The Universal House of Justice
Ridván 2011
To the Bahá’ís of the World
Dearly loved Friends,
এই মহিমান্বিত মৌসুমের প্রারম্ভে সদ্য উন্মোচিত মহান বা’ব এর মহিমান্বিত সমাধিটির স্বর্ণালী গম্বুজের প্রভা অবলোকন করে আমাদের চক্ষুগুলি দীপ্তিমান হয়েছে। শৌগী এফেন্দী কর্তৃক কাঙ্খিত স্বর্গীয় দীপ্তিতে ইহাকে সংস্কার করা হয়েছে, যে সুমহান অট্টালিকাটি আর একবার ভূমি, সাগর এবং আকাশ, দিনে এবং রাতে, তাঁর রাজকীয় ক্ষমতা ও পবিত্রতার সাক্ষ্য দিচ্ছে, যাঁর পবিত্র দেহাবশেষ ইহা আবেষ্টন করে আছে।
এই আনন্দঘন মুহুর্ত ঐশী পরিকল্পনা উন্মোচনের একটি শুভ অধ্যায়ের সমাপ্তির সাথে সুনিবিড়ভাবে সমন্বিত। আব্দুল-বাহার ইচ্ছাপত্রের সদাশয় ছায়াতলে প্রথম একশত বছর অতিবাহিত হতে গঠনাত্বক যুগের প্রথম শতাব্দীর শুধুমাত্র একটি দশক অবশিষ্ট রয়েছে। এখন যে পাঁচসালা পরিকল্পনাটি শেষ হচ্ছে তা অপর একটি দ্বারা স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে, যার বৈশিষ্ট্যগুলি ইতিমধ্যে বাহা’ই বিশ্ব জুড়ে নিবিড় অধ্যয়নের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাস্তবিক-ই, উপদেষ্টাগণের মহাদেশীয় বোর্ডের সম্মেলন এবং বারো মাস পূর্বে রিজওয়ান বার্তায় দেয়া আমাদের বার্তার প্রতি প্রদত্ত সাড়াদান দ্বারা আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। উহাদের বিষয়বস্তুর একটি অসম্পূর্ণ উপলব্ধিতে সন্তুষ্ট না হয়ে বন্ধুগণ একাকী এবং সমষ্টিগতভাবে, আনুষ্ঠানিক সভায় এবং স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশগুলিতে এই বার্তাগুলির প্রতি বার বার ফিরে যাচ্ছেন। তাদের ক্লাষ্টারগুলিতে বিকাশমান বৃদ্ধির কার্যক্রমে স্বক্রীয় এবং তথ্যাভিজ্ঞ অংশগ্রহণের দ্বারা তাদের উপলব্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, সমগ্র বিশ্বের বাহা’ই সমাজ কয়েক মাসের মধ্যেই আগামী দশকে একটি আত্মপ্রত্যয়ী সম্মুখ যাত্রার সূচনার জন্য কি কি প্রয়োজন তা সচেতনভাবে আত্মস্থ করেছে।
একই সময়ের মধ্যে, বিভিন্ন মহাদেশে রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ও অর্থনৈতিক গোলযোগ ক্রমবর্ধমান দৃষ্টান্তগুলি সরকার ও জনগণকে আন্দোলিত করেছে। সমাজগুলিকে বিপ্লবের প্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে, এমনকি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঘটনায় তা সীমানা অতিক্রম করেছে। নেতৃবৃন্দ দেখছেন যে অস্ত্র বা সম্পদ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। জনগণের আকাঙ্খাগুলি যেখানে অপূর্ণ থেকে গেছে, সেখানে ক্ষোভের ভান্ডার স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা স্মরণ করছি, বাহা’উল্লাহ্ কতটা সুনির্দিষ্টভাবে পৃথিবীর শাসকগণকে সতর্ক করেছিলেন: “তোমাদের জনগণ তোমাদের সম্পদ। সতর্ক হও যেন তোমাদের শাসন ঈশ্বরের আদেশাবলী লঙ্ঘন না করে, এবং তোমরা যেন তোমাদের সংরক্ষনে যারা রয়েছে তাদেরকে দস্যুর হাতে তুলে না দাও।” একটি সতর্ক বাণী: পরিবর্তনের জন্য জনগণের আকাঙ্খার লক্ষ্যণীয় দৃশ্য যতই বিমুগ্ধকারী হোক না কেন, এ কথা মনে রাখতে হবে যে এখানে স্বার্থগুলি বিদ্যমান যা ঘটনাগুলিকে নিজ উদ্দেশ্যসাধনে ব্যবহার করছে। এবং, যতক্ষন না ঐশী চিকিৎসক কর্তৃক নির্দেশিত প্রতিষেধক প্রয়োগ করা না হচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত এই যুগের দুঃখ-কষ্টগুলি বিদ্যমান থাকবে এবং গভীরতর হবে। এই সময়গুলোর একজন মনোযোগী পর্যবেক্ষক অনায়াসেই সনাক্ত করতে পারবে যে, একটি বিশ্বব্যবস্থা অনিয়মিত অথচ অবিশ্রান্তভাবে, দ্রুততার সাথে বিখণ্ডিত হয়ে শোচনীয়ভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
তৎসত্ত্বেও, ইহার অপরদিকে একটি গঠনমূলক প্রক্রিয়াও প্রতীয়মান হচ্ছে, অভিভাবক যাকে “বাহা’উল্লাহর বর্ধিষ্ণু ধর্ম” এর সহিত সংযুক্ত করেছেন এবং “ধর্ম যা অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করবে সেই নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার অগ্রদূত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মানবীয় বোধ এর প্রবাহমানতায় ইহার পরোক্ষ প্রভাব লক্ষ্যণীয়, বিশেষ করে যুবকদের মাঝে ইহা সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার একটি ব্যাকুল আকাঙ্খা হতে সজোরে প্রবাহমান। এই ব্যাকুল আকাঙ্খা যাহা প্রতিটি দেশের মানব চেতনা হতে ফোয়ারার ন্যায় অপ্রতিরোধ্যরূপে প্রবাহমান, এবং যাহা এই গ্রহের বিভিন্ন রকমের মানুষের মাঝে ফলপ্রসু কর্মকাণ্ডের সামর্থ্য নির্মাণের জন্য বাহা’ই সমাজ যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাতে বাগ্মী অভিব্যক্তি খুঁজে পাওয়ার সামর্থ্য প্রদান করছে, তাহা প্রাচীন সৌন্দর্যের অনুসারীদের জন্য একটি স্বপ্রণোদিত বদান্যতা। ইহার সাথে অন্য কোন সুযোগের কি কোন তুলনা হতে পারে?
এই কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উপলদ্ধির জন্য প্রতিটি বিশ্বাসী আব্দুল বাহা’র প্রতি লক্ষ্য করুক, মিশর ও পাশ্চাত্যে তাঁহার “যুগান্তকারী ভ্রমণ” এর শতবার্ষিকী এই সময়ে বিশেষভাবে চিহ্নিত। ক্লান্তিহীনভাবে, প্রতিটি সামাজিক অঙ্গনেঃ গৃহে এবং ধর্মীয় মিলনায়তনসমূহে, গীর্জা এবং সিনাগগসমূহে, নগর-উদ্যান ও নগরমধ্যস্থ উম্মুক্ত স্থানসমূহে, রেলের বগি ও সামুদ্রিক জাহাজসমূহে, সঙ্ঘ ও সমিতিসমূহে, বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে, তিনি ধর্মের শিক্ষাবলী ব্যাখ্যা করেছেন। এই যুগের প্রয়োজনসমূহ পূরণে তিনি সার্বজনীন স্বর্গীয় মূলনীতি আনয়ন করেছিলেন, চলনে বলনে অসীম ভদ্রতা সত্ত্বেও সত্য রক্ষার্থে তিনি আপোসহীন ছিলেন। কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, শ্রমিক, শিশু, পিতা-মাতা, নির্বাসিতগণ, রাজনৈতিক/সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিবর্গ, ধর্ম যাজক, সংশয়বাদী নির্বিশেষে সকলের জন্য তিনি সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী প্রেম, বিজ্ঞতা, শান্তনা অকাতরে বিলিয়েছেন। তাদের আত্মাগুলিকে উন্নীত করার সঙ্গে সঙ্গে, তিনি তাদের পূর্ব-ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তাদের দৃষ্টিকোনগুলিকে নতুন পরিবেশের সাথে পুণরায় পরিচিত করিয়েছেন, তাদের সচেতনতা প্রসারিত করেছেন, এবং তাদের শক্তিসমূহকে কেন্দ্রীভূত করেছেন। বাক্য ও কর্ম দ্বারা তিনি এইরূপ সমবেদনা ও সহৃদয়তা