মধ্য দিয়া তোমার অনুমোদনরূপ অলংকারেও তাহাদের বিভূষিত কর। কারণ মানুষের কৃতকর্মসমূহ তোমার সন্তোষের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল এবং তোমার আদেশ সাপেক্ষ। যে উপবাসান্তে তাহা ভঙ্গ করিয়াছে, তাহাকে তুমি ঐ ব্যক্তির ন্যায় মনে করিবে যে উপবাস পালন করিয়াছে, এইরূপ লোককে তাহাদের মধ্যে গণ্য করিবে, যাহারা অনন্তকাল হইতে উপবাস-বিধি পালন করিয়া আসিতেছে। যে ব্যক্তি উপবাস-বিধি পালন করিয়া তৎপরে উহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে, তোমার আদেশ এইরূপ হইবে যে, সে ব্যক্তি তাহাদের মধ্যে পরিগণিত হইবে, যাহারা তোমার অবতীর্ণ প্রত্যাদেশ-বাণীর পরিচ্ছদ ধূলায় কলঙ্কিত করিয়াছে এবং এই জীবন্ত স্বর্গীয় প্রস্রবণের স্বচ্ছ সলিল রাশি হইতে অনেক দূরে অপসারিত হইয়াছে।
তুমি তিনিই যাহার মধ্য দিয়া “সু-প্রশংসতি তুমি তোমার কার্যসমূহে” এই ধ্বজা উত্তোলিত হইয়াছে এবং “তোমার আদেশ প্রতিপালিত হয়” এই পতাকা প্রসারিত করা হইয়াছে। তুমি তোমার এই পদবী সমন্ধে অবগত করাও, হে আমার প্রভু, তোমার সেবকদের নিকট, যেন তাহারা সতর্ক হইতে পারে যে, সকল দ্রব্যের শ্রেষ্ঠত্ব তোমার আদেশের ও তোমার বাক্যের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক কার্যের গুণ তোমার অনুমতি ও ইচ্ছার সন্তোষের উপর নির্ভরশীল এবং যেন তাহারা ইহা অবগত হইতে পারে যে, মানবের কার্যসমূহের বল্গা তোমার অনুমোদন ও আদেশের আয়ত্তের অধীন। তাহাদিগকে ইহা অবগত করাইয়া দাও যে, এই দিবস সমূহে, কিছুই তাহাদিগকে তোমার সুষমা হইতে দূরে রাখিতে পারে না, যে দিবসসমূহে, যীশুখ্রীষ্ট উচ্চস্বরে বলেঃ “সর্বাধিপত্য তোমারই হে তুমি পবিত্রাত্মার (যীশুর) জন্মদাতা” এবং তোমার বন্ধু (মুহাম্মদ (সঃ) চিৎকার করিয়া বলেনঃ “সকল প্রশংসা তোমারই, হে তুমি, সর্বোচ্চ প্রিয়তম” কারণ তুমি তোমার বিভূতি অনাবৃত ও প্রকাশিত করিয়াছ এবং তোমার মনোনীত জনগণের জন্য তাহাই লিপিবদ্ধ করিয়াছ যাহা তাহাদিগকে তোমার পরম মহিমান্বিত নামের অবতরণ আসনের নৈকট্যলাভ করিতে সমর্থ করিবে, যাহার মধ্য দিয়া সকল জাতির লোক বিলাপ করিয়াছে, কেবল তাহারা ব্যতীত যাহারা তুমি ব্যতীত আর সকল হইতে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করিয়াছে এবং নিজেদের তাঁহার দিকে অগ্রবর্তী করিয়াছে যিনি তোমার নিজের অবতরণকারী এবং তোমার গুণাবলীর ঐশী প্রকাশ।
তিনি যিনি তোমার শাখা এবং তোমার সকল সহচর, হে আমার পরম প্রভু অদ্য তাহাদের উপাবাস ভঙ্গ ও সাঙ্গ করিয়াছে এবং তাহারা তোমার দরবার প্রাঙ্গনের সীমার মধ্যে তোমাকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য তাহাদের অতীব ব্যগ্রতায় ইহা প্রতিপালন করিয়াছে। তুমি তাহার জন্য এবং তাহাদের জন্য এবং ঐ সকল দিবসে যাহারা তোমার নিকট উপস্থিত হইয়াছে তাহাদের সকলের জন্য, তোমার পবিত্র গ্রন্থে যে সমুদয় মঙ্গল নির্দিষ্ট করিয়াছিলে তাহা তাহাদের জন্য আদেশ কর। তাহাদিগকে অতঃপর, তাহাই প্রদান কর যাহা তাহাদের, ইহকাল ও পরকালে, উপকারে আসিবে।
তুমি, সত্য সত্যই সর্বজ্ঞ, সর্ব বিজ্ঞ।
(রিজওয়ানের উৎসব, এপ্রিল ২১ - মে ২ পর্যন্ত, তাঁহার অনুসারীদের প্রতি বাহা’উল্লাহ্র দৌত্যের ঘোষণাকে স্মরণীয় করে। বাহা’উলাহ ইহাকে “উৎসবসমূহের রাজা” হিসাবে ঘোষণা করিয়াছেন এবং কিতাব-ই-আক্বদাসে ইহার সম্বন্ধে সেই দিবসরূপে উল্লেখ করিয়াছেন যখন “সমগ্র সৃষ্টবস্তুকে পরিশোধনের সাগরে নিমজ্জিত করা হইয়াছিল।’’ )
স্বর্গীয় বসন্তকাল আসিয়াছে, হে সর্বাধিক উচ্চপ্রশংসিত লেখনী, যেহেতু পরম করূণাময়ের উৎসব দ্রুত নিকটবর্তী হইতেছে। নিজেকে জাগ্রত ও সচল কর এবং সমগ্র সৃষ্টির সম্মুখে ঈশ্বরের নাম উচ্চ-প্রশংসিত কর এবং এইরূপে তাঁহার প্রশংসা উদযাপন কর যেন সকল সৃষ্টবস্তু নবজীবন লাভ করিতে পারে এবং নতুন হইতে পারে। কথা বল এবং নিজেকে নিরব রাখিও না। পরম সুখের দিবস তারকা আমাদের নামের দিকচক্রবালের উপর দীপ্তিমান রহিয়াছে, পরম সুখ, যেহেতু, ঈশ্বরের নামের রাজত্ব তোমার পরম প্রভুর নামের অলঙ্কার দ্বারা সজ্জিত হইয়াছে, যিনি স্বর্গসমূহের সৃষ্টিকর্তা। পৃথিবীর জাতিসমূহের সম্মুখে উত্থিত হও এবং এই সর্ব মহান নামের শক্তি দ্বারা নিজেকে সজ্জিত কর এবং তাহাদের মধ্যে গণ্য হইও না যাহারা অপেক্ষা করে...
এই সেই দিবস যেই দিবসে অদৃশ্য জগৎ চিৎকার করিয়া বলিয়াছে: “মহান তোমার পরমানন্দ, হে পৃথিবী, কারণ তোমাকে তোমার ঈশ্বরের পাদপীঠ করা হইয়াছে এবং তাঁহার পরাক্রমশালী সিংহাসনের আসনরূপে মনোনীত করা হইয়াছে।” মহিমার রাজ্য উচ্চঃস্বরে বলিয়াছে : তোমার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করিতে পারি, যেহেতু তিনি, যিনি পরম করুণাময়ের প্রিয়তম, তোমার উপর তাহার একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন, তাঁহার নামের শক্তির মাধ্যমে সকল বস্তুর নিকট যাহা প্রতিশ্রুত হইয়াছে, হোক না তাহা অতীতের অথবা ভবিষ্যতের।” ......
পরম প্রিয়জন আসিয়াছেন। তাঁহার দক্ষিণ হস্তে তাঁহার নামের সুরক্ষিত মদিরা রহিয়াছে। সুখী সেইজন যে তাঁহার দিকে মুখ ফিরায় এবং তাহার পূর্ণ পরিমাণ পান করে এবং উচ্চঃস্বরে বলে : “প্রশংসা তোমারই, হে ঈশ্বরের নিদর্শনসমূহের প্রকাশক !” সর্বশক্তিমানের ন্যায়পরায়ণতার শপথ ! সত্যের শক্তির মাধ্যমে প্রতিটি নিহিত বস্তু প্রকাশিত করা হইয়াছে। ঈশ্বরের করুণার প্রমাণস্বরূপ তাঁহার সকল অনুগ্রহ প্রেরিত হইয়াছে। মানবের প্রতি চিরস্থায়ী জীবনের সলিলসমূহ, উহাদের পরিপূর্ণতায় প্রদত্ত হইয়াছে। প্রতিটি পেয়ালা পরম প্রিয়তমের হস্ত দ্বারা সর্বত্র বাহিত হইয়াছে । নিকটবর্তী হও, এবং অপেক্ষা করিও না, তাহা যদি একটি সংক্ষিপ্ত মুহূর্তের জন্যও হয়ে থাকে ....
অত্যধিক আনন্দ সহকারে উৎসব মুখরিত হও, হে বাহা’র জনমন্ডলী, যখন তোমরা পরম সুখের দিবসটি স্মরণ করিতে আহ্বান কর, সেই দিবস যাহার সম্বন্ধে দিবসসমূহের প্রাচীনের জিহ্বা সাক্ষ্য দিয়াছে, যখন তিনি তাঁহার গৃহ হইতে প্রস্থান করিলেন, সেই স্থানটির দিকে অগ্রসর হইলেন যেখান হইতে তিনি সমগ্র সৃষ্টির উপর তাঁহার নামের উজ্জ্বলদীপ্তি ছড়াইয়া দিলেন, যিনি পরম করুণাময়। ঈশ্বর আমাদের সাক্ষী। যদি আমরা ঐ দিবসের নিহিত গূঢ় তাৎপর্য প্রকাশ করিতাম, যাহারা পৃথিবীতে ও স্বর্গসমূহে বসবাস করিতেছে তাহাদের সকলে মূর্ছা যাইত এবং মৃত্যুবরণ করিত, তাহারা ব্যতীত যাহারা ঈশ্বর কর্তৃক সুরক্ষিত থাকিবে, যিনি সর্ব-শক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্ব বিজ্ঞ।
যিনি তাঁহার সন্দেহাতীত প্রমাণসমূহের প্রকাশক তাঁহার উপর ঈশ্বরের বাণীর মাতালকারী প্রভাব এইরূপ যে তাঁহার লেখনী আর সঞ্চালনে অপারগ, তিনি এই বাণী সহকারে তাঁহার ফলকলিপির উপসংহার করিতেছেন: আমি ব্যতীত আর কোন ঈশ্বর নাই, যিনি সর্বাধিক উচ্চপ্রশংসিত, সর্ব-শক্তিমান, শ্রেষ্ঠতম, সর্বজ্ঞ।
(এই ফলকলিপিটি “ক্বাদ-ইহ্তারাক্বাল-মুখলিসুন” নামে বাহা’উল্লাহ্ কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছে)
ঈশ্বরের নামে, যিনি সর্ব-প্রাচীন, যিনি সর্ব-মহান।
সত্যিই আন্তরিকগণের হৃদয়সমূহ বিচ্ছেদের আগুনে ধ্বংস হইয়াছে :
তোমার মুখমন্ডলের আলোর বিচ্ছুরণগুলি কোথায়, হে জগৎসমূহের প্রিয়তম?
যাহারা তোমার আপনজন তাহারা বিষন্নতার অন্ধকারে পরিত্যক্ত হইয়াছে :
তোমার পুনর্মিলনের দীপ্তিময় প্রভাত কোথায়, হে জগৎসমূহের আকাঙ্খা ?
তোমার মনোনীতগণের দেহসমূহ সূদুর মরুভূমিতে শিহরিত হইতেছে :
তোমার উপস্থিতির মহাসাগর কোথায়, হে জগৎসমূহের মন্ত্রমুগ্ধকারী ?
আকুল আকাঙ্খার হস্তসমূহ তোমার করুণা ও উদারতার আকাশের দিকে উত্তোলিত :
তোমার দানের বর্ষণসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের উত্তরদাতা।
অবিশ্বাসীগণ উৎপীড়ন সহকারে সর্বত্র উত্থিত হইয়াছে :
তোমার বাধ্যকারী ক্ষমতার আদেশের লেখনী কোথায়, হে জগৎসমূহের বিজেতা।
চতুর্দিকে কুকুরের ডাক সু-উচ্চ হইয়াছে :
তোমার শক্তির অরণ্যের সিংহ কোথায়, হে জগৎসমূহের সংশোধনকারী ?
শৈত্য সমগ্র মানবজাতিকে করায়ত্ত করিয়াছে :
তোমার ভালোবাসার উষ্ণতা কোথায়, হে জগৎসমূহের অগ্নি ?
বিপর্যয় উহার চরমে পৌঁছিয়াছে :
তোমার ত্রাণের চিহ্নসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের পরিত্রাণকারী?
অন্ধকার প্রায় সকল লোককে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করিয়াছে :
তোমার মহিমার উজ্জ্বলতা কোথায়, হে জগৎসমূহের প্রভা ?
অন্যের ক্ষতিসাধনের ইচ্ছায় লোকদের গ্রীবাসমূহ প্রসারিত হইয়াছে :
তোমার প্রতিশোধের তরবারীসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের বিনাশকারী ?
নীচতা উহার নিম্নতম গভীরে পৌঁছিয়াছে :
তোমার মহিমার প্রতীকসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের মহিমা?
দুঃখসমূহ তোমার ‘পরম করুণাময়’ নামের প্রকাশককে পীড়িত করিয়াছে :
তোমার প্রত্যাদেশের অরুণোদয়ের আনন্দ কোথায়, হে জগৎসমূহের পরম আনন্দ?
নিদারুণ মনস্তাপ জগতের জাতিসমূহের উপর পতিত হইয়াছে :
তোমার আনন্দিত করিবার পতাকাসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের আনন্দ?
তুমি দেখিতেছ তোমার নিদর্শনসমূহের উদয়স্থল অনিষ্ট মন্ত্রণাসমূহ দ্বারা পর্দাচ্ছাদিত ?
তোমার শক্তির অঙ্গুলিসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের শক্তি ?
তীব্র পিপাসা সকল মানুষকে অবসাদগ্রস্থ করিয়াছে :
তোমার বদান্যতার স্রোতস্বিনী কোথায়, হে জগৎসমূহের করুণা ?
লালসা সমগ্র মানবজাতিকে বন্দী করিয়াছে :
নিরাসক্তির প্রতিরূপসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের পরম প্রভু?
তুমি দেখিতেছ এই নিপীড়িত জন নিঃসঙ্গ নির্বাসনে রহিয়াছে :
তোমার আদেশের স্বর্গের বাহিনীসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের একাধিপতি ?
আমি বিদেশে পরিত্যক্ত রহিয়াছি :
তোমার বিশ্বস্ততার প্রতীকসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের বিশ্বস্ত ?
মৃত্যুর তীব্র যন্ত্রণা সকল মানুষকে ধরাশায়ী করিয়াছে :
তোমার চিরস্থায়ী জীবনের মহাসাগরের তরঙ্গোচ্ছাস কোথায়, হে জগৎসমূহের জীবন ?
শয়তানের অপপ্রচারসমূহ প্রতিটি সৃষ্টজীবের প্রতি আরোপিত হইয়াছে :
তোমার অগ্নির উল্কাসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের আলো ?
ভাবাবেগের মাতলামী মানবজাতির অধিকাংশকে বিপথগামী করিয়াছে :
তোমার বিশুদ্ধতার অরুণোদয় কোথায়, হে জগৎসমূহের আকাঙ্খা ?
তুমি দেখিতেছ এই নিপীড়িত জন সিরিয়াবাসীদের মধ্যে অত্যাচারে অবগুণ্ঠিত রহিয়াছে :
তোমার ঊষার আলোর উজ্জ্বলতা কোথায়, হে জগৎসমূহের আলো ?
তুমি দেখিতেছ আমার কথা বলা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে :
এখন তোমার সুমধুর সংগীতসমূহ কোথা হইতে সৃষ্টি হইবে, হে জগৎসমূহের বুলবুল পক্ষী ?
অধিকাংশ লোক অলীক ও অলস কল্পনায় বিজড়িত রহিয়াছে :
তোমার নিশ্চয়তার ব্যাখ্যাকারীগণ কোথায়, হে জগৎসমূহের নিশ্চয়তা ?
বাহা দারুণ ক্লেশের সাগরে নিমজ্জিত হইতেছে :
তোমার রক্ষাকারী জাহাজ কোথায়, হে জগৎসমূহের রক্ষাকারী?
তুমি দেখিতেছ তোমার উচ্চারণের ঊষাকাল সৃষ্টির অন্ধকারে রহিয়াছে :
তোমার অনুগ্রহের আকাশের সূর্যটি কোথায়, হে জগৎসমূহের আলোদানকারী ?
সত্য ও বিশুদ্ধতা, আনুগত্য ও সম্মানের প্রদীপসমূহ নির্বাপিত করা হইয়াছে :
তোমার প্রতিহত করার তীব্র ক্রোধের নিদর্শন কোথায়, হে জগৎসমূহের আলোড়নকারী ?
তুমি কি কাউকে দেখিতেছ না যে তোমার সত্ত্বাকে সমর্থন করিয়াছে অথবা
তোমার ভালোবাসার পথে তাঁহার উপর কি ঘটিয়াছে তাহা বিবেচনা করে ?
আমার লেখনী এখন থামিয়া আসিতেছে, হে জগৎসমূহের প্রিয়তম।
নিয়তির প্রচন্ড ঝড়ে স্বর্গীয় লোট-বৃক্ষের শাখা-প্রশাখাগুলি ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে :
তোমার ত্রাণের পতাকাসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের রক্ষাকারী ?
এই মুখমন্ডল অপবাদের ধুলিতে লুক্কায়িত :
তোমার করুণার সমীরণসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের করুণা?
পবিত্রতার পরিচ্ছদ কপট লোকদের দ্বারা কলঙ্কিত :
তোমার পবিত্রতার পরিচ্ছদ কোথায়, হে জগৎসমূহের সৌন্দর্যকারী ?
মানুষের হস্তসমূহ যাহা করিয়াছে তাহাতে করুণার সাগর স্তব্ধ হইয়াছে :
তোমার উদারতার তরঙ্গসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের আকাঙ্খা ?
ঐশ্বরিক উপস্থিতিতে গমনের দ্বারটি তোমার শত্রুদের অত্যাচার দ্বারা অবরুদ্ধ রহিয়াছে :
তোমার সাহায্যের চাবি কোথায়, হে জগৎসমূহের উন্মুক্তকারী?
রাজদ্রোহের বিষাক্ত হাওয়ায় পত্রসমূহ হলুদ হইয়াছে :
তোমার করুণার মেঘসমূহের বর্ষণ কোথায়, হে জগৎসমূহের দাতা ?
পাপের ধূলি দ্বারা বিশ্ব ব্রহ্মা- অন্ধকারাচ্ছন্ন হইয়াছে :
তোমার ক্ষমাশীলতার সমীরণসমূহ কোথায়, হে জগৎসমূহের ক্ষমাকারী ?
এই তরুণ একটি জনশূন্য দেশে নিঃসঙ্গ রহিয়াছে :
তোমার স্বর্গীয় করুণার বৃষ্টি কোথায়, হে জগৎসমূহের দাতা ?