প্রদর্শন করেছিলেন যে হৃদয়গুলি সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত হয়েছিল। কাউকে-ই ফিরিয়ে দেয়া হয় নাই। আমাদের মহান আশা এই যে, এই শতবার্ষিক সময়ে, মাষ্টারের অতুলনীয় তথ্যপ্রমাণ তাঁর আন্তরিক গুণগ্রাহীগণকে বারংবার স্মরণ, অনুপ্রাণিত ও সুরক্ষিত করবে। তাঁর উদাহরণ আপনাদের চক্ষুর সামনে স্থাপিত হউক এবং আপনাদের দৃষ্টি ইহাতে নিবদ্ধ হউক; পরিকল্পনার লক্ষ্যের পশ্চাদ্ধাবনে ইহাকে আপনার সহজাত পথপ্রদর্শক হতে দিন।
বাহা’ই সমাজের প্রথম বিশ্ব-পরিকল্পনার সূচনালগ্নে, শৌগী এফেন্দী দৃঢ় প্রত্যয় উৎপাদনকারী ভাষায় ইহার আনুক্রমিক পর্যায়গুলির বর্ণনা করেছিলেন, তার বর্ণনামতে সিয়াহ্-চাল এ ঐশ্বরিক আলো প্রদীপ্ত হয়ে, বাগদাদে প্রত্যাদেশের প্রদীপ পরিচ্ছদে ভূষিত হয়ে, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ল এমনকি এ্যাড্রিয়ানোপল এবং পরবর্তীতে আক্কায় ইহা আরও অধিক ঔজ্জ্বল্য সহযোগে আলো বিকীর্ণ করতে থাকল, অতঃপর সে আলো সাগরগুলির অপর প্রান্তের অবশিষ্ট মহাদেশগুলিতেও প্রক্ষেপিত হলো, এবং এইভাবেই ইহা পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহ ও অঙ্গরাজ্যগুলোতে ক্রমবর্ধিষ্ণুভাবে ছড়িয়ে যেতে লাগল। এই প্রক্রিয়ার শেষাংশকে তিনি “ভূমণ্ডল এর অবশিষ্ট সকল শাসিত অঞ্চলে .... সেই আলোর প্রবেশ” হিসেবে বিশিষ্টতা দান করেছেন, ইহাকে তিনি সেই পর্যায় বলে উল্লেখ করেছেন “যেই পর্যায়ে ঈশ্বরের বিজয়দৃপ্ত ধর্মের আলো ইহার সকল শক্তি ও মহিমায় ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাবে এবং সমগ্র গ্রহটিকে আবৃত করে ফেলবে।” যদিও সেই লক্ষ্যটি পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি হতে দূরে অবস্থিত, তথাপিও আলো ইতিমধ্যেই বহু অঞ্চলে তীব্রভাবে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। কতিপয় দেশে ইহা প্রতিটি ক্লাস্টারে উদ্ভাসিত হয়েছে। যেই দেশে এই অনির্বাণ শিখা প্রথম প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছিল, সেই দেশে যারা ইহা নির্বাপিত করতে চায় তাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও ইহা উজ্জ্বলরূপে প্রদীপ্তমান। বিভিন্ন জাতির মাঝে সমগ্র প্রতিবেশীস্থল ও গ্রামসমূহ জুড়ে ইহা একটি সুদৃঢ় উজ্জ্বলতা অর্জন করছে, যেন বিধাতার হস্ত দ্বারা হৃদয়ের পর হৃদয়ে মোমবাতির পর মোমবাতি প্রজ্জ্বলিত করা হচ্ছে; ইহা সকল স্তরের মানবীয় মিথষ্ক্রিয়ায় চিন্তাশীল কথোপকথনকে উদ্ভাসিত করে; ইহা একটি জনসমষ্টির কল্যাণ এর অগ্রগতি সাধনে গৃহীত বিপুল উদ্যোগগুলির উপর ইহার আলোকধারাগুলি প্রক্ষেপণ করে। এবং প্রতিটি দৃষ্টান্তে ইহা প্রতিটি আলোক সংকেত বিষাদ ও হতাশার বিরুদ্ধে একজন অনুগত বিশ্বাসী, একটি স্পন্দনশীল সমাজ, একটি প্রেমপূর্ণ আধ্যাত্মিক পরিষদ হতে বিকীর্ণ করে।
আমরা পবিত্র দ্বারপ্রান্তে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করছি যে আপনাদের প্রত্যেকে, অবিনশ্বর অগ্নিশিখার বাহকগণ, যখন ধর্মের স্ফুলিঙ্গ অন্যদের নিকট পৌঁছে দেন তখন যেন বাহা’উল্লাহ্র শক্তিশালী নিশ্চয়তাগুলি দ্বারা আপনারা পরিবেষ্টিত থাকেন।
- The Universal House of Justice