হে পরম লেখনী, চিরস্থায়ী রাজ্যে আমরা তোমার মধুরতম আহ্বান শ্রবন করিয়াছি :
মহিমার জিহ্বা তোমার প্রতি যাহা উচ্চারণ করে
তাহা মনোযোগ সহকারে শ্রবন কর, হে জগৎসমূহের নিপীড়িত জন !
নিরুত্তাপ না থাকিলে,
তোমার বানীর উষ্ণতা কেমন করিয়া জয়লাভ করিত, হে জগৎসমূহের ব্যাখ্যাকারী ?
চরম দুর্দশা না থাকিলে,
তোমার ধৈর্যের সূর্য কেমন করিয়া কিরণ দিত, হে জগৎসমূহের আলো ?
দুষ্টলোকের কারণে বিলাপ করিও না।
সহ্য করা ও অবিচলিত থাকার জন্য তোমাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে, হে জগৎসমূহের সহিষ্ণুতা ।
কত মধুর ছিল রাজদ্রোহে উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের মধ্যে
চুক্তিপত্রের দিকচক্রবালের উপর তোমার ঊষাকাল,
এবং ঈশ্বরের জন্য তোমার আকুল আকাঙ্খা।
হে জগৎসমূহের ভালোবাসা।
তোমার দ্বারা স্বাধীনতার পতাকা সর্বোচ্চ শিখরসমূহে প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছে
এবং বদান্যতার সাগর তরঙ্গায়িত হইয়াছে, হে জগৎসমূহের পরমানন্দ।
তোমার একাকিত্বের দ্বারা একত্বের সূর্য কিরণ দিয়াছে,
এবং তোমার নির্বাসনের দ্বারা একতার দেশ বৈশিষ্টমন্ডিত হইয়াছে।
ধৈর্য ধারণ কর, হে তুমি জগৎসমূহের নির্বাসিত।
অবমাননাকে আমরা গৌরবের পরিচ্ছদে পরিণত করিয়াছি,
এবং ক্লেশকে তোমার দেহ মন্দিরের অলঙ্কার।
হে তুমি জগৎসমূহের অহংকার।
তুমি দেখিতেছ হৃদয়সমূহ ঘৃণা দ্বারা পূর্ণ,
এবং তাহা উপেক্ষা করা তোমার-ই যোগ্য,
হে তুমি জগৎসমূহের পাপকার্যগুলোর গোপনকারী।
যখন তরবারী ঝলকানি দেয়, সামনে এগিয়ে যাও !
যখন শর উড়ে আসে, সাগ্রহে অগ্রবর্তী হও !
হে তুমি জগৎসমূহের বিসর্জন।
তুমি কি বিলাপ কর, অথবা আমি কি বিলাপ করিব ?
বরং আমি তোমার সমর্থনকারীদের স্বল্পতার জন্য ক্রন্দন করিব,
হে তুমি যিনি জগৎসমূহের বিলাপের কারণ হইয়াছ।
সত্য সত্যই, আমি তোমার আহ্বান শ্রবন করিয়াছ, হে পরম গৌরবান্বিত প্রিয়তম এবং এখন বাহা’র মুখমন্ডল দারুণ ক্লেশের উত্তাপ সহকারে এবং তোমার ঔজ্জ্বল্য দানকারী বাণীর অগ্নি দ্বারা উদ্দীপ্ত হইয়াছে এবং তোমার সন্তুষ্টির প্রতি মুখ করিয়া উৎসর্গের স্থানে সে বিশ্বস্ততার সহিত উত্থিত হইয়াছে, হে জগৎসমূহের আদেশদাতা।
হে আলী-আকবর, এই ফলকলিপির জন্য তোমার পরম প্রভুর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন কর, যাহা হইতে তুমি আমার বিনম্রতার এবং ঈশ্বর, যিনি সমগ্র জগৎসমূহের উপাস্য, তাহার পথে আমাদের উপর যাহা কিছু ঘটিয়াছে তাহার সুঘ্রাণ লইতে অপারগ।
যখন ভৃত্যগণ ইহা পড়িবে এবং বিবেচনা করিবে, তাহাদের শিরাসমূহে একটি অগ্নি প্রজ্বলিত হইবে যাহা জগৎসমূহকে প্রজ্বলিত করিবে।
[ ‘‘এই সকল দৈনন্দিন বাধ্যতামুলক উপাসনাবলীকে, অন্যান্য কয়েকটি বিশেষ প্রার্থনাবলীসহ, যথা আরোগ্যদানকারী প্রার্থনা, আহম্মদের ফলক-লিপি, মহান বাহা’উল্লাহ্ কর্তৃক বিশেষ শক্তি ও গুরুত্ব প্রদান করা হইয়াছে, সুতরাং এইগুলিকে এইরূপ পূর্ণ ও প্রভাবসম্পন্ন বলিয়া গ্রহণ করিবে এবং এই ধর্মের বিশ্বাসিগণ কর্তৃক সন্দেহাতীত বিশ্বাস ও সুনিশ্চয়তার সহিত এইগুলিকে আবৃত্তি করিতে হইবে, যেন তাহাদের মাধ্যমে তাহারা ঈশ্বরের সহিত অতীব ঘনিষ্টতর সংস্পর্শে আসিতে পারে, এবং অধিকতর পূর্ণভাবে তাঁহার বিধান ও আদেশসমূহ নিজেরা গ্রহণ করিতে পারে’।- (শৌগী এফেন্দী ) ]
তিনিই সম্রাট, সর্বজ্ঞ, সর্ব বিজ্ঞ। দেখ। এই স্বর্গের বুলবুল চিরস্থায়ী বৃক্ষের প্রশাখাসমূহের উপর পবিত্র ও সুমধুর স্বরে গান করিতেছে, তদ্বারা প্রকৃত ও সরল বিশ্বাসীদের নিকট ঈশ্বরের নৈকট্যের সু-সংবাদ ঘোষণা করিতেছে, ঐশী- একত্বে বিশ্বাসীগণকে পরম দয়ালু প্রভুর উপস্থিতি প্রাঙ্গনের দিকে আহ্বান করিতেছে, সংসার-বিচ্ছিন্নদের নিকট সেই সংবাদ প্রদান করিতেছে যাহা ঈশ্বর কর্তৃক অবতীর্ণ করা হইয়াছে, যিনি সম্রাট মহিমাময়, অতুলনীয়, প্রেমিক-প্রেমিকাগণকে পবিত্র আসনের দিকে এবং এই অত্যুজ্জ্বল সুষমার দিকে পথ প্রদর্শন করিতেছেন।
সত্যই, ইহা ঐ পরম মহীয়ান সুষমা যাহার সন্বন্ধে সু-সংবাদবাহকদের পবিত্র ঐশী গ্রন্থসমূহে ভবিষ্যদ্বাণী লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে, যাহার মাধ্যমে সত্যকে ভ্রান্ত-বিশ্বাস হইতে পৃথক করা হইবে এবং প্রত্যেক প্রত্যাদেশের বিজ্ঞতা বিচার করা হইবে। সত্যই তিনি জীবন-বৃক্ষ যাহা ঈশ্বরের ফলসমুহ উৎপন্ন করে, যিনি পরম গৌরবান্বিত, শক্তিশালী, মহিমাময়।
হে আহম্মদ। তুমি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, সত্যই, তিনি ঈশ্বর এবং তিনি ব্যতীত কোনও উপাস্য নাই, তিনি রক্ষক, তিনি সম্রাট, তিনি অতুলনীয়, তিনি সর্ব-শক্তিমান এবং যাঁহাকে তিনি “আলী” নামে প্রেরণ করিয়াছেন, সত্যই তিনি ঈশ্বরের নিকট হইতে আসিয়াছিলেন, যাঁহার আদেশ অনুসারে আমরা সকলেই কার্য করিতেছি।
বলঃ হে মনুষ্যগণ তোমরা এই সকল বিধি নিষেধের অনুবর্তী হইয়া চল যাহা পবিত্র ‘‘বয়ান’ গ্রন্থে মহিমান্বিত সুবিজ্ঞ প্রভুর সকাশ হইতে বাধ্যতামুলক করা হইয়াছে। সত্যই তিনি সু-সংবাদবাহকদের সম্রাট এবং তাঁহার পবিত্র গ্রন্থ সত্যই ‘‘গ্রন্থজননী’’ যদি তোমরা তাহা জানিতে।
এইরূপেই বুলবুল তাঁহার এই কারাগার হইতে তোমাদের নিকট তাঁহার আহ্বান ধ্বনি উচ্চারণ করিতেছেন। তাঁহার একমাত্র কর্তব্য হইতেছে এই সুস্পষ্ট সংবাদ প্রদান করা। যাহার ইচ্ছা সে এই উপদেশ হইতে ফিরিয়া যাউক এবং যাহার ইচ্ছা সে তাহার পরম প্রভুর দিকে পথ গ্রহণ করুক।
হে মনুষ্যগণ, যদি তোমরা এই সকল বাণী অস্বীকার কর, তবে ইতিপূর্বে কোন্ প্রমাণে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছিলে? তাহা উপস্থিত কর, হে মিথ্যাবাদীদের জনমন্ডলী।
না, যাঁহার হস্তে আমার আত্মা সমর্পিত তাঁহার শপথ, তাহারা ইহা করিতে সমর্থ নহে এবং কখনও সমর্থ হইবে না-যদিও তাহারা একে অন্যকে সাহায্য করিবার জন্য একত্রিত হয়।
হে আহম্মদ। আমার অনুপস্থিতিতে আমার অনুকম্পাসমুহ ভুলিয়া যাইও না। তোমার দিবসসমুহে আমার দিবসসমূহ, এবং এই দূরবর্তী কারাগারে আমার দুর্দশা ও আমার নির্বাসন স্মরণ কর। এবং তুমি আমার প্রেম-ভালবাসায় এইরূপ অটল হও যেন তোমার অন্তর ইতস্ততঃ না করে, যদিও শক্রদের তরবারিসমুহ তোমার উপর আঘাত বর্ষণ করে, এবং আকাশমন্ডলের ও ভূ-মন্ডলের সকলেই তোমার বিরুদ্ধে উত্থিত হয়।
আমার শক্রগণের প্রতি তুমি অগ্নি-শিখা সদৃশ হও, এবং আমার প্রিয়জনগণের জন্য চিরস্থায়ী জীবনের নদী-সদৃশ হও, এবং যাহারা সন্দেহ করে তাহাদের ন্যায় হইও না।
এবং আমার পথে যদি তোমার উপর কোন ক্লেশ পতিত হয়, অথবা আমার জন্য অপমান ঘটে, তবে তুমি তজ্জন্য দুঃখিত হইও না।
ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল হও, যিনি তোমার পরম প্রভু এবং তোমার পিতৃপুরুষদের পরম প্রভু। কারণ, মনুষ্যগণ ভ্রান্তির পথসমূহে বিচরণ করিতেছে এবং তাহাদের কোন বিচার-শক্তি নাই, যেন তাহারা তাহাদের নিজ চক্ষে ঈশ্বরকে দর্শন করিয়া চিনিয়া লইতে পারে, অথবা তাহাদের নিজ কর্ণে তাঁহার সুমধুর গীতিসমূহ শ্রবণ করিতে পারে। এইরূপই আমি তাহাদিগকে দেখিতে পাইয়াছি যেমন তুমিও দেখিতে পাইতেছ।
এইরূপেই তাহাদের কুসংস্কারসমূহ তাহাদের মধ্যে ও তাহাদের অন্তরসমূহের মধ্যে অন্তরাল সদৃশ হইয়াছে এবং তাহাদিগকে ঈশ্বরের পথসমূহ হইতে দূরে রাখিয়াছে, যিনি মহিমান্বিত, যিনি পরম মহীয়ান।
তুমি নিজের মধ্যে সুনিশ্চিত হও যে, সত্যই যে-ব্যক্তি এই পবিত্র সুষমা হইতে মুখ ফিরাইয়া লয়, সে পূর্ববর্তী কালের ঐশী সু-সংবাদদাতাগণের নিকট হইতেও মুখ ফিরাইয়া লইয়াছে, এবং ঈশ্বরের প্রতি অহংকার প্রদর্শন করিয়াছে অন্তকাল হইতে অন্তকাল যাবৎ।
এই ফলক-লিপি মুখস্থ কর, হে আহম্মদ। তোমার দিবসমূহে ইহা সু-স্বরে আবৃত্তি কর, এবং ইহা হইতে তোমার নিজেকে নিবৃত্ত রাখিও না। কারণ, সত্য সত্যই ঈশ্বর ইহার আবৃত্তিকারীর জন্য ধর্মার্থে আত্মবলিদানকারী একশত পূণ্যাত্মার পুরস্কার এবং উভয় জগতের উপাসনার ফল নির্ধারিত করিয়াছেন। এই সকল অনুগ্রহ তোমার প্রতি আমাদের পক্ষ হইতে বদান্যতা স্বরূপ এবং আমাদের সকাশ হইতে করুণা স্বরূপ দান করা হইয়াছে, যেন তুমি কৃতজ্ঞ লোকদের মধ্যে পরিগণিত হইতে পার।
ঈশ্বরের শপথ। যদি কোনও ব্যক্তি ক্লেশের বা শোকের সময়ে এই ফলক-লিপি সম্পূর্ণ সরলতার সহিত পাঠ করে, ঈশ্বর তাহার দুঃখ দূর করিবেন, তাহার ক্লেশসমূহ অপসারিত করিবেন।
সত্য সত্যই, তিনি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু। সকল প্রশংসা ঈশ্বরেরই জন্য, যিনি সমুদয় বিশ্বজগতের পরম প্রভু।
তৎপর আমাদের পক্ষ হইতে তাহাদের সকলের নিকট এই ফলক-লিপি উল্লেখে তাহাদিগকে উপদেশ প্রদান কর, যাহারা ঈশ্বরের ধর্ম-নগরীতে বাসস্থান গ্রহণ করিয়াছে, যিনি সম্রাট, মহিমাময়, সুষমাসম্পন্ন, তাহাদের মধ্য হইতে যাহারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে এবং তাঁহার প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে, যাঁহাকে ঈশ্বর অভ্যুত্থান দিবসে অভ্যুত্থান করেন এবং এই সকল লোক সত্যপথে ভ্রমনকারীদের অন্তর্ভূক্ত’’।
এই দিবসের প্রতি সকল মহিমা, দিবসটি যাহার মধ্যে করুণার সুরভিসমূহ সকল সৃষ্ট বস্তুর উপর দিয়া প্রবাহিত হইয়াছে, একটি দিবস এইরূপ সৌভাগ্যশালী যে অতীত যুগসমূহ ও শতাব্দীসমূহ কখনো ইহার প্রতিদ্বন্দ্বী হইতে আশা করিতে পারে না, একটি দিবস যাহার মধ্যে দিবসসমূহের প্রাচীন তাঁহার মুখমন্ডল তাঁহার পবিত্র আসনের প্রতি ফিরাইয়াছে। তখন সকল সৃষ্টবস্তুর কণ্ঠস্বরসমূহ এবং তাহাদের ছাড়াইয়া যাহারা উর্ধ্বরাজ্যের অধিবাসী তাহাদিগকে উচ্চকণ্ঠে ডাকিতে শোনা গেল: “তুমি ত্বরা কর, হে কার্মেল, কারণ দেখ, ঈস্বরের মুখমন্ডলের আলো, যিনি নামাবলীর রাজ্যের শাসক এবং স্বর্গসমূহের গঠনকারী, তোমার উপর উত্তোলিত করা হইয়াছে।”
আনন্দে আত্মহারা হইয়া এবং তাহার কণ্ঠস্বর উর্ধ্বে উত্তোলিত করিয়া, সে এইরূপ অকস্মাৎ উক্তি করিল: “আমার জীবন তোমার প্রতি উৎসর্গ হউক, যেহেতু তুমি তোমার স্থির দৃষ্টি আমার উপর নিবদ্ধ করিয়াছ, তোমার বদান্যতা আমার উপর প্রদান করিয়াছ এবং তোমার পদক্ষেপসমূহ আমার দিকে চালিত করিয়াছ। তোমা হইতে বিচ্ছেদ, হে তুমি যিনি চিরস্থায়ী জীবনের উৎস, আমাকে প্রায় নিঃশেষ করিয়াছে এবং তোমার উপস্থিতি হইতে আমার দূরবর্তিতা আমার আত্মাকে দগ্ধ করিয়াছে। তুমি সর্ব প্রশংসিত হও, তোমার আহ্বান শ্রবণ করিতে আমাকে সক্ষম করিবার জন্য, তোমার পদচিহ্নসমূহ দ্বারা আমাকে সম্মানিত করিবার জন্য এবং তোমার দিবসের প্রাণবন্তকারী সুরভি এবং তোমার লেখনীর তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে আমার আত্মাকে ত্বরান্বিত করিবার জন্য, একটি কণ্ঠস্বর যাহা তুমি তোমার জনমন্ডলীর মধ্যে তোমার তূর্য-ধ্বনি রূপে আদেশ করিয়াছ এবং মুহূর্তটি যখন তোমার অপ্রতিরোধ্য ধর্ম প্রকাশিত হইবার ছিল তখন তাহা ঘোষিত হইয়াছে, তুমি তোমার লেখনীর মধ্যে তোমার চেতনার একটি নিঃশ্বাস ফুঁৎকার করিয়াছ এবং দেখ, সকল সৃষ্টি স্বয়ং ইহার ভিত্তিসমূহে প্রকম্পিত হইয়াছে, মানবজাতির প্রতি এইরূপ রহস্যগুলি প্রকাশ করিয়াছে যাহা তাঁহার ধনাগারসমূহের মধ্যে নিহিত ছিল যিনি সকল সৃষ্টবস্তুসমূহের অধিকারী।”
যেইমাত্র তাহার কণ্ঠস্বর সেই পরম মহিমান্বিত স্থানে পৌঁছিল তৎক্ষণাৎ আমরা উত্তর দিলাম: “তোমার পরম প্রভুর প্রতি তুমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর, হে কার্মেল। আমা হইতে তোমার বিচ্ছেদের অগ্নি তোমাকে দ্রুত নিঃশেষ করিতেছিল, আমার উপস্থিতির মহাসাগর যখন তোমার মুখমন্ডলের সম্মুখে উদ্বেলিত হইতেছিল, তখন তোমার এবং সকল সৃষ্টির চক্ষুসমূহ উদ্দীপিত করিতেছিল এবং দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল বস্তুকে আনন্দ দ্বারা পূর্ণ করিতেছিল। আনন্দিত হও, কারণ এই দিবসে ঈশ্বর তোমার উপর তাঁহার সিংহাসন স্থাপন করিয়াছেন, তোমাকে তাঁহার নিদর্শনাবলীর প্রাভাতিক-স্থল এবং তাঁহার প্রত্যাদেশের সাক্ষ্যপ্রমাণসমূহের অরুণোদয় করিয়াছেন। মঙ্গল তাহার-ই যে তোমার চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করে, যে মহিমার প্রত্যাদেশ ঘোষণা করে, এবং তাহা বর্ণনা করে যাহা তোমার ঈশ্বর বদান্যতার পরম প্রভু তোমার উপর বর্ষিত করিয়াছেন। তোমার পরম প্রভু, সর্ব-গৌরবময়ের নামে তুমি অমরত্বের পানপাত্রটি সাগ্রহে গ্রহণ কর এবং তাঁহার প্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন কর, যেহেতু তিনি, তোমার প্রতি তাঁহার করুণার নিদর্শনস্বরূপ, তোমার বিষাদকে আনন্দে পরিবর্তিত করিয়াছেন এবং তোমার মর্মপীড়াকে পরম সুখময় উল্লাসে রূপান্তরিত করিয়াছেন। তিনি, সত্য সত্যই, স্থানটিকে ভালবাসিয়াছেন যাহা তাঁহার সিংহাসনের আসন করা হইয়াছে, যাহা তাঁহার পদচিহ্নসমূহ বিচরণ করিয়াছে, যাহা তাঁহার উপস্থিতি দ্বারা সম্মানিত হইয়াছে যেইস্থান হইতে তিনি তাঁহার আহ্বান-ধ্বনি উত্তোলিত করিয়াছেন, এবং যাহার উপর তিনি তাঁহার অশ্রু বর্ষণ করিয়াছেন।
“জাইয়নের প্রতি আহ্বান কর, হে কার্মেল এবং আনন্দপূর্ণ বার্তাসমূহ ঘোষণা কর : তিনি আসিয়াছেন যিনি নশ্বর চক্ষুসমূহ হইতে নিহিত ছিলেন! তাঁহার সর্ব-জয়ী সার্বভৌম ক্ষমতা প্রকাশিত হইয়াছে; তাঁহার সর্ব-আবেষ্টনকারী মহিমা প্রকাশিত হইয়াছে। সতর্ক হও যেন তুমি ইতস্তত না কর অথবা নিবৃত্ত না হও। দ্রুত অগ্রসর হও এবং ঈশ্বরের নগরটি প্রদক্ষিণ কর যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে, স্বর্গীয় কা’বা যাহার চতুর্দিকে, ঈশ্বরের অনুগ্রহভাজন, পবিত্র হৃদয় এবং সর্ব প্রশংসিত দেবদূতগণ ভক্তি সহকারে বৃত্তাকারে পরিভ্রমন করিয়াছে। আহা, আমি কিরূপ আকুল আকাঙ্খা করিতেছি, ভূ-পৃষ্ঠের প্রতিটি স্থানের প্রতি ঘোষণা করিতে এবং ইহার প্রতিটি নগরে বহন করিতে, এই প্রত্যাদেশের আনন্দ-বার্তাসমূহ একটি প্রত্যাদেশ যাহার প্রতি সিনাইয়ের হৃদয় আকৃষ্ট হইয়াছে এবং যাহার নামে জলন্ত ঝোপ আহ্বান করিতেছে: ‘মর্ত্য ও স্বর্গের রাজ্যসমূহ ঈশ্বরের, যিনি পরম প্রভুগণের পরম প্রভু।’ সত্য সত্যই এই সেই দিবস যখন স্থল ও সাগর উভয়ে এই ঘোষণায় উল্লসিত হইয়াছে, দিবসটি যাহার জন্য ঐ সকল বস্তু রাখা হইয়াছে যাহা ঈশ্বর, নশ্বর মন অথবা হৃদয়ের জ্ঞানের উর্ধ্বে একটি বদান্যতার মাধ্যমে, প্রত্যাদেশের জন্য নির্ধারিত করিয়াছেন। শীঘ্রই ঈশ্বর তোমার উপর তাঁহার তরী ভাসাবেন এবং বাহা’র জনগণকে প্রকাশ করিবেন যাহারা নামাবলীর গ্রন্থে উল্লিখিত হইয়াছে।”
সকল মানবজাতির পরম প্রভু পবিত্র হউন, যাহার নামের উল্লেখে জগতের সকল পরমাণু প্রকম্পিত করা হইয়াছে এবং মহিমার জিহ্বাকে তাহা প্রকাশ করিতে সঞ্চালিত করা হইয়াছে যাহা তাঁহার জ্ঞানে আবৃত ছিল এবং তাঁহার পরাক্রমের ধনাগারের মধ্যে লুক্কায়িত ছিল। তিনি, সত্য সত্যই, তাঁহার নামের শক্তির মাধ্যমে, যিনি শক্তিমান, সর্ব-ক্ষমতাশালী, সর্বোচ্চ, যাহা কিছু স্বর্গসমূহে রহিয়াছে এবং যাহা কিছু মর্ত্যে রহিয়াছে, তাহাদের সকলের শাসক।
‘‘তাহার-ই নামে যিনি এই দিবসে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তিনি যাহাকে সর্ব-শক্তিমান, সর্ব-প্রেমময় ঈশ্বর তাঁহার নামের অগ্রদূত করিয়াছেন!”
ইহা একটি ফলকলিপি যাহা আমরা সেই রাত্রির প্রতি সম্বোধন করিয়াছি যখন স্বর্গসমূহ এবং মর্ত্য একটি আলো দ্বারা আলোকিত হইয়াছিল যাহা ইহার ঔজ্জ্বল্য সমগ্র সৃষ্টির উপর নিক্ষেপ করিয়াছিল।
তুমি আশীষপূতঃ, হে রাত্রি! কারণ তোমার মাধ্যমে ঈশ্বরের দিবস জন্মগ্রহণ করিয়াছিল, একটি দিবস যাহাকে আমরা নামাবলীর নগরসমূহের অধিবাসীদের প্রতি মুক্তির প্রদীপ হইতে, চিরন্তনের ক্ষেত্রগুলির বিজয়ীগণের প্রতি বিজয়ের পানপাত্র হইতে এবং সকল সৃষ্টির প্রতি আনন্দ ও মহোল্লাসের উদয়-স্থল হইতে আদেশ করিয়াছি।
অপরিমেয়ভাবে মহিমান্বিত ঈশ্বর, স্বর্গসমূহের সৃষ্টিকর্তা, যিনি এই দিবসকে সেই নাম উল্লেখ করাইয়াছেন যাহার দ্বারা অলস কল্পনার পর্দাসমূহ বিদীর্ণ হইয়াছে, বৃথা কল্পনার কুয়াশাগুলি দূর করিয়াছে, এবং তাঁহার নাম “স্বয়ং-সত্তাশীল” নিশ্চয়তার দিকচক্রের উপর উদয় হইয়াছে। তোমার মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনের উৎকৃষ্ট মদিরার মোহর ভাঙ্গিয়া ফেলা হইয়াছে, পৃথিবীর জনগণের সম্মুখে জ্ঞান ও উচ্চারণের দ্বারসমূহ খোলা হইয়াছে, এবং প্রতিটি অঞ্চলের উপর পরম করুণাময়ের সমীরণসমূহ মৃদুমন্দভাবে প্রবাহিত করা হইয়াছে। সকল মহিমা সেই প্রহরের প্রতি যখন ঈশ্বরের ধনাগার, যিনি সর্ব-শক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্ব-বিজ্ঞ, আবির্ভূত হইয়াছে।
হে পৃথিবী ও স্বর্গের সমাবেশ! ইহা সেই প্রথম রাত্রি, যাহাকে ঈশ্বর সেই দ্বিতীয় রাত্রির একটি নিদর্শন করিয়াছেন যখন তিনি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন যাহাকে কোন প্রশংসা উপযুক্তভাবে উচ্চপ্রশংসিত করিতে পারে না এবং কোন বিশেষণ বর্ণনা করিতে পারে না। মঙ্গল তাহার-ই যে উহাদের উভয়ের উপর চিন্তা করে: সত্য সত্যই, সে তাহাদের বাহ্যিক বাস্তবতাকে তাহাদের অন্তর সারৎসারের সহিত আদান প্রদান করিতে দেখিতে পাইবে, এবং ঐশ্বরিক রহস্যগুলির সহিত পরিচিত হইবে যাহা এই প্রত্যাদেশে সংরক্ষিত রহিয়াছে, একটি প্রত্যাদেশ যাহা অবিশ্বসের ভিত্তিসমূহকে প্রকম্পিত করিয়াছে, কুসংস্কারের প্রতিমূর্তিগুলি চূর্ণবিচূর্ণ করিয়াছে এবং পতাকাটি বিস্তৃত করা হইয়াছে যাহা ঘোষণা করে, “তিনি ব্যতীত অন্য কোন ঈশ্বর নাই, যিনি পরাক্রান্ত, মর্যাদাসম্পন্ন, অতুলনীয়, রক্ষাকারী, শক্তিশালী, অনভিগম্য।”
এই রাত্রিতে নৈকট্যের সুরভি মৃদুমন্দভাবে প্রবাহিত হইয়াছিল, দিবসসমূহের শেষে পুনর্মিলনের দ্বারসমূহ সজোরে উন্মুক্ত হইয়াছিল এবং সকল সৃষ্টবস্তু অকস্মাৎ উক্তি করিতে সঞ্চালিত হইয়াছিল: “রাজ্য ঈশ্বরের, যিনি সকল নামের পরম প্রভু, যিনি বিশ্রব-আলিঙ্গনকারী সার্বভৌমত্ব সহকারে আসিয়াছেন!” এই রাত্রিতে ঊর্ধ্বরাজ্যের জনমন্ডলী ইহার পরম প্রভুর প্রশংসা উদ্যাপন করিয়াছে, যিনি উচ্চ-প্রশংসিত, পরম মহিমান্বিত এবং ঐশ্বরিক নামাবলীর বাস্তবতাসমূহ তাঁহাকে উচ্চপ্রশংসিত করিয়াছে যিনি এই প্রত্যাদেশের শুরু এবং শেষের সম্রাট, একটি প্রত্যাদেশ যাহার শক্তির মাধ্যমে পর্বতসমূহ তাঁহার নিকট দ্রুত অগ্রসর হইয়াছে যিনি সর্ব-পর্যাপ্তকারী, সর্বোচ্চ এবং হৃদয়সমূহ উহাদের পরম-প্রিয়তমের প্রতি মুখমন্ডল ফিরাইয়াছে এবং পত্রসমূহ সমীরণের ব্যাকুলতা দ্বারা চঞ্চল হইয়াছে এবং বৃক্ষগুলি তাঁহার আহ্বানের প্রতি আনন্দপূর্ণ সাড়াদানে তাহাদের কণ্ঠস্বরসমূহ উত্তোলিত করিয়াছে যিনি স্বাধীন এবং সমগ্র পৃথিবী চিরন্তন সম্রাটের পুনর্মিলন লাভ করিতে ইহার আকাঙ্খায় আকুলতা দ্বারা শিহরিত হইয়াছে এবং সকল বস্তুকে সেই নিহিত শব্দ দ্বারা নতুন করা হইয়াছে যাহা এই শক্তিশালী নামে আবির্ভূত হইয়াছে।
হে সর্ব-বদান্যতার রাত্রি! তোমার মধ্যে সত্য সত্যই আমরা মাতৃগ্রন্থটি দেখিতে পাইতেছি। ইহা কি একটি গ্রন্থ, যথার্থই বরং একটি শিশু জন্মলাভ করিয়াছে? শুধু তাহা-ই নহে, আমার নিজের শপথ! এই বাক্যাবলী নামাবলীর রাজ্যের অংশ, পক্ষান্তরে ঈশ্বর এই গ্রন্থ সকল নামের ঊর্ধ্বে পবিত্র করিয়াছেন। ইহার মাধ্যমে নিহিত রহস্য এবং সঞ্চিত রহস্য প্রকাশিত হইয়াছে। শুধু তাহাই নহে, আমার জীবনের শপথ! যাহা কিছু উল্লেখ করা হইয়াছে উহা সব গুণাবলীর রাজ্যের অধিকারভূক্ত, পক্ষান্তরে মাতৃগ্রন্থ ইহার ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। ইহার মাধ্যমে তাহাদের সকলের ঊর্ধ্বে “ঈশ্বর ব্যতীত অন্য কোন ঈশ্বর নাই” এর প্রকাশসমূহ আবির্ভূত হইয়াছে। শুধু তাহা-ই নহে, যখন এইরূপ বিষয়সমূহ জনগণের নিকট ঘোষণা করা হইয়াছিল, তখন তোমার পরম প্রভুর গণনায় তাঁহার কর্ণ ব্যতীত কেহ-ই সেইগুলি শ্রবণ করিবার উপযুক্ত ছিল না। আশীষপূতঃ তাহারা যাহারা সু-নিশ্চিত!
যাহার ফলে, বিষ্ময়াবিষ্ট, সর্বোচ্চের লেখনী চিৎকার করিয়া বলিয়াছে: “হে তুমি যিনি সকল নামাবলীর উর্দ্ধে উচ্চপ্রশংসিত! আমি তোমার শক্তি দ্বারা তোমাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করিতেছি যাহা স্বর্গসমূহ ও পৃথিবীকে আবেষ্টন করিয়াছে আমাকে তোমার উল্লেখ হইতে দায়মুক্ত করিতে, যেহেতু স্বয়ং আমাকে তোমার সৃজনশীল শক্তির কারণে সত্তায় আহ্বান করা হইয়াছে। অতঃপর, কিরূপে আমি তাহা বর্ণনা করিতে পারি যাহা সকল সৃষ্ট বস্তু বর্ণনা করিতে অক্ষম? এবং তথাপি, আমি তোমার মহিমা দ্বারা শপথ করিতেছি, যদি আমাকে তাহা ঘোষণা করিতে হইত যাহা দ্বারা তুমি আমাকে অনুপ্রাণীত করিয়াছ, সমগ্র সৃষ্টি আনন্দ ও পরমানন্দে মৃত্যু বরণ করিত, তাহা হইলে এই সর্বাধিক আলোকোজ্জ্বল, পরম মহিমান্বিত এবং সর্বোৎকৃষ্ট স্থান তোমার উচ্চারণের মহাসাগরের তরঙ্গসমূহের সম্মুখে কত অধিকতর অভিভূত হইত! মুক্তি দাও, হে পরম প্রভু, এই দ্বিধান্বিত লেখনীকে এইরূপ সুমহান মর্যাদায় প্রশংসিত করা হইতে এবং আমার সহিত সদয়ভাবে আচরণ কর, হে আমার অধিকারী এবং আমার সম্রাট। অতঃপর তোমার উপস্থিতিতে আমার সীমালঙ্ঘনসমূহ উপেক্ষা কর। তুমি, সত্য সত্যই, বদান্যতার পরম প্রভু, সর্ব-শক্তিমান, চির-ক্ষমাশীল, পরম উদার।” (আইয়্যাম-ই-তিসিহ, পৃষ্ঠা ১২-১৫)
তিনিই পরম পবিত্র, পরম প্রশংসিত, সর্ব-মহান।”
জন্মদিন উৎসবটি আসিয়াছে এবং যিনি ঈশ্বরের সুষমা, সর্ব-ক্ষমতাশীল, সর্ব-বাধ্যকারী, সর্ব- প্রেমময়, তাঁহার সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছেন। মঙ্গল তাহার-ই যে এই দিবসে তাঁহার উপস্থিতি লাভ করিয়াছে যাহার প্রতি বিপদে সহায়, স্বয়ং-সত্তাশীল ঈশ্বরের স্থির দৃষ্টি চালিত হইয়াছে। বল: আমরা এই উৎসব পরম মহান কারাগারে উদ্যাপন করিয়াছি এইরকম সময়ে যখন পৃথিবীর রাজন্যবর্গ আমাদের বিরুদ্ধে উত্থিত হইয়াছে। তথাপি অত্যাচারীদের প্রাধান্য কখনো আমাদিগকে প্রতিহত করিতে পারিবে না, অথবা পৃথিবীর জনমন্ডলী আমাদিগকে হতাশ করিতে পারিবে না। ইহার প্রতি এই পরম মহান মর্যাদায় সর্ব-করুণাময় সাক্ষ্য বহন করিতেছেন।
বল: নিশ্চয়তার উৎকৃষ্ট নিদর্শন পৃথিবীর জনগণের উচ্চ কলরবের সম্মুখে কি হতাশ হইবে? না, তাঁহার সুষমার শপথ, যাহা ইহার ঔজ্জ্বল্য সকলের উপর বিকীর্ণ করে যাহা ছিল এবং সকলের উপর যাহা থাকিবে! সত্য সত্যই, এই হইতেছে পরম প্রভুর মহিমা যাহা সমগ্র সৃষ্টিকে বেষ্টন করিয়াছে, এবং এই হইতেছে তাঁহার সর্বাতিক্রমী ক্ষমতা যাহা তাহাদের সকলকে ভেদ করিয়াছে যাহারা দেখিতে পায় এবং সকলকে যাহা দেখিতে পাওয়া যায়। তাঁহার সার্বভৌম শক্তির রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং তোমাদের পরম প্রভুর উল্লেখ কর, যিনি স্বাধীন, এই উষাকালে যাহার আলো প্রত্যেক নিহিত রহস্য প্রকাশ করিয়াছে। এইরূপে দিবসসমূহের সনাতনের জিহ্বা এই দিবসের কথা বলিয়াছেন যখন উৎকৃষ্ট মদিরার সীলমোহর ভাঙ্গিয়া ফেলা হইয়াছে। সতর্ক হও যেন তাহাদের বৃথা কল্পনাগুলি যাহারা ঈশ্বরে অবিশ্বাস করিয়াছে তোমাদিগকে বিচলিত না করে, অথবা তাহাদের অলস কল্পনাগুলি তোমাদিগকে এই প্রসারিত পথ হইতে নিবৃত না করে।
হে বাহা’র জনমন্ডলী! তোমাদের পরম প্রভুর ভালবাসার আব্হমন্ডলে নিরাসক্তির ডানায় উড্ডীন হও, যিনি সর্ব-করুণাময়। অতঃপর তাহাকে বিজয়ী করিতে উত্থিত হও, সংরক্ষিত ফলকলিপিতে যেইরূপ আদেশ করা হইয়াছে। সতর্ক হও যেন তোমরা আমার ভৃত্যদের কাহারো সহিত বিবাদ না কর। তাহাদের উপর ঈশ্বরের মিষ্ট সুগন্ধিসমূহ এবং তাঁহার পবিত্র উচ্চারণসমূহ প্রদান কর, কারণ উহাদের শক্তির মাধ্যমে সকল মানুষ তাঁহার প্রতি মুখ ফিরাইতে সক্ষম হইবে।
যাহারা এই দিবসে ঈশ্বর সম্বন্ধে অমনোযোগী রহিয়াছে তাহারা যথার্থ-ই তাহাদের আকাঙ্খাগুলির মত্ততায় দিশেহারা হইয়াছে এবং ইহা উপলব্ধি করে না। মঙ্গল তাহার-ই যে, বিনয় ও বিনম্রতা সহকারে, তাহার পরম প্রভুর শ্লোকসমূহের প্রভাতের দিকে তাহার মুখমন্ডল স্থাপন করে।
তোমাদের জন্য উপযুক্ত হইবে উত্থিত হওয়া এবং জনগণকে উহার সহিত পরিচিত করা যাহা তাহাদের পরম প্রভুর গ্রন্থে প্রেরিত হইয়াছে, যিনি সর্বশক্তিমান, স্বাধীন। বল : তোমরা ঈশ্বরকে ভয় কর এবং তাহাদের অলস কল্পনাগুলির প্রতি মনোযোগ দিও না যাহারা সন্দেহ ও অন্যায়ের পথে বিচরণ করে। তোমাদের পরম প্রভুর সিংহাসনের দিকে তোমরা উজ্বল হৃদয়গুলি সহকারে মুখ ফিরাও, যিনি সকল নামের অধিকারী। সত্য সত্যই, তিনি সত্যের শক্তির মাধ্যমে তোমাদিগকে সাহায্য করিবেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ঈশ্বর নাই, যিনি সর্বশক্তিমান, পরম বদান্যতাপূর্ণ।
তোমরা কি কেবল একটি পুকুরের প্রতি অগ্রসর হইবে, যখন তোমাদের চক্ষুগুলির সম্মুখে পরম মহান মহাসাগর প্রসারিত রহিয়াছে? তোমরা ইহার প্রতি সম্পূর্ণরূপে মুখ ফিরাও, এবং প্রতিটি বিশ্বাসহীন প্রতারকের পদাঙ্কগুলি অনুসরণ করিও না। এইরূপে চিরন্তনের পক্ষী আমাদের ঐশ্বরিক লোট-বৃক্ষের শাখাগুলির উপর কম্পিত সুরে গান করিতেছে। ঈশ্বরের শপথ! ইহার সুরসমূহের একটি মাত্র ঊর্ধ্বরাজ্যের সমাবেশকে এবং তাহাদিগকে ছাড়াইয়া নামাবলীর নগরসমূহের অধিবাসীগণকে, এবং তাহাদিগকে ছাড়াইয়া যাহারা প্রভাতে ও সন্ধ্যায় তাঁহার সিংহাসনের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করে তাহাদিগকে পরমানন্দিত করিতে পর্যাপ্ত।
এইরূপে উচ্চারণের বর্ষণসমূহ তোমাদের পরম প্রভুর ইচ্ছার স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে, যিনি সর্ব-করুণাময়। তাহাদের নিকটবর্তী হও, হে জনমন্ডলী, এবং তাহাদিগকে পরিত্যাগ কর যাহারা অলসভাবে শ্লোকসমূহের বিরোধিতা করে যেগুলি ঈশ্বর অবতীর্ণ করিয়াছেন, এবং যাহারা তাহাদের পরম প্রভুকে অবিশ্বাস করিয়াছে যখন তিনি প্রমাণ ও সাক্ষ্যসমূহ দ্বারা ভুষিত হইয়া আসিয়াছিলেন। (“আইয়্যাম-ই-তিসিহ”, পৃষ্ঠা ৪৫-৪৭)
‘‘তিনি-ই পরম পবিত্র, পরম মহান।”
এই সেই মাস যখন তিনি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন যিনি পরম মহান নাম বহন করেন, যাহার আবির্ভাব মানবজাতির অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি প্রকম্পিত করিয়াছে এবং যাহার পদধুলি ঊর্ধ্বরাজ্যের সমাবেশ এবং নামাবলীর নগরসমূহের অধিবাসীগণ আশির্বাদের জন্য আকাক্সক্ষা করিয়াছে। যাহার পর তাহারা ঈশ্বরের নিকট প্রশংসা করিয়াছে এবং আনন্দ ও মহোল্লাসে চিৎকার করিয়াছে। ঈশ্বরের শপথ! এই সেই মাস যাহার মাধ্যমে অপর সকল মাস আলোকিত হইয়াছে, এই সেই মাস যখন যিনি গোপন রহস্য এবং সুরক্ষিত ধনাগার প্রকাশিত হইয়াছেন এবং সকল মানবজাতির মধ্যে উচ্চস্বরে আহ্বান করিয়াছেন। সকল রাজ্য এই নবজাতক শিশুর যাহার মাধ্যমে সৃষ্টির মুখমন্ডল হাসিতে গ্রথিত হইয়াছে এবং বৃক্ষ আন্দোলিত হইয়াছে এবং মহাসাগর উদ্বেলিত হইয়াছে, পর্বত দ্রুত পলায়ন করিয়াছে, স্বর্গ ইহার কন্ঠস্বর উত্তোলিত করিয়াছে এবং শিলাখন্ড চিৎকার করিয়াছে এবং সকল বস্তু অকস্মাৎ চিৎকার করিয়াছে, “হে সৃষ্টির সমাবেশ! তোমাদের পরম প্রভুর আননের উদয়-স্থলের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হও, যিনি দয়ালু, করুণাময়!”
এই সেই মাস যখন স্বর্গ নিজেকে ইহার পরম প্রভুর আননের উজ্জ্বলতা দ্বারা অলঙ্কৃত করিয়াছে, যিনি সর্ব-করুণাময়, এবং স্বর্গীয় বুলবুল পক্ষী ঐশ্বরিক লোট-বৃক্ষের উপর ইহার সুর প্রকম্পিত করিয়াছে এবং অনুগৃহীত জনদের হৃদয়সমূহ পরমানন্দে পূর্ণ হইয়াছে। কিন্তু হায় অধিকাংশ জনমন্ডলী অমনোযোগী রহিয়াছে! আশীষপূতঃ সেই জন, যে তাঁহাকে স্বীকার করিয়াছে এবং তাহা বুঝিতে পারিয়াছে যাহা ঈশ্বরের গ্রন্থসমূহে প্রতিশ্রুত হইয়াছিল, যিনি সর্বশক্তিমান, সর্ব-প্রশংসিত; এবং তাহাকে অভিশম্পাত যে তাঁহার নিকট হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়াছে যাহার উপর ঊর্ধ্বরাজ্যের সমাবেশ তাহাদের স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়াছে, তিনি যিনি প্রত্যেক স্বেচ্ছাচারী অবিশ্বাসীকে হতবুদ্ধি করিয়াছেন।
যখন তুমি এই ফলকলিপি প্রাপ্ত হইবে, মধুরতম সুরে ইহা আবৃত্তি করিবে এবং বলিবে: তুমি প্রশংসিত হও, হে আমার পরম করুণাময় পরম প্রভু, এই ফলকলিপিতে আমাকে স্মরণ করিবার জন্য, যাহা দ্বারা তোমার জ্ঞানের পরিচ্ছদের সুরভি বিকীর্ণ হইয়াছিল এবং তোমার করুণার মহাসাগর উদ্বেলিত হইয়াছিল। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তুমি তাহা করিতে শক্তিশালী যাহা তুমি ইচ্ছা কর। তুমি ব্যতীত অন্য কোন ঈশ্বর নাই, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্ব-বিজ্ঞ। (মায়েদি-ই-আসমানি, ভল্যুম ৪, পৃষ্ঠা ৩৪২)
(এই ফলকলিপি মহান বাহা’উল্লাহ্ এবং মহান বা’বের সমাধি-স্থানদ্বয়ে পঠিত হয়। তাঁহাদের বার্ষিক স্মৃতি-উৎসবের সময়ও ইহা ব্যবহৃত হয়।)
যে প্রশংসা-স্তুতি তোমার পরম মহিমান্বিত স্বয়ং সত্তা হইতে প্রকাশিত হইয়াছে এবং যে প্রভা তোমার পরম উজ্জ্বল সুষমা হহতে প্রজ্বলিত হইয়াছে তাহা তোমারই উপর বিশ্রাম লাভ করুক (কারণ তাহা তোমার মহিমারই যোগ্য), হে তুমি যিনি মহত্ত্বের ঐশী প্রকাশ এবং চিরিস্থায়ী সম্রাট এবং স্বর্গ ও মর্তের সকলেরই পরম প্রভু। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তোমারই মাধ্যমে ঈশ্বরের একাধিপত্য এবং তাঁহার সাম্রাজ্য এবং ঈশ্বরের মহিমা ও তাঁহার মহত্ত্ব প্রকাশিত হইয়াছিল এবং সনাতন প্রভার প্রভাতিক তারকা সমূহ তোমার অপরিবর্তনীয় প্রত্যাদেশ স্বর্গে তাহাদের উজ্জ্বলতা প্রদান করিয়াছে এবং অদৃশ্য জগতের সুষমা, সৃষ্টির চক্রবালের উপর উজ্জ্বল আলোক প্রদান করিয়ছে। আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, তোমার লেখনীর একটি মাত্র গতিতে তোমার ‘‘হও’’ আদেশ প্রবর্তিত করা হইয়াছে এবং ঈশ্বরের নিহিত রহস্য প্রকাশিত করা হইয়াছে এবং সমুদয় সৃষ্ট দ্রব্যকে অস্তিত্বে আনয়ন করা হইয়াছে এবং সকল প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করা হইয়াছে।
আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, তোমার সুষমার মাধ্যমে পূজিত জনের সুষমা প্রকাশিত করা হইয়াছে এবং তোমার আননের মাধ্যমে অভিলাষিত জনের আনন উজ্জ্বল আলোক প্রদান করিয়াছে এবং তোমার নিকট হইতে একটি বাক্যের মাধ্যমে তুমি সকল সৃষ্ট দ্রব্যের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করিয়াছ, যাহারা তোমার ভক্ত তাহাদের তুমি গৌরবের শীর্ষে আরোহণ করাইয়াছ, এবং অবিশ্বাসিগণকে নিম্নতম গভীর গহ্বরে নিক্ষিপ্ত করিয়াছ।
আমি সাক্ষ্য প্রদান করিতেছি যে, যে ব্যক্তি তোমাকে জানিয়াছে, সে ঈশ্বরকে জানিয়াছে, যে তোমার উপস্থিতি লাভ করিয়াছে সে ঈশ্বরের উপস্থিতি লাভ করিয়াছে। অতএব, তোমার নিদর্শন সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে এবং তোমার একাধিপত্যের নিকট নিজেকে নত করিয়াছে এবং তোমার সাক্ষাৎকার লাভের দ্বারা সম্মানিত হইয়াছে এবং তোমার ইচ্ছার সন্তোষ লাভ করিয়াছে এবং তোমার চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করিয়াছে এবং তোমার সিংহাসনের সম্মুখে দন্ডায়মান হইয়াছে। তাহার প্রতি অভিসম্পাত যে, তোমার বিধানসমূহ লংঘন করিয়াছে এবং তোমাকে অস্বীকার করিয়াছে এবং তোমার নিদর্শনসমূহ পরিত্যাগ করিয়াছে এবং তোমার একাধিপত্য অস্বীকার করিয়াছে এবং তোমার বিরুদ্ধে উত্থিত হইয়াছে এবং তোমার সন্মুখে অহংকার প্রদর্শন করিয়াছে এবং তোমার সাক্ষ্য-প্রমাণসমূহ অস্বীকার করিয়াছে এবং তোমার শাসন ও আধিপত্য হইতে পলায়ন করিয়াছে এবং অবিশ্বাসীদের দলে পরিগণিত হইয়াছে, যাহাদের নাম তোমার পবিত্র ফলক-লিপিসমুহে তোমার আদেশের অঙ্গুলি দ্বারা লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে।
অতঃপর, আমার দিকে পরিচালিত কর, হে আমার প্রভু এবং আমার প্রিয়জন, তোমার করুণা ও তোমার সস্নেহ সহানুভূতির দক্ষিণ-হস্ত হইতে তোমার অনুগ্রহের পবিত্র নিঃশ্বাসসমূহ, যেন তাহারা আমাকে নিজের নিকট হইতে এবং পৃথিবী হইতে তোমার নৈকট্যের ও উপস্থিতির প্রাঙ্গণে আকর্ষণ করিতে পারে। তুমি যাহা করিতে ইচ্ছা কর তাহা করিতে তুমি সক্ষম। তুমি সত্যই সকলের উপর সর্বোচ্চ শক্তি সম্পন্ন।
ঈশ্বরের স্মরণ ও তাঁহার প্রশংসা, ঈশ্বরের প্রভা ও তাঁহার উজ্জ্বল্য তোমারই উপর বিশ্রাম লাভ করুক, হে তুমি, যিনি তাঁহারই সুষমা। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, সৃষ্টি চক্ষু কখনও তোমার ন্যায় উৎপীড়িত অন্য কাহারও উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নাই। তোমার জীবনের সকল দিনই তুমি দূর্দশারত মহাসাগরে নিমজ্জিত ছিলে। এক সময়ে তুমি শৃঙ্খল ও নিগড়াবদ্ধ ছিলে, অন্য সময়ে তুমি তোমার শত্রুগণের তরবারির ভয় প্রদর্শিত হইতেছিলে। তথাপি এই সকল সত্ত্বেও তুমি সকল লোককে তাহাই প্রতিপালন করিতে আদেশ দিয়াছিলে, যাহা তোমার জন্য তাঁহার দ্বারা নির্ধারিত করা হইয়াছিল, যিনি সর্বজ্ঞ, সর্ববিজ্ঞ।
তুমি যে সকল অত্যাচার সহ্য করিয়াছিলে তজ্জন্য আমার জীবন উৎসর্গীকৃত হউক এবং তুমি যে সমুদয় দুর্দশা ভোগ করিয়াছিলে তজ্জন্য আমার আত্মা মুক্তি-পণস্বরূপ হউক। আমি ঈশ্বরের নিকট বিনীত প্রার্থনা করিতেছি, তোমার সহায়তায় এবং তাহাদের সাহায্যে যাহাদের আননসমূহ তোমার মুখমন্ডলের আলোকের উজ্জ্বলতাসমূহ দ্বারা আলোকিত হইয়াছে এবং যাহারা তোমার প্রতি ভালবাসার জন্য তোমা কর্তৃক আদিষ্ট সকল বিষয়ই প্রতিপালন করিয়াছিল, যেন তুমি সেই সকল অন্তরাল, যাহা তোমার ও তোমার সৃষ্ট জীবগণের মধ্যে স্থাপিত হইয়াছে, তাহা অপসারিত কর, এবং যেন এই পৃথিবী ও পরবর্তী পৃথিবীতে আমার জন্য যাহা ভাল ও উপাদেয় তুমি তাহা পুরণ কর। তুমি, সত্য সত্যই, সর্বশক্তিমান,পরম মহিমান্বিত, সর্ব প্রভাময়, চির-মার্জনাকারী, পরম দয়ালু।
তুমি আশীর্বাদ কর, হে পরম প্রভু, আমার ঈশ্বর, স্বর্গীয় লোত বৃক্ষকে, ইহার পত্রসমূহ, ইহার শাখা, ইহার প্রশাখা, ইহার কান্ড এবং ইহার পল্লবসমূহকে, যতকাল পর্যন্ত তোমার উৎকৃষ্ট পদবীসমূহ স্থায়ী হইবে এবং তোমার পরম মহিমান্বিত গুণাবলী বর্তমান থাকিবে। অতঃপর ইহাকে প্রথম আক্রমণকারীর অনিষ্ট হইতে এবং উৎপীড়নের বাহিনীসমূহ হইতে রক্ষা কর। তুমি, সত্য সত্যই, সর্বশক্তিমান, পরম ক্ষমতাশালী। তুমি, আরও আশীর্বাদ কর, হে পরম প্রভু আমার ঈশ্বর, তোমার সেবকগণকে ও তোমার সেবিকাগণকে, যাহারা তোমার সান্নিধ্য লাভ করিয়াছে। তুমি, সত্য সত্যই, সর্ব বদান্যতাপূর্ণ, যাহার অনুকম্পা অসীম। তুমি প্রভু ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তুমি চির-মার্জনাকারী, পরম দানশীল।
(এই ফলকলিপি আব্দুল বাহা কর্তৃক অবতীর্ণ, তাঁহার সমাধি-স্থানে পঠিত হয়। ব্যক্তিগত প্রার্থনায়ও ইহা ব্যবহৃত হয়।)
‘যে এই প্রার্থনা নম্রতা ও আগ্রহের সহিত আবৃত্তি করে, সে এই ঐশী সেবকের (আব্দুল বাহার) অন্তরে আহল্লাদ ও আনন্দ আনয়ন করিবে। ইহার ফল এইরূপ হইবে যেন সে সামনা সামনি তাঁহার সাক্ষাৎকার লাভ করিবে।’
তিনি সর্ব-প্রভাময়।
হে প্রভু, আমার প্রভু । বিনীতভাবে ও অশ্রুভারাক্রান্ত অন্তরে, আমি তোমার সন্মুখে আমার অনুনয়কারী হস্তদ্বয় উত্তোলন করি এবং আমার আনন তোমার সেই আস্তানার ধূলি দ্বারা আবৃত করি, যাহা শিক্ষিত ব্যক্তিগণের জ্ঞানের এবং যাহারা তোমার গৌরবের প্রশংসা করে তাহাদের প্রশংসার অনেক উর্র্ধ্বে উন্নীত। অনুগ্রহ পুর্বক তোমার করুণার চক্ষুর দৃষ্টিপাত সহকারে তোমার সেবকের প্রতি অবলোকন কর, যেন তোমার দ্বারা নম্র ও বিনীত এবং তাহাকে তোমার চিরস্থায়ী অনুকম্পার মহাসাগরে নিমজ্জিত কর।
পরম প্রভু। সে তোমার একজন দরিদ্র ও বিনীত সেবক, তোমার দাসত্বাধীন ও তোমার নিকট সানুনয় প্রার্থনাকারী, তোমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করিয়া তোমারই সন্মুখে অশ্রু সিক্ত, তোমাকে আহ্বান করিয়া এবং তোমার নিকট বিনীতভাবে প্রার্থনা করিয়া বলিতেছে:
হে আমার পরম প্রভু, আমার ঈশ্বর, তোমার প্রিয়জনের সেবা করিবার জন্য আমাকে তোমার অনুকম্পা দান কর, তোমার প্রতি আমার দাসত্বে আমার শক্তি বর্ধিত কর, তোমার পবিত্রতার প্রাঙ্গনে আরাধনার আলোকে এবং তোমার মহত্ত্বের রাজত্বের প্রতি প্রার্থনার আলোকে আমার আনন আলোকিত কর। তোমার দ্বারের স্বর্গীয় প্রবেশপথে আত্ম-স্বার্থহীন হইতে আমাকে সাহায্য কর এবং তোমার পবিত্র পরিবেশের মধ্যে সফল হইতে নির্লিপ্ত থাকিতে আমাকে সাহায্য কর। পরম প্রভু। আত্ম-স্বার্থ শূন্যতার পাত্র হইতে আমাকে পান করিতে দাও। আমাকে ইহারই পরিচ্ছদ পরিধান করাও এবং ইহারই মহাসাগরে আমাকে নিমজ্জিত কর। তোমার প্রিয় ব্যক্তিদের পথে আমাকে ধূলি সাদৃশ কর, এবং এই অধিকার আমাকে প্রদান কর, যেন আমি, তোমার পথে তোমার মনোনীতগণের পদক্ষেপ দ্বারা মর্যাদাসম্পন্ন মৃত্তিকার জন্য, আমার আত্মাকে উৎসর্গ করিতে পারি, হে উচ্চতম স্বর্গের প্রভার পরম প্রভু।
এই প্রার্থনা সহকারে তোমার সেবক তোমাকে আহ্বান করিতেছে, প্রভাতে ও রাত্রিকালে। তাহার অন্তরের বাঞ্ছা পূর্ণ কর, হে পরম প্রভু। তাহার অন্তর আলোকিত কর, তাহার বক্ষঃস্থল উল্লসিত কর, তাহার আলোক প্রজ্বলিত কর, যেন সে তোমার ধর্মের ও তোমার সেবকগণের সেবা করিতে পারে।
তুমিই দাতা, তুমিই দয়ালু, তুমি পরম দানশীল, তুমি অনুকম্পাশীল, তুমি কৃপাময়, তুমি পরম করুণাময়